কোরান সূরা নূর আয়াত 31 তাফসীর
﴿وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
[ النور: 31]
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সূরা নূর: 31]
Surah An-Nur in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah An Nur ayat 31
আর মুমিন নারীদের বলো যে তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে, আর তাদের আঙ্গিক কর্তব্যাবলীর হেফাজত করে, আর তাদের অঙ্গশোভা যেন প্রদর্শন না করে শুধু তার মধ্যে যা প্রকাশ হয়ে থাকে তা ভিন্ন, আর যেন তারা তাদের মাথার কাপড় দিয়ে তাদের বুকের উপরটা ঢেকে রাখে, আর তারা যেন তাদের শোভা-সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না শুধু তাদের স্বামীদের অথবা তাদের পিতাদের অথবা তাদের শ্বশুরদের অথবা তাদের পুত্রদের অথবা তাদের সৎপুত্রদের অথবা তাদের ভাইদের অথবা তাদের ভ্রাতুস্পুত্রদের অথবা তাদের ভাগনেদের অথবা তাদের পরিচারিকাদের অথবা তাদের ডান হাত যাদের ধরে রেখেছে, অথবা পুরুষ চাকর-নকর যাদের কাম-লালসা নেই, অথবা ছেলেপিলেদের যাদের নারীদের গোপন অঙ্গ সন্বন্ধে জ্ঞানবোধ হয় নি, এমন লোকদের ভিন্ন, আর তাদের পা দিয়ে যেন তারা আঘাত না করে যাতে তাদের অলংকারের যা লুকিয়ে আছে তা জানানো যায়। আর হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহ্র দিকে ফেরো যেন তোমাদের সফলতা অর্জন হয়।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩১. আপনি মু’মিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন গুপ্তস্থানের প্রতি অবৈধ দৃষ্টি দেয়া থেকে নিজেদের চোখগুলোকে বিরত রাখে। আর যেন তারা পর্দা ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোকে হিফাযত করে। উপরন্তু তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্যকে বেগানা পুরুষের সামনে প্রকাশ না করে। তবে যা সাধারণভাবে প্রকাশ্যে থাকে এবং যা লুকানো সম্ভবপর নয় -যেমন: কাপড়- তাহলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। আর যেন তারা নিজেদের কাপড়ের উপরিভাগের খোলা জায়গাগুলো তথা তাদের চুল, চেহারা ও গাড়ের অংশটুকু পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয়। উপরন্তু তারা যেন নিজেদের লুক্কায়িত সৌন্দর্য কেবল তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের জন্য নিরাপদ মহিলা, চাই তারা মুসলমান হোক অথবা কাফির, নিজেদের অধীন দাস-দাসী, যৌন কামনামুক্ত অধীনস্থ পুরুষ অথবা যে বাচ্চা ছোট হওয়ার দরুন নরীদের সতর সম্পর্কে অজ্ঞ তার জন্য প্রকাশ করে। আর যেন তারা নিজেদের লুক্কায়িত সৌন্দর্য তথা পায়ের খাড়– এবং এর ন্যায় কোন অলঙ্কার সম্পর্কে অন্যকে জানান দেয়ার জন্য নিজেদের পাযুগল সজোরে ক্ষেপণ না করে। হে মু’মিনরা! তোমরা হারাম দৃষ্টি ইত্যাদির জন্য সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো। যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে এবং তোমরা আশঙ্কিত বস্তু থেকে নাজাত পেতে পারো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
বিশ্বাসী নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে।[১] তারা যা সাধারণতঃ প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত[২] তাদের সৌন্দর্য যেন প্রদর্শন না করে[৩] তারা তাদের বক্ষঃস্থল যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত রাখে।[৪] তারা যেন[৫] তাদের স্বামী,[৬] পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগিনী পুত্র,[৭] তাদের নারীগণ, [৮] নিজ অধিকারভুক্ত দাস,[৯] যৌনকামনা-রহিত পুরুষ[১০] অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক[১১] ব্যতীত কারও নিকট তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন এমন সজোরে পদক্ষেপ না করে, যাতে তাদের গোপন আভরণ প্রকাশ পেয়ে যায়।[১২] হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [১৩] [১] যদিও মহিলারা দৃষ্টি সংযত রাখা ও গুপ্তাঙ্গের হিফাযত করার প্রথম আদেশেই শামিল, যা ব্যাপকভাবে সকল মু'মিনদেরকে দেওয়া হয়েছে; যেহেতু মু'মিন মহিলারাও ব্যাপকার্থে মু'মিনদেরই অন্তর্ভুক্ত। তবুও এখানে বিষয়টির গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিশেষভাবে মহিলাদেরকেও দ্বিতীয়বার সেই একই আদেশ দেওয়া হচ্ছে। যার উদ্দেশ্য হল তাকীদ ও গুরুত্ব আরোপ। এখান হতে কিছু উলামাগণ দলীল গ্রহণ করে বলেছেন যে, যেরূপ পুরুষদের জন্য বেগানা মহিলাদেরকে তাকিয়ে দেখা নিষিদ্ধ, অনুরূপ মহিলাদের জন্যও বেগানা পুরুষদেরকে তাকিয়ে দেখা ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে অন্য কিছু উলামা সেই হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করে মহিলাদের জন্য পুরুষদেরকে নিষ্কাম দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা বৈধ বলেছেন, যে হাদীসে আয়েশা ( রাঃ )-এর হাবশীদের খেলা দেখার বর্ণনা রয়েছে। ( বুখারীঃ নামায অধ্যায় ) [২] 'যা সাধারণতঃ প্রকাশ থাকে' বলতে এমন সৌন্দর্য ( বাহ্যিক আভরণ ) বা দেহের অংশকে বুঝানো হয়েছে যা পর্দা বা গোপন করা অসম্ভব। যেমন কোন জিনিস নিতে বা দিতে গিয়ে হাতের করতল, অথবা কিছু দেখতে গিয়ে চোখ গোপন করা সহজ নয়। অনুরূপভাবে হাতের মেহেন্দী, আঙ্গুলের আংটি, চোখের সুর্মা, কাজল, অথবা পরিহিত সৌন্দর্যময় পোশাককে ঢাকার জন্য যে বোরকা বা চাদর ব্যবহার করা হয়, তাও এক প্রকার সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত; যা গোপন করা অসম্ভব। অতএব এই সব আভরণের প্রকাশ প্রয়োজন মত দরকার সময়ে বৈধ। [৩] সৌন্দর্য বলতে এমন পোশাক ও অলংকার বোঝায় যা মহিলারা নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করে থাকে। যে সৌন্দর্য একমাত্র স্বামীদের জন্য ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং নারীর পোশাক ও অলংকারের সৌন্দর্য প্রকাশ যদি অন্য পুরুষের সামনে নিষিদ্ধ হয়, তাহলে দেহের কোন অংশ খুলে প্রদর্শন করা ইসলামে কেমন করে অনুমতি থাকতে পারে? এ তো অধিকরূপে হারাম তথা নিষিদ্ধ হবে। [৪] যাতে মাথা ঘাড়, গলা ও বুকের পর্দা হয়ে যায়। কারণ এ সমস্ত অঙ্গ খুলে রাখার অনুমতি নেই। [৫] এখানে সেই সৌন্দর্য বা প্রসাধন এগানা পুরুষদের সামনে প্রকাশ করা বৈধ বলা হচ্ছে, যা ইতিপূর্বে বেগানা পুরুষদের সামনে প্রকাশ করা নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পোশাক, অলংকার ও প্রসাধন ইত্যাদির সৌন্দর্য যা চাদর বা বোরকার নিচে গুপ্ত থাকে। এখানে এ মর্মে ব্যতিক্রমধর্মী বর্ণনা এসেছে যে, অমুক অমুক ব্যক্তির সামনে প্রকাশ করা বৈধ হবে। [৬] এদের মধ্যে সবার শীর্ষে হল স্বামী। সেই জন্য স্বামীকে সবার আগে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ স্ত্রীর সকল শোভা- সৌন্দর্য একমাত্র স্বামীর জন্যই নির্দিষ্ট। আর স্বামীর জন্য স্ত্রীর সারা দেহ ( দেখা ও ছোঁয়া ) বৈধ। ( যেহেতু স্বামী-স্ত্রী একে অপরের লেবাস। ) এ ছাড়া মাহরাম ( এগানা; যাদের সঙ্গে চিরতরে বিবাহ হারাম ) অথবা ঘরে যাদের আসা-যাওয়া সব সময় হয়ে থাকে এবং নৈকট্য বা আত্মীয়তার কারণে বা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে নারীর প্রতি তাদের সকাম এমন আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না, যার ফলে কোন ফিতনা ( বা অঘটন ) ঘটার আশঙ্কা থাকে, শরীয়তে সেই সমস্ত লোকদের সামনে এবং এগানা পুরুষদের সামনে সৌন্দর্য প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে মামা ও চাচার কথা উল্লেখ হয়নি। অধিকাংশ উলামাগণের নিকট এরাও মাহরাম বা এগানার অন্তর্ভুক্ত। এদের সামনেও সৌন্দর্য প্রদর্শন মহিলার জন্য বৈধ। পক্ষান্তরে কিছু উলামার নিকট এরা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত নয়। ( ফাতহুল কাদীর ) [৭] পিতা বলতে বাপ, দাদা, দাদার বাপ এবং তার ঊর্ধ্বে, নানা ও নানার বাপ এবং তার ঊর্ধ্বের সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ শ্বশুর বলতে শ্বশুরের বাপ, দাদা এবং তার ঊর্ধ্বে সকলেই শামিল। পুত্র বলতে বেটা, পোতা, পোতার বেটা, নাতী নাতীর বেটা এবং এদের নিম্নের সকলেই শামিল। স্বামীর পুত্র বলতেও তার ( অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত ) বেটা, পোতা এবং তার নিম্নের সকলেই শামিল। ভ্রাতা বলতে সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় তিন প্রকারের ভাইকেই বুঝানো হয়েছে। ভ্রাতুষ্পুত্র বলতে ভাইপো বা ভাতিজা ও তাদের নিম্নের সকল পুরুষকে এবং ভগিনী পুত্র বলতে সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় তিন প্রকার বোনের বেটা ( ভাগ্নে ) ও তাদের নিম্নের সকল পুরুষকে বুঝানো হয়েছে। [৮] 'তাদের নারীগণ' বলতে মুসলিম মহিলাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে যে, তারা যেন কোন মহিলার শোভা-সৌন্দর্য, রূপ-লাবণ্য, দৈহিক আকার-আকৃতি নিজেদের স্বামীর কাছে বর্ণনা না করে। এ ছাড়া যে কোন কাফের মহিলার সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা নিষেধ। এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন উমার, আব্দুল্লাহ বিন আববাস ( রাঃ ), মুজাহিদ এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ( রঃ )। কেউ কেউ বলেন, এখানে 'তাদের নারীগণ' বলতে বিশেষ ধরনের নারীদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা খিদমত ইত্যাদির জন্য সর্বদা কাছে থাকে, আর তার মধ্যে বাঁদী-দাসীও শামিল। ( এদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করায় দোষ নেই। ) [৯] مَا ملَكَتْ أِيمَانُهُنَّ ( তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে ) বলতে কেউ কেউ শুধু ক্রীতদাসী এবং কেউ কেউ শুধুমাত্র ক্রীতদাস অর্থ নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ উভয়কেই বুঝিয়েছেন। হাদীসেও পরিষ্কার এসেছে যে, ক্রীতদাসদের সামনে পর্দার প্রয়োজন নেই। ( আবু দাউদঃ পরিচ্ছদ অধ্যায় ) অনুরূপভাবে কেউ কেউ তার ব্যাপক অর্থ নিয়ে বলেছেন, তাতে মু'মিন ও কাফের উভয় প্রকার ক্রীতদাস শামিল। [১০] কেউ কেউ এ থেকে এমন সব পুরুষ অর্থ নিয়েছেন, যাদের ঘরে থেকে খাওয়া-পান করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না। আবার কেউ নির্বোধ, কেউ হিজড়া, খাসি করা বা ধ্বজভঙ্গ, কেউ অতিবৃদ্ধ অর্থ নিয়েছেন। ইমাম শাওকানী ( রঃ ) বলেন, যাদের মধ্যে কুরআনে বর্ণিত গুণ পাওয়া যাবে, তারা এর পর্যায়ভুক্ত এবং অন্যেরা বহির্ভূত হবে। [১১] এ থেকে এমন সব বালককে বুঝানো হয়েছে যারা সাবালক বা সাবালকত্বের নিকটবর্তী নয়। কারণ এরা মেয়েদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয়। [১২] গোপন আভরণ বা অলঙ্কার প্রকাশ পেয়ে অর্থাৎ, পায়ের নূপুরের শব্দে পুরুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট না হয়। হাই-হিল বা এমন শক্ত জুতা-চপ্পলও এই নির্দেশের শামিল। যেহেতু মহিলারা যখন এসব পরিধান করে চলা-ফিরা করে, তখন তাতে এক ধরনের এমন শব্দ সৃষ্টি হয়, যা আকর্ষণে নূপুরের শব্দের তুলনায় কম নয়। অনুরূপ হাদীসে এসেছে যে, সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হওয়া মহিলার জন্য বৈধ নয়। যে এ রকম করে, সে ব্যভিচারিণী। ( তিরমিযীঃ অনুমতি অধ্যায়, আবু দাউদঃ চুল আঁচড়ানো অধ্যায়। ) [১৩] এখানে পর্দার আদেশের পরপর তওবার আদেশ দেওয়ার মধ্যে যুক্তি হল যে, অজ্ঞতার যুগে এই সমস্ত আদেশের যে বিরোধিতা তোমরা করতে তা যেহেতু ইসলাম আসার পূর্বের কথা, সেহেতু তোমরা যদি সত্য অন্তরে তওবা করে নাও এবং উক্ত আদেশের সঠিক বাস্তবায়ন কর, তাহলে সফলতা, ইহ ও পরকালের সৌভাগ্য একমাত্র তোমাদের।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে [ ১ ] এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে [ ২ ]; আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য [ ৩ ] প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে [ ৪ ]। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে [ ৫ ]। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা [ ৬ ], তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা- রহিত পুরুষ [ ৭ ] এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক [ ৮ ] ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে [ ৯ ]। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্র দিকে ফিরে আস [ ১০ ], যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ [ ১ ] এ দীর্ঘ আয়াতের সূচনাভাগে সেই বিধানই বর্ণিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আয়াতে পুরুষদের জন্য ব্যক্ত হয়েছে। অর্থাৎ তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে তথা দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। পুরুষদের বিধানে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু জোর দেয়ার জন্য তাদের কথা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। [ কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর ] অনেক আলেমের মতেঃ নারীদের জন্য মাহরাম নয়, এমন পুরুষের প্রতি দেখা সর্বাবস্থায় হারাম; কামভাব সহকারে বদ নিয়তে দেখুক অথবা এ ছাড়াই দেখুক। [ ইবন কাসীর ] তার প্রমাণ উম্মে সালমা বর্ণিত হাদীস যাতে বলা হয়েছেঃ ‘একদিন উম্মে-সালমা ও মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা উভয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। হঠাৎ অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম তথায় আগমন করলেন। এই ঘটনার সময়-কাল ছিল পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে পর্দা করতে আদেশ করলেন। উম্মে-সালমা বললেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল, সে তো অন্ধ, সে আমাদেরকে দেখতে পাবে না এবং আমাদেরকে চেনেও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো অন্ধ নও, তোমরা তাকে দেখছ। [ তিরমিযীঃ ২৭৭৮, আবু দাউদঃ ৪১১২ ] তবে হাদীসটির সনদ দূর্বল। অপর কয়েকজন ফেকাহবিদ বলেনঃ কামভাব ব্যতীত বেগানা পুরুষকে দেখা নারীর জন্য দোষনীয় নয়। তাদের প্রমাণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস, যাতে বলা হয়েছেঃ একবার ঈদের দিন মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় কিছু সংখ্যক হাবশী যুবক সামরিক কুচকাওয়াজ করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কুচকাওয়াজ নিরিক্ষণ করতে থাকেন এবং তার আড়ালে দাঁড়িয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাও এই কুচকাওয়াজ উপভোগ করতে থাকেন এবং নিজে অতিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত দেখে যান। [ বুখারীঃ ৪৫৫, মুসলিমঃ ৭৯২ ] [ ২ ] অর্থাৎ তারা যেন অবৈধ যৌন উপভোগ থেকে দূরে থাকে এবং নিজের সতর অন্যের সামনে উন্মুক্ত করাও পরিহার করে। [ তাবারী, ইবন কাসীর ] হাদীসে এসেছে, “ মহিলা হলো আওরত তথা গোপণীয় বিষয়” [ তিরমিযীঃ ১১৭৩, সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৫৫৯৯, সহীহ ইবনে খুযাইমাহঃ ১৬৮৫ ] পুরুষদের জন্য মেয়েদের সতর তার সারা শরীর । স্বামী ছাড়া অন্য কোন-পুরুষ এমন কি বাপ ও ভাইয়ের সামনেও তা খোলা উচিত নয়। মেয়েদের এমন পাতলা বা চোস্ত পোশাক পরা উচিত নয় যার মধ্য দিয়ে শরীর দেখা যায় বা শরীরের গঠন কাঠামো ভেতর থেকে ফুটে উঠতে থাকে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বৰ্ণনা করেন, তার বোন আসমা বিনতে আবু বকর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে আসেন। তখন তিনি পাতলা কাপড় পরে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংগে সংগেই মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেনঃ ‘‘হে আসমা! কোন মেয়ে যখন বালেগ হয়ে যায় তখন তার এটা ও ওটা ছাড়া শরীরের কোন অংশ দেখা যাওয়া জায়েয নয়।” বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাতের কব্জি ও চেহারার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। [ আবু দাউদঃ ৪১০৪ ] [ ৩ ] আয়াতের অর্থ এই যে, মুহরিম ব্যতিত সাজ-সজ্জার স্থানসমূহ প্রকাশ না করা মহিলাদের উপর ওয়াজিব। [ তাবারী, বাগভী ] [ ৪ ] আয়াতে পর্দার বিধানের কয়েকটি ব্যতিক্রম আলোচনা করা হচ্ছে। প্রথম ব্যতিক্রম হচ্ছে مَاظَهَرَمِنْهَا অর্থাৎ নারীর কোন সাজ-সজ্জার অঙ্গ পুরুষের সামনে প্রকাশ করা বৈধ নয়, অবশ্য সেসব অঙ্গ ব্যতীত, যেগুলো আপনা-আপনি প্ৰকাশ হয়ে পড়ে অর্থাৎ কাজকর্ম ও চলাফেরার সময় সেসব অঙ্গ স্বভাবতঃ খুলেই যায়। এগুলো ব্যতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো প্ৰকাশ করার মধ্যে কোন গোনাহ নেই। এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের তাফসীর দু’ধরনের। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ مَاظَهَرَمِنْهَا বাক্যে উপরের কাপড়; যেমন বোরকা, লম্বা চাদর ইত্যাদিকে ব্যতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো সাজ-সজ্জার পোশাককে আবৃত রাখার জন্য পরিধান করা হয়। আয়াতের অর্থ এই যে, প্রয়োজনবশতঃ বাইরে যাওয়ার সময় যেসব উপরের কাপড় আবৃত করা সম্ভবপর নয়, সেগুলো ব্যতীত সাজ-সজ্জার কোন বস্তু প্ৰকাশ করা জায়েয নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাও বলেনঃ এখানে প্রকাশ্য সৌন্দর্য বলতে চেহারা, চোখের সুরমা, হাতের মেহেদী বা রঙ এবং আংটি। সুতরাং এগুলো সে তার ঘরে যে সমস্ত মানুষ তার কাছে প্ৰবেশ করার অনুমতি আছে, তাদের সামনে প্ৰকাশ করবে। কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ নারীর আসল বিধান এই যে, সে তার সাজ-সজ্জার কোন কিছুই প্ৰকাশ করবে না। আয়াতের উদ্দেশ্যও তাই। তবে চলাফেরা ও কাজকর্মে স্বভাবতঃ যেগুলো খুলে যায়, সেগুলো অপারগতার কারণে গোনাহ থেকে মুক্ত। নারী কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হলে বোরকা, চাদর ইত্যাদি প্রকাশ হয়ে পড়া সুনির্দিষ্ট। লেন-দেনের প্রয়োজনে কোন সময় মুখমণ্ডল ও হাতের তালুও প্রকাশ হয়ে পড়ে। এটাও ক্ষমার্হ- গোনাহ নয়। পক্ষান্তরে কোন কোন মুফাসসির اِلَّامَاظَهَرَمِنْهَا এর অর্থ নিয়েছেনঃ “ মানুষ স্বাভাবিকভাবে যা প্ৰকাশ করে দেয়” এবং তারপর তারা এর মধ্যে শামিল করে দিয়েছেন মুখ ও হাতকে তাদের সমস্ত সাজসজ্জাসহ । [ দেখুন-তাবারী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর, সহীহ আল-মাসবুর ] [ ৫ ] অর্থাৎ তারা যেন বক্ষদেশে ওড়না ফেলে রাখে। خُمُر শব্দটি خمار এর বহুবচন। অর্থ ঐ কাপড়, যা নারী মাথায় ব্যবহার করে এবং তা দ্বারা গলা ও বক্ষ আবৃত হয়ে যায়। خيوب শব্দটি خيب এর বহুবচন- এর অর্থ জামার কলার। [ কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর ] জাহেলী যুগে মহিলারা মাথায় এক ধরনের আঁটসাঁট বাঁধন দিতো। মাথার পেছনে চুলের খোঁপার সাথে এর গিরো বাঁধা থাকতো। সামনের দিকে বুকের একটি অংশ খোলা থাকতো। সেখানে গলা ও বুকের উপরের দিকের অংশটি পরিষ্কার দেখা যেতো। বুকে জামা ছাড়া আর কিছুই থাকতো না। পেছনের দিকে দুটো তিনটে খোঁপা দেখা যেতো। তাই মুসলিম নারীদেরকে আদেশ করা হয়েছে তারা যেন এরূপ না করে; বরং ওড়নার উভয় প্রান্ত পরস্পর উল্টিয়ে রাখে, এতে করে যেন সকল অঙ্গ আবৃত হয়ে পড়ে। [ ইবন কাসীর ] আয়াত নাযিল হবার পর মুসলিম মহিলাদের মধ্যে ওড়নার প্রচলন করা হয়। মু’মিন মহিলারা কুরআনের এ হুকুমটি শোনার সাথে সাথে যেভাবে একে কার্যকর করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার প্রশংসা করে বলেনঃ সূরা নূর নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে وَلْيَضْرِبْنَ جِخُمُرِهِنَّ عَلىٰ جُيُوْبِهِنَّ বাক্যাংশ শোনার পর তারা নিজের কোমরে বাঁধা কাপড় খুলে নিয়ে আবার অনেকে চাদর তুলে নিয়ে সংগে সংগেই ওড়না বানিয়ে ফেলল এবং তা দিয়ে শরীর ঢেকে ফেললো। [ বুখারীঃ ৪৭৫৯ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, যখন وَلْيَضْرِبْنَ جِخُمُرِهِنَّ عَلىٰ جُيُوْبِهِنَّ এ আয়াত নাযিল হলো, তখন তাদের মাথা এমনভাবে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলল মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর কাক রয়েছে। [ আবু দাউদঃ ৪১০১ ] এ সম্পর্কিত অন্য একটি হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আরো বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেনঃ আল্লাহ্ প্রথম যুগের মুহাজির মহিলাদের উপর রহমত নাযিল করুন তারা وَلْيَضْرِبْنَ جِخُمُرِهِنَّ عَلىٰ جُيُوْبِهِنَّ নাযিল হওয়ার পরে পাতলা কাপড় পরিত্যাগ করে নিজেদের মোটা কাপড় বাছাই করে তা দিয়ে ওড়না তৈরী করে। [ আবু দাউদঃ ৪১০২ ] [ ৬ ] পর্দার বিধান থেকে পরবর্তী ব্যতিক্রম হলো আল্লাহ্র বাণীঃ اَوْنِسَآىِٕهِنَّ অর্থাৎ নিজেদের স্ত্রীলোক; এর উদ্দেশ্য মুসলিম স্ত্রীলোক। তাদের সামনেও এমনসব অঙ্গ খোলা যায়, যেগুলো নিজ পিতা ও পুত্রের সামনে খোলা যায়। [ ইবন কাসীর ] তবে আয়াতে ‘তাদের নিজেদের স্ত্রীলোক’ বলা থেকে জানা গেল যে, কাফের মুশরিক স্ত্রীলোকরা পর্দার হুকুমের ব্যতিক্রম নয়। তাদের সাথে পর্দা করা প্রয়োজন। তারা বেগানা পুরুষদের বিধানের অন্তর্ভুক্ত। এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেনঃ এ থেকে জানা গেল যে, কাফের নারীদের সামনে অঙ্গ প্রকাশ করা কোন মুসলিম নারীর জন্য জায়েয নয়। কিন্তু সহীহ হাদীসসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের সামনে কাফের নারীদের যাতায়াত প্রমাণিত আছে। তাই এ প্রশ্নে মুজতাহিদ ইমামগণের মধ্যে মতভেদ বিদ্যমান। কারো মতে কাফের নারী বেগানা পুরুষদের মত। কেউ কেউ এ ব্যাপারে মুসলিম ও কাফের উভয় প্রকার নারীর একই বিধান রেখেছেন; অর্থাৎ তাদের কাছে পর্দা করতে হবে না । [ দেখুন-বাগভী, ফাতহুল কাদীর ] ( ৭ ) একাদশ প্রকার اَوِالتّٰبِعِيْنَ عَيْرِاوُلىِ الْاِرْبَةِمِنَ الرِّجِالِ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ এখানে এমন নির্বোধ ও ইন্দ্রিয়বিকল ধরনের লোকদের বুঝানো হয়েছে, যাদের নারী জাতির প্রতি কোন আগ্রহ ও ঔৎসুক্যই নেই। ইবনে জরীর তাবারী একই বিষয়বস্তুই আবু আব্দুল্লাহ, ইবনে জুবায়র, ইবনে আতিয়্যা প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেছেন। কাজেই আয়াতে এমনসব পুরুষকে বুঝানো হয়েছে, যাদের মধ্যে নারীদের প্রতি কোন আগ্রহ ও কামভাব নেই এবং নারীদের রূপ-গুণের প্রতিও তাদের কোন ঔৎসুক্য নেই যে, অপরের কাছে গিয়ে বর্ণনা করবে। তবে নপুংসক ধরনের লোক যারা নারীদের বিশেষ গুণাবলীর সাথে সম্পর্ক রাখে, তাদের কাছেও পর্দা করা ওয়াজিব। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বর্ণিত হাদীসে আছে, জনৈক খুনসা বা হিজড়া ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের কাছে আসা-যাওয়া করত। রাসূলের স্ত্রীগণ তাকে আয়াতে বর্ণিত عَيْرِاوُلىِ الْاِرْبَةِمِنَ الرِّجِالِ এর অন্তর্ভুক্ত মনে করে তার সামনে আগমন করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে গৃহে প্রবেশ করতে নিষেধ করে দিলেন। [ দেখুন, মুসলিমঃ ২১৮০ ] এ কারণেই কোন কোন আলেম বলেনঃ পুরুষ যদিও পুরুষত্বহীন, লিঙ্গকর্তিত অথবা খুব বেশী বৃদ্ধ হয়, তবুও সে عَيْرِاوُلىِ الْاِرْبَةِ শব্দের অন্তর্ভুক্ত নয়। তার কাছে পর্দা করা ওয়াজিব। এখানে عَيْرِاوُلىِ الْاِرْبَةِ শব্দের সাথে اَوِالتّٰبِعِيْنَ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, নির্বোধ ইন্দ্রিয়বিকল লোক, যারা অনাহূত গৃহে ঢুকে পড়ে, তারা ব্যতিক্রমভুক্ত। [ দেখুন-তাবারী, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর ] ( ৮ ) দ্বাদশ প্রকার اَوِلطِّفْلِ এখানে এমন অপ্রাপ্তবয়স্ক বালককে বুঝানো হয়েছে, যে এখনো সাবালকত্বের নিকটবর্তীও হয়নি এবং নারীদের বিশেষ আকর্ষণ, কমনীয়তা ও গতিবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর। যে বালক এসব অবস্থা সম্পর্কে সচেতন, সে ‘মোরাহিক' অর্থাৎ সাবালকত্বের নিকটবর্তী। তার কাছে পর্দা করা ওয়াজিব। [ ইবন কাসীর ] ( ৯ ) অর্থাৎ নারীরা যেন সজোরে পদক্ষেপ না করে, যার দরুন অলঙ্কারাদির আওয়াজ ভেসে উঠে এবং তাদের বিশেষ সাজ-সজ্জা পুরুষদের কাছে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। [ ফাতহুল কাদীর ]। এখানে মূল উদ্দেশ্য নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গাদি ও সেগুলোর সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ার যাবতীয় বস্তুই নিষেধ করা। অনুরূপভাবে দৃষ্টি ছাড়া অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলোকে উত্তেজিতকারী জিনিসগুলোও আল্লাহ্ তা‘আলা মহিলাদেরকে যে উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যের প্রকাশনী করতে নিষেধ করেছেন তার বিরোধী। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে খোশবু লাগিয়ে বাইরে বের না হবার হুকুম দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “ আল্লাহ্র দাসীদেরকে আল্লাহ্র মসজিদে আসতে নিষেধ করো না । কিন্তু তারা যেন খোশবু লাগিয়ে না আসে।” [ আবু দাউদঃ ৫৬৫, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৪৩৮ ] অন্য একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “ যে মেয়ে মসজিদে খোশবু মেখে আসে তার সালাত ততক্ষণ কবুল হয় না যতক্ষণ না সে বাড়ি ফিরে ফরয গোসলের মত গোসল করে ।” [ আবু দাউদঃ ৪১৭৪, ইবনে মাজাহঃ ৪০০২, মুসনাদে আহমাদঃ ২/২৪৬ ] আবু মূসা আশআরী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “ যে নারী আন্তর মেখে পথ দিয়ে যায়, যাতে লোকেরা তার সুবাসে বিমোহিত হয়, সে এমন ও এমন । তিনি তার জন্য খুবই কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছেন।” [ আবু দাউদঃ ৪১৭৩, মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৪০০ ]। তদ্রুপ নারীরা প্রয়োজন ছাড়া নিজেদের আওয়াজ পুরুষদেরকে শোনাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও অপছন্দ করতেন। প্রয়োজনে কথা বলার অনুমতি কুরআনেই দেয়া হয়েছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্ৰ স্ত্রীগণ নিজেরাই লোকদেরকে দ্বীনী মাসায়েল বর্ণনা করতেন। কিন্তু যেখানে এর কোন প্রয়োজন নেই এবং কোন দ্বীনী বা নৈতিক লাভও নেই সেখানে মহিলারা নিজেদের আওয়াজ ভিন্ পুরুষদেরকে শুনাবে এটা পছন্দ করা হয়নি। কাজেই সালাতে যদি ইমাম ভুলে যান তাহলে পুরুষদেরকে সুবহানাল্লাহ বলার হুকুম দেয়া হয়েছে কিন্তু মেয়েদেরকে এক হাতের উপর অন্য হাত মেরে ইমামকে সতর্ক করে দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [ দেখুন, বুখারীঃ ১২০৩, মুসলিমঃ ৪২১, ৪২২ ]। ( ১০ ) অর্থাৎ মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহ্র কাছে তাওবাহ কর। [ কুরতুবী ] হাদীসে এসেছে, তাওবাহ হলো, অনুতপ্ত হওয়া, অনুশোচনা করা, [ ইবনে মাজাহঃ ৪২৫২ ] এ বিধানগুলো নাযিল হবার পর কুরআনের মর্মবাণী অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামী সমাজে অন্য যেসব সংস্কারমূলক বিধানের প্রচলন করেন তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হচ্ছেঃ একঃ মাহরাম আত্মীয়ের অনুপস্থিতিতে অন্য লোকেরা ( আত্মীয় হলেও ) কোন মেয়ের সাথে একাকী সাক্ষাত করতে ও তার কাছে নির্জনে বসতে পারে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ যেসব নারীর স্বামী বাইরে গেছে তাদের কাছে যেয়ো না । কারণ শয়তান তোমাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের রক্ত ধারায় আবর্তন করছে।” [ তিরমিযীঃ ১১৭২ ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কখনো কোন মেয়ের সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ না করে যতক্ষণ না ঐ মেয়ের কোন মাহরাম তার সাথে থাকে । কারণ সে সময় তৃতীয়জন থাকে শয়তান।” [ মুসনাদে আহমাদঃ ১/১৮ ] দুইঃ কোন পুরুষের হাত কোন গায়ের মাহরাম মেয়ের গায়ে লাগুক এটাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধ করেননি। তাই তিনি পুরুষদের হাতে হাত রেখে বাই‘আত করতেন। কিন্তু মেয়েদের বাই‘আত নেবার সময় কখনো এ পদ্ধতি অবলম্বন করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত কখনো কোন ভিন মেয়ের শরীরে লাগেনি । তিনি মেয়েদের থেকে শুধুমাত্ৰ মৌখিক শপথ নিতেন এবং শপথ নেয়া শেষ হলে বলতেন, যাও তোমাদের বাই‘আত হয়ে গেছে।” [ বুখারীঃ ৫২৮৮, মুসলিমঃ ১৮৬৬ ] তিনঃ মেয়েদের মাহরাম ছাড়া একাকী অথবা গায়ের মাহরামের সাথে সফর করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “ কোন পুরুষ যেন মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ না করে যতক্ষণ তার সাথে তার মাহরাম না থাকে এবং কোন মহিলা যেন সফর না করে যতক্ষণ না তার কোন মাহরাম তার সাথে থাকে ।” [ বুখারীঃ ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫২৩৩, মুসলিমঃ ১৩৪১ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
এখানে আল্লাহ তা'আলা ঈমান আনয়নকারিণী নারীদেরকে হুকুম করছেন যাতে মর্যাদাশীল পুরুষদের মনে সান্ত্বনা আসে এবং অজ্ঞতাযুগের জঘন্য প্রথার অবসান ঘটে।বর্ণিত আছে যে, হযরত আসমা বিনতে মুরসিদ ( রাঃ )-এর বাড়ীটি বানু হারিসার মহল্লায় ছিল। তার কাছে স্ত্রীলোকেরা আগমন করতো এবং তখনকার প্রথা অনুযায়ী তাদের পায়ের অলংকারাদি এবং বক্ষ ও চুল খুলে রাখা অবস্থায় আসতো। হযরত আসমা ( রাঃ ) বলেনঃ “ এটা কতই না জঘন্য প্রথা!” ঐ সময় এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় । সুতরাং নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, মুসলমান নারীদেরকেও তাদের চক্ষু নিম্নমুখী তে হবে। স্বামী ছাড়া আর কারো দিকে কাম-দৃষ্টিতে তাকানো চলবে না। অপরিচিত লোকের দিকে তো তাকানোই চলবে না, কাম-দৃষ্টিতেই হোক অথবা এমনিই হোক।হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি এবং হযরত মায়মূনা ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট ছিলেন এমন সময় হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম ( রাঃ ) তথায় আগমন করেন। এটা ছিল পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদেরকে বললেনঃ “ তোমরা পর্দা কর ।” তাঁরা বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! উনি তো অন্ধ লোক । তিনি আমাদেরকে। দেখতেও পাবেন না এবং চিনতেও পারবেন না।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ তোমরা তো অন্ধ নও যে তাকে দেখতে পাবে না?” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) ও ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) তবে কোন কোন আলেম বলেন যে, কাম-দৃষ্টি ছাড়া তাকানো হারাম নয় । তাদের দলীল হলো ঐ হাদীসটি যাতে রয়েছে যে, ঈদের দিন হাবশী লোকেরা অস্ত্রের খেলা দেখাচ্ছিল। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত আয়েশা ( রাঃ )-কে তার পিছনে দাঁড় করিয়ে দেন। তিনি তাদের খেলা দেখছিলেন এবং মনভরে দেখার পর ক্লান্ত হয়ে চলে আসেন। স্ত্রীলোকদেরকেও সতীত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। নিজেদের আভরণ কারো সামনে প্রকাশ করা যাবে না। পর পুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্যের কোন অংশই প্রকাশ করা যাবে না। হ্যা, তবে যেটা ঢেকে রাখা সম্ভব নয় সেটা অন্য কথা। যেমন চাদর ও উপরের কাপড় ইত্যাদি। এগুলোকে গোপন রাখা স্ত্রীলোকের পক্ষে সম্ভব নয়। এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা মুখমণ্ডল, হাতের কজি এবং আংটিকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হতে পারে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ সৌন্দর্যের স্থান যেটা প্রকাশ করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। হযরত আবদুল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে’-এর অর্থ হলোঃ তারা যেন তাদের বালি, হার, পায়ের অলংকার ইত্যাদি প্রদর্শন না করে।বর্ণিত আছে যে, আভরণ অর্থাৎ অলংকার বা আকর্ষণীয় পোশাক দুই প্রকারের রয়েছে। এক তো হলো ওটাই যা শুধু স্বামীই দেখে। যেমন আংটি ও কংকন। আর দ্বিতীয় আভরণ হলো ওটাই যা অপরও দেখে থাকে। যেমন উপরের কাপড়। যুহরী ( রঃ ) বলেন যে, এই আয়াতে যেসব আত্মীয়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাদের সামনে কংকন, দোপাট্টা এবং বালি প্রকাশিত হয়ে গেলে কোন দোষ নেই। আর অপর লোকদের সামনে যদি শুধু আংটি প্রকাশ পায় তবেও কোন দোষ হবে না। অন্য রিওয়াইয়াতে আংটির সাথে পায়ের মলেরও উল্লেখ রয়েছে। হতে পারে যে, ( আরবি )-এর তাফসীর হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) প্রমুখ গুরুজন মুখমণ্ডল এবং হাতের কজি করেছেন। যেমন সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, একদা হযরত আসমা বিনতে আবি বকর ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করেন। ঐ সময় তিনি পাতলা কাপড় পরিহিতা ছিলেন। তাঁকে এভাবে আসতে দেখে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেনঃ “ নারী যখন প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছে যায় তখন ওটা এবং ওটা ছাড়া অর্থাৎ চেহারা ও হাতের কজি ছাড়া তার আর কোন অঙ্গ দেখানো উচিত নয় ।” ( এ হাদীসটি মুরসাল। খালেদ ইবনে দারীক এটা হযরত আয়েশা (রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁর হযরত আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া প্রমাণিত নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা যেন তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। এর ফলে বক্ষ ও গলার অলংকার টাকা থাকবে। অজ্ঞতার যুগে তাদের এ অভ্যাস ছিল না। স্ত্রীলোকেরা তাদের বক্ষের উপর কিছুই দিতো না। মাঝে মাঝে গ্রীবা, চুল, বালি ইত্যাদি সবই পরিষ্কারভাবে দেখা যেতো। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “ হে নবী ( সঃ )! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল- তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়; এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না ।”( আরবি ) শব্দটি ( আরবি ) শব্দের বহুবচন। প্রত্যেক ঐ জিনিসকে ( আরবি ) বলা হয় যা ঢেকে ফেলে। দো-পাট্টা মাথাকে ঢেকে ফেলে বলে ওটাকেও ( আরবি ) বলা হয়। সুতরাং স্ত্রীলোকদের উচিত যে, তারা যেন নিজেদের ওড়না দিয়ে বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে তাদের গ্রীবা ও বক্ষকে আবৃত করে রাখে।হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেনঃ “ আল্লাহ তাআলা ঐ স্ত্রীলোকদের উপর রহম করুন যারা প্রথম প্রথম হিজরত করেছিল । যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন তারা নিজেদের চাদর ফেড়ে দো-পাট্টা বানিয়েছিল। কেউ কেউ নিজের তহবন্দের পা কেটে নিয়ে ওটা দ্বারা মাথা ঢেকে নেয়। একবার স্ত্রীলোকেরা হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর সামনে কুরায়েশ মহিলাদের ফযীলত বর্ণনা করতে শুরু করলে তিনি বলেনঃ “ তাদের ফযীলত আমিও স্বীকার করি । কিন্তু আল্লাহর শপথ! আনসার মহিলাদের অপেক্ষা বেশী ফযীলত আমি কোন মহিলার দেখিনি। তাদের অন্তরে আল্লাহর কিতাবের সত্যতা ও ওর উপর পূর্ণ ঈমান যে রয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। সূরায়ে নূরের আয়াত ( আরবি ) যখন অবতীর্ণ হয় এবং তাদের পুরুষ লোকেরা তাদেরকে এটা শুনিয়ে দেয় তখন ঐ মুহূর্তে তারা ঐ আয়াতের উপর আমল করে। ফজরের নামাযে তারা হাযির হলে দেখা যায় যে, সবারই মাথায় দো-পাট্টা বিদ্যমান রয়েছে। দেখে মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর বালতি রাখা আছে।এরপর আল্লাহ তাআলা ঐ পুরুষ লোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন যাদের সামনে নারীরা থাকতে পারে। খুব সাজসজ্জা ছাড়া লজ্জাবনতা অবস্থায় তাদের সামনে তারা যাতায়াত করতে পারে। যদিও বাহ্যিক কোন আভরণের উপর তাদের দৃষ্টি পড়ে যায় তবে এতে কোন অপরাধ হবে না। তবে স্বামী এর ব্যতিক্রম। কেননা নারী তার সামনে পূর্ণ সাজসজ্জার সাথে থাকতে পারবে। চাচা ও মামার সাথেও বিবাহ নিষিদ্ধ, তথাপি তাদের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নি, এর কারণ এই যে, তারা হয়তো তাদের ছেলেদের সামনে তাদের ভ্রাতুস্পুত্রী ও ভাগিনেয়ীদের সৌন্দর্য বর্ণনা করবে। এজন্যেই তাদের সামনেও দোপাট্টা বাধা ছাড়া আসা উচিত নয়।এ আয়াতে নারীদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমান নারীরা পরস্পরের সামনে নিজেদের আভরণ প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু অমুসলিম নারীর সামনে মুসলিম নারী তার আভরণ প্রকাশ করতে পারে না। এর কারণ এই যে, খুব সম্ভব ঐ অমুসলিম নারীরা তাদের স্বামীদের সামনে ঐ মুসলিম নারীদের সৌন্দর্য বর্ণনা করবে। মুসলিম নারীদের ব্যাপারেও এই আংশকা আছে বটে, কিন্তু শরীয়ত এটা হারাম করে দিয়েছে বলে তারা এরূপ করতে পারে না। কিন্তু অমুসলিম নারীকে এর থেকে বাধা দিবে কিসে?হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কোন নারীর জন্যে বৈধ নয় যে, সে অন্য নারীর সাথে মিলিত হয়ে তার সৌন্দর্যের বর্ণনা তার স্বামীর সামনে এমনভাবে দেয় যেন তার স্বামী ঐ নারীকে স্বয়ং দেখতে রয়েছে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) ও ইমাম মুসলিম ( রঃ ) তাখরীজ করেছেন)হযরত হাসির ইবনে কায়েস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ ) হযরত আবু উবাইদাহ ( রাঃ )-কে লিখেনঃ “ আমি অবগত হয়েছি যে, কোন কোন মুসলিম নারী গোসল খানায় যায় এবং তাদের সাথে মুশরিকা নারীরাও থাকে । কোন মুসলিম নারীর জন্যে বৈধ নয় যে, সে নিজের দেহ কোন অমুসলিম নারীকে প্রদর্শন করে।” ( এটা সাঈদ ইবনে মানসূর (রঃ ) তাঁর সুনানে বর্ণনা করেছেন)হযরত মুজাহিদও ( রাঃ ) ( আরবি )-এর তাফসীরে বলেন যে, এর দ্বারা মুসলিম নারীদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং তাদের সামনে ঐ আভরণ প্রকাশ করা যাবে যা মুহরিম আত্মীয়দের সামনে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ গ্রীবা, বালি এবং হার। অতএব, মুসলিম নারীর জন্যে উলঙ্গ মাথায় মুশরিকা মহিলার সামনে থাকা বৈধ নয়।হযরত আতা ( রঃ ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীগণ যখন বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছেন তখন স্ত্রীদের ধাত্রী তো ইয়াহুদী ও খৃষ্টান মহিলারাই ছিল। যদি এটা প্রমাণিত হয় তবে বুঝতে হবে যে, এটা প্রয়োজন বশতঃ ছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। তবে মুশরিকা নারীদের মধ্যে যারা বাদী বা দাসী তারা এই হুকুম বহির্ভূত। কেউ কেউ বলেন যে, গোলামদেরও হুকুম এটাই।হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত ফাতিমা ( রাঃ )-কে দেয়ার জন্যে একটি গোলামকে নিয়ে তাঁর নিকট আগমন করেন। গোলামটিকে দেখে হযরত ফাতিমা ( রাঃ ) নিজেকে তাঁর দো-পাট্টার মাঝে আবৃত করতে থাকেন। কিন্তু ওটা ছোট ছিল বলে মাথা ঢাকলে পা খোলা থাকছিল এবং পা ঢাকলে মাথা খোলা থাকছিল। এ দেখে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ হে আমার প্রিয় কন্যা! তুমি এতো কষ্ট করছো কেন? আমি তো তোমার আব্বা এবং এতো তোমার গোলাম?” ( এই হাদীসটি ইমাম আবু দাঊদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) ইবনে আসাকির ( রঃ )-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, ঐ গোলামটির নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে মাসআদাহ আল ফাযারী । তার দেহের রঙ ছিল খুবই কালো। হযরত ফাতিমা ( রাঃ ) তাকে লালন-পালন করে আযাদ করে দিয়েছিলেন। সিফফীনের যুদ্ধে সে হযরত মুআবিয়া ( রাঃ )-এর পক্ষ অবলম্বন করেছিল এবং হযরত আলী ( রাঃ )-এর চরম বিরোধী ছিল।হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা স্ত্রীলোকদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “ তোমাদের মধ্যে যার মুকতাব গোলাম রয়েছে, যার সাথে এ শর্ত হয়েছে যে, সে যদি এতো টাকা দিতে পারে তবে সে আযাদ হয়ে যাবে । অতঃপর তার কাছে ঐ পরিমাণ টাকা যোগাড়ও হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় তোমাদের ঐ গোলাম থেকে পর্দা করা উচিত। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন-কামনা রহিত তাদের সামনেও আভরণ প্রকাশ করা যাবে। অর্থাৎ কাজ কামকারী নওকর চাকরদের মধ্যে যাদের পুরুষত্ব নেই, স্ত্রীলোকদের প্রতি কোনই আকর্ষণ নেই তাদের হুকুম মুহরিম আত্মীয় পুরুষদের মতই। অর্থাৎ এসব আভরণ তাদের সামনে প্রকাশ করা চলবে। কিন্তু সেই খোজা, যার মুখের ভাষা খারাপ এবং সদা মন্দ কথা ছড়িয়ে বেড়ায় সে এই হুকুম বহির্ভূত।হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন খোজা লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বাড়ীতে আসে। তার পবিত্র স্ত্রীগণ এই আয়াতের মর্মানুযায়ী লোকটিকে আসতে নিষেধ করেননি। ঘটনাক্রমে ঐ সময়েই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এসে পড়েন। ঐ সময় সে হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ )-এর ভাই হযরত আবদুল্লাহ ( রাঃ )-কে বলছিলঃ “ আল্লাহ তা'আলা যখন তায়েফ জয় করাবেন তখন আমি তোমাকে গায়লানের মেয়ে দেখাবো । সে যখন আসে তখন তার পেটের উপর চারটি ভাঁজ পড়ে এবং যখন ফিরে যায় তখন আটটি ভাঁজ দৃষ্টিগোচর হয়। তার এ কথা শোনা মাত্রই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ সাবধান! এরূপ লোককে কখনো আসতে দিবে না ।” অতঃপর তাকে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সে তখন বায়দা নামক স্থানে বসবাস করতে থাকে। প্রতি শুক্রবারে সে আসতো এবং লোকদের কাছ থেকে পানাহারের কিছু জিনিস নিয়ে চলে যেতো। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের সামনে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যারা এখনো স্ত্রীলোকদের বিশেষ গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। স্ত্রীলোকদের প্রতি যাদের লোলুপ দৃষ্টি এখনো পতিত হয় না। হ্যা, তবে যদি তারা এমন বয়সে পৌছে যায় যে, স্ত্রীলোকদের সুশ্রী হওয়া বা বিশ্রী হওয়ার পার্থক্য তারা বুঝতে পারে এবং তাদের সৌন্দর্যে তারা মুগ্ধ হয়ে যায় তবে তাদের থেকেও পর্দা করতে হবে। যদিও তারা পূর্ণ যৌবনে পদার্পণ না করে।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা স্ত্রীলোকদের নিকট প্রবেশ করা হতে বেঁচে থাকো ।” প্রশ্ন করা হলোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! দেবর ও ভাসুর সম্পর্কে আপনার মত কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “দেবর ও ভাসুর তো মৃত্যু ( সমতুল্য ) ।” এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ স্ত্রীলোকেরা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। অজ্ঞতার যুগে এরূপ প্রায় হতো যে, স্ত্রীলোকেরা চলার সময় যমীনের উপর সজোরে পা ফেলতো যাতে পায়ের অলংকার বেজে উঠে। ইসলামে এরূপ করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং নারীদেরকে প্রতিটি এমন কাজ থেকে নষেধ করে দেয়া হয় যাতে তাদের গোপন আভরণ প্রকাশ পেয়ে যায়। তাই তার জন্যে আতর ও সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়াও নিষিদ্ধ।হযরত আবু মূসা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ প্রত্যেক চক্ষু ব্যভিচারী, যখন নারী আতর মেখে, ফুল পরে, সুগন্ধি ছড়িয়ে পুরুষদের কোন মজলিসের পার্শ্ব দিয়ে গমন করে তখন সে এরূপ এরূপ ( অর্থাৎ ব্যভিচারিণী ) ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবূ হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন এক নারীর সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটে যে সুগন্ধি ছড়িয়ে চলছিল। অমি তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ তুমি কি মসজিদ হতে আসছো? সে উত্তরে বললোঃ “ হ্যাঁ ।” পুনরায় আমি তাকে প্রশ্ন করলামঃ তুমি কি সুগন্ধি মেখেছো? জবাবে সে বললোঃ “ হ্যাঁ ।” আমি তখন বললামঃ আমি আমার বন্ধু আবুল কাসিম ( সঃ )-কে বলতে শুনেছিঃ “ আল্লাহ এমন স্ত্রীলোকের নামায কবূল করেন না যে এই মসজিদে আসার জন্যে সুগন্ধি মেখেছে, যে পর্যন্ত না সে ফিরে গিয়ে অপবিত্রতার গোসলের ন্যায় গোসল করে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মায়মূনা বিনতে সা’দ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ অস্থানে সৌন্দর্য প্রকাশকারিণী নারী কিয়ামতের দিনের ঐ অন্ধকারের মত যেখানে কোন আলো নেই ।” ( এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু উসাইদ আনসারী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পথে পুরুষ ও নারীদেরকে একত্রে মিলে মিশে চলতে দেখে বলেনঃ “ হে নারীরা! তোমরা এদিকে ওদিকে হয়ে যাও । মাঝপথ দিয়ে চলা তোমাদের জন্যে শোভনীয় নয়। তাঁর এ কথা শুনে নারীরা দেয়াল ঘেঁষে চলতে শুরু করে। এমনকি দেয়ালের সাথে তাদের কাপড়ের ঘর্ষণ লাগছিল। ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাঊদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আমার বাতলানো গুণাবলীর অধিকারী হয়ে যাও। অজ্ঞতার যুগের বদভ্যাসগুলো পরিত্যাগ কর। তাহলেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
সূরা নূর আয়াত 31 সূরা
وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن إلا ما ظهر منها وليضربن بخمرهن على جيوبهن ولا يبدين زينتهن إلا لبعولتهن أو آبائهن أو آباء بعولتهن أو أبنائهن أو أبناء بعولتهن أو إخوانهن أو بني إخوانهن أو بني أخواتهن أو نسائهن أو ما ملكت أيمانهن أو التابعين غير أولي الإربة من الرجال أو الطفل الذين لم يظهروا على عورات النساء ولا يضربن بأرجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن وتوبوا إلى الله جميعا أيها المؤمنون لعلكم تفلحون
سورة: النور - آية: ( 31 ) - جزء: ( 18 ) - صفحة: ( 353 )English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
- রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ
- যখন আমি তোমার মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যা অতঃপর বর্ণিত হচ্ছে।
- প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ।
- যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই
- অতঃপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছল, তখন ইউসুফ পিতা-মাতাকে নিজের কাছে জায়গা দিলেন এবং বললেনঃ
- যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব, তখন কাফেরদেরকে অনুমতি দেয়া হবে না
- এটা আল্লাহর শত্রুদের শাস্তি-জাহান্নাম। তাতে তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আবাস, আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করার প্রতিফলস্বরূপ।
- তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, মহাপরাক্রমশীল।
- আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবেন।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নূর ডাউনলোড করুন:
সূরা An Nur mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি An Nur শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers