কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 156 তাফসীর
﴿۞ وَاكْتُبْ لَنَا فِي هَٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ إِنَّا هُدْنَا إِلَيْكَ ۚ قَالَ عَذَابِي أُصِيبُ بِهِ مَنْ أَشَاءُ ۖ وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ ۚ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ﴾
[ الأعراف: 156]
আর পৃথিবীতে এবং আখেরাতে আমাদের জন্য কল্যাণ লিখে দাও। আমরা তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার আযাব তারই উপর পরিব্যাপ্ত। সুতরাং তা তাদের জন্য লিখে দেব যারা ভয় রাখে, যাকাত দান করে এবং যারা আমার আয়তসমুহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। [সূরা আ'রাফ: 156]
Surah Al-Araf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 156
''আর আমাদের জন্য বিধান করো এই দুনিয়াতেই কল্যাণ এবং পরকালেও, আমরা নিঃসন্দেহ তোমার দিকেই ফিরছি।’’ তিনি বললেন -- ''আমার শাস্তি -- তা দিয়ে আমি আঘাত হানবো যাকে ইচ্ছা করবো, কিন্তু আমার করুণা -- তা সব-কিছুই পরিবেষ্ঠন করে। সুতরাং আমি তা বিধান করবো তাদের জন্য যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে, আর যাকাত আদায় করে, আর যারা আমাদের নির্দেশাবলীতে বিশ্বাস করে, --
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৫৬. আপনি আমাদেরকে তাদেরই দলভুক্ত করুন যাদেরকে আপনি এ দুনিয়াতে বিভিন্ন রকমের নিয়ামত ও সুস্থতা দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং নেক আমলের তাওফীক দিয়েছেন। আর পরকালে আপনার নেককার বান্দাদের দলভুক্ত করুন যাদের জন্য আপনি জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন। আমরা আপনার নিকট তাওবা করছি। আমরা নিজেদের ত্রæটির কথা স্বীকার করে আপনার দিকেই ফিরে এসেছি। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: যারা দুর্ভাগ্যের উপকরণগুলো অবলম্বন করে আমি তাদেরকেই শাস্তি দেবো। আর আমার রহমত দুনিয়ার সব কিছুকেই শামিল করে। এমন কোন সৃষ্টি নেই যার নিকট আল্লাহর রহমত পৌঁছায়নি এবং তাকে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ বেষ্টন করে রাখেনি। তবে যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করে এবং যারা হকদারদেরকে নিজেদের সম্পদের যাকাত দেয় উপরন্তু যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাসী আমি অচিরেই পরকালে আমার রহমতদানে তাদেরকে সৌভাগ্যবান করবো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
এবং আমাদের জন্য ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নির্ধারণ কর, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করছি।’[১] আল্লাহ বললেন, আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছা দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া তা তো প্রত্যেক বস্তুতে পরিব্যাপ্ত।[২] সুতরাং আমি তা ( দয়া ) তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা সাবধান হয়, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে। [১] অর্থাৎ, তওবা করছি। [২] এটি মহান আল্লাহর করুণার পরিব্যাপ্তিই বটে যে, পৃথিবীতে সৎ-অসৎ মু'মিন-কাফের সবাই আল্লাহর করুণা হতে উপকৃত হচ্ছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, " আল্লাহর করুণার একশত অংশ আছে। তার মধ্যে একটি অংশ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। যার কারণে সৃষ্টি এক অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে থাকে; এমনকি পশুরাও নিজ নিজ বাচ্চার উপর মায়া করে নিজেদের পা তুলে নেয়। আর তিনি করুণার ৯৯ ভাগ অংশ নিজের কাছে রেখেছেন। " ( মুসলিম ২১০৮, ইবনে মাজাহ ৪২৯৩নং )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
‘আর আপনি আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে কল্যাণ লিখে দিন এবং আখেরাতেও। নিশ্চয় আমরা আপনার কাছে ফিরে এসেছি [ ১ ]।’ আল্লাহ্ বললেন ‘আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি আর আমার দয়া –তা তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে [ ২ ] কাজেই আমিই তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমাদের অয়াতসমূহে ঈমান আনে।
[ ১ ] কুরআনের শব্দ ( هُدْنا ) অর্থ আমরা ফিরে এসেছি অথবা তাওবাহ করেছি। কোন কোন
মুফাসসির বলেন, এই শব্দ থেকে তাদের নামকরণ করা হয়েছে ‘ইয়াহুদ’। [ ইবন কাসীর ]
[ ২ ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়েই অহংকার করল। জাহান্নাম বলল, হে রব! আমার কাছে প্রবেশ করে প্রতাপাম্বিতঅত্যাচারী, অহংকারী, রাজা-বাদশা ও নেতাগোছের লোকেরা। আর জান্নাত বলল, হে রব! আমার কাছে প্রবেশ করে দূর্বল, ফকীর, মিসকীনরা। তখন আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার শাস্তি। তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা আমি তাকে তা পৌঁছাই। আর জান্নাতকে বললনে, তুমি আমার রহমত, যা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর তোমাদের প্রত্যেককেই পূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। তখন জাহান্নামে তার বাসিন্দাদের নিক্ষেপ করা হবে......
" [ মুসনাদে আহমাদ ৩/১৩; ৭৮ ] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ আল্লাহ্ তাআলা একশত রহমত সৃষ্টি করেছেন । তা থেকে মাত্র একটি রহমত তিনি সৃষ্টিকুলকে দিয়েছেন। প্রতিটি রহমত আসমান ও যমীনের চেয়েও প্রকাণ্ড। এর কারণেই মা তার সন্তানকে দয়া করে, এর কারণেই পাখি ও জীব-জন্তু পানি পান করে। অতঃপর যখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, তখন তিনি সমস্ত সৃষ্টিকুল থেকে এ রহমতটি নিয়ে নিবেন এবং এটি ও বাকী ৯৯টির সবগুলিই তিনি মুত্তাকীদের জন্য নির্দিষ্ট করবেন। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহর এ আয়াত, “ কাজেই আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে"এর মর্ম । [ মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ ১৩/১৮২ ] কাতাদা ও হাসান বলেন, দুনিয়াতে তিনি নেককার ও বদকার সবার জন্যই রহমত লিখেছেন তবে আখেরাতে তা শুধু মুত্তাকীদের জন্য। আত-তাফসীরুস সহীহ ইবন আব্বাস বলেন, এখানে তাকওয়া অর্থ শির্ক থেকে বেঁচে থাকা। [ তাবারী ] কাতাদা বলেন, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। [ তাবারী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৫৫-১৫৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা ( আঃ )-কে সত্তরজন লোক নির্বাচন করার অধিকার দিয়েছিলেন। সুতরাং মূসা ( আঃ ) এরূপ সত্তরজন লোক নির্বাচন করে তাদেরকে নিয়ে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করার জন্যে রওয়ানা হন। কিন্তু যখন তারা আল্লাহর কাছে দু'আ করলো তখন নিম্নরূপ কথা বললোঃ“ হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন কিছু দান করুন যা আপনি ইতিপূর্বে কাউকে দান করেননি এবং না আমাদের পরে কাউকেও দান করবেন । তাদের এই প্রার্থনা আল্লাহ তা'আলার কাছে পছন্দনীয় হলো না। সুতরাং ভূমিকম্প তাদেরকে ঘিরে ফেললো। সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা ( আঃ )-কে এমন ত্রিশজনসহ আসতে বলেছিলেন যারা গো-বৎস পূজার কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল এবং দুআর জন্যে একটা সময় ও স্থান নির্ধারণ করেছিল। মূসা ( আঃ ) সত্তরজন লোক নির্বাচন করলেন, যাদেরকে নিয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে বের হলেন। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে নিয়ে অঙ্গীকার স্থলে পৌছলেন তখন তারা তাকে বললোঃ “ হে মূসা ( আঃ )! আমরা যে পর্যন্ত না আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখবো সেই পর্যন্ত আমরা ঈমান আনবো না । আপনি আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন। এখন আমাদেরকে দেখিয়ে দিন। এই আস্পর্ধামূলক কথার শাস্তি হিসেবে তাদের উপর বিদ্যুত পতিত হলো এবং সবাই ওখানে মরে পড়ে থাকলো। হযরত মূসা ( আঃ ) ক্রন্দনরত অবস্থায় উঠে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বললেনঃ “ হে আমার প্রভু! আমি এখন বানী ইসরাঈলের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে কি জবাব দেবো? এরা তো তাদের মধ্যে ভাল লোক ছিল, আপনি তাদেরকেও ধ্বংস করে দিলেন । হে আল্লাহ! যদি আপনি তাদের সাথে আমাকেও ধ্বংস করে দিতেন।”( হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ ) ও কোন কোন পূর্ববর্তী গুরুজন হতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে)হযরত মূসা ( আঃ ) বানী ইসরাঈলের মধ্য থেকে সত্তরজন খুবই ভাল লোককে বেছে নিয়েছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেনঃ “ চল, আল্লাহর কাছে যাই । তোমরা কওমের অবশিষ্ট লোকদের পক্ষ থেকে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তোমরা তাওবা কর, রোযা রাখ এবং শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নাও।” অতঃপর তিনি নির্ধারিত দিনে তাদেরকে নিয়ে দূরে সাইনার দিকে চললেন। এর সবকিছুই আল্লাহর অবগতি ও অনুমতিক্রমে হয়েছিল। এখন এই সত্তরজন লোক যারা মূসা ( আঃ )-এর পরিচালনাধীনে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এসেছিল তারা বললোঃ “ হে মূসা ( আঃ )! আল্লাহর সাথে আপনার বাক্যালাপ হয়ে থাকে, আমাদেরকে তা শুনতে দিন ।” হযরত মূসা ( আঃ ) বললেনঃ “ আচ্ছা, ঠিক আছে ।” অতঃপর যখন হযরত মূসা ( আঃ ) পাহাড়ের নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি একটা অত্যন্ত ঘন মেঘখণ্ডের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পাহাড়টিও মেঘের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। হযরত মূসা ( আঃ ) মেঘের মধ্যে ঢুকে পড়লেন এবং তার লোকগুলোকে বললেনঃ “ তোমরাও আমার নিকটবর্তী হয়ে যাও ।” মূসা ( আঃ ) যখন আল্লাহ তা'আলার সাথে কথা বলতেন তখন তাঁর মুখমণ্ডল এমন আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠতো যে, কেউই তার চেহারার প্রতি দৃষ্টি রাখতে পারতো । এজন্যে তিনি স্বীয় চেহারার উপর পর্দা ফেলে দিতেন। ঐলোকগুলো যখন মেঘখণ্ডের নিকটে এসে ওর মধ্যে প্রবেশ করলো তখন তারা সিজদায় পড়ে গেল । তারা মূসা ( আঃ ) ও আল্লাহর কথা শুনতে লাগলো। তিনি মূসা ( আঃ )-কে আদেশ ও নিষেধ করে বলেছিলেনঃ “ এটা কর এবং ওটা করো না ।” যখন তিনি ওটা থেকে মুক্ত হলেন এবং মেঘ সরে গেল তখন তিনি ঐ লোকদের দিকে মনঃসংযোগ করলেন। তারা তাঁকে বললোঃ “ হে মূসা ( আঃ )! যে পর্যন্ত না আপনি আমাদেরকে প্রকাশ্যভাবে আল্লাহকে দেখাবেন সে পর্যন্ত আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনবো না । তাদের এই ঔদ্ধত্যের কারণে বিজলী তাদেরকে পাকড়াও করলো। তাদের প্রাণপাখী দেহ থেকে বেরিয়ে গেল। তারা মৃত অবস্থায় পড়ে রইলো। এ দেখে হযরত মূসা ( আঃ ) বিলাপের সুরে বলতে লাগলেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনি যখন এদেরকে ধ্বংস করারই ইচ্ছে করেছিলেন তখন তাদের সাথে আমাকেও ধ্বংস করলেন না কেন? এরা বোকামীর কাজ করেছে । আমার পিছনে আপনি কি বানী ইসরাঈলকে ধ্বংস করে দিবেন?"হযরত আলী ইবনে আবদুল মুত্তালিব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, মূসা ( আঃ ), হারূন ( আঃ ), শাবর ও শাবীর প্রমুখ মিলে এক পাহাড়ের উপত্যকার দিকে গেলেন। হারূন ( আঃ ) একটি টিলার উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাঁকে মৃত্যু দান করেন। মূসা ( আঃ ) বানী ইসরাঈলের নিকট প্রত্যাবর্তন করলে তারা তাকে হারূন ( আঃ ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মূসা ( আঃ ) উত্তরে বলেন যে, তিনি মারা গেছেন। তারা তখন বলে- “ না, বরং সম্ভবতঃ আপনিই তাকে মেরে ফেলেছেন । তিনি অত্যন্ত নরম প্রকৃতির লোক ছিলেন।” মূসা ( আঃ ) তখন তাদেরকে বললেনঃ “ আচ্ছা, তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক বেছে নাও ।” তারা সত্তরজন লোক নির্বাচন করলো। অতঃপর তারা হারূন ( আঃ )-এর মৃতদেহের নিকট গেল এবং জিজ্ঞেস করলোঃ “ আচ্ছা বলুন তো আপনাকে কে হত্যা করেছে?" হারূন ( আঃ )-এর মৃতদেহ থেকে শব্দ আসলোঃ “আমাকে কেউই হত্যা করেনি । আমি স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছি।” লোকগুলো তখন বললোঃ “ হে মূসা ( আঃ )! এরপরে আর কখননা আমরা আপনার অবাধ্য হবো না ।” তারা শাস্তি এই পেলো যে, বিদ্যুৎ তাদেরকে ধ্বংস করে দিলো। হযরত মূসা ( আঃ ) বিনা কারণে ডানে বামে ঘুরতেন এবং বলতেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনি কি এই বোকা লোকদের কথায় আমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন? এটা তো আপনার পরীক্ষা ছিল । আপনি যাকে চান পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। আল্লাহ তা'আলা তখন তাদের সকলকেই জীবিত করে দিলেন এবং সকলকেই নবী করলেন। এটা হচ্ছে অত্যন্ত গারীব ও অবিশ্বাসযোগ্য হাদীস। এই হাদীসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে আম্মারা ইবনে উবাইদ নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত ব্যক্তি। ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেনঃ “ ঐ লোকগুলোর উপর শাস্তি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ ছিল এই যে, তাদের সামনে গো-বৎসের পূজা চলছিল, অথচ তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল । তাদের কওমকে তারা ঐ শিরকের কাজ থেকে নিষেধ পর্যন্ত করেনি।” এই জন্যেই হযরত মূসা ( আঃ ) তাদেরকে নির্বোধ নামে অভিহিত করেছেন। তাদের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেনঃ “ হে আল্লাহ! এটা আপনার একটা পরীক্ষা ।" নিম্নরূপে তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেছিলেনঃ “ হে আল্লাহ! এটাতো আপনার পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা । একমাত্র আপনারই হুকুম চলে থাকে। আপনি যা চান তাই হয়। হিদায়াত দান ও পথভ্রষ্টকরণ আপনারই হাতে। আপনি যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ কুপথ দেখাতে পারে না। আপনি যাকে দান থেকে বিমুখ করেন তাকে কেউ দান করতে পারে না। পক্ষান্তরে আপনি যাকে দান করেন তা তার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। রাজ্যের মালিক আপনিই। হুকুম দেয়ার অধিকার একমাত্র আপনারই রয়েছে। খাক ও আমর আপনার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।” এরপর মূসা ( আঃ ) আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনিই আমাদের অলী বা অভিভাবক । সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন ও আমাদের উপর দয়া করুন। কেননা, আপনিই তো হচ্ছেন সর্বোত্তম ক্ষমাশীল।”( আরবী ) শব্দের অর্থ হচ্ছে ঢেকে ফেলা, গোপন করা এবং পাপের কারণে পাকড়াও না করা। আর ( আরবী ) এর সঙ্গে যখন ( আরবী ) যুক্ত হয় তখন ভাবার্থ হয়। ক্ষমা করে দেয়ার পর আল্লাহ তা'আলার তাকে আগামীতে পুনরায় পাপে জড়িত না করা।“ হে আল্লাহ! আমাদের জন্যে এই দুনিয়াতেও কল্যাণ নির্ধারিত করে দিন এবং আখেরাতেও কল্যাণ নির্ধারিত করুন ।” ( আরবী ) -এর তাফসীর সূরায়ে বাকারায় হয়ে গেছে। “ আমরা তাওবা করেছি এবং আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করেছি ।” হযরত আলী ( রাঃ ) বলেন যে, বানী ইসরাঈল ( আরবী ) বলেছিল বলেই তাদের নাম ইয়াহুদী হয়ে গেছে। ( এটা ইবনে জারীর তাখরীজ করেছেন। ইবনে কাসীর (রঃ ) বলেন যে, এর জাবীর আলজাফী নামক বর্ণনাকারী দুর্বল)মূসা ( আঃ ) বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ! এটা আপনার পরীক্ষা। তাই ইরশাদ হচ্ছে- শাস্তি সেই পায় যাকে শাস্তি দেয়ার আমি ইচ্ছা করি এবং মনে করি যে, তার শাস্তি হওয়াই উচিত। নচেৎ, আমার করুণা তো প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে। আমি যা চাই তাই করি। প্রতিটি কাজে নিপণতা ও ন্যায় পরায়ণতার অধিকার আমারই । রহমতযুক্ত আয়াত খুবই বিরাট ও ব্যাপক এবং সবই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের মুখে উচ্চারিত হয়“ হে আমাদের প্রভু! আপনার করুণা ও জ্ঞান সব কিছুকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে ।”জুনদুব ইবনে আবদিল্লাহ আল বাজালী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একজন বেদুইন আসলো। সে তার উটটি বসিয়ে বাধলো। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পিছনে নামায পড়লো। নামায শেষে উষ্ট্ৰীটিকে খুলে সে ওর উপর সওয়ার হলো এবং দুআ করতে লাগলোঃ “ হে আল্লাহ! আপনি আমার উপর ও মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর উপর দয়া করুন । এই দয়ায় আপনি অন্য কাউকেও শরীক করবেন না। তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীগণকে বললেনঃ “ আচ্ছা বলতো, এই লোকটি বেশী পথভ্রষ্ট ও নির্বোধ, না তার উটটি ? সে যা বলছে তা তোমরা শুনেছো কি?” সাহাবীগণ বললেনঃ “হ্যা শুনেছি ।' তিনি বললেনঃ “ আল্লাহর রহমত অতি প্রশস্ত । তিনি স্বীয় রহমতকে একশ’ ভাগে ভাগ করেছেন। এক ভাগ তিনি সমস্ত মাখলুকের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন। দানব, মানব এবং চতুষ্পদ জন্তু সবাই এই অংশ থেকেই অংশ পেয়েছে। বাকী নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের জন্যে নির্দিষ্ট রেখেছেন। এখন বল তো, এই উভয়ের মধ্যে কে বেশী নির্বোধ?” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) ও ইমাম আহমাদ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সালমান ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আল্লাহ তাআলা স্বীয় রহমতকে একশ’ ভাগে ভাগ করেছেন । এই একশ’ ভাগের মধ্যে মাত্র এক ভাগ তিনি দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেছেন। এই এক ভাগ দেয়ার কারণেই সৃষ্টজীব একে অপরের উপর করুণা ও মমতা দেখিয়ে থাকে। এ কারণেই সমস্ত প্রাণী নিজেদের সন্তান ও বাচ্চাদের উপর স্নেহ ও দয়া প্রদর্শন করে থাকে। বাকী নিরানব্বই ভাগ করুণা তার কাছেই রয়েছে। এগুলোর প্রকাশ কিয়ামতের দিন ঘটবে। কিয়ামতের দিন এই একভাগ করুণার সাথে সঞ্চিত নিরানব্বই ভাগ করুণা মিলিয়ে দেয়া হবে।”আবু সাঈদ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আল্লাহর একশ’ ভাগ রহমত রয়েছে । এর মধ্যে মাত্র এক ভাগ মাখলুকের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন । এর দ্বারাই মানুষ, বন্য পশু এবং পাখী একে অপরের উপর দয়া দেখিয়ে থাকে। ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ ) ও ইমাম আহমাদ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) আল্লাহর শপথ! ধর্মের দিক দিয়ে যে ব্যক্তি পাপী এবং জীবিকা উপার্জনের দিক দিয়ে যে ব্যক্তি নির্বোধ সেও এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তিও জান্নাতে প্রবেশ করবে যাকে পাপের কারণে আগুন পরিবেষ্টন করেছে। তাঁর রহমত কিয়ামতের দিন এমনভাবে ছেয়ে যাবে যে, ইবলীসও তার থেকে কিছু অংশ পাওয়ার আশা পোষণ করবে।” ( এ হাদীসটি অত্যন্ত গারীব । সা’দ নামক এর একজন বর্ণনাকারী অপরিচিত ব্যক্তি )আল্লাহ পাক বলেনঃ ঐ ব্যক্তিই আমার রহমতের হকদার হবে, যে আমাকে ভয় করে ও পরহেজগারী অবলম্বন করে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ “ তোমার প্রভু নিজের জন্যে রহমতকে ফরয করে নিয়েছেন ।”‘তারা তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ শিক ও কাবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। আর তারা যাকাত প্রদান করে। বলা হয়েছে যে, এখানে যাকাত দ্বারা নসের যাকাত বুঝানো অথবা মালের যাকাত বুঝানো হয়েছে কিংবা দু'টোকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা, এটা হচ্ছে মক্কী আয়াত।তারা আমার আয়াত সমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করে অর্থাৎ ওগুলোর সত্যতা স্বীকার করে।
সূরা আ'রাফ আয়াত 156 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি,
- আপনি জানেন, যে রাত্রিতে আসে সেটা কি?
- এটা তাঁর কাছ থেকে অবতীর্ণ, যিনি ভূমন্ডল ও সমুচ্চ নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন।
- যখন তিনি মায়ের কোলে থাকবেন এবং পূর্ণ বয়স্ক হবেন তখন তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন।
- আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসল না।
- আর ও একটি বিজয় রয়েছে যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসেনি, আল্লাহ তা বেষ্টন করে আছেন।
- এবং বলল, আমাদের উপাস্যরা শ্রেষ্ঠ, না সে? তারা আপনার সামনে যে উদাহরণ উপস্থাপন করে তা
- মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হল। দু’টি মেয়াদের মধ্য থেকে যে
- এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং
- তোমাদের সামনে কি আমার আয়াত সমূহ পঠিত হত না? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers