কোরান সূরা শুআরা আয়াত 59 তাফসীর
﴿كَذَٰلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا بَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
[ الشعراء: 59]
এরূপই হয়েছিল এবং বনী-ইসলাঈলকে করে দিলাম এসবের মালিক। [সূরা শুআরা: 59]
Surah Ash-Shuara in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Shuara ayat 59
এইভাবেই। আর এইগুলো আমরা ইসরাইলের বংশধরদের উত্তরাধিকার করতে দিয়েছিলাম।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৫৯. যেমনিভাবে আমি ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়কে এ নিয়ামতসমূহ থেকে বের করে দিয়েছি তেমনিভাবে আমি এ জাতীয় নিয়ামতসমূহ তাদের পরের সিরিয়াবাসী বনী ইসরাঈলকে দিয়েছি।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
এরূপই ঘটল এবং বনী-ইস্রাঈলকে এ সমুদয়ের অধিকারী করলাম। [১] [১] অর্থাৎ, যে ক্ষমতা ও রাজত্ব ফিরআউন অর্জন করেছিল, তা তার কাছ হতে ছিনিয়ে নিয়ে বনী-ইস্রাঈলকে দিয়ে দিলেন। কেউ কেউ বলেন যে, এর অর্থ এই যে, মিসরের মত রাজ্য ও পার্থিব সুখ বনী-ইস্রাঈলকে ( অন্যত্র ) দান করলাম। কারণ বনী-ইস্রাঈল মিসর হতে বের হয়ে যাওয়ার পর তারা দ্বিতীয়বার মিসরে ফিরে আসেনি। তাছাড়া সূরা দুখানে ( ৪৪:২৮ নং আয়াতে ) বলা হয়েছে, {كَذَلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا آخَرِينَ} অর্থাৎ, অন্য জাতিকে আমি তার উত্তরাধিকারী বানালাম। ( আইসারুততাফসীর ) প্রথমোক্ত বিদ্বানগণ বলেন যে, قومًا آخَرين এর মধ্যে قوم শব্দটি যদিও ব্যাপক, কিন্তু এখানে সূরা শুআরাতে বনী-ইস্রাঈলকে উত্তরাধিকারী করার কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। অতএব মিসরের উত্তরাধিকারী বনী-ইস্রাঈল জাতিই হবে। কিন্তু খোদ কুরআনের স্পষ্ট বর্ণনা অনুযায়ী বুঝা যায় যে, বনী-ইস্রাঈলদের মিসর হতে বের হওয়ার পর তাদেরকে পবিত্র ভূমিতে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। আর তাদের অস্বীকার করার কারণে চল্লিশ বছর তাদেরকে তীহ ময়দানে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। তারপর তারা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করেছিল। সুতরাং মূসা ( আঃ )-এর কবর মি'রাজের হাদীস অনুসারে বায়তুল মাকদিসের নিকটই রয়েছে। এই কারণে এর সঠিক অর্থ এই যে, যেমন দুনিয়ার ভোগ-সামগ্রী মিসরে ফিরআউনদের ছিল, অনুরূপ ভোগ-সামগ্রী বনী-ইস্রাঈলকেও দান করা হয়েছিল। কিন্তু তা মিসরে নয়; বরং প্যালেস্টাইনে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
এরূপই ঘটেছিল এবং আমরা বনী ইসরাঈলকে করেছিলাম এসবের অধিকারী [ ১ ]। [ ১ ] এ আয়াতে বাহ্যতঃ বলা হয়েছে যে, ফির‘আউন সম্প্রদায়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তি, বাগ-বাগিচা ও ধন-ভাণ্ডারের মালিক তাদের নিমজ্জিত হওয়ার পর বনী ইসরাঈলকে করে দেয়া হয়। [ তাবারী, কুরতুবী ] এই ঘটনাটি কুরআনুল কারীমের একাধিক সূরায় ব্যক্ত হয়েছে। যেমন, সূরা আল-আ‘রাফের ১৩৬ ও ১৩৭ নং আয়াতে, সূরা আল-কাসাসের ৫ নং আয়াতে, সূরা আদ-দোখানের ২৫ থেকে ২৮ নং আয়াতসমূহে এবং সূরা আশ-শু'আরার আলোচ্য ৫৯ নং আয়াতে এ ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৫২-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর হযরত মূসা ( আঃ ) তাঁর নবুওয়াতের বহু যুগ ফিরাউন ও তার লোকদের মধ্যে কাটিয়ে দেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার নিদর্শনাবলী ও দলীল প্রমাণাদি তাদের উপর খুলে দেন। কিন্তু তবুও তাদের মাথা নীচু হলো না, অহংকার কমলো না এবং বদদেমাগীর মধ্যে কোনই পার্থক্য দেখা দিলো না। অতঃপর তাদের অবস্থা এমন স্তরে পৌঁছে গেল যে, তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসে পড়ার আর কিছুই বাকী থাকলো না। এমতাবস্থার মহান আল্লাহ হযরত মূসা ( আঃ )-এর উপর অহী করলেনঃ “ আমার নির্দেশ মোতাবেক তুমি বানী ইসরাঈলকে নিয়ে রাতারাতি মিসর হতে বেরিয়ে পড় ।” এই সময় বানী ইসরাঈল কিবতীদের নিকট হতে বহু অলংকার ধার স্বরূপ গ্রহণ করে এবং চাঁদ ওঠার সময় তারা চুপচাপ মিসর হতে প্রস্থান করে। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, ঐ রাত্রে চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল। হযরত মূসা ( আঃ ) পথে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “ হযরত ইউসুফ ( আঃ )-এর কবর কোথায় আছে?” একজন বৃদ্ধা তাঁর কবরটি দেখিয়ে দেয় । হযরত মূসা ( আঃ ) হযরত ইউসুফ ( আঃ )-এর তাবূতটি ( শবাধারটি ) সাথে নেন। কথিত আছে যে, স্বয়ং তিনিই তাবূতটি উঠিয়ে নিয়েছিলেন। হযরত ইউসুফ ( আঃ )-এর অসিয়ত ছিল যে, বানী ইসরাঈল এখান দিয়ে গমনের সময় যেন তাঁর তাবৃক্টটি সাথে নিয়ে যায় ।হযরত আবু মূসা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একজন বেদুঈনের বাড়ীতে অতিথি হন। সে তার খুব খাতির সম্মান করে। ফিরবার সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বললেনঃ “ মদীনায় গেলে তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে । কিছুদিন পর ঐ বেদুঈন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে সাক্ষাৎ করে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বলেনঃ “ কিছু চাও ।" সে বললোঃ “ হাওদাসহ আমাকে একটি উষ্ট্র দিন এবং'দুগ্ধবতী একটি ছাগী দিন ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বলেনঃ “ বড়ই আফসোস যে, তুমি বানী ইসরাঈলের বুড়ীর মত চাওনি ।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! বানী ইসরাঈলের বুড়ীর ঘটনাটি কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেন, যখন হযরত মূসা ( আঃ ) বানী । ইসরাঈলকে নিয়ে পথ চলছিলেন তখন তিনি পথ ভুলে যান। বহু চেষ্টা করেও তিনি পথ ঠিক করতে পারলেন না। তিনি তখন লোকদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করলেন, “ ব্যাপার কি? আমরা পথ ভুল করলাম কেন? বানী ইসরাঈলের আলেমগণ তখন বললেনঃ ‘ব্যাপার এই যে, হযরত ইউসুফ ( আঃ ) তাঁর মৃত্যুর সময় আমাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, যখন আমরা মিসর হতে চলে যাবো তখন যেন তার তাতটিও ( শবাধারটিও ) এখান থেকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই ।” হযরত মুসা ( আঃ ) তখন জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হযরত ইউসুফ ( আঃ )-এর কবর কোথায় আছে তা তোমাদের কার জানা আছে?” সবাই উত্তরে বললোঃ “আমরা কেউ এটা জানি না । আমাদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন বুড়ী এটা জানে।” হযরত মূসা ( আঃ ) তখন লোক মারফত বুড়ীকে বলে পাঠালেন যে, সে যেন হযরত ইউসুফ ( আঃ )-এর কবরটি তাঁকে দেখিয়ে দেয়। বুড়ী বললোঃ “ হ্যাঁ, আমি দেখিয়ে দিতে পারি, তবে প্রথমে আমার প্রাপ্য আমাকে দিতে হবে ।” হযরত মূসা ( আঃ ) তাকে বললেনঃ “ তুমি কি চাও?” সে উত্তরে বললোঃ “জান্নাতে আমি আপনার সাথে থাকতে চাই ।” হ্যরত মূসা ( আঃ )-এর কাছে বুড়ীর এই দাবী খুবই ভারীবোধ হয়। তৎক্ষণাৎ হযরত মূসা ( আঃ )-এর কাছে অহী আসলোঃ “ হে মূসা ( আঃ )! তুমি ঐ বুড়ীর শর্ত মেনে নাও ।” বুড়ী হযরত মূসা ( আঃ )-কে একটি বিলের নিকট নিয়ে গেল যার পানির রঙ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। বুড়ী বললোঃ “ এর পানি উঠিয়ে ফেলার নির্দেশ দিন ।” তার কথামত বিলের পানি বের করে দেয়া হলে মাটি দেখা গেল। বুড়ী তখন বললোঃ “ এ জায়গা খনন করতে বলন ।” মাটি খনন করলে কবরটি প্রকাশিত হয়ে পড়লো। তখন হযরত মূসা ( আঃ ) তাবূতটি সঙ্গে নিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি পুনরায় পথ চলতে শুরু করলেন। এবার রাস্তা পরিষ্কারভাবে দেখা গেল এবং তিনি সঠিক পথ পেয়ে গেলেন।” ( এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি খুবই গরীব বা দুর্বল। সত্যের কাছাকাছি এটাই যে, হাদীসটি মাওকুফ, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কথাই এটা নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)এ লোকেগুলো তো তাদের পথে চলতে থাকলো। আর ওদিকে ফিরাউন ও তার লোকেরা সকালে দেখলো যে, চৌকিদার, গোলাম ইত্যাদি কেউই নেই। সুতরাং তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেল এবং রাগে লাল হয়ে গেল। যখন তারা জানতে পারলো যে, রাতে বানী ইসরাঈলের সবাই পালিয়ে গেছে তখন তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। ফিরাউন তৎক্ষণাৎ সৈন্য জমা করতে লাগলো। সকলকে একত্রিত করে সে তাদেরকে বললোঃ “ বানী ইসরাঈল তো ক্ষুদ্র একটি দল । তারা অতি তুচ্ছ ও নগণ্য। সদা-সর্বদা তারা আমাদেরকে দুঃখ কষ্ট দিতে রয়েছে। তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে সদা সতর্ক থাকতে হচ্ছে। ( আরবি ) -এর কিরআতে এই অর্থ হবে। পূর্বযুগীয় গুরুজনদের একটি দল ( আরবি ) পড়েছেন। তখন অর্থ হবেঃ “ আমরা অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত রয়েছি এবং ইচ্ছা করেছি যে, তাদেরকে তাদের ঔদ্ধত্যপনার স্বাদ গ্রহণ করাবো । তাদের সকলকে এক সাথে ঘিরে ফেলে কচুকাটা করবো।” আল্লাহর কি মহিমা যে, এটা তাদের উপরই ফিরে আসলো। ফিরাউন তার কওম ও লোক-লকরসহ একই সময়ে ধ্বংস হয়ে গেল। ( তার উপর ও তার অনুসারীদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক )।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ পরিণামে আমি ফিরাউন গোষ্ঠীকে বহিস্কৃত করলাম তাদের উদ্যানরাজি ও ধন-ভাণ্ডার হতে এবং ধন-ভাণ্ডার ও সুরম্য সৌধমালা হতে। তাদের ব্যাপারে এরূপই ঘটেছিল এবং বানী ইসরাঈলকে আমি এ সমুদয়ের অধিকারী করেছিলাম। যারা অত্যন্ত নিম্ন শ্রেণীর লোক বলে গণ্য হতো তাদেরকে আমি চরম সম্মানিত বানিয়ে দিলাম। এরূপ করারই আমার ইচ্ছা ছিল এবং আমার ইচ্ছা আমি পূর্ণ করলাম।
সূরা শুআরা আয়াত 59 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হে জিন ও মানবকূল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে
- এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয়
- আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন, যারা উপদেশ অনুসরণ করে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে
- যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন তার মুখ দ্বারা অশুভ আযাব ঠেকাবে এবং এরূপ জালেমদেরকে বলা হবে,
- বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।
- এটাই তাদের শাস্তি। কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে এবং বলেছেঃ আমরা যখন অস্থিতে পরিণত
- তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর
- আপনার নিকট আহলে-কিতাবরা আবেদন জানায় যে, আপনি তাদের উপর আসমান থেকে লিখিত কিতাব অবতীর্ণ করিয়ে
- এই দু’টি ছাড়া আরও দু’টি উদ্যান রয়েছে।
- রহমান আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত তোমাদের কোন সৈন্য আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফেররা বিভ্রান্তিতেই
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা শুআরা ডাউনলোড করুন:
সূরা Shuara mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Shuara শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers