কোরান সূরা ক্বাসাস আয়াত 54 তাফসীর
﴿أُولَٰئِكَ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُم مَّرَّتَيْنِ بِمَا صَبَرُوا وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ﴾
[ القصص: 54]
তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে তাদের সবরের কারণে। তারা মন্দের জওয়াবে ভাল করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। [সূরা ক্বাসাস: 54]
Surah Al-Qasas in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Qasas ayat 54
এদের দুইবার তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে যেহেতু তারা অধ্যবসায় করেছিল, এবং তারা ভালো দিয়ে মন্দকে প্রতিরোধ করে, আর আমরা তাদের যে রিযেক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে থাকে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৫৪. উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলের সাওয়াব দু’বার দিবেন। কারণ, তারা নিজেদের কিতাবের উপর ঈমান আনা এবং মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর উপর ঈমান আনার ব্যাপারে তাঁকে নবী করে পাঠানো পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করেছে। উপরন্তু তারা নিজেদের নেক আমলগুলোর সাওয়াবের মাধ্যমে তাদের অর্জিত পাপের প্রতিকার করে এবং তাদেরকে দেয়া রিযিক থেকে তারা কল্যাণের ক্ষেত্রসমূহে পথে ব্যয় করে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
ওদেরকে দু’বার পুরস্কৃত করা হবে, কারণ ওরা ধৈর্যশীল।[১] ওরা ভালোর দ্বারা মন্দকে দূর করে[২] এবং আমি ওদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। [১] 'ধৈর্যশীলতা' বলতে সর্বাবস্থায় আম্বিয়া ও আল্লাহর কিতাবের উপর ঈমান আনা এবং তার উপর দৃঢ়তার সাথে অবিচলিত থাকা। যারা পূর্ববর্তী নবী ও তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান এনেছেন এবং তারপর পরবর্তী নবী ও তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান আনেন, তাঁদের জন্য রয়েছে ডবল পুরস্কার। হাদীসেও তাঁদের এই মর্যাদা বর্ণনা করে নবী ( সাঃ ) বলেছেন, "তিন শ্রেণীর লোককে দ্বিগুণ সওয়াব দান করা হবে। ওদের মধ্যে এক শ্রেণীর লোক হল, সেই ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান; যে নিজ নবীর উপর ঈমান এনেছিল, তারপর আমার উপর ঈমান আনল। ( বুখারীঃ শিক্ষা অধ্যায়, মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায় ) [২] অর্থাৎ, অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণে অন্যায় করে না ( ইট খেয়ে পাটকেল ছুঁড়ে না ); বরং ক্ষমা করে দেয় ও উপেক্ষা করে চলে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তাদেরকে দু‘বার প্রতিদান দেয়া হবে [ ১ ]; যেহেতু তারা ধৈর্যশীল এবং তারা ভাল দিয়ে মন্দের মুকাবিলা করে [ ২ ]। আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। [ ১ ] অর্থাৎ আহলে কিতাবের মুমিনদেরকে দুইবার পুরস্কৃত করা হবে। পবিত্র কুরআনে এমনি ধরনের প্রতিশ্রুতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্ৰা স্ত্রীগণের সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, وَمَن يَقْنُتْ مِنكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ وَتَعْمَلْ صَالِحًا “ তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত হবে ও সৎকাজ করবে তাকে আমরা পুরস্কার দেব দু’বার” [ সূরা আল-আহযাবঃ ৩১ ] অনুরূপভাবে এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তিন ব্যাক্তির জন্য দু’বার পুরস্কার রয়েছে ১ । যে কিতাবধারী পূর্বে তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারপর এই নবীর প্রতি ঈমান এনেছে ২। যে অপরের মালিকানাধীন দাস মনিব এবং তার মূল প্ৰভু রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য করে ৩। যার মালিকানায় কোন যুদ্ধ-লব্ধ দাসী ছিল সে তাকে গোলামী থেকে মুক্ত করে বিবাহিতা স্ত্রী করে নিল।’ [ বুখারীঃ ৯৭ ] এখানে চিন্তাসাপেক্ষ বিষয় এই যে, এই কয়েক প্রকার লোককে দু বার পুরস্কৃত করার কারণ কি? এর জওয়াবে বলা যায় যে, তাদের প্রত্যেক আমল যেহেতু দুটি, তাদেরকে দুইবার পুরস্কার প্রদান করা হবে। কিতাবধারী মুমিনের দুই আমল এই যে, সে পূর্বে এক নবীর প্রতি ঈমান এনেছিল, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান এনেছে। পবিত্ৰ স্ত্রীগণের দুই আমল এই যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য ও মহব্বত রাসূল হিসেবেও করেন, আবার স্বামী হিসেবেও করেন। গোলামের দুই আমল তার দ্বিমুখী আনুগত্য, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এবং তার মালিকের আনুগত্য। বাঁদীকে মুক্ত করে যে বিবাহ করে, তার এক আমল মুক্ত করা, আর দ্বিতীয় আমল বিবাহ করা। [ কুরতুবী ] [ ২ ] অর্থাৎ তারা মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয় বরং ভালো দিয়ে দেয়। মিথ্যার মোকাবিলায় মিথ্যা নয় বরং সত্য নিয়ে আসে। যুলুমকে যুলুম দিয়ে নয় বরং ইনসাফ দিয়ে প্রতিরোধ করে। দুষ্টামির মুখোমুখি দুষ্টামির সাহায্যে নয় বরং ভদ্রতার সাহায্যে হয়। এই মন্দ ও ভাল বলে কি বোঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে অনেক উক্তি বর্ণিত আছেঃ কেউ বলেন, ভাল বলে ইবাদত এবং মন্দ বলে গোনাহ বোঝানো হয়েছে। কেননা, পুণ্য কাজ অসৎকাজকে মিটিয়ে দেয়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ গোনাহের পর নেক কাজ কর । নেককাজ গোনাহকে মিটিয়ে দেবে”। [ তিরমিযীঃ ১৯৮৭ ] কেউ কেউ বলেন, ভাল বলে জ্ঞান ও সহনশীলতা এবং মন্দ বলে অজ্ঞতা ও অসহনশীলতা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তারা অপরের অজ্ঞতার জওয়াব জ্ঞান ও সহনশীলতা দ্বারা দেয়। [ বাগভী ] প্রকৃতপক্ষে এসব উক্তির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কেননা, এগুলো সবই ভাল ও মন্দের অন্তর্ভুক্ত। এ আয়াতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ হেদায়াত রয়েছেঃ এক, কারও দ্বারা কোন গোনাহ হয়ে গেলে তার প্রতিকার এই যে, এরপর সৎকাজে সচেষ্ট হতে হবে। সৎকাজ গোনাহের কাফ্ফারা হয়ে যাবে। দুই, কেউ কারও প্রতি উৎপীড়ন ও মন্দ আচরণ করলে শরীয়তের আইনে যদিও সমান সমান হওয়ার শর্তে প্ৰতিশোধ নেয়া জায়েয আছে, কিন্তু প্ৰতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে মন্দের প্রত্যুত্তরে ভাল এবং উৎপীড়নের প্রত্যুত্তরে অনুগ্রহ করাই উত্তম। এটা উৎকৃষ্ট চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তর। দুনিয়া ও আখেরাতে এর উপকারিতা অনেক। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “ ভাল ও মন্দ একসমান হতে পারে না । মন্দ ও যুলুমকে উৎকৃষ্ট পন্থায় প্রতিহত কর। ( যুলুমের পরিবর্তে অনুগ্রহ কর )। এরূপ করলে যে ব্যাক্তি ও তোমার মধ্যে শক্ৰতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।” [ সূরা ফুসসিলাতঃ ৩৪ ]
সূরা ক্বাসাস আয়াত 54 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- নিশ্চয় তার জন্যে আমার কাছে রয়েছে মর্যাদা ও শুভ পরিণতি।
- এই কিতাবে ইদ্রীসের কথা আলোচনা করুন, তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।
- আর তাদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালকর্তার এবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে।
- হে রসূলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি
- অতঃপর যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, তা থেকে ভক্ষণ কর যদি তোমরা তাঁর
- মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস
- আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা, রিযিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী।
- কিন্তু আল্লাহ তা’আলার খাঁটি বান্দাগণ নয়।
- আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা
- আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ক্বাসাস ডাউনলোড করুন:
সূরা Qasas mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Qasas শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers