কোরান সূরা শুআরা আয়াত 227 তাফসীর
﴿إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَذَكَرُوا اللَّهَ كَثِيرًا وَانتَصَرُوا مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا ۗ وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ﴾
[ الشعراء: 227]
তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ কে খুব স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। নিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ। [সূরা শুআরা: 227]
Surah Ash-Shuara in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Shuara ayat 227
তবে তারা ব্যতীত যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, এবং আল্লাহ্কে খুব ক’রে স্মরণ করে, আর অত্যাচারিত হবার পরে প্রতিরক্ষা করে। আর যারা অন্যায় করে তারা অচিরেই জানতে পারবে কোন বিপর্যয়ের মধ্যে তারা প্রত্যাবর্তন করছে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
২২৭. তবে যে কবিরা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করছে উপরন্তু তারা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে এবং আল্লাহর শত্রæদের যুলুমের পর তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে -যেমন: হাসসান ইবনু সাবিত- তারা অবশ্যই এ থেকে ভিন্ন। আল্লাহর সাথে শিরককারী ও তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী যালিমরা অচিরেই জানবে কোন্ গন্তব্যের দিকে তারা রওয়ানা করেছে। তারা বস্তুতঃ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি ও সূ2 হিসাবের দিকে রওয়ানা করেছে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তবে তারা নয়, যারা বিশ্বাস করে[১] ও সৎকাজ করে, আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করে এবং অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে।[২] আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়? [৩] [১] এখানে ঐসব কবিদেরকে পৃথক করা হচ্ছে, যাদের কবিতা সত্য ও বাস্তবের ভিত্তিতে রচিত। আর এমন শব্দ দ্বারা ব্যতিক্রান্ত করা হয়েছে; যাতে স্পষ্ট হয় যে, ঈমানদার, সৎকর্মশীল, বেশী বেশী আল্লাহর যিকরকারী কবি মিথ্যা ও অতিশয়োক্তিমিশ্রিত অন্যায় ( শরীয়ত-বিরোধী ) কবিতা রচনা করতে পারে না। এ সব কবিতা রচনা করা তাদের কাজ, যারা ঈমানী গুণাবলী হতে খালি। [২] অর্থাৎ, এই ধরনের মু'মিন কবি, কাফের কবিদের সেই কবিতার জবাব দেয়, যাতে তারা ( কাফের কবিরা ) মুসলিমদের সমালোচনা ও নিন্দা করে থাকে। যেমন কবি হাসসান বিন সাবেত ( রাঃ ) কাফেরদের সমালোচনার জবাব দিতেন। আর নবী ( সাঃ ) নিজেও বলতেন, তুমি ব্যঙ্গ কবিতার মাধ্যমে কাফেরদের সমালোচনা কর জিবরীল ( আঃ ) তোমার সঙ্গে রয়েছেন। ( বুখারীঃ সৃষ্টি রচনা অধ্যায় ফিরিশতাদের যিকর পরিচ্ছেদ, মুসলিমঃ সাহাবাদের ফযীলত অধ্যায় হাসসান বিন সাবেতের ফযীলত পরিচ্ছেদ ) এখান হতে বুঝা গেল যে, এ রকম কবিতা রচনা করা বৈধ যাতে মিথ্যা ও অতিশোয়ক্তির মিশ্রণ নেই, যার দ্বারা মুশরিক, কাফের, বিদআতী ও বাতিলপন্থী লোকদের উচিত জবাব দেওয়া হবে এবং যা সত্য পথ তাওহীদ ও সুন্নতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। [৩] 'তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?' অর্থাৎ, জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। যেমন হাদীসের মধ্যেও বলা হয়েছে। অত্যাচার করা হতে দূরে থাকো! কারণ অত্যাচার কিয়ামত দিবসে অন্ধকারের কারণ হবে। ( মুসলিমঃ নেকী অধ্যায়, অত্যাচার হারাম পরিচ্ছেদ )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
কিন্তু তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, আল্লাহ্কে বেশী পরিমাণ স্মরণ করেছে এবং অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্ৰহণ করেছে। আর যালিমরা শীঘ্রই ফিরে যাবে জানবে কোন ধরনের গন্তব্যস্থলে তারা ফিরে যাবে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
২২১-২২৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মুশরিকরা বলতো: রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যে কুরআন নিয়ে আগমন করেছেন তা সত্য নয়। তিনি এটা স্বয়ং রচনা করেছেন। অথবা তার কাছে জ্বিনদের নেতা এসে থাকে যে তাঁকে শিখিয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী ( সঃ )-কে এই আপত্তিকর কথা হতে পবিত্র করছেন এবং প্রমাণ করছেন যে, তিনি যে কুরআন আনয়ন করেছেন তা আল্লাহর কালাম এবং তাঁর নিকট হতেই এটা অবতারিত। সম্মানিত, বিশ্বস্ত ও শক্তিশালী ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) এটা আনয়ন করেছেন। এটা কোন শয়তান বা জ্বিন আনয়ন করেনি। শয়তানরা তো কুরআনের শিক্ষা হতে সম্পূর্ণ বিমুখ। তাদের শিক্ষা তো কুরআন কারীমের শিক্ষার একেবারে বিপরীত। সুতরাং কি করে তারা কুরআনের ন্যায় পবিত্র ও সুপথ প্রদর্শনকারী কালাম আনয়ন করতঃ মানুষকে সুপথ প্রদর্শন করতে পারে? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। কেননা, তারা নিজেরাও চরম মিথ্যাবাদী ও পাপী। তারা চুরি করে আকাশে যে এক আধটি কথা শুনে নেয়, ওর সাথে বহু কিছু মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে যাদুকরদের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। ঐ যাদুকররা তখন ওর সাথে নিজেদের পক্ষ হতে আরো বহু মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে লোকদের মধ্যে প্রচার করে। এখন শয়তান লুকিয়ে যে সত্য কথাটি আকাশে শুনেছিল ওটা সত্যরূপেই প্রকাশিত হয়, কিন্তু লোকেরা ঐ একটি সত্য কথার উপর ভিত্তি করে যাদুকরের আরো শত শত মিথ্যা কথাকেও সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকে। এভাবে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, একদা জনগণ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে যাদুকর ও ভবিষ্যদ্বক্তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “ তারা কিছুই নয় ।” জনগণ বললোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তারা এমনও কথা বলে যা সত্য হয়ে থাকে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “হ্যাঁ, এটা ঐ কথা যা জ্বিনেরা-চুরি করে আকাশ হতে শুনে আসে এবং তা ঐ ভবিষ্যদ্বক্তার কানে পৌঁছিয়ে থাকে । অতঃপর ঐ ভবিষ্যদ্বক্তা নিজের পক্ষ হতে শতটি মিথ্যা কথা ওর সাথে মিলিয়ে বলে দেয়।” হযরত আবূ হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন আল্লাহ তা'আলা আকাশে কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন ফেরেশতারা আদবের সাথে নিজেদের পালক ঝুঁকিয়ে দেন । কোন কংকরময় ভূমিতে জিঞ্জীর বাজানো হলে যেরূপ শব্দ হয় ঐরূপ শব্দ ঐ সময় আসতে থাকে। যখন ঐ বিহ্বলতা বিদূরিত হয় তখন ফেরেশতারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন ( কি হুকুম করেছেন )?” উত্তরে বলা হয়ঃ “তিনি সত্য বলেছেন ( সঠিক হুকুম করেছেন ) । তিনি সমুন্নত ও মহান।” কখনো কখনো আল্লাহ তা'আলার ঐ হুকুম চুরি করে শ্রবণকারী কোন জ্বিনের কানে পৌঁছে যায় যারা এভাবে একের উপর এক হয়ে ঐ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। হাদীস বর্ণনাকারী হযরত সুফিয়ান ( রঃ ) স্বীয় হাতের অঙ্গুলীগুলো বিছিয়ে দিয়ে ওর উপর অপর হাত ঐভাবেই রেখে ওগুলোকে মিলিত করে বলেনঃ “ এইভাবে ।” এখন উপরের জন নীচের জনকে, সে তার নীচের জনকে ঐ কথা বলে দেয়। শেষ পর্যন্ত সর্ব নীচের জন ঐ কথা ভবিষ্যদ্বক্তা বা যাদুকরের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। কখনো কখনো এমনও হয় যে, ঐ কথা পৌঁছাবার পূর্বেই অগ্নিশিখা পৌঁছে যায়, সুতরাং শয়তান ঐ কথা পৌঁছাতে পারে না। আবার কখনো কখনো অগ্নিশিখা পৌঁছার পূর্বেই শয়তান ঐ কথা পৌঁছিয়ে থাকে। ঐ কথার সাথে যাদুকর নিজের পক্ষ হতে শত শত মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে প্রচার করে দেয়। ঐ একটি কথা সত্যরূপে প্রকাশিত হওয়ায় জনগণ সবগুলোকেই সত্য মনে করে থাকে। ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) এই সমুদয় হাদীসের বর্ণনা ( আরবি ) ( ৩৪: ২৩ ) এই আয়াতের তাফসীরে আসবে ইনশাআল্লাহ।সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এও আছে যে, ফেরেশতারা আসমানী বিষয়ক কথাবার্তা মেঘের উপর বলে থাকেন যা শয়তান শুনে নিয়ে যাদুকরদের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। আর ঐ যাদুকর একটি সত্যের সাথে শতটি মিথ্যা মিলিয়ে দেয়। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ( কাফির ) কবিদের অনুসরণ বিভ্রান্ত লোকেরাই করে থাকে। আরব কবিদের মধ্যে প্রচলিত ছিল যে, কারো নিন্দায় তারা কিছু বলতো। জনগণের একটি দল তাদের সাথে হয়ে যেতো এবং তাদের নিকট হতে ঐ নিন্দাসূচক কবিতা নিয়ে আসতো।একবার রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীদের একটি দলকে সাথে নিয়ে আ’রজের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একজন কবির সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয় যে কবিতা পাঠ করতে করতে চলছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “ তাকে ধর অথবা তাকে কবিতা পাঠ হতে বিরত রাখো । কারো রক্ত পুঁজ দ্বারা পেট পূর্ণ করা কবিতা দ্বারা পেট পূর্ণ করা অপেক্ষা উত্তম।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তুমি কি দেখো না যে, তারা উড্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়? প্রত্যেক বাজে বিষয়ের মধ্যে তারা ঢুকে পড়ে। কারো প্রশংসা করতে গিয়ে তারা তাকে একেবারে আকাশে উঠিয়ে দেয়। মিথ্যা প্রশংসা করে তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। তারা হয় কথার সওদাগর, কিন্তু কাজে অলস। তারা নিজেরা যা করে না তা বলে থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর যুগে দু’টি লোক একে অপরকে নিন্দা করে। তাদের একজন ছিল আনসারী এবং অপরজন ছিল অন্য গোত্রের লোক। তখন দুই গোত্রেরই বড় বড় লোকেরা তাদের সাথে যোগ দেয়। তাই এই আয়াতে এটাই রয়েছে যে, বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদেরকে অনুসরণ করে থাকে। তারা ঐ কথা বলে থাকে যা তারা নিজেরা করে না। এজন্যেই আলেমগণ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে, যদি কোন কবি নিজের কবিতার মধ্যে এমন কোন পাপের কথা স্বীকার করে নেয় যার উপর শরীয়তের হদ ওয়াজিব হয়, তবে তার উপর হদ জারী করা যাবে কি যাবে না? আলেমরা দুই দিকেই গিয়েছেন। আসলে তারা ফখর ও গর্ব করে এ ধরনের কথা বলে থাকে। তারা বলেঃ “ আমি এই করেছি, ঐ করেছি, অথচ আসলে তারা কিছুই করেনি এবং করতেও পারে না । মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ( রঃ ) ও মুহাম্মাদ ইবনে সা'দ ( রঃ ) তাবাকাতে এবং যুবায়ের ইবনে বিকার ( রঃ ) কিতাবুল ফুকাহাতে বর্ণনা করেছেন যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ ) তাঁর খিলাফতের আমলে হযরত নুমান ইবনে আদী ইবনে ফুলা ( রাঃ )-কে বসরার মাইসান শহরের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি একজন কবি ছিলেন। তিনি কবিতায় বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ সুন্দরী মহিলারা কি এ খবর পায়নি যে, তাদের প্রেমিক মাইসানে অবস্থান করছে? যেখানে সদা-সর্বদা শীশার গ্লাসে মদ্যচক্র চলছে? আর গ্রামের তরুণীরা নাচ-গানে মত্ত রয়েছে । হ্যাঁ, যদি আমার কোন বন্ধু দ্বারা এটা সম্ভব হয় তবে এর চেয়ে বড় ও পূর্ণ মদ্যের গ্লাস আমাকে পান করাতে পারে। কিন্তু ছোট গ্লাস আমার নিকট খুবই অপছন্দনীয়। আল্লাহ করুন যেন আমীরুল মুমিনীনের কাছে এ খবর না পেীছে। অন্যথায় তিনি এতে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন এবং আমাকে শাস্তি দিবেন।” ঘটনাক্রমে সত্যিই এ কবিতাগুলো আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ( রাঃ )-এর নিকট পৌছে যায় এবং সাথে সাথেই তিনি লোক পাঠিয়ে তাঁকে পদচ্যুত করেন এবং তিনি একটি চিঠিও পাঠান। ঐ চিঠিতে তিনি লিখেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি । হা-মীম। এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর, শক্তিশালী। তিনি ছাড়া কোন মা'বূদ নেই। প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট। অতঃপর আমার কাছে তোমার ( কবিতার ) কথা পৌঁছেছে। আল্লাহর কসম! অবশ্যই ওটা আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে। তাই আমি তোমাকে পদচ্যুত করলাম।" এ চিঠি পাঠ মাত্রই হযরত নু'মান ( রাঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-এর দরবারে হাযির হয়ে যান এবং অত্যন্ত দ্রতার সাথে আরয করেনঃ “ হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহর শপথ! আমি কখনো মদ্যপানও করিনি, নাচও দেখিনি এবং গান বাজনাও করিনি । এটা তো শুধু কবিতাসূচক আবেগ-উচ্ছ্বাস ছিল।” তাঁর একথা শুনে আমীরুল মুমিনীন বলেনঃ “ আমারও ধারণা এটাই ছিল । কিন্তু আমি তো এটা সহ্য করতে পারি না যে, এরূপ অশ্লীলভাষী কবিকে কোন পদে রেখে দিই।” তাহলে বুঝা গেল যে, হযরত উমার ( রাঃ )-এর মতেও কবি যদি তার কবিতার মাধ্যমে এমন কোন অপরাধের কথা ঘোষণা করে যা হদের যোগ্য, তবুও তাকে হদ মারা যাবে না। কেননা, সে বলে বটে, কিন্তু করে না। তবে নিঃসন্দেহে সে তিরস্কার ও নিন্দার যোগ্য। হাদীসে আছে যে, রক্ত, পুঁজ দ্বারা পেট পূর্ণ করা কবিতা দ্বারা পেট পূর্ণ করা অপেক্ষা উত্তম। ভাবার্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কবিও নন, যাদুকরও নন, ভবিষ্যদ্বক্তাও নন এবং মিথ্যা আরোপকারীও নন। তাঁর বাহ্যিক অবস্থাই তাঁর এসব দোষ হতে মুক্ত হওয়ার বড় সাক্ষী। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আমি রাসূল ( সঃ )-কে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয় নয়, এটাতো শুধু এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন ।” ( ৩৬:৬৯ ) আর এক জায়গায় আছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ এটা কোন কবির রচনা নয়, তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর । এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই অনুধাবন কর। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।” ( ৬৯: ৪১-৪৩ ) অনুরূপভাবে এখানে বলেছেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ আর নিশ্চয়ই এটা ( আল-কুরআন ) জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ । জিবরাঈল ( আঃ ) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার। অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।” ( ২৬:১৯২-১৯৫ ) এ সূরারই আর একটি জায়গায় বলেছেনঃ “ শয়তানরা ওটাসহ অবতীর্ণ হয়নি । তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। এর আরো কিছু পরে বলেছেনঃ “ তোমাদেরকে কি আমি জানিয়ে দেবো কার কাছে শয়তানরা অবতীর্ণ হয়? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট । তারা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। আর কবিদেরকে অনুসরণ করে তারা যারা বিভ্রান্ত। তুমি কি দেখো না তারা। উল্লান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়? এবং যা করে না তা বলে।” এরপরে যা রয়েছে তার শানে নুযূল এই যে, এর পূর্ববর্তী আয়াত যখন অবতীর্ণ হয় ( যাতে কবিদেরকে নিন্দে করা হয়েছে ), তখন নবী ( সঃ )-এর দরবারের কবিরা যেমন হযরত হাস্সান ইবনে সাবিত ( রাঃ ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ( রাঃ ) এবং হযরত কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ ) ক্রন্দনরত অবস্থায় নবী ( সঃ )-এর দরবারে হাযির হয়ে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তাহলে তো কবিদের অবস্থা খুবই শোচনীয় । আমরাও তো কুবি ( সুতরাং আমরাও তো তাহলে নিন্দনীয়? )।” তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এই পরবর্তী আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ “ ঈমান আনয়নকারী ও সৎকর্মশীল তোমরাই এবং আল্লাহকে বার বার স্মরণকারীও তোমরাই । তোমরাই অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণকারী। সুতরাং তোমরা এদের হতে স্বতন্ত্র।”অন্য একটি রিওয়াইয়াতে হযরত কা'ব ( রাঃ )-এর নাম নেই। একটি রিওয়াইয়াতে শুধু আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ( রাঃ )-এর কথা আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দরবারে হাযির হয়ে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমিও তো কবি?” তারই একথার পরিপ্রেক্ষিতে ( আরবি ) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কথা বর্ণিত আছে । কিন্তু এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এটা মক্কী সূরা। আর আনসার কবিরা মক্কায় ছিলেন না। তারা সবাই ছিলেন মদীনায়। কাজেই তাদের ব্যাপারে এ সূরা অবতীর্ণ হওয়া অসম্ভবই বটে। যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে ওগুলো মুরসাল। সুতরাং এগুলোর উপর ভরসা করা যায় না। তবে এ আয়াতটি যে স্বাতন্ত্রের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে তাতে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই। আর এই স্বাতন্ত্র শুধু এই আনসার কবিদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে কোন কবি তার অজ্ঞতার যুগে যদি ইসলাম ও মুসলমানদের বিপক্ষে কবিতা লিখে থাকে, অতঃপর মুসলমান হয়ে গিয়ে তাওবা করে থাকে এবং পূর্বের দুষ্কর্মের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বার বার আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে তবে তারাও নিন্দনীয় কবিদের হতে স্বতন্ত্র হবে। কেননা, সৎ কার্যাবলী দুষ্কর্মগুলোকে মিটিয়ে দেয়। তাহলে সে যখন কবিতার মাধ্যমে মুসলমানদের দুর্নাম করেছিল এবং আল্লাহর দ্বীনকে মন্দ বলেছিল তখন ওটা নিঃসন্দেহে মন্দ কাজই ছিল। কিন্তু পরে যখন সে মুসলমানদের ও ইসলামের প্রশংসা করলো তখন ঐ দুষ্কর্ম সকর্মে পরিবর্তিত হয়ে গেল। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যাবআরী ( রাঃ ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দুর্নাম করেছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর বড়ই প্রশংসা করেছিলেন এবং পূর্বে যে তিনি তাঁর দুর্নাম করেছিলেন, কবিতার মাধ্যমে ওর ওজর পেশ করতে গিয়ে বলেন যে, ঐ সময় তিনি শয়তানের খপ্পরে পড়েছিলেন। অনুরূপভাবে হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর চাচাতো ভাই হওয়া সত্ত্বেও তার একজন বড় শত্রু ছিলেন এবং কবিতার মাধ্যমে তাঁর খুবই দুর্নাম করতেন। কিন্তু যখন তিনি মুসলমান হলেন তখন এমন পাকা মুসলমান হলেন যে, সারা দুনিয়ায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অপেক্ষা বড় প্রিয়জন তাঁর কাছে আর কেউই ছিল না। প্রায়ই তিনি তাঁর প্রশংসা করতেন এবং তার সাথে অত্যন্ত ভালবাসা রাখতেন।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব যখন মুসলমান হন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাকে আপনি তিনটি জিনিস দান করুন । প্রথম এই যে, আমার পুত্র মুআবিয়া ( রাঃ )-কে আপনার লেখক ( অর্থাৎ অহী লেখক ) বানিয়ে নিন। দ্বিতীয় এই যে, আমার সাথে এক দল সৈন্য প্রেরণ করুন যাতে আমি কাফিরদের সাথে লড়তে পারি যেমন আমি মুসলমানদের সাথে লড়তাম।” তাঁর এই দু’টি আবেদনই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কবুল করে নেন। তৃতীয় আর একটি আবেদন তিনি করেন এবং সেটাও গৃহীত হয়। ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) সুতরাং এই লোকদেরকে পূর্ববর্তী আয়াতের হুকুম হতে এই পরবর্তী আয়াত দ্বারা পৃথক করা হয়েছে। আল্লাহর অধিক স্মরণ তাঁরা তাঁদের কবিতার মাধ্যমেই করুন অথবা অন্য কোন প্রকারে করুন, নিশ্চিতরূপে তা তাদের পূর্ববর্তী পাপসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর উক্তিঃ তারা অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে অর্থাৎ কবিতার মাধ্যমে তারা কাফিরদের নিন্দামূলক কবিতার জবাব দিয়ে থাকেন। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত হাসান ( রাঃ )-কে বলেছিলেনঃ “ তুমি কাফিরদের নিন্দা করে কবিতা রচনা কর, হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তোমার সাথে রয়েছেন ।”হযরত কাব ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি কুরআন পাকে কবিদের নিন্দা শুনেন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আর্য করেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা ( কবিদের সম্পর্কে ) যা নাযিল করার তা তো নাযিল করেছেন ( তাহলে আমিও কি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত? ) ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ “ ( না, না, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও । জেনে রেখো যে, ) মুমিন তরবারী ও জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করে থাকে। যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদের কবিতাগুলো তো তাদেরকে ( কাফিরদেরকে ) মুজাহিদের তীরের ন্যায় ছিদ্র করে দিয়েছে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ অত্যাচারীদের গন্তব্যস্থল কোথায় তা তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। সেই দিন তাদের ওজর আপত্তি কোন কাজে আসবে না। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা যুলুম হতে বেঁচে থাকো । কারণ কিয়ামতের দিন যুলুম অন্ধকারের কারণ হবে।” কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ পাকের ( আরবি ) উক্তিটি আম বা সাধারণ, কবি হোক বা অন্য কেউ হোক, সবাই এর অন্তর্ভুক্ত।হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) একজন খৃষ্টানের জানাযা যেতে দেখে এ আয়াতটিই পাঠ করেছিলেন। তিনি যখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন তখন এতো কাঁদতেন যে, তাঁর হেঁচকী বন্ধ হয়ে যেতো।হযরত ফুযালা ইবনে উবায়েদ ( রঃ ) যখন রোমে আগমন করেন তখন একটি লোক নামায পড়ছিলেন। যখন লোকটি ( আরবি ) আয়াতটি পাঠ করেন তখন তিনি বলেন যে, এর দ্বারা বায়তুল্লাহর ধ্বংসকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা মক্কাবাসী উদ্দেশ্য। আবার এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা মুশরিকরা উদ্দেশ্য। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আয়াতটি হলো সাধারণ। সুতরাং এটা সব যালিমকেই অন্তর্ভুক্তকারী।হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমার পিতা হযরত আবু বকর ( রাঃ ) তাঁর মৃত্যুর সময় মাত্র দু'টি লাইনে তাঁর অসিয়ত লিখে যান । তা ছিল নিম্নরূপঃবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা আবু বকর ইবনে আবি কাহাফা ( রাঃ )-এর অসিয়ত। এটা ঐ সময়ের অসিয়ত, যখন তিনি দুনিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন। যে সময় কাফিরও মুমিন হয়ে যায়, পাপীও তাওবা করে এবং মিথ্যাবাদীকেও সত্যবাদী মনে করা হয়। আমি উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ )-কে তোমাদের উপর আমার খলীফা নিযুক্ত করে যাচ্ছি। সে যদি ইনসাফ করে তবে খুব ভাল কথা এবং তার সম্পর্কে আমার ধারণা এটাই আছে। আর যদি সে যুলুম করে এবং কোন পরিবর্তন আনয়ন করে তবে জেনে রেখো যে, আমি ভবিষ্যদ্রষ্টা নই। অত্যাচারীরা তাদের গন্তব্যস্থল কোথায় তা সত্বরই জানতে পারবে।”
সূরা শুআরা আয়াত 227 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যেদিন সিঙ্গায় ফূৎকার দেয়া হবে, সেদিন আমি অপরাধীদেরকে সমবেত করব নীল চক্ষু অবস্থায়।
- অতঃপর তোমরা তাদেরকে ঠাট্টার পাত্ররূপে গ্রহণ করতে। এমনকি, তা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল এবং
- নভোমন্ডলে ও ভুমন্ডলে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ।
- আর তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম মুষলধারে বৃষ্টি। সেই সতর্ককৃতদের উপর কতই না মারাত্নক ছিল সে
- এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে
- আমার কাজ তো এক মুহূর্তে চোখের পলকের মত।
- অতএব, আপনি সবর করুন নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আপনি আপনার গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রর্থনা করুন
- এবং জিনকে এর আগে লু এর আগুনের দ্বারা সৃজিত করেছি।
- অতঃপর যখন আমি তাদের উপর থেকে আযাব তুলে নিতাম নির্ধারিত একটি সময় পর্যন্ত-যেখান পর্যন্ত তাদেরকে
- আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা শুআরা ডাউনলোড করুন:
সূরা Shuara mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Shuara শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers