কোরান সূরা আনফাল আয়াত 35 তাফসীর
﴿وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِندَ الْبَيْتِ إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً ۚ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ﴾
[ الأنفال: 35]
আর কা’বার নিকট তাদের নামায বলতে শিস দেয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোন কিছুই ছিল না। অতএব, এবার নিজেদের কৃত কুফরীর আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর। [সূরা আনফাল: 35]
Surah Al-Anfal in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anfal ayat 35
আর গৃহের নিকটে তাদের নামায শুধু শিস দেওয়া ও হাততালি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং ''শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করো যেহেতু তোমরা অবিশ্বাস পোষণ করছিলে।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩৫. মসজিদে হারামের নিকট মুশরিকদের সালাত শুধু শিস ধ্বনি ও হাত তালি দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। হে মুশরিকরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করার দরুন বদরের দিনে হত্যা ও বন্দী হওয়ার মত শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আর কা’বা গৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই ছিল তাদের নামায।[১] সুতরাং অবিশ্বাসের জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর। [১] মুশরিকরা যেমন উলঙ্গ হয়ে কা'বার তাওয়াফ করত অনুরূপ তাওয়াফের সময় মুখে আঙ্গুল দিয়ে শিস দিত ও দুই হাত দিয়ে তালি বাজাতো। আর এটিকে তারা ইবাদত ও পুণ্যের কাজ মনে করত। যেমন আজকাল কিছু সুফীরা মসজিদে ও আস্তানায় নাচে, ঢোল-তবলা বাজায় এবং বলে, 'এটিই আমাদের ইবাদত ও নামায। আমরা নেচে নেচে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে নেব।' ( আমরা আল্লাহর কাছে এই সমস্ত কুসংস্কার হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর কা’বাঘরের কাছে শুধু শিস ও হাততালি দেয়াই তাদের সালাত, কাজেই তোমার শাস্তি ভোগ কর, কারণ তোমারা কুফরী করতে [ ১ ]। [ ১ ] আযাব বলতে এখানে দুনিয়ার আযাবও হতে পারে যা বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের মাধ্যমে তাদের উপর নাযিল হয়। [ তাবারী; ইবন কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৩৪-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মক্কাবাসী মুশরিকরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য তো অবশ্যই ছিল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বরকতে শাস্তি থেকে বেঁচে যায় । এজন্যে যখন তিনি মক্কা ছেড়ে চলে যান তখন বদরের দিন তাদের উপর শাস্তি নেমে আসে। তাদের নেতারা নিহত এবং বড় বড় লোক বন্দী হয়। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বলে দেন, কিন্তু ওর সাথে তারা শিরক ও ফাসাদকেও মিলিয়ে দেয়। কাতাদা ( রঃ ) এবং সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, এই নিহত কুরায়েশরা ক্ষমা প্রার্থনা করতো না। যদি তারা তা করে থাকতো তবে আল্লাহ তাআলা বদরের যুদ্ধে তাদেরকে লাঞ্ছনার মৃত্যু দিতেন না। আর যদি এই দুর্বল মুসলমানরা মক্কায় অবস্থান করে ক্ষমা প্রার্থনা না করতেন তবে মক্কাবাসীর উপর এমন বিপদ এসে পড়তে যা কোনক্রমেই দূর করা যেতো না। ক্ষমা প্রার্থনার বরকতেই মক্কায় শাস্তি নাযিল হওয়া থেকে কুরায়েশরা রক্ষা পেয়েছে এবং মক্কার মুসলমানদের মাধ্যমেই তারা কিছুকাল পর্যন্ত আযাব থেকে মাহফুয থেকেছে। হুদায়বিয়ার দিন আল্লাহ পাক আয়াত নাযিল করেছিলেন- ( আরবী ) অর্থাৎ “ এরা ঐ লোক যারা কুফরী করেছে এবং তোমাদেরকে মসজিদে হারাম হতে প্রতিরোধ করেছে এবং প্রতিরুদ্ধ কুরবানীর জন্তুগুলো ওদের নির্দিষ্ট স্থানে হাযির করা হতে বাধাদান করেছে, আর যদি বহু মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী না থাকতো যাদের সম্বন্ধে তোমরা কিছুই জানতে না, অর্থাৎ তাদের নিষ্পেষিত হওয়ার আশংকা না থাকতো, যদ্দরুন তাদের কারণে অজ্ঞাতসারে তোমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে, তবে সমস্ত ব্যাপারই চুকিয়ে দেয়া হতো, কিন্তু তা এ জন্যে করা হয়নি, যেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজ রহমতে দাখিল করেন, যদি তারা ( ঐ মুসলমানরা মক্কা হতে ) সরে পড়তো তবে আমি তাদের মধ্যকার কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করতাম ।” ( ৪৮:২৫ ) নবী ( সঃ )-এর অবস্থানের সময় আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বলেছিলেনঃ “ তোমার অবস্থানকালীন সময়ে আমি তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবো না ।” অতঃপর যখন নবী ( সঃ ) মদীনায় চলে যান তখন আল্লাহ পাক তাঁকে বলেনঃ “ তোমার স্থলবর্তীরা এখনও মক্কায় রয়েছে, সুতরাং এখনও আমি আযাব নাযিল করবো না ।” তারপর যখন মুসলমানরাও মক্কা থেকে বেরিয়ে আসে তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ এখন তাদেরকে কেন শাস্তি দেয়া হবে না? তারা তো তোমাদেরকে বায়তুল্লাহতে আসতে বাধা দিয়েছে, অথচ তারা তো আল্লাহর বন্ধু ছিল না?” অতএব আল্লাহ তাদের উপর মক্কা বিজয়ের শাস্তি অবতীর্ণ করেন । এ আয়াতটি-( আরবী )-এই আয়াতটিকে রহিতকারী। ইকরামা ( রাঃ ) এবং হাসান বসরী ( রঃ ) বলেন যে, সূরায়ে আনফালের ...
( আরবী ) আয়াতটিকে ওর পরবর্তী ...
( আরবী )-এই আয়াতটি মানসূখ বা রহিতকারী। তাই তিনি ....
( আরবী ) বলেছেন। সুতরাং দেখা যায় যে, মক্কাবাসীদের সাথে যুদ্ধ হয় এবং তারা ক্ষুধা ও ক্ষয়ক্ষতির শাস্তিতে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদেরকে শাস্তি প্রাপক হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং বলেছেনঃ “ এখন তাদের কি বলবার আছে যে, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যখন তারা মসজিদুল হারামের পথরোধ করেছে?” অথচ তারা মসজিদুল হারামের তত্ত্বাবধায়ক নয়, মুত্তাকী লোকেরাই হলো ওর তত্ত্বাবধায়ক, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোক এটা অবগত নয় । অথচ যাদেরকে কাবা ঘরে যেতে দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে তারাই এর বেশী হকদার যে, তারা ওর মধ্যে নামায পড়বে এবং ওর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করবে। আর এই কাফিরদেরই মসজিদুল হারামে যাওয়ার অধিকার নেই। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “ মুশরিকদের এই অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদ সমূহকে আবাদ করে, যে অবস্থায় তারা নিজেদের কুফরীর স্বীকারোক্তি করেছে, তাদের সমস্ত ( সৎ ) কাজ বিফল হয়ে গেল, আর তারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে । হ্যা, আল্লাহর মসজিদগুলো আবাদ করা তাদেরই কাজ যারা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামতের দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করে না, বস্তৃতঃ এই সকল লোক সম্বন্ধে আশা যে, তারা নিজেদের লক্ষ্যস্থলে পৌছে যাবে।” আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আল্লাহর পথ থেকে বাধা প্রদান করা, তাঁর সাথে কুফরী করা, মসজিদুল হারাম হতে বাধা দেয়া ও মক্কার অধিবাসীকে মক্কা থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর নিকট বড় রকমের পাপ বলে গণ্য ।” ( ২:২১৭ ) হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “ আপনার বন্ধু কারা?" উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “প্রত্যেক মুত্তাকী ব্যক্তি ( আমার বন্ধু ) ।” অতঃপর তিনি ( আরবী )-এ আয়াতটি পাঠ করেন। ইমাম হাকিম ( রঃ ) স্বীয় মুসতাদরিক” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কুরায়েশদেরকে একত্রিত করেন। অতঃপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমাদের মধ্যে তোমাদের ( কুরায়েশ ) ছাড়া আর কেউ আছে কি?” তারা উত্তরে বলেঃ “( আমরা ছাড়া ) আমাদের মধ্যে রয়েছে আমাদের ভাগিনেয়, আমাদের মিত্র এবং আমাদের গোলাম ।” তখন তিনি বললেনঃ “ মিত্র, ভাগিনেয় এবং গোলাম একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়ে থাকে । তোমাদের মধ্যে যারা মুত্তাকী তারাই আমার বন্ধু।” মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা জিহাদকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে, তারা যারাই হন বা যেখানেই থাকুন না কেন। অতঃপর এই আলোচনা করা হয়েছে যে, ঐ লোকগুলো মসজিদুল হারামে কি কাজ করতো? আল্লাহ পাক ঘোষণা করছেন- “ কা'বা ঘরের কাছে তাদের নামায হলো শিস ও করতালি প্রদান ।” তারা উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতো, মুখে অঙ্গুলি ভরে দিয়ে বাশির মত শব্দ বের করতো, মুখ কুঁকাতো এবং তালি বাজাতো। আর এটাকেই তারা ইবাদত মনে করতো। বাম দিক থেকে তারা তাওয়াফ করতো। এর দ্বারা মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়াই হতো তাদের উদ্দেশ্য। এইভাবে তারা মুসলমানদেরকে ঠাট্টা ও উপহাস করতো। ( আরবী ) শব্দের অর্থ হচ্ছে বাঁশি বাজানো। ( এটা হচ্ছে ইবনে আব্বাস (রাঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), ইকরামা ( রঃ ), সাঈদ ইবনে জুবাইর ( রঃ ) এবং কাতাদা ( রঃ )-এর উক্তি) আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করা।( আরবী ) সুতরাং এখন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর। এই শাস্তি এই যে, বদরের যুদ্ধে তারা নিহতও হয়েছিল এবং বন্দীও হয়েছিল। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, স্বীকারোক্তিকারীদের শাস্তি তরবারী দ্বারা হয়ে থাকে এবং মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের শাস্তি বিকট চীৎকার ও ভূমিকম্পের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
সূরা আনফাল আয়াত 35 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা
- তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় মিথ্যারোপ করেছিল, আর তাদের পরে অন্য অনেক দল ও প্রত্যেক সম্প্রদায়
- আমি যদি ক্রীড়া উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই
- তাদের উত্তম ব্যক্তি বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলিনি? এখনও তোমরা আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা বর্ণনা করছো
- আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে।
- আর আল্লাহ তো শুধু সুসংবাদ দান করলেন যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে। আর সাহায্য
- এগুলো অদৃশ্যের খবর, আমি আপনার কাছে প্রেরণ করি। আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা
- আর নূহ (আঃ) তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন-হে পরওয়ারদেগার, আমার পুত্র তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর
- এবং তারা আমাদের ক্রোধের উদ্রেক করেছে।
- আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। অতএব মুমিনগণ আল্লাহর উপর ভরসা করুক।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনফাল ডাউনলোড করুন:
সূরা Anfal mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anfal শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers