কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 190 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Araf ayat 190 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা আ'রাফ আয়াত 190 আরবি পাঠে(Araf).
  
   

﴿فَلَمَّا آتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آتَاهُمَا ۚ فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
[ الأعراف: 190]

অতঃপর তাদেরকে যখন সুস্থ ও ভাল দান করা হল, তখন দানকৃত বিষয়ে তার অংশীদার তৈরী করতে লাগল। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের শরীক সাব্যস্ত করা থেকে বহু উর্ধে। [সূরা আ'রাফ: 190]

Surah Al-Araf in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 190


কিন্তু তিনি যখন তাদের সুষ্ঠু একটি দান করলেন তারা তাঁর সঙ্গে দাঁড় করালো অংশীদার তিনি তাদের যা দিয়েছেন তার সন্বন্ধে। কিন্তু বহু উচ্চে অবস্থিত আল্লাহ্ তারা যা অংশী বানায় সে-সব থেকে।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৯০. যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবুল করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের চাওয়া অনুযায়ী একটি নেক সন্তান দিয়ে দিলেন তখন তারা উভয়ে আল্লাহর দানে তাঁর শরীক বানিয়ে নিলো। তারা নিজেদের সন্তানকে অন্যের গোলাম বানিয়ে তার নাম আব্দুল-হারিস তথা হারিসের বান্দা রাখলো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সকল শরীক থেকে পূত-পবিত্র। তিনি একক প্রতিপালক ও মা’বূদ।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সুতরাং তিনি যখন তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে যা দেওয়া হয়, সে সম্বন্ধে আল্লাহর অংশী করে।[১] কিন্তু তারা যাকে অংশী করে আল্লাহ তা অপেক্ষা অনেক ঊর্ধ্বে। [১] এখানে শরীক করার অর্থ এমন নামকরণ করা, যাতে শিরক হয়; যেমন ইমাম বখশ, গোলাম পীর, আব্দুর রসূল, বান্দা ( বন্দে ) আলী ইত্যাদি। যাতে প্রকাশ হয় যে, এই সন্তান অমুক সাহেবের দান অথবা তার দাস। 'নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক।' অথবা এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আমি অমুক পীরের মাযারে গিয়েছিলাম, আর সেখান থেকেই এই সন্তান লাভ হয়েছে। অথবা সন্তান লাভের পর কোন মৃত ব্যক্তির নামে নযর-নিয়ায দেওয়া। অথবা সন্তানকে কোন মাযারে নিয়ে গিয়ে তার মাথা সেখানে ঠেকানো; এই ধারণায় যে, তারই বর্কতেই এই সন্তান হয়েছে। এই সকল কর্মই আল্লাহর সাথে শরীক করার পর্যায়ভুক্ত; যা দুর্ভাগ্যক্রমে মুসলিম জনসাধারণের মধ্যেও বিস্তার লাভ করেছে। পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহ শিরকের খন্ডন করেছেন।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আতঃপর তিনি ( আলাহ ) যখন তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সুসন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে তিনি যা দিয়েছেন সেটাতে আল্লাহ্‌র বহু শরীক নির্ধারণ করে []; বস্তুত তারা যাদেরকে ( তাঁর সাথে ) শরীক করে আল্লাহ্‌ তার চেয়ে অনেক উর্ধ্বে []। [] কাতাদা বলেন, হাসান বসরী বলতেন, এর দ্বারা ইয়াহুদী ও নাসারাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সন্তান-সন্তুতি দান করেন, কিন্তু তারা সেগুলোকে ইয়াহুদী কিংবা নাসারা বানিয়ে ছাড়ে। [ তাবারী; ইবন কাসীর ] [] ইয়াহুদী ও নাসারা ছাড়াও বাস্তবে যারাই আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে অন্যের জন্য নির্দিষ্ট করে তারাও এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহই সর্বপ্রথম মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। মুশরিকরাও এ কথা অস্বীকার করে না। তারপর পরবর্তী কালের প্রত্যেকটি মানুষকেও তিনি অস্তিত্ব দান করেন। আর একথাটিও মুশরিকরা জানে। তাই দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় সুস্থ, সবল ও নিখুঁত অবয়বধারী শিশু ভূমিষ্ঠ হবার ব্যাপারে আল্লাহর উপরই পূর্ণ ভরসা করা হয়। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়ে যদি চাঁদের মত ফুটফুটে সুন্দর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলেও জাহেলী কর্মকাণ্ড নবতর রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন দেবী, অবতার, অলী ও পীরের নামে নজরানা ও শিন্নি নিবেদন করা হয় এবং শিশুকে এমন সব নামে অভিহিত করা হয় যেন মনে হয় সে আল্লাহর নয়, বরং অন্য কারোর অনুগ্রহের ফল। যেমন তার নামকরণ করা হয় হোসাইন বখশ, ( হোসাইনের দান ) পীর বখশ ( পীরের দান ), আব্দুর রাসূল ( রাসূলের দাস ), আবদুল উয্‌যা ( উয্‌যার দাস ), আবদে শামস ( সূর্য দেবতার দাস ) ইত্যাদি, ইত্যাদি। আরবের মুশরিক সম্প্রদায়ের অপরাধ ছিল এই যে, তারা সুস্থ, সবল ও পূর্ণ অবয়ব সম্পন্ন সন্তান জন্মের জন্য আল্লাহর কাছে দো'আ করতো কিন্তু সন্তানের জন্মের পর আল্লাহর এ দানে অন্যদেরকে অংশীদার করতো। নিঃসন্দেহে তাদের এ অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বর্তমানে তাওহীদের দাবীদারদের মধ্যে আমরা যে শির্কের চেহারা দেখছি তা তার চাইতেও খারাপ। এ তাওহীদের তথাকথিত দাবীদাররা সন্তানও চায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাছে। গর্ভ সঞ্চারের পর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মানত মানে এবং সন্তান জন্মের পর তাদেরই আস্তানায় গিয়ে নজরানা নিবেদন করে। এরপর জাহেলী যুগের আরবরাই কেবল মুশরিক, আর এরা নাকি পাক্কা তাওহীদবাদী!!

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


১৮৯-১৯০ নং আয়াতের তাফসীর: ইরশাদ হচ্ছে যে, দুনিয়া জাহানের সমস্ত মানুষই আদম ( আঃ )-এর বংশের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বয়ং তাঁর স্ত্রী হাওয়া তাঁরই মাধ্যমে সৃষ্ট হয়েছেন। তাঁদের দুজনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “ হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি । আর তোমাদেরকে এমনভাবে বাড়িয়েছি যে, তোমরা বংশে বংশে ও গোত্রে গোত্রে পরিণত হয়েছে। এখন তোমাদের একে অপরের হকের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। নিশ্চয়ই আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই বেশী সম্মানিত যে বেশী মুত্তাকী।” ( আরবী ) -এর অর্থ হচ্ছে- যেন সে ( পুরুষ ) তার ( স্ত্রীর কাছে প্রশান্তি লাভ করে। এ জন্যেই আল্লাহ পাক (আরবী ) অর্থাৎ তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে প্রেম-প্রীতি ও মায়া-মহব্বত সৃষ্টি করেছেন। ( ৩০:২১ ) দু' আত্মার মধ্যে যে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা জন্মে, এর চেয়ে অধিক ভালবাসা আর কোথায়ও হতে পারে না। তাই তো আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ যাদুকর তার যাদুর মাধ্যমে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় যে, কি করে সে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতে পারে । মোটকথা, স্বামী যখন তার প্রকৃতিগত প্রেমের ভিত্তিতে স্বীয় স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করে তখন তার স্ত্রী প্রথমতঃ তার গর্ভাশয়ে একটা হালকা বোঝার অস্তিত্ব অনুভব করে। এটা হলো গর্ভের সূচনার সময়। এই সময় নারীর কোন কষ্ট হয় না। কেননা, এই গর্ভ তো এখন সবেমাত্র নুফা বা মাংসপিণ্ড। এখন ওটা হালকা পাতলা অবস্থায় রয়েছে। আইয়ুব ( রঃ ) বলেনঃ আমি হাসান ( রঃ )-কে ( আরবী )-এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “ যদি আমি আরববাসী হতাম এবং তাদের ভাষা বুঝতাম তবে এর অর্থ জানতাম । এর অর্থ এই হতে পারে যে, সে এই গর্ভ নিয়ে আরামেই চলাফেরা করে।" কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে- এই গর্ভ প্রকাশিত হয়েছে। ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, ঐ গর্ভ নিয়ে সে সহজেই উঠাবসা করতে পারে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- এই প্রাথমিক সময় হচ্ছে এমন এক সময় যখন তার নিজেরই এই সন্দেহ থেকে যায় যে, তার গর্ভ আছে কি নেই। মোটকথা এর পরে নারী তার পেটের গর্ভ সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে যায়। তখন পিতা-মাতা দু’জনই আল্লাহর কাছে এই কামনা করে যে, যদি তিনি তাদেরকে নিখুঁত ও সুন্দর সন্তান দান করেন তবে এটা তাঁর বড়ই ইহসান হবে! হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ মা-বাপের এই ভয়ও থাকে যে, না জানি হয়তো কোন পশুর আকৃতি বিশিষ্ট বা কোন অঙ্গহানি যুক্ত সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে যায় না কি! যেমন কোন কোন সময় এরূপ হয়েও থাকে । হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- যদি আল্লাহ আমাকে পুত্র সন্তান দান করেন।' কেননা, সন্তানের মধ্যে পুত্র সন্তানই বেশী উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। মোটকথা, আল্লাহ তা'আলা যখন তাদেরকে সহীহ সালেম ও নিখুঁত সন্তান দান করেন তখন তারা ওটাকে প্রতিমাগুলোর অংশ বানিয়ে দেয়। আল্লাহর সত্তা এরূপ শিরক থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। মুফাসিরগণ এখানে বহু আসার ও হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেগুলো আমরা ইনশাআল্লাহ বর্ণনা করবো। অতঃপর ইনশাআল্লাহ সঠিক কোনটি সেটাও বলে দেয়ার প্রয়াস পাবো। মহান আল্লাহর উপরই আমাদের ভরসা।ইমাম আহমাদ ( রঃ ) স্বীয় মুসনাদে হাসান ( রঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি সামুরা ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী ( সঃ ) বলেছেন, হাওয়া ( আঃ ) যখন সন্তান প্রসব করেন তখন ইবলীস তাঁর কাছে আগমন করে। তাঁর সন্তান বেঁচে থাকতো না। শয়তান তাকে পরামর্শ দিলো- “ তোমার শিশুর নাম আব্দুল হারিস রাখো, তাহলে সে জীবিত থাকবে ।” তখন তার নাম আব্দুল হারিস রাখা হয় এবং সে জীবিত থাকে। এটা ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে অহী। হারিস শয়তানের নাম। এ হাদীসে তিনটি ক্রটি পরিলক্ষিত হয়। ( ১ ) এই হাদীসের বর্ণনাকারী উমার ইবনে ইবরাহীম একজন বসরী লোক। ইবনে মুঈন ( রঃ ) তাকে বিশ্বাসযোগ্য বললেও আবু হাতিম ( রঃ ) বলেন যে, তার থেকে হুজ্জত গ্রহণ করা যেতে পারে না। ( ২ ) এই রিওয়াইয়াতই মওকুফ রূপে হযরত সামুরা ( রাঃ )-এর উক্তিতেই বর্ণিত হয়েছে, যা মারফু নয়। তাফসীরে ইবনে জারীরে স্বয়ং হযরত সামুরা ( রাঃ )-এর উক্তি রয়েছে যে, হযরত আদম ( আঃ ) তাঁর ছেলের নাম আব্দুল হারিস রেখেছিলেন। ( ৩ ) এ হাদীসের বর্ণনাকারী হাসান ( রঃ ) থেকেও এই আয়াতের তাফসীর এর বিপরীত বর্ণনা করা হয়েছে! তাহলে এটা স্পষ্ট কথা যে, যদি এ মারফু হাদীসটি তার দ্বারা বর্ণনাকৃত হতো তাহলে স্বয়ং তিনি এর উল্টো তাফসীর করতেন না । ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, এটা হযরত আদম ( আঃ )-এর ঘটনা নয়, বরং এটা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ঘটনা। আবার এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর দ্বারা কোন মুশরিক ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে এরূপ করে থাকে। কথিত আছ যে, এটা হচ্ছে ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানের কাজের বর্ণনা, যারা নিজেদের সন্তানদেরকে নিজেদের রীতিনীতির উপর পরিচালিত করে বা তাদেরকে ইয়াহূদী ও খ্রীষ্টান বানিয়ে দেয়। এই আয়াতের যেসব তাফসীর বর্ণনা করা হয়েছে অনুধ্যে এটাই উত্তম তাফসীর। মোটকথা, এটা ছিল অতি বিস্ময়কর ব্যাপার যে, একজন মুত্তাকী ব্যক্তি একটি আয়াতের তাফসীরে একটি মার’ হাদীস বা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )-এর উক্তিরূপে বর্ণনা করবেন, আবার নিজেই ওর বিপরীত তাফসীর করবেন! এর দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, এ হাদীসটি মার’ নয়, বরং এটা হ্যরত সামুরা ( রাঃ )-এর নিজের উক্তি। এর পর এটা ধারণা করা যেতে পারে যে, সম্ভবতঃ সামুরা ( রাঃ ) এটা আহলে কিতাবের নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন। যেমন কা'ব, অহাব প্রমুখ যাঁরা পরে মুসলমান হয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ এর বর্ণনা সত্বরই আসবে।মোটকথা, এ হাদীসটিকে মারফু হাদীস রূপে গ্রহণ করা যেতে পারে না। তবে এই ব্যাপারে অন্যান্য হাদীসও রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হাওয়া ( আঃ )-এর যেসব সন্তান জন্মগ্রহণ করতে তাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া হতো এবং তাদের নাম আব্দুল্লাহ, উবাইদুল্লাহ ইত্যাদি রাখা হতো। এ সন্তানগুলো মারা যেতো! একদা ইবলীস হযরত আদম ( আঃ ) হযরত হাওয়া ( আঃ )-এর কাছে এসে বললোঃ যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদের অন্য নাম রাখো তবে তারা জীবিত থাকবে । অতঃপর হযরত হাওয়া ( আঃ )-এর এক সন্তান ভূমিষ্ট হলো। তখন পিতা-মাতা তার নাম রাখলেন আব্দুল হারিস। এ সম্পর্কেই আল্লাহ পাক ....
( আরবী ) -এ কথা বলেন।গর্ভ ছিল কি ছিল না এ ব্যাপারে হযরত হাওয়া ( আঃ )-এর মনে সন্দেহ ছিল। মোটকথা, যখন গর্ভ ভারী হয়ে উঠলো তখন দু’জনই আল্লাহ তা'আলার নিকট দুআ করলেন যে, যদি তিনি সহীহ সালিম ও নিখুঁত সন্তান দান করেন তবে তারা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন। তখন শয়তান তাদের উভয়ের কাছে এসে বললোঃ তোমাদের কিরূপ সন্তান ভূমিষ্ট হবে তার কোন খবর তোমরা রাখো কি? সেই সন্তান মানুষের আকার বিশিষ্টও হতে পারে, আবার জন্তুর আকৃতি বিশিষ্টও হতে পারে । ভুল কথা তাদের সামনে সে শুভ রূপে পেশ করলো। সে তো প্রতারকই বটে। ইতোপূর্বে তাদের দুটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেই মারা গিয়েছিল। শয়তান তাদেরকে বুঝিয়ে বললোঃ “ তোমরা যদি আমার নামে সন্তানের নাম না রাখো তবে তোমাদের সন্তান বিকলাঙ্গ হবে এবং জীবিতও থাকবে না । সুতরাং তার কথামত তারা সন্তানের নাম আব্দুল হারিস রেখে দিলো। তাই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ যখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের প্রার্থনা । অনুযায়ী সহীহ সালিম ও নিখুঁত সন্তান দান করলেন তখন তারা আল্লাহর সাথে শরীক করে বসলো।” এই আয়াতে এরই বর্ণনা রয়েছে। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, প্রথমবারের গর্ভের সময় সে ( শয়তান ) তাদের কাছে আগমন করে এবং তাদেরকে ভয় দেখিয়ে বলে- আমি তো সেই, যে তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করিয়েছিল। এখন যদি তোমরা আমার কথামত কাজ না কর তবে আমি এমনভাবে ভেল্কী লাগিয়ে দিবো যে, এই সন্তানের শিং বেরিয়ে যাবে এবং সে পেট ফেড়ে বেরিয়ে পড়বে এবং এই হবে ঐ হবে। এইভাবে সে তাদেরকে আতংকগ্রস্ত করলো। কিন্তু তারা তার কথা মানলেন না। আল্লাহর সদিচ্ছায় মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হলো। দ্বিতীয়বার হযরত হাওয়া ( আঃ ) গর্ভধারণ করলেন। সেবার মৃত সন্তানই ভূমিষ্ট হলো। এবার শয়তান নিজেকে অত্যন্ত হিতাকাংখীরূপে তাদের সামনে পেশ করলো। তখন। সন্তানের ভালবাসা প্রাধান্য লাভ করলো এবং তারা সন্তানের নাম আব্দুল হারিস রেখে দিলেন। এর উপর ভিত্তি করেই আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ তারা আল্লাহর দেয়া এই দানে অংশী স্থাপন করে বসলো। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে এ হাদীসটি গ্রহণ করে তাঁর ছাত্রদের একটি দলও এ কথাই বলেছেন। যেমন মুজাহিদ ( রঃ ), সাঈদ ইবনে জুবাইর ( রঃ ), ইকরামা ( রঃ ), কাতাদা ( রঃ ) এবং সুদ্দী ( রঃ )। অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী থেকে নিয়ে পরবর্তী পর্যন্ত বহু মুফাসসির এই আয়াতের তাফসীরে এ কথাই বলেছেন। কিন্তু প্রকাশ্য ব্যাপার এই যে, এই ঘটনাটি আহলে কিতাব থেকেই গ্রহণ করা হয়েছে। এর একটি বড় দলীল এই যে, হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) ওটা হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেন, যেমন তাফসীরে ইবনে আবূ হাতিমে রয়েছে। সুতরাং এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এ কথাটি আহলে কিতাব হতে নকল করা হয়েছে। যে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা তাদের কথাকে সত্যও বলো না এবং মিথ্যাও বলো না ।” এর বর্ণনা তিন প্রকারের হচ্ছে। ( ১ ) ঐসব কথা, যেগুলোর বিশুদ্ধতা কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ( ২ ) যেগুলোর অসত্যতা কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়। ( ৩ ) ঐসব কথা, যেগুলোর ফায়সালা আমাদের ধর্মে মিলে না । হাদীসের নির্দেশ অনুযায়ী এগুলোর বর্ণনায় কোন দোষ নেই। কিন্তু এগুলো সত্য কি মিথ্যা এটা মন্তব্য করা চলবে না। আমার মতে এটা তো দ্বিতীয় প্রকারের হাদীস। অর্থাৎ মানবার যোগ্য নয়। আর যেসব সাহাবী ও তাবিঈ হতে এটা বর্ণিত আছে তারা এটাকে তৃতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত মনে করে বর্ণনা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তো ওটাই বলি যা ইমাম হাসান ( রঃ ) বলে থাকেন। তা হচ্ছে এই যে, মুশরিকদের তাদের সন্তানদের মধ্যে আল্লাহর শরীক করার বর্ণনা এই আয়াতগুলোতে রয়েছে। এটা হযরত আদম ( আঃ ) ও হাওয়া ( আঃ )-এর বর্ণনা নয়। আল্লাহ পাক বলেনঃ তারা যাকে অংশী করে আল্লাহ তা অপেক্ষা অনেক উন্নত ও মহান। এই আয়াতগুলোতে এই বর্ণনা এবং ইতোপূর্বে হযরত আদম ( আঃ ) হযরত হাওয়া ( আঃ )-এর বর্ণনা ক্রমিক বর্ণনার মত। প্রথমে আসল মা-বাপের বর্ণনা দেয়ার পর মহান আল্লাহ অন্যান্য মা-বাপ ও তাদের শিরকের বর্ণনা দিয়েছেন।এখন ব্যক্তিগত বর্ণনা শেষ করে শ্রেণীগত বর্ণনার দিকে মোড় ফিরানো হচ্ছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ আমি দুনিয়ার আকাশকে তারকারাজি দ্বারা সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছি । আবার আমি ঐ তারকাগুলো দ্বারা শয়তানদেরকে মেরে তাড়াবার কাজ নিয়েছি।” আর এটা স্পষ্ট কথা যে, সৌন্দর্যের জন্যে যে তারকাগুলো নির্দিষ্ট রয়েছে সেগুলো ছিটকে পড়ে না। ঐগুলো দ্বারা শয়তানদেরকে মারা হয় না। এখানেও কথার মোড় ফিরানো হচ্ছে যে, তারকারাজির স্বাতন্ত্রের বর্ণনার পর শ্রেণীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এর আরও বহু দৃষ্টান্ত কুরআন কারীমের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তাআলাই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন।

সূরা আ'রাফ আয়াত 190 সূরা

فلما آتاهما صالحا جعلا له شركاء فيما آتاهما فتعالى الله عما يشركون

سورة: الأعراف - آية: ( 190 )  - جزء: ( 9 )  -  صفحة: ( 175 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. সুতরাং তুমি যদি সে বস্তু সম্পর্কে কোন সন্দেহের সম্মুখীন হয়ে থাক যা তোমার প্রতি আমি
  2. তারা চুপিসারে পরস্পরে বলাবলি করবেঃ তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে।
  3. তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে না, যে পর্যন্ত প্রত্যক্ষ না করে মর্মন্তুদ আযাব।
  4. তারা কি আল্লাহর সৃজিত বস্তু দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সেজদাবনত থেকে ডান
  5. আল্লাহ বললেন, আমি তোমার বাহু শক্তিশালী করব তোমার ভাই দ্বারা এবং তোমাদের প্রধান্য দান করব।
  6. এবং স্বর্ণনির্মিতও দিতাম। এগুলো সবই তো পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী মাত্র। আর পরকাল আপনার পালনকর্তার
  7. তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে এবং তারা পরকালের খবর রাখে না।
  8. ওরা এর প্রতি বিশ্বাস করবে না। পূর্ববর্তীদের এমন রীতি চলে আসছে।
  9. এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত।
  10. তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:

সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Sunday, December 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers