কোরান সূরা ইউসুফ আয়াত 4 তাফসীর
﴿إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ﴾
[ يوسف: 4]
যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি। [সূরা ইউসুফ: 4]
Surah Yusuf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Yusuf ayat 4
স্মরণ করো! ইউসুফ তাঁর পিতাকে বললেন -- ''হে আমার আব্বা! আমি নিশ্চয়ই দেখলাম এগারোটি তারা আর সূর্য ও চন্দ্র -- তাদের দেখলাম আমার কারণে তারা সিজদারত।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪. ওহে রাসূল! আমি আপনাকে ঘটনাটির খবর দিচ্ছি। আপনি শুনুন, ইউসুফ ( আলাইস-সালাম ) যখন তাঁর পিতা ইয়াক‚ব ( আলাইস-সালাম ) কে বলেছিলেন: ওহে আব্বাজান! আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চন্দ্র আমাকে সাজদাহ করছে। এই স্বপ্নটি ইউসুফ ( আলাইস-সালাম ) এর জন্য ছিল একটি অগ্রিম সুসংবাদ।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যখন ইউসুফ[১] তার পিতাকে বলল, ‘হে আমার পিতা! আমি ( স্বপ্নে ) এগারটি নক্ষত্র, সূর্য এবং চন্দ্র দেখলাম;[২] দেখলাম ওরা আমাকে সিজদাহ করছে।’ [১] অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! তোমার সম্প্রদায়ের নিকট ইউসুফ ( আঃ )-এর ঘটনা বর্ণনা কর, যখন সে তার পিতাকে বলল---। ইউসুফ ( আঃ )-এর পিতা ছিলেন ইয়াকূব ( আঃ ); যেমন অন্য জায়গায় স্পষ্টভাবে তা উল্লিখিত হয়েছে। আর হাদীসেও উক্ত সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়েছে, কারীম ( সম্মানিত ) বিন কারীম বিন কারীম, ইউসুফ বিন ইয়াকূব বিন ইবরাহীম ( আলাইহিমুস সালাম )। ( আহমাদ ২/৯৬ ) [২] কোন কোন তফসীরবিদ বলেছেন যে, এগারটি নক্ষত্র থেকে উদ্দেশ্য হল, ইউসুফ ( আঃ )-এর এগার ভাই। আর চাঁদ ও সূর্য থেকে উদ্দেশ্য হল, তাঁর পিতা-মাতা। এ স্বপ্নের তা'বীর ( ব্যাখ্যা ) ৪০ অথবা ৮০ বছর পর যখন তাঁর পিতা-মাতা সহ সমস্ত ভায়েরা মিসরে গিয়ে তাঁর সামনে সিজদাবনত হয়েছিলেন, তখন বাস্তব রূপ পেয়েছিল। যেমন এ কথা সূরার শেষের দিকে ( ১২:১০০ নং আয়াতে ) আসবে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
স্মরণ করুন, যখন ‘ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিলেন, ‘ হে আমার পিতা ! আমি তো দেখেছি এগার নক্ষত্র , সূর্য এবং চাঁদকে, দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজ্দাবনত অবস্থায় [ ১ ]। [ ১ ] ইউসুফ ‘আলাইহিস সালাম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ”কারীম ইবনে কারীম ইবনে কারীম ইবনে কারীম হল ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ‘আলাইহিমুস সালাম। অর্থাৎ চার পুরুষ ধরে সম্মানিত হচ্ছেন ইউসুফ আলাইহিস সালাম। [ বুখারীঃ ৩৩৯০, ৪৬৮৮ ] অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, সবচেয়ে সম্মানিত কে? তিনি বললেনঃ তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত হল যে বেশী তাকওয়ার অধিকারী। লোকেরা বললঃ আমরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করছি না, তখন তিনি বললেনঃ তাহলে সবচেয়ে সম্মানিত হলেন আল্লাহর নবী ইউসুফ। তার পিতা একজন নবী ছিলেন, আর তার দাদাও একজন নবী, যেমনিভাবে তার পরদাদাও নবী ৷ [ বুখারী ৩৩৫০, মুসলিমঃ ২৩৭৮ ] ইউসুফ ‘আলাইহিস সালাম তার পিতাকে বললেনঃ পিতা! আমি স্বপ্নে এগারটি নক্ষত্র এবং সূর্য ও চন্দ্রকে দেখেছি। আরো দেখেছি যে, তারা আমাকে সিজ্দা করছে। এটা ছিল ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর স্বপ্ন। এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এগারটি নক্ষত্রের অর্থ হচ্ছে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর এগার ভাই, সূর্য ও চন্দ্রের অর্থ পিতা ও মাতা। তিনি আরো বলেনঃ নবীদের স্বপ্ন ছিল ওহীর নামান্তর। [ তাবারী; ইবন কাসীর ] হাদীসে এসেছে, ‘নেক স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ স্বপ্ন দেখবে তখন সে যেন তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং তার বাম দিকে থুথু ফেলে। ফলে সেটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [ বুখারী ৬৯৮৬ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ ‘হে মুহাম্মদ ( সঃ )! তোমার কওমের কাছে ইউসুফের ( আঃ ) কাহিনীটি বর্ণনা কর।' হযরত ইউসুফের ( আঃ ) পিতা হচ্ছেন ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ( আঃ )। যেমন মুসনাদে আহমদে ইবনু উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কারীম ইবনু কারীম ইবনু কারীম ইবনু কারীম ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ( আঃ ) ।”হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহকে ( সঃ ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ লোকদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত কে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “তাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যার অন্তরে আল্লাহর ভয় সবচেয়ে বেশি আছে ।” সাহাবীগণ বললেনঃ “ আমরা আপনাকে এটা জিজ্ঞেস করছি না ।” তিনি বললেনঃ “ তাহলে মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি হচ্ছেন আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ ( আঃ ) যিনি নিজেও ছিলেন নবী, পিতাও ছিলেন নবী, পিতামহও ছিলেন নবী এবং প্রপিতামহও ছিলেন আল্লাহর নবী ও তাঁর খলীল বা দোস্ত ।” তাঁরা এবারও বললেনঃ “ আমরা এটাও জিজ্ঞেস করি নাই ।” তিনি তখন তাদেরকে প্রশ্ন করলেনঃ “ তা হলে কি তোমরা আমাকে আরবের গোত্রগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো?” তারা জবাবে বললেনঃ “জ্বি, হ্যাঁ ।' তিনি বললেনঃ “ তা হলে জেনে রেখোঁরেখো যে, তোমাদের মধ্যে অজ্ঞতার যুগে যারা ভাল ও ভদ্র ছিল, ইসলাম গ্রহণের পরেও তারা ভাল ও সম্ভান্তই থাকবে যদি তারা বোধশক্তি লাভ করে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) স্বীয় 'সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবীদের স্বপ্ন আল্লাহ তাআ’লার ওয়াহী হয়ে থাকে। তাফসীরকারকগণ বলেছেন যে, এখানে এগারোটি নক্ষত্র দ্বারা হযরত ইউসুফের ( আঃ ) এগারোটি ভাইকে বুঝানো হয়েছে। আর সুর্য ও চন্দ্র দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর পিতা ও মাতা। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা স্বপ্ন দেখার চল্লিশ বছর পর প্রকাশ পায়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, ব্যাখ্যা প্রকাশ পায় আশি বছর পর, যখন তিনি তাঁর পিতা মাতাকে রাজ-সিংহাসনে বসান এবং তাঁর এগারোটি ভাই তার সামনে সিজদাবনত হয়। ঐ সময় তিনি বলেনঃ “ হে পিতঃ! এটাই আমার পূর্বেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা, আমার প্রতিপালক ওটা সত্যে পরিণত করেছেন ।”হযরত জা’বির ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহুদীদের মধ্যে বুসতানা’ নামক একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেন। তিনি নবীর ( সঃ ) নিকট এসে বলেনঃ “ হে মুহাম্মদ ( সঃ )! যে এগারটি নক্ষত্র হযরত ইউসুফকে ( আঃ ) সিজদা করেছিল ওগুলির নাম আমাকে বলে দিন ।” বর্ণনাকারী বলেন যে, তাঁর একথা শুনে নবী ( সঃ ) কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। তখন হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) আকাশ হতে অবতরণ করে তাঁকে তারকা গুলির নাম বলে দেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন ঐ লোকটিকে ডেকে বলেনঃ “ তারকাগুলির নাম তোমাকে বলে দিলে তুমি ঈমান আনবে তো?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, নিশ্চয় ।” নবী ( সঃ ) বললেনঃ “ ওগুলির নাম হচ্ছেঃ ( ১ ) জিরইয়ান, ( ২ ) তা’রিক, ( ৩ ) দিয়াল, ( ৪ ) যুল কানফাত, ( ৫ ) কা’বিস, ( ৬ ) অসাব, ( ৭ ) আমূদান, ( ৮ ) ফালীক, ( ৯ ) মিসবাহ, ( ১০ ) যরূহ এবং ( ১১ ) ফারাগ ।” তখন ইয়াহূদী আ’লেমটি বলে উঠলেনঃ “ আল্লাহর শপথ! ঐ নক্ষত্রগুলির এই নামই বটে । ( এ হাদীসটি ইমাম আবু জাফর ইবনু জারীর (রাঃ ) বর্ণনা করেছেন। এই রিওয়াইয়াতটি দালায়েলে বায়হাকী, মুসনাদে আবি ইয়ালা, মুসনাদে বাযযার এবং তাফসীরে আবি হা’তিমেও রয়েছে)আর একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, হযরত ইউসুফ ( আঃ ) যখন তাঁর স্বপ্নের কথা তাঁর পিতার নিকট বর্ণনা করেন তখন তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব ( আঃ ) তাঁকে বলেনঃ এটা সত্য স্বপ্ন। পরবর্তীকালে আল্লাহ এটা পূর্ণ করে দেখাবেন। তিনি বলেন যে, সুর্য দ্বারা তাঁর পিতা এবং চন্দ্র দ্বারা তাঁর মাতাকে বুঝানো হয়েছে। ( এ রিওয়াইয়াতটি মুসনাদে আবি ইয়ালায় রয়েছে। কিন্তু এই রিওয়াইতের সনদে হাকীম ইবনু যাহীর ফাযারী একাকী রয়েছেন, যাকে কতিপয় ইমাম দুর্বল বলেছেন। আর অধিকাংশই তাকে পরিত্যাগ করেছেন। হুসনে ইউসুফের বর্ণনাকারী ইনিই। চারজন শায়েখই তাকে দুর্বল বলেছেন )
সূরা ইউসুফ আয়াত 4 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- সিংহাসনে বসে অবলোকন করবে।
- এগুলোকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। অতঃপর সে তাদের পা ও গলদেশ ছেদন করতে শুরু করল।
- কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম।
- তারা সকালে লাফিয়ে লাফিয়ে সজোরে রওয়ানা হল।
- অতঃপর মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেলেন ক্রদ্ধ ও অনুতপ্ত অবস্থায়। তিনি বললেনঃ হে আমার
- তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
- সে কি তোমাদেরকে এই ওয়াদা দেয় যে, তোমরা মারা গেলে এবং মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত
- তারা বলে, কোরআন কেন দুই জনপদের কোন প্রধান ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ হল না?
- মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর
- আমি তার জন্যে পরবর্তীদের মধ্যে এ বিষয়ে রেখে দিয়েছি যে,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ইউসুফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Yusuf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Yusuf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers