কোরান সূরা মুজাদালা আয়াত 19 তাফসীর
﴿اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ﴾
[ المجادلة: 19]
শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভূলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত। [সূরা মুজাদালা: 19]
Surah Al-Mujadilah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Mujadilah ayat 19
শয়তান তাদের উপরে কাবু করে ফেলেছে, সেজন্য সে তাদের আল্লাহ্কে স্মরণ করা ভুলিয়ে দিয়েছে। এরাই হচ্ছে শয়তানের দল। এটি কি নয় যে শয়তানের সাঙ্গোপাঙ্গরা নিজেরাই তো ক্ষতিগ্রস্ত দল?
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৯. তাদের উপর শয়তান চড়ে বসেছে। ফলে সে তার প্ররোচনার মাধ্যমে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রেখেছে। তাই তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজ না করে বরং তাঁর অসন্তুষ্টির কাজে লিপ্ত হয়েছে। এ সব বৈশিষ্ট্যের লোক হলো ইবলীসের অনুসারী ও তার চেলা-চামুÐা। জেনে রেখো, ইবলীসের অনুসারী ও চেলারা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা, তারা হেদায়েতকে ভ্রষ্টতার বিনিময়ে এবং জান্নাতকে জাহান্নামের বিনিময়ে বিক্রি করেছে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করেছে,[১] ফলে তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ।[২] তারা হল শয়তানের দল। জেনে রেখো যে, নিশ্চয় শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত। [৩] [১] اسْتَحْوَذَ এর অর্থ হল, ঘিরে নিয়েছে, বেষ্টন করে নিয়েছে, একত্রিত করে নিয়েছে। এই জন্য এর অনুবাদ করা হয় প্রভুত্ব বা আধিপত্য বিস্তার করেছে। কারণ, এর মধ্যে সব অর্থই চলে আসে। [২] অর্থাৎ, তিনি তাদেরকে যেসব কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা থেকে শয়তান তাদেরকে উদাসীন করে দেয় এবং যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, সে কাজগুলো শয়তান তাদের দিয়ে করিয়ে নেয়। কাজগুলো তাদের সামনে সুশোভিত রূপে তুলে ধরে অথবা তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে কিংবা বহু আশা ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পতিত করে ( এ সব কাজ করিয়ে নেয় )। [৩] অর্থাৎ, পরিপূর্ণ ক্ষতি তাদের ভাগ্যেই জুটবে। যেন অন্যরা তাদের তুলনায় কোন ক্ষতির মধ্যেই নেই। কারণ, তারা জান্নাতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে। আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে মিথ্যা কসম খেয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে ; ফলে তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ। তারাই শয়তানের দল। সাবধান ! নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্ৰস্ত [ ১ ]। [ ১ ] মাদান ইবনে আবি তালহা আল-ইয়ামুরী বলেন, আমাকে আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি কোথায় থাক? আমি বললাম, হিমসের নিকটে একটি জনপদে। তখন আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “ কোন জনপদে কিংবা বেদুইনদের তাঁবুতে তিনজন লোক থাকার পরও যদি সেখানে সালাত কায়েম করা না হয় তবে শয়তান সেখানে প্রভাব বিস্তার করে । সুতরাং তুমি জামা'আতের ( সালাতের জামা'আতের ) সাথে জীবন অতিবাহিত করা। কেননা, নেকড়ে কেবল দলছুটকেই খায়।” [ আবু দাউদ: ৫৪৭, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৮২, ৪৮৩ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৪-১৯ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে আল্লাহ্ তা'আলা মুনাফিকদের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা অন্তরে ইয়াহুদীদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করে, কিন্তু প্রকৃত তারা এ ইয়াহদীদেরও দলভুক্ত নয় এবং মুমিনদেরও দলভুক্ত নয়। তারা এদিকেরও নয়, ওদিকেরও নয়। তারা প্রকাশ্যভাবে মিথ্যা শপথ করে থাকে। মুমিনদের কাছে এসে তারা তাদের পক্ষেই কথা বলে। রাসূল ( সঃ )-এর কাছে এসে কসম খেয়ে তারা নিজেদেরকে ঈমানদার হিসেবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে এবং বলে যে, তারা নিশ্চিতরূপে মুসলমান। অথচ অন্তরে তারা সম্পূর্ণ বিপরীত মত পোষণ করে। তারা যে মিথ্যাবাদী এটা জেনে শুনেও মিথ্যা শপথ করতে মোটেই দ্বিধা বোধ করে না। তাদের এই দুস্কার্যের কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন কঠিন শাস্তি। এই প্রতারণার জন্যে তাদেরকে মন্দ প্রতিদান দেয়া হবে। তারা তো তাদের শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং মানুষকে তারা আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত করে। মুখে তারা ঈমান প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরী গোপন রাখে। কসমের মাধ্যমে তারা নিজেদের ভিতরের দুস্কৃতিকে গোপন করে। অভিজ্ঞ লোকদের উপর তারা কসমের দ্বারা নিজেদেরকে সত্যবাদী রূপে পেশ করে এবং তাদেরকে তাদের প্রশংসাকারী বানিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে তারা তাদেরকে নিজেদের রঙে রঞ্জিত করে এবং এই ভাবে তাদেরকে আল্লাহর পথ হতে ফিরিয়ে রাখে। মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেন যে, এই মুনাফিকদের জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর শাস্তির মুকাবিলায় তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদের কোনই কাজে আসবে না, তারা জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, কখনই তাদেরকে সেখান হতে বের করা হবে না। কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তাদের সকলকেই এক ময়দানে একত্রিত করবেন, কাউকেও বাদ রাখবেন না তখন দুনিয়ায় যেমন তাদের অভ্যাস ছিল যে, নিজেদের মিথ্যা কথাকে তারা শপথ করে সত্যরূপে দেখাতো, অনুরূপভাবে ঐ দিনও তারা আল্লাহর সামনে নিজেদের হিদায়াত ও সঠিক পথের অনুসারী হওয়ার উপর বড় বড় কসম খাবে এবং মনে করবে যে, সেখানেও বুঝি তাদের চালাকী ধরা পড়বে না। কিন্তু মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহর কাছে কি তাদের এই ফাকিবাজি ধরা না পড়ে থাকতে পারে? তিনি তো তাদের মিথ্যাবাদী হওয়ার কথা এ দুনিয়াতেও মুমিনদের নিকট বর্ণনা করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ সাবধান! তারাই তো মিথ্যাবাদী।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, ( একদা ) নবী ( সঃ ) তাঁর কোন এক কক্ষের ছায়ায় বসেছিলেন এবং কিছু সাহাবায়ে কিরামও ( রাঃ ) তাঁর নিকট ছিলেন। ছায়াযুক্ত স্থান কম ছিল। কষ্ট করে তারা সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “ দেখো, এখানে এখনই এমন একজন লোক আসবে যে শয়তানী দৃষ্টিতে তাকাবে । সে আসলে তোমরা কেউই তার সাথে কথা বলবে না।” অল্পক্ষণের মধ্যেই একজন কয়বা চক্ষু বিশিষ্ট লোক আসলো। রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেনঃ “ তুমি এবং অমুক অমুক লোক আমাকে গালি দাও কেন?” একথা শুনেই লোকটি চলে গেল এবং রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) যে কয়েকজনের নাম করেছিলেন তাদের সবাইকে সে ডেকে নিয়ে আসলো এবং সবাই শপথ করে করে বললো যে, তাদের কেউই রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-কে বেয়াদবী মূলক কথা বলেনি । তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ তারা ( আল্লাহর নিকট ) সেই রূপ শপথ করবে যেই রূপ শপথ তোমাদের নিকট করে এবং তারা মনে করে যে, তাতে তারা উপকৃত হবে । সাবধান! তারাই তো মিথ্যাবাদী।” এই একই অবস্থা, আল্লাহর দরবারে মুশরিকদেরও হবে যে, তারা বলবেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর শপথ! আমরা মুশরিক ছিলাম না ।” ( ৬:২৩ ) এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করেছে এবং তাদের অন্তরকে নিজের মুষ্টির মধ্যে নিয়ে ফেলেছে, ফলে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে।হযরত আবু দারদা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলতে শুনেছেনঃ “ যে গ্রামে বা জঙ্গলে তিনজন রয়েছে এবং তাদের মধ্যে নামায প্রতিষ্ঠিত করা হয় না, তাদের উপর শয়তান প্রভুত্ব বিস্তার করে ফেলে । সুতরাং তুমি জামাআতকে অপরিহার্য রূপে ধরে নাও। বাঘ ঐ বকরীকে খেয়ে ফেলে যে দল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সায়েব ( রঃ ) বলেন যে, এখানে জামাআত দ্বারা নামাযের জামাআতকে বুঝানো হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “ তারা শয়তানেরই দল' অর্থাৎ যাদের উপর শয়তান প্রভুত্ব বিস্তার করেছে এবং এর ফলে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে ।এরপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ 'সাবধান! শয়তানের দল অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত।
সূরা মুজাদালা আয়াত 19 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের
- সেদিন তাদের কি হবে, সে সম্পর্কে তাদের পালনকর্তা সবিশেষ জ্ঞাত।
- স্বর্ণ খচিত সিংহাসন।
- তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে
- অপর সে উকি দিয়ে দেখবে এবং তাকে জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে।
- গোনাহগারদের জন্যে এছাড়া আরও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।
- আমি তাকে আহবান করলাম তূর পাহাড়ের ডান দিক থেকে এবং গুঢ়তত্ত্ব আলোচনার উদ্দেশে তাকে নিকটবর্তী
- আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার,
- আমি তাদের পরীক্ষার জন্য এক উষ্ট্রী প্রেরণ করব, অতএব, তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ এবং সবর
- বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা মুজাদালা ডাউনলোড করুন:
সূরা Mujadilah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Mujadilah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers