কোরান সূরা নিসা আয়াত 4 তাফসীর
﴿وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا﴾
[ النساء: 4]
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা: 4]
Surah An-Nisa in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 4
আর স্ত্রীলোকদের তাদের মহরানা আদায় করবে নিঃস্বার্থভাবে। কিন্তু যদি তারা নিজেরা এর কোনো অংশ তোমাদের দিতে খুশি হয় তবে তা ভোগ করো সানন্দে ও তৃপ্তির সাথে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪. আর তোমরা বাধ্যতামূলকভাবে মহিলাদেরকে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করবে। বিনা চাপে তারা তোমাদেরকে স্বেচ্ছায় মহরের কিয়দংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা বিনা দ্বিধায় আনন্দ চিত্তে খেতে পারো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও, পরে তারা খুশী মনে ওর ( মোহরের ) কিয়দংশ ছেড়ে দিলে, তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মাহ্র [ ১ ] মনের সন্তোষের সাথে [ ২ ] প্রদান কর; অতঃপর সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মাহ্রের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে [ ৩ ] ভোগ কর। [ ১ ] ইসলামপূর্ব যুগে স্ত্রীর প্রাপ্য মাহ্র তার হাতে পৌঁছতো না; মেয়ের অভিভাবকগণই তা আদায় করে আত্মসাৎ করত। যা ছিল নিতান্তই একটা নির্যাতনমূলক রেওয়াজ। এ প্রথা উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে কুরআন নির্দেশ দিয়েছেঃ ( وَاٰتُوا النِّسَاءَ صَدُقٰتِهِنَّ ) এতে স্বামীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, স্ত্রীর মাহ্র তাকেই পরিশোধ কর; অন্যকে নয়। অন্যদিকে অভিভাবকগণকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, মাহ্র আদায় হলে যার প্রাপ্য তার হাতেই যেন অৰ্পণ করে। তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ যেন তা খরচ না করে। [ ২ ] স্ত্রীর মাহ্র পরিশোধ করার ক্ষেত্রে নানা রকম তিক্ততার সৃষ্টি হত। প্রথমতঃ মাহ্র পরিশোধ করতে হলে মনে করা হত যেন জরিমানার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। এ অনাচার রোধ করার লক্ষেই ( نِحْلَةٍ ) শব্দটি ব্যবহার করে অত্যন্ত হৃষ্টমনে তা পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেননা, অভিধানে ( نِحْلَةٍ ) বলা হয় সে দানকে, যা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে প্রদান করা হয়। মোটকথা, আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে যে, স্ত্রীদের মাহ্র অবশ্য পরিশোধ্য একটা ঋণ বিশেষ। এটা পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরী। পরন্তু অন্যান্য ওয়াজিব ঋণ যেমন সন্তুষ্ট চিত্তে পরিশোধ করা হয়, স্ত্রীর মাহ্রের ঋণও তেমনি হৃষ্টচিত্তে, উদার মনে পরিশোধ করা কর্তব্য। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আব্দুর রহমান ইবন আউফ কোন এক মহিলাকে এক ‘নাওয়া’ ( পাচ দিরহাম পরিমাণ ) মাহ্র দিয়ে বিয়ে করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে খুশী দেখতে পেয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এক মহিলাকে এক নাওয়া পরিমাণ মাহ্র দিয়ে বিয়ে করেছি। [ বুখারী ৫১৪৮ ] [ ৩ ] অনেক স্বামীই তার বিবাহিত স্ত্রীকে অসহায় মনে করে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে মাহ্র মাফ করিয়ে নিত। এভাবে মাফ করিয়ে নিলে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা মাফ হয় না। অথচ স্বামী মনে করত যে, মৌখিকভাবে যখন স্বীকার করিয়ে নেয়া গেছে, সুতরাং মাহরের ঋণ মাফ হয়ে গেছে। এ ধরণের যুলুম প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, “ যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মাহরের কোন অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবেই তোমরা তা হৃষ্টমনে ভোগ করতে পার ।” অর্থ হচ্ছে, চাপ প্রয়োগ কিংবা কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমা করিয়ে নেয়ার অর্থ কোন অবস্থাতেই ক্ষমা নয়। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায়, খুশী মনে মাহরের অংশবিশেষ মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরিভাবে বুঝে নিয়ে কোন অংশ তোমাদের ফিরিয়ে দেয়, তবেই কেবল তোমাদের পক্ষে তা ভোগ করা জায়েয হবে। এ ধরণের বহু নির্যাতনমূলক পন্থা জাহেলিয়াত যুগে প্রচলিত ছিল। কুরআন এসব যুলুমের উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজো মুসলিম সমাজে মাহ্র সম্পর্কিত এ ধরণের নানা নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা প্রচলিত দেখা যায়। কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী এরূপ নির্যাতনমূলক পথ পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। আয়াতে ‘হষ্টচিত্তে’ প্রদানের শর্ত আরোপ করার পেছনে গভীর তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। কেননা, মাহ্র স্ত্রীর অধিকার এবং তার নিজস্ব সম্পদ। হৃষ্টচিত্তে যদি সে তা কাউকে না দেয় বা দাবী ত্যাগ না করে, তবে স্বামী বা অভিভাবকের পক্ষে সে সম্পদ কোন অবস্থাতেই হালাল হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে শরীয়তের মূলনীতিরূপে এরশাদ করেছেনঃ ‘কারো পক্ষে অন্যের সম্পদ তার আন্তরিক তুষ্টি ব্যতীত গ্রহণ করা হালাল হবে না’। [ মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৪২৩ ] এ হাদীসটি এমন একটা মূলনীতির নির্দেশ দেয়, যা সর্বপ্রকার প্রাপ্য ও লেন-দেনের ব্যাপারে হালাল এবং হারামের সীমারেখা নির্দেশ করে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
২-৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা পিতৃহীনদের অভিভাবকগণকে নির্দেশ দিচ্ছেন-পিতৃহীনেরা যখন প্রাপ্ত বয়সে পৌছে ও বিবেকসম্পন্ন হয় তখন তাদেরকে তাদের মাল পুরোপুরি প্রদান করবে। কিছুমাত্র কম করবে না বা আত্মসাৎও করবে না। তাদের মালকে তোমাদের মালের সঙ্গে মিশ্রিত করে ভক্ষণ করার বাসনা অন্তরে পোষণ করো না। হালাল মাল যখন আল্লাহ পাক তোমাদেরকে প্রদান করেছেন-তখন হারামের দিকে যাবে কেন? তোমাদের ভাগ্যে যে অংশ লিপিবদ্ধ তা তোমরা অবশ্যই প্রাপ্ত হবে। তোমাদের হালাল মাল ছেড়ে দিয়ে অপরের মাল যা তোমাদের জন্যে হারাম তা কখনও গ্রহণ করো না। নিজেদের দুর্বল ও পাতলা পশুগুলো দিয়ে অপরের মোটাতাজাগুলো হস্তগত করো না। মন্দ দিয়ে ভাল নেয়ার চেষ্টা করো না। পূর্বে লোকেরা এরূপ করতো যে, তারা পিতৃহীনদের ছাগলের পাল হতে বেছে বেছে ভালগুলো নিয়ে নিজেদের দুর্বল ছাগলগুলো দিতো এবং এভাবে গণনা ঠিক রাখতো। মন্দ দিরহামগুলো তাদের মালে রেখে দিয়ে তাদের ভালগুলো নিয়ে নিতো। অতঃপর মনে করতো যে তারা ঠিকই করেছে। কেননা, ছাগলের পরিবর্তে ছাগল দিয়েছে এবং দিরহামের পরিবর্তে দিরহাম দিয়েছে। তারা পিতৃহীনদের সম্পদকে নিজেদের সম্পদের মধ্যে মিশ্রিত করে দিয়ে এ কৌশল করতো যে, এখন আর স্বাতন্ত্র কি আছে? তাই আল্লাহ পাক বলেন-“ তাদের সম্পদ নষ্ট করো না, কেননা, এটা বড় পাপ । একটি দুর্বল হাদীসেও আয়াতটির শেষ বাক্যের এ অর্থই বর্ণিত আছে।সুনান-ই-আবু দাউদের একটি দু'আতেও ( আরবী ) শব্দটি পাপের অর্থে এসেছে। হযরত আবু আইয়ুব ( রাঃ ) স্বীয় পত্মীকে তালাক দেয়ার ইচ্ছে করলে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ ‘এক তালাক প্রদানে পাপ হবে। সুতরাং তিনি স্বীয় সংকল্প হতে বিরত থাকেন। অন্য বর্ণনায় এ ঘটনাটি হযরত আবূ তালহা ( রাঃ ) এবং হযরত উম্মে সুলায়েম ( রাঃ )-এর ঘটনা বলে বর্ণিত আছে।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-‘কোন পিতৃহীনা বালিকার লালন পালনের দায়িত্ব যদি তোমাদের উপর ন্যস্ত থাকে এবং তোমরা তাকে বিয়ে করার ইচ্ছে কর, কিন্তু যেহেতু তার অন্য কেউ নেই, কাজেই তোমরা এরূপ করো না যে, তাকে মোহর কম দিয়ে স্ত্রীরূপে ব্যবহার করবে, বরং আরও বহু স্ত্রীলোক রয়েছে তাদের মধ্যে তোমাদের পছন্দমত দুটি, তিনটি এবং চারটিকে বিয়ে কর।হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেনঃ ‘একটি পিতৃহীনা বালিকা ছিল। তার মাল-ধনও ছিল এবং বাগানও ছিল। যে লোকটি তাকে লালন পালন করছিল সে। শুধুমাত্র তার মাল-ধনের লালসায় পূর্ণ মোহর ইত্যাদি নির্ধারণ না করেই তাকে বিয়ে করে নেয়। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আমার ধারণা এই যে, ঐ বাগানে ও মালে এ বালিকাটির অংশ ছিল।'সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, হযরত ইবনে শিহাব ( রঃ ) হযরত আয়েশা ( রাঃ )-কে এ আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “ হে ভাগ্নে! এটা পিতৃহীনা বালিকার বর্ণনা, যে তার অভিভাবকের অধিকারে রয়েছে এবং তার মালে তার অংশ রয়েছে । আর সে বালিকার মাল ও সৌন্দর্য তার চোখে লেগেছে। সুতরাং সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু অন্য জায়গায় বালিকাটি যতটা মোহর ইত্যাদি পেতো ততটা সে দেয় না। সুতরাং সে অভিভাবককে নিষেধ করা হয়েছে যে, সে যেন সে বাসনা পরিত্যাগ করে এবং অন্যান্য স্ত্রীলোকদেরকে পছন্দমত বিয়ে করে নেয়। অতঃপর জনগণ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে ঐ ব্যাপারেই প্রশ্ন করে এবং ( আরবী ) ( ৪:১৬৭ ) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তথায় বলা হয়-যখন পৃতিহীনা মেয়ের মাল ও সৌন্দর্য কম থাকে তখন তো অভিভাবক তার প্রতি কোন আগ্রহ প্রকাশ করে না, সুতরাং এর কোন কারণ নেই যে, তার মাল ও সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার পূর্ণ হক আদায় না করেই তাকে বিয়ে করে নেবে। হ্যাঁ, তবে ন্যায়ের সাথে যদি পূর্ণ মোহর ইত্যাদি নির্ধারণ করতঃ বিয়ে করে তবে কোন দোষ নেই। নচেৎ স্ত্রীলোকের কোন অভাব নেই। তাদের মধ্যে হতে যেন পছন্দ মত সে বিয়ে করে। ইচ্ছে করলে দু’টি, তিনটি এবং চারটি পর্যন্ত করতে পারে। অন্য জায়গাতেও এ শব্দগুলো এ অর্থেই এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে-( আরবী ) অর্থাৎ যে ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তা'আলা দূতরূপে প্রেরণ করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন দুটি ডানা বিশিষ্ট, কেউ রয়েছেন তিনটি ডানা বিশিষ্ট এবং কেউ রয়েছেন চারটি ডানা বিশিষ্ট।'( ৩৫:১ ) ফেরেশতাদের মধ্যে এর চেয়ে বেশী ডানা বিশিষ্ট ফেরেশতাও রয়েছেন। কেননা এটা দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু পুরুষের জন্যে এক সাথে চারটের বেশী স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ, যেমন এ আয়াতেই বিদ্যমান রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) এবং জমহুরের এটাই উক্তি। এখানে আল্লাহ পাক স্বীয় অনুগ্রহ ও দানের বর্ণনা দিচ্ছেন। সুতরাং চারটের বেশীর উপর সমর্থন থাকলেও অবশ্যই তা বলতেন।ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) বলেনঃ কুরআন কারীমের ব্যাখ্যাকারী হাদীস শরীফ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ছাড়া আর কারও জন্যে একই সাথে চারটের বেশী স্ত্রী একত্রিত করা বৈধ নয়।' এর উপরই উলামা-ই-কিরামের ইজমা হয়েছে। তবে কোন কোন শিআ’র মতে তা নয়টি পর্যন্ত একত্রিত করা বৈধ। বরং কোন কোন শিআ’র মতে তা নয়টির বেশী একত্রিত করলেও কোন দোষ নেই। তাদের মতে কোন সংখ্যাই নির্ধারিত নেই। তাদের দলীল হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাজ। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে, তার নয়জন পত্নী ছিলেন। সহীহ বুখারী শরীফের মুআল্লাক হাদীসের কোন কোন বর্ণনাকারী এগার জন বলেছেন।হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পনেরজন স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তেরজনের সাথে তাঁর সহবাস হয়েছিল। একই সময়ে এগারজন পত্নী তার নিকট বিদ্যমান ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নয়জন পত্নী রেখে ইন্তেকাল করেন। আমাদের পক্ষ হতে এর উত্তর এই যে, এটা একমাত্র রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর জন্যেই বৈধ ছিল। তাঁর উম্মতের জন্যে একই সাথে চারটের বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি নেই।এর প্রমাণ রূপে নিম্নের হাদীসগুলো পেশ করা যেতে পারেঃ ( ১ ) হযরত গায়লান ইবনে সালমা সাকাফী ( রাঃ ) যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তখন তার দশজন স্ত্রী বিদ্যমান ছিল। রাসূলুল্লাহ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ তোমার ইচ্ছেমত চারটি স্ত্রী রেখে বাকীগুলো পরিত্যাগ কর । তিনি তাই করেন। অতঃপর হযরত উমার ( রাঃ )-এর খিলাফতের যুগে তিনি তাঁর ঐ স্ত্রীগুলোকেও তালাক দিয়ে দেন এবং স্বীয় ধন-সম্পদ স্বীয় ছেলেদের মধ্যে বন্টন করে দেন। হযরত উমার ( রাঃ ) এ সংবাদ পেয়ে তাকে বলেনঃ ‘সম্ভবতঃ তোমার শয়তান কথা চুরি করেছে এবং তোমার মনে এ ধারণা জন্মিয়ে দিয়েছে যে, তুমি সত্বরই মৃত্যুমুখে পতিত হবে। এজন্যেই তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়েছো যেন তারা তোমার সম্পত্তির অংশ না পায়। আর এ কারণেই তুমি তোমার সম্পদ তোমার ছেলেদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছ। আমি তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি যে, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে রাজমাত কর ( ফিরিয়ে নাও ) এবং তোমার ছেলেদের নিকট হতে মাল ফিরিয়ে নাও। যদি তুমি এ কাজ না কর তবে তোমার মৃত্যুর পর আমি তোমার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদেরকেও তোমার উত্তরাধিকারিণী বানিয়ে দেবো। কেননা, তুমি তাদেরকে এ ভয়েই তালাক দিয়েছে। আর মনে হচ্ছে যে, তোমার মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয়েছে। যদি তুমি আমার কথা অমান্য কর তবে জেনে রেখো যে, আমি তোমার কবরে প্রস্তর নিক্ষেপ করার জন্যে জনগণকে নির্দেশ প্রদান করবো, যেমন আবু রাগালের কবরে প্রস্তর নিক্ষেপ করা হয়।' ( মুসনাদ-ই-আহমাদ, শাফিঈ, জামেউত তিরিমিযী, সুনান-ই-ইবনে মাজা, দারেকুতনী ইত্যাদি ) মারফু হাদীস পর্যন্ত তো এসব কিতাবেই রয়েছে।তবে হযরত উমার ( রাঃ )-এর ঘটনাটি শুধুমাত্র মুসনাদ-ই-আহমাদেই রয়েছে। কিন্তু এ অতিরিক্তটুকু হাসান। তবে ইমাম বুখারী ( রঃ ) এটাকে দুর্বল বলেছেন এবং এর ইসনাদের দ্বিতীয় ধারা বর্ণনা করার পর ঐ ধারাকে অরক্ষিত বলেছেন। কিন্তু এ ত্রুটি প্রদর্শনের ব্যাপারটাও চিন্তার বিষয়। সম্মানিত হাদীস বিশারদগণও এর উপর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু মুসনাদ-ই-আহমাদে বর্ণিত। হাদীসটির সমস্ত বর্ণনাকারীই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের শর্তে নির্ভরযোগ্য। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ঐ দশজন স্ত্রীও মুসলমান হয়েছিলেন। ( সুনান-ই-নাসাঈ )এ হাদীস দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হলো যে, একই সময়ে যদি চারজনের বেশী স্ত্রী রাখা বৈধ হতো তবে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) গায়লান ( রাঃ )-কে। দশজন স্ত্রীর মধ্যে যে কোন চারজনকে রেখে অবশিষ্ট ছয়জনকে তালাক দিতে বলতেন না, কেননা তারা সবাই ঈমান এনেছিলেন। এখানে এটাও স্মরণ রাখার কথা যে, গায়লান ( রাঃ )-এর নিকট তো দশজন স্ত্রী বিদ্যমান ছিলেনই, তথাপি তিনি ছয়জনকে পৃথক করিয়ে দিলেন, তাহলে নতুনভাবে চারজনের বেশী স্ত্রী রাখা কিরূপে সম্ভব হতে পারে? ( ২ ) সুনান-ই-আবু দাউদ ও ইবনে মাজা ইত্যাদির মধ্যে হাদীস রয়েছে, হযরত উমাইয়া আসাদী ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার আটটি স্ত্রী ছিল । আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এটা বর্ণনা করি। তিনি বলেনঃ ‘তোমার ইচ্ছেমত ওদের মধ্যে চারজনকে রাখ।' এর সনদ হাসান এবং এর সাক্ষীও রয়েছে। বর্ণনাকারীদের নামের হেরফের ইত্যাদি এরূপ বর্ণনায় ক্ষতিকর হয় না। ( ৩ ) মুসনাদ-ইশাফিঈর মধ্যে রয়েছে, হযরত নাওফিল ইবনে মুআবিয়া ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার ৫টা স্ত্রী ছিল । আমাকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ ওদের মধ্যে পছন্দমত চারটিকে রাখ এবং একটিকে পৃথক করে দাও । ওদের মধ্যে যে সবচেয়ে বয়স্কা ছিল এবং নিঃসন্তান ছিল তাকে আমি তালাক দিয়ে দেই। সুতরাং এ হাদীসগুলো হযরত গায়লানযুক্ত হাদীসের সাক্ষী, যেমন ইমাম বায়হাকী ( রঃ ) বলেছেন।অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেন-“ যদি একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা বজায় রাখতে না পারার ভয় থাকে তবে একটিকেই যথেষ্ট মনে কর বা দাসীদেরকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাক । যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে- ( আরবী ) অর্থাৎ ‘তোমরা ইচ্ছে করলেও স্ত্রীর মধ্যে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে না।'( ৪:১২৯ ) এখানে এটাও স্মরণ রাখার বিষয় যে, দাসীদের মধ্যে পালা করা ইত্যাদি ওয়জিব নয়, তবে মুস্তাহাব বটে। যে করে সে ভালই করে এবং যে না করে তারও কোন দোষ নেই। এর পরবর্তী বাক্যের ভাবার্থ কেউ কেউ বলেছেন, এটা তোমাদের দারিদ্র বেশী না হওয়ার অতি নিকটবর্তী। যেমন অন্য স্থানে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ যদি তোমরা দারিদ্রের ভয় কর। কোন আরব কবি বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ ‘দরিদ্র ব্যক্তি জানে না যে, সে কখন ধনী হবে এবং ধনী ব্যক্তিও জানে যে, সে কখন দরিদ্র হবে। যখন কোন ব্যক্তি দরিদ্র হয়ে পড়ে তখন আরবের লোকেরা বলে থাকে ( আরবী ) অর্থাৎ লোকটি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। মোটকথা এ অর্থে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখানে এ তাফসীর খুব ভাল বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, যদি আযাদ স্ত্রীলোকদের আধিক্য দারিদ্রের কারণ হতে পারে তবে দাসীদের আধ্যিকও দারিদ্রের কারণ হতে পারবে। সুতরাং জমহুরের উক্তি সত্যিই সঠিক যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “ তোমরা অত্যাচার হতে বেঁচে যাও এটা তারই অতি নিকটবর্তী ।' আরবে বলা হয়- ( আরবী ) অর্থাৎ সে হুকুমের ব্যাপারে অত্যাচার করেছে। আবু তালিবের নিম্নের বিখ্যাত কাসিদায় রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ এমন দাঁড়িপাল্লায় ওজন করছে যা এক যব পরিমাণও কম করে। তার নিকট স্বয়ং তার আত্মাই সাক্ষী রয়েছে যে অত্যাচারী নয়। তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে যে, যখনই কুফাবাসী হযরত উসমান ( রাঃ )-কে প্রদত্ত এক চিঠিতে তাঁকে কিছু দোষারোপ করে তখন তার উত্তরে তিনি লিখেন, ( আরবী ) অর্থাৎ আমি অত্যাচারের দাড়ি-পাল্লা নই। সহীহ ইবনে হিব্বান প্রভৃতির মধ্যে একটি মারফু হাদীসে এ বাক্যের তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে-‘তোমরা অত্যাচার করো না।'হযরত ইবনে আবি হাতিম বলেন যে, এর মারফু হওয়া ভুল কথা, তবে এটা হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর উক্তি বটে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রা ), হযরত আয়েশা ( রাঃ ), হযরত মুজাহিদ ( রঃ ), হযরত ইকরামা, ( রঃ ), হযরত হাসান বসরী ( রঃ ), হযরত আবূ মালিক ( রঃ ), হযরত আবু যারীন ( রঃ ), হযরত নাখঈ ( রঃ ), হযরত শাবী ( রঃ ), যাহ্হাক ( রঃ ), হযরত আতা খুরাসানী ( রঃ ), হযরত কাতাদাহ ( রঃ ), হযরত সুদ্দী ( রঃ ), হযরত মুকাতিল ( রঃ ) প্রভৃতি হতেও এ অর্থ বর্ণিত আছে। হযরত ইকরামাও ( রাঃ ) আবু তালিবের উক্ত কাসিদাটি পেশ করেছেন। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) এটা বর্ণনা করেছেন এবং তিনি নিজেও এটাই পছন্দ করেন।এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে খুশী মনে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও যা দিতে তোমরা স্বীকৃত হয়েছে। তবে যদি স্ত্রী ইচ্ছে প্রণোদিত হয়ে তার সমস্ত মোহর বা কিছু অংশ মাফ করে দেয় তবে তা করার তার অধিকার রয়েছে এবং সে অবস্থায় স্বামীর পক্ষে তা ভোগ করা বৈধ। নবী ( সঃ )-এর পরে কারও জন্যে মোহর ওয়াজিব করা ছাড়া বিয়ে করা জায়েয নয় এবং ফাকি দিয়ে শুধু নামমাত্র মোহর ধার্য করাও বৈধ নয়।'মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত আলী ( রাঃ )-এর উক্তি বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ “ তোমাদের মধ্যে যখন কেউ রোগাক্রান্ত হয় তখন তার উচিত যে, সে যেন তার স্ত্রীর মালের তিন দিরহাম বা কিছু কম বেশী গ্রহণ করতঃ তা দিয়ে মধু ক্রয় করে এবং আকাশের বৃষ্টির পানি তার সাথে মিশ্রিত করে, তাহলে তিনটি মঙ্গল সে লাভ করবে । একটি হচ্ছে স্ত্রীর মাল যাকে আল্লাহ পাক তৃপ্তি সহকারে খেতে বলেছেন, দ্বিতীয় হচ্ছে মধুর শিকা এবং তৃতীয় হচ্ছে কল্যাণময় বৃষ্টির পানি। হযরত আবু সালিহ ( রঃ ) বলেন যে, মানুষ তাদের মেয়েদের মোহর নিজেরা গ্রহণ করতো। ফলে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং এ কাজ হতে বিরত রাখা হয়। ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম ও তাফসীর-ই-ইবনে জারীর ) এ নির্দেশ শুনে জনগণ বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তাদের পরস্পরের মোহর কি?' তিনি বলেনঃ ‘যে জিনিসের উপরেই তাদের পরিবার সম্মত হয়ে যায় ।' ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম )রাসূলুল্লাহ ( সঃ )! স্বীয় ভাষণে তিনবার বলেনঃ “ তোমরা বিধবাদের বিয়ে দিয়ে দাও ।' তখন একটি লোক দাড়িয়ে গিয়ে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তাদের পরস্পরের মোহর কি? তিনি বলেনঃ যার উপর তাদের পরিবারের লোক সম্মত হয়ে যাবে ।' এ হাদীসের ইবনে সালমানী নামক একজন বর্ণনাকারী দুর্বল, তা ছাড়া এতে ইনকিতাও রয়েছে।
সূরা নিসা আয়াত 4 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- এবং স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহর কসম খেয়ে চার বার সাক্ষ্য দেয়
- সে গোবৎসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ তোমরা আহার করছ না কেন?
- সেদিন সত্যিকার রাজত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর এবং কাফেরদের পক্ষে দিনটি হবে কঠিন।
- অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে।
- বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন। এখন সবাই ইব্রাহীমের ধর্মের অনুগত হয়ে যাও, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ভাবে
- আপনার পূর্বে কত রাসূলের সাথে ঠাট্টা করা হয়েছে। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে কিছু অবকাশ দিয়েছি। ,
- এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত।
- এবং নিশ্চিতই এটা মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত।
- প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা
- মানুষ যা চায়, তাই কি পায়?
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:
সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers