কোরান সূরা ইবরাহীম আয়াত 27 তাফসীর
﴿يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ﴾
[ إبراهيم: 27]
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন। [সূরা ইবরাহীম: 27]
Surah Ibrahim in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ibrahim ayat 27
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্ তাদের প্রতিষ্ঠিত করেন শাশ্বত বাণীর দ্বারা এই দুনিয়ার জীবনে ও পরকালে, আর আল্লাহ্ পথহারা করেন অন্যায়কারীদের, আর আল্লাহ্ যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।
Tafsir Mokhtasar Bangla
২৭. আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের স্থির কালিমার মাধ্যমে মু’মিনদেরকে দুনিয়ার জীবনে পরিপূর্ণ ঈমানের উপর অটল রাখেন। ফলে তারা ঈমানের উপরই মৃত্যু বরণ করে। তেমনিভাবে তিনি বারযাখী জীবনেও তাদেরকে কবরের জিজ্ঞাসার সময় এবং কিয়ামতের দিনেও অটল রাখেন। আর তিনি যালিমদেরকে আল্লাহর সাথে শিরক ও কুফরির মাধ্যমে সঠিক ও সত্য থেকে পথভ্রষ্ট করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যা চান তাই করেন। যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করতে চান তাকে ইনসাফের ভিত্তিতেই পথভ্রষ্ট করেন। আর যাকে হিদায়েত দিতে চান তাকে নিজ অনুগ্রহেই হিদায়েত দিয়ে থাকেন। তাঁকে বাধ্য করার কেউ নেই।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যারা বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ শাশ্বত বাণী দ্বারা ইহজীবনে ও পরজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন[১] এবং যারা সীমালংঘনকারী আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্ত করেন; আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন। [১] এর ব্যাখ্যা হাদীসে এরূপ এসেছে যে, মৃত্যুর পর কবরে মুসলিমকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে উত্তরে এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ( সত্য ) মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ ( সাঃ ) আল্লাহর রসূল। সুতরাং এটাই অর্থ হচ্ছে আল্লাহর এই বাণীর ﴿يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ﴾ ( বুখারীঃ তাফসীর সূরা ইবরাহীম, মুসলিমঃ কিতাবুল জান্নাতি ওয়া সিফাতি নাঈমিহা ) অন্য এক হাদীসে আছে যে, যখন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা চলে আসে, তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শোনে। অতঃপর তার নিকট দু'জন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে ( নবী (সাঃ )-এর প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করেন যে, 'এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মত কি?' সে মু'মিন হলে উত্তর দেয় যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসূল। ফিরিশতাগণ তাকে জাহান্নামের ঠিকানা দেখিয়ে বলেন যে, আল্লাহ এর পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে ঠিকানা বানিয়ে দিয়েছেন। সে উক্ত উভয় ঠিকানা দেখে এবং তার কবর সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেওয়া হয় এবং তার কবরকে কিয়ামত অবধি নিয়ামত সম্ভার দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়। ( মুসলিম, উপরোক্ত পরিচ্ছেদ ) আরেক হাদীসে আছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, 'তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? তোমার নবী কে?' সুতরাং আল্লাহ তাআলা অটলতা দান করেন এবং সে উত্তর দেয়, 'আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী মুহাম্মাদ ( সাঃ )।' ( তাফসীর ইবনে কাসীর )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে সুদৃঢ় বাক্যের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন [ ১ ] এবং যারা যালিম আল্লাহ্ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ্ যা ইচ্ছে তা করেন [ ২ ]। [ ১ ] এ আয়াত থেকে আমরা আরো যে শিক্ষা পাই তা হলো, মু’মিনের ঈমান ও কালেমায়ে তাইয়্যেবার একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা হলোঃ মু’মিনের কালেমায়ে তাইয়্যেবা মজবুত ও অনড় বৃক্ষের মত একটি প্রতিষ্ঠিত উক্তি। একে আল্লাহ্ তা’আলা চিরকাল কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত রাখেন দুনিয়াতেও এবং আখেরাতেও। শর্ত এই যে, এ কালেমা আন্তরিকতার সাথে বলতে হবে এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর মর্ম পূর্ণরূপে বুঝতে হবে এবং সে অনুসারে আমল করতে হবে। এ কালেমায় বিশ্বাসী ব্যক্তিকে দুনিয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে শক্তি যোগানো হয়। যখন কোন সন্দেহ আসে তাদেরকে সে সন্দেহ থেকে উত্তরণ করে দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতি পথনির্দেশ দেয়া হয়। অনুরূপভাবে প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে যায়, তখনও তাদেরকে নিজের আত্মার অনিষ্টতা ও খারাপ ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসাকে সবকিছুর উপর স্থান দেয়ার তাওফীক দেয়া হয়। আখেরাতেও মৃত্যুর পূর্বমূহূর্তে দ্বীনে ইসলামীর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার মাধ্যমে তাকে উত্তম পরিসমাপ্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়। তারপর কবরে তাকে ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের সহযোগিতা করা হয়, ফলে সে উত্তর দিতে পারে যে, আমার রব আল্লাহ্, আমার দ্বীন ইসলাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নবী। [ সা’দী ] অধিকাংশ মুফাসসির ও মুহাদ্দিস বলেন, এ আয়াত কবরের ফিতনা তথা প্রশ্নোত্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। বস্তুত: কবরের শাস্তি ও শান্তি কুরআন ও হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুসলিমকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হবে, তখন সে সাক্ষ্য দিবে যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, এবং এটাও বলবে যে, মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী- ( يُثَبِّتُ اللّٰهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَفِي الْاٰخِرَةِ ) -এর উদ্দেশ্য। [ বুখারীঃ ৪৬৯৯, মুসলিমঃ ২৮৭১ ] এছাড়া আরো প্রায় চল্লিশ জন সাহাবী থেকে এ বিষয়ে বহু হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনে কাসীর স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এগুলো উল্লেখ করেছেন। হাদীসগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। [ সা’দী ] সাহাবাগণ তাদের তাফসীরে আলোচ্য আয়াতে আখেরাতের অর্থ কবর এবং আয়াতটিকে কবরের আযাব সওয়াব সম্পর্কিত বলে সাব্যস্ত করেছেন। [ বিস্তারিত দেখুন, ইবন কাসীর; আত-তাফসীরুস সহীহ ] [ ২ ] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা যা চান, তাই করেন। তিনি চাইলে কাউকে তাওফীক দেন, কাউকে তাওফীক থেকে বঞ্চিত করেন। কাউকে সুদৃঢ় রাখেন। কাউকে পদস্খলিত করেন। [ বাগভী ] কাউকে আযাব দেন, কাউকে পথভ্রষ্ট করেন। [ কুরতুবী ] তাঁর ইচ্ছাকে রুখে দাঁড়ায়, এমন কোন শক্তি নেই। উবাই ইবনে কা’ব, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবন ইয়ামান প্রমুখ সাহাবী বলেনঃ মু’মিনের এরূপ বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য যে, তার যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তা আল্লাহ্র ইচ্ছায়ই অর্জিত হয়েছে। এটা অর্জিত না হওয়া অসম্ভব ছিল। এমনিভাবে যে বস্তু অর্জিত হয়নি, তা অর্জিত হওয়া সম্ভব ছিল না। তারা আরো বলেনঃ যদি তুমি এরূপ বিশ্বাস না রাখ, তবে তোমার আবাস হবে জাহান্নাম। কারণ, এটাই মূলতঃ তাকদীরের উপর ঈমান। আর যে কেউ তাকদীরের ভাল বা মন্দ হওয়ার উপর ঈমান আনবে না তার ঈমানই শুদ্ধ হবে না। তার আবাস জাহান্নাম হবেই। [ ইবনুল কাইয়্যেম, তরীকুল হিজরাতাইনঃ ১/৮২ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
সহীহ বুখারীতে হযরত বারা ইবনু আযিব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ মুসলমানকে যখন তার কবরে প্রশ্ন করা হয় তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ ( সঃ ) আল্লাহর রাসূল । এই আয়াত দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে।”মুসনাদে আহমদে হযরত বারা ইবনু আযিব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “ একজন আনসারীর জানাযায় আমি রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) সাথে বের হই এবং গোরস্তানে পৌছি । তখন পর্যন্ত কবর তৈরীর কাজ শেষ হয় নাই। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বসে পড়লেন এবং আমরাও তাঁর পাশে এমনভাবে বসে পড়লাম যে, যেন আমাদের মাথার উপর পাখী রয়েছে। তাঁর হাতে যে খড়িটি ছিল তা দিয়ে তিনি মাটিতে রেখা টানছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা উঠিয়ে দু তিন বার বললেনঃ “ কবরের শাস্তি হতে তোমরা আশ্রয় প্রার্থনা কর । বান্দা যখন দুনিয়ার শেষ এবং আখেরাতের প্রথম মুহুর্তে অবস্থান করে তখন তার কাছে আকাশ হতে উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতাগণ আগমন করেন, যেন তাঁদের চেহারাগুলি সূর্য। তাদের সাথে থাকে জান্নাতী কাফন ও জান্নাতী সুগন্ধি। তার পাশে তাঁরা এতো দূর নিয়ে বসে যান যত দূর তার দৃষ্টি যায়। এরপর মালাকুল মাওত ( মৃত্যুর ফেরেশতা ) এসে তার শিয়রে বসে পড়েন এবং বলেনঃ “ হে পবিত্র রূহ! আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর সন্তুষ্টির দিকে চল ।” তখন রূহ এমন সহজে বেরিয়ে আসে যেমন কোন মশক থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা হয়ে এসে থাকে। চক্ষুর পলক ফেলার সময় পর্যন্তই ঐ রূহকে ফেরেশতাগণ। তাঁর হাতে থাকতে দেন না,বরং তৎক্ষণাৎ তাঁর হাত থেকে নিয়ে নেন এবং জান্নাতী কাফন ও জান্নাতী সুগন্ধির মধ্যে রেখে দেন। স্বয়ং ঐ রূহ থেকেও মিশ আম্বরের চাইতেও বেশী সুগন্ধ বের হয়, যার চাইতে উত্তম সুগন্ধি দুনিয়ায় কখনো শুকা হয় নাই। তাঁরা ঐ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে উঠে যান। ফেরেশতাদের যে দলের পার্শ্ব দিয়ে তাঁরা গমন করেন তাঁরা তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ এই পবিত্র রূহ কোন ব্যক্তির?” তারা তখন তার যে উত্তম নামে সে পরিচিত ছিল সেই নাম বলে দেন এবং তার পিতার নামও বলেন । দুনিয়ার আকাশে পৌছে তাঁরা আকাশের দরজা খুলে দিতে বলেন। তখন আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং সেখান হতে ফেরেশতাগণ ঐ রূহকে নিয়ে দ্বিতীয় অকাশে, দ্বিতীয় আকাশ হতে তৃতীয় আকাশে এবং এইভাবে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যান। মহামহিমান্বিত আল্লাহ তখন বলেনঃ “ আমার বান্দার কিতাব ইল্লীনে লিখে নাও এবং তাকে যমীনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও । আমি তাকে ওটা থেকেই সৃষ্টি করেছি এবং ওটা থেকেই দ্বিতীয় বার বের করবো।” অতঃপর তার রূহ তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তার কাছে দ’জন ফেরেশতা আগমন করেন। তাকে উঠিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমার প্রতিপালক কে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ ।” আবার তারা প্রশ্ন করেনঃ “ তোমার দ্বীন কি?” সে জবাবে বলেঃ “আমার দ্বীন ইসলাম ।” আবার তারা প্রশ্ন করেনঃ “ যে ব্যক্তিকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল তিনি কে?” সে উত্তর দেয়ঃ “তিনি আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) ।” তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কিরূপে জেনেছো?” সে জবাব দেয়ঃ “ আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছিলাম ও ওর উপর ঈমান এনেছিলাম এবং ওটাকে সত্য বলে জেনেছিলাম ।” ঐ সময়েই আকাশ থেকে একজন আহবানকারী ডাক দিয়ে বলেনঃ “ আমার বান্দা সত্য বলেছে । সুতরাং তার জন্যে জান্নাতী বিছানা। বিছেয়ে দাও, জান্নাতী পোষাক পরিয়ে দাও এবং জান্নাতের দিকের দরজাটি খুলে দাও।” তখন জান্নাত থেকে সুগন্ধপূর্ণ বাতাস তার কবরে আসতে থাকে। যতদূর পর্যন্ত তার দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত তার কবরটি প্রশস্ত করে দেয়া হয়। তার কাছে একজন নূরানী চেহারা বিশিষ্ট সুন্দর লোক আগমন করে এবং তাকে বলেঃ “ তুমি খুশী হয়ে যাও । এই দিনেরই ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল।” সে তখন তাকে জিজ্ঞেস করেঃ তুমি কে? তোমার চেহারায় তো শুধু ভালই পরিলক্ষিতহচ্ছে।” সে উত্তরে বলেঃ “ আমি তোমার সৎ আমল ।” ঐ সময় ঐ মুসলমান ব্যক্তি বলেঃ “ হে আমার প্রতিপালক! সত্বরই কিয়ামত সংঘটিত করে দিন, যাতে আমি আমার পরিবার বর্গ ও ধনমালের দিকে ফিরে যেতে পারি ।”পক্ষান্তরে কাফির বান্দা যখন দুনিয়ার শেষ সময় ও আখেরাতের প্রথম সময়ে অবস্থান করে তখন তার কাছে কালো ও কুৎসিত চেহারা বিশিষ্ট আসমানী ফেরেশতাগণ আগমন করেন এবং তাঁদের সাথে থাকে জাহান্নামী চট। যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত তাঁরা বসে পড়েন। তারপর মালাকুল মাউত এসে তার শিয়রে বসে পড়েন এবং বলেনঃ “ হে কলুষিত রূহ! আল্লাহর গযব ও ক্রোধের দিকে চল” তার রূহ দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, যাকে অতি কষ্টে বের করে আনা হয় । তৎক্ষণাৎ চোখের পলকে ঐ ফেরেশতাগণ রূহকে তাঁর হাত হতে নিয়ে নেন এবং জাহান্নামী ছালায় জড়িয়ে নেন। তার থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হয় যে, ভূ-পৃষ্ঠে এর চেয়ে বেশী দুর্গন্ধময় জিনিস কখনো পাওয়া যায় নাই। তাঁরা ওটা নিয়ে আকাশে উঠে যান। ফেরেশতাদের যে দলের পার্শ্ব দিয়ে তাঁরা গমন করেন তাঁরা জিজ্ঞেস করেনঃ “ এই কলুষিত রূহ কোন ব্যক্তির?” দুনিয়ায় তার যে খারাপ নামটি ছিল তারা তার সেই নাম বলে দেন । তার পিতার নামও বলেন। দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত দরজা খুলে দিতে বলেন। কিন্তু দরজা খোলা হয় না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ( আরবি ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। অর্থাৎ “ তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না । এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। যতক্ষণ না সূচের ছিদ্র পথে উষ্ট্র প্রবেশ করে।” ( ৭:৪০ ) আল্লাহ তাআলা তখন বলেনঃ “ তার কিতাব সিজ্জীনে লিখে নাও, যা যমীনের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে ।” তার রূহকে তখন তথায় নিক্ষেপ করা হয়। তারপর তিনি ( আরবি ) এই আয়াতটি পাঠ করেন ( আরবি ) অর্থাৎ-যে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে সে যেন আকাশ থেকে পড়ে গেল, হয় পাখি তাকে ছো মেরে নিয়ে যাবে অথবা ধুলি ঘূর্ণি ঝঞ্জা তাকে কোন দুরের গর্তে নিক্ষেপ করবে।” ( ২২:৩১ ) অতঃপর তার রূহ দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তার কাছে দু'জন ফেরেশতা আগমন করেন। তাকে উঠিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমার প্রতিপালক কে?” সে উত্তরে বলেঃ “হায়, হায়! আমি তো জানি না!” আবার তাঁরা জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার দ্বীন কি?” এবারও সে জবাব দেয়ঃ হায়, হায়! আমি তো এটাও অবগত নই ।” পুনরায় তারা প্রশ্ন করেনঃ “ তোমাদের কাছে যাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তিনি কে?” সে জবাবে বলেঃ “হায়, হায়! এ খবরও আমার জানা নেই!” ঐ সময়েই আকাশ থেকে ঘোষণাকারীর ঘোষণা শোনা যায়ঃ “আমার বান্দা মিথ্যাবাদী । তার জন্যে জাহান্নামের আগুনে বিছানা বিছিয়ে দাও এবং জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে দাও।” সেখান থেকে তার কাছে জাহান্নামের বাতাস ও বাম্প আসতে থাকে। তার কবর এতো সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, তার দেহের এক পাঁজর অপর পাঁজরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বড় জঘন্য ও ভয়ানক আকৃতির এবং ময়লাযুক্ত খারাপ পোশাক পরিধানকারী অত্যন্ত দুর্গন্ধ বিশিষ্ট একটি লোক তার কাছে আসে এবং বলেঃ “ এখন তুমি দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ে যাও । এই দিনের তোমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।” সে তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “ তুমি কে? তোমার চেহারায় শুধু মন্দই পরিলক্ষিত হচ্ছে ।” সে উত্তর দেয় “ আমি তোমার খারাপ আমলেরই আকৃতি বা রূপ ।” সে তখন প্রার্থনা করেঃ “ হে আমার প্রতিপালক! ( দয়া করে ) কিয়ামত সংঘটিত করবেন না ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ), ইমাম নাসায়ী ( রঃ ) এবং ইমাম ইবনু মাজাহও ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মুসনাদে আহমদে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, সবান্দার রূহ বহির্গত হওয়ার সময় আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী জায়গায় ফেরেশতাগণ এবং আকাশের সমস্ত ফেরেশতা তার উপর করুণা বর্ষণ করে। আর আকাশের দরজা তার জন্যে খুলে যায়। প্রত্যেক দরজার ফেরেশতাগণ প্রার্থনা করেন যে, তার রূহ যেন তাদেরই দরজা দিয়ে উপরে উঠে যায়। ( শেষ পর্যন্ত ) ।আর খারাপ লোকের ব্যাপারে রয়েছে যে, তার কবরে একজন অন্ধ, বধির ও বোবা ফেরেশতাকে নিয়োজিত করা হয়। তাঁর হাতে এমন একটা লোহার হাতুড়ি থাকে যে, যদি তা দিয়ে কোন এক বিরাট পর্বতে আঘাত করা হয় তবে তা মাটি হয়ে যাবে। এ হাতুড়ি দ্বারা ঐ ফেরেশতা তাকে প্রহার করেন। তখন সে মাটি হয়ে যায়। মহামহিমান্বিত আল্লাহ আবার তাকে পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। ফেরেশতা আবার তাঁকে ঐ হাতুড়ি দ্বারা মারেন। সে তখন এমন জোরে চীৎকার করে যে, তার চীৎকার ধ্বনি মানব ও দানব ছাড়া সবাই শুনতে পায়। হযরত বারা ইবনু আযিব ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবি ) এই আয়াত দ্বারাই কবরের আযাব প্রমাণিত হয়। হযরত আবদুল্লাহ ( রাঃ ) এই আয়াতেরই তাফসীরে বলেন যে, এর দ্বারা কবরের প্রশ্নের উত্তরে মুমিনের প্রতিষ্ঠিত থাকা বুঝানো হয়েছে। হযরত আনাস ইবনু মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন বান্দাকে তার কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা ( তাকে সমাধিস্থ করে ) চলে যায়, আর তাদের চলে যাবার সময় তাদের জুতোর শব্দ তার কানে আসতে থাকে এমতাবস্থায়ই দু’জন ফেরেশতা তার কাছে পৌছে যান এবং তাকে উঠিয়ে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই লোকটি সম্পর্কে তোমার বক্তব্য কি?” সে মু'মিন হলে বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।” তখন তাকে বলা হয়ঃ “ দেখো, জাহান্নামে এটা তোমার বাসস্থান ছিল । কিন্তু আল্লাহ এটাকে পরিবর্তন করে জান্নাতের এই বাসস্থানটি তোমাকে দান করেছেন। সে তখন দুটি জায়গায়ই দেখতে পায়।” ( এ হাদীসটি আবদ ইবনু হামীদ (রঃ ) তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছন)হযরত কাতাদা ( রঃ ) বলেন, তার কবর সত্তরগজ প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা সবুজ শ্যামলে ভরপুর থাকে। হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে ( সঃ ) বলতে শুনেছেনঃ “ কবরে এই উম্মতের পূরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে । যখন মু'মিনকে তার কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা সেখান থেকে প্রস্থান করে তখন একজন কঠিন ভয়ানক আকৃতির ফেরেশতা তার কাছে আগমন করেন। তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বলতে?” তখন সেই মুমিন উত্তরে বলেঃ “তিনি আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বান্দা ( সঃ ) ।” তখন ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “ তোমার ঐ বাসস্থানটি দেখে যা জাহান্নামে তোমার জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল । কিন্তু আল্লাহ তোমাকে এর থেকে মুক্তি দান করেছেন এবং তোমার এই বাসস্থানের পরিবর্তে তিনি তোমাকে জান্নাতের ঐ বাসস্থানটি দান করেছেন। সে তখন দু'টোই দেখতে পায়। ঐ মু'মিন তখন বলেঃ “ আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আমার পরিবার বর্গকে এই সুসংবাদ প্রদান করি ।” তাকে বলা হয়ঃ “ থামো ( এবং এখানেই অবস্থান কর ) ।” আর মুনাফিককে উঠিয়ে বসানো হয় যখন তার নিকট থেকে। তার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন বিদায় গ্রহণ করে। অতঃপর তাকে বলাহয়ঃ “ তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বলতে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি জানি না, লোকেরা যা বলতো আমিও তাই বলতাম ।” তাকে তখন বলা হয় “ তুমি জান নাই । এটা জান্নাতে তোমার বাসস্থান ছিল, কিন্তু তা পরিবর্তন করে জাহান্নামে তোমার বাসস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।” হযরত জাবির ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি নবীকে ( সঃ ) বলতে শুনেছিঃ “কবরে প্রত্যেক বান্দাকে সেই ভাবেই উঠানো হয় যে ভাবে সে মৃত্যু বরণ করে । মু'মিনকে তার ঈমানের উপর এবং মুনাফিককে তার নিফাকের উপর। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদ ইমাম মুসলিমের ( রঃ ) শর্তের উপর সহীহ। তারা দু'জন এটা তাখরীজ করেন নি)হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমরা রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) সাথে এক জানাযায় হাযির হই । রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ হে জনমণ্ডলী! নিশ্চয় এই উম্মতকে কবরে পরীক্ষা করা হয় । যখন মানুষকে দাফন করা হয় এবং তার সঙ্গীরা তার থেকে পৃথক হয়ে পড়ে তখন তার কাছে একজন ফেরেশতা আসেন যার হাতে থাকে লোহার হাতুড়ি। তাকে তিনি বসিয়ে দিয়ে বলেনঃ “ তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বল!” যদি সে মু'মিন হয় তবে বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ( সঃ ) তাঁর বান্দা ও রাসূল ।” তখন তিনি তাকে বলেঃ “ তুমি সত্য বলেছো ।” অতঃপর তার জন্যে জাহান্নামের দর খুলে দেয়া হয়। এ সময় ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “ এটাই হতো তোমার বাসস্থান যদি তুমি তোমার প্রতিপালকের সাথে কুফরী করতে । কিন্তু তুমি ঈমান এনেছো বলেই এটা হয়েছে তোমার বাসভবন।” অতঃপর তার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। সে তখন ওর মধ্যে প্রবেশের ইচ্ছা করে। তখন তাকে বলা হয়ঃ “ এখন এখানেই থাকো ।” তারপর তার কবরের দিকে ওটা খুলে দেয়া হয়। আর যদি সে কাফির বা মুনাফিক হয়, তবে যখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তুমি এই লোকটি সম্পর্কে কি বল?” সে উত্তরে বলেঃ “তাঁর সম্পর্কে আমি লোকদেরকে কিছু বলতে শুনতাম ।” তখন ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “ তুমি জান নাই এবং পড় নাই, আর হিদায়াতও লাভ কর নাই ।” তারপর তার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় তখন ফেরেশতা তাকে বলেনঃ “ এটাই তো তোমার বাসস্থান যদি তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে । কিন্তু তুমি কুফরী করেছে বলে মহামহিমান্বিত আল্লাহ এ ঘরের পরিবর্তে এই ঘরকে তোমার জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এরপর তার জন্যে জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়াহয়। তারপর ফেরেশতা তাকে হাতুড়ি দ্বারা প্রহার করতে থাকেন। তখন সে এতো জোরে চীৎকার করে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ যত কিছু সৃষ্টি করেছেন সবাই তার চীৎকার শুনতে পায়, শুধুমাত্র মানব ও দানব ব্যতীত। তখন কওমের কেউ জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! কারো সামনে যদি ফেরেশতা হাতে হাতুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তবে কি তার স্বাভাবিক জ্ঞান থাকে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কুরআন কারীমের ( আরবি ) এই আয়াতটিই পড়ে শুনান । অর্থাৎ “ যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহজীবনে ও পরজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন ।” ( এ হাদীসটিও ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তার কাছে ফেরেশতাগণ হাযির হন । সে সৎ লোক হলে তাঁরা বলেনঃ “ ( হে পবিত্র রূহ! তুমি পবিত্র দেহের মধ্যে ছিলে, প্রশংসিত হয়ে বেরিয়ে এসো আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ এবং পরম দয়ালু ও দাতা আল্লাহর করুণাসহ ।” তাকে এটা বলা হতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত রূহ বেরিয়ে আসে। তখন তারা তাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যান। আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বলা হয়ঃ “ এটা কে?” উত্তরে বলা হয়ঃ “অমুক ।” তখন ফেরেস্তারা বলেনঃ “ বাহঃ! বাহঃ! এটা হচ্ছে পবিত্র রূহ যা পবিত্র দেহের মধ্যে ছিল । তুমি প্রশংসিত অবস্থায় প্রবেশ কর এবং আরাম, জীবনোপকরণ এবং রাহীম ও কারীম আল্লাহর রহমত নিয়ে খুশী হয়ে যাও।” আর যদি দুষ্ট ও পাপী লোক হয় তবে ফেরেশতাগণ বলেনঃ “ হে কলুষিত নফস! তুমি কলুষিত দেহের ভিতরে ছিলে । তুমি নিন্দনীয় অবস্থায় বেরিয়ে এসো এবং ফুটন্ত গরম, রক্ত পুঁজ খাওয়ার জন্যে এবং এ ধরনের আরো বহু শাস্তি গ্রহণের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাও।” এরূপ কথা তাকে বলা হতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত সে বেরিয়ে আসে। তারপর তাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ এটা কে?” উত্তরে বলা হয়ঃ “অমুক ।” তখন বলা হয়ঃ “ কলুষিত দেহের মধ্যে ছিল । তুমি নিন্দনীয় হয়ে ফিরে যাও। তোমার জন্যে আসমানের দরজা খোলা হবে না।” অতঃপর তাকে আকাশ থেকে নীচে নামিয়ে দেয়া হয় এবং কবরে নিয়ে আসা হয়। সৎ ব্যক্তি (কবরের মধ্যে ) বসে পড়ে। তখন তাকে ঐ সব কথা জিজ্ঞেস করা হয় যা প্রথম হাদীসে বলা হয়েছে। পাপী লোকও উঠে বসে এবং তাকেও ঐ কথা জিজ্ঞেস করা হয় যা প্রথম হাদীসে বলা হয়েছে। ( এ হাদীসটিও ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, আকাশের ফেরেশতা পবিত্র রূহকে বলেনঃ “ আল্লাহ তোমার উপর করুণা বর্ষণ করুন! আর ঐ দেহের উপরও যার মধ্যে তুমি ছিলে । শেষ পর্যন্ত তারা ঐ রূহকে মহামহিমান্বিত আল্লাহর কাছে পৌছিয়ে দেন। সেখান হতে ইরশাদ হয়ঃ “ তাকে শেষ মুদ্দত পর্যন্ত সময়ের জন্যে নিয়ে যাও ।” তাতে রয়েছে যে, কাফিরের রূহের দুর্গন্ধের বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর চাদর খানা তার নাকের উপর রাখেন। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ মুমিনের রূহ্ যখন কব করা হয় তখন তার কাছে রহমতের ফেরেশতাগণ জান্নাতী সাদা রেশম নিয়ে আগমন করেন । অতঃপর তারা বলেনঃ “ আল্লাহর আরাম ও শান্তির দিকে বেরিয়ে এসো ।” তখন মিস্ক আম্বরের মত অতি উত্তম সুগন্ধিরূপে ওটা বেরিয়ে আসে। এমনকি ফেরেশতাগণ একে অপরের নিকট হতে নেয়ার ইচ্ছা করেন। যখন এটা পূর্ববর্তী মু'মিনদের রূহের সথে মিলিত হয় তখন যেমন কোন নতুন লোক সফর থেকে আসলে তার পরিবারের লোকেরা খুবই খুশী হয়, ঐ রূহগুলি এই রূহের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কারণে তাদের চাইতেও বেশী খুশী হয়। তারপর পূর্বের রূহগুলি এই রূহকে জিজ্ঞেস করেঃ “ অমুকের অবস্থা কি?” কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেঃ “এখন ওকে প্রশ্ন করো না । ওকে কিছু বিশ্রাম তো। গ্রহণ করতে দাও। এতো দুঃখ-কষ্ট হতে সবে মাত্র মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু এই রূহ জবাব দেয়ঃ “ সে তো মারা গেছে । সে কি তোমাদের কাছে পৌছে নাই?” তারা তখন বলেঃ “ সে তা হলে তার স্থান জাহান্নামে চলে গেছে । আর কাফিরের রূহকে যখন যমীনের দরজার কাছে আনয়ন করা হয় তখন সেখানকার দারোগা ফেরেশতা তার দুর্গন্ধে খুবই অস্বস্তিবোধ করেন। অবশেষে তাকে যমীনের সর্বনিম্নস্তরে পেীছিয়ে দেয়া হয়।হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, মু'মিনদের রূহগুলি জাবেঈনে একত্রিত করা হয়। আর কাফিরদের রূহগুলি হা মাউতের বারহৃত নামক জেলখানায় জমা করা হয়। তার কবর খুবই সংকীর্ণ হয়ে যায়।হযরত আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় তখন তার কাছে কালো রঙ ও কড়া চক্ষু বিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা আগমন করেন। একজনের নাম মুনকির এবং অপরজনের নাম নাকীর। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ এই লোকটি সম্পর্কে তুমি কি বলতে?” জবাবে সে বলবে যা সে বলতোঃ “তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মদ ( সঃ ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” এ জবাব শুনে তাঁরা বলেনঃ “ তুমি যে এটাই বলবে তা আমরা জানতাম ।” অতঃপর তার কবর সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং তা আলোকোজ্জ্বল হয়ে যায়। আর তাকে বলা হয়ঃ “ তুমি ঘুমিয়ে যাও ।” সে তখন বলেঃ “ আমি আমার পরিবার বর্গের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে এ খবর দিতে চাই ।” তাঁরা বলেনঃ “ তুমি সেই নব বধুর ন্যায় ঘুমিয়ে থাকো যাকে তার পরিবারের সেই জায়গায় যে তার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় । এভাবেই সে ঘুমিয়ে থাকে যে। পর্যন্ত না আল্লাহ নিজেই তাকে ঐ ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন।” আর মুনাফিক ফেরেস্তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেঃ “ মানুষেরা যা বলতো আমিও তাই বলতাম । কিন্তু আমি কিছুই জানি না।” ফেরেশতারা তখন বলবেনঃ “ তুমি যে এই উত্তর দেবে তা আমরা জানতাম ।” তৎক্ষণাৎ যমীনকে হুকুম দেয়া হয়ঃ “ সংকীর্ণ হয়ে যাও ।” তখন যমীন এমনভাবে সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, তার এক পাঁজর অপর পাঁজরের সাথে মিশে যায়। অতঃপর তার উপর শাস্তি হতে থাকে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাআলা কিয়ামত সংঘটিত করেন এবং তাকে তার কবর থেকে উথিত করেন। ( এ হাদীসী ইমাম তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল)অন্য একটি হাদীসে আছে যে, কবরে মু’মিনকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবীকে?” তখন উত্তরে সে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ ) । তিনি আমাদের কাছে আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে দলীল-প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন। আমি তার উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর সত্যতা স্বীকার করেছি।” তাকে তখন বলা হয়ঃ “ তুমি সত্য বলেছো । তুমি এরই উপর জীবিত থেকেছো, এরই উপর মৃত্যুবরণ করেছে এবং এরই উপর তোমাকে উঠানো হবে। ( এই হাদীসটিও ইমাম তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যখন তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে ফিরে আসো তখন সে তোমাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় । যদি সে মমিন হয়ে মরে থাকে তবে নামায় তার শিয়রে থাকে, যাকাত থাকে ডান পার্শ্বে, রোযা থাকে বাম পার্শ্বে আর অন্যান্য পুণ্য কাজ যেমন দান-খয়রাত, আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত করণ, লোকদের সাথে সদাচরণ ইত্যাদি থাকে তার পায়ের দিকে। যখন তার মাথার দিক থেকে কেউ আসে তখন নামায বলেঃ “ এখান দিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই ।” ডান দিক থেকে বাধা দেয় যাকাত, বাম দিক থেকে বাধা দান করে রোযা এবং পায়ের দিক থেকে বাধা দেয় অন্যান্য পূণ্যের কাজ। অতঃপর তাকে বলা হয়ঃ “ বসে যাও ।” সে তখন বসে পড়ে এবং তার মনে হয় যে, সূর্য অস্তমিত হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছে। ফেরেশতারা বলেনঃ “ আমরা তোমাকে যে সব প্রশ্ন করবো তোমাকে উত্তর দিতে হবে ।” সে বলেঃ “ থামো, আমি আগে নামায আদায় করে নিই ।” তাঁরা বলেনঃ “ নামায তো আদায় করবেই, তবে আগে আমাদের প্রশ্নগুলির জবাব দাও ।” সে তখন বলেঃ “ আচ্ছা ঠিক আছে, কি প্রশ্ন করতে চাও, কর ।” তাঁরা প্রশ্ন করেনঃ “ এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলছো এবং কি সাক্ষ্য দিচ্ছ?” সে জিজ্ঞেস করেঃ “হযরত মুহাম্মদ ( সঃ ) সম্পর্কে বলছো কি?” তারা উত্তরে বলেনঃ “হাঁ, তাঁর সম্পর্কেই বটে ।” সে তখন বলেঃ “ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল । তিনি আমাদের কাছে আল্লাহ তাআলার নিকট হতে দলীল নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করেছি।” তখন তাকে বলা হয়ঃ “ তুমি এর উপরই জীবিত থেকেছে এবং এর উপরই মরেছো । আর এর উপরই ইনশা-আল্লাহ পুনরুত্থিত হবে।” অতঃপর তার কবরটি সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং তা আলোকোজ্জ্বল হয়ে যায়। আর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বলা হয়ঃ “ দেখো, এটাই তোমার প্রকৃত বাসস্থান । সেখানে শুধু সুখ আর সুখ।” অতঃপর তার রূহ অন্যান্য পবিত্র রূহগুলির সাথে সবুজ রঙ এর পাখীর দেহে রেখে দেয়া হয় যা জান্নাতের গাছে রয়েছে। আর তার দেহ সেখানেই ফিরিয়ে দেয়া হয় যেখান থেকে তার সূচনা হয়েছে অর্থাৎ মাটিতে। এই আয়াতের ভাবার্থ এটাই। ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মৃত্যুর সময়ের শান্তি ও নূর দেখে। মুমিন তার রূহ বের হয়ে যাওয়ার আকাংখা করে থাকে এবং আল্লাহ তাআলার কাছেও তার সাক্ষাৎ প্রিয় ও পছন্দনীয় হয়। যখন তার রূহ আকাশে উঠে যায় তখন তার কাছে মু'মিনদের রূহগুলি আগমন করে এবং তাদের পরিচিত লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। যদি সে বলে যে, অমুক ব্যক্তি জীবিত আছে তবে তো ভালই, আর যদি বলে যে, অমুক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে তবে তারা অসন্তষ্ট হয় এই কারণে যে, তার রূহ তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় নাই।মুমিনকে তার কবরে বসিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ তোমার প্রতিপালক কে?” উত্তরে সে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ ।” আবার জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ তোমার নবী কে?” জবাবে সে বলেঃ “আমার নবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ ) ।” ফেরেশতা পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমার দ্বীন কি?” সে উত্তর দেয়ঃ “আমার দ্বীন ইসলাম ।” তাতেই রয়েছে যে, আল্লাহর শত্রুর যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে এবং তাঁর অসন্তুষ্টির লক্ষণগুলি সে দেখে নেয় তখন তার রূহ বের হোক এটা সে চায় না। আল্লাহ তাআলাও তার সাক্ষাতে অসন্তুষ্ট হন। এই রিওয়াইয়াতে আরো রয়েছে যে, তার প্রশ্ন-উত্তর এবং মারপিটের পর তাকে বলা হয়ঃ “ কর্তিত সাপের মত ঘুমিয়ে থাকো ।” ( এ হাদীসটি বাযাহ্ (রঃ ) হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু কাছীরের মতে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) এটা সম্ভবতঃ মারফুরূপেই বর্ণনা করেছেন)আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, যখন মু'মিন রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) রিসালাতের সাক্ষ্য দেয় তখন ফেরেশতা বলেনঃ “ তুমি এটা কি করে জেনেছো? তুমি কি তাঁর যুগ পেয়েছিলে?” তাতে এটাও রয়েছে যে, কাফিরের কবরে শাস্তি দাতা ফেরেশতা এমন বধির হন যে, তিনি কখনো শুনতেও পান না এবং কখনো দয়াও করেন না ।হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতের ব্যাপারে তিনি বলেনঃ মুমিনের যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয় তখন তার কাছে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন এবং তাঁকে সালাম দিয়ে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেন। যখন সে মারা যায় তখন তারা তার জানাযার সাথে চলেন এবং লোকদের সাথে তারাও তার জানাযার নামায় পড়েন। অতঃপর যখন তাকে দাফন করা হয় তখন তাকে তার কবরে উঠিয়ে বসানো হয় এবং জিজ্ঞেস করা। হয়ঃ “ তোমার প্রতিপালক কে?” সে জবাবে বলেঃ “আমার প্রতিপালক আল্লাহ ।” আবার তাকে প্রশ্ন করা হয়ঃ “ তোমার রাসূল কে?” উত্তরে সে বলেঃ “মুহাম্মদ ( সঃ ) ।” সে জবাব দেয়ঃ “ তোমার সাক্ষ্য কি?” সে জবাব দেয়ঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ( সঃ ) আল্লাহর রাসূল ।” তখন যতদূর তার দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে কাফিরের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ। অবতরণ করেন। তারা তাদের হাত বিছিয়ে দেন অর্থাৎ প্রহার করেন। তারা প্রহার করেন তার চেহারা ও নিতম্বের উপর তার মৃত্যুর সময়। অতঃপর যখন তাকে তার কবরে রাখা হয় তখন তাকে উঠিয়ে বসানো হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ তোমার প্রতিপালক কে?” সে তাদেরকে কোন উত্তর দিতে পারে না । আল্লাহ ওটা তাকে বিস্মরণ করে দেন। যখন তাকে বলা হয়ঃ “ তোমার কাছে যে রাসূলকে ( সঃ ) পাঠানো হয়েছিল তিনি কে?” সে এরও কোন উত্তর দিতে সক্ষম হয় না । এ ভাবেই আল্লাহ তাআলা যালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করে থাকেন।হযরত আবু কাতাদা’ আনসারী ( রঃ ) হতেও এই রূপই বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, মু'মিন বলেঃ “ আমার নবী মুহাম্মদ ( সঃ ) ।” কয়েকবার তাকে প্রশ্ন করা হয় এবং সে এই জবাবই দেয়। তাকে জাহান্নামের ঠিকানা দেখিয়ে দিয়ে বলা হয়ঃ “ তুমি বাঁকা পথে চললে এটাই তোমার ঠিকানাহতো । আবার জান্নাতের ঠিকানা দেখিয়ে বলা হয়ঃ “ তোমার তাওবার কারণে এটা তোমার বাসস্থান হয়েছে ।” আর যখন কাফির মারা যায় তখন কবরে তাকে উঠিয়ে বসানো হয়। অতঃপর তাকে বলা হয়ঃ “ তোমার প্রতিপালক কে? তোমার নবী কে?” সে উত্তর দেয়ঃ “আমি জানি না, তবে লোকদের আমি বলতে শুনতাম ।” তখন বলা হয়ঃ “ তুমি জান নাই ।” তারপর তার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে দিয়ে বলা হয়ঃ “ তুমি চেয়ে দেখো, সুপথে প্রতিষ্ঠিত থাকলে তোমার বাসস্থান এটাই হতো ।” তারপর তার জন্যে জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বলা হয়ঃ “ তুমি বক্র পথে চলে ছিলে বলে তোমার বাসস্থান ।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন ।” ( এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত তাউস ( রঃ ) বলেন, দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত থাকা দ্বারা কালেমায়ে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা বুঝানো হয়েছে। আর আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকার অর্থ হচ্ছে মুনকির ও নাকীরের প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা। কাতাদা’ ( রঃ ) বলেন যে, পার্থিব জীবনে প্রতিষ্ঠিত রাখার অর্থ হচ্ছে কল্যাণ ও উত্তম কাজের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখা। আর পরকালে প্রতিষ্ঠিত রাখার অর্থ হচ্ছে কবরে প্রতিষ্ঠিত রাখা। হযরত আবদুর রহমান ইবনু সামরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাদের কাছে বেরিয়ে আসলেন । ঐ সময় আমরা মদীনার মসজিদে অবস্থান করছিলাম। তিনি বললেন, “ গত রাত্রে আমি কয়েকটি বিস্ময়কর ঘটনা দেখেছি । দেখলাম যে, আমার এক উম্মতকে কবরের শাস্তি পরিবেষ্টন করে রেখেছে। অতঃপর তার অযু এসে তাকে তা থেকে ছাড়িয়ে নিলো। আমার উম্মতের আর একজন লোককে দেখলাম যে, শয়তান তাকে ভীতি বিহবল করে রেখেছে, কিন্তু আল্লাহর যিকর এসে তাকে এর থেকে মুক্তি দিলো। আমার উম্মতের আর একটি লোককে দেখি যে, শাস্তির ফেরেশতাগণ তাকে ঘিরে রেখেছেন, অতঃপর তার নামায এসে তাকে বাঁচিয়ে নিলো। আমার উম্মতের আর একজন লোককে দেখি যে, সে পিপাসায় ছটফট করছে। যখন সে হাউযের উপর যাচ্ছে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার রোযা এসে তাকে পানি পান করিয়ে দিলো এবং পরিতুষ্ট করলো। আমি আমার আর একজন উম্মতকে দেখি যে, নবীগণ বৃত্তাকারে বসে আছেন। এই লোকটি যে বৃত্তের কাছেই বসতে যাচ্ছে সেখান থেকেই তারা তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তৎক্ষণাৎ তার অপবিত্রতার গোসল আসলো এবং তাকেহাত ধরে নিয়ে এসে আমার পার্শ্বে বসিয়ে দিলো। আমার আরো একজন উম্মতকে দেখলাম যে, তার চার দিকে থেকে অন্ধকার ছেয়ে গেছে এবং উপরেও নীচেও। সে ওরই মধ্যে পরিবেষ্টিত রয়েছে। এমতাবস্থায় তার হজ্জ ও উমরা আসলো এবং তাকে ঐ অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে পৌছিয়ে দিলো। আর একটি উম্মতকে দেখলাম যে, সে মুমিনদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু তারা তার সাথে কথা বলছে না। ঐ সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক আসলো এবং তাদেরকে বললোঃ এর সাথে আপনারা কথা বলুন।” তারা তখন তার সাথে কথাবার্তা বলতে থাকলো। আমার উম্মতের আর একটি লোককে দেখলাম যে, সে তার মুখের উপর হতে অগ্নিশিখা দূর করার জন্যে । হাত বাড়াচ্ছে, ইতিমধ্যে তার দান খায়রাত আসলো এবং তার মুখের উপর পর্দা এবং মাথার উপর ছায়া হয়ে গেল। আমার উম্মতের আরো একটি মানুষকে দেখলাম যে, শাস্তির ফেরেশতাগণ তাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছেন। কিন্তু এ সময় তার ভাল কাজের আদেশকরণ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধকরণ ( এই পূর্ণকর্ম ) আসলো এবং তাকে শাস্তির ফেরেশতাদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রহমতের ফেরেশতাদের মধ্যে দাখিল করে দিলো। আমার উম্মতের আর একটা লোককে দেখলাম যে, সে হাঁটুর ভরে পড়ে আছে এবং আল্লাহ ও তার মধ্যে পর্দা রয়েছে। এমন সময় তার সৎ চরিত্র আসলো এবং তার হাত ধরে নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌছিয়ে দিলো। আমার উম্মতের আর একটি লোককে দেখি যে, তার আমল নামা তার বাম দিক থেকে আসছে, কিন্তু তার আল্লাহ ভীতি ওটাকে তার সামনে করে দিলো। আমার উম্মতের আর একটি মানুষকে দেখি যে, সে জাহান্নামের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ তার আল্লাহ থেকে কম্পিত হওন আসলো ও তা থেকে তাকে বাঁচিয়ে নিলো এবং সে চলে গেল। আর একটি লোককে দেখলাম যে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার উপক্রম হচ্ছে এমন সময় আল্লাহর ভয়ে তার ক্রন্ধন করণ আসলো এবং ঐ অঞই তাকে তা থেকে বাঁচিয়ে নিলো। আর একজন। মানুষকে দেখলাম যে, পুলসিরাতের উপর সে নড়বড় ও হাড় বড় করছে, ( এবং পুল সিরাতের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে ), এমন সময় আমার উপর তার দরূদ পাঠ আসলো এবং তার হাত ধরে নিয়ে পার করে দিলো। আর একজন কে দেখলাম যে, সে জান্নাতের দরজার কাছে পৌছেছে, কিন্তু দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তৎক্ষণাৎ তার “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' -এর সাক্ষ্য প্রদান পৌছলো এবং দরজা খুলিয়ে দিয়ে জান্নাতে প্রবিষ্ট করলো । ( এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ ) তাঁর নাওয়াদিরুল উসূল’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। কুরতুবী ( রঃ ) এ হাদীসটি আনয়ন করে বলেন যে, এটা খুব বড় হাদীস। এতে বিশেষ বিশেষ আমলগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, যে গুলি বিশেষ বিশেষ বিপদের সময় মুক্তিদানের কারণ হয়ে থাকে। ( তাযকিরা ) )তামীমুদ্দারী ( রাঃ ) নবী ( সঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ মালাকুল মাউত ( মৃত্যুর ফেরেশতা ) কে বলেনঃ “ তুমি আমার বন্ধুর কাছে যাও, আমি তাকে সর্ব প্রকারের আসমানী বিপদ আপদ দ্বারা পরীক্ষা করেছি । সর্বাবস্থায় আমি তাকে আমার সন্তুষ্টিতেই সন্তুষ্ট পেয়েছি। তুমি যাও এবং তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে সর্বপ্রকারের আরাম ও শান্তি দান করবো। মালাকুল মাউত পাঁচশ’ ফেরেতাকে সাথে নিয়ে গমন করেন। তাঁদের কাছে থাকে জান্নাতী কাফন, খুশবু এবং সুগন্ধময় ফুল। ওর মাথার উপর থাকে বিশটি রং। প্রত্যেক রং-এর সুগন্ধ পৃথক পৃথক। সাদা রেশমী কাপড়ে উচ্চাঙ্গের মিল্ক আম্বর জড়ানো থাকে। এঁরা সব আসনে এবং মালাকুল মাউত ( আঃ ) তার শিয়রে বসে পড়েন। প্রত্যেকের সাথে যে জান্নাতী উপহার থাকে তা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর রেখে দেয়া হয়। আর সাদা রেশম, মিশক ও সুগন্ধ তার থুথনীর নীচে রাখা হয়। তার জন্যে বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হয়। তার রূহকে কখনো জান্নাতী ফুলের দ্বারা, কখনো জান্নাতী পোশাকের দ্বারা এবং জান্নাতী ফলের দ্বারা এমনিভাবে আপ্যায়িত করা হয় যেমনিভাবে ক্রন্দনরত শিশুকে লোক আপ্যায়িত করে থাকে। ঐ সময় তার হুরগুলি তাকে লাভ করার আকাংখা করবে। রূহ এই দৃশ্য দেখে খুব তাড়াতাড়ি দৈহিক বন্দীত্ব থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করে। মৃত্যুর ফেরেশতা বলেনঃ “ হাঁ, হে পবিত্র রূহ! কন্টকহীন কুলবৃক্ষ, কাঁদিভরা কদলী বক্ষ, সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানির দিকে চল ।” আল্লাহর কসম! মা যতটা শিশুকে স্নেহ ও মমতা করে থাকে, মৃত্যুর ফেরেশতা ঐ রূহের উপর তার চেয়েও বেশী স্নেহশীল ও মমতাময় হয়ে থাকেন। কেননা, তিনি জানেন যে, ঐ রূহ আল্লাহ তাআলার নিকট খুবই প্রিয়। তিনি মনে করেন যে, যদি ঐ রূহের উপর সামান্য পরিমাণও কষ্ট হয় তবে তাঁর প্রতিপালক তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে এ রূহকে দেহ হতে পৃথক করে নেন যেমন ভাবে খামীরকৃত আটা হতে চুল বের করে নেয়া হয়। এ ব্যাপারেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ পবিত্র ফেরেশতারা তাদের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে ।” তিনি আরো বলেনঃ “ যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়, তার জন্যে রয়েছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখময় উদ্যান ।” মৃত্যুর ফেরেশতা রূহ কবয করা মাত্রই রূহ দেহকে বলেঃ “ আল্লাহ তাআলা তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন! আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে তমি তাড়াতাড়ি করেছে এবং তাঁর অবাধ্যতার ব্যাপারে বিলম্ব করেছে । সুতরাং তুমি নিজেও মুক্তি পেয়েছে এবং আমাকেও মুক্তি দানের ব্যবস্থা করেছে।” শরীর ও রূহকে এইরূপই জবাব দেয়। যমীনের যে সব অংশে সে আল্লাহর ইবাদত করতো, তার মৃত্যুর কারণে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ঐগুলি ক্রন্দন করে। অনুরূপভাবে আসমানের যে সব দরজা দিয়ে তার সৎ কার্যাবলী উত্থিত হতো এবং যেখান দিয়ে তার জীবিকা অবতীর্ণ হতো ওগুলিও কাঁদতে থাকে। তৎক্ষণাৎ ঐ পাঁচশ ফেরেশতা ঐ দেহের চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে যান এবং তাকে গোসল দেয়ার কাজে অংশ গ্রহণ করেন। মানুষ তার পার্শ্ব পরিবর্তন করার পূর্বেই তারা ঐ মৃত দেহের পার্শ্ব পরিবর্তন করে দেন এবং তাকে গোসল দেয়া শেষ করে মানুষ তাকে কাফন পরাবার পূর্বে ফেরেশতাগণ তাদের সাথে আনিত কাফন তাকে পরিয়ে দেন। মানুষের খুশ লাগানোর পূর্বেই তাঁরা খুশবু লাগিয়ে দেন। আর তার বাড়ী থেকে নিয়ে তার কবর পর্যন্ত ফেরেশতাগণ দু’দিকে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে যান এবং তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুরু করেন। ঐ সময় শয়তান অত্যন্ত দুঃখের স্বরে এমন ভীষণ জোরে চীৎকার করে উঠে যে, যেন তার দেহের অস্থি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর সে তার সেনাবাহিনীকে সম্বোধন করে বলেঃ “ এ ব্যক্তি তোমাদের হাত থেকে কি করে রক্ষা পেলো?” তারা উত্তর দেয়ঃ “এটা তো নিস্পাপ লোক ছিল ।” তার রূহ নিয়ে তখন মৃত্যুর ফেরেশতা উপরে উঠে যান তখন সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়ে হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তার অভ্যর্থনা করেন। তাদের প্রত্যেকেই তাকে পৃথক পৃথক ভাবে আল্লাহর সুসংবাদ শুনিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত তার রূহ আল্লাহর আরশের কাছে পৌঁছে যায়। সেখানে পৌছা মাত্রই ঐ রূহ সিজদায় পতিত হয়। এ সময় মহামহিমান্বিত আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ “ তাকে কন্টকহীন কুল বৃক্ষ, কাঁদিভরা কদলী বৃক্ষ, সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানির নিকট স্থান দাও ।”অতঃপর যখন তাকে কবরে রাখা হয় তখন ডান দিকে নামায দাঁড়িয়ে যায়, বাম দিকে দাঁড়ায় রোযা, কুরআন কারীম দাঁড়ায় মাথার কাছে এবং নামাযের উদ্দেশ্যে তার পথ চলা ( এরা পূণ্য ) তার পায়ের দিকে দাঁড়ায়। আর তার ধৈর্য দাঁড়ায় এক পার্শ্বে। আল্লাহ তাআলার প্রেরিত শাস্তি তার দিকে ধাবিত হলে ডান দিক থেকে নামায বাধা দেয় এবং বলেঃ “ আল্লাহর কসম! এ ব্যক্তি সারা জীবন নামাযে কাটিয়েছে । এখন কবরে এসে তো কিছুটা আরাম পেয়েছে।” শাস্তি তখন বাম দিক থেকে আসে। রোযা অনুরূপ কথা বলেই তাকে ফিরিয়ে দেয়। শিয়রের দিক থেকে আসলে কুরআন ও যিকর এ কথা বলেই তার জন্যে পর্দা হয়ে যায়। শাস্তি বাম দিক থেকে আসতে থাকলে তার নামাযের জন্যে গমন তাকে বাধা দেয়। মোট কথা, আল্লাহর প্রিয় বান্দার জন্যে শাস্তির ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং কোন দিক থেকে শাস্তি তার কাছে আসার পথ পায়। সুতরাং সে ফিরে যায়। সেই সময় সবর বা ধৈর্য ঐ আমলগুলিকে বলে? “ আমি তোমাদের কার্যকলাপ পরিদর্শন করছিলাম যে, যদি তোমাদের দ্বারাই শাস্তি দূর হয়ে যায় তবে আমার আর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন কি? তোমাদের দ্বারা শাস্তি সরানোর সম্ভব না হলে আমিও তার সাহায্যার্থে এগিয়ে যেতাম । ( তোমাদের দ্বারাই যখন সমস্যার সমাধান হয়ে গেল তখন আমি পুলসিরাতের উপর এবং মীযানের (পাপ-পুণ্য ওজন করার যন্ত্রের ) ক্ষেত্রে তার কাজে আসবো।” অতঃপর দু’জন ফেরশতাকে কবরে পাঠানো হয়। একজনকে মুনকির ও অপরজনকে নাকীর বলা হয়। তাঁদের চক্ষুগুলি দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেয় এইরূপ বিদ্যুতের মত এবং তাদের শব্দ বজ্রের গর্জনের মত। তাঁদের শ্বাস-প্রশ্বাসে অগ্নিশিখা বের হয়। তাঁদের চুল পায়ের তলা পর্যন্ত লটকে থাকে। তাঁদের দুকাধের মাঝে এতো এতো দূরের ব্যবধান থাকে। তাঁদের অন্তর কোমলতা ও করুণা হতে সম্পূর্ণরূপে শূন্য। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে এতো ভারী হাতুড়ী থাকে যে, রাবী গোত্র ও মুযার গোত্র একত্রিত হয়ে ওটা উঠাতে চাইলে তাদের দ্বারা তা উঠানো সম্ভব হবে না। তাঁরা এসেই বলেনঃ “ উঠে বসো ।” সে তখন সোজা হয়ে উঠে বসে। তার কাফন তার পার্শ্বদেশে এসে যায়। তারা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবী কে?” সাহাবীগণ আর থামতে পারলেন না । তাঁরা প্রশ্ন করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এতো ভয়বিহ ফেরেস্তাদের প্রশ্নের জবাব কে দিতে পারবে?” ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদের প্রশ্নের জবাবে ( আরবি ) এই আয়াতটি তিলায়ওয়াত করেন । অতঃপর তিনি বলেনঃ সে ( কবরে শায়িত মৃত মু'মিন ) বলেঃ “ আমার প্রতিপালক আল্লাহ, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, আর আমার দ্বীন ইসলাম যা ফেরেশতাদেরও দ্বীন এবং আমার নবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ ) যিনি সর্বশেষ নবী ।” তখন তাঁরা ( ফেরেশতাদ্বয় ) বলেনঃ “ তুমি সঠিক উত্তর দিয়েছে ।” অতঃপর তারা তার কবরকে তার ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে, সামনের দিক থেকে, পেছনের দিক থেকে, মাথার দিক থেকে এবং পায়ের দিক থেকে চল্লিশ হাত করে প্রশস্ত করে দেন। সুতরাং তারা তার কবরকে দু’শ হাত প্রশস্ত করে দেন। বুরসানী ( রঃ ) বলেনঃ “ আমি ধারণা করি যে, চল্লিশ হাতের বেড়া করে দেয়া হয় । তারপর তারা তাকে বলেনঃ “ উপরের দিকে দৃষ্টিপাত কর ।” সে তাকিয়ে দেখতে পায় যে, জান্নাতের দরজা খোলা রয়েছে। তাঁরা তাকে বলেনঃ “ হে আল্লাহর বন্ধু! তুমি তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেছিলে বলে এটা তোমার বাস ভবন । অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ যাঁর হাতে মুহাম্মদের ( সঃ ) প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! ঐ সময় তার অন্তরে যে খুশী ও আনন্দ আসে তা কখনো শেষ হবার নয় ।” এরপর তাকে বলা হয়ঃ “ তোমার নীচের দিকে দৃষ্টিপাত কর ।” সে তাকিয়ে দেখে যে, জাহান্নামের দরজা খোলা রয়েছে। ফেরেশতারা তাকে বলেনঃ “ দেখো! এর থেকে আল্লাহ তোমাকে চিরদিনের জন্যে মুক্তি দান করেছেন ।” রাসূলুল্লাহ বলেনঃ “ ঐ সময় অন্তরে এমন আনন্দ লাভ করে যা কখনো দূর হবার নয় ।” হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেন, তার জন্যে জান্নাতের সাতাত্তরটি দরজা খুলে দেয়া হয় যেগুলি দিয়ে জান্নাতের সুগন্ধ ও শীতলতা তার কাছে আসতে থাকে যে পর্যন্ত না মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাকে পুনরুত্থিত করেন।এই সনদেই নবী ( সঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর ফেরেশতাকে বলেনঃ “ তুমি যাও এবং আমার ঐ শত্রুকে আমার কাছে নিয়ে এসো । আমি তার রুজীতে বরকত দিয়েছিলাম এবং আমার নিয়ামতসমূহ তাকে দান করেছিলাম। কিন্তু তবুও আমার নাফরমানীহতে সে বিরত থাকে নাই। তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তার নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবো।” তৎক্ষণাৎ মালাকুল মাউত অত্যন্ত কুৎসিত ও ভয়াবহ আকৃতিতে তার নিকট হাযির হন, এইরূপ ভয়ানক আকৃতি কেউ কখনো দেখেনি। তাঁর থাকে বারোটি চক্ষু এবং তিনি পরিধান করে থাকেন জাহান্নামের কন্টকযুক্ত পোশাক। তাঁর সঙ্গে থাকেন পাঁচশ’ জন ফেরেশতা। তারা সাথে করে নিয়ে আসেন আগুনের অঙ্গার এবং আগুনের চাবুক। মালাকুল মাউত জাহান্নামের আগুনের ঐ কন্টকযুক্ত পোশাক দ্বারা তার দেহের উপর প্রহার করেন। তার প্রতিটি লোমকূপে ঐ কাটা প্রবেশ করে যায়। তারপর এমনভাবে ওগুলি ঘুরতে থাকে যে, তার জোড়াগুলি আগাহয়ে যায়। অতঃপর তার রূহ তার পায়ের নখ দিয়ে টেনে বের করা হয় এবং তা তার পায়ের গোড়ালীর উপর নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় আল্লাহ তাআলার ঐ দুশমন অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাউত ( আঃ ) তাকে উঠিয়ে নেন। ফেরেশতারা তাদের জাহান্নামী চাবুক তার চেহারা ও পিঠের উপর মারেন। তখন তাকে শক্ত করে বাঁধেন এবং তার রূহ তার পায়ের গোড়ালীর দিক থেকে টেনে বের করে নেন এবং তার হাঁটুর উপর নিক্ষেপ করেন। আবার আল্লাহর ঐ দুশমন বেহুশ হয়ে যায়। মাউতের ফেরেশতা পুনরায় তাঁকে উঠায় এবং ফেরেস্তারা আবার তার চেহারা ও কোমরের উপর চাবুক মারতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত রূহ তার বক্ষের উপর উঠে যায়, তারপর গলার উপর চলে যায়। অতঃপর ফেরেশতারা তাদের সাথে আনিত ঐ জাহান্নামী তামা ও জাহান্নামী অঙ্গার তার থুথীর নীচে রেখে দেন। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা বলেনঃ “ হে অভিশপ্ত রূহ! বের হয়ে চলো কৃষ্ণবর্ণ ধূমের ছায়ার দিকে, যা শীতল, আরাম দায়কও নয় ।” অতঃপর যখন ঐ রূহ কব করা হয়ে যায় তখন ওটা দেহকে বলেঃ “ আমার পক্ষ থেকে আল্লাহ তোমাকে মন্দ বিনিময় প্রদান করুন! তুমি আমাকে আল্লাহর নাফরমানীর কাজে চালিত করেছিলে । সুতরাং তুমি নিজেও ধ্বংস হলে এবং আমাকেও ধ্বংস করলে।” দেহও রূহকে অনুরূপ কথাই বলে। ভূ-পৃষ্ঠের যে সব জায়গায় সে আল্লাহর নাফরমানী করতো, সবগুলিই তার উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করে। শয়তানের সেনাবাহিনী দৌড়তে দৌড়তে তার কাছে হাযির হয় এবং বলেঃ “ আজ একজনকে আমরা জাহান্নামে পৌছিয়ে দিয়েছি ।” তার কবর এমন সংকীর্ণ করে দেয়া হয় যে, তার ডান পাঁজর বাম পাঁজরে এবং বাম পাঁজর ডান পাঁজরে প্রবেশ হয়ে যায়। তার কবরে উটের স্কন্ধের মত সর্প প্রেরণ করা হয়, যে তাকে তার কান ও পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী থেকে কামড়াতে শুরু করে এবং ক্রমে ক্রমে উপরের দিকে চড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার দেহের মধ্য ভাগে পৌঁছে যায়। তার কাছে দু’জন ফেরেশতাকে পাঠানো হয়; যাঁদের চক্ষুগুলি গতিশীল বিদ্যুতের মত, কণ্ঠস্বর বজ্রের গর্জনের মত, দাতগুলি হিংস্র জন্তুর মত, শ্বাস-প্রশ্বাস অগ্নি শিখার মত এবং চুলগুলি পায়ের নীচ পর্যন্ত লটকানো। তাঁদের দু’কাঁধের মাঝে এরূপ এরূপ দূরত্বের ব্যবধান রয়েছে। তাঁদের অন্তরে দয়া ও করুণার লেশমাত্র নেই। তাঁদের নামই হচ্ছে মুনকির ও নাকীর। তাঁদের হাতে এতো বড় হাতুড়ী রয়েছে যে, যা রাবীআ’ও মুযার গোত্রদ্বয় একত্রিত হয়েও উঠাতে সক্ষম নয়। তাঁরা তাকে বলেনঃ “ উঠে বসো ।” সে তখন সোজাহয়ে উঠে বসে এবং তার লুঙ্গী বাঁধার জায়গায় তার কাফন চলে আসে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবী কে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি তো কিছুই জানি না । তারা তখন বলেনঃ “ তুমি জান নাই এবং পড়ও নাই ।” অতঃপর তারা তাকে হাতুড়ী দ্বারা এতো জোরে মারেন যে, ওর অগ্নি স্ফুলিঙ্গ তার কবরকে পরিপূর্ণ করে দেয়। আবার তারা ফিরে গিয়ে বলেনঃ “ তোমার উপরের দিকে তাকাও ।” সে তাকিয়ে একটা খোলা দরজা দেখতে পায়। তারা বলেনঃ “ ওরে আল্লাহর দুশমন! তুই যদি আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করতি তবে এটাই তোর মনযিল হতো ।”রাসুলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ আল্লাহর কসম! এ সময় তার অন্তরে অত্যন্ত দুঃখ ও আফসোস হবে যা কখনো দূর হবার নয় । তার জন্যে জাহান্নামের সাতাত্তরটি দরজা খুলে দেয়া হয়। কিয়ামত পর্যন্ত ঐ গুলি হতে গরম বাতাস ও বাষ্প সব সময় তার কবরে আসতে থাকবে। ( এ হাদীসটি খুবই গারীব বা দুর্বল এবং খুবই বিস্ময়করও বটে। এ হাদীসে হযরত আনাসের (রাঃ ) নিম্নের বর্ণনাকারী ইয়াযীদ রিকাশীর অস্বীকার্য বহু বর্ণনা রয়েছে এবং আমাদের নিকট তার বর্ণনা অত্যন্ত দুর্বল। এই সব ব্যাপার আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)হযরত উসমান ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন কোন মৃত ব্যক্তির দাফন কার্য শেষ করতেন তখন তিনি তথায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং বলতেনঃ “ তোমাদের এই ভাই এর জন্যে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকো এবং কবরে তার অটল ও স্থির থাকার জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা কর । এখন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাঊদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হাফিয আবু বকর ইবনু মারদুওয়াই ( রঃ ) আল্লাহ তাআলার ( আরবি ) ( ৬:৯৪ ) এই উক্তির তাফসীরে একটি দীর্ঘ হাদীস আনয়ন করেছেন। ওটা খুবই গরীব, বিস্ময়কর ও দুর্বল হাদীস।
সূরা ইবরাহীম আয়াত 27 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যার জন্যে শাস্তির হুকুম অবধারিত হয়ে গেছে আপনি কি সে জাহান্নামীকে মুক্ত করতে পারবেন?
- আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবেন।
- আপন পোশাক পবিত্র করুন
- আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম, যেদিন মানুষ প্রত্যেক্ষ করবে যা সে সামনে প্রেরণ
- আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক
- আমি তাদেরকে নিজের নিদর্শনাবলী দিয়েছি। অতঃপর তারা এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
- যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের
- আপনার কাছে সৈন্যবাহিনীর ইতিবৃত্ত পৌছেছে কি?
- হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এবং আমার পরিবারবর্গকে তারা যা করে, তা থেকে রক্ষা কর।
- আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ইবরাহীম ডাউনলোড করুন:
সূরা Ibrahim mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ibrahim শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers