কোরান সূরা হুজরাত আয়াত 3 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Hujurat ayat 3 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা হুজরাত আয়াত 3 আরবি পাঠে(Hujurat).
  
   

﴿إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ ۚ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ﴾
[ الحجرات: 3]

যারা আল্লাহর রসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। [সূরা হুজরাত: 3]

Surah Al-Hujuraat in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Hujurat ayat 3


নিঃসন্দেহ যারা আল্লাহ্‌র রসূলের সামনে তাদের আওয়াজ নিচু করে, এরাই হচ্ছে তারা যাদের হৃদয় ধর্ম পরায়ণতার জন্য আল্লাহ্ পরীক্ষা করেছেন। তাদেরই জন্য রয়েছে পরিত্রাণ ও এক মহান প্রতিদান।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৩. যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজেদের স্বরকে নিচু করে তাদের অন্তরকে আল্লাহ তাঁর তাকওয়ার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে এতদুদ্দেশ্যে খাঁটি করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের পাপ মার্জনা। ফলে তিনি তাদেরকে পাকড়াও করবেন না। আর তাদের জন্য কিয়ামত দিবসে রয়েছে মহা প্রতিদান। সে দিন তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


যারা আল্লাহর রসূলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে আল্লাহ-ভীরুতার জন্য পরীক্ষা করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। [১] [১] এই আয়াতে প্রশংসা করা হয়েছে সেই লোকদের, যাঁরা রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )-এর মান-মর্যাদার প্রতি খেয়াল করে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু রাখতেন।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নিচু করে, আল্লাহ্‌ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


১-৩ নং আয়াতের তাফসীর: এই আয়াতসমূহে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় মুমিন বান্দাদেরকে তাঁর নবী। ( সঃ )-এর ব্যাপারে আদব শিক্ষা দিচ্ছেন যে, নবী ( সঃ )-এর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখা তাদের একান্ত কর্তব্য। সমস্ত কাজ-কর্মে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর পিছনে থাকা তাদের উচিত। তাদের উচিত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্য করা।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন হযরত মু'আয ( রাঃ )-কে ইয়ামনে প্রেরণ করেন তখন তাঁকে প্রশ্ন করেনঃ “ তুমি কিসের মাধ্যমে ফায়সালা করবে?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহর কিতাবের মাধ্যমে । আবার তিনি প্রশ্ন করেনঃ “ যদি আল্লাহর কিতাবে পাও?" জবাবে তিনি বলেনঃ “তাহলে সুন্নাতে রাসূল ( সঃ )-এর মাধ্যমে ফায়সালা করবে ।” পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “ যদি তাতেও না পাও?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “তাহলে আমি চিন্তা-গবেষণা করবে এবং ওরই মাধ্যমে ফায়সালা করবে ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তার বুকে হাত মেরে বললেনঃ আল্লাহর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা যিনি তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর দূতকে এমন বিষয়ের তাওফীক দিয়েছেন যাতে তাঁর রাসূল ( সঃ ) সন্তুষ্ট । ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) এখানে এ হাদীসটি আনয়নের উদ্দেশ্য আমাদের এই যে, হযরত মুআয ( রাঃ ) স্বীয় ইজতিহাদকে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলিল্লাহ ( সঃ )-এর পরে স্থান দিয়েছেন। সুতরাং স্বীয় মতকে কিতাব ও সুন্নাতের আগে স্থান দেয়াই হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আগে বেড়ে যাওয়া।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, একথার ভাবার্থ হচ্ছেঃ “ কিতাব ও সুন্নাতের বিপরীত কথা তোমরা বলো না ।' হযরত আওফী ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কথার উপর কথা বলো না।' হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ “ কোন বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যে পর্যন্ত কোন কিছু না বলেন সেই পর্যন্ত তোমরাও কিছুই বলে না, বরং নীরবতা অবলম্বন করো ।' হযরত যহহাক ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ ‘আমরে দ্বীন ও আহকামে শরয়ীর ব্যাপারে তোমরা আল্লাহর কালাম ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর হাদীস ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা ফায়সালা করো না।' হযরত সুফিয়ান সাওরী ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ “ তোমরা কোন কথায় ও কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর অগ্রণী হয়ো না ।' হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ “ তোমরা ইমামের পূর্বে দু'আ করো না ।এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর’ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম প্রতিপালনের ব্যাপারে মনে আল্লাহর ভয় রাখো। ‘আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ, অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের কথা শুনে থাকেন এবং তোমাদের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের খবর তিনি রাখেন।এরপর আল্লাহ তা'আলা তার মুমিন বান্দাদেরকে আর একটি আদব বা দ্রতা শিক্ষা দিচ্ছেন যে, তারা যেন নবী ( সঃ )-এর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু না করে। এ আয়াতটি হযরত আবু বকর ( রাঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। হযরত আবূ মুলাইকা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, দুই মহান ব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আবূ বকর ( রাঃ ) হযরত উমার ( রাঃ ) যেন প্রায় ধ্বংসই হয়ে যাবেন, যেহেতু তাঁরা নবী ( সঃ )-এর সামনে তাঁদের কণ্ঠস্বর উঁচু করেছিলেন যখন বানী তামীম গোত্রের প্রতিনিধি হাযির হয়েছিলেন । তাদের একজন হযরত হাবিস ইবনে আকরার ( রাঃ ) প্রতি ইঙ্গিত করেন এবং অপরজন ইঙ্গিত করেন অন্য একজনের প্রতি, বর্ণনাকারী নাফে’ ( রাঃ )-এর তাঁর নাম মনে নেই। তখন হযরত আবূ বকর ( রাঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ আপনি তো সব সময় আমার বিরধিতাই করে থাকেন?” উত্তরে হযরত উমার ( রাঃ ) হযরত আবু বকর ( রাঃ )-কে বলেনঃ “আপনার এটা ভুল ধারণা ।" এই ভাবে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং তাদের কণ্ঠস্বর উঁচু হয়। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। হযরত ইবনে যুবায়ের ( রাঃ ) বলেনঃ “ এরপর হযরত উমার ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( রাঃ )-এর সাথে এতো নিম্নস্বরে কথা বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে দ্বিতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করতে হতো ।( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত আবু বকর ( রাঃ ) বলছিলেনঃ হযরত কাকা ইবনে মা'বাদ ( রাঃ )-কে আমীর নিযুক্ত করুন । আর হযরত উমার ( রাঃ ) বলছিলেনঃ হযরত আকরা ইবনে হাবিস ( রাঃ )-কে আমীর বানানো হোক।” এই মতভেদের কারণে উভয়ের মধ্যে কিছু উচ্চবাচ্য হয় এবং তাঁদের কণ্ঠস্বর উঁচু হয়। ( আরবী ) তখন পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। ( এ হাদীসটিও ইমাম বুখারী (রঃ ) স্বীয় ‘সহিহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) যখন ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন হযরত আবু বকর ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এখন হতে আমি আপনার সাথে এমনভাবে কথা বলবে যেমনভাবে কেউ কানে কানে কথা বলে( এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযার (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ( রাঃ )-কে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মজলিসে কয়েক দিন পর্যন্ত দেখা যায়নি। একটি লোক বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনাকে আমি তার সম্পর্কে খবর দিবো ।” অতঃপর লোকটি হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ( রাঃ )-এর বাড়ীতে গিয়ে দেখেন যে, তিনি মাথা ঝুঁকানো অবস্থায় বসে আছেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ আচ্ছা বলুন তো আপনার অবস্থা কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আমার অবস্থা খুব খারাপ । আমি নবী ( সঃ )-এর কণ্ঠস্বরের উপর নিজের কণ্ঠস্বর উঁচু করতাম। আমার আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং আমি জাহান্নামী হয়ে গেছি।” লোকটি তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গিয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন ঐ লোকটি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মুখ হতে এক অতি বড় সুসংবাদ নিয়ে দ্বিতীয়বার হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ( রাঃ )-এর নিকট গমন করলেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) লোকটিকে বলেছিলেন, তুমি সাবিত ইবনে কায়েস ( রাঃ )-এর কাছে গিয়ে বললাঃ “ আপনি জাহান্নামী নন, বরং জান্নাতী ।" ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) স্বীয় সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন হতে পর্যন্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়, আর হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ইবনে শামাস ( রাঃ ) ছিলেন উচ্চ কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট লোক, সুতরাং তিনি তখন বলেনঃ “ আমি আমার কণ্ঠস্বর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর উপর উঁচু করতাম, কাজেই আমি জাহান্নামী হয়ে গেছি এবং আমার আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে । তাই তিনি চিন্তিত অবস্থায় বাড়ীতেই বসে পড়েন এবং নবী ( সঃ )-এর মজলিসে উঠাবসা ছেড়ে দেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর খোঁজ নিলে কওমের কোন একজন লোক তার কাছে গিয়ে তাকে বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আপনাকে তার মজলিসে না পেয়ে আপনার খোঁজ নিয়েছেন । তখন তিনি বলেনঃ “ আমি আমার কণ্ঠস্বর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কণ্ঠস্বরের উপর উঁচু করেছি । সুতরাং আমি জাহান্নামী হয়ে গেছি এবং আমার কর্ম নিষ্ফল হয়ে গেছে।” লোকটি তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এসে এ খবর দেন। তখন নবী ( সঃ ) বলেনঃ “ না, বরং সে জান্নাতী । হযরত আনাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ অতঃপর আমরা হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ( রাঃ )-কে জীবিত অবস্থায় চলাফেরা করতে দেখতাম এবং জানতাম যে, তিনি জান্নাতবাসী । অতঃপর ইয়ামামার যুদ্ধে যখন অমরা কিছুটা ভগ্নোৎসাহ হয়ে পড়ি তখন আমরা দেখি যে, হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ( রাঃ ) সুগন্ধময় কাফন পরিহিত হয়ে শত্রুদের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন এবং বলতে রয়েছেনঃ “ হে মুসলিমবৃন্দ! তোমরা তোমাদের পরবর্তীদের জন্যে মন্দ নমুনা ছেড়ে যেয়ো না ।” এ কথা বলে তিনি শত্রুদের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যান ( আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন )( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)সহীহ মুসলিমে রয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত সা'দ ইবনে মু'আয ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আবূ আমর ( রাঃ )! সাবিত ( রাঃ )-এর খবর কি? সে কি অসুস্থ?” হযরত সা'দ ( রাঃ ) জবাবে বলেনঃ “হযরত সাবিত ( রাঃ ) আমার প্রতিবেশী । কিন্তু তিনি যে অসুস্থ এটা তো আমার জানা নেই।” অতঃপর হযরত সা’দ হযরত সাবিত ( রাঃ )-এর নিকট গমন করে তাকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কথা শুনিয়ে দেন। তখন হযরত সাবিত ( রাঃ ) তাঁকে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেছেন, আর আপনারা তো জানেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কণ্ঠস্বরের উপর আপনাদের সবারই চেয়ে আমার কণ্ঠস্বর বেশী উঁচু । সুতরাং আমি তো জাহান্নামী হয়ে গেছি।” হযরত সা'দ ( রাঃ ) তখন নবী ( সঃ )-কে হযরত সাবিত ( রাঃ )-এর একথা শুনিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বলেনঃ “ না, বরং সে জান্নাতী ।"অন্যান্য রিওয়াইয়াতে হযরত সা'দ ( রাঃ )-এর নাম উল্লেখ করা হয়নি। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, এ রিওয়াইয়াতটি মুআল্লাল এবং এটাই সঠিক কথাও বটে। কেননা, হযরত সা'দ ( রাঃ ) ঐ সময় জীবিতই ছিলেন না। বানু কুরাইযার যুদ্ধের অল্প কিছুদিন পরেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আর বানু কুরাইযার যুদ্ধ হয়েছিল হিজরী পঞ্চম সনে এবং এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় বানু তামীম গোত্রের প্রতিনিধির আগমনের সময়। আর ওটা হিজরী নবম সনের ঘটনা। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ( রাঃ ) রাস্তার উপর বসে পড়েন এবং কাঁদতে শুরু করেন।এমতাবস্থায় বানু আজলান গোত্রের হযরত আসিম ইবনে আদ্দী ( রাঃ ) তাঁর পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ আপনি কাঁদছেন কেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় আমি ভয় করছি যে, এটা হয়তো আমার ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে । কেননা, আমার কণ্ঠস্বর খুব উঁচু।” তাঁর একথা শুনে হযরত আসিম ইবনে আদ্দী ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গমন করেন, আর এদিকে হযরত সাবিত ( রাঃ ) কান্নায় একেবারে ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বাড়ী গিয়ে তার স্ত্রী জামীলা বিনতু আবদিল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালকে বলেনঃ “ আমি এখন বিছানার ঘরে ( অর্থাৎ শয়ন কক্ষে ) প্রবেশ করছি । তুমি বাহির হতে দরযা বন্ধ করে পেরেক মেরে দাও। অতঃপর তিনি বললেনঃ “ আমি ঘর হতে বের হবো না । যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমার মৃত্যু ঘটাবেন অথবা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। এদিকে তার এই অবস্থা হয়েছে। আর ওদিকে হযরত আসিম ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে তার খবর দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন হযরত আসিম ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ তুমি তার কাছে গিয়ে তাকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো ।" হযরত আসিম ( রাঃ ) ঐ স্থানে গিয়ে তাঁকে না পেয়ে তার বাড়ী এবং তাঁকে তাঁর শয়নকক্ষে ঐ অবস্থায় পান। তাঁকে তিনি বলেনঃ “ চলুন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আপনাকে ডাকছেন ।” তখন তিনি হযরত আসিম ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ পেরেক ভেঙ্গে ফেলুন ।” অতঃপর তারা দু'জন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করেন। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত সাবিত ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে সাবিত ( রাঃ )! তুমি কাঁদছিলে কেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমার কণ্ঠস্বর উচ্চ এবং আমি ভয় করছি যে, এ আয়াতটি আমার ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে । তাই আমার কান্না এসেছিল।” রাসললাহ ( সঃ ) তখন তাকে বলেনঃ “ তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি প্রশংসিত অবস্থায় জীবন যাপন করবে, শহীদ রূপে মৃত্যুবরণ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে?” হযরত সাবিত ( রাঃ ) উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর এই সুসংবাদ পেয়ে আমি খুবই খুশী হয়েছি এবং এর পরে আমি আর কখনো রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কণ্ঠস্বরের উপর আমার কণ্ঠস্বরকে উঁচু করবে না ।” তখন আল্লাহ তা'আলা ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। এই ঘটনাটি এভাবে কয়েকজন তাবেয়ী হতেও বর্ণিত আছে। মোটকথা, আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর সামনে কণ্ঠস্বর উঁচু করতে নিষেধ করেছেন।আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ ) মসজিদে নববী ( সঃ )-এর মধ্যে দুইজন লোককে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনে তথায় গিয়ে তাদেরকে বলেনঃ “ তোমরা কোথায় রয়েছে তা কি জান?” অতঃপর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা কোথাকার অধিবাসী?" উত্তরে তারা বললোঃ “আমরা তায়েফের অধিবাসী ।” তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “ যদি তোমরা মদীনার অধিবাসী হতে তবে আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতাম ।”উলামায়ে কিরামের উক্তি এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কবরের পার্শ্বেও উচ্চস্বরে কথা বলা মাকরূহ। যেমন তার জীবদ্দশায় তাঁর সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা মাকরূহ ছিল। কেননা, তিনি যেমন জীবদ্দশায় সম্মানের পাত্র ছিলেন তেমনি সব সময় তিনি কবরেও সম্মানের পাত্র হিসেবেই থাকবেন।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “ হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলে থাকো, নবী ( সঃ )-এর সাথে সেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো না, বরং তার সাথে অতি সম্মান ও আদবের সাথে কথা বলতে হবে । যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ ( হে মুসলমানগণ! ) তোমরা রাসূল ( সঃ )-কে এমনভাবে ডাকবে না । যেমনভাবে তোমরা একে অপরকে ডেকে থাকো।''( ২৪:৬৩ )এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ তোমাদেরকে নবী ( সঃ )-এর কণ্ঠস্বরের উপর তোমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করতে নিষেধ করার কারণ এই যে, হয়তো এর কারণে কোন সময় নবী ( সঃ ) তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন এবং এর ফলে তোমাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। যেমন সহীহ হাদীসে আছে যে, মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমন কোন কথা মুখেই উচ্চারণ করে যা তার। কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু ওটা আল্লাহ তা'আলার নিকট এতই পছন্দনীয় হয় যে, এ কারণে তিনি তাকে জান্নাতবাসী করে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমন কোন কথা উচ্চারণ করে যা তার কাছে তেমন খারাপ কথা নয়, কিন্তু ওরই কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামী করে দেন এবং তাকে জাহান্নামের এতো নিম্নস্তরে নামিয়ে দেন যে, ঐ গর্তটি আসমান ও যমীন হতেও গভীরতম। অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর স্বর নীচু করার প্রতি উৎসাহিত করতে গিয়ে বলেনঃ যারা রাসূল ( সঃ )-এর সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্যে পরিশোধিত করেছেন। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। ইমাম আহমাদ ( রঃ ) কিতাবুয যুহদের মধ্যে একটি রিওয়াইয়াত বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উমার ( রাঃ )-এর নিকট লিখিতভাবে ফতওয়া জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ হে আমীরুল মুমিনীন! এক ঐ ব্যক্তি যার অবাধ্যতামূলক কার্যকলাপের প্রবৃত্তি ও বাসনাই নেই এবং সে কোন অবাধ্যতামূলক কার্য করেও না এবং আর এক ব্যক্তি, যার অবাধ্যতামূলক কার্যকলাপের প্রবৃত্তি ও বাসনা রয়েছে, কিন্তু এসব অবাধ্যতামূলক কার্যকলাপ হতে সে দূরে থাকে, এদের দু'জনের মধ্যে কে বেশী উত্তম?" উত্তরে হযরত উমার ( রাঃ ) বলেনঃ “যার অবাধ্যতামূলক কার্যকলাপের প্রবৃত্তি রয়েছে, তথাপি সে এসব কার্যকলাপ হতে বেঁচে থাকে সেই বেশী উত্তম । এ ধরনের লোক সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্যে পরিশোধিত করেছেন । তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।"

সূরা হুজরাত আয়াত 3 সূরা

إن الذين يغضون أصواتهم عند رسول الله أولئك الذين امتحن الله قلوبهم للتقوى لهم مغفرة وأجر عظيم

سورة: الحجرات - آية: ( 3 )  - جزء: ( 26 )  -  صفحة: ( 515 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. যাতে আল্লাহ তা’আলা জেনে নেন যে, রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কি না। রসূলগণের কাছে
  2. না আপনি তাদের কাছে পারিশ্রমিক চান যে, তাদের উপর জরিমানার বোঝা চেপে বসে?
  3. অনন্তর সে তাদের কাছ থেকে প্রস্থান করল এবং বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদেরকে প্রতিপালকের
  4. আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং
  5. তাকে বলা হল, এই প্রাসাদে প্রবেশ কর। যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল সে ধারণা
  6. যিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনকর্তা?
  7. যারা সবর করে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে।
  8. বরং পরকাল সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিঃশেষ হয়ে গেছে; বরং তারা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষন করছে
  9. বলুনঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ,
  10. সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা হুজরাত ডাউনলোড করুন:

সূরা Hujurat mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Hujurat শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত হুজরাত  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত হুজরাত  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত হুজরাত  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত হুজরাত  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত হুজরাত  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত হুজরাত  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত হুজরাত  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত হুজরাত  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত হুজরাত  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত হুজরাত  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত হুজরাত  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত হুজরাত  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত হুজরাত  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত হুজরাত  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত হুজরাত  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত হুজরাত  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত হুজরাত  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত হুজরাত  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত হুজরাত  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত হুজরাত  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত হুজরাত  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত হুজরাত  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত হুজরাত  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত হুজরাত  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত হুজরাত  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Sunday, December 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers