কোরান সূরা রা'দ আয়াত 39 তাফসীর
﴿يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ ۖ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ﴾
[ الرعد: 39]
আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন এবং মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে। [সূরা রা'দ: 39]
Surah Ar-Rad in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Raad ayat 39
আল্লাহ্ বিলুপ্ত করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন, আর প্রতিষ্ঠিত করেন, আর তাঁরই কাছে রয়েছে ধর্মগ্রন্থের ভিত্তি।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩৯. আল্লাহ তা‘আলা কল্যাণ ও অকল্যাণ এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদির যা চান মুছে দেন এবং এগুলোর যা চান প্রতিষ্ঠিত রাখেন। তাঁর নিকটই রয়েছে লাওহে মাহফুয। যা সবকিছুর প্রত্যাবর্তনস্থল। তাই যা কিছু মুছে ফেলা বা প্রতিষ্ঠিত করা হবে তা সে অনুযায়ীই হবে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
( তার মধ্য হতে ) আল্লাহ যা ইচ্ছা তা মুছে দেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন। আর তাঁর নিকট রয়েছে মূল গ্রন্থ।[১] [১] এর একটি অর্থ এই যে, তিনি স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক কোন হুকুমকে রহিত করেন এবং কোন হুকুমকে বহাল রাখেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তিনি যে ভাগ্য লিখে রেখেছেন তাতে পরিবর্তন করতে থাকেন। কতিপয় হাদীস দ্বারা এর সমর্থন হয়, তন্মধ্যে একটি হাদীস হলো, " মানুষকে পাপের কারণে রুযী থেকে বঞ্চিত করা হয়, দু'আর মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয় এবং আত্মীয়তা বন্ধন বজায় রাখার কারণে আয়ু বৃদ্ধি পায়। " ( মুসনাদ আহমাদ ৫/২৭৭ ) কতিপয় সাহাবা থেকে নিম্নলিখিত দু'আটি বর্ণিত হয়েছে,( اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا أشْقِيَاءَ فَامْحُنَا وَاكْتُبْنَا سُعَدَاءَ، وَإنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا سُعَدَاءَ فَأثْبِتْنَا، فَإنَّكَ تَمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ ) । অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যদি তুমি আমাদেরকে দুর্ভাগ্যবান বলে লিখে দিয়েছ, তাহলে তা মিটিয়ে দিয়ে আমাদেরকে সৌভাগ্যবান বলে লিখে দাও। আর যদি সৌভাগ্যবান বলে লিখেছ, তাহলে সেটাই বহাল রাখো, কেননা তুমি যা চাও মিটিয়ে দাও আর যা চাও বহাল রাখ এবং তোমার কাছেই রয়েছে লওহে মাহফূয বা সংরক্ষিত ফলক। উমার ( রাঃ ) সম্বন্ধে উল্লেখ আছে যে, তিনি তাওয়াফ কালীন সময়ে কাঁদতেন এবং এই দু'আ পড়তেন: ( (اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ شَقْوَةً أوْ ذَنْبًا فَامْحُهُ، فَإنَّكَ تَمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ، وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ، فَاجْعَلْهُ سَعَادَةً وَمَغْفِرَةً ))। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যদি তুমি আমার ব্যাপারে দুর্ভাগ্য বা পাপ লিখে দিয়েছ, তাহলে তা মিটিয়ে দাও, কেননা তুমি যা চাও মিটিয়ে দাও আর যা চাও বহাল রাখ, আর তোমার কাছেই রয়েছে লওহে মাহফূয বা সংরক্ষিত ফলক, সুতরাং তা তুমি সৌভাগ্য ও ক্ষমায় পরিবর্তন করে দাও। ( ইবনে কাসীর ) এই অর্থের উপর আপত্তি আসতে পারে যে, অন্য হাদীসে তো এসেছে, ( جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ ) অর্থাৎ, যা কিছু ঘটবে, তা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে। ( বুখারী, হাদীস নং ৫০৭৬ ) এর জবাব এই দেয়া হয়েছে যে, এই পরিবর্তনও ভাগ্যে লিখিত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত। ( ফাতহুল কাদীর )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আল্লাহ্ যা ইচ্ছে তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছে তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন [ ১ ] এবং তাঁরই কাছে আছে উম্মুল কিতাব [ ২ ]। [ ১ ] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা যা ইচ্ছে তা পরিবর্তন করে অন্য কিছু নাযিল করেন, আবার যা ইচ্ছে তা ঠিক রাখেন। এটা সম্পূর্ণই তাঁর ইচ্ছাধীন। শরী’আতের মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন করার সম্পূর্ণ ইখতিয়ার তাঁরই। তবে কোন জিনিস পরিবর্তন করবেন আর কোনটি পরিবর্তন করবেন না, কোন হুকুমকে অন্য হুকুমের পরিবর্তে নাযিল করবেন আর কোনটিকে পুরোপুরি রহিত করবেন সে সবই তাঁর কাছে যে মূল কিতাব আছে সে অনুসারেই হবে। সেখানে কোন পরিবর্তন নেই। [ ইবন কাসীর, ইবন আব্বাস ও কাতাদা হতে ] [ ২ ] এখানে ( اُمُّ الْكِتٰبِ ) এর শাব্দিক অর্থ মূলগ্রন্থ। এর দ্বারা লওহে-মাহফুয বুঝানো হয়েছে, যাতে কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে পারে না। চাই সেটা শরী’আত সম্পর্কিত হোক অথবা তাকদীর সম্পর্কিত হোক। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর শরী’আতের মধ্য থেকে যা ইচ্ছা তা রহিত করেন। আর যা ইচ্ছে তা নাযিল করেন। কিন্তু মূলটি উম্মুল কিতাব তথা লাওহে মাহফূযে আছে। সেখানে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। অনুরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির তাকদীর সম্পর্কে লাওহে মাহফূজে যা লিখা আছে তাতে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। [ ইবন কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৩৮-৩৯ আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে ( সঃ ) বলেনঃ হে মুহাম্মদ ( সঃ )! যেমন তুমি মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর রাসূল। অনুরূপভাবে তোমার পূর্ববর্তী সমস্ত রাসূলও মানুষই ছিল। তারা খাদ্য খেতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো। তাদের স্ত্রী এবং সন্তান সন্ততিও ছিল। এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূলকে ( সঃ ) সম্বোধন করে বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তুমি বলঃ আমি তোমাদের মতই মানুষ, আমার উপর ( আল্লাহর পক্ষ থেকে ) ওয়াহী করা হয়ে থাকে মাত্র ।” ( ১৮: ১১০ )সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমি ( নফল ) রোযাও রাখি এবং ( সময়ে ) পরিত্যাগও করি আমি ( রাত্রে তাহাজ্জুদের নামাযের জন্যে ) দাঁড়িয়েও থাকি আবার ( সময়ে ) নিদ্রাও যাই, আমি গোশত ভক্ষণ করি, এবং নারীদেরকে বিয়েও করি । ( জেনে রেখোঁরেখো যে, ) যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আমার মধ্যে নয়।”হযরত আবু আইয়ুব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ চারটি জিনিষ রাসূলদের সুন্নাত ( ১ ) সুগন্ধি ব্যবহার করা । ( ২ ) বিবাহ করা। ( ৩ ) মেসওয়াক ( দাঁতুন ) করা এবং ( ৪ ) মেহেন্দী লাগানো। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়। এটা হচ্ছে আল্লাহ তাআ’লার অধিকার ভুক্ত জিনিষ। তিনি যা চান তাই করেন, যা ইচ্ছা হুকুম করেন। প্রত্যেক নির্দিষ্ট সময় ও মেয়াদ কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রত্যেক জিনিষেরই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা জানেন যা কিছু আকাশে ও পৃথিবীতে রয়েছে। এই সব কিছু কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে এবং এটা তো আল্লাহ তাআ’লার কাছে খুবই সহজ।( আরবি ) আল্লাহ তাআ’লার এই উক্তি সম্পর্কে যহ্হাক ইবনু মাযাহিম ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আসমান হতে অবতারিত প্রত্যেক কিতাবের একটি নির্দিষ্ট সময় এবং একটি নির্ধারিত মেয়াদ রয়েছে। ওগুলির মধ্যে যেটাকে চান আল্লাহ তাআ’লা মানসূখ বা রহিত করে থাকেন এবং যেটাকে চান ঠিক রাখেন। সুতরাং তিনি স্বীয় রাসূল হযরত মুহাম্মদের ( সঃ ) যে এই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এর দ্বারা পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব রহিত হয়ে গেছে। আল্লাহ যা ইচ্ছা উঠিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা বাকী রাখেন। বছরের বিষয়গুলি তিনি নির্ধারিত করে থাকেন। কিন্তু সেগুলি তাঁর ইচ্ছাধীন। এবং যেটা ইচ্ছা বদলিয়ে দেন। তবে দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য এবং জীবন ও মৃত্যুর উপর এটা প্রযোজ্য নয়, বরং এগুলি এই নিয়মের ব্যতিক্রম। এগুলিতে কোন পরিবর্তন নেই। মানসূর ( রঃ ) বলেনঃ “ আমি হযরত মুজাহিদকে ( রঃ ) জিজ্ঞেস করলামঃ আমাদের কারো নিম্নরূপ দুআ’ করা কি ধরনের হবে? “হে আল্লাহ! যদি আমার নাম পূণ্যবানদের তালিকায় লিপিবদ্ধ থাকে তবে তা বাকী রাখুন । আর যদি পাপিষ্ঠদের তালিকাভুক্ত থাকে তবে তা উঠিয়ে দিন এবং পুণ্যবানদের অন্তর্ভূক্ত করুণ।” উত্তরে তিনি বললেনঃ “ এটা তো খুব উত্তম দুআ’!” এক বছর বা তারও কিছু বেশী দিন পর তাঁর সাথে পুনরায় আমার সাক্ষাৎ হলে আবার আমি তাকে উপরোক্ত প্রশ্ন করি । এবার তিনি ( আরবি ) ( ৪৪: ৩ ) হতে দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন “ কদরের রাত্রে এক বছরের জীবিকা, বিপদ-আপদ নির্ধারিত হয়ে যায় । তারপর আল্লাহ তাআ’লা যা চান আগাপাছা করে থাকেন। হাঁ, তবে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের লিখন পরিবর্তন হয় না।”হযরত শাকীক ইবনু সালমা ( রঃ ) প্রায়ই নিম্নের দুআ’টি করতেনঃ “ হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাকে হতভাগ্য ও পাপিষ্ঠদের তালিকাভুক্ত করে থাকেন তবে তা মুছে ফেলুন এবং পুণ্যবান ও সৌভাগ্যবানদের তালিকাভূক্ত করে দিন । যদি আপনি আমার নামটি সৎ লোকদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে থাকেন তবে তা বাকী রাখুন। আপনি যা ইচ্ছা মিটিয়ে থাকেন এবং যা ইচ্ছা বাকী রাখেন। প্রকৃত লিখন আপনার কাছেই রয়েছে।”হযরত উমার ইবনু খাত্তাব ( রাঃ ) বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করার সময় ক্রন্দনরত অবস্থায় নিম্নরূপ দুআ’ করতেনঃ “ হে আল্লাহ! যদি আপনি আমার উপর পাপ লিখে থাকেন তবে তা মিটিয়ে দিন । আপনি যা চান মিটিয়ে থাকেন এবং যা চান বাকী রাখেন। কিতাবের মূল আপনার কাছেই রয়েছে। আপনি ওটাকে সৌভাগ্য রহমত করে দিন!” হযরত ইবনু মাসউদও ( রাঃ ) অনুরূপ দুআ’ করতেন। হযরত কা'ব ( রাঃ ) আমীরুল মুমিনীন হযরত উমারকে ( রাঃ ) বলেনঃ “ যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকতো তবে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে সবই আমি আপনাকে বলে দিতাম ।” তখন হযরত উমর ( রাঃ ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ ঐ আয়াতটি কি?” উত্তরে তিনি আল্লাহ আআ’লার ( আরবি ) এই উক্তিটিই পাঠ করেন । এইসব উক্তির ভাবার্থ এই যে, তকদীরের পরিবর্তন আল্লাহ তাআ’লার ইখতিয়ারের বিষয়। এ ব্যাপারে হযরত সাওবান ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কোন কোন পাপের কারণে মানুষকে রূযী থেকে বঞ্চিত করে দেয়া হয়, আর তকদীরকে দুআ’ ছাড়া অন্য কিছুতে পরিবর্তন করতে পারে না এবং পূণ্য ছাড়া অন্য কিছুতে আয়ু বেশী করতে পারে না ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসায়ী ( রঃ ) ও ইমাম ইবনু মাজাহও ( রঃ ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, আত্মীয়তা সম্পর্ক যুক্ত করণ আয়ু বৃদ্ধি করে থাকে। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, দুআ’ ও তকদীরের সাক্ষাৎ ঘটে, আসমান ও যমীনের মাঝে।হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, মহা মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে লাওহে মাহফুয রয়েছে যা পাঁচ শ' বছরের পথের জিনিষ। ওটা সাদা মুক্তা দ্বারা নির্মিত। ওতে মনি মাণিক্যের দু’টি আবরণী রয়েছে। প্রত্যই আল্লাহ তাআ’লা তিনশ ষাট বার করে ওর প্রতি দৃষ্টি দেন। যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা ঠিক রাখেন। উম্মুল কিতাব তাঁরই কাছেই রয়েছে। ( এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবুদ্দারদা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ রাত্রির তিন ঘণ্টা বাকী থাকতে যিকর খোলা হয় । প্রথম ঘণ্টায় ঐ যিকরের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয় যা আল্লাহ ছাড়া কেউ দেখে না। সুতরাং তিনি যা চান মিটিয়ে দেন এবং যা চান ঠিক রাখেন ( এবং এরপর পুরো হাদীসটি বর্ণনা করেন )। ( এ হাদীসটিও ইমাম ইবনু জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)কালবী ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা জীবিকা বৃদ্ধি করা ও হ্রাস করা এবং আয়ু বৃদ্ধি করা ও হ্রাস করা বুঝানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ এ কথা আপনার নিকট কে বর্ণনা করেছেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমার কাছে বর্ণনা করেছেন আৰ সা’লেহ ( রঃ ), তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু রাবাব ( রাঃ ) এবং তার কাছে বর্ণনা করেছেন নবী ( সঃ ) ।” অতঃপর তাঁকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “ সমস্ত কথাই লিপিবদ্ধ করা হয় । অতঃপর বৃহস্পতিবার ঐ সব কথা বের করে দেয়া হয় যেগুলি পুরস্কার ও শাস্তি প্রদান থেকে শূন্য ( অর্থাৎ যার জন্যে ) পুরস্কারও দেয়া হয় না এবং শাস্তিও প্রদান করা হয় না। যেমন তোমার উক্তিঃ ‘আমি খেয়েছি, আমি পান করেছি, আমি এসেছি, আমি গিয়েছি ইত্যাদি। এগুলি সত্যকথা বটে, অথচ পুরষ্কার ও শাস্তি প্রদানের বিষয় নয়। আর যে গুলি সাওয়াব ও আযাবের বিষয় সেগুলি লিখে নেয়া হয়।” হযরত ইবনু আব্বাসের ( রাঃ ) উক্তি এই যে, দু’টি কিতাব রয়েছে। একটি হতে তিনি যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা ঠিক রাখেন এবং তাঁর কাছে থাকে আসল কিতাব। তিনি আরো বলেন যে, এর দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে এক যুগ পর্যন্ত আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লেগে থাকলো। অতঃপর তার অবাধ্যতার কাজে লেগে গেল এবং ওর উপরই মারা গেল। সুতরাং তার পূণ্য মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যার জন্যে ঠিক রাখা হয় সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে এখন তো নাফরমানীর কাজে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে তার জন্যে তার বাধ্য ও অনুগত থাকা পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। কাজেই শেষ সময়ে সে ভাল কাজে লেগে পড়ে এবং এর উপরই মারা যায়। এটাই হচ্ছে ঠিক রাখা।হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন না। হযরত ইবনু আব্বাসের ( রাঃ ) উক্তি হচ্ছেঃ তিনি যা চান মানসূখ বা রহিত করে দেন এবং যা চান পরিবর্তন করেন না। রহিতকারীও তাঁর হাতে এবং পরিবর্তনও তাঁরই হাতে। কাতাদা’র ( রঃ ) উক্তি অনুসারে এই আয়াতটি হচ্ছেঃ ( আরবি ) এই আয়াতের মতই। অর্থাৎ “ আমি যা ইচ্ছা মানসূখ বা রহিত করি এবং যা ইচ্ছা বাকী ও চালু রাখি ।” ( ২: ১০৬ )। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, যখন “ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন রাসূল কোন মু’জিযা দেখাতে পারেন না ।” এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন কুরায়েশদের কাফিররা বলেঃ “ তাহলে তো মুহাম্মদ ( সঃ ) সম্পূর্ণ শক্তিহীন, কাজ থেকে তো অবকাশ লাভ করা হয়েছে!” তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ আমি যা ইচ্ছা করি তার জন্যে আমার নতুন কিছু সৃষ্টি করে থাকি । প্রত্যেক রমযান মাসে নবায়ন হয়ে থাকে ( প্রত্যেক রমযান মাসে আমি তার কাছে বর্ণনা করে থাকি ), অতঃপর আল্লাহ তাআ’লা যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা ঠিক রাখেন মানুষের জীবিকা, তাদের বিপদ-আপদ, আর তিনি তাদেরকে যা প্রদান করেন এবং তাদের জন্যে যা বণ্টন করেন।হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) বলেন যে, যার মৃত্যু এসে যায় সে চলে যায়, আর যে জীবিত থাকে সে দুনিয়ায় থেকে যায়, যে পর্যন্ত না সে তার দিন পুরো করে নেয়। ইমাম ইবনু জারীরও ( রঃ ) এই উক্তিটি পছন্দ করেছেন। হালাল, হারাম তার কাছে রয়েছে এবং কিতাবের মূল তাঁরই হাতে আছে। কিতাব স্বয়ং বিশ্বপ্রতিপালকের কাছেই রয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) হযরত কা'বকে ( রাঃ ) উম্মুল কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “ আল্লাহ তাআ’লা তার মাখলুককে এবং তাদের আমলকে জেনে নেন । অতঃপর তিনি বলেনঃ “ কিতাবের আকার বিশিষ্ট হয়ে যাও ।” তখন তা হয়ে যায়। হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, উম্মুল কিতাব দ্বারা যিকরকে বুঝানো হয়েছে।
সূরা রা'দ আয়াত 39 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সে বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যা তুমি নাযিল করেছ, আমরা
- আপনি বলুন, তোমরা তো তোমাদের জন্যে দুটি কল্যাণের একটি প্রত্যাশা কর; আর আমরা প্রত্যাশায় আছি
- এই ধন-সম্পদ দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টিলাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ তাঁর রসূলের
- পথবিশিষ্ট আকাশের কসম,
- এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী
- আমি জানি না সম্ভবতঃ বিলম্বের মধ্যে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষা এবং এক সময় পর্যন্ত ভোগ
- আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
- এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌছে যাও।
- সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে।
- এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা রা'দ ডাউনলোড করুন:
সূরা Raad mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Raad শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers