কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 174 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Araf ayat 174 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা আ'রাফ আয়াত 174 আরবি পাঠে(Araf).
  
   

﴿وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
[ الأعراف: 174]

বস্তুতঃ এভাবে আমি বিষয়সমূহ সবিস্তারে বর্ণনা করি, যাতে তারা ফিরে আসে। [সূরা আ'রাফ: 174]

Surah Al-Araf in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 174


আর এইভাবে আমাদের নির্দেশাবলী আমরা ব্যাখ্যা করি যেন তারা ফিরে আসে।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৭৪. যেমনিভাবে আমি মিথ্যারোপকারী জাতিগুলোর পরিণামের ব্যাপারে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি তেমনিভাবে আমি এদের পরিণামের ব্যাপারেও আমার আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবো। যাতে তারা শিরক থেকে আল্লাহর তাওহীদ ও শিরকমুক্ত ইবাদাতের দিকে ফিরে আসে। যার অঙ্গীকার তারা ইতিপূর্বেই দিয়ে এসেছে।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আর এভাবে নিদর্শনসমূহ আমি বিবৃত করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আর এভাবে আমরা নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করি যাতে তারা ফিরে আসে []। [] এ আয়াতে আল্লাহর নিদর্শণাবলী বর্ণনার কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হচ্ছে যে, আমরা নিদর্শনগুলোকে সবিস্তারে বর্ণনা করে থাকি, যাতে মানুষ শৈথিল্য, গাফলতি ও অনাচার থেকে ফিরে আসে। অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে কেউ যদি সামান্য লক্ষ্যও করে, তাহলে সে সেই সৃষ্টিলগ্নের প্রতিজ্ঞা-প্রতিশ্রুতির দিকে ফিরে আসতে পারে। অর্থাৎ একটু লক্ষ্য করলেই তারা শির্ক থেকে ফিরে আসবে এবং আল্লাহ রাববুল আলামীনের পালনকর্তা হওয়ার স্বীকৃতি দিতে শুরু করবে। তার পথের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। [ মুয়াসসার ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


১৭২-১৭৪ নং আয়াতের তাফসীর: ইরশাদ হচ্ছে- আল্লাহ তা'আলা আদম ( আঃ )-এর সন্তানদেরকে তারই পৃষ্ঠদেশ হতে রোযে আযলে বাইরে বের করেন। তারা নিজেরাই নিজেদের উপর সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তাদের প্রতিপালক ও মালিক। তিনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নেই। এটাই হচ্ছে মানব প্রকৃতির স্বীকারোক্তি এবং এটাই তাদের স্বভাব । যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ তোমরা তোমাদের পূর্ণ মনোযোগ সত্য দ্বীনের প্রতি প্রতিষ্ঠিত রাখ । আল্লাহ এই প্রকৃতির উপরই মানুষের স্বভাব বানিয়েছেন। আল্লাহ যে জিনিসকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন ওটা ঐভাবেই প্রতিষ্ঠিত থাকবে, এতে কোন পরিবর্তন ঘটবে না।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তান স্বীয় প্রকৃতির উপর সৃষ্ট হয়। ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন- আমি আমার বান্দাদেরকে শিরক থেকে দূরে সরিয়ে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু শয়তানরা এসে তাদেরকে দ্বীনে হক থেকে সরিয়ে দেয় এবং আমি যা হালাল রেখেছি তা তারা হারাম করিয়ে দেয়। অন্য বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ প্রত্যেক সন্তান স্বীয় ইসলামী মাযহাবের উপর সৃষ্ট হয়ে থাকে । কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান এবং মাজুসী বানিয়ে দেয়। যেমন চতুষ্পদ জন্তু ভাল ও নিখুঁত ভাবেই সৃষ্ট হয়, কোনটি কি কানকাটা রূপে সৃষ্ট হয়? কিন্তু পরে তার কান কেটে নিয়ে তাকে বিগড়িয়ে দেয়া হয়।” আসওয়াদ ইবনে সারী ( রাঃ ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে আমি চারটি জিহাদে শরীক ছিলাম। মুজাহিদরা কাফিরদেরকে হত্যা করে তাদের শিশু সন্তানদের ধরে নেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এ সংবাদ পেয়ে খুবই অসন্তুষ্ট হন। তিনি বলেনঃ লোকদের কি হয়েছে যে, তারা শিশুদেরকে ধরতে রয়েছে? কোন একজন জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এরা কি মুশরিকদের শিশু নয়? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার ভাল ভাল লোকেরাও তো মুশরিকদেরই সন্তান। কোন প্রাণ এমন নেই যা ইসলামের ভিত্তির উপর সৃষ্ট হয় না। যে পর্যন্ত না সে পিতা মাতার ভাষা শিখে নেয় সে পর্যন্ত মুসলমানই থাকে। অতঃপর তার পিতামাতাই তাকে খ্রীষ্টান বা ইয়াহূদী বানিয়ে দেয়। ( এটা ইবনে জারীর বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আহমাদ (রঃ ) ও ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) এটা তাখরীজ করেছেন) হাদীসসমূহে বর্ণিত আছে যে, আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠদেশ হতে তার সন্তানদেরকে বের করা হয় এবং তাদেরকে ডানদিক ওয়ালা ও বামদিক ওয়ালা বানানো হয়। আর তাদের নিকট থেকে সাক্ষ্য নেয়া হয় যে, আল্লাহই তাদের প্রতিপালক।হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন একজন জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করা হবে- যদি তুমি যমীনের সবকিছুর মালিক হয়ে যাও, তবে এ সবকিছু মুক্তিপণ হিসেবে দিয়েও কি তুমি জাহানাম থেকে মুক্তি লাভ করতে চাবে? সে উত্তরে বলবেঃ হ্যা। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “ আমি তো তোমার কাছে এর চেয়ে বহু কম চেয়েছিলাম! আমি আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠদেশ থেকেই তোমার কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তুমি আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না । কিন্তু তুমি শরীক করে বসেছিলে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম বুখারী ( রঃ ) এবং ইমাম মুসলিম ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনআরাফার দিন ( ৯ই যিলহজ্ব ) নু'মান নামক স্থানে রূহসমূহের নিকট ওয়াদা নেয়া হয়েছিল। আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠদেশ হতে ওগুলোকে বের করে পিঁপড়ার মত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং ওগুলোকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?” সবগুলোই সমস্বরে উত্তর দিয়েছিলঃ “হ্যা.
অবশ্যই ।
( (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) এবং ইমাম ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকিমও ( রঃ ) এটা স্বীয় গ্রন্থ মুসতাদরিকে বর্ণনা করেছেন)জাবির ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যহহাক ইবনে মাযাহিম ( রঃ )-এর একটি ছেলে মারা যায় যে মাত্র ছ'দিনের শিশু ছিল। তখন যহ্হাক ( রঃ ) বলেনঃ “ হে জাবির? যখন তুমি একে কবরে রাখবে তখন তার চেহারাটি ভোলা অবস্থায় রাখবে । কেননা, শিশুটিকে বসানো হবে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে।” ( জাবির বলেনঃ ) আমি তখন তাই করলাম। অতঃপর আমি যহ্হাক ( রঃ )-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ছেলেকে কি জিজ্ঞেস করা হবে এবং কে জিজ্ঞেস করবেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ তাকে রোযে আযলের অঙ্গীকারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, যখন আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠদেশে রূহসমূহের নিকট থেকে দাসত্বের স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছিল ।” আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, ঐ অঙ্গীকার কি ছিল? তিনি উত্তর দিলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা যখন আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠদেশ স্পর্শ করলেন তখন ওর মধ্য থেকে ঐ রূহগুলো বেরিয়ে পড়লো যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত আদম ( আঃ )-এর বংশ থেকে পৃথিবীতে আসবে । তারপর ওদের নিকট থেকে ওয়াদা নেয়া হয় যে, তারা ইবাদত শুধু আল্লাহরই করবে, অন্য কাউকেও তাঁর শরীক বানাবে না। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাদের জীবিকার জিম্মাদার হন। এরপর ঐ আত্মািগুলোকে আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠদেশে ফিরিয়ে দেয়া হয়। যে পর্যন্ত এই অঙ্গীকারাবদ্ধরা সৃষ্ট হতে থাকবে সে পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। এখন যে ব্যক্তি পরবর্তী অঙ্গীকার গ্রহণের সুযোগ পাবে এবং ওটাকে সুন্দরভাবে আদায় করবে, পূর্ববর্তী অঙ্গীকারও তার পক্ষে লাভজনক হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরবর্তী অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হবে, পূর্ববর্তী অঙ্গীকার তার জন্যে মোটেই লাভজনক হবে না। আর যে ব্যক্তি পরবর্তী অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার ও ভাল ভাল কাজ করার সুযোগে লাভের পূর্বেই মারা যাবে, তার ব্যাপারে বুঝতে হবে যে, পূর্ববর্তী অঙ্গীকার অনুযায়ী ইসলামী ফিতরাতের উপরই সে মারা গিয়েছে।” এ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) এ সবকিছু ভালভাবে অবগত ছিলেন। আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা যখন হযরত আদম ( আঃ ) হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করেন তখন তারা এমনিভাবে বেরিয়ে পড়ে যেমনিভাবে চুলে চিরুণী করার সময় চুলগুলো চিরুণীর মধ্য চলে আসে । তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ আমি কি তোমাদের প্রভু নই? তারা সমস্বরে উত্তর দিলো- হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রভু।” ফেরেশতারা বললেনঃ “ কিয়ামতের দিন তোমরা যেন বলতে না পার যে, এটা তোমরা অবগত ছিলে না এ জন্যে আমরা সাক্ষী থাকলাম ।”এই আয়াতের ব্যাপারে হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ ) বলেনঃ এ সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞাসিত হতে শুনেছি। উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ হযরত আদম ( আঃ )-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা'আলা তাঁর পৃষ্ঠদেশে হাত ফিরালে তাঁর সন্তানরা বের হতে শুরু করে। তখন তিনি বলেন, “ এরা সব জান্নাতবাসী । কেননা, এরা জান্নাতবাসীরই আমল করবে।” আবার তিনি তাঁর পৃষ্ঠে হাত বুলালেন। এবারও অনেকগুলো সন্তান বেরিয়ে আসলো। তিনি বললেনঃ “ এরা হচ্ছে জাহান্নামী । কেননা, এরা জাহান্নামীদেরই আমল করবে।” তখন একটি লোক জিজ্ঞেস করলোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তাহলে আমল করে লাভ কি”? রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বললেনঃ “আল্লাহ তা'আলা ঐ বান্দাকেই জান্নাতের জন্যে সৃষ্টি করেছেন যার আমল হবে জান্নাতবাসীর আমল এবং ওর উপরই সে মৃত্যুবরণ করবে । সুতরাং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে তিনি তাঁর ঐ বান্দাকেই জাহান্নামের জন্যে সষ্টি করেছেন যার আমল হবে জাহান্নামবাসীর আমল এবং ওর উপরই সে মৃত্যুবরণ করবে। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ), ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) এবং ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ যখন হযরত আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠদেশ হতে তাঁর সন্তানগুলো বেরিয়ে আসে তখন প্রত্যেক মানুষের কপালে একটা আলোক চমকাচ্ছিল। সমস্ত সন্তানকে হযরত আদম ( আঃ )-এর সামনে পেশ করা হয়। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ হে আমার প্রভু! এরা কারা? তিনি উত্তরে বলেনঃ এরা তোমারই বংশধর। একটি লোকের চেহারায় ঔজ্জ্বল্য খুবই বেশী ছিল। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার প্রতিপালক! এটা কে? আল্লাহ উত্তর দিলেন, বহু যুগ পরে এটা তোমারই বংশের একটা লোক হবে যার নাম হবে দাউদ ( আঃ )। আদম ( আঃ ) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহ! এর বয়স কত হবে? উত্তর হয়, ষাট বছর। তখন আদম ( আঃ ) বলেনঃ হে আমার প্রভু! আমি আমার বয়স থেকে চল্লিশ বছর একে দান করলাম। কিন্তু হযরত আদম ( আঃ )-এর বয়স যখন শেষ হয়ে গেল তখন মালাকুল মাউত এসে তার কাছে হাজির হলেন। তিনি ফেরেশতাকে বললেনঃ “ এখনই কেন আসলেন? এখনও তো আমার বয়সের চল্লিশ বছর বাকী রয়েছে?” তখন তাঁকে বলা হয়, এই চল্লিশ বছর কি আপনি আপনার সন্তান দাউদ ( আঃ )-কে দান করেননি? তখন আদম ( আঃ ) তা অস্বীকার করলেন । এজন্যে তাঁর সান্তানদেরও অস্বীকার করার স্বভাব হয়ে গেছে। আদম ( আঃ ) ভুলে গিয়েছিলেন বলে তাঁর সন্তানরাও ভুলে যায়। আদম ( আঃ ) অপরাধ করেছিলেন বলে তাঁর সন্তানরাও অপরাধ করে। ( এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন) আদম ( আঃ ) যখন তাঁর সন্তানদেরকে দেখেছিলেন তখন তাদের মধ্যে রুগ্ন, কুষ্ঠরোগী অন্ধ ইত্যাদি সবই ছিল। আদম ( আঃ ) বলেছিলেন- “ হে আমার প্রতিপালক! এদেরকে এরূপ কেন করা হয়েছে?” আল্লাহ তাআলা উত্তরে বলেছিলেন- “এর কারণ এই যে, যেন মানুষ সর্বাবস্থায় আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ।” আদম ( আঃ ) পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, “ হে আমার প্রভু! আপাদমস্তক নূর বিশিষ্ট এই লোকগুলো কে? উত্তর হয়েছিলএরা হচ্ছে নবী । কোন একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) ! আমলগুলো নতুনভাবে কি ফলদায়ক, না যা হবার তা হয়েই গেছে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ আদম ( আঃ ) থেকে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সন্তানদেরকে বের করেন। তারপর তিনি তাদের মুখ থেকেই তাঁর একত্ববাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে স্বীয় দু' মুষ্টিতে ভরে নেন এবং বলেনঃ “ এই মুষ্টির লোকগুলো জান্নাতী এবং ঐ মুষ্টির লোকগুলো জাহান্নামী । জান্নাত ও জাহান্নাম আমলের উপর নির্ভরশীল বটে, কিন্তু জান্নাতবাসীর আমল কার জন্যে সহজ হবে এবং জাহান্নামবাসীর আমল কার জন্যে সহজ হবে এটা আমার জানা আছে। এখন এর উপর ভিত্তি করেই কেউ জান্নাতী হবে এবং কেউ জাহান্নামী হবে। আযলের দিন আমি তাদেরকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বানাইনি। তাদের আমলগুলোই তাদের যিম্মাদার । কিন্তু তখন থেকেই আমি তাদের আমল সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।” ( এটা হিশাম ইবনে হাকীম (রঃ )-এর নীতিতে ইবনে জারীর ( রঃ ) ও ইবনে মিরদুওয়াই ( রঃ ) বর্ণনাকরেছেন)এজন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ অমুক জান্নাতী হবে এবং অমুক জাহান্নামী হবে। এই ভাগ বন্টন আমার বলার উপর ভিত্তি করে নয়, বরং আমলের উপর ভিত্তি করে। আমরা হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ )-এর হাদীসটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেন- “ যখন আল্লাহ তা'আলা মাখলুককে সৃষ্টি করে ভাগ করে দিলেন, তখন আত্মগুলো ডানদিকে ও বামদিকে অবস্থান করছিল । আল্লাহ তা'আলা উভয় দিকের আত্মাগুলোকেই জিজ্ঞেস করলেনঃ “ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?” সবাই স্বীকারোক্তি করলোঃ “হ্যা! আপনিই আমাদের প্রতিপালক ।” তারপর মহান আল্লাহ ডানদিকের ও বামদিকের আত্মাগুলোকে মিশ্রিত করে দিলেন। কেউ জিজ্ঞেস করলোঃ “ হে আল্লাহ! এরা তো দু'ভাগে বিভক্ত ছিল, এদেরকে মিশ্রিত করলেন কেন?” আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বললেনঃ তাতে কোন ক্ষতি নেই । নিজ নিজ আমলের কারণে এরা এখনও পথকই থাকবে। মিশ্রত করলেও ভাল ও মন্দের কখনও মিশ্রণ হতে পারে না। আমি এরূপ না করলে কিয়ামতের দিন পাপীরা বলতোঃ “ আমরা তো এটা অবগত ছিলাম না । তবে ভাল লোকেরা কোন অবস্থাতেই এটা বলবে না। এখন ব্যাপার থাকলো শুধু আমলের উপর। তাহলে পাপীদের কোন আপত্তি করার বা অজানা থাকার ওযরের কোন সুযোগ থাকলো না। এটা আমরা আবু উমামা ( রাঃ )-এর হাদীসের ব্যাখ্যা দিলাম। কিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্ট হতে থাকবে সেই সব আত্মার আকৃতি দান করলেন, কথা বলার শক্তি দিলেন, তাদের কাছে অঙ্গীকার নিলেন এবং ঐ অঙ্গীকারের উপর আসমান ও যমীনকে সাক্ষী বানানো হলো। আদম ( আঃ ) সাক্ষী থাকলেন। নতুবা তারা তো কিয়ামতের দিন পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করতো। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বললেনঃ “ জেনে রেখো যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ মা'বুদ নেই । কাউকেই তোমরা আমার শরীক বানাবে না। আমি তোমাদের কাছে নবী-রাসূল প্রেরণ করবে। তারা তোমাদেরকে এই অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করাবে। আমি কিতাবসমূহ প্রেরণ করবো। তখন আত্মাগুলো সমস্বরে বলবেঃ “ আপনি ছাড়া আমাদের অন্য কোন মা'বুদ নেই ।” তারা আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকারোক্তি করলো। আদম ( আঃ )-কে তাদের সামনে আনা হলো। আদম ( আঃ ) দেখলেন যে, তাদের মধ্যে ধনী, গরীব, সুন্দর ও বিশ্রী সবই রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার প্রভু! সমস্ত লোককে সমান করে সৃষ্টি করেননি কেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল কে তা জানবার আমার খুবই আগ্রহ ছিল । সবাই এক হলে এ পরীক্ষা কিভাবে হতো।” তাদের মধ্যে নবীরা উজ্জ্বল প্রদীপের মত বিরাজ করছিলেন। এই রিসালাত ও নবুওয়াত ছিল দ্বিতীয় অঙ্গীকার যে, আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকারোক্তির পর রিসালাতের স্বীকারোক্তিও হাক। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ আমি নবীদের কাছেও অঙ্গীকার নিয়েছিলাম । তা ছিল-দ্বীনে হানীফকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে তোমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হও, যা হচ্ছে একটা স্বাভাবিক ধর্ম।”এই সাক্ষ্য নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, মানুষ তাওহীদের প্রকৃতির উপর সৃষ্টি হয়েছে। এজন্যেই ( আরবী ) না বলে ( আরবী ) বলা হয়েছে। অর্থাৎ শুধু আদম ( আঃ ) নয়, বরং আদম ( আঃ )-এর সমস্ত সন্তানই তাওহীদের ফিতরাত বা প্রকৃতির উপর সৃষ্টি হয়েছে। আর এ জন্যেই ( আরবী ) না বলে ( আরবী ) বলা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ তিনি তোমাদের সকলকে এককভাবে যমীনের প্রতিনিধি বানিয়েছেন ।” অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন- “ যেমন আমি তোমাদেরকে অন্য সম্প্রদায়ের সন্তানদের হতে সৃষ্টি করেছি ।”আর তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- “ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?” তারা সমস্বরে উত্তর করলোঃ “হ্যা! আমরা সাক্ষী থাকলাম ।” অর্থাৎ অবস্থা ও উক্তি উভয় রূপেই তারা স্বীকারোক্তি করলো। কেননা, সাক্ষ্য কোন সময় উক্তির মাধ্যমে হয়। যেমনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তারা বললো- আমরা নিজেদের উপর সাক্ষ্য দান করলাম ।( ৬:১৩০ ) আবার কোন সময় অবস্থার মাধ্যমেও হয়ে থাকে। যেমনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ মুশরিকদের এই অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেদের উপর কুফরীর সাক্ষ্য দানকারী ।( ৯ ১৭ ) অর্থাৎ তাদের অবস্থাই তাদের কুফরীর সাক্ষ্য বহনকারী। এই সাক্ষ্য মুখের সাক্ষ্য নয়, বরং অবস্থার সাক্ষ্য। আর যা কখনো -এর মাধ্যমে হয়, আবার কখনো অবস্থার মাধ্যমে হয়। যেমন বলা হয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা যা কিছু চেয়েছে আল্লাহ তোমাদেরকে তাই প্রদান করেছেন ।( ১৪:৩৪ ) এই কথার উপর এই দলীলও হচ্ছে যে, তাদের শিরক করার উপর এই হুজ্জত তাদের বিপক্ষে পেশ করা হয়েছে। যদি এটা সত্যই হয়, যেমন একটা উক্তি রয়েছে, তবে সবারই এটা স্মরণ থাকা উচিত ছিল, যাতে ওটা তার উপর হুজ্জত হতে পারে। যদি এর উত্তর এই হয় যে, রাসূলদের ফরমান দ্বারা খবর পেয়ে যাওয়াই যথেষ্ট। তাহলে এর উত্তর হবে এই যে, যারা রাসূলদেরকে মানেই না তারা তাদের দেয়া খবরকে কিভাবে সত্য বলে মেনে নেবে? অথচ কুরআন কারীম রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ছাড়া স্বয়ং ঐ সাক্ষ্যকেই একটি পৃথক দলীল বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং এর দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হচ্ছে যে, এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার ফিতরাতকেই বুঝানো হয়েছে যার উপর তিনি সমস্ত মাখলুককে সৃষ্টি করেছেন। আর ওটাই হচ্ছে আল্লাহর তাওহীদের ফিতরাত। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “ যেন তোমরা কিয়ামতের দিন একথা বলতে না পার- আমাদের পূর্বপুরুষরাই তো আমাদের পূর্বে শিরক করেছিল, আমরা ছিলাম তাদের পরবর্তী বংশধর । সুতরাং আপনি কি আমাদেরকে সেই ভ্রান্ত ও বাতিলদের কৃতকর্মের দরুন ধ্বংস করবেন?”

সূরা আ'রাফ আয়াত 174 সূরা

وكذلك نفصل الآيات ولعلهم يرجعون

سورة: الأعراف - آية: ( 174 )  - جزء: ( 9 )  -  صفحة: ( 173 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
  2. আমি ইচ্ছা করলে আপনার কাছে ওহীর মাধমে যা প্রেরণ করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম।
  3. আকাশ ও পৃথিবীর চাবি তাঁর কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত
  4. আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর।
  5. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে, সজীব,
  6. বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
  7. বাদশাহ বললঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে নিজের বিশ্বস্ত সহচর করে রাখব। অতঃপর
  8. আপনি তাদেরকে জীবনের প্রতি সবার চাইতে, এমনকি মুশরিকদের চাইতেও অধিক লোভী দেখবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা
  9. কসম তূরপর্বতের,
  10. যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:

সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Friday, November 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers