কোরান সূরা ইবরাহীম আয়াত 31 তাফসীর
﴿قُل لِّعِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا يُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خِلَالٌ﴾
[ إبراهيم: 31]
আমার বান্দাদেরকে বলে দিন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারা নামায কায়েম রাখুক এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করুক ঐদিন আসার আগে, যেদিন কোন বেচা কেনা নেই এবং বন্ধুত্বও নেই। [সূরা ইবরাহীম: 31]
Surah Ibrahim in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ibrahim ayat 31
আমার বান্দাদের যারা বিশ্বাস করে তাদের বলো -- তারা নামায কায়েম করুক, এবং আমরা তাদের যে জীবনোপক রণ দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করুক, গোপনে ও প্রকাশ্যভাবে, সেইদিন আসবার আগে যাতে চলবে না কোনো লেনদেন, না কোনো বন্ধু- সম্পর্ক।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩১. হে রাসূল! আপনি মু’মিনদেরকে বলে দিন। হে মু’মিনরা! তোমরা পরিপূর্ণরূপে সালাত আদায় করো এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক থেকে ওয়াজিব ও মুস্তাহাব দান-সাদকা করে যাও। অন্যকে দেখানোর ভয়ে গোপনভাবে এবং কখনো অন্যদের অনুকরণের জন্য প্রকাশ্যভাবে। সেদিন আসার আগে যেদিন না থাকবে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য, না থাকবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য কোন মূল্যপণের ব্যাবস্থা। এমনিভাবে থাকবে না কোন বন্ধুত্ব, যাতে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর জন্য সুপারিশ করতে পারে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী তাদেরকে বল, ‘তারা যেন নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না এবং থাকবে না কোন বন্ধুত্ব।’[১] [১] নামায কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করার অর্থ এই যে, তা নবী ( সাঃ )-এর তরীকা মোতাবেক যথাসময়ে, মনোযোগ সহকারে এবং বিনয়-নম্রতা বজায় রেখে সম্পন্ন করা। ব্যয় করার অর্থ যাকাত আদায় করা, তার মাধ্যমে আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা এবং অন্যান্য অভাবীদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা। শুধু এই নয় যে, মুসলিম নিজের স্বার্থে ও নিজস্ব প্রয়োজনে অকুণ্ঠভাবে বহু অর্থ ব্যয় করবে; কিন্তু আল্লাহর নির্দেশিত স্থানে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করবে। কিয়ামতের দিন এমন হবে যেখানে না ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব হবে, আর না কোন বন্ধুত্ব কারো কাজে আসবে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আপনি বলুন, ‘সালাত কায়েম করতে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে [ ১ ]---সে দিনের আগে যে দিন থাকবে না কোন বেচা- কেনা এবং থাকবে না বন্ধুত্বও [ ২ ]।’ [ ১ ] এ আয়াতে মু’মিন বান্দাদের জন্য বিরাট সুসংবাদ ও সম্মান রয়েছে। প্রথমে আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে নিজের বান্দা বলেছেন, এরপর ঈমান-গুণে গুণান্বিত করেছেন, অতঃপর তাদেরকে চিরস্থায়ী সুখ ও সম্মান দানের পদ্ধতি বলে দিয়েছেন যে, তারা সালাত কায়েম করুক। এর মানে হচ্ছে, মু’মিনদের হতে হবে কৃতজ্ঞ। আর এ কৃতজ্ঞতার বাস্তব রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য এদের সালাত কায়েম এবং আল্লাহ্র পথে অর্থ ব্যয় করতে হবে। সালাতের সময় অলসতা এবং সালাতের সুষ্ঠু নিয়মাবলীতে ক্রটি না করা চাই। এছাড়া আল্লাহ্ প্রদত্ত রিযক থেকে কিছু তাঁর পথেও ব্যয় করুক। ব্যয় করার উভয় পদ্ধতিকেই বৈধ রাখা হয়েছে- গোপনে অথবা প্রকাশ্যে। কোন কোন আলেম বলেনঃ ফরয যাকাত, ফিৎরা ইত্যাদি প্রকাশ্যে হওয়া উচিত- যাতে অন্যরাও উৎসাহিত হয়, আর নফল দান-সদকা গোপনে করা উচিত যাতে রিয়া ও নাম-যশ অর্জনের মত মনোভঙ্গি সৃষ্টির আশংকা না থাকে। [ কুরতুবী ] ব্যাপারটি আসলে নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যদি প্রকাশ্যে দান করার মধ্যে রিয়া ও নাম-যশের নিয়ত থাকে, তবে দানের ফযীলত শেষ হয়ে যায়- তা ফরয হোক কিংবা নফল। পক্ষান্তরে যদি অপরকে উৎসাহিত করার নিয়ত থাকে, তবে ফরয ও নফল উভয় ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করা বৈধ। [ দেখুন, তাফসীর ইবন কাসীর ১/৭০১; সূরা আল-বাকারার ২৭১ নং আয়াতের তাফসীর ] [ ২ ] তারপর আল্লাহ্ তা’আলা সালাত কায়েম করতে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করাকে দ্রুত করতে বলেছে। [ ইবন কাসীর ] কারণ, কখন কিয়ামত এসে যায় তখন আর তারা এগুলো করতে সক্ষম হবে না। কারণ সেদিন কোন লেন-দেনের মাধ্যমে নিজের আযাবকে অন্যের কাছে স্থানান্তর করতে পারবে না। অনুরূপভাবে সেদিন কোন বন্ধুও তার জন্য কিছু দিতে পারবে না। [ সা’দী ] অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা তা আরো স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেনঃ “ হে মু’মিনগণ! আমি যা তোমাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তোমরা ব্যয় কর সেদিন আসার আগে, যেদিন কেনা-বেচা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না এবং কাফিররাই যালিম ।” [ সূরা আল-বাকারাহঃ ২৫৪ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করা, তার হক মেনে নেয়া এবং তাঁর সৃষ্ট জীবের প্রতি ইহসান ও সৎ ব্যবহার করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি হুকুম করছেন যে, তারা যেন নামায কায়েম করে যা হচ্ছে এক ও অংশী বিহীন আল্লাহর ইবাদত এবং তারা যেন অবশ্যই আত্মীয় ও অনাত্মীয় সকলকেই যাকাত ( এর মাল ) দিতে থাকে। নামায কায়েম করা দ্বারা সময় সীমা, বিনয় এবং রূক ও সিজদার হিফাযত করা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর দেয়া সম্পদ হতে তাঁর পথে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু কিছু অবশ্যই ব্যয় করতে হবে, যাতে এমন এক দিনে মুক্তি লাভ করা যায় যেই দিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব-ভালবাসা কিছুই থাকবে না। সেদিন কেউ মুক্তিপণ দিয়ে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে চাইলে তা মোটেই সম্ভব হবে না। ওটা হচ্ছে কিয়ামতের দিন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আজ তোমাদের ও কাফিরদের নিকট থেকে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না ।” ( ৫৭:১৫ ) সেই দিন থাকবেনা বন্ধুত্ব এই উক্তি সম্পর্কে ইমাম ইবনু জারীর ( রঃ ) বলেন যে, সেখানে কোন বন্ধুর বন্ধুত্বের কারণে কেউ মুক্তি পাবে না, বরং সেদিন ন্যায় বিচারই করা হবে।( আরবি ) শব্দটি ( আরবি ) বা ক্রিয়ামূল। যেমন উক্তিকারীর উক্তিঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আমি তার সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছি, সুতরাং আমি তার সাথে উত্তমরূপে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছি । ইমরুল কায়েসের কবিতায় রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ-অশ্লীলতার ভয়ে আমি তাদের থেকে প্রবৃত্তিকে ফিরিয়ে নিয়েছি, আর আমি বন্ধুত্ব ও শত্রুতার লক্ষ্য স্থল নই। অর্থাৎ-আমি এমন কাজ করি না। যাতে বন্ধু খুশী হয় এবং শত্রু দুঃখিত হয়।”কাতাদা ( রঃ ) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা জানেন যে, দুনিয়ায় ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব-ভালবাসা চলে থাকে। দুনিয়ায় তারা পরস্পর বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে থাকে। সুতরাং মানুষের দেখা উচিত যে, সে কোন লোকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে এবং কিসের উপর ভিত্তি করে করছে। যদি এটা আল্লাহর জন্যে হয় তবে যেন এটা স্থায়ীভাবে রাখে। আর যদি গায়রুল্লাহর জন্যে হয় তবে যেন তা ছিন্ন করে। আমি ( ইবনু জারীর (রঃ ) বলিঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ “ আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, সেখানে ক্রয়-বিক্রয় ও মুক্তিপণ কারো কোন উপকারে আসবে না । সেদিন যদি কেউ পৃথিবীপূর্ণ সোনাও মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চায় তবুও তা গৃহীত হবে না। সেদিন কারো বন্ধুত্ব কোন উপকারে আসবে না এবং কারো সুপারিশও কোন কাজে লাগবে যদি কাফির অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাৎ করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ তোমরা এমন দিনকে ভয় কর যেই দিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না, কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, সুপারিশ কোন কাজে লাগবে না এবং সাহায্যকৃত হবে না ।” ( ২:১২৩ ) আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যে জীবিকা দান করেছি তা থেকে ( আমার পথে ) খরচ কর এমন দিন আসার পূর্বে যেই দিন ক্রয় বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না, আর কাফিররাই হচ্ছে অত্যাচারী।” ( ২৪:২৫৪ )
সূরা ইবরাহীম আয়াত 31 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- চতুস্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে তোমাদের জন্যে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। অতঃপর এগুলোকে পৌছাতে হবে মুক্ত গৃহ
- যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোন নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে
- আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের জন্যে নূহ-পত্নী ও লূত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ
- এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সেসব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে। বলুন,
- সামুদ সম্প্রদায় অবাধ্যতা বশতঃ মিথ্যারোপ করেছিল।
- যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে
- আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের
- এবং মূসা বললেনঃ তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি কুফরী কর, তথাপি আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, যাবতীয় গুনের
- বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, অতএব
- কিছুক্ষণ পড়েই হুদ এসে বলল, আপনি যা অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি। আমি আপনার
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ইবরাহীম ডাউনলোড করুন:
সূরা Ibrahim mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ibrahim শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers