কোরান সূরা নামল আয়াত 40 তাফসীর
﴿قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ﴾
[ النمل: 40]
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। [সূরা নামল: 40]
Surah An-Naml in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Naml ayat 40
যার কাছে ধর্মগ্রন্থের জ্ঞান রয়েছে এমন একজন বললে -- ''আমি এটি আপনার কাছে নিয়ে আসব আপনার দৃষ্টি আপনার কাছে ফিরে আসার আগেই।’’ তারপর যখন তিনি এটি দেখতে পেলেন তাঁর পার্শ্বে স্থাপিত হয়েছে তখন বললেন -- ''এ আমার প্রভুর করুণাভান্ডার থেকে, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা ক’রে দেখতে পারেন আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি, না অকৃতজ্ঞতা পোষণ করি। আর যে কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানায় তার নিজের জন্য, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞতা পোষণ করে -- আমার প্রভু নিশ্চয়ই মহাবিত্তবান, মহানুভব।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪০. সুলাইমান ( আলাইহিস-সালাম ) এর কাছে ছিলো এক নেককার জ্ঞানী, যার নিকট আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান রয়েছে, সে আল্লাহর এমন মহান নাম জানে যার মাধ্যমে তাঁকে ডাকলে তিনি উত্তর দিয়ে থাকেন। সে ব্যক্তি বললো: আমি আপনার চোখের পলক ফেরানোর আগেই আপনার নিকট তার সিংহাসন নিয়ে আসবো। আমি আল্লাহর নিকট দু‘আ করলে তিনি তা এনে দিবেন। অতঃপর সে দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবুল করেন। যখন সুলাইমান ( আলাইহিস-সালাম ) সে নারীর সিংহাসনটি নিজের সামনে স্থির দেখতে পেলো তখন তিনি বললেন: এটি মূলতঃ আমার প্রতিপালকের দয়া। যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করে দেখেন, আমি তাঁর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করি, না অকৃতজ্ঞ হই? বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলো তার কৃতজ্ঞতার ফায়েদা সেই পাবে। আল্লাহ তা‘আলা অমুখাপেক্ষী; বান্দাহর কৃতজ্ঞতা তাঁর মর্যাদা কিছুই বাড়িয়ে দেয় না। আর যে আল্লাহর নিয়ামতকে অস্বীকার করে তথা সেগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না তার অকৃতজ্ঞতার ফল সে পাবে। আমার প্রতিপালক তার কৃতজ্ঞতার প্রতি অমুখাপেক্ষী এবং তিনি অত্যন্ত দানশীল। আর তাঁর দানের একটি বিশেষ দিক হলো তাঁর নিয়ামত অস্বীকারকারীদেরকেও দান করা।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
গ্রন্থের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা এনে দেব।’[১] সুতরাং সুলাইমান যখন তা সম্মুখে উপস্থিত দেখল, তখন সে বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ; যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ, না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণের জন্য করে এবং যে অকৃতজ্ঞ, সে জেনে রাখুক যে, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব।’ [১] যে এ কথা বলল, সে কে ছিল? কিতাব কি ছিল? আর জ্ঞানই বা কি ছিল? যার জোরে সে এ দাবী করেছিল? এ ব্যাপারে তফসীরকারদের মাঝে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এই তিনের বাস্তব একমাত্র আল্লাহই জানেন। এখানে কুরআনের শব্দ থেকে যা বুঝা যায় তা হল, সে ছিল মানুষ। তার নিকট ছিল আল্লাহর কোন কিতাবের জ্ঞান। আল্লাহ তাকে কারামত বা মু'জিযাস্বরূপ এ শক্তি দান করলেন এবং চোখের পলকে সিংহাসন এনে উপস্থিত করল। কারামত বা মু'জিযা নামই এমন কাজের যা বাহ্যিক কারণ ও নৈসর্গিক কাজের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর তা একমাত্র আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় প্রকাশ পেয়ে থাকে। এই জন্য ঐ ব্যক্তির শক্তিতে বিস্ময় প্রকাশের কিছু নেই এবং তার ঐ কিতাবী জ্ঞান কি ছিল তা নিয়ে গবেষণারও কোন প্রয়োজন নেই; যা এখানে বর্ণিত হয়েছে। কেননা, এ ছিল সেই ব্যক্তির পরিচয় যার দ্বারা এই কাজ সম্পাদিত হয়েছে। তাছাড়া বাস্তবে এ শুধু আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন, যিনি চোখের পলকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সুলাইমান ( আঃ )ও এ ব্যাপারে অবহিত ছিলেন। সেই জন্য তিনি যখন দেখলেন যে, সিংহাসন উপস্থিত, তখন তিনি এ ঘটনাকে প্রভুর অনুগ্রহ ও কৃপা বলেই ব্যক্ত করলেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল [ ১ ], সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা আপনাকে এনে দেব।’ অতঃপর সুলাইমান যখন তা সামনে স্থির অবস্থায় দেখলেন তখন তিনি বললেন, ‘এ আমার রব-এর অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, সে জেনে রাখুক যে, আমার রব অভাবমুক্ত, মহানুভাব [ ২ ]।’ [ ১ ] বলা হয়েছেঃ ‘কিতাবের জ্ঞান যার কাছে ছিল সে বলল’ এখানে কিতাবের জ্ঞান কার কাছে ছিল তার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এ ব্যাক্তি কে ছিল, তার কাছে কোন বিশেষ ধরনের জ্ঞান ছিল এবং যে কিতাবের জ্ঞান তার আয়ত্ত্বাধীন ছিল সেটি কোন কিতাব ছিল, এ সম্পর্কে কোন চূড়ান্ত ও নিশ্চিত কথা বলা সম্ভবপর নয়। কুরআনে বা কোন সহীহ হাদীসে এ বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করা হয়নি। তাফসীরকারদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বলেন, সে ছিল একজন ফেরেশতা আবার কেউ কেউ বলেন, একজন মানুষই ছিল। তারপর সে মানুষটিকে চিহ্নিত করার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে মতদ্বৈধতা রয়েছে। এভাবে কিতাব সম্পর্কেও মুফাসসিরগণের বিভিন্ন বক্তব্য পেশ করেছেন। কেউ বলেন, এর অর্থ লাওহে মাহফুজ এবং কেউ বলেন, শরী‘আতের কিতাব। কিন্তু এগুলো সবই নিছক অনুমান। আর কিতাব থেকে ঐ অর্জিত জ্ঞান সম্পর্কেও বিনা যুক্তি-প্রমাণে ঐ একই ধরনের অনুমানের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে এমন সম্ভাবনাও আছে যে, স্বয়ং সুলাইমান আলাইহিসসালামই তিনি। কেননা, আল্লাহ্র কিতাবের সর্বাধিক জ্ঞান তারই বেশী ছিল। এমতাবস্থায় গোটা ব্যাপারটাই একটা মু‘জিযা এবং সাবার রাণীকে নবীসুলভ মু‘জিযা দেখানোই উদ্দেশ্য ছিল। কাজেই এ ব্যাপারে আপত্তির কোন কিছু নেই। কিন্তু অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে, এ লোক সুলাইমান আলাইহিসসালামের সহচর ছিলেন, যার নাম ছিলঃ আসেফ ইবন বরখিয়া। সে হিসেবে এটা একটি কারামত ছিল। [ দেখুন, ফাতহুল কাদীর ] এখানে মু‘জিযা ও কারামাতের মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পার্থক্য বর্ণনা করছিঃ মু‘জিযা নবুওয়তের দাবীর সাথে সম্পৃক্ত। আর কারামতের ব্যাপারে এ দাবী থাকতে পারে না। মু‘জিযা নবীর ইচ্ছাধীন। তিনি সেটা দেখাতে ও প্রকাশে সমর্থ হন। পক্ষান্তরে কারামত দেখাবার ব্যাপার নয়। আল্লাহ্ তা‘আলা কারামতের মাধ্যমে নবীর উম্মতের মধ্যে যাকে ইচ্ছে সম্মানিত করেন। তারা প্ৰকাশ্য সৎকর্মশীল লোকই হয়ে থাকেন। নবীদের মু‘জিযার উপরে তার উম্মাতের কারো কারামত প্রাধান্য পেতে পারে না। অর্থাৎ নবীর মু‘জিযা জাতীয় হবে। নবীকে ছাড়িয়ে কেউ কারামত দেখাতে পারে না। কারামত মূলতঃ নবীর মু‘জিযারই অংশ। নবীর অনুসরণ না করলে কারামত কখনো হাসিল হতে পারে না। যারা নবীর অনুসরণ করবে না তারা যদি এ ধরণের কিছু দেখায় তবে স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, সেটা কোন যাদু বা সম্মোহনী অথবা ধোঁকার অংশ। [ ইমাম আল-লালকায়ী, কারামাতু আওলিয়ায়িল্লাহ এর ভূমিকা; ইবন তাইমিয়্যাহ, আন-নুবুওয়াতঃ ৫০৩; উমর সুলাইমান আল-আশকার; আর-রুসুল ওয়ার রিসালাহ ] [ ২ ] অর্থাৎ তিনি কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মুখাপেক্ষী নন। কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ফলে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সামান্য পরিমাণও বৃদ্ধি পায় না আবার কারো অকৃতজ্ঞতার ফলে তাতে এক চুল পরিমাণ কমতিও হয় না। তিনি নিজস্ব শক্তি বলে সর্বময় কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। বান্দাদের মানা না মানার উপর তাঁর কর্তৃত্ব নির্ভরশীল নয়। কুরআন মজীদে একথাটিই এক জায়গায় মূসার মুখ দিয়ে উদ্ধৃত করা হয়েছেঃ “ যদি তোমরা এবং সারা দুনিয়াবাসীরা মিলে কুফরী করো তাহলেও তাতে আল্লাহ্র কিছু আসে যায় না, তিনি অমুখাপেক্ষী এবং আপনি সত্তায় আপনি প্রশংসিত ।” [ সূরা ইবরাহীমঃ ৮ ] অনুরূপভাবে, নিম্নোক্ত হাদীসে কুদসীতেও এ একই বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছেঃ “ মহান আল্লাহ্ বলেন, হে আমার বান্দারা যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমরা সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে বেশী মুত্তাকী ব্যাক্তির হৃদয়ের মতো হয়ে যাও, তাহলে তার ফলে আমার বাদশাহী ও শাসন কর্তৃত্বে কিছুমাত্র বৃদ্ধি ঘটে না । হে আমার বান্দারা! যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমরা সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে বেশী বদকার ব্যাক্তিটির হৃদয়ের মতো হয়ে যাও, তাহলে এর ফলে আমার বাদশাহীতে কোন কমতি দেখা যাবে না। হে আমার বান্দারা! এগুলো তোমাদের নিজেদেরই কর্ম, তোমাদের হিসেবের খাতায় আমি এগুলো গণনা করি, তারপর এগুলোর পুরোপুরি প্রতিদান আমি তোমাদের দিয়ে থাকি। কাজেই যার ভাগ্যে কিছু কল্যাণ এসেছে তার উচিত আল্লাহ্র শোকরগুজারী করা এবং যে অন্যকিছু লাভ করেছে সে যেন নিজেকেই ভর্ৎসনা করে”। [ মুসলিমঃ ২৫৭৭ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর যখন দূতেরা বিলকীসের নিকট ফিরে আসে এবং পুনরায় তার কাছে নবুওয়াতের পয়গাম পৌছে তখন সে নিশ্চিতরূপে বুঝতে পারে যে, হযরত সুলাইমান ( আঃ ) একজন নবী। তাই সে বলে- “ আল্লাহর শপথ! তিনি একজন নবী এবং নবীদের সঙ্গে কখনো মুকাবিলা করা যায় না ।” তৎক্ষণাৎ সে পুনরায় দূত পাঠিয়ে বললোঃ “ আমি আমার কওমের নেতৃস্থানীয় লোকজনসহ আপনার দরবারে হাযির হচ্ছি, যাতে স্বয়ং আপনার সাথে মিলিত হয়ে দ্বীনী জ্ঞান লাভ করতে পারি এবং আপনার কাছে সান্ত্বনা পেতে পারি ।” একথা বলে পাঠিয়ে একজনকে এখানে নিজের প্রতিনিধি বানিয়ে দিলো এবং তার দায়িত্বে সাম্রাজ্যের ব্যবস্থাপনার ভার দিয়ে নিজের মণি-মাণিক্য খচিত স্বর্ণের মহামূল্যবান সিংহাসনটি সাতখণ্ড করে সাতটি প্রাসাদে তালাবদ্ধ করে রাখলো এবং প্রতিনিধিকে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে বিশেষভাবে নির্দেশ দিলো। অতঃপর বারো হাজার নেতৃস্থানীয় লোককে সঙ্গে নিয়ে হযরত সুলাইমান ( আঃ )-এর রাজ্যাভিমুখে যাত্রা শুরু করলো। ঐ বারো হাজার নেতৃস্থানীয় লোকের প্রত্যেকের অধীনে আবার হাজার হাজার লোক ছিল। জ্বিনেরা বিলকীস ও তার লোকজনের প্রতিক্ষণের খবর হযরত সুলাইমান ( আঃ )-এর নিকট পৌঁছিয়ে দিচ্ছিল। তিনি যখন জানতে পারলেন যে, তারা নিকটবর্তী হয়ে গেছে তখন তিনি তাঁর রাজসভায় বিদ্যমান মানব ও দানবকে লক্ষ্য করে বললেনঃ “ বিলকীস ও তার লোক-লশূকর এখানে পৌঁছে যাওয়ার পূর্বেই তার সিংহাসনটি আমার নিকট হাযির করে দিতে পারে এরূপ কেউ তোমাদের মধ্যে আছে কি? কেননা, যখন সে এখানে এসে পড়বে এবং ইসলাম কবুল করে নিবে তখন তার ধন-সম্পদ আমাদের জন্যে হারাম হয়ে যাবে । তার একথা শুনে একজন শক্তিশালী উদ্ধত জ্বিন, যার নাম ছিল কাওযান এবং সে ছিল একটা বিরাট পাহাড়ের মত, বললোঃ “ আপনার দরবার ভেঙ্গে দেয়ার পূর্বেই আমি ওটা আপনাকে এনে দিতে পারি ।” হযরত সুলাইমান ( আঃ ) জনগণের বিচার মীমাংসার জন্যে সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত সাধারণ দরবারে বসতেন। কাওযান নামক জ্বিনটি বললোঃ “ এই সময়ের মধ্যেই আমি বিলকীসের সিংহাসনটি আপনার নিকট নিয়ে আসতে সক্ষম । অরি আমি আমানতদারও বটে। ওর থেকে কোন জিনিস আমি চুরি করবো না।” হযরত সুলাইমান ( আঃ ) বললেনঃ “ আমি চাই যে, এরও পূর্বে যেন তার সিংহাসনটি আমার নিকট পৌছে যায় । এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, হযরত সুলাইমান ইবনে দাউদ ( আঃ )-এর ঐ সিংহাসনটি আনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর একটি বড় মু'জিযা ও পূর্ণ শক্তির প্রমাণ বিলকীসকে প্রদর্শন করা। কাতাদা ( রঃ ) যে উদ্দেশ্যের কথা বর্ণনা করেছেন তা সঠিক ।হযরত সুলাইমান ( আঃ )-এর এই ত্বরা ও পীড়াপীড়িপূর্ণ নির্দেশ শুনে যার নিকট কিতাবী জ্ঞান ছিল, এক উক্তি অনুযায়ী, তিনি ছিলেন আসেফ, তিনি হযরত সুলাইমান ( আঃ )-এর লেখক ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল বারখায়া। তিনি একজন আল্লাহর ওলী ছিলেন। তিনি ইসমে আযম জানতেন। তিনি ছিলেন একজন পাকা মুসলমান। আবু সালেহ ( রঃ ), যহহাক ( রঃ ) এবং কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, তিনি মানবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কাতাদা ( রঃ ) আরো বাড়িয়ে বলেছেন। যে, তিনি বানী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, তাঁর নাম ছিল উসতুম। একটি রিওয়াইয়াতে তার নাম বালীখও রয়েছে। যুহায়ের ইবনে মুহাম্মাদ ( রঃ ) বলেন যে, তিনি একজন মানুষ ছিলেন এবং তাঁকে মুননূর বলা হতো। আবদুল্লাহ ইবনে লাহীআহ ( রঃ )-এর উক্তি এই যে, তিনি ছিলেন হযরত খিয়র ( আঃ )। কিন্তু এই উক্তিটি খুবই গরীব বা দুর্বল। যাই হোক, তিনি বললেনঃ “ আপনি চক্ষুর পলক ফেলবার পূর্বেই আমি সিংহাসনটি আপনাকে এনে দিবো ।” সুতরাং হযরত সুলাইমান ( আঃ ) ইয়ামনের দিকে তাকালেন যেখানে বিলকীসের সিংহাসনটি ছিল। এদিকে যে লোকটির কিতাবের জ্ঞান ছিল তিনি অযু করে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দু'আ করতে শুরু করলেন। তিনি দু'আয় বললেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ হে মহিমময়, মহানুভব!" অথবা বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “হে আমার মা'বূদ ও প্রত্যেক জিনিসের মা’বৃদ, একক মাবুদ! আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, আপনি তার আরশটি এনে দিন ।” তৎক্ষণাৎ বিলকীসের সিংহাসনটি সামনে এসে পড়লো। এটুকু সময়ের মধ্যে ওটা ইয়ামন হতে বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে গেল এবং সুলাইমান ( আঃ )-এর সৈন্যদের চোখের সামনে দিয়ে ওটা তার কাছে এসে গেল। যখন তিনি ওটা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখলেন তখন বললেনঃ “ এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ ছাড়া কিছুই নয়, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞ হই? যে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা করে নিজের কল্যাণের জন্যেই এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় তার জেনে রাখা উচিত যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব ।” যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যে ভাল কাজ করে সে তা নিজের কল্যাণের জন্যেই করে এবং যে মন্দ কাজ করে, ওর ফল তাকেই ভোগ করতে হবে ।”( ৪১:৪৬ ) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ যারা ভাল কাজ করছে তারা নিজেদের জন্যেই কল্যাণ জমা করছে ।” ( ৩০:৪৪ ) হযরত মূসা ( আঃ ) তাঁর কওমকে বলেছিলেন ?অর্থাৎ “ যদি তোমরা এবং ভূ-পৃষ্ঠের সবাই কুফরী করতে শুরু কর তবে জেনে রেখো যে, ( এতে তোমরা আল্লাহর একটুও ক্ষতি করতে পারবে না । কারণ ) আল্লাহ তা'আলা অভাবমুক্ত এবং প্রশংসিত।” ( ১৪: ৮ )সহীহ মুসলিমে আছে যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের এবং তোমাদের মানব ও দানব সবাই আল্লাহভীরু ও সৎ হয়ে যায় তবুও আমার রাজত্ব ও মান-মর্যাদা একটুও বৃদ্ধি পাবে না । পক্ষান্তরে যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের মানব ও দানব সবাই পাপী ও অবাধ্য হয়ে যায় তবুও আমার আধিপত্য ও মান-মর্যাদা একটুও হ্রাস পাবে না। এগুলো তো তোমাদের আমল মাত্র, যেগুলো জমা হবে এবং তোমরা লাভ করবে। সুতরাং তোমাদের কেউ কল্যাণ পেলে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, আর কোন অকল্যাণ ও অনিষ্ট পেলে যেন সে নিজেকেই তিরস্কার করে।”
সূরা নামল আয়াত 40 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে,
- এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ তা’আলা অবগত। অতএব, আপনি
- আপনি কি তাদের কাছে পারিশ্রমিক চান? ফলে তাদের উপর জরিমানার বোঝা পড়ছে?
- তারা কি বলতে চায়ঃ সে একজন কবি আমরা তার মৃত্যু-দুর্ঘটনার প্রতীক্ষা করছি।
- ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফেরেশতারা বলেঃ তোমাদের প্রতি শাস্তি বর্ষিত
- হে মুসলমানগণ, তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল
- মূসা বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমি শুধু নিজের উপর ও নিজের ভাইয়ের উপর ক্ষমতা রাখি।
- এবং যারা আমার ক্ষমতা সম্পর্কে বিতর্ক করে, তারা যেন জানে যে, তাদের কোন পলায়নের জায়গা
- তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।
- তবে কোন সম্প্রদায়ের ধোঁকা দেয়ার ব্যাপারে যদি তোমাদের ভয় থাকে, তবে তাদের চুক্তি তাদের দিকেই
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নামল ডাউনলোড করুন:
সূরা Naml mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Naml শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers