কোরান সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত 44 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Al Isra ayat 44 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত 44 আরবি পাঠে(Al Isra).
  
   

﴿تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا﴾
[ الإسراء: 44]

সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। [সূরা বনী ইসরাঈল: 44]

Surah Al-Isra in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Isra ayat 44


সাত আসমান ও জমিন এবং তাদের মধ্যে যারা রয়েছে তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রশংসার সাথে মহিমা ঘোষণা করে না, কিন্তু তোমরা তাদের মহিমাকীর্তন অনুধাবন করতে পার না। নিঃসন্দেহ তিনি হচ্ছেন অতি অমায়িক, পরিত্রাণকারী।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৪৪. আকাশ, জমিন ও সেগুলোর মাঝে যে সৃষ্টিরাজি রয়েছে তারা সবাই আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে। এমনকি দুনিয়ার সবকিছুই তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে। তবে তোমরা তাদের পবিত্রতা বর্ণনার ধরন সম্পর্কে কিছুই বুঝো না। তোমরা শুধু নিজেদের ভাষায় পবিত্রতা বর্ণনার ধরন বুঝো। বস্তুতঃ তিনি পরম ধৈর্যশীল। তিনি দ্রæত কাউকে শাস্তি দেন না এবং তাওবাকারীদের প্রতি তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। [১] নিশ্চয় তিনি অতীব সহনশীল, অত্যন্ত ক্ষমাশীল। [১] অর্থাৎ, সকলেই তাঁর অনুগত এবং তারা স্ব স্ব নিয়মে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণায় ও প্রশংসায় লিপ্ত আছে। যদিও আমরা তাদের পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা করার কথা বুঝতে পারি না। এর সমর্থন কুরআনের আরো কিছু আয়াত দ্বারাও হয়। যেমন, দাঊদ ( আঃ )-এর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,﴿إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ﴾ অর্থাৎ, আমি পর্বতসমূহকে তাঁর অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত। ( সূরা সাদ ৩৮:১৮ আয়াত ) কোন কোন পাথরের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ﴾ অর্থাৎ, কোন কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে খসে পড়ে। ( সূরা বাকারাহ ২:৭৪ আয়াত ) কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা রসূল ( সাঃ )-এর সাথে খাবার খাওয়ার সময় খাবার থেকে 'তসবীহ' পড়ার ধ্বনি শুনেছেন। ( বুখারী, কিতাবুল মানাকিব ৩৫৭৯ নং ) অপর একটি হাদীসে এসেছে যে, পিঁপড়েরাও আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। ( বুখারী ৩০১৯, মুসলিম ১৭৫৯নং ) অনুরূপ খেজুর গাছের যে গুঁড়িতে হেলান দিয়ে রসূল ( সাঃ ) খুৎবা দিতেন, যখন কাঠের মিম্বর তৈরী হল এবং সেই গুঁড়িকে তিনি ত্যাগ করলেন, তখন তা থেকে শিশুর মত কান্নার শব্দ এসেছিল। ( বুখারী ৩৫৮৩ নং ) মক্কায় একটি পাথর ছিল, যে রসূল ( সাঃ )-কে সালাম দিত। ( মুসলিম ১৭৮২ নং ) এই আয়াত এবং হাদীসসমূহ হতে স্পষ্ট হয় যে, জড় পদার্থ এবং উদ্ভিদ জিনিসের মধ্যেও এক বিশেষ ধরনের অনুভূতি ( জীবন ) আছে, যদিও তা আমরা বুঝতে পারি না। তারা কিন্তু এই অনুভূতির ভিত্তিতে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ, প্রামাণ্য তসবীহ। অর্থাৎ, এই জিনিসগুলো প্রমাণ করে যে, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা এবং সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান কেবল মহান আল্লাহ। وَفِي كُلِّ شَيْءٍ لَهُ آيَةٌ * تَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ وَاحِدٌ 'প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে রয়েছে নিদর্শন, যা প্রমাণ করে যে, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। (শুআবুল ঈমান বাইহাকী ) তবে সঠিক কথা এটাই যে, 'তসবীহ' তার প্রকৃত ও মূল অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


সাত আসমান এবং যমীন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে [] এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাঁদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পার না; নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। [] ইচ্ছাগত তাসবীহ তো শুধু ফেরেশতা এবং ঈমানদার জিন ও মানবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ্ তাআলা জগতের প্রত্যেকটি অণু-পরমাণুকে তাসবীহ পাঠ্যকারী বানিয়ে রেখেছেন। [ ইবন কাসীর ] কিন্তু তাদের এই সৃষ্টিগত ও বাধ্যতামূলক তাসবীহ সাধারণ মানুষের শ্রুতিগোচর হয়না। এ আয়াতেই বলা হয়েছে , وَلَٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ এ উক্তি এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিগত তাসবীহ এমন জিনিস, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম নয়। অবস্থগত তাসবীহ তো বিবেকবান ও বুদ্ধিমানরা বুঝতে পারে। এ থেকে জানা গেল যে, এই তাসবীহ পাঠ শুধু অবস্থাগত নয়, সত্যিকারের; কিন্তু আমাদের বোধশক্তি ও অনুভূতির উর্ধের্ব। তাছাড়া মু'জেযা ও কারামত হিসেবে কখনও কখনও অচেতন বস্তু সমূহের তাসবীহও আল্লাহ তা'আলা মাঝে মধ্যে শুনিয়ে থাকেন। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাবার খেতাম, এমতাবস্থায় আমরা খাবারের তাসবীহও শুনতাম” [ বুখারীঃ ৩৫৭৯ ] অনুরূপভাবে মরা খেজুরগাছের কাঠের কান্না। [ বুখারী: ৩৫৮৩ ] মক্কার এক পাথর কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়া। [ মুসলিম: ২২৭৭ ] উদাহরণতঃ সূরা ছোয়াদে দাউদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “ আমি পাহাড়সমূহকে আজ্ঞাবহ করে দিয়েছি । তারা দাউদের সাথে সকাল-বিকাল তাসবীহ পাঠ করে”। [ ১৮ ] সূরা আল-বাক্কারায় পাহাড়ের পাথর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “ কতক পাথর আল্লাহর ভয়ে নীচে পড়ে যায়” [ ৭৪ ] । এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাথরের মধ্যেও চেতনা, অনুভূতি ও আল্লাহর ভয় রয়েছে। সূরা মারইয়ামে নাসারা সম্প্রদায় কর্তৃক ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে বলা হয়েছেঃ “ তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্ৰহণ করেছেন তোমরা তো এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করছ; যাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমণ্ডলী চূৰ্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্ৰহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়!”। [ ৮৮-৯২ ] বলাবাহুল্য, এই ভয়-ভীতি তাদের চেতনা ও অনুভূতির পরিচায়ক। চেতনা ও অনুভূতি থাকলে তসবীহ পাঠ করা অসম্ভব নয়।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


সাত আকাশ, যমীন ও এগুলির অন্তর্বর্তী সমস্ত মাখলুক আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা, মহিমা এবং শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে থাকে। মুশরিকরা যে আল্লাহ তাআলার সত্তাকে বাজে ও মিথ্যা বিশেষণে বিশেষিত করছে, এর থেকে সমস্ত মাখলুক নিজেদেরকে মুক্ত ঘোষণা করছে এবং তিনি যে মা’রূদ ও প্রতিপালক এটা তারা অকপটে স্বীকার করছে। তারা এটাও স্বীকার করছে যে, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই। অস্তিত্ব বিশিষ্ট সব কিছু আল্লাহর একত্বের জীবন্ত সাক্ষী। এই নালায়েক, অযোগ্যও অপদার্থ লোকদের আল্লাহ সম্পর্কে জঘন্য উক্তিতে সারা মাখলুক কষ্টবোধ করছে। অচিরেই যেন আকাশ ফেটে যাবে, পাহাড় ভেঙে পড়বে এবং যমীন ধ্বসে যাবে।ইমাম তিবরানীর ( রঃ ) হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, মিরাজের রাত্রে হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) হযরত মীকাঈল ( আঃ ) রাসূলুল্লাহকে ( সঃ ) মাকামে ইবরাহীম ও যমযম কূপের মধ্যবর্তী স্থান হতে নিয়ে যান। হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) ছিলেন ডান দিকে এবং হযরত মীকাঈল ( আঃ ) ছিলেন বাম দিকে। তাঁরা তাঁকে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত উড়িয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ফিরে আসেন। তিনি বলেনঃ “ আমি উচ্চাকাশে বহু তাসবীহ এর সাথে নিম্নের তাসবীহও শুনেছিঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ভয় ও প্রেমপ্রীতির পাত্র, মহান ও সর্বোচ্চ আল্লাহর পবিত্রতা, মহিমা এবং শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে উচ্চাকাশ সমূহ ।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ মাখলুকের মধ্যে সমস্ত কিছু তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা কীর্তণ করে থাকে। কিন্তু হে মাবন মণ্ডলী! তোমরা তাদের তদ্বীহ্ বুঝতে পার না। কেননা, তাদের ভাষা তোমাদের জানা নেই। প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জড় পদার্থ সবকিছুই আল্লাহর তাসবীহ্ পাঠেরত রয়েছে।হযরত ইবনু মাসঊদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )-এর যুগে তারা খাদ্য খাওয়ার সময় খাদ্যের তাসবীহ শুনতে পেতেন। ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে ) হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় হস্তের মুষ্টির মধ্যে কয়েকটি পাথর নেন । আমি শুনতে পাই যে, ওগুলি মৌমাছির মত ভন্ করে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করছে। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকরের ( রাঃ ) হাতে, হযরত উমারের ( রাঃ ) হাতে এবং হযরত উছমানের ( রাঃ ) হাতেও।” ( এ হাদীসটি সহীহ ও মুসনাদগ্রন্থ সমূহে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কতকগুলি লোককে দেখেন যে, তারা তাদের উষ্ট্রী ও জন্তুগুলির উপর আরোহণরত অবস্থায় ওগুলিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এদেখে। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “ সওয়ারী শান্তির সাথে গ্রহণ কর এবং উত্তমরূপে ছেড়ে দাও । ওগুলিকে পথে ও বাজারের লোকদের সাথে কথা বলার চেয়ার বানিয়ে রেখো না। জেনে রেখো যে, অনেক সওয়ারী তাদের সওয়ার চেয়েও উত্তম হয়ে থাকে।” বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ব্যাঙকে মারতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এই কালেমাটি পাঠের পরেই কারো পূণ্যের কাজ গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে । ( মুসনাদে আহমাদে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে )“ আলহামদু লিল্লাহ’ হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশক কালেমা । যে এটা পাঠ করে না সে আল্লাহ তাআলার অকৃতজ্ঞ বান্দা। ‘আল্লাহু আকবর’ যমীন ও আসমানের মধ্যবর্তী শূন্য স্থান পূর্ণ করে থাকে। ‘সুবহানাল্লাহ’ হচ্ছে মাখলুকের তাসবীহ! যখন কেউ ( আরবি ) পাঠ করে তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ আমার বান্দা আমার অনুগত হয়েছে এবং আমাকে সবকিছু সমর্পণ করেছে।” বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন রেশমী হাত ও রেশমী বোস্তামী বিশিষ্ট তায়ালিসী জুব্বা পরিধান করে রাসূলুল্লাহ( সঃ ) নিকট আগমন করে এবং বলতে শুরু করেঃ “ এই ব্যক্তির ( রাসূলুল্লাহর (সাঃ ) উদ্দেশ্য এটা ছাড়া অন্য কিছু নয় যে, তিনি রাখালদের ছেলেদেরকে সমুন্নত করবেন এবং নেতাদের ছেলেদেরকে লাঞ্ছিত করবেন ।” তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং তার অঞ্চল টেনে ধরে বলেনঃ “ আমি তোমাকে জন্তুর পোষাক পরিহিত দেখছি না তো?” তারপর তিনি ফিরে আসেন এবং বসে পড়ে বলতে শুরু করেনঃ “হযরত নূহ ( আঃ ) তাঁর মৃত্যুর সময় নিজের ছেলেদের ডেকে নিয়ে বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে অসিয়ত হিসেবে দু’টো কাজের হুকুম করছি এবং দু'টো কাজ থেকে নিষেধ করছি । নিষিদ্ধ কাজ দু’টি এই যে, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না এবং অহংকার করবে না। আর আমি তোমাদেরকে হুকুম করছি এই যে, তোমরা ( আরবি ) পাঠ করতে থাকবে। কেননা, আসমান যমীন এবং এতোদুভয়ের অন্তর্বর্তী যত কিছু রয়েছে সব গুলোকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় এবং অন্য পাল্লায় শুধু এই কালেমাটি রাখা হয় তবে, এই কালেমাটির পাল্লাই ভারী হয়ে যাবে। জেনে রেখো, যদি সমস্ত আকাশ ও যমীনকে একটা বৃত্ত বানানো হয় এবং এই কালেমাটি ওর উপর রাখা হয় এটা ওকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে। দ্বিতীয় হুকুম এই যে, তোমরা ( আরবি ) পাঠ করতে থাকবে। কেননা, এটা হচ্ছে প্রত্যেক জিনিসের নামায। আর এর কারণেই প্রত্যেককে রিযক দেয়া হয়ে থাকে।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণনা করা হয়েছে ) তাফসীরের ইবনু জারীরে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ এসো, হযরত নূহ ( আঃ ) তাঁর সন্তানদেরকে যে হুকুম করেছিলেন তা আমি তোমাদের নিকট বর্ণনা করি । তিনি বলেছিলেনঃ “ হে আমার প্রিয় বৎসগণ! আমি তোমাদেরকে হুকুম করছি যে, তোমরা ‘সবুহানাল্লাহ’ বলতে থাকবে এটা সমস্ত মাখলুকের তাসবীহ এবং এরই মাধ্যমে তাদেরকে রিযক দেয়া হয়।। আল্লাহ তাআলা বলেন যে, সমস্ত জিনিস তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে থাকে।” ( বর্ণনাকারী যানদীর কারণে এই হাদীসটির ইসনাদ দুর্বল )ইকরামা ( রাঃ ) বলেন যে, স্তম্ভ, গাছ-পালা, পানির খড়খড় শব্দ এ সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ।আল্লাহ তাআলা বলেন যে, সমস্ত জিনিস আল্লাহর প্রশংসা পাঠ ও গুণকীর্তণে নিমগ্ন রয়েছে। ইবরাহীম ( রাঃ ) বলেন যে, খাদ্য ও তাসবীহ পাঠ করে থাকে। সূরায়ে হাজ্জের আয়াতও এর সাক্ষ্য প্রদান করে। মুফাসসিরগণ বলেন যে, আত্মা বিশিষ্ট সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত রয়েছে। যেমন প্রাণীসমূহ ও গাছ-পালা। একবার হযরত হাসানের ( রাঃ ) কাছে খাদ্যের খাঞ্চা আসলে হযরত আবু ইয়াযীদ রাকাশী ( রঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ হে আবু সাঈদ ( রঃ )! খাঞ্চাও কি তাসবীহ পাঠকারী?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ, তাই ছিল ।” ভাবার্থ এই যে, যেই পর্যন্ত ওটা কাঁচা কাঠের আকারে ছিল সেই পর্যন্ত তাসবীহ পাঠকারী ছিল। কিন্তু যখন ওটাকে কেটে নেয়ার পর ওটা শুকিয়ে গেছে তখন তাসবীহ পাঠও শেষ হয়ে গেছে। এই উক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় নিম্নের হাদীসটিও উল্লেখযোগ্য। একবার রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দু’টি কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় বলেনঃ “ এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে । কিন্তু তাদেরকে বড় পাপের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রসাব করার সময় পর্দার প্রতি খেয়াল রাখতো না। অপরজন ছিল পরোক্ষ নিন্দাকারী!” অতঃপর তিনি একটি কাঁচা ডাল নিয়ে ওকে দুভাগ করতঃ দুই কবরের উপর গেড়ে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ “ সম্ভবতঃ যতক্ষণ এটা শুষ্ক না হবে ততক্ষণ এদের শাস্তি হাল্কা থাকবে ।( এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে )এজন্যেই কোন কোন আলেম বলেছেন, যে যতক্ষণ এটা কাঁচা থাকবে ততক্ষণ তাসবীহ পড়বে এবং যখন শুকিয়ে যাবে তখন তাসবীহ পাঠও বন্ধ। হয়ে যাবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।আল্লাহ তাআলা বিজ্ঞানময় ও ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর পাপী বান্দাদেরকে শাস্তি দানে তাড়াতাড়ি করেন না, বরং বিলম্ব করেন এবং অবকাশ দেন। কিন্তু এরপরেও যদি সে কুফরী ও পাপাচারে লিপ্ত থেকে যায় তখন অনন্যোপায় হয়ে তাকে পাকড়াও করেন।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন । অতঃপর যখন পাকড়াও করেন তখন আর ছেড়ে দেন না।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ কুরআনপাকে বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা যখন কোন জনপদকে তাদের অত্যাচার-অবিচারের কারণে পাকড়াও করেন, তখন এরূপই পাকড়াও হয়ে থাকে ( শেষ পর্যন্ত )” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ বহু গ্রামবাসীকে আমি তাদের যুলুমরত অবস্থায় ধ্বংস করে দিয়েছি ।( ২২:৪৫ ) হাঁ, তবে যারা পাপকার্য থেকে ফিরে আসে এবং তাওবা করে নেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করে থাকেন। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ “ যে ব্যক্তি অসৎ কাজ করে এবং নিজের নফসের উপর জুলুম করে, অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহ তাআলাকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে ।” সূরায়ে ফাতিরের শেষের আয়াতগুলিতেও এই বর্ণনাই রয়েছে।

সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত 44 সূরা

تسبح له السموات السبع والأرض ومن فيهن وإن من شيء إلا يسبح بحمده ولكن لا تفقهون تسبيحهم إنه كان حليما غفورا

سورة: الإسراء - آية: ( 44 )  - جزء: ( 15 )  -  صفحة: ( 286 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর
  2. আর যে, হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে,
  3. এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে পানির পালা নির্ধারিত হয়েছে এবং পালাক্রমে উপস্থিত হতে
  4. অতঃপর আমি মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছি, সৎকর্মীদের প্রতি নেয়ামতপূর্ণ করার জন্যে, প্রত্যেক বস্তুর বিশদ বিবরণের জন্যে,
  5. অবশ্য যারা তওবা করে নিয়েছে, নিজেদের অবস্থার সংস্কার করেছে এবং আল্লাহর পথকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে
  6. অতএব, আপনি উপদেশ দান করুন। আপনার পালনকর্তার কৃপায় আপনি অতীন্দ্রিয়বাদী নন এবং উম্মাদও নন।
  7. যখন দৃষ্টি চমকে যাবে,
  8. তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফের এবং কেউ মুমিন। তোমরা যা কর,
  9. যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে
  10. তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ আগমন করেছ, না তুমি কৌতুক করছ?

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বনী ইসরাঈল ডাউনলোড করুন:

সূরা Al Isra mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Isra শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত বনী ইসরাঈল  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Wednesday, December 18, 2024

Please remember us in your sincere prayers