কোরান সূরা তাকবীর আয়াত 14 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Takwir ayat 14 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা তাকবীর আয়াত 14 আরবি পাঠে(Takwir).
  
   

﴿عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا أَحْضَرَتْ﴾
[ التكوير: 14]

তখন প্রত্যেকেই জেনে নিবে সে কি উপস্থিত করেছে। [সূরা তাকবীর: 14]

Surah At-Takwir in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Takwir ayat 14


সত্ত্বা জানতে পারবে কী সে হাজির করেছে।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৪. এ সব যে দিন সংঘটিত হবে সে দিন প্রত্যেকে জানতে পারবে, সে আমল হিসাবে এ দিনের জন্য অগ্রিম কী পাঠিয়েছে।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তখন প্রত্যেক ব্যক্তিই জানবে, সে কি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।[১] [১] এটা হল জওয়াবী বাক্য। অর্থাৎ, যখন উল্লিখিত বিষয়সমূহ প্রকাশ পাবে। তার মধ্যে ছয়টি বিষয় দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত এবং অন্য ছয়টি আখেরাতের সাথে সম্পৃক্ত। তখন প্রত্যেকের সামনে তার প্রকৃতত্ব এসে যাবে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তখন প্ৰত্যেক ব্যক্তিই জানবে সে কি উপস্থিত করেছে []। [] অর্থাৎ কেয়ামতের উপরোক্ত পরিস্থিতিতে প্রত্যেকই জেনে নিবে সে কি নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ সৎকর্ম কিংবা অসৎকর্ম সব তার দৃষ্টির সামনে এসে যাবে। [ মুয়াসিসার ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি চায় যে, কিয়ামতকে যেন সে স্বচক্ষে দেখছে সে যেন( আরবি ) ( এই সূরাগুলো ) পাঠ করে ।( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে ) ১-১৪ নং আয়াতের তাফসীর ( আরবি )-এ আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ অর্থাৎ সূর্য আলোহীন হবে। আওফী ( রঃ ) বলেনঃ অর্থাৎ আলো চলে যাবে। আরো অন্যান্য গুরুজন বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ সূর্যের আলো যেতে থাকবে এবং উপুড় করে মাটিতে নিক্ষেপ করা হবে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, সূর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্ররাজিকে একত্রিত করে নিষ্প্রভ করে দেয়া হবে, অতঃপর সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর উত্তপ্ত বাতাস প্রবাহিত হবে এবং আগুন লেগে যাবে।হযরত আবু মরিয়ম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ( সঃ ) ( আরবি ) সম্পর্কে বলেনঃ “ সূর্যকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য একটি হাদীসে সূর্যের সাথে চাঁদেরও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঐ হাদীসটি দুর্বল। সহীহ্ বুখারীতে শব্দের কিছু পরিবর্তনসহ এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে জড়িয়ে নেয়া হবে। ইমাম বুখারী ( রঃ ) এ হাদীসটি ( আরবি ) এর মধ্যে আনয়ন করেছেন। কিন্তু এখানে উল্লেখ করাই ছিল বেশী যুক্তিযুক্ত। অথবা এখানে ওখানে উভয় স্থানে আনয়ন করলেই তাঁর অভ্যাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতোহযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন এরূপ হবে তখন হযরত হাসান ( রঃ ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ ওদের অপরাধ কি?” তখন হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) বলেনঃ আমি হাদীস বর্ণনা করছি আর তুমি এর মধ্যে কথা তুলছো? কিয়ামতের দিন সূর্যের এ অবস্থা হবে, সমস্ত নক্ষত্র বিকৃত হয়ে খসে পড়বে । যেমন অন্যত্র আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যখন নক্ষত্রমণ্ডলী বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে । হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) বলেন যে, কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি নিদর্শন পরিলক্ষিত হবে। জনগণ বাজারে থাকবে এমতাবস্থায় হঠাৎ সূর্যের আলো হারিয়ে যাবে। তারপর নক্ষত্ররাজি খসে খসে পড়তে থাকবে। এরপর অকস্মাৎ পর্বতরাজি মাটিতে ঢলে পড়বে এবং যমীন ভীষণভাবে কাঁপতে শুরু করবে। মানব, দানব ও বন্য জন্তুসমূহ সবাই পরস্পর মিলিত হয়ে যাবে। যেসব পশু মানুষকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যেতো তারা মানুষেরই কাছে নিরাপত্তার জন্যে ছুটে আসবে। মানুষ এমন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে যে, তারা তাদের প্রিয় ও মূল্যবান গর্ভবতী উষ্ট্রীর খবর পর্যন্তও নেবে না। জ্বিনেরা বলবেঃ আমরা যাই, খবর নিয়ে আসি, দেখি কি হচ্ছে কিন্তু তারা দেখবে যে, সমুদ্রেও আগুন লেগে গেছে। ঐ অবস্থাতেই যমীন ফেটে যাবে এবং আকাশ ফাটতে শুরু করবে। সপ্ত যমীন ও সপ্ত আকাশের একই অবস্থা হবে। একদিক থেকে গরম বাতাস প্রবাহিত হবে, যে বাতাসে সব প্রাণী মারা যাবে। ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) ও ইমাম ইবনে আবী হাতিম ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবী মরিয়ম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ নক্ষত্ররাজি এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয়েছে তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা তবে, শুধু হযরত ঈসা ( আঃ ) এবং তাঁর মাতা মরিয়ম ( আঃ ) বাকী থাকবেন । এঁরা যদি তাদের ইবাদতে খুশী হতেন তবে এঁদেরকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হতো। [ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে আবী হাতিম ( রঃ ) ]পাহাড় নিজ জায়গা থেকে বিচ্যুত হয়ে নাম নিশানাহীন হয়ে পড়বে। সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ সমতল প্রান্তরে পরিণত হবে। উট-উষ্ট্ৰীসমূহের প্রতি কেউ লক্ষ্য রাখবে না। অযত্নে অনাদরে ওগুলোকে ছেড়ে দেয়া হবে। কেউ ওগুলোর দুধও দোহন করবে না এবং ওগুলোকে সওয়ারী হিসেবেও ব্যবহার করবে না।( আরবি ) শব্দটি শব্দের বহুবচন। দশ মাসের গর্ভবতী উষ্টীকে বলা হয়। উদ্বেগ, ( আরবি ) ভয়-ভীতি, ত্রাস এবং হতবুদ্ধিতা এতো বেশী হবে যে, ভাল ভাল মাল-ধনের প্রতিও কেউ হৃক্ষেপ করবে না। কিয়ামতের সেই ভয়াবহতা হৃদয়কে প্রকম্পিত করে দিবে। মানুষ এতদূর ভীত-বিহবল, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও বিচলিত হয়ে পড়বে যে, তার কলিজা মুখের মধ্যে এসে পড়বে। কেউ কেউ বলেন যে, কিয়ামতের এই দিনে এ অবস্থায় কারো কিছু বলার বা বলার মত অবস্থা থাকবে না। যদিও তারা সবই প্রত্যক্ষ করবে। এই উক্তিকারী ( আরবি ) শব্দের কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন। একটি অর্থ হলো মেঘ, যা দুনিয়ার ধ্বংসপ্রাপ্তির ফলে আসমান ও যমীনের মাঝে শূন্যে বিচরণ করবে। কারো কারো মতে এর দ্বারা ঐ জমিনকে বুঝানো হয়েছে যার উশুর দেয়া হয়। আবার অন্য কারো মতে এর দ্বারা ঐ ঘর উদ্দেশ্য যা পূর্বে আবাদ ছিল, কিন্তু এখন বিরাণ হয়ে গেছে। এসব উক্তি উদ্ধৃত করে ইমাম কুরতুবী ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা উস্ত্রীকে বুঝানো হয়েছে এবং তিনি এই অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। অধিকাংশ তাফসীরকারও এটাকেই সমর্থন করেছেন। আমি বলি যে, পূর্বযুগীয় উলামায়ে কিরামের নিকট থেকে এ ছাড়া অন্য কোন অভিমত পাওয়া যায়নি। আল্লাহ তাআলাই এর সবচেয়ে উত্তম তাৎপর্য সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।আল্লাহ্ তা'আলা আরও বলেনঃ এবং যখন বন্য পশু একত্রিত করা হবে।' যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল পশু এবং বাতাসে উড্ডয়নশীল সকল পাখীও তোমাদের মতই দলবদ্ধ । আমি আমার কিতাবে সবকিছুর উল্লেখ করেছি, কোন কিছুই ছাড়িনি, অতঃপর তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট একত্রিত হবে।” ( ৬:৩৮ ) সব কিছুর হাশর তাঁরই নিকটে হবে, এমনকি মাছিরও। আল্লাহ্ তা'আলা সবারই সুবিচারপূর্ণ ফায়সালা করবেন। এসব প্রাণীর হাশর হলো তাদের মৃত্যু। তবে দানব ও মানবের সকলকে আল্লাহ্ তা'আলার সামনে হাযির করা হবে এবং তাদের হিসাব-নিকাশ হবে। রাবী' ইবনে হায়সাম ( রঃ ) বলেন যে, বন্য জন্তুর হাশর দ্বারা তাদের উপর আল্লাহর হুকুম হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা তাদের মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে। এসব প্রাণীও অন্যদের সাথে হাশরের মাঠে একত্রিত হবে। কুরআন কারীমে রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ পাখীদেরকে একত্রিত করা হবে ।( ৩৮:১৯ ) এই আয়াতের প্রকৃত অর্থও হলো এই যে, বন্য জন্তুগুলোকে সমবেত বা একত্রিত করা হবে।হযরত আলী ( রাঃ ) এক ইয়াহূদীকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ জাহান্নাম কোথায়?” ইয়াহূদী উত্তরে বলেঃ “সমুদ্রে । হযরত আলী ( রাঃ ) তখন বলেনঃ “ আমার মনে হয় একথা সত্য ।” কুরআন কারীমে বলা হয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ শপথ উদ্বেলিত সমুদ্রের ।( ৫২:৬ ) আরও রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ সমুদ্র যখন স্ফীত হবে । হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা উত্তপ্ত বাতাস প্রেরণ করবেন। ঐ বাতাস সমুদ্রের পানি তোলপাড় করে ফেলবে। তারপর তা এক শিখাময় আগুনে পরিণত হবে।( আরবি )-এ আয়াতের তাফসীরে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।হযরত মুআবিয়া ইবনে সাঈদ ( রাঃ ) বলেন যে, ভূমধ্য সাগর বরকতপূর্ণ। এ সাগর পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সব সাগর তাতে মিলিত হয়। এমনকি সবচেয়ে বড় সাগরও এই সাগরে গিয়ে মিলিত হয়। এই সাগরের নীচে ঝর্ণা রয়েছে। সেই ঝর্ণার মুখ তামা দিয়ে বন্ধ করা রয়েছে। কিয়ামতের দিন সেই মুখ বিস্ফোরিত হয়ে আগুন জ্বলে উঠবে। এটা খুবই বিস্ময়কর। তবে সুনানে আবু দাউদে একটি হাদীস রয়েছে যে, হজ্জ ও উমরাহ পালনকারীরা, জিহাদকারীরা বা গাযীরা যেন দুধ-সমুদ্রে সফর করে। কেননা, সমুদ্রের নীচে আগুন এবং সেই আগুনের নীচে পানি রয়েছে। সূরা ফাতিরের তাফসীরে এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।( আরবি )-এর অর্থ ‘শুকিয়ে দেয়া হবে’ এটাও করা হয়েছে। অর্থাৎ এক বিন্দুও পানি থাকবে না। আবার প্রবাহিত করে দেয়া হবে এবং এদিক-ওদিক প্রবাহিত হয়ে যাবে’ এ অর্থও কেউ কেউ করেছেন।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ প্রত্যেক প্রকারের লোককে ( তাদের সহচর সহ ) মিলিত করা হবে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ একত্রিত কর জালিমদেরকে ও তাদের সহচরদেরকে ।( ৩৭:২২ )হাদীস শরীফে আছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির হাশর করা হবে তার কওমের সাথে যারা তার মতই আমল করে থাকে। ( এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে) আল্লাহ্ তা'আলার নিম্নের উক্তি দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন শ্রেণীতে-ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! এবং বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী । ( ৫৬:৭-১০ )মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার ( রাঃ ) খুৎবাহ্ পাঠ করার সময় এ আয়াত পাঠ করেন এবং বলেনঃ “ প্রত্যেক জামাআত বা দল তাদের মত জামাআত বা দলের সাথে মিলিত হবে ।” অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, একই রকম আমলকারী দুই ব্যক্তি হয় তো একত্রে জান্নাতে থাকবে অথবা জাহান্নামে পাশাপাশি জ্বলবে। হযরত উমার ( রাঃ )-কে এ আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “ পুণ্যবান পুন্যবানের সাথে জান্নাতে মিলিত হবে এবং পাপী পাপীর সাথে জাহান্নামে মিলিত হবে ।” অর্থাৎ জান্নাতে এবং জাহান্নামে সম আমলের মানুষ জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করবে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ সব মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হবে। ডান দিকের দল, বাম দিকের দল এবং অগ্রবর্তী দল। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, একই ধরনের লোক এক সাথে থাকবে। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-ও এ কথা পছন্দ করেন।দ্বিতীয় উক্তি হলো এই যে, আরশের কিনারা থেকে পানির একটা সমুদ্র আত্মপ্রকাশ করবে এবং তা চল্লিশ বছর পর্যন্ত প্রশস্ত আকারে প্রবাহিত হবে। সেই সমুদ্র থেকে সকল মৃত পচা গলা ভেসে উঠবে। এটা এভাবে হবে যে, যারা তাদেরকে চিনে তারা তাদেরকে এক নজর দেখলেই চিনতে পারবে। তারপর রূহসমূহ ছেড়ে দেয়া হবে এবং প্রত্যেক রূহ তার দেহ অধিকার করবে।( আরবি )-এ আয়াতের অর্থ এটাই যে, দেহে আত্মা পুনঃসংযোজিত হবে। আবার এ অর্থও করা হয়েছে যে, মুমিনদের জোড়া হ্রদের সাথে লাগিয়ে দেয়া হবে এবং কাফিরদের জোড়া লাগিয়ে দেয়া হবে শয়তানের সাথে। ( এটা ইমাম কুরতুবী (রঃ ) তাকিরাহ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ্ তা'আলার উক্তিঃ ( আরবি ) এটা জমহুরের কিরআত। জাহিলিয়াতের যুগে জনগণ কন্যা সন্তানদেরকে অপছন্দ করতো এবং তাদেরকে জীবন্ত দাফন করতো। তাদেরকে কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবেঃ এরা কেন নিহত হয়েছে? যাতে এদেরকে হত্যাকারীদের অধিক ধমক দেয়া হয় ও লজ্জিত করা হয়। আর এটাও জানার বিষয় যে, অত্যাচারিতকে প্রশ্ন করা হলে অত্যাচারী স্বভাবতই অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হবে।এটাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেরাই জিজ্ঞেস করবেঃ ‘তাদেরকে কিসের ভিত্তিতে বা কি কারণে জীবন্ত প্রোথিত করা হয়েছে? এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ :উকাশার ভগ্নী জুযামাহ্ বিনতু অহাব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ( সঃ )-কে জনগণের মধ্যে বলতে শুনেনঃ “ আমি গর্ভাবস্থায় স্ত্রী সহবাস হতে জনগণকে নিষেধ করার ইচ্ছা করেছিলাম কিন্তু দেখলাম যে, রোমক ও পারসিকরা গর্ভাবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে থাকে এবং তাতে তাদের সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না।" তখন জনগণ তাকে বীর্য বাইরে ফেলে দেয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “ এটা গোপনীয়ভাবে জীবন্ত দাফন করারই নামান্তর । আর ( আরবি ) এর মধ্যে এরই বর্ণনা রয়েছে। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম মুসলিম ( রঃ ), ইমাম ইবনে মাজাহ্ ( রঃ ), ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এবং ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সালমা ইবনে ইয়াযীদ আরাফী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমি এবং আমার ভাই রাসূলুল্লাহ( সঃ )-এর নিকট গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাদের মাতা মুলাইকা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখতেন, অতিথি সেবা করতেন, এ ছাড়া অন্যান্য নেক আমলও করতেন । তিনি অজ্ঞতার যুগে মারা গেছেন। এসব সৎ আমল তার কোন কাজে আসবে কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ না ।” আমরা বললামঃ তিনি জাহিলিয়াতের যুগে আমাদের এক বোনকে জীবন্ত প্রোথিত করেছিলেন। এতে তার কোন কুফল হবে কি? তিনি জবাব দিলেনঃ “ যাকে জীবন্ত দাফন করা হয়েছে এবং যে দাফন করেছে উভয়েই জাহান্নামে যাবে । তবে হ্যা, পরে ইসলাম গ্রহণ করলে সেটা অন্য কথা।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) এবং ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বলেছেনঃ “ যে জীবন্ত দাফন করে এবং যাকে জীবন্ত দাফন করা হয় তারা উভয়েই জাহান্নামী ।( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)খানসা বিনতে মুআবিয়া সারীমিয়্যহ্ ( রাঃ ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সাঃ )! জান্নাতে কারা যাবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ( সঃ ) বলেনঃ “নবী, শহীদ, শিশু এবং যাদেরকে জীবন্ত অবস্থায় দাফন করা হয়েছে তারা জান্নাতে যাবে । হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন, মুশরিকদের শিশুরা জান্নাতে যাবে। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) যারা বলে যে, তারা ( মুশরিকদের শিশুরা ) জাহান্নামে যাবে তারা মিথ্যাবাদী। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ ( আরবি )-এর দ্বারা জীবিত প্রোথিত কন্যা শিশুকে বুঝানো হয়েছে।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত কায়েস ইবনে আসিম ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এসে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! জাহিলিয়াতের যুগে আমি আমার কন্যাদেরকে জীবিত প্রোথিত করেছি ( এখন কি করবো? )” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ তুমি প্রত্যেকটি কন্যার বিনিময়ে একটি করে গোলাম আযাদ করে দাও ।” তখন হযরত কায়েস ( রাঃ ) বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি তো উটের মালিক ( গোলামের মালিক তো আমি নই? )” তিনি বললেনঃ “ তাহলে তুমি প্রত্যেকের বিনিময়ে একটি করে উট আল্লাহর নামে কুরবানী করে দাও ।( এ হাদীসটি মুসনাদে আবদির রাযযাকে বর্ণিত হয়েছে )অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, হযরত কায়েস ( রাঃ ) বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি বারো বা তেরোটি কন্যাকে জীবন্ত দাফন করেছি ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ তাদের সংখ্যা অনুযায়ী গোলাম আযাদ করে দাও । তিনি বললেনঃ “ ঠিক আছে, আমি তাই করবো ।” পরবর্তী বছর তিনি একশটি উট নিয়ে এসে বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি মুসলমানদের সাথে যা করেছি তার জন্যে আমার কওমের পক্ষ থেকে এই সাদকা নিয়ে এসেছি । হযরত আলী ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি ঐ উটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতাম । ঐগুলোর নাম কায়সিয়্যাহ্ রেখেছিলাম।” এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “ যখন আমলনামা উন্মোচিত হবে । অর্থাৎ আমলনামা বন্টন করা হবে। কারো ডান হাতে দেয়া হবে এবং কারো বাম হাতে দেয়া হবে। কাতাদাহ্ ( রঃ ) বলেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি যা লিখাচ্ছো সেটা কিয়ামতের দিন একত্রিতাবস্থায় তোমাকে প্রদান করা হবে। সুতরাং মানুষ কি লিখাচ্ছে এটা তার চিন্তা করে দেখা উচিত।আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ আসমানকে ধাক্কা দিয়ে টেনে নেয়া হবে, তারপর গুটিয়ে নিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হবে। জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হবে। আল্লাহর গযবে ও বানী আদমের পাপে জাহান্নামের আগুন তেজদীপ্ত হয়ে যাবে। এসব কিছু হয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেক মানুষ পার্থিব জীবনে কি আমল করেছে তা জেনে নিবে। সব আমল তার সামনে বিদ্যমান থাকবে। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ সেদিন প্রত্যেকে সে যে ভাল কাজ করেছে এবং সে যে মন্দ কাজ করেছে তা বিদ্যমান পাবে, সে দিন সে তার ও ওর ( মন্দ কর্মফলের ) মধ্যে দূর ব্যবধান কামনা করবে ।( ৩:৩০ ) আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে কি অগ্রে পাঠিয়েছে এবং কি পশ্চাতে রেখে গেছে ।( ৭৫:১৩ ) হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম ( রাঃ ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, যখন ( আরবি ) সূরাটি নাযিল হয় এবং ( আরবি ) পর্যন্ত পৌছে তখন হযরত উমার ( রাঃ ) বলেনঃ “ পূর্ববর্তী সকল কথা এ জন্যেই বর্ণনা করা হয়েছে ।( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)

সূরা তাকবীর আয়াত 14 সূরা

علمت نفس ما أحضرت

سورة: التكوير - آية: ( 14 )  - جزء: ( 30 )  -  صفحة: ( 586 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. যখন যাদুকররা আগমণ করল, তখন ফেরআউনকে বলল, যদি আমরা বিজয়ী হই, তবে আমরা পুরস্কার পাব
  2. যারা কুফর করে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং সেই মসজিদে হারাম থেকে বাধা
  3. আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে।
  4. তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া
  5. মানুষ ধ্বংস হোক, সে কত অকৃতজ্ঞ!
  6. মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে
  7. এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
  8. অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে।
  9. যৎসামান্য সুখ-সম্ভোগ ভোগ করে নিক। তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
  10. আমি তাকে দাখিল করব অগ্নিতে।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা তাকবীর ডাউনলোড করুন:

সূরা Takwir mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Takwir শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত তাকবীর  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত তাকবীর  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত তাকবীর  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত তাকবীর  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত তাকবীর  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত তাকবীর  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত তাকবীর  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত তাকবীর  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত তাকবীর  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত তাকবীর  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত তাকবীর  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত তাকবীর  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত তাকবীর  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত তাকবীর  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত তাকবীর  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত তাকবীর  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত তাকবীর  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত তাকবীর  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত তাকবীর  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত তাকবীর  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত তাকবীর  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত তাকবীর  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত তাকবীর  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত তাকবীর  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত তাকবীর  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Wednesday, May 15, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب