কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 36 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Baqarah ayat 36 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা বাকারাহ্ আয়াত 36 আরবি পাঠে(Baqarah).
  
   

﴿فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ ۖ وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ﴾
[ البقرة: 36]

অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে। [সূরা বাকারাহ্: 36]

Surah Al-Baqarah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 36


কিন্তু শয়তান তাদের সেখান থেকে পদস্খলিত করল, আর যেখানে তারা থাকত সেখান থেকে তাদের বের করে দিল। তখন আমরা বললাম -- “তোমরা অধঃপাতে যাও, তোমাদের কেউ কেউ একে অন্যের শত্রু। আর তোমাদের জন্য পৃথিবীতে আছে জিরানোর স্থান ও কিছু সময়ের সংস্থান।”


Tafsir Mokhtasar Bangla


৩৬. অতঃপর শয়তান তাঁদেরকে কুমন্ত্রণা দিতে আরম্ভ করলো। ব্যাপারটিকে তাঁদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলো। সে তাঁদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে আমার নির্দেশ অমান্য করতে প্রবৃত্ত করলো। পরিশেষে তাঁরা সে গাছের ফল খেয়েই ফেললো। যা খেতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে নিষেধ করেছেন। এর ফলশ্রæতিতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে শাস্তিস্বরূপ জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। যাতে তাঁরা অবস্থান করছিলেন। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে ও শয়তানকে বললেন: তোমরা সবাই পৃথিবীতে নেমে যাও। নিশ্চয়ই তোমরা একে অপরের শত্রæ। আর এ পৃথিবীর বুকেই রয়েছে তোমাদের অবস্থান, স্থিতি ও সেখানকার সকল কল্যাণ উপভোগের ব্যবস্থা। যতক্ষণনা তোমাদের আয়ু শেষ হয় এবং কিয়ামত প্রতিষ্ঠা হয়।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


কিন্তু শয়তান তা হতে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান হতে তাদেরকে বহিষ্কার করল। ( ১ ) আমি বললাম, ‘তোমরা ( এখান হতে ) নেমে যাও। তোমরা একে অন্যের শত্রু। ( ২ ) পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের অবস্থান ও জীবিকা রইল। ( ১ ) শয়তান জান্নাতে প্রবেশ ক'রে সরাসরি তাঁদেরকে পদস্খলিত করে, নাকি প্ররোচনার মাধ্যমে --এ ব্যাপারে কোন পরিষ্কার বর্ণনা নেই। তবে এ কথা পরিষ্কার যে, যেভাবে সিজদা করার নির্দেশের সময় আল্লাহর আদেশের মোকাবেলায় সে কিয়াস ( আমি আদম থেকে উত্তম এই অনুমান ) ক'রে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল, অনুরূপ এই সময় আল্লাহর নির্দেশ " তোমরা গাছের কাছে যাবে না "-এর তা'বীল ( অপব্যাখ্যা ) ক'রে আদম ( আঃ )-কে চক্রান্তে ফাঁসাতে সে সফলকাম হয়। এর বিস্তারিত বিবরণ সূরা আ'রাফ ৭:১৯নং আয়াতে আসবে। আল্লাহর নির্দেশের মোকাবেলায় অনুমান এবং ক্বুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট উক্তির অপব্যাখ্যা সর্বপ্রথম শয়তানই করেছিল। -নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক-।( ২ ) অর্থাৎ, আদম ( আলাইহিসসালাম ) এবং শয়তান। অথবা এর অর্থ হল, আদম-সন্তান আপসে একে অপরের শত্রু।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


অতঃপর শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্থলন ঘটালো [] এবং তারা যেখানে ছিলো সেখান থেকে তাদের কে বের করলো []। আর আমরা বললাম, ‘তোমরা একে অন্যের শ্ত্রু রুপে নেমে যাও; এবং কিছু দিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল যমীনে’। [] ( زَلَّةٌ ) শব্দের অর্থ বিচ্যুতি বা পদস্থলন। অর্থাৎ শয়তান আদম ও হাওয়া ‘আলাইহিমাস সালামকে পদস্খলিত করেছিল বা তাদের বিচ্যুতি ঘটিয়েছিল। কুরআনের এসব শব্দে পরিস্কার এ কথা বোঝা যায় যে, আদম ও হাওয়া ‘আলাইহিস সালাম কর্তৃক আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম লংঘন সাধারণ পাপীদের মত ছিল না, বরং শয়তানের প্রতারণায় প্রতারিত হয়েই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পরিণামে যে গাছের ফল নিষিদ্ধ ছিল, তা খেয়ে বসলেন। এ বর্ণনার দ্বারা বোঝা গেল যে, আদম '‘আলাইহিস সালামকে বিশেষ গাছ বা তার ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং এ ব্যাপারেও সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যে, শয়তান তোমাদের শক্র। কাজেই সে যেন তোমাদেরকে পাপে লিপ্ত করে না দেয়। এরপরও আদম '‘আলাইহিস সালাম এর তা খাওয়া বাহ্যিকভাবে পাপ বলে গণ্য। অথচ নবীগণ পাপ থেকে বিমুক্ত ও পবিত্র। সঠিক তথ্য এই যে, এখানে কয়েকটি ব্যাপারে আলেমদের ইজমা তথা ঐক্যমত সংঘটিত হয়েছেঃ ১) নবীগণ উম্মতের নিকট আল্লাহ্‌র নির্দেশ পৌছানোর ব্যাপারে যাবতীয় ভুল-ত্রুটি বা পাপ হতে মুক্ত। ২) অনুরূপভাবে মর্যাদাহানিকর নিম্নমানের কর্মকাণ্ড থেকেও মুক্ত। ৩) তাদের দ্বারা মর্যাদাহানিকর নয় এমন সগীরা গোনাহ হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে কোন প্রকার গোনাহ বা ভুলের উপর অবস্থান করতে দেননা। অর্থাৎ তাদের দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে তাদেরকে সাবধান করা হয়, যাতে তারা তাওবা করে সংশোধন করে নেন। ফলে তাদের মর্যাদা পূর্বের চেয়ে আরও বেশী বৃদ্ধি পায়। [] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ সূর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জুম'আর দিন এতে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এতেই জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। আর এ দিনই তাকে জান্নাতে থেকে বের করা হয়েছে "[ মুসলিম: ৮৫৪ ] এখানে এ বিতর্ক অনাবশ্যক যে, শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আদম '‘আলাইহিস সালামকে প্রতারিত করার জন্য কিভাবে আবার সেখানে প্রবেশ করলো? কারণ, শয়তানের প্রবঞ্চনার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা শয়তান ও জীন জাতিকে দূর থেকেও প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৩৫-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর হযরত আদম ( আঃ )-এর এটা অন্য মর্যাদা ও সম্মানের বর্ণনা। ফেরেশতাদেরকে সিজদা করানোর পর আল্লাহ তা'আলা তাদের স্বামী-স্ত্রীকে বেহেশতে স্থান দিলেন এবং সব জিনিসের উপর অধিকার দিয়ে দিলেন। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই এর মধ্যে হাদীস রয়েছে যে, হযরত আবু যার ( রাঃ ) একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! হযরত আদম ( আঃ ) কি নবী ছিলেন?” তিনি বলেনঃ “তিনি নবীও ছিলেন এবং রাসলও ছিলেন । এমন কি আল্লাহ তাআলা তার সামনে কথাবার্তা বলেছেন এবং তাঁকে বলেছেন-“ তুমি ও তোমার স্ত্রী বেহেশতে অবস্থান কর । সাধারণ মুফাসসিরগণের ধারণা এই যে, আসমানী বেহেশতে তাদের বাসের জায়গা করা হয়েছিল। কিন্তু মু'তাযিলাহ্ ও কাদরিয়্যাগণ বলে যে, এ বেহেশত ছিল যমীনের উপর। সূরা-ই-আ'রাফে এর বর্ণনা ইনশাআল্লাহ আসবে। কুরআন পাকের বাকরীতি দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, বেহেশতে অবস্থানের পূর্বে হযরত হাওয়াকে ( আঃ ) সৃষ্টি করা হয়েছিল।মুহাম্মদ বিন ইসহাক ( রঃ ) বলেন যে, আহলে কিতাব ইত্যাদি আলেমগণ হতে ইবনে আব্বাসের ( রাঃ ) বর্ণনা অনুসারে বর্ণিত আছে যে, ইবলীসকে ধমক ও ভীতি প্রদর্শনের পর হযরত আদম ( আঃ )-এর জ্ঞান প্রকাশ করতঃ তার উপর তন্দ্রা চাপিয়ে দেন। অতঃপর তার বাম পাঁজর হতে হযরত হাওয়া ( আঃ ) কে সৃষ্টি করেন। চোখ খোলামাত্র হযরত আদম ( আঃ ) তাঁকে দেখতে পান এবং রক্ত ও গোশতের কারণে অন্তরে তাঁর প্রতি প্রেম ও ভালবাসার সৃষ্টি হয়। অতঃপর বিশ্বপ্রভু উভয়কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন এবং বেহেশতে বাস করার নির্দেশ দেন। কেউ কেউ বলেন যে, হযরত আদম ( আঃ )-এর বেহেশতে প্রবেশের পর হযরত হাওয়া ( আঃ )কে সৃষ্টি করা হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) প্রভৃতি সাহাবীগণ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে। যে, ইবলীসকে জান্নাত হতে বের করে দেয়ার পরে হযরত আদম ( আঃ ) কে তথায় জায়গা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় তিনি একাকী ছিলেন। সুতরাং তার ঘুমের অবস্থায় হযরত হাওয়াকে ( আঃ ) তাঁর পাঁজর হতে সৃষ্টি করা হয়। জেগে ওঠার পর তাঁকে সামনে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তুমি কে? তুমি কেনই বা সৃষ্টি হলে? হযরত হাওয়া উত্তরে বলেনঃ “আমি একটি নারী, আপনার শান্তির কারণ রূপে আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে ।”তৎক্ষণাৎ ফেরেশতাগণ হযরত আদম ( আঃ ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ বলুন তার নাম কি?" হযরত আদম ( আঃ ) বলেন ‘হাওয়া তারা বলেনঃ “ এ নামের কারণ কি?” তিনি বলেনঃ “তাকে এক জীবিত হতে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে ।” তথায় আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম ( আঃ )কে ডাক দিয়ে বলেনঃ “ হে আদম ( আঃ )! তুমি ও তোমার স্ত্রী বেহেশতের মধ্যে সুখে স্বাচ্ছন্দে অবস্থান কর । এবং মনে যা চায় তাই খাও ও পান কর, আর এই বৃক্ষের নিকট যেয়ো না।”এই বিশেষ বৃক্ষ হতে নিষেধ করা একটা পরীক্ষা ছিল। কেউ কেউ বলেন যে, এটা আঙ্গুরের গাছ ছিল। আবার কেউ বলেন যে, এটা ছিল গমের গাছ। কেউ বলেছেন শীষ, কেউ বলেছেন খেজুর এবং কেউ কেউ ডুমুরও বলেছেন। ঐ গাছের ফল খেয়ে মানবীয় প্রয়োজন ( পায়খানা-প্রস্রাব ) দেখা দিতে এবং ওটা বেহেশতের যোগ্য নয়। কেউ কেউ বলেন যে, ঐ গাছের ফল খেয়ে ফেরেশতাগণ চিরজীবন লাভ করতেন। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, ওটা কোন একটি গাছ ছিল যা থেকে আল্লাহ পাক নিষেধ করেছিলেন। ওটা যে কোন নির্দিষ্ট গাছ ছিল তা কুরআন কারীম বা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয় না। তাছাড়া এ ব্যাপারে মুফাসৃসিরগণের মধ্যে খুবই মতভেদ রয়েছে। এটা জানলেও আমাদের কোন লাভ নেই। এবং না জানলেও কোন ক্ষতি নেই। সুতরাং এ জন্যে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনই বা কি? মহান আল্লাহই এটা খুব ভাল জানেন। ইমাম রাযীও ( রঃ ) এই ফায়সালাই দিয়েছেন। এবং সঠিক কথাও এটাই বটে।( আরবি ) এর ( আরবি ) সর্বনামটি কেউ কেউ ( আরবি )-এর দিকে ফিরিয়েছেন, আবার কেউ কেউ ( আরবি )-এর দিকে ফিরিয়েছেন। একটি কিরআতে ( আরবি ) এরূপও রয়েছে। তবে অর্থ হবেঃ শতয়ান তাদের দুজনকে বেহেশত হতে পৃথক করে দেয়। আর দ্বিতীয়টির অর্থ হবেঃ ‘ঐ গাছের কারণেই শয়তান তাদের দুজনকে ভুলিয়ে দেয়।' ( আরবি ) শব্দটি ( আরবি )-এর কারণেও এসে থাকে যেমন। ( আরবি )-এর মধ্যে এসেছে। ঐ অবাধ্যতার কারণে তাদের বেহেশতী পোষাক, সেই পবিত্র স্থান, ঐ উত্তম আহার্য ইত্যাদি সব কিছুই ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের বলা হয়ঃ ‘এখন পৃথিবীতেই তোমাদের আহার্য ইত্যাদি রয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত তোমরা সেখানেই পড়ে থাকবে এবং তথায় উপকার লাভ করবে।' সাপ ও ইবলীসের গল্প, ইবলীস কিভাবে বেহেশতে পৌছে, কি প্রকারে সে কুমন্ত্রণা দেয় ইত্যাদি লম্বা চওড়া গল্প মুফাসৃসিরগণ এখানে এনেছেন। কিন্তু ওগুলো সবই বানী ইসরাঈলের ভাণ্ডারের অংশ বিশেষ। তথাপি আমরা তা সূরা-ই-আরাফের মধ্যে বর্ণনা করবো। কেননা, এ ঘটনার বর্ণনা তথায় কিছু বিস্তারিত ভাবে রয়েছে।মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমের একটি হাদীসে আছে যে, গাছের ফল মুখে দেয়া মাত্রই বেহেশতী পোষাক তাঁর শরীরে হতে পড়ে যায়। নিজেকে উলঙ্গ দেখে হযরত আদম ( আঃ ) এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। কিন্তু দেহ দীর্ঘ ছিল বলে তা গাছে আটকে যায়। আল্লাহ পাক বলেনঃ হে আদম ( আঃ )! আমা হতে কি পলায়ন করছো?' তিনি আরয করেনঃ “ হে আল্লাহ! আমি আপনা হতে পালিয়ে যাইনি, লজ্জায় মুখ ঢেকে ঘুরে বেড়াচ্ছি ।' অন্য বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ হে আদম ( আঃ )! আমার নিকট হতে চলে যাও । আমার মর্যাদার শপথ! আমার নিকটে আমার অবাধ্য থাকতে পারে না। তোমার মত আমি এত মাখলুক সৃষ্টি করবো যে, তাদের দ্বারা পৃথিবী ভরে যাবে। অতঃপর যদি তারা আমার অবাধ্য হয় তবে আমি অবশ্যই তাদেরকেও অবাধ্যদের ঘরে পৌছিয়ে দেবো।' এ বর্ণনাটি গরীব। এর মধ্যে ইনকিতা বরং ই’যালও আছে।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম ( আঃ ) আসরের পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বেহেশতে ছিলেন। হযরত হাসান ( রাঃ ) বলেন যে, এই এক ঘন্টা ছিল একশো ত্রিশ বছরের সমান। বাঈ বিন আনাস ( রাঃ ) বলেন যে, নবম ও দশম ঘন্টায় হযরত আদম ( আঃ ) বহিষ্কৃত হন। তাঁর সঙ্গে বেহেশতের গাছের একটি শাখা ছিল। এবং মাথায় ছিল বেহেশতের একটি মুকুট। সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, হযরত আদম ( আঃ ) ভারতে অবতরণ করেন। তার সঙ্গে কালো পাথর ( হাজারে আসওয়াদ ) ছিল এবং বেহেশতের বৃক্ষের পাতা ছিল যা তিনি ভারতে ছড়িয়ে দেন এবং ওটা দ্বারা সুগন্ধময় গাছের জন্ম লাভ হয়। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন, তিনি ভারতের ‘দাহনা শহরে অবতরণ করেন। একটি বর্ণনায় আছে যে, তিনি মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী স্থানে অবতরণ করেন। হযরত হাসান বসরী ( রাঃ ) বলেন যে, হযরত আদম ( আঃ ) ভারতে এবং হযরত হাওয়া ( আঃ ) জিদ্দায় অবতরণ করেন। আর ইবলীস বসরা হতে কয়েক মাইল দূরে ‘দাস্তামিসানে নিক্ষিপ্ত হয় এবং সাপ ‘ইসহানে পতিত হয়।হযরত ইবনে উমারের ( রাঃ ) মতে হযরত আদম ( আঃ ) সাফা পাহাড়ের উপর অবতরণ করেন। অবতরণের সময় হযরত আদম ( আঃ )-এর হাত জানুর উপর ছিল এবং মাথা ছিল নিম্নমুখী। আর ইবলীসের অঙ্গুলীর উপর অঙ্গুলী রাখা ছিল এবং মাথা ছিল আকাশের দিকে। হযরত আবু মূসা ( রাঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম ( আঃ ) কে প্রত্যেক জিনিসের কারিগরী শিখিয়েছিলেন এবং বেহেশতী ফলের পাথেয় দিয়েছিলেন। একটি হাদীসে আছে যে, সমস্ত দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে শুক্রবারের দিন। ঐ দিনেই হযরত আদম ( আঃ ) কে সৃষ্টি করা হয়, ঐদিনেই বেহেশতে প্রবেশ করানো হয় এবং ঐদিনেই বেহেশত হতে বের করে দেয়া হয়। ইমাম রাযী ( রাঃ ) বলেনঃ ‘এটা যে ধমক ও ভীতি প্রদর্শনের আয়াত তার কয়েকটি যুক্তি আছে। একটি এই যে, সামান্য পদস্খলনের জন্যে হযরত আদম ( আঃ ) কে কতই না গুরুতর শাস্তি দেয়া হলো। কোন কবি কতই না সুন্দর কথা বলেছেনঃ তোমারা পাপের পর পাপ করছো অথচ জান্নাতের প্রার্থী হচ্ছো? তোমরা কি ভুলে গেছে যে, তোমাদের পিতা আদম ( আঃ ) কে শুধু একটি লঘু পাপের কারণে জান্নাত হতে বের করে দেয়া হয়েছে? ইবনুল কাসেম বলেছেনঃ “ আমরা তো এখানে শত্রুদের হাতে বন্দী রয়েছি, দেখ, কখন আমরা নিরাপদে স্বদেশে পৌছবো ।' ফাতহ্ মুসেলী বলেনঃ “ আমরা জান্নাতবাসী ছিলাম । শয়তান আমাদেরকে বন্দী করে দুনিয়ায় এনেছে। এখন সে আমাদের জন্যে এখানে চিন্তা ও দুঃখ ছাড়া আর কি রেখেছে? এ বন্দীত্বের শিকল তখনই ভাঙ্গবে যখন আমরা ঐ স্থানে পৌছবো, যে স্থান হতে আমাদেরকে বের করা :হয়েছে।যদি কোন প্রতিবাদাকরী এ প্রতিবাদ করে যে, হযরত আদম ( আঃ ) যখন আসমানী বেহেশতে ছিলেন, তখন শয়তান আল্লাহর দরবার হতে বিতাড়িত হয়েছিল। তবে আবার তথায় কিভাবে পৌছলো? এর প্রথম উত্তর ভো এই হবে যে, ঐ বেহেশত ছিল যমীনে, এরূপ একটি মত তো আছেই। এ ছাড়া আরও উত্তর এই যে, সম্মানিত অবস্থায় তার প্রবেশ নিষেধ ছিল। কিন্তু লাঞ্ছিত অবস্থায় ও চুরি করে যাওয়া বাধা ছিল না। যেহেতু তাওরাতে আছে যে, সে সাপের মুখে বসে বেহেশতে গিয়েছিল। এও একটি উত্তর যে, সে বেহেশতে যায়নি, বরং বাহির থেকেই কুমন্ত্রণা দিয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, যমীনে থেকেই সে তাঁর অন্তরে কুমন্ত্রণা দিয়েছিল। কুরতুবী ( রঃ ) এখানে সর্প সম্পর্কীয় এবং তাকে মেরে ফেলার হুকুমের হাদীসগুলিও এনেছেন, যা খুবই উত্তম ও উপকারী হয়েছে।

সূরা বাকারাহ্ আয়াত 36 সূরা

فأزلهما الشيطان عنها فأخرجهما مما كانا فيه وقلنا اهبطوا بعضكم لبعض عدو ولكم في الأرض مستقر ومتاع إلى حين

سورة: البقرة - آية: ( 36 )  - جزء: ( 1 )  -  صفحة: ( 6 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনার স্বাদ আস্বাদন করালেন, আর পরকালের আযাব হবে আরও গুরুতর,
  2. অতঃপর আমি তাঁকে এক বিস্তীর্ণ-বিজন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম, তখন তিনি ছিলেন রুগ্ন।
  3. যাতে আমরা জাদুকরদের অনুসরণ করতে পারি-যদি তারাই বিজয়ী হয়।
  4. আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে
  5. তোমরা অবশ্যই বেদনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করবে।
  6. তুমি কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল ইব্রাহীমের সাথে এ কারণে যে,
  7. দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, বরং তোমরাই তো দিবারাত্রি চক্রান্ত করে আমাদেরকে নির্দেশ দিতে যেন আমরা আল্লাহকে
  8. মূসা বললেনঃ তাদের খবর আমার পালনকর্তার কাছে লিখিত আছে। আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হন না এং
  9. যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে দেখতে পাবে। তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যেবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা।
  10. হে আমার জাতি! আমি এজন্য তোমাদের কাছে কোন মজুরী চাই না; আমার মজুরী তাঁরই কাছে

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:

সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Friday, November 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers