কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 228 তাফসীর
﴿وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَٰلِكَ إِنْ أَرَادُوا إِصْلَاحًا ۚ وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾
[ البقرة: 228]
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। [সূরা বাকারাহ্: 228]
Surah Al-Baqarah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 228
আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা নিজেদের প্রতীক্ষায় রাখবে তিন ঋতুকাল। আর তাদের জন্য বৈধ হবে না লুকিয়ে রাখা যা আল্লাহ্ তাদের গর্ভে সৃষ্টি করেছেন, যদি তারা আল্লাহ্তে ও শেষ দিনে ঈমান আনে। আর তাদের স্বামীদের অধিকতর হক্ আছে তাদের ইতিমধ্যে ফিরিয়ে নেবার, যদি তারা মিটমাট করতে চায়। আর স্ত্রীদের তেমন অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপরে ন্যায়সঙ্গতভাবে। অবশ্য পুরুষদের অবস্থান তাদের কিছুটা উপরে। আর আল্লাহ্ মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী!
Tafsir Mokhtasar Bangla
২২৮. তালাকপ্রাপ্তারা তিন ঋতু ্̄রাব পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ইতিমধ্যে তারা কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না। এমনকি এ সময় তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের জরায়ুতে যে সন্তান সৃষ্টি করেছেন তা গোপন রাখা বৈধ হবে না। যদি তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসের দাবিতে সত্যবাদিনী হয়ে থাকে। তবে ইদ্দত চলাকালীন সময়ে তাদের তালাকদাতা স্বামীরা তাদেরকে আবারো ফেরত নেয়ার অধিকার রাখে যদি তারা ফেরত নেয়ার মাধ্যমে তালাকের সমস্যাগুলো দূর করা এবং ভালোবাসার ইচ্ছা পোষণ করে। বস্তুতঃ স্বামীদের উপর স্ত্রীদের সে অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে যা স্বামীদের জন্য তাদের উপর রয়েছে। তবে তা হবে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী। তেমনিভাবে কর্তৃত্ব ও তালাকের অধিকারের ক্ষেত্রে মহিলাদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী; তাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। তেমনিভাবে তিনি তাঁর শরীয়ত ও পরিচালনায় অতি প্রজ্ঞাময়।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তালাকপ্রাপ্তা ( বর্জিতা ) নারীগণ তিন মাসিকস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকবে।[১] ( অর্থাৎ বিবাহ করা থেকে বিরত থাকবে। ) তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হলে তাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা তাদের পক্ষে বৈধ নয়।[২] আর এই সময়ের মধ্যে যদি তারা সন্ধি কামনা করে, তাহলে তাদের স্বামীগণই তাদেরকে পুনঃগ্রহণে অধিক হকদার।[৩] নারীদের তেমনি ন্যায়-সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের কিছুটা মর্যাদা আছে।[৪] আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [১] এ থেকে সেই তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে বুঝানো হয়েছে, যে গর্ভবতী নয়। ( কারণ, গর্ভবতীর ইদ্দত হল প্রসব হওয়া পর্যন্ত )। অনুরূপ ( স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ) সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পূর্বে যে মহিলা তালাক পেয়ে গেছে, সেও নয়। ( কারণ, তার কোন ইদ্দত নেই। ) যার হায়েয আসা বন্ধ হয়ে গেছে, সেও নয়। ( কেননা, তার ইদ্দত হল, তিন মাস। ) অর্থাৎ, এখানে উল্লিখিত নারীগুলো ব্যতীত এমন নারীর ইদ্দতের কথা বলা হচ্ছে, যার সাথে তার স্বামীর সম্পর্ক কায়েম হয়েছে। আর তার ইদ্দত হল, তিন 'ক্বুরু'। যার অর্থ, তিন পবিত্রাবস্থা অথবা তিন মাসিকাবস্থা। অর্থাৎ, সে তিন পবিত্রাবস্থা বা তিন মাসিকাবস্থা অতিবাহিত করার পর দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ ( বিবাহ ) করতে পারবে। সালাফগণ 'ক্বুরু'র উভয় অর্থকেই সঠিক বলেছেন। কাজেই দু'টো অর্থই গ্রহণ করা যায়। ( ইবনে কাসীর ও ফাতহুল ক্বাদীর ) [২] এ থেকে মাসিক ও গর্ভ উভয় উদ্দেশ্য। মাসিক গোপন করা বলতে যেমন বলা, তালাকের পর আমার একবার বা দু'বার মাসিক এসেছে, অথচ তিন মাসিকই তার এসে গেছে। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়া ( যদি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে )। আর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে, বলা, আমার তিনবারই মাসিক এসে গেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে এ রকম হয়নি, যাতে স্বামীর ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার প্রমাণিত না হয়। অনুরূপভাবে গর্ভ গোপন করাও বৈধ নয়। কেননা, গর্ভাবস্থায় অন্যত্র বিবাহ হলে বংশে মিশ্রণ ঘটবে। বীর্য হবে প্রথম স্বামীর কিন্তু সন্তান সম্পর্কিত হবে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে। আর এটা হল খুব বড় পাপ। [৩] ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য যদি স্বামীর সংকীর্ণতা সৃষ্টি করা না হয়, তাহলে তার ফিরিয়ে নেওয়ায় সম্পূর্ণ অধিকার আছে। স্ত্রীর অভিভাবকের এ অধিকারে অন্তরায় সৃষ্টি করার অনুমতি নেই। [৪] অর্থাৎ, উভয়ের অধিকারগুলো একে অপরের মতনই। আর এগুলো আদায় করার ব্যাপারে উভয়েই শরীয়ত কর্তৃক বাধ্য। তবে মহিলাদের উপর পুরুষদের কিছু মর্যাদা বেশী রয়েছে। যেমন, প্রকৃতিগত শক্তি, জিহাদের অনুমতি, দ্বিগুণ মীরাস পাওয়া, অবিভাবকত্ব ও নেতৃত্ব এবং তালাক দেওয়া ও ফিরিয়ে নেওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীগণ [ ১ ] তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকবে। আর তারা আল্লাহ্ ও আখেরাতের উপর ঈমান রাখলে তাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন তা গোপন রাখা তাদের পক্ষে হালাল নয়। আর যদি তারা আপোষ-নিম্পত্তি করতে চায় তবে এতে তাদের পুনঃ গ্রহণে তাদের স্বামীরা বেশী হকদার। আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে [ ২ ]। আর আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[ ১ ] ইসলামের শিক্ষা এই যে, বিয়ের চুক্তি সারা জীবনের জন্য সম্পাদন করা হয়, তা ভঙ্গ করার মত কোন অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা, এ সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম শুধু স্বামী-স্ত্রী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এতে বংশ ও সন্তানদের জীবনও বরবাদ হয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদও সৃষ্টি হয় এবং সংশ্লিষ্ট অনেকেই এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসহযোগিতার অবস্থায় প্রথমে বুঝবার চেষ্টা, অতঃপর সতর্কীকরণ ও ভীতি প্রদর্শনের উপদেশ দেয়া হয়েছে। যদি এতেও সমস্যার সমাধান না হয়, তবে উভয় পক্ষের কয়েক ব্যক্তিকে সালিশ সাব্যস্ত করে ব্যাপারটির মীমাংসা করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় ব্যাপার এমন রূপ ধারণ করে যে, সংশোধনের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় এবং বৈবাহিক সম্পর্কের কাংখিত ফল লাভের স্থলে উভয়ের একত্রে মিলেমিশে থাকাও মস্ত আযাবে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় এ সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়াই উভয় পক্ষের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার পথ। আর এজন্যই ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইসলামী শরীআত অন্যান্য দ্বীনের মত বৈবাহিক বন্ধনকে ছিন্ন করার পথ বন্ধ করে দেয়নি। যেহেতু চিন্তাশক্তি ও ধৈর্যের সামর্থ্য স্ত্রীলোক অপেক্ষা পুরুষের মধ্যে অনেক বেশী, তাই তালাকের অধিকারও পুরুষকেই দেয়া হয়েছে; এ স্বাধীন ক্ষমতা স্ত্রীলোকদের দেয়া হয়নি। যাতে করে সাময়িক বিরক্তির প্রভাবে স্ত্রীলোকদের মধ্যে অনেক বেশী তালাকের কারণ হতে না পারে। তবে স্ত্রীজাতিকেও এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। স্বামীর যুলুম অত্যাচার থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা তাদের জন্যেও রয়েছে। তারা কাজীর দরবারে নিজেদের অসুবিধার বিষয় উপস্থাপন করে স্বামীর দোষ প্রমাণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ করিয়ে নিতে পারে। যদিও পুরুষকে তালাক দেয়ার স্বাধীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কিন্তু কিছু আদাব ও শর্ত রয়েছে। যেমন, এক.
এ ক্ষমতার ব্যবহার আল্লাহ্র নিকট অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। একমাত্র অপারগ অবস্থাতেই এ ক্ষমতার প্রয়োগ করা যায়। দুই.
রাগাম্বিত অবস্থায় কিংবা সাময়িক বিরক্তি ও গরমিলের সময় এ ক্ষমতার প্রয়োগ করবে না। তিন.
ঋতু অবস্থায় তালাক দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, ঋতু অবস্থায় তালাক দিলে চলতি ঋতু ইদতে গণ্য হবে না। চলতি ঋতুর শেষে পবিত্রতা লাভের পর পুনরায় যে ঋতু শুরু হয়, সে ঋতু থেকে ইদ্দত গণনা করা হবে। চার.
পবিত্র অবস্থায়ও যে তুহুর বা সুচিতায় সহবাস হয়েছে তাতে তালাক না দেয়ার কথা বলা হয়েছে, এতে স্ত্রীর ইদ্দত দীর্ঘ হবে এবং তাতে তার কষ্ট হবে। কারণ, যে তহুর বা শুচিতায় সহবাস করা হয়েছে, যেহেতু সে তহুরে স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে, তাই তাতে ইদ্দত আরও দীর্ঘ হয়ে যেতে পারে। তালাক দেয়ার জন্য এ নির্ধারিত তহুর ঠিক করার আরও একটি বিশেষ দিক হচ্ছে এই যে, এ সময়ের মধ্যে রাগ কমেও যেতে পারে এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি ফিরে আসলে তালাক দেয়ার ইচ্ছাও শেষ হয়ে যেতে পারে। পাঁচ.
বৈবাহিক বন্ধন ছিন্ন করার বিষয়টি সাধারণ ক্রয়-বিক্রয় ও চুক্তি ছিন্ন করার মত নয়। বৈষয়িক চুক্তির মত বিয়ের চুক্তি একবার ছিন্ন করাতেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। উভয়পক্ষ অন্যত্র দ্বিতীয় চুক্তি করার ব্যাপারে স্বাধীনও নয়। বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে তালাকের তিনটি স্তর ও পর্যায় রাখা হয়েছে এবং এতে ইদতের শর্ত রাখা হয়েছে যে, ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের অনেক সম্পর্কই বাকী থাকে। যেমন, স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। তবে পুরুষের জন্য অবশ্য বাধা-নিষেধ থাকে না। ছয়.
যদি পরিস্কার কথায় এক বা দুই তালাক দেয়া হয়, তবে তালাক প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই বিবাহবন্ধন ছিন্ন হয় না। বরং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকে। ইদ্দতের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার করলে পূর্বের বিয়েই অক্ষুন্ন থাকে। সাত.
প্রত্যাহারের এ অধিকার শুধু এক অথবা দুই তালাক পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, যাতে কোন অত্যাচারী স্বামী এমন করতে না পারে যে, কথায় কথায় তালাক বা প্রত্যাহার করে পুনরায় স্বীয় বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখবে। আট.
যদি কেউ তৃতীয় তালাক দিয়ে দেয়, তবে তার আর প্রত্যাহার করার অধিকার থাকে না। [ কুরতুবী থেকে সংক্ষেপিত ]
[ ২ ] আয়াতটি নারী ও পুরুষের পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং সেগুলোর স্তর নির্ণয় সম্পর্কে একটি শরীআতী মূলনীতি হিসেবে গণ্য। বলা হয়েছে, নারীদের উপর যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে, এবং যা প্রদান করা একান্ত জরুরী, তেমনিভাবে পুরুষদের উপরও নারীদের অধিকার রয়েছে, যা প্রদান করা অপরিহার্য। তবে এতটুকু পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে যে, পুরুষের মর্যাদা নারীদের তুলনায় কিছুটা বেশী। প্রায় একই রকম বক্তব্য অন্যত্র উপস্থাপিত হয়েছেঃ “ যেহেতু আল্লাহ্ একজনকে অপরজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, কাজেই পুরুষরা হলো নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল” । [ সূরা আন-নিসাঃ ৩৪ ]
ইসলামপূর্ব জাহেলিয়াত আমলে সমগ্র বিশ্বের জাতিসমূহে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নারীর মর্যাদা অন্যান্য সাধারণ গৃহস্থালী আসবাবপত্রের চেয়ে বেশী ছিল না। তখন চতুস্পদ জীব-জন্তুর মত তাদেরও বেচা-কেনা চলত। নিজের বিয়ে-শাদীর ব্যাপারেও নারীর মতামতের কোন রকম মূল্য ছিল না; অভিভাবকগণ যার দায়িত্বে অর্পণ করত তাদেরকে সেখানেই যেতে হত। মীরাসের অধিকারিনী হত না। রাসূল সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার প্রবর্তিত দ্বীন ইসলামই বিশ্ববাসীর চোখের পর্দা উন্মোচন করেছেন। মানুষকে মানুষের মর্যাদা দান করতে শিক্ষা দিয়েছে। ন্যায়-নীতির প্রবর্তন করেছেন এবং নারী সমাজের অধিকার সংরক্ষণ পুরুষদের উপর ফরয করেছে। বিয়ে-শাদী ও ধন-সম্পদে তাদেরকে স্বত্বাধিকার দেয়া হয়েছে, কোন ব্যক্তি পিতা হলেও কোন প্রাপ্ত বয়স্কা স্ত্রীলোককে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েতে বাধ্য করতে পারেন না, এমনকি স্ত্রীলোকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দিলেও তা তার অনুমতির উপর স্থগিত থাকে, সে অস্বীকৃতি জানালে তা বাতিল হয়ে যায়। তার সম্পদে কোন পুরুষই তার অনুমতি ব্যতীত হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। স্বামীর মৃত্যু বা স্বামী তাকে তালাক দিলে সে স্বাধীন, কেউ তাকে কোন ব্যাপারে বাধ্য করতে পারে না। সেও তার নিকট আর্তীয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে তেমনি অংশীদার হয়, যেমন হয় পুরুষেরা। স্বামী তার নায্য অধিকার না দিলে, সে আইনের সাহায্যে তা আদায় করে নিতে পারে অথবা তার বিবাহ-বন্ধন ছিন্ন করে দিতে পারে। আবার ইসলাম নারীদেরকে বল্লাহীনভাবে ছেড়ে দেয়া এবং পুরুষের কর্তৃত্বের আওতা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করেও দেয়নি; কারণ তা নিরাপদ নয়। সন্তান-সন্ততি লালন-পালন ও ঘরের কাজ-কর্মের দায়িত্ব প্রকৃতিগতভাবেই তাদের উপর ন্যস্ত করে দেয়া হয়েছে। তারা এগুলোই বাস্তবায়নের উপযোগী। তাছাড়া স্ত্রীলোককে বৈষয়িক জীবনে পুরুষের আওতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেয়াও নিতান্ত ভয়ের কারণ। এতে পৃথিবীতে রক্তপাত, ঝগড়া-বিবাদ এবং নানা রকমের ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। এ জন্য কুরআনে এ কথাও ঘোষণা করা হয়েছে যে, “ পুরুষের মর্যাদা স্ত্রীলোক অপেক্ষা এক স্তর উর্ধ্বে । ” অন্য কথায় বলা যায় যে, পুরুষ তাদের তত্ত্বাবধায়ক ও জিম্মাদার। এ আয়াতে সামাজিক শান্তি-শৃংখলা মানব চরিত্রের স্বাভাবিক প্রবণতা, সর্বোপরি স্ত্রীলোকদের সুবিধার্থেই পুরুষকে স্ত্রীলোকদের উপর শুধু কিছুটা প্রাধান্যই দেয়া হয়নি বরং তা পালন করাও ফরয করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাই বলে সকল পুরুষই সকল স্ত্রীলোকের উপর মর্যাদার অধিকারী নয়। কেননা, আল্লাহ্র নিকট মর্যাদার নিরিখ হচ্ছে ঈমান ও নেক আমল। সেখানে মর্যাদার তারতম্য ঈমান ও নেক আমলের তারতম্যের উপরই হয়ে থাকে। তাই আখেরাতের ব্যাপারে দুনিয়ার মত স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। এ ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, কোন কোন স্ত্রীলোক অনেক পুরুষের চাইতেও অধিক মর্যাদার যোগ্য [ মাআরিফুল কুরআন থেকে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
যে সাবালিকা নারীদের সাথে তাদের স্বামীদের মিলন ঘটেছে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে,তারা যেন তালাকপ্রাপ্তির পরে তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করে। অতঃপর ইচ্ছে করলে অন্য স্বামী গ্রহণ করতে পারে। তবে ইমাম চতুষ্টয় এটা হতে দাসীদেরকে পৃথক করেছেন। তাঁদের মতে দাসীদের দুই ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, এসব ব্যাপারে দাসীরা আযাদ মেয়েদের অর্ধেকের উপর রয়েছে। কিন্তু ঋতুর মেয়াদের অর্ধেক ঠিক হয় না বলে তাদেরকে দুই ঋতু অপেক্ষা করতে হবে। একটি হাদীসে রয়েছে যে, দাসীদের তালাকও দু'টি এবং ‘ইদ্দত’ও দুই ঋতু ( তাফসীরে ইবনে জারীর )। কিন্তু এর বর্ণনাকারী হযরত মুহির দুর্বল। এই হাদীসটি জামেউত্ তিরমিযী, সুনান-ই-আবু দাউদ এবং সুনান-ই-ইবনে মাজাহর মধ্যেও রয়েছে। ইমাম হাফিয দারেকুতনী ( রঃ ) বলেনঃসঠিক কথা এই যে, এটা হযরত কাসেম বিন মুহাম্মদের নিজের উক্তি। কিন্তু হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে এই বর্ণনাটি মারফু রূপে বর্ণিত আছে। কিন্তু সে সম্বন্ধেও ইমাম দারেকুতনী ( রঃ ) বলেন যে, এটা হযরত আবদুল্লাহ বিন উমারের ( রাঃ ) নিজের উক্তি। অনুরূপভাবে স্বয়ং মুসলমানদের খলীফা হযরত উমার ফারূক ( রাঃ ) হতে এই হাদীসটি বর্ণিত আছে। এই জিজ্ঞাস্য বিষয় সম্বন্ধে সাহাবীদের ( রাঃ ) মধ্যে কোন মতভেদ ছিল না। তবে পূর্ববর্তী কয়েকজন মনীষী হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, ইদ্দতের ব্যাপারে আযাদ ও দাসী সমান। কেননা আয়াতটির মধ্যে সাধারণ হিসেবে দুটিই জড়িত আছে। তাছাড়া এটা স্বভাবজাত ব্যাপার। দাসী ও আযাদ এ ব্যাপারে সমান। মুহাম্মদ বিন সীরীনেরও এটাই উক্তি। কিন্তু এটা দুর্বল।‘মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতীমের একটি দুর্বল সনদ বিশিষ্ট বর্ণনায় রয়েছে যে, এই আয়াতটি ইয়াযিদ বিন সাকানের কন্যা হযরত আসমা ( রাঃ ) নামক একজন আনসারীয়া নারীর সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়। এর পূর্বে তালাকের ইদ্দত ছিল না। সর্বপ্রথম ‘ইদ্দতের নির্দেশ এই স্ত্রী লোকটির তালাকের পরেই অবতীর্ণ হয়। ( আরবি ) শব্দটির অর্থের ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মনীষীদের মধ্যে বরাবরই মতভেদ চলে আসছে। এর একটি অর্থ হচ্ছে ( আরবি ) অর্থাৎ পবিত্রতা। এটাই হযরত আয়েশার ( রাঃ ) অভিমত। তিনি তাঁর ভ্রাতুস্পুত্রী হযরত আবদুর রহমানের ( রাঃ ) কন্যা হযরত হাফসাকে ( রাঃ ) তাঁর তিন ‘হের অতিক্রান্ত হওয়ার পর তৃতীয় ঋতু আরম্ভ হওয়ার সময় স্থান পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হযরত উরওয়া ( রাঃ ) যখন এটা বর্ণনা করেন তখন হযরত আয়েশার ( রাঃ ) দ্বিতীয়া ভ্রাতুস্পুত্রী হযরত উমর ( রাঃ ) এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং বলেন, জনগণ হযরত আয়েশার ( রাঃ ) নিকট আপত্তি উঠালে তিনি বলেন, ( আরবি ) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে, ( আরবি )অর্থাৎ পবিত্রতা' ( মুআত্তা-ই-মালিক )।' এমনকি মুআত্তার মধ্যে হযরত আবু বকর বিন আবদুর রহমানের ( রাঃ ) এই উক্তিটিও বর্ণিত আছে : ‘আমি বিজ্ঞ পণ্ডিত ও ধর্মশাস্ত্রবিদদেরকে ( আরবি ) শব্দের তাফসীর ( আরবি ) বা পবিত্রতাই করতে শুনেছি।' হযরত আবদুল্লাহ বিন উমারও ( রাঃ ) এটাই বলেন যে, তৃতীয় ঋতু আরম্ভ হলেই স্ত্রী তার স্বামী হতে মুক্ত হয়ে যাবে এবং স্বামীও তার থেকে পৃথক হয়ে যাবে। ( মুআত্তা )।ইমাম মালিক ( রঃ ) বলেনঃ 'আমাদের নিকটেও এটাই সঠিক মত।' ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), যায়েদ বিন সাবিত ( রাঃ ), সালিহা ( রঃ ) কাসিম ( রঃ ), উরওয়া ( রঃ ), সুলাইমান বিন ইয়াসার ( রঃ ), আবু বকর বিন আবদুর রহমান ( রাঃ ), আবান বিন উসমান ( রঃ ), আতা ইবনে আবু রাবাহ ( রঃ ), কাতাদাহ ( রঃ ), যুহরী ( রঃ ) এবং অবশিষ্ট সাতজন ফকীহরও এটাই উক্তি। এটাই ইমাম মালিক ( রঃ ) এবং ইমাম শাফিঈর ( রঃ ) মাযহাব। দাউদ ( রঃ ) এবং আবু সাঊরও ( রঃ ) এটাই বলেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ( রঃ ) হতেও এরূপ একটি বর্ণনা বর্ণিত আছে। ঐ মনীষীগণ এর দলীল নিম্নের আয়াত হতেও গ্রহণ করেছেনঃ( আরবি ) অর্থাৎ তাদেরকে ইদ্দতের মধ্যে তালাক প্রদান কর।' ( ৬৫:১ ) অর্থাৎ তোমরা স্ত্রীদেরকে -এর মধ্যে পবিত্রতার অবস্থায় তালাক দাও।যে তুহুরে তালাক দেয়া হয় ওটাও গণনার মধ্যে ধরা হয়। কাজেই জানা যাচ্ছে যে, উপরের আয়াতেও ( আরবি ) শব্দের ভাবার্থ তুহুর বা পবিত্রতাই নেয়া হয়েছে। আরব কবিদের কবিতাতেও ( আরবি ) শব্দটি তুহুর বা পবিত্রতা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ( আরবি ) শব্দ সম্বন্ধে দ্বিতীয় উক্তি এই যে, ওর অর্থ হচ্ছে ‘ঋতু'। তাহলে ( আরবি )-এর অর্থ হবে তিন ঋতু। সুতরাং স্ত্রী যে পর্যন্ত না তৃতীয় ঋতু হতে পবিত্র হবে সে পর্যন্ত সে ইদ্দতের মধ্যেই থাকবে। এর প্রথম দলীল হচ্ছে .
হযরত উমার ফারূকের ( রাঃ ) এই ফায়সালাটিঃ তার নিকট একজন তালাকপ্রাপ্তা নারী এসে বলে ও আমার স্বামী আমাকে একটি বা দুটি তলিকি দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি আমার নিকট সে সময় আগমন করেন যখন আমি কাপড় ছেড়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করেছিলাম ( অর্থাৎ তৃতীয় ঋতু হতে পবিত্রতা লাভের উদ্দেশ্যে গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম )। তাহলে বলুন, এখন নির্দেশ কি: ( অর্থাৎ রাজ’আত’ হবে কি হবে না: ) তিনি বলেন, 'আমার ধারণা তো এই যে, ‘রাজ’আত' হয়ে গেছে।'হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ( রাঃ ) এটা সমর্থন করেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক ( রাঃ ), হযরত উমার ফারুক ( রাঃ ), হযরত উসমান রাঃ), হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত আবু দারদা ( রাঃ ), হযরত উবাদা বিন সামিত ( রাঃ ), হযরত আনাস বিন মালিক ( রাঃ ), হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ( রাঃ ) হযরত মুয়ায ( রাঃ ), হযরত উবাই বিন কাব ( রা ), হযরত আবু মূসা আশআরী ( রাঃ ) এবং হযরত ইবনে আববাস ( রাঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। সাইদ বিন মসাইয়া ( রঃ ), আলকামা ( রঃ ), আসওয়াদ ( রঃ ), ইবরাহীম ( রঃ ), আতা ( রঃ ), তাউস ( রঃ ), সাঈদ বিন যুবাইর ( রঃ ), ইকরামা ( রঃ ), মুহাম্মদ বিন সীরিন ( রঃ ), হাসান বসরী ( রঃ ), কাতাদাহ ( রঃ ), শাবী ( রঃ ), রাবী' ( রঃ ), মুকাতিল বিন হিব্বান ( রঃ ), সুদ্দী ( রঃ ), মাকস্থূল ( রঃ ), যহাক ( রঃ ), এবং আতা' খোরাসানীও ( রঃ ) এটাই বলেন। ইমাম আবু হানীফা ( রঃ ) এবং তাঁর সহচরদেরও এটাই মাযহাব।ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ( রঃ ) হতেও অধিকতর সঠিক বর্ণনায় এটাই বর্ণিত আছে। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বড় বড় সাহাবা-ই-কিরাম ( রাঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত। সাউর ( রঃ ), আওযায়ী ( রঃ ), ইবনে আবী লাইলা ( রঃ ), ইবনে শিবরামাহ ( রঃ ), হাসান বিন সালিহ ( রঃ ), আবু উবাইদ ( রঃ ) এবং ইসহাক বিন রাহুয়াহ ( রঃ )-এরও এটাই উক্তি। একটি হাদীসেও রয়েছে যে, নবী ( সঃ ) হযরত ফাতিমা বিনতে আবী জায়েশ ( রাঃ )-কে বলেছিলেন, ‘তোমরা ( আরবি ) এর দিনে নামায ছেড়ে দাও.।' সুতরাং জানা গেল যে, ( আরবি ) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে, ঋতু। কিন্তু এই হাদীসের মুনযির নামক একজন বর্ণনাকারী অপরিচিত। তার নাম প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। তবে ইবনে হিব্বান ( রঃ ) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেনঃ “ আভিধানিক অর্থে ( আরবি ) প্রত্যেক ঐ জিনিসের যাওয়া-আসার সময়কে বুঝায় যার যাওয়া-আসার সময় নির্ধারিত রয়েছে । এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এই শব্দটির দু’টো অর্থ হবে। ঋতুও হবে। এবং পবিত্রতাও হবে। কয়েকজন উসুল’ শাস্ত্রবিদের এটাই মাযহাব। আসমাঈও ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবি ) সময়’কে বলা হয়। আবু উমার বিন আলা ( রঃ ), বলেনঃ আরবে ঋতু ও পবিত্রতা উভয়কেই ( আরবি ) বলে। আবু উমার বিন আবদুল বারর ( রঃ ), বলেন, আরবী ভাষায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের এবং ধর্ম শাস্ত্রবিদদের এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধই নেই। তবে এই আয়াতের অর্থ নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে একদল গেছেন এদিকে এবং অন্যদল গেছেন ওদিকে।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-প্তাদের গর্ভে যা রয়েছে তা গোপন করা বৈধ নয়। অর্থাৎ গর্ভবতী হলেও প্রকাশ করতে হবে+এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'যদি তাদের আল্লাহর উপর ও কিয়ামতের উপর বিশ্বাস থাকে। এর দ্বারা স্ত্রীদেরকে ধমকানো হচ্ছে যে, তারা যেন মিথ্যা কথা না বলে। এর দ্বারা এটাও জানা যাচ্ছে যে, এই সংবাদ প্রদানে তাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য হবে। কেননা, এর উপরে কোন বাহ্যিক সাক্ষ্য উপস্থিত কম যেতে পারে না। তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, ইদ্দত’ হতে অতাড়ি বের হওয়ার জন্যে ঋতু না হওয়া সত্ত্বেও যেন তারা ‘ঋতু হয়ে গেছে’ ঐকথা না বলে। কিংবা ‘ইদ্দত’কে বাড়িয়ে দেয়ার জন্যে ঋতু হওয়া সত্ত্বেও যেন তারা ঋতু হয়নি’ এ কথা না বলে।এর পরে বলা হচ্ছে-যে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে, যদি তালাক-ই-রাজঈ’ হয়ে থাকে। অর্থাৎ এক তালাক এবং দুই তালাকের পরে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিতে পারে। এখন বাকী থাকলো তালাক-ই-বায়েন; অর্থাৎ যদি তিন তালাক হয়ে যায় তবে কি হবে: এ কথা মনে রাখতে হবে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় তালকি-ই-বায়েন ছিলই না। বরং সে সময় পর্যন্ত শত তালাক দিলেও ‘তালাক-ই-রাজঈ' থাকতো। ইসলামের নির্দেশাবলীর মধ্যে তালাক-ই-বায়েন এসেছে যে, যদি তিন তালাক হয়ে যায় তবে আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-স্ত্রীদের উপর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে তেমনই পুরুষদের উপরও স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেকেরই অপরের মঙ্গলের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। সহীহ মুসলিম শরীফের মধ্যে হযরত জাবীর ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তার বিদায় হজের ভাষণে জনগণকে সম্বোধন করে বলেন, “ হে জনমণ্ডলী! তোমরা স্ত্রী লোকদের সম্বন্ধে আল্লাহকে ভয় কর । তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে তাদেরকে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর কালেমা দ্বারা তাদের লজ্জা স্থানকে বৈধ করে নিয়েছে। স্ত্রীদের উপর তোমাদের এই অধিকার রয়েছে যে, তারা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে আসতে দেবে না যাদের প্রতি তোমরা অসন্তুষ্ট। যদি তারা এই কাজ করে তবে তোমরা তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু এমন প্রহার করো না যে, বাইরে তা প্রকাশ পায়। তোমাদের উপর তাদের এই অধিকার রয়েছে যে, তোমরা তাদেরকে তোমাদের সামর্থ অনুসারে খাওয়াবে ও পরাবে।একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করে, “ আমাদের উপর আমাদের স্ত্রীদের কি অধিকার রয়েছে:' তিনি উত্তরে বলেন, যখন তুমি খাবে তখন তাকেও খাওয়াবে । তুমি যখন পরবে তখন তাকেও পরাবে। তাকে তার মুখের উপর মেরো না। তাকে গালি দিও না এবং রাগান্বিত হয়ে তাকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিও না বরং বাড়ীতেই রাখ। এই আয়াতটিই পাঠ করে হ্যরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলতেন, ‘আমি পছন্দ করি যে, আমার স্ত্রীকে খুশী করার জন্যে আমি নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেই, যেমন আমার স্ত্রী আমাকে খুশী করবার জন্যে নিজেকে সুন্দর সাজে সাজিয়ে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেন-স্ত্রীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। অর্থাৎ দৈহিক, চারিত্রিক মর্যাদা, হুকুম, আনুগত্য, খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সব দিক দিয়েই স্ত্রীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। মোট কথা, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মর্যাদা হিসেবে পুরুষদের প্রাধান্য রয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে-‘পুরুষরা নারীদের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত, যেহেতু আল্লাহ তাদের একের উপর অপরকে গৌরবান্বিত করেছেন এবং এ হেতু যে, তারা স্বীয় ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে থাকে।' এরপরে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর অবাধ্যদের উপর প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারে মহাপরাক্রান্ত এবং স্বীয় নির্দেশাবলীর ব্যাপারে মহাবিজ্ঞ।
সূরা বাকারাহ্ আয়াত 228 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- শুনে রাখ, তারা তাদের পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহে পতিত রয়েছে। শুনে রাখ, তিনি সবকিছুকে
- ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে।
- বলুন, একে তিনিই অবতীর্ণ করেছেন, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের গোপন রহস্য অবগত আছেন। তিনি ক্ষমাশীল,
- মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে
- এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং
- গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত
- কাফেররা যখন কোরআন শুনে, তখন তারা তাদের দৃষ্টি দ্বারা যেন আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবে
- যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি
- এবং এটা উপহাস নয়।
- তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:
সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers