কোরান সূরা যুমার আয়াত 20 তাফসীর
﴿لَٰكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ وَعْدَ اللَّهِ ۖ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ﴾
[ الزمر: 20]
কিন্তু যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্যে নির্মিত রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ। এগুলোর তলদেশে নদী প্রবাহিত। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না। [সূরা যুমার: 20]
Surah Az-Zumar in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Zumar ayat 20
পক্ষান্তরে যারা তাদের প্রভুকে ভয়-ভক্তি করে তাদের জন্য রয়েছে উঁচু আবাসস্থল, তাদের উপরে উঁচু আবাসস্থল সুপ্রতিষ্ঠিত, তাদের নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি। আল্লাহ্র ওয়াদা, আল্লাহ্ ওয়াদার খেলাপ করেন না।
Tafsir Mokhtasar Bangla
২০. তবে যারা স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য কারার মাধ্যমে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে সুউচ্চ আবাসস্থল। যার একটি অপরটির উপর অবস্থিত। এ সবের তলদেশ দিয়ে নদ-নদী প্রবাহিত। আল্লাহ তাদেরকে এই অঙ্গীকার দিয়েছেন। আর আল্লাহ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তবে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য বহুতলবিশিষ্ট নির্মিত প্রাসাদ রয়েছে;[১] যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত। ( এটি ) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি,[২] আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। [১] এর উদ্দেশ্য এই যে, জান্নাতে একের উপর এক তলা হবে, যেমন পৃথিবীতে কয়েক তলাবিশিষ্ট অট্টালিকা হয়। জান্নাতেও মান অনুসারে বহুতলবিশিষ্ট অট্টালিকা হবে, যার মধ্য হতে জান্নাতীদের ইচ্ছা অনুযায়ী দুধ, মধু, পানি এবং শারাবের নহর প্রবাহিত হতে থাকবে। [২] যে প্রতিশ্রুতি তিনি মু'মিন বান্দাদের সাথে করেছেন এবং তা অবশ্যই পূর্ণ হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আছে বহু প্ৰাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ [ ১ ], যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না। [ ১ ] রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতিরা জান্নাতে উঁচু কামরা সমূহ দেখবে, যেমন দেখা যায় আকাশের প্রান্তদেশে উজ্জ্বল তারকা ৷ [ বুখারী: ৩২৫৬; মুসলিম: ২৮৩১ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৯-২০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ হে নবী ( সঃ ) ! হতভাগ্য হওয়া যার তকদীরে লিখা আছে তুমি তাকে সুপথ প্রদর্শন করতে পার না। আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, কে এমন আছে যে, তাকে পথ দেখাতে পারে? তোমার দ্বারা এটা সম্ভব নয় যে, তুমি তাকে সুপথে আনতে পার এবং আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করতে পার। হ্যা, তবে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে বহু প্রাসাদ, যার উপর নির্মিত রয়েছে আরো প্রাসাদ। সমস্ত আসবাবপত্র ওগুলোর মধ্যে সুন্দরভাবে সজ্জিত রয়েছে। প্রাসাদগুলো প্রশস্ত, সুউচ্চ ও সুদৃশ্য।হযরত আলী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ জান্নাতে এমন কক্ষসমূহ রয়েছে যেগুলোর ভিতরের অংশ বাহির হতে এবং বাহিরের অংশ ভিতর হতে দেখা যায় । তখন একজন বেদুইন জিজ্ঞেস করলোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এগুলো কাদের জন্যে?” তিনি জবাবে বললেনঃ “এগুলো তাদের জন্যে যারা কথাবার্তায় কোমল হয়, ( দরিদ্রদেরকে ) আহার করায় এবং রাত্রিকালে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন উঠে ( তাহাজ্জুদের ) নামায পড়ে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) ও ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু মালিক আশআরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ জান্নাতে এমন কক্ষসমূহ রয়েছে যেগুলোর বাহির ভিতর হতে এবং ভিতর বাহির হতে দেখা যায় । এগুলো আল্লাহ্ তা'আলা ঐসব লোকের জন্যে বানিয়েছেন যারা ( দরিদ্রদেরকে ) খাদ্য খেতে দেয়, কথাবার্তায় কোমলতা অবলম্বন করে, পর্যায়ক্রমে রোযা রাখে এবং ( রাত্রে ) লোকদের ঘুমন্ত অবস্থায় ( উঠে তাহাজ্জুদের ) নামায পড়ে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সাহল ইবনে সা'দ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ জান্নাতীরা জান্নাতের মধ্যস্থিত কক্ষগুলোকে এমনিভাবে দেখবে যেমনিভাবে তোমরা আকাশ প্রান্তে তারকাগুলো দেখে থাকো ।” ( এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য হাদীসে আছে যে, জান্নাতের ঐ কক্ষগুলোর প্রশংসা শুনে সাহাবীগণ ( রাঃ ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! ওগুলো কি নবীদের জন্যে?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হ্যা, নবীদের জন্যে তো বটেই, তাছাড়া ঐ লোকদের জন্যেও যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করে এবং রাসূলদেরকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) ও ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আপনার খিদমতে হাযির থাকি এবং আপনার চেহারা মুবারক অবলোকন করি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অন্তর নরম থাকে এবং আমরা আখিরাতের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। কিন্তু যখন আপনার নিকট হতে বিদায় গ্রহণ করি এবং পার্থিব কাজ-কারবারে লিপ্ত হই ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে মগ্ন হয়ে পড়ি তখন আর আমাদের অবস্থা ঐরূপ থাকে না।” আমাদের এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ যদি তোমরা সদা-সর্বদা ঐ অবস্থাতেই থাকতে যে অবস্থা আমার সামনে তোমাদের থাকে তাহলে ফেরেশতারা তাদের হাত দ্বারা তোমাদের সাথে মুসাফাহা করতেন এবং তোমাদের বাড়ীতে এসে তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন । জেনে রেখো যে যদি তোমরা গুনাহই না করতে তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের স্থলে এমন লোকদেরকে নিয়ে আসতেন যারা পাপ করতো, যেন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করতে পারেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম:হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! জান্নাতের ভিত্তি কি দ্বারা তৈরী? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা তৈরী । ওর চূন হলো খাটি মেশক আম্বর। ওর কংকরগুলো মণি-মুক্তা ও ইয়াকূত। ওর মাটি হলো যাফরান। যে তাতে প্রবেশ করবে সে প্রচুর মালের অধিকারী হবে, যার পরে মাল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোনই আশংকা নেই। চিরস্থায়ীভাবে সে তথায় অবস্থান করবে। তাকে সেখান হতে কখনো বের করে দেয়া হবে এরূপ কোন সম্ভাবনাই নেই। সেখানে মৃত্যুর কোন ভয় নেই। সেখানে তাদের কাপড় পুরাতন হবে না। সেখানে তারা চির যৌবন লাভ করবে। জেনে রেখো যে, তিন ব্যক্তির দুআ অগ্রাহ্য হয় না। তারা হলোঃ ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, রোযাদার ব্যক্তি এবং অত্যাচারিত ব্যক্তি। তাদের দুআ উপরে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং ওর জন্যে আকাশের দরগুলোকে খুলে দেয়া হয়। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তখন বলেনঃ “ আমার ইযযতের কসম! কিছুকাল পরে হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করবো ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ এ প্রাসাদগুলোর পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং তা এমন যে, যেখানে ইচ্ছা সেখানে পৌঁছাতে পারে এবং যখন যতটুকু ইচ্ছা প্রবাহিত করতে পারে। মুমিন বান্দাদেরকে আল্লাহ এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর আল্লাহ তা'আলা কখনো তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
সূরা যুমার আয়াত 20 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আর যারা মন্দ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই
- যা আছে এক গোপন কিতাবে,
- আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হল। আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং
- ইব্রাহীম, এহেন ধারণা পরিহার কর; তোমার পালনকর্তার হুকুম এসে গেছে, এবং তাদের উপর সে আযাব
- আলিফ-লাম-মীম।
- তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং
- আর তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাক তারা না তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারবে, না
- মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতি পূর্বে সৃষ্টি করেছি এবং সে তখন
- বলে দিনঃ তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর এবাদত কর যে, তোমাদের অপকার বা উপকার
- তারা চুপিসারে পরস্পরে বলাবলি করবেঃ তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা যুমার ডাউনলোড করুন:
সূরা Zumar mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Zumar শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers