কোরান সূরা কাফিরূন আয়াত 6 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Kafirun ayat 6 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা কাফিরূন আয়াত 6 আরবি পাঠে(Kafirun).
  
   

﴿لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ﴾
[ الكافرون: 6]

তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। [সূরা কাফিরূন: 6]

Surah Al-Kafirun in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Kafirun ayat 6


''তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মমত এবং আমার জন্য আমার ধর্মমত।’’


Tafsir Mokhtasar Bangla


৬. তোমাদের জন্য তোমাদেরই বানানো বানোয়াট ধর্ম। পক্ষান্তরে আমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ঐশী ধর্ম।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তোমাদের দ্বীন ( শিরক ) তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন ( ইসলাম ) আমার জন্য। [১] [১] অর্থাৎ, যদি তোমরা তোমাদের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট থাক এবং তা ত্যাগ করতে রাজী না হও, তাহলে আমিও নিজের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট, তা কেন ত্যাগ করব? ( لَناَ أَعْمَالُناَ وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ ) অর্থাৎ, আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। ( আল ক্বাস্বাস ৫৫ আয়াত ) ( তাছাড়া তোমাদের কর্ম ভ্রষ্ট এবং আমার কর্ম শ্রেষ্ঠ। আর অন্যায়ের সাথে কোন আপোস নেই। )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার []।’ [] এর তাফসীর প্রসঙ্গে ইবনে-কাসীর বলেন, এ বাক্যটি তেমনি যেমন অন্য আয়াতে আছে, وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ “ আর তারা যদি আপনার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে আপনি বলবেন, ‘আমার কাজের দায়িত্ব আমার এবং তোমাদের কাজের দায়িত্ব তোমাদের” [ সূরা ইউনুস: ৪১ ] অন্য আয়াতে এসেছে, لنَآ اَعْمَا لُنَا وَ لَكُمْ اَعْمَا لُكُمْ “ আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্য এবং তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্য” । [ সূরা আল-কাসাস: ৫৫, আশ-শুরা: ১৫ ]। এর সারমর্ম এই যে, ইবনে-কাসীর دين শব্দকে দ্বীনী ক্রিয়াকর্মের অর্থে নিয়েছেন। যার অর্থ, প্রত্যেককে নিজ নিজ কর্মের প্রতিদান ও শাস্তি ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ আমার দ্বীন আলাদা এবং তোমাদের দ্বীন আলাদা। আমি তোমাদের মাবুদদের পূজা-উপাসনা-বন্দেগী করিনা এবং তোমরাও আমার মাবুদের পূজা-উপাসনা করো না। আমি তোমাদের মাবুদের বন্দেগী করতে পারি না এবং তোমরা আমার মাবুদের বন্দেগী করতে প্রস্তুত নও। তাই আমার ও তোমাদের পথ কখনো এক হতে পারে না। বর্তমান কালের কোন কোন জ্ঞানপাপী মনে করে থাকে যে, এখানে কাফেরদেরকে তাদের দ্বীনের উপর থাকার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তারা এটাকে ইসলামের উদারনীতির প্রমাণ হিসেবে পেশ করে থাকেন। নিঃসন্দেহে ইসলাম উদার। ইসলাম কাউকে অযথা হত্যা বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে অনুমতি দেয় না। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে কুফরী থেকে মুক্তি দিতে তাদের মধ্যে দাওয়াত ও দ্বীনের প্রচার-প্রসার ঘটানো থেকে বিরত থাকতে বলেনি। ইসলাম চায় প্রত্যেকটি কাফের ও মুশরিক ইসলামের ছায়াতলে এসে শান্তির বার্তা গ্ৰহণ করুক। আর এ জন্য ইসলাম প্রজ্ঞা, উত্তম উপদেশবাণী, উত্তম পদ্ধতিতে তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ্র পথে আহ্বান করাকে প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয় বিষয় হিসেবে ঘোষণা করেছে। [ দেখুন, সূরা আন-নাহল: ১২৫ ] মূলত: এ সমস্ত জ্ঞানপাপীরা এ বিষয়টিকেই সহ্য করতে চায় না। তারা এখানে আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামক কুফৱী মতবাদকে জায়েয প্রমাণ করা। এটা নিঃসন্দেহে ঈমান আনার পরে কুফরী করার শামিল, যা মূলত কাফেরদের প্রতি উদারনীতি নয় বরং তারা কাফের থাকা অবস্থায় চিরকালের জন্য তাদের ব্যাপারে দায়মুক্তি, সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষের ঘোষণাবাণী। আর এ সূরায় কাফেরদের দ্বীনের কোন প্রকার স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি। মূলত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যারা ঈমান এনেছে তারা দ্বীনের ব্যাপারে কখনো তাদের সাথে সমঝোতা করবে না- এ ব্যাপারে তাদেরকে সর্বশেষ ও চূড়ান্তভাবে নিরাশ করে দেয়া; আর তাদের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণাই এ সূরার উদ্দেশ্য। এ সূরার পরে নাযিল হওয়া কয়েকটি মক্কী সূরাতে কাফেরদের সাথে এ দায়মুক্তি, সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষ প্রকাশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, “ হে নবী! বলে দিন হে লোকেরা, যদি তোমরা আমার দ্বীনের ব্যাপারে ( এখানে ) কোন রকম সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে ( শুনে রাখো ), আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা যাদের বন্দেগী করছো আমি তাদের বন্দেগী করি না বরং আমি শুধুমাত্র সেই আল্লাহ্র বন্দেগী করি যার কর্তৃত্বাধীনে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু ।” [ সূরা ইউনুস: ১০৪ ] অন্য সূরায় আল্লাহ্ আরও বলেন, “ হে নবী! যদি এরা এখন আপনার কথা না মানে তা হলে বলে দিন, তোমরা যা কিছু করেছো তা থেকে আমি দায়মুক্ত” । [ সূরা আশ-শু‘আরা: ২১৬ ] অন্যত্র বলা হয়েছে, “ এদেরকে বলুন, আমাদের ত্রুটির জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না এবং তোমরা যা কিছু করে যাচ্ছো সে জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে না । বলুন, আমাদের রব একই সময় আমাদের ও তোমাদের একত্র করবেন এবং আমাদের মধ্যে ঠিকমতো ফায়সালা করবেন।” [ সূরা সাবা:২৫-২৬ ] অন্য সূরায় এসেছে, “ এদেরকে বলুন হে আমার জাতির লোকেরা তোমরা নিজেদের জায়গায় কাজ করে যাও । আমি আমার কাজ করে যেতে থাকবো। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে কার ওপর আসছে লাঞ্ছনাকর আযাব এবং কে এমন শাস্তি লাভ করছে যা অটল।” [ সূরা আয-যুমার: ৩৯-৪০ ]। আবার মদীনা তাইয়েবার সমস্ত মুসলিমকেও এই একই শিক্ষা দেয়া হয়। তাদেরকে বলা হয়েছে, “ তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সাথীদের মধ্যে রয়েছে একটি উত্তম আদর্শ । ( সেটি হচ্ছে ) তারা নিজেদের জাতিকে পরিষ্কার বলে দিয়েছে, আমরা তোমাদের থেকে ও তোমরা আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদদের পূজা করো তাদের থেকে পুরোপুরি সম্পর্কহীন। আমরা তোমাদের কুফৱী করি ও অস্বীকৃতি জানাই এবং যতক্ষণ তোমরা এক আল্লাহ্র প্রতি ঈমান না আনো ততক্ষণ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরকালীন শক্ৰতা সৃষ্টি হয়ে গেছে।” [ সূরা আল-মুমতাহিনাহঃ ৪ ] কুরআন মজীদের একের পর এক এসব সুস্পষ্ট বক্তব্যের পর তোমরা তোমাদের ধর্ম মেনে চলো এবং আমাকে আমার ধর্ম মেনে চলতে দাও-“ লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়াদীন” এর এ ধরনের কোন অর্থের অবকাশই থাকে না । বরং সূরা আয-যুমার এ যে কথা বলা হয়েছে, একে ঠিক সেই পর্যায়ে রাখা যায় যেখানে বলা হয়েছেঃ “ হে নবী! এদেরকে বলে দিন, আমি তো আমার দ্বীনকে একমাত্ৰ আল্লাহ্র জন্য নির্ধারিত করে তাঁরই ইবাদাত করবো । তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে যার যার বন্দেগী করতে চাও করতে থাক না কেন।” [ ১৪ ]। সুতরাং এটাই এ আয়াতের মূল ভাষ্য যে, এখানে কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এটাও লক্ষণীয় যে, পবিত্র কুরআনে একথাও আছে, “ কাফেররা সন্ধি করতে চাইলে তোমরাও সন্ধি কর ।” [ সূরা আল-আনফাল: ৬১ ] তাছাড়া মদীনায় হিজরত করার পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- তার ও ইয়াহূদীদের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। তাই সম্পর্কচ্যুতির অর্থ এ নয় যে, তাদের সাথে প্রয়োজনে সন্ধিচুক্তি করা যাবে না। মূলত সন্ধির বৈধতা ও অবৈধতার আসল কারণ হচ্ছে স্থান-কাল-পাত্র এবং সন্ধির শর্তাবলি। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফয়সালা দিতে গিয়ে বলেছেন- “ সে সন্ধি অবৈধ, যা কোন হারামকে হালাল কিংবা হালালকে হারাম করে ।” [ আবু দাউদ: ৩৫৯৪, তিরমিয়ী: ১৩৫২, ইবনে মাজাহ:২৫৫৩ ] ইয়াহূদীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিতে ইসলামের মূলনীতিবিরুদ্ধ কোন বিষয় ছিল না। উদারতা, সদ্ব্যবহার ও শান্তি অন্বেষায় ইসলামের সাথে কোন ধর্মের তুলনা হয় না। কিন্তু এরূপ শান্তিচুক্তি মানবিক অধিকারের ব্যাপারে হয়ে থাকে- আল্লাহ্ তা‘আলার আইন ও দ্বীনের মূলনীতিতে কোন প্রকার দরকষাকষির অবকাশ নেই। [ দেখুন, ইবন্ তাইমিয়্যাহ্, আল-জাওয়াবুস সহীহ, ৩/৫৯-৬২; ইবনুল কাইয়্যিম, বাদায়ি‘উল ফাওয়ায়িদ, ১/২৪৬-২৪৭ ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )। তাওয়াফের পর দুই রাকআত নামাযে এই সূরা এবং ( আরবি ) সূরা পাঠ করতেন। সহীহ মুসলিমেই হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ফজরের দুই রাকআত সুন্নত নামাযেও এ সূরা দুটি পাঠ করতেন। মুসনাদে আহমদে হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ফজরের পূর্বের দুই রাকআতে এবং মাগিরিবের পরের দুই রাকআ’তে ( আরবি ) এই সূরা দুইটি বিশেরও অধিকবার অথবা দশেরও অধিকবার পাঠ করতেন।মুসনাদে আহমদে হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমি ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত নামাযে এবং মাগরিবের দুই রাকআত সুন্নাত নামাযে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে ( আরবি ) এবং এই সূরা দুটি চব্বিশ বার অথবা পঁচিশবার পড়তে দেখেছি । মুসনাদে আহমদেরই অন্য এক রিওয়াইয়াতে হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে এক মাস ধরে ফজরের পূর্বের দুই রাকআত নামাযে এবং মাগরিবের পরের দুই রাকআতে নামাযে ( আরবি ) এ সূরা দু'টি পাঠ করতে দেখেছেন। ( এ হাদীসটি জামে তিরমিযী, সুনানে ইবনে মাজাহ এবং সুনানে নাসায়ীতেও রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ ) এটাকে হাসান বলেছেন)এই সূরাটি যে কুরআনের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য এ বর্ণনাটি ইতিপূর্বে গত হয়েছে। ( আরবি ) সূরাটিও একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।মুসনাদে আহমদে হযরত নওফিল ইবনে মুআবিয়া ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁকে ( তাঁর পিতাকে ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ যয়নব ( রাঃ ) কে তুমি তোমার কাছে নিয়ে প্রতিপালন কর ।” নওফিলের ( রাঃ ) পিতা এক সময়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করলে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ মেয়েটি সম্পর্কে তুমি কি করেছো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আমি তাকে তার মায়ের কাছে রেখে এসেছি ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ কেন রেখে এসেছো?” তিনি ( নওফিল (রাঃ )-এর পিতা মুআবিয়া উত্তরে বললেনঃ “শয়নের পূর্বে পড়ার জন্যে আপনার কাছে কিছু ওয়াযীফা শিখতে এসেছি ।রাসূলুল্লাহ তখন বললেনঃ ( আরবি ) পাঠ করো, এতে শিরক থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে।" হযরত জিবিল্লাহ ইবনে হা'রিসাহ্ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন তুমি বিছানায় শয়ন করতে যাবে তখন । সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। কেননা, এটা হলো শিরক হতে মুক্তি লাভের উপায়।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)আবদুর রহমান ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন বিছানায় শয়ন করতে যেতেন তখন ( আরবি ) সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করতেন। ( এ হাদীসটিও ইমাম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হারিস ইবনে জিবিল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ “ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি ঘুমোবার সময় পাঠ করবো ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ যখন তুমি বিছানায় ঘুমোতে যাবে তখন ( আরবি ) পাঠ করবে । কেননা, এটা শিরক হতে মুক্তি লাভের উপায়।" ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন) ১-৬ নং আয়াতের তাফসীর এই মুবারক সূরায় আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের আমলের প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন এবং একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে মক্কার কুরায়েশদেরকে সম্বোধন করা হলেও পৃথিবীর সমস্ত কাফিরকে এই সম্বোধনের আওতায় আনা হয়েছে। এই সূরার শানে নুযূল এই যে, কাফিররা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে বললোঃ “ এক বছর আপনি আমাদের মাবুদ প্রতিমাগুলোর ইবাদত করুন, পরবর্তী বছর আমরাও এক আল্লাহর ইবাদত করবো ।” তাদের এই প্রস্তাবের জবাবে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা এ সূরা নাযিল করেন। আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী ( সঃ ) কে আদেশ করছেনঃ তুমি বলে দাওঃ হে কাফিরগণ! না আমি তোমাদের উপাস্যদের উপাসনা করি, না তোমরা আমার মাবুদের উপাসনা কর। আর না আমি তোমাদের উপাস্যদেরকে উপাসনা করবো, তোমরা আমার মাবুদের উপাসনা করবে। অর্থাৎ আমি শুধু আমার মায়ূদের পছন্দনীয় পদ্ধতি অনুযায়ী তাঁরই উপাসনা করবো, তোমাদের পদ্ধতি তো তোমরা নির্ধারণ করে নিয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ তারা শুধু মনগড়া বিশ্বাস এবং খাহেশাতে নাফসানী বা কুপ্রবৃত্তির পিছনে পড়ে রয়েছে, অথচ তাদের কাছে তাদের প্রতিপালকের হিদায়াত বা পথ। নির্দেশ পৌছে গেছে।” ( ৫৩:২৩ ) অতএব, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদের সংস্পর্শ হতে নিজেকে সর্বপ্রকারে মুক্ত করে নিয়েছেন এবং তাদের উপাসনা পদ্ধতি ও উপাস্যদের প্রতি সর্বাত্মক অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। লক্ষ্যণীয় যে, প্রত্যেক ইবাদতকারীরই মাবুদ বা উপাস্য থাকবে এবং উপাসনার পদ্ধতি থাকবে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এবং তাঁর উম্মত শুধু আল্লাহ তা'আলারই ইবাদত বা উপাসনা করেন। নবী করীমের ( সঃ ) অনুসারীরা তাঁরই শিক্ষা অনুযায়ী ইবাদত করে থাকে। এ কারণেই ঈমানের মূলমন্ত্র হলোঃ , ( আরবি ) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। এবং মুহাম্মদ ( সঃ ) তাঁর রাসূল।” পক্ষান্তরে কাফির মুশরিকদের উপাস্য বা মাবুদ আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন, তাদের উপাসনার পদ্ধতিও ভিন্ন ধরনের। আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতির সাথে তাদের কোনই সম্পর্ক নেই। এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী ( সঃ ) কে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন কাফিরদেরকে জানিয়ে দেনঃ তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন এবং আমার জন্যে আমার দ্বীন। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ হে নবী ( সঃ ) যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে তাদেরকে বলে দাওঃ আমার আমল আমার জন্যে এবং তোমাদের আমল তোমাদের জন্যে, আমি যে আমল করি তা হতে তোমরা মুক্ত এবং তোমরা যে আমল কর তা হতে ক্ত ।( ১০:৪১ ) আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আরো বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ আমাদের কর্ম আমাদের জন্যে এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্যে ।( ৪২:১৫ ) অর্থাৎ আমাদের কর্মের জন্যে তোমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না এবং তোমাদের কর্মের জন্যে আমাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবে না।সহীহ বুখারীতে এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হয়েছেঃ তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন অর্থাৎ কুফর, আর আমার জন্যে আমার দ্বীন অর্থাৎ ইসলাম। আয়াতের শব্দ হলো ( আরবি ) কিন্তু অন্যান্য আয়াতে যেহেতু এর উপর ওয়াকফ হয়েছে সেই হেতু এখানেও ( আরবি ) কে উহ্য রাখা হয়েছে। যেমন ( আরবি ) এবং ( আরবি ) এর মধ্যে ( আরবি ) কে উহ্য রাখা হয়েছে। কোন কোন তাফসীরকারের মতে এ আয়াতের অর্থ হলোঃ আমি তোমাদের বর্তমান উপাস্যদের উপাসনা করি না, ভবিষ্যতের জন্যেও তোমাদেরকে হতাশ করছি যে, সমগ্র জীবনে ঐ কুফরী আমার ( নবী (সঃ )-এর) দ্বারা কখনো সম্ভব হবে না। একইভাবে তোমরা আমার প্রতিপালকের ইবাদত বর্তমানেও কর না এবং ভবিষ্যতেও করবে না।এখানে ঐ সব কাফিরকে বুঝানো হয়েছে যাদের ঈমান আনয়ন না করার ব্যাপার আল্লাহ তা'আলার জানা রয়েছে। যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ তোমার প্রতি যা কিছু অবতীর্ণ করা হয় ঐ ব্যাপারে তাদের অধিকাংশ হঠকারিতা ও কুফরীতে লিপ্ত হয় ।" ( ৫:৬৮ )কোন কোন আরবী সাহিত্য বিশারদ হতে ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) উদ্ধৃত করেছেন যে, একটি বাক্যকে দু’বার গুরুত্ব আরোপের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে, অবশ্য কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে ।” আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ তোমরা তো জাহান্নাম দেখবেই, আবার বলি তোমরা তো ওটা দেখবেই চাক্ষুষ প্রত্যক্ষে ।আলোচ্য সূরায় একই রকম বাক্য দু'বার ব্যবহারের তিনটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমতঃ প্রথম বাক্যে উপাস্য এবং দ্বিতীয় বাক্যে ইবাদত বা উপাসনার পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ প্রথম বাক্যে বর্তমান এবং দ্বিতীয় বাক্যে ভবিষ্যৎ বুঝানো হয়েছে। তৃতীয়তঃ প্রথম বাক্যের তাগীদের জন্যেই দ্বিতীয় বাক্যের অবতারণা করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এখানে চতুর্থ একটি কারণ আবু অব্বিাস ইবনে তাইমিয়া ( রঃ ) তার কোন এক কিতাবে উল্লেখ। করেছেন। তিনি বলেনঃ আরবী ব্যাকরণের পরিভাষায় প্রথম বাক্য জুমলায়ে ফেলিয়া এবং দ্বিতীয় বাক্য জুমলায়ে ইসমিয়া অর্থাৎ আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করি না, আমার নিকট হতে অনুরূপ কোন আশাও কেউ করতে পারে না। এ উক্তিটিও ভালো বলেই মনে হয়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। ইমাম শাফিয়ী ( রঃ ) এ আয়াত থেকেই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, কাফিররা। সবাই এক জাতি। এ কারণে ইয়াহূদীরা খৃস্টানদের এবং খৃস্টানরা ইয়াহূদীদের উত্তরাধিকারী হতে পারে। উভয়ের মধ্যে বংশগত ও কার্যকরণ গত সামঞ্জস্য ও অংশীদারিত্ব রয়েছে। এ কারণে ইসলাম ছাড়া কুফরীর যতগুলো পথ রয়েছে, বাতিল হিসেবে সবই এক ও অভিন্ন। ইমাম আহমদ ( রঃ ) এবং তাঁর অনুসারীদের মাযহাব এর বিপরীত। তাঁরা বলেন যে, ইয়াহূদীরা খৃষ্টানদের বা খৃষ্টানরা ইয়াহূদীদের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না, কেননা, হাদীসে রয়েছে যে, দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী একে অন্যের অংশীদার ও উত্তরাধিকারী হতে পারে না।

সূরা কাফিরূন আয়াত 6 সূরা

لكم دينكم ولي دين

سورة: الكافرون - آية: ( 6 )  - جزء: ( 30 )  -  صفحة: ( 603 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ।
  2. যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে
  3. তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই
  4. আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বলবেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে নিয়ে নেবো এবং তোমাকে নিজের
  5. মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। কাজেই আমি ভয় করছি
  6. তোমাদের কে প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী বিশ্বস্ত।
  7. এবং তারা যখন তাদের কাছ দিয়ে গমন করত তখন পরস্পরে চোখ টিপে ইশারা করত।
  8. আপনি এ কোরআন দ্বারা তাদেরকে ভয়-প্রদর্শন করুন, যারা আশঙ্কা করে স্বীয় পালনকর্তার কাছে এমতাবস্থায় একত্রিত
  9. তখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেনঃ তোমাদের কি ভয় নেই?
  10. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা সামনের আযাব ও পেছনের আযাবকে ভয় কর, যাতে তোমাদের

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা কাফিরূন ডাউনলোড করুন:

সূরা Kafirun mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Kafirun শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত কাফিরূন  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত কাফিরূন  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত কাফিরূন  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত কাফিরূন  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত কাফিরূন  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত কাফিরূন  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত কাফিরূন  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত কাফিরূন  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত কাফিরূন  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত কাফিরূন  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত কাফিরূন  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Monday, November 4, 2024

Please remember us in your sincere prayers