কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 47 তাফসীর
﴿يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ﴾
[ البقرة: 47]
হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর। [সূরা বাকারাহ্: 47]
Surah Al-Baqarah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 47
হে ইসরাইলের বংশধরগণ! আমার নিয়ামত স্মরণ করো যা আমি তোমাদের প্রদান করেছিলাম ও কিভাবে মানবগোষ্ঠীর উপর তোমাদের মর্যাদা দিয়েছিলাম।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪৭. হে আল্লাহর নবী ইয়া’ক‚ব ( আলাইহিস-সালাম ) এর সন্তানরা! তোমরা আমার ধর্মীয় ও বৈষয়িক নিয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করো। যা আমি তোমাদেরকে ইতিপূর্বে দিয়েছি। আর এ কথাও স্মরণ করো যে, আমি তোমাদেরকে নবুওয়াত ও ক্ষমতা দিয়ে তোমাদের যুগের লোকদের উপর তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
হে বনী ঈস্রাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর, যার দ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছি এবং বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। ( ১ ) ( ১ ) এখান থেকে আবারও বানী-ইস্রাঈলের প্রতি কৃত পুরস্কারসমূহের কথা স্মরণ করানো হচ্ছে এবং তাদেরকে সেই কিয়ামতের দিনের ভয় দেখানো হচ্ছে, যেদিন কেউ কারো উপকারে আসবে না। সুপারিশ গৃহীত হবে না। বিনিময় দিয়ে মুক্তি পাওয়া যাবে না এবং কোন সাহায্যকারী এগিয়ে আসবে না। তাদের প্রতি কৃত পুরস্কারসমূহের মধ্যে অন্যতম পুরস্কার হল, তাদেরকে নিখিল বিশ্বের সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল। অর্থাৎ, উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার পূর্বে জগত-শ্রেষ্ঠ হওয়ার দুর্লভ মর্যাদা বানী-ইস্রাঈলরাই লাভ করেছিল। কিন্তু আল্লাহর অবাধ্যতার শিকার হয়ে এই মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য তারা হারিয়ে ফেলে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীকে 'সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত' উপাধি দান করা হয়। এখানে এ ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে যে, ইলাহী পুরস্কারসমূহ কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সাথে নির্দিষ্ট নয়, বরং তা ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে লাভ করা যায় এবং ঈমান ও আমল থেকে বঞ্চিত হলে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি উম্মাতে মুহাম্মাদী অপকর্মসমূহে এবং শির্ক ও বিদআতে লিপ্ত হওয়ার কারণে 'সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত' হওয়ার পরিবর্তে সর্বনিকৃষ্ট উম্মতে পরিণত হয়েছে -হাদাহাল্লাহু তাআলা ইয়াহুদীরা এ কারণেও প্রতারিত যে, তারা মনে করে, তারা তো আল্লাহর অতীব প্রিয় ও পছন্দনীয় বান্দা, অতএব তারা আখেরাতের পাকড়াও থেকে সুরক্ষিত থাকবে। মহান আল্লাহ ঘোষণা ক'রে দিলেন যে, সেখানে আল্লাহর অবাধ্যজনদের কেউ সাহায্য করতে পারবে না। এই ধোঁকায় উম্মতে মুহাম্মাদীও পতিত। সুপারিশ ( যা আহলে সুন্নাহর নিকট এক বাস্তব বিষয় )এর আশায় তারা নিজেদের কু-কর্মকে বৈধ করে রেখেছে। নবী কারীম ( সাঃ ) অবশ্যই সুপারিশ করবেন এবং মহান আল্লাহ তাঁর সুপারিশ কবুলও করবেন। ( সহীহ হাদীসসমূহে এটা প্রমাণিত ) কিন্তু এ কথাও হাদীসে এসেছে যে, বিদআতীরা তাঁর সুপারিশ থেকে বঞ্চিত থাকবে। অনুরূপ অনেক পাপীদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়ার পর রসূল ( সাঃ )-এর সুপারিশে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। জাহান্নামের এই কয়েক দিনের শাস্তি কি সহনযোগ্য হবে যে, আমরা সুপারিশের উপর ভরসা ক'রে পাপ করেই চলেছি?
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হে ইসরাঈল বংশধরগণ ! আমার সে নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছিলাম। আর নিশ্চয় আমি সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপর তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম [ ১ ]। [ ১ ] কাতাদাহ ও মুজাহিদ বলেন, তাদেরকে তৎকালীন সময়ের সমস্ত সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলেন। বর্তমানের সাথে সম্পৃক্ত নয়। [ তাফসীর আব্দুর রাজ্জাক, তাবারী ] তাদের শ্ৰেষ্ঠত্বের বিষয়াদি সম্পর্কে আবুল আলীয়াহ বলেন, তাদেরকে রাজত্ব, রাসূল, কিতাব ইত্যাদি দিয়ে ঐ সময়কার সমস্ত সৃষ্টিজগত থেকে আলাদা মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। [ আত-তাফসীরুস সহীহ ] ইবনে কাসীর বলেন, অবশ্যই এ শ্রেষ্ঠত্ব তৎকালীন সময়ের সাথে সম্পৃক্ত বলতে হবে। কারণ, এ উম্মত অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত তাদের থেকেও উত্তম। কারণ, আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “ তোমরাই শ্ৰেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্র উপর ঈমান আনবে । আহলে কিতাবগণ যদি ঈমান আনতো তবে তা ছিল তাদের জন্য ভাল " [ সূরা আলে ইমরান ১১০ ] তাছাড়া হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ তোমরা সত্তরটি উম্মত পূর্ণ করবে । তন্মধ্যে তোমরা হচ্ছ আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে উত্তম এবং সম্মানিত” [ ইবনে মাজাহঃ ৪২৮৭, মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
উপদেশ ও আল্লাহর নিয়ামতসমূহের বিস্তারিত আলোচনা বানী ইসরাঈলের বাপ দাদার উপর মহান আল্লাহ যে নিয়ামত দান করেছিলেন তারই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তাদের মধ্যে রাসূল হয়েছেন, তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে এবং তাদের যুগের অন্যান্য লোকের উপর তাদেরকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “ নিশ্চয় আমি তাদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞানে সারা বিশ্বজগতের উপর মর্যাদা দান করেছি ।' অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “ এবং যখন মূসা ( আঃ ) বললোঃ- “হে আমার গোত্র তোমাদের উপর আল্লাহর যে নিয়ামত রয়েছে তা স্মরণ কর, যেমন, তিনি তোমাদের মধ্যে নবীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাদেরকে বাদশাহ বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন যা সারা বিশ্বের আর কাউকেও দেয়া হয়নি । সমস্ত লোকের উপর মর্যাদা লাভের অর্থ হচ্ছে তাদের যুগের সমস্ত লোকের উপর। কেননা, মুহাম্মদ ( সঃ )-এর উম্মত নিশ্চিতরূপে তাদের চেয়ে উত্তম। এ উম্মত সম্বন্ধে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “ তোমরা উত্তম সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায়কে জনমণ্ডলীর জন্যে প্রকাশ করা হয়ছে..... ।মুসনাদসমূহের ও সুনানের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ‘তোমরা সত্তরতম উম্মত এবং তোমরা সর্বোত্তম ও মর্যাদবান। এ প্রকারের বহু হাদীস ইনশাআল্লাহ ( আরবি ) এর তাফসীরে আসবে। আবার এও বলা হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে সমস্ত লোকের উপর একটি বিশেষ প্রকারের ফযীলত', ওর দ্বারা সর্বপ্রকারের ফযীলত সাব্যস্ত হয় না। ইমাম রাযী ( রঃ ) এটাই বলেছেন। কিন্তু এটা বিবেচ্য বিষয়। এটাও বলা হয়েছে, তাদের মর্যাদা সমস্ত উম্মতের উপর এই দিক দিয়ে যে, নবীগণ তাদের মধ্য হতেই হয়ে এসেছেন। কিন্তু এর মধ্যেও চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেননা, এরকম সাধারণভাবে দেখতে গেলে তাদের পূর্ববর্তীগণও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রকৃতপক্ষে আগের নবীগণ ( আঃ ) এদের মধ্য হতে ছিলেন না। যেমন ইবরাহীম খলীলুল্লাহ ( আঃ )। আর হযরত মুহাম্মদও ( সঃ ) তাদের মধ্য হতে ছিলেন না-যিনি ছিলেন সর্বশেষ নবী এবং যিনি সমস্ত সৃষ্টজীবের মধ্যে সর্বোত্তম আর যিনি হচ্ছেন দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে সমস্ত আদম সন্তানের নেতা ( তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক )
সূরা বাকারাহ্ আয়াত 47 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার
- যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে।
- অতঃপর সে সুখী জীবন-যাপন করবে,
- অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
- নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে তাদের কাছে আগত কোন দলীল ব্যতিরেকে, তাদের অন্তরে
- তিনি আরও বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার পালনকর্তা ও তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তার এবাদত কর।
- তিনি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন।
- সজোরে প্রবাহিত ঝটিকার শপথ,
- তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত তা অবশ্যই
- তারা যা কিছু করেছে, সবই আমলনামায় লিপিবদ্ধ আছে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:
সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers