কোরান সূরা হা-মীম আস-সাজদা আয়াত 29 তাফসীর
﴿وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا اللَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ﴾
[ فصلت: 29]
কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়। [সূরা হা-মীম আস-সাজদা: 29]
Surah Fussilat in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Fussilat ayat 29
আর যারা অবিশ্বাস করে তারা বলবে -- ''আমাদের প্রভু! জিন ও মানুষদের যারা আমাদের বিপথে চালিয়েছিল তাদের আমাদের দেখিয়ে দাও, আমাদের পায়ের তলায় আমরা তাদের মাড়াবো, যাতে তারা অধমদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
২৯. যারা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছে তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে মানব ও দানবের উভয়বিধ বিভ্রান্তকারীদেরকে দেখিয়ে দিন: একতো ইবলিস যে কুফরী ও তার প্রতি আহŸানের সূচনা করেছে। আর অন্যজন হলো আদমের ওই সন্তান যে হত্যার প্রচলন ঘটিয়েছে। আমরা তাদেরকে আমাদের পদতলে পিশিয়ে দেবো যেন তারা জাহান্নামের অতল গহŸরে তলিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হয় যারা সর্বাপেক্ষা কঠিন শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীরা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যে সব জ্বিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদেরকে দেখিয়ে দাও,[১] আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে ওরা লাঞ্ছিত হয়।’ [২] [১] এর অর্থ পরিষ্কার যে, ভ্রষ্টকারী কেবল শয়তানরাই হয় না, বরং অনেক সংখ্যক মানুষও শয়তানের প্রভাবে লোকদেরকে ভ্রষ্ট করার কাজে ব্যস্ত থাকে। পক্ষান্তরে কেউ কেউ জ্বিন বলতে ইবলীস এবং ইনসান বলতে ক্বাবীলকে বুঝিয়েছেন; যে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম নিজের ভাই হাবীলকে হত্যা করে যুলুম এবং মহাপাপ সম্পাদন করে। হাদীস অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত অন্যায়ভাবে সংঘটিত সমস্ত হত্যার পাপের একটি অংশ তার ঘাড়ে চাপবে। কারণ সেই হল মানুষের ইতিহাসে হত্যা-অপরাধের পথিকৃৎ। আমাদের মতে প্রথম অর্থই সর্বাধিক সঠিক। [২] অর্থাৎ, আমাদের পা দিয়ে তাদেরকে পদদলিত করে খুব লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করি। জাহান্নামীদের অনুসৃত নেতাদের উপর যে রাগ হবে তা মিটানোর জন্য তারা এ কথা বলবে। অথচ তারা সকলেই অপরাধী এবং সকলেই এক সাথে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। যেমন মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, ﴿لِكُلِّ ضِعْفٌ وَلَكِنْ لاَ تَعْلَمُوْنَ﴾ অর্থাৎ, প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ ( শাস্তি ) রয়েছে; কিন্তু তোমরা জান না। ( আ'রাফঃ ৩৮ ) জাহান্নামীদের কথা আলোচনা করার পর মহান আল্লাহ ঈমানদার জান্নাতীদের কথা আলোচনা করছেন। আর এটাই হলো সাধারণতঃ কুরআনের বাক্য-বিন্যাস-পদ্ধতি। যাতে ভয়ের সাথে আশা এবং আশার সাথে ভয়ের কথা উল্লেখ করার প্রতিও যত্ন নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ভীতি প্রদর্শনের পর এবার সুসংবাদ দেওয়া হচ্ছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর কাফিররা বলবে, 'হে আমাদের রব! জিন ও মানুষের মধ্য থেকে যে দু'জন আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদেরকে দেখিয়ে দিন, আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নিচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়।'
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
২৫-২৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, তিনি মুশরিকদেরকে পথভ্রষ্ট করেছেন। এটা তাঁর ইচ্ছা এবং ক্ষমতা। তিনি তার সমুদয় কাজে নিপুণ। তাঁর প্রতিটি কাজ হিকমত ও নিপুণতা পূর্ণ। তিনি কতকগুলো দানব ও মানবকে মুশরিকদের সাথী করে দেন। তারা তাদের মন্দ আমলগুলোও তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখায়। তারা দূর অতীতের দিক দিয়ে এবং ভবিষ্যৎ কালের দিক দিয়েও তাদের আমলগুলোকে ভাল মনে করে থাকে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় আমি তার জন্যে নিয়োজিত করি শয়তান, অতঃপর সেই হয় তার সহচর । শয়তানরাই মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে পরিচালিত হচ্ছে।”( ৪৩:৩৬-৩৭ )।তাদের উপর আল্লাহর শাস্তির কথা বাস্তব হয়েছে, যেমন তাদের পূর্ববর্তী দানব ও মানবদের উপর শাস্তি বাস্তবায়িত হয়েছিল। তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এরাও তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এবং এরা সমান হয়ে গেছে।কাফিররা পারস্পরিক পরামর্শক্রমে এই ঐকমত্যে পৌঁছেছিল যে, তারা আল্লাহর কালামকে মানবে না এবং এর হুকুমের আনুগত্য করবে না। বরং তারা একে অপরকে বলে দেয় যে, যখন কুরআন পাঠ করা হবে তখন যেন শোরগোল ও হৈ চৈ শুরু করে দেয়া হয়। যেমন হাততালি দেয়া, বাঁশী বাজানো এবং চিৎকার করা। কুরায়েশরা তাই করতো। তারা দোষারোপ করতো, অস্বীকার করতো, শত্রুতা করতো এবং এটাকে নিজেদের বিজয় লাভের কারণ মনে করতো। প্রত্যেক অজ্ঞ, মূর্খ কাফিরের এই একই অবস্থা যে, তার কুরআন শুনতে ভাল লাগে না। এজন্যেই এর বিপরীত করতে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা তা শুনো ও চুপ থাকো, যাতে তোমাদের উপর দয়া করা হয় ।”( ৭:২০৪ )।ঐ কাফিরদেরকে ধমকানো হচ্ছে যে, কুরআন কারীমের বিরোধিতা করার কারণে তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। আর অবশ্যই তারা তাদের দুষ্কর্মের শাস্তি আস্বাদন করবে। আল্লাহর এই শত্রুদের বিনিময় হলো জাহান্নামের আগুন। এর মধ্যেই রয়েছে তাদের জন্যে স্থায়ী আবাস, আল্লাহর নিদর্শনাবলী অস্বীকৃতির প্রতিফল স্বরূপ।এর পরবর্তী আয়াতের ভাবার্থ হযরত আলী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, এখানে ‘জ্বিন’ দ্বারা ইবলীস এবং ইনস’ ( মানুষ ) দ্বারা হযরত আদম ( আঃ )-এর ঐ সন্তানকে বুঝানো হয়েছে যে তার ভাইকে হত্যা করেছিল।অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, ইবলীস তো প্রত্যেক মুশরিককে ডাক দিবে, আর হযরত আদম ( আঃ )-এর এই সন্তানটি প্রত্যেক কাবীরা গুনাহকারীকে ডাক দিবে। সুতরাং ইবলীস শিরক এবং সমস্ত পাপকার্যের দিকে মানুষকে আহ্বানকারী এবং প্রথম রাসূল হযরত আদম ( আঃ )-এর যে ছেলেটি তার ভাইকে হত্যা করেছিল সেও এই কাজে শরীক রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “ ভূ-পৃষ্ঠে যত অন্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটতে আছে এর প্রত্যেকটার পাপ হযরত আদম ( আঃ )-এর এই প্রথম ছেলের উপরও চেপে থাকে । কেননা, সে-ই প্রথম হত্যাকাস্ত্রে সূচনাকারী।”সুতরাং কিয়ামতের দিন কাফিররা তাদেরকে পথভ্রষ্টকারী দানব ও মানবদেরকে নিম্নস্তরের জাহান্নামের মধ্যে প্রবেশ করাতে চাইবে, যাতে তাদের শাস্তি কঠিন হয় এবং তারা অত্যন্ত লাঞ্ছিত হয়। মোটকথা, তাদের চেয়ে ওদের শাস্তি যেন বহুগুণে বেশী হয় এটাই তারা কামনা করবে। যেমন সূরায়ে আ'রাফে এ বর্ণনা গত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন অনুসারীরা অনুসৃতদের দ্বিগুণ শাস্তির জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট আবেদন করবে, তখন উত্তরে বলা হবেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ প্রত্যেকের জন্যেই দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জান না ।”( ৭:৩৮ ) অর্থাৎ প্রত্যেককেই তার আমল অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথ হতে বিরত রেখেছে, তাদেরকে আমি তাদের বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করবো ।” ( ১৬:৮৮ )
সূরা হা-মীম আস-সাজদা আয়াত 29 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- মুখোমুখি হয়ে আসনে আসীন।
- এটা এ জন্যে যে, আপনার প্রতিপালক কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে জুলুমের কারণে ধ্বংস করেন না এমতাবস্থায়
- স্মরণ করুন, হাত ও চোখের অধিকারী আমার বান্দা ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের কথা।
- মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়,
- আমি আপনাকে বলব কি কার নিকট শয়তানরা অবতরণ করে?
- আর যদি তার উপর আপতিত দুঃখ কষ্টের পরে তাকে সুখভোগ করতে দেই, তবে সে বলতে
- তারা যেসব সৎকাজ করবে, কোন অবস্থাতেই সেগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হবে না। আর আল্লাহ
- তিনিই উদ্যান সমূহ সৃষ্টি করেছে-তাও, যা মাচার উপর তুলে দেয়া হয়, এবং যা মাচার উপর
- এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কি কাজে
- এবং তোমরা তাকিয়ে থাক,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা হা-মীম আস-সাজদা ডাউনলোড করুন:
সূরা Fussilat mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Fussilat শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers