কোরান সূরা কাহ্ফ আয়াত 16 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Kahf ayat 16 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা কাহ্ফ আয়াত 16 আরবি পাঠে(Kahf).
  
   

﴿وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنشُرْ لَكُمْ رَبُّكُم مِّن رَّحْمَتِهِ وَيُهَيِّئْ لَكُم مِّنْ أَمْرِكُم مِّرْفَقًا﴾
[ الكهف: 16]

তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন। [সূরা কাহ্ফ: 16]

Surah Al-Kahf in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Kahf ayat 16


আর স্মরণ করো! তোমরা তাদের থেকে এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাদের তারা উপাসনা করত সে-সব থেকে বিচ্ছিন্ন হলে, তখন তোমরা গুহার দিকে আশ্রয় নিলে। তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্য তাঁর করুণা বিস্তার করলেন, এবং তোমাদের জন্য তৈরি করলেন তেমাদের কাজকর্ম থেকে লাভজনক পরিস্থিতি।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৬. যখন তোমরা নিজেদের সম্প্রদায় থেকে দূরে সরে গেলে এবং তারা আল্লাহ ছাড়া যেগুলোর ইবাদাত করে সেগুলোকে তোমরা প্রত্যাখ্যান করলে উপরন্তু তোমরা এক আল্লাহরই ইবাদাত করছো তখন তোমরা নিজেদের ধর্মকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করো। তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তাঁর অুগ্রহের চাদর তোমাদের জন্য বিছিয়ে দিবেন। যার মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে শত্রæর হাত থেকে রক্ষা ও হিফাযত করবেন এবং তোমাদের সম্প্রদায়ের মাঝে জীবনযাপনের বিকল্প হিসেবে তোমরা আরো লাভবান হও এমন ব্যবস্থা তোমাদের জন্য সহজ করে দিবেন।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তোমরা যখন তাদের ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করে তাদের সংস্পর্শ হতে বিচ্ছিন্ন হলে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর;[১] তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করবার ব্যবস্থা করবেন।’ [১] অর্থাৎ, তোমরা যখন তোমাদের জাতির বাতিল উপাস্যসমূহ থেকে ( মানসিকভাবে ) পৃথক হয়েছ, তখন এবার দৈহিকভাবেও তাদের নিকট থেকে পৃথক হয়ে যাও। এ কথা গুহার অধিবাসীরা আপোসে বলল। তাই তারা এরপর এক গুহায় গিয়ে আত্মগোপন করল। এদিকে যখন তাদের নিখোঁজ হওয়ার কথা প্রচার হয়ে গেল, তখন তাদের খোঁজ করা হল। কিন্তু তারা ঐরূপ ব্যর্থ হল, যেরূপ নবী ( সাঃ )-এর খোঁজে মক্কার কাফেররা সেই 'সওর গুহা' পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁর সন্ধান পেতে ব্যর্থ হয়েছিল, যেখানে তিনি ( সাঃ ) আবূ বাকর সহ লুকিয়ে ছিলেন।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হলে তাদের থেকে ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ‘ইবাদাত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা আশ্রয় গ্রহণ কর []। তোমাদের রব তোমাদের জন্য তাঁর রহমত বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবনোপকরণের বিষয়টি সহজ করে দিবেন []। [] এ আয়াত থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, যদি কোথাও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে, সেখানে অবস্থান করলে তাওহীদ ও ঈমান বজায় রাখা সম্ভব হবে না তখন সেখান থেকে হিজরত করতে হবে। যেখানে গেলে দ্বীন নিয়ে থাকতে পারবে সেখানে তাকে যেতে হবে। আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন একজন ঈমানদারের সবচেয়ে বড় সম্পদ হবে কিছু ছাগল পাল যেগুলো নিয়ে সে পাহাড়ের চুড়া এবং বৃষ্টিস্নাত ভূমির পিছনে ছুটিতে থাকবে। তার মূল উদ্দেশ্য হবে ফিতনা থেকে তার নিজ দ্বীনকে বাঁচিয়ে রাখা। [ বুখারী: ১৯, ৩৩০০, সুনান আবু দাউদ: ৪২৩৭, মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৩ ] [ ইবন কাসীর ] [] তারা যখন তাদের দ্বীন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল মহান আল্লাহ তখন তাদের জন্য তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে সহজ সরল করে দিলেন। তারা পালিয়ে গুহাতে আশ্রয় নিল, তাদের জাতি তাদেরকে খুজে বের করতে অসমর্থ হলো এমনকি তৎকালীন বাদশাহও তাদের ব্যাপারে খোঁজাখুঁজি করে শেষে অপারগ হয়ে গেলেন। আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকরকেও এমনি এক সঙ্কটময় মুহুর্তে রক্ষা করেছিলেন। তারা উভয়ে সাওর গিরি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কুরাইশরা তাদের পিছু নিয়ে গর্তের মুখে প্রায় চলে আসছিল। কিন্তু তারা তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারল না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটু ভীত হয়ে বলেই ফেললেন, রাসূল! যদি তারা তাদের পায়ের নীচে তাকিয়ে দেখে তবে আমাদের দেখতে পাবেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশান্ত চিত্তে উত্তর করলেন: 'আবু বকর। যে দু’জনের জন্য তৃতীয় জন আল্লাহ রয়েছেন তাদের ব্যাপারে তোমার কি ধারণা? [ বুখারী: ৩৬৫৩, মুসলিম: ২৩৮১ ] মহান আল্লাহ গুহাবস্থানের এ ঘটনাটিকে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করে বলেছেন: “ যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং তিনি ছিলেন দুজনের দ্বিতীয়জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; তিনি তখন তাঁর সংগীকে বলেছিলেন, “বিষন্ন হয়ে না, আল্লাহ তো আমাদের সাথে আছেন ।” তারপর আল্লাহ তার উপর তার প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাকে শক্তিশালী করেন এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফিরদের কথা হেয় করেন। আল্লাহর কথাই সর্বোপরি এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ” [ সূরা আত-তাওবাহঃ ৪০ ] সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুহাবস্থানের ঘটনা আসহাবে কাহফের গুহাবস্থানের ঘটনা থেকে অধিক মর্যাদা, গুরুত্বপূর্ণ ও আশ্চর্যজনক।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


১৩-১৬ নং আয়াতের তাফসীর: এখান থেকে আল্লাহ তাআলা আসহাবে কাহফের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা শুরু করেছেন। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা সত্য দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং হিদায়াত লাভ করে। কুরায়েশদের মধ্যেও এটাই ঘটেছিল যে, যবুকরা তো সত্যের আহবানে সাড়া দিয়েছিল, কিন্তু বুড়োদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া সবাই ইসলাম থেকে সরে পড়ে ছিল।বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল খোদাভীরু, মুমিন এবং সুপথপ্রাপ্ত যুবকদের একটি দল। তারা তাদের প্রতিপালকের একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। তারা তার তাওহীদের উক্তিকারী ছিল। দৈনন্দিন তাদের ঈমান ও হিদায়াত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই ধরণের আরো আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা দলীল গ্রহণ করে ইমাম বুখারী ( রঃ ) প্রভৃতি সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ বলেন যে, ঈমান বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এর স্তরে হ্রাস বৃদ্ধি হতে থাকে। এখানে রয়েছেঃ “ আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম ।" অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হিদায়াত প্রাপ্তদের হিদায়াত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় ।" ( ৪৭:১৭ ) অন্য আয়াতে আছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যারা ঈমান এনেছে তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয় ।" ( ৯:১২৪ ) অন্য এক স্থানে আছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যেন তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান আরো বেড়ে নেয় ।( ৪৮:৪ ) কুরআন কারীমের এই বিষয়ের উপর আরো বহু আয়াত রয়েছে। বর্ণিত আছে যে, এই লোকগুলি হযরত ঈসা ইবনু মরিয়মের ( আঃ ) দ্বীনের উপর ছিলেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। তবে বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, এটা হযরত ঈসার ( আঃ ) পূর্বযুগের ঘটনা। এর একটি দলীল এটাও যে, যদি ঐ লোকগুলি খৃস্টান হতেন, তবে ইয়াহূদীরা এতো মনোযোগ ও গুরুত্বের সাথে তাদের অবস্থাবলী অবহিত হতো না এবং অন্যদেরকে অবহিত করারও চেষ্টা করতো না। অথচ ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কার কুরায়েশরা তাদের দু'জন প্রতিনিধিকে ইয়াহূদী আলেমদের কাছে পাঠিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ইয়াহুদী আলেমরা যেন তাদেরকে এমন কতকগুলি কথা বলে দেয় যা তারা মুহাম্মদকে ( সঃ ) জিজ্ঞেস করবে। তখন ইয়াহুদী আলেমরা প্রতিনিধিদ্বয়কে বলেছিলঃ “ তোমরা তাঁকে গুহাবাসীদের ঘটনা ও যুলকারনাইনের ঘটনা জিজ্ঞেস করবে এবং রূহ সম্পর্কেও প্রশ্ন করবে । এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, ইয়াহুদীদের কিতাবে এর বর্ণনা ছিল এবং এই ঘটনা তারা জানতো। এটা যখন প্রমাণিত হয়ে গেল। তখন এটা স্পষ্টভাবে বলা যেতে পারে যে, ইয়াহূদীদের কিতাব তো খৃস্টানদের কিতাবের পূর্বেকার। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “ আমি তাদেরকে তাদের কওমের বিরোধিতার উপর ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেছিলাম । তারা তাদের কওমের কোনই পরওয়া করে নাই। বরং তারা নিজেদের দেশ ত্যাগ করে এবং আরাম ও শান্তি সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দেয়।”পূর্ব যুগীয় কতকগুলি মনীষীর বর্ণনা রয়েছে যে, এই লোকগুলি রোমক ম্রাটের বংশধর এবং রোমের নেতৃস্থানীয় লোক ছিলেন। একবার তাঁরা তাদের কওমের সাথে উৎসব উদ্যাপন করতে গিয়ে ছিলেন। ঐ যুগের বাদশাহর নাম ছিল দাইয়ানুস। সে অত্যন্ত উদ্ধত ও কঠোর প্রকৃতির লোক ছিল। সে সকলকে শিরকের শিক্ষা দিতো এবং মূর্তি পূজা করাতো। এই যুবকগণও তাদের বাপ-দাদাদের সাথে এই উৎসব মেলায় গিয়েছিলেন। তথাকার তামাশা দেখে তাদের মনে ধারণা জন্মে যে, মূর্তি পূজা নিছক বাজে কাজ। ইবাদত-বন্দেগী ও উৎসর্গ এক মাত্র ঐ আল্লাহর জন্যেই হওয়া উচিত যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। সুতরাং এই লোকগুলি এক এক করে সেখান থেকে সরে পড়েন। তাদের একজন গিয়ে এক গাছের নীচে বসে পড়েন। পরে দ্বিতীয় জন, তৃতীয়জন, চতুর্থজন তথায় যান। মোট কথা, এক এক করে সবাই ঐ গাছের নীচে জমা হয়ে যান। অথচ একের অপরের সাথে কোন পরিচয় ছিল না। শুধু ঈমানের জ্যোতি তাদেরকে এক জায়গায় মিলিত করে। হাদীসে রয়েছে যে, রূহসমূহও একটা একত্রিত সেনাবাহিনী। রোযে আযলে যাদের পরস্পরের মধ্যে পরিচয় ঘটেছিল, দুনিয়াতেও তারা মিলে মিশে থাকছে। আর সেই দিন যারা পরস্পর অপরিচিত ছিল, দুনিয়াতে এসেও তাদের মধ্যে মতানৈক্য থেকে যাচ্ছে। ( এই হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে ) আরববাসীরা বলে যে, এক জাতিত্ব হচ্ছে মিলজুলের কারণ।গাছের নীচে উপবিষ্ট ঐ যুবকগণ নীরব ছিলেন। তাদের একের অপর হতে ভয় ছিল যে, যদি তিনি মনের কথা বলে দেন তবে তার সঙ্গী তার শক্ত হয়ে যাবেন। কারোই কারো সম্পর্কে কোন খবর ছিল না। তাঁরা জানতেন না যে, তাদের প্রত্যেকেই নিজের কওমের অজ্ঞতাপূর্ণ ও শিরকপূর্ণ কাজে অসন্তুষ্ট। অবশেষে তাদের মধ্যে একজন বুদ্ধিমান ও সাহসী যুবক সকলকে সম্বোধন করে বললেনঃ “ ভাইসব! আপনারা সবাই যে, সাধারণ ব্যস্ততপূর্ণ জনসমাবেশ ছেড়ে এখানে এসে বসেছেন । আমি চাই যে, প্রত্যেকেই এর কারণ প্রকাশ করবেন যে কারণে তিনি স্বীয় কওমকে ছেড়ে এসেছেন।” তখন একজন বলে উঠলেনঃ “ আমাকে তো আমার কওমের প্রথা, চাল-চলন ও রীতি-নীতি মোটেই ভাল লাগে না । আসমান ও যমীনের এবং আমাদের ও আপনাদের সৃষ্টিকর্তা যখন একমাত্র আল্লাহ তখন আমরা তাকে ছাড়া অন্যের ইবাদত কেন করবো?” তার এই কথা শুনে দ্বিতীয়জন বললেনঃ আল্লাহর কসম! এই ঘৃণাই আমাকে এখানে এনেছে ।" তৃতীয়জনও একথাই বললেন। যখন সবাই এই একই কারণ বর্ণনা করলেন, তখন সবার অন্তরেই প্রেমের এক ঢেউ খেলে গেল। একত্ববাদের আলোকে আলোকিত প্রাণ এই যুবকবৃন্দ পরস্পর সত্য ও খাটি বন্ধুতে পরিণত হয়ে গেলেন এবং তারা সহোদর ভাইদের চেয়েও বেশী একে অপরের শুভাকাংখী হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ইত্তেহাদ ও ইত্তেফাক হয়ে যায়। তারা তখন একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে নেন এবং সেখানে এক আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন। ক্রমে ক্রমে তাদের কওমের কাছেও তাদের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ে। সুতরাং তাদেরকে ধরে ঐ অত্যাচারী বাদশাহর নিকট নিয়ে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। বাদশাহ্ এ সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে নিজেদের একত্ববাদ ও মাযহাবের বর্ণনা দেন। এমন কি, স্বয়ং বাদশাহ্ তার ভাষদবর্গ এবং সারা দুনিয়াকে এর দাওয়াত দেন। তারা মন শক্ত করে নেন এবং পরিষ্কারভাবে বলে দেনঃ “ আমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক । তাকে ছাড়া অন্য কাউকেও মাবুদ বানিয়ে নেয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভ। আমাদের দ্বারা এটা কখনো হতে পারে না যে, তাকে ছাড়া অন্য কাউকেও আহবান করবো। কেননা, শিরক একেবারেই বাজে কাজ। আমরা এই কাজ কখনো করতে পারবো না। এটা অত্যন্ত বাজে ব্যাপার, অনর্থক কাজ ও বক্র পথ। আমাদের এই কওম মুশরিক। তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে আহবান করছে এবং তাদের ইবাদতে নিমগ্ন রয়েছে। এর কোন দলীল প্রমাণ তারা পেশ করতে পারবে না। সুতরাং তারা মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী।” বর্ণিত আছে যে, তাদের স্পষ্টবাদিতায় বাদশাহ অত্যন্ত রাগান্বিত হয় এবং তাদেরকে শাসান-গর্জন ও ভয় প্রদর্শন করে। সে নির্দেশ দেয়ঃ “ তাদের পোষাক খুলে নাও । এরপরেও যদি তারা বিরত না হয়, তবে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবো।”বাদশাহর এই কথায় তাদের অন্তর আরো দৃঢ় হয়ে যায়, কিন্তু তারা এটা অবগত হয়ে যান যে, এখানে থেকে তারা দ্বীনদারীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। তাই, তারা কওম, দেশ এবং আত্মীয়স্বজন সবকে ছেড়ে দেয়ার দৃঢ় সংকল্প করেন। এই হুকুমও রয়েছে যে, মানুষ যেন দ্বীনের ভয়ের সময় হিজরত করে। হাদীসে রয়েছে যে, খুব সন্ত্র মানুষের উত্তম মাল হবে বীর পাল, যেগুলি নিয়ে সে পাহাড়ে-পর্বতে ও মরুপ্রান্তরে বসবাস করবে এবং স্বীয় দ্বীনকে রক্ষার জন্যে পালিয়ে বেড়াবে। সুতরাং এইরূপ পরিস্থিতিতে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা শরীয়ত সম্মত। হাঁ, তবে যদি পরিস্থিতি এরূপ না হয় এবং দ্বীন নষ্ট হওয়ার ভয় না থাকে, তাহলে জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা, এমতাবস্থায় জুমআ ও জামাআতের ফজীলত হাত ছাড়া হয়ে যাবে। যখন এই লোকগুলি দ্বীন রক্ষার জন্যে এতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসর্গে উদ্যত হন, তখন তাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ “ ঠিক আছে, তোমরা যখন তাদের দ্বীন থেকে পৃথক হয়ে গেছে তখন দেহ হতেও পৃথক হয়ে পড় । যাও তোমরা কোন গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের উপর তোমাদের প্রতিপালকের করুণা বর্ষিত হবে। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের শত্রুদের দৃষ্টির অগোচরে রাখবেন। তোমাদের কাজ তিনি সহজ করে দিবেন এবং তোমাদের শান্তির ব্যবস্থা করবেন।" সুতরাং এই লোকগুলি সুযোগ বুঝে এখান থেকে পালিয়ে যান এবং পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন। দেখতে পাচ্ছিলেনা, অবশেষে তিনি কাফিরদের কালেমা নীচু করে দেন এবং নিজের কালেমা সুউচ্চ করেন। আল্লাহ মর্যাদাবান ও বিজ্ঞানময়।" সত্য তো এটাই যে, এই ঘটনাটি গুহাবাসীদের ঘটনা হতেও বেশী বিস্ময়কর ও অসাধারণ। একটি উক্তি এও আছে যে, কওম ও বাদশাহ ঐ যুবকদেরকে পেয়ে গিয়েছিল। যখন তারা তাদেরকে গুহায় দেখতে পায়, তখন তারা বলে ওঠেঃ “ বাঃ! আমরা তো এটাই চাচ্ছিলাম ।” অতঃপর তারা ঐ গুহার মুখটি একটি প্রাচীর দ্বারা বন্ধ করে দেয়, যাতে তারা ওর মধ্যেই মারা যান। কিন্তু এই উক্তির ব্যাপারে চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, কুরআন কারীমে রয়েছে যে, সকাল-সন্ধ্যায় তাদের উপর সূর্যের আলো যাওয়া-আসা করতো ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে মহান আল্লাহই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

সূরা কাহ্ফ আয়াত 16 সূরা

وإذ اعتزلتموهم وما يعبدون إلا الله فأووا إلى الكهف ينشر لكم ربكم من رحمته ويهيئ لكم من أمركم مرفقا

سورة: الكهف - آية: ( 16 )  - جزء: ( 15 )  -  صفحة: ( 295 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. আমি সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষিত করেছি।
  2. এবং ইসমাঈল, ই’দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী।
  3. তারা বলল, তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, রহমান আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা কেবল মিথ্যাই
  4. না, তিনি সত্যসহ আগমন করেছেন এবং রসূলগণের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
  5. এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর
  6. অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
  7. তারাই মানে, যারা শ্রবণ করে। আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করে উত্থিত করবেন। অতঃপর তারা তাঁরই দিকে
  8. আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। অতএব মুমিনগণ আল্লাহর উপর ভরসা করুক।
  9. অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মূসা,
  10. তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি আযাবের সময় নির্ধারিত না থাকত, তবে আযাব তাদের

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা কাহ্ফ ডাউনলোড করুন:

সূরা Kahf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Kahf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Friday, May 17, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب