কোরান সূরা আহ্যাব আয়াত 6 তাফসীর
﴿النَّبِيُّ أَوْلَىٰ بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ ۖ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ ۗ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَىٰ بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ إِلَّا أَن تَفْعَلُوا إِلَىٰ أَوْلِيَائِكُم مَّعْرُوفًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا﴾
[ الأحزاب: 6]
নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরগণের মধ্যে যারা আত্নীয়, তারা পরস্পরে অধিক ঘনিষ্ঠ। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতে চাও, করতে পার। এটা লওহে-মাহফুযে লিখিত আছে। [সূরা আহ্যাব: 6]
Surah Al-Ahzab in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ahzab ayat 6
এই নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক অন্তরঙ্গ, আর তাঁর পত্নীগণ হচ্ছেন তাদের মাতা। আর গর্ভজাত সম্পর্কধারীরা -- তারা আল্লাহ্র বিধানে একে অন্যে অধিকতর নিকটবর্তী মুমিনদের ও মুহাজিরদের চাইতে, তবে তোমরা যেন তোমাদের বন্ধুবর্গের প্রতি সদাচার করো। এমনটাই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬. নবী মুহাম্মদ যেসব কাজের প্রতি মুমিনদেরকে আহŸান জানিয়েছেন তাতে তিনি তাদের নিজেদের অপেক্ষা আরো আন্তরিক। যদিও বা তাদের মন তিনি ছাড়া অন্যদের প্রতি ধাবিত হয়ে থাকে। আর তাঁর স্ত্রীগণ সকল মুমিন সম্প্রদায়ের মাতা স্বরূপ। ফলে তাদের প্রত্যেকের উপর তাঁর মৃত্যুর পর তাঁদেরকে বিয়ে করা হারাম। আর উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ঈমান ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের মধ্য হতে যারা ইসলামের প্রথম যুগে পারস্পরিক উত্তরাধিকার লাভ করতো। অতঃপর তাদের পারস্পরিক উত্তরাধিকারের বিধান রহিত হয়ে যায়। এখন তাদের নিকটাত্মীয়দের একজন অপরজন অপেক্ষা অধিক হকদার। তবে হাঁ যদি তোমরা উত্তরাধিকার ব্যতিরেকে তোমাদের বন্ধুদের সাথে সদাচরণমূলক ওসীয়ত ও অনুদানের কিছু করতে চাও তাতে কোন বাধা নেই। এটি লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে, তাই তার উপর আমল করা জরুরী।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নবী, বিশ্বাসীদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়[১] এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মা-স্বরূপ।[২] আল্লাহর বিধান অনুসারে বিশ্বাসী ও মুহাজিরগণ অপেক্ষা যারা আত্মীয় তারাই পরস্পরের নিকটতর।[৩] তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করতে চাও ( তাহলে তা করতে পার )। [৪] এ কথা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।[৫] [১] নবী ( সাঃ ) নিজ উম্মতের জন্য যত মঙ্গলকামী ও দয়ালু ছিলেন, তা বর্ণনার মুখাপেক্ষী নয়। আল্লাহ তাআলা নবী ( সাঃ )-এর দয়া ও হিতাকাঙ্ক্ষা দেখে এই আয়াতে নবী ( সাঃ )-কে মু'মিনদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়, নবী ( সাঃ )-এর ভালোবাসাকে অন্য সকলের ভালোবাসা অপেক্ষা উচ্চতর এবং নবী ( সাঃ )-এর আদেশকে তাদের সকল ইচ্ছা ও এখতিয়ার অপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছেন। এই জন্য মু'মিনদের জরুরী কর্তব্য যে, নবী ( সাঃ ) আল্লাহর জন্য তাদের নিকট যে মাল-ধন চাইবেন তারা তাঁকে তা সত্বর প্রদান করবে; যদিও তাদের ঐ মালের আশু প্রয়োজন থাকে। নিজেদের জীবন থেকেও নবী ( সাঃ )-এর মহববত অধিক রাখতে হবে। ( যেমন উমার (রাঃ )-এর ঘটনা) নবী ( সাঃ )-এর আদেশকে অন্য সবার আদেশের উপর প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যকে অন্য সবার আনুগত্য অপেক্ষা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ( فلا وربك لا يؤمنون... ) ( সূরা নিসা ৪:৬৫ আয়াত )এর নির্দেশ মত নিজেকে গড়ে না তুলতে পারবে, ততক্ষণ কোন মুসলিম প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে না। অনুরূপ যতক্ষণ তাঁর মহব্বত অন্য সকল মহব্বতের উপর বিজয়ী না হবে, ততক্ষণ ( لاََيؤُمِنُ أَحْدُكُمْ حُتىَّ أُكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِن وَّالِدِهِ وَوَلَِدِهِ... ) এর নির্দেশ অনুযায়ী কেউ প্রকৃত মু'মিন হবে না। ঠিক অনুরূপ রসূল ( সাঃ )-এর আনুগত্যে আলস্য, অবজ্ঞা, অবহেলা বা ত্রুটি প্রদর্শন করলেও সঠিক অর্থে মুসলিম হওয়া যায় না।[২] অর্থাৎ, শ্রদ্ধা ও সম্মানে এবং তাঁদেরকে বিবাহ না করার ব্যাপারে তাঁরা 'উম্মুল মু'মিনীন' বা মু'মিন নারী-পুরুষদের মাতা।[৩] অর্থাৎ, এখন হিজরত, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনের কারণে একে অন্যের ওয়ারেস হবে না; শুধু নিকট আত্মীয়তার কারণেই ওয়ারেস হবে।[৪] অর্থাৎ, আত্মীয় ছাড়া অন্যদের সাথে সদ্ব্যবহার ও সৌজন্য প্রদর্শন করতে পারো। তাছাড়া তাদের জন্য নিজ সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ অসিয়ত করতে পারো।[৫] অর্থাৎ, লাওহে মাহফূযে আসল হুকুম এটাই লিপিবদ্ধ আছে; যদিও কারণবশতঃ সাময়িকভাবে অন্যদেরকেও ওয়ারিস করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার ইলমে ছিল যে, তা তিনি মনসূখ ( রহিত ) করে দেবেন। সুতরাং তা মনসূখ করে দিয়ে পূর্ব আদেশ চালু রাখা হল।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর [ ১ ] এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা [ ২ ]। আর আল্লাহ্র বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরগনের চেয়ে---যারা আত্মীয় তারা পরস্পর কাছাকাছি [ ৩ ]। তবে তোমরা তোমাদের বন্ধু-বান্ধবের প্রতি কল্যাণকর কিছু করার কথা আলাদা [ ৪ ]। এটা কিভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। [ ১ ] অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মুসলিমদের এবং মুসলিমদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে সম্পর্ক তা অন্যান্য সমস্ত মানবিক সম্পর্কের উর্ধ্বের এক বিশেষ ধরনের সম্পর্ক। নবী ও মুমিনদের মধ্যে যে সম্পর্ক বিরাজিত, অন্য কোন আত্মীয়তা ও সম্পর্ক তার সাথে কোন দিক দিয়ে সামান্যতমও তুলনীয় নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের জন্য তাদের বাপমায়ের চাইতেও বেশী স্নেহশীল ও দয়ার্দ্র হৃদয় এবং তাদের নিজেদের চাইতেও কল্যাণকামী। তাদের বাপ-মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা তাদের ক্ষতি করতে পারে, তাদের সাথে স্বার্থপরের মতো ব্যবহার করতে পারে, তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দিতে পারে, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে কেবলমাত্র এমন কাজই করতে পারেন যাতে তাদের সত্যিকার সাফল্য অর্জিত হয়। তারা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মারতে পারে, বোকামি করে নিজেরাই ক্ষতি করতে পারে কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য তাই করবেন যা তাদের জন্য লাভজনক হয়। আসল ব্যাপার যখন এই মুসলিমদের ওপরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ অধিকার আছে তখন তারা তাকে নিজেদের বাপ-মা ও সন্তানদের এবং নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশী প্রিয় মনে করবে। দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে তাকে বেশী ভালোবাসবে। নিজেদের মতামতের ওপর তার মতামতকে এবং নিজেদের ফায়সালার ওপর তার ফায়সালাকে প্রাধান্য দেবে। তার প্রত্যেকটি হুকুমের সামনে মাথা নত করে দেবে। তাই হাদীসে এসেছে, “ তোমাদের কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষের চাইতে বেশী প্রিয় হই ।” [ বুখারী: ১৪, মুসলিম: ৪৪ ] সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালন করা স্বীয় পিতা-মাতার নির্দেশের চাইতেও অধিক আবশ্যকীয়। যদি পিতা-মাতার হুকুম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুমের পরিপন্থী হয়, তবে তা পালন করা জায়েয নয়। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশকে নিজের সকল আশা-আকাংক্ষার চাইতেও অগ্ৰাধিকার দিতে হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ এমন কোন মুমিনই নেই যার পক্ষে আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া ও আখেরাতে সমস্ত মানবকুলের চাইতে অধিক হিতাকাঙ্ক্ষী ও আপনজন নই । যদি তোমাদের মন চায়, তবে এর সমর্থন ও সত্যতা প্রমাণের জন্য কুরআনের আয়াত পাঠ করতে পার।” [ বুখারী: ২৩৯৯ ] [ ২ ] রাসূলের পূণ্যবতী স্ত্রীগণকে সকল মুসলিমের মা বলে আখ্যায়িত করার অর্থ-সম্মান ও শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে মায়ের পর্যায়ভুক্ত হওয়া। মা-ছেলের সম্পর্ক-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আহ্কাম, যথা-পরস্পর বিয়ে-শাদী হারাম হওয়া, মুহরিম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরস্পর পর্দা না করা এবং মীরাসে অংশীদারিত্ব প্রভৃতি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যেমন, আয়াতের শেষে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। আর রাসূলের পত্নীগণের সাথে উম্মতের বিয়ে অনুষ্ঠান হারাম হওয়ার কথা অন্য এক আয়াতে ভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে বিয়ে অনুষ্ঠান হারাম মা হওয়ার কারণেই ছিল, এমনটি হওয়া জরুরী নয়। মোটকথা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ শুধুমাত্র এ অর্থে মুমিনদের মাতা যে, তাদেরকে সম্মান করা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব। বাদবাকি অন্যান্য বিষয়ে তারা মায়ের মতো নন। যেমন তাদের প্রকৃত আত্মীয়গণ ছাড়া বাকি সমস্ত মুসলিম তাদের জন্য গায়ের মাহরাম ছিল এবং তাদের থেকে পর্দা করা ছিল ওয়াজিব। তাদের মেয়েরা মুসলিমদের জন্য বৈপিত্ৰেয় বোন ছিলেন না, যার ফলে তাদের সাথে মুসলিমদের বিয়ে নিষিদ্ধ হতে পারে। তাদের ভাই ও বোনেরা মুসলিমদের জন্য মামা ও খালার পর্যায়ভুক্ত ছিলেন না। কোন ব্যক্তি নিজের মায়ের তরফ থেকে যে মীরাস লাভ করে তাদের তরফ থেকে কোন অনাত্মীয় মুসলিম সে ধরনের কোন মীরাস লাভ করে না। [ দেখুন, ফাতহুল কাদীর; মুয়াস্সার, বাগভী ] [ ৩ ] এ আয়াতের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক চুক্তির বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। হিজরতের পর পরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন। যার কারণে তাদের একজন অপরজনের ওয়ারিশ হতো। এটা ছিল ঐতিহাসিক প্রয়োজনে। তারপর যখন প্রত্যেকের অবস্থারই পরিবর্তন হলো তখন এ নীতির কার্যকারিতা রহিত করে যাবিল আরহামদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হলো। [ তাবারী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী, মুয়াস্সার ] [ ৪ ] এ আয়াতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি চাইলে হাদীয়া, তোহ্ফা, উপঢৌকন বা আসিয়াতের মাধ্যমে নিজের কোন দ্বীনী ভাইকে সাহায্য করতে পারে। [ ফাতহুল কাদীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তা'আলা জানেন যে, তাঁর রাসূল ( সঃ ) নিজের জীবন অপেক্ষা নিজের উম্মতের উপর অধিকতর দয়ালু, এজন্যে তিনি তাঁর রাসূল ( সঃ )-কে তাদের উপর তাদের জীবনের চেয়েও বেশী অধিকার দিয়েছেন। তারা নিজেদের জন্যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না, বরং রাসূল ( সঃ )-এর প্রত্যেক হুকুমকে জান-প্রাণ দিয়ে তাদেরকে কবুল করতে হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচারের ভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে ওটা মেনে না নেয় ।” ( ৪:৬৫ ) সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! ততামাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারে না যে পর্যন্ত না আমি তার কাছে প্রিয় । হই তার নিজের জান, মাল, সন্তান এবং সমস্ত লোক অপেক্ষা।” সহীহ হাদীসে আরো বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার ( রাঃ ) বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আপনি আমার নিকট আমার প্রাণ ছাড়া সবকিছু হতেই প্রিয় ।" তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ হে উমার ( রাঃ )! না ( এতেও তুমি মুমিন হতে পার না ), বরং আমি যেন তোমার কাছে তোমার জীবন অপেক্ষাও প্রিয় হই ।" তখন তিনি বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহর শপথ! ( এখন হতে ) আপনি আমার নিকট সব কিছু হতেই প্রিয় হয়ে গেলেন । এমনকি আমার নিজের জীবন হতেও।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বললেনঃ “ হে উমার ( রাঃ )! এখন ( তুমি পূর্ণ মুমিন হলে ) ।” এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, নবী ( সঃ ) মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর।এ আয়াতের তাফসীরে সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত মুমিনের সবচেয়ে বেশী হকদার আমিই, এমনকি তাদের নিজেদের জীবনের চেয়েও । তোমরা ইচ্ছা করলে। ( আরবি )-এই আয়াতটি পড়ে নাও। জেনে রেখো যে, যদি কোন মুসলমান মাল-ধন রেখে মারা যায় তবে সেই মালের হকদার হবে তার উত্তরাধিকারীরা। আর যদি কোন মুসলমান তার কাঁধে ঋণের বোঝা রেখে মারা যায় অথবা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে রেখে মারা যায় তবে তার ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার এবং তার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের লালন-পালনের দায়িত্ব ভারও আমারই উপর ন্যাস্ত।”এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পত্নীগণ মুমিনদের মাতাতুল্য। তারা তাদের সম্মানের পাত্রী। সম্মান, বুযর্গী ইত্যাদির দিক দিয়ে তাঁরা যেন তাদের মা। হ্যা, তবে মায়ের সাথে অন্যান্য আহকাম যেমন নির্জনতা ইত্যাদিতে পার্থক্য আছে। তাঁদের গর্ভজাত কন্যাদের সাথে এবং বোনদের সাথে বিয়ে হারাম হওয়ার কথা এখানে বলা হয়নি। কোন কোন আলেম তাদের কন্যাদেরও মুসলমানদের বোন বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম শাফেয়ী ( রঃ ) মুখতাসার গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা ইবারতের প্রয়োগ, হুকুম সাব্যস্ত করা নয়। হযরত মুআবিয়া ( রাঃ ) প্রমুখ কোন না কোন উম্মুল মুমিনীনের ভাই ছিলেন। তাঁকে মামা বলা যাবে কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী ( রঃ ) বলেন যে, বলা যেতে পারে। বাকী রইলো এখন এই কথা যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে আবুল মুমিনীন ( মুমিনদের পিতা ) বলা যাবে কি-না? এটাও খেয়াল করা প্রয়োজন যে, আবুল মুমিনীন বললে স্ত্রীলোকেরাও এসে যায়।এর মধ্যে আধিক্য হিসেবে স্ত্রী লিঙ্গও রয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেন যে, আবুল মুমিনীন বলা যাবে না। ইমাম শাফেয়ী ( রঃ ) ( আরবি )-এর দু’টি উক্তির মধ্যেও অধিকতর সঠিক উক্তি এটাই। হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) ও হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )( আরবি )-এর কিরআতে -এর পরে।( এবং তিনি তাদের পিতা ) এরূপও রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী ( রঃ )-এর মাযহাবেও একটি উক্তি এটাই এবং নিম্নের হাদীসটিও এ উক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেঃ ( আরবি ) হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের পিতাদের স্থলাভিষিক্ত । আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছি যে, তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে কিবলার দিকে যেন মুখ না করে এবং পিঠও যেন না করে, ডান হাতে যেন ঢিলা ব্যবহার না করে এবং ডান হাতে যেন ইসতিজাও না করে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) তিনি ইসতিজার জন্যে তিনটি ঢিলা নিতে বলেছেন। গোবর ও হাড় দ্বারা ইসতিজা করতে তিনি নিষেধ করেছেন। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে পিতা বলা যাবে না। কেননা কুরআন কারীমে রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ মুহাম্মাদ ( সঃ ) তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন ।” ( ৩৩:৪০ )এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “ আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিনও মুহাজিরগণ অপেক্ষা যারা আত্মীয়, তারা পরস্পরের নিকটতর । ইতিপূর্বে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিলেন ঐ দিক দিয়েই তারা একে অপরের উত্তরাধিকারী হতেন। শপথ করে যারা সম্বন্ধ জুড়ে দিতেন তারাও তাঁদের সম্পত্তির হকদার হয়ে যেতেন। এ আয়াত দ্বারা এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।পূর্বে কোন আনসার মারা গেলে তাঁর নিকটাত্মীয়রা ওয়ারিস হতো না, বরং মুহাজিররা ওয়ারিস হতেন, যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেছিলেন। হযরত যুহায়ের ইবনে আওয়াম ( রাঃ ) বলেনঃ “ এই হুকুম বিশেষভাবে আমাদের আনসার ও মুহাজিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে । আমরা যখন মক্কা ছেড়ে মদীনায় আগমন করি তখন আমাদের কাছে কিছুই ছিল না। এখানে ( মদীনায় ) এসে আমরা আনসারদের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই। তারা আমাদের উত্তম ভাই সাব্যস্ত হন। এমনকি তাদের মৃত্যুর পর আমরা তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতাম। হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপিত হয়েছিল হযরত খারেজা ইবনে যায়েদ ( রাঃ )-এর সাথে। হযরত উমার ( রাঃ )-এর হয়েছিল অমুকের সাথে। হযরত উসমান ( রাঃ ) ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন একজন যারকী ব্যক্তির সাথে। আর স্বয়ং আমার ভাই হয়েছিলেন হযরত কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ )। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হলেন। ঐ সময় তার ইন্তেকাল হলে আমিও তার ওয়ারিস হয়ে যেতাম। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলো এবং মীরাসের সাধারণ হুকুম আমাদের জন্যেও প্রযোজ্য হয়ে গেল ।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করতে চাও তবে তা করতে পার। তুমি তার জন্যে অসিয়ত করে যেতে পার। অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর এই হুকুম প্রথম হতেই এই কিতাবে লিপিবদ্ধ ছিল। তাতে কোন পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়নি। মধ্যখানে পাতানো ভাই-এর উপর যে ওয়ারিসী স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এটা শুধু একটা বিশেষ যুক্তিসঙ্গতার ভিত্তিতে হয়েছিল একটা বিশেষ ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এরপর এটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন মূল হুকুম জারী হয়ে গেছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সূরা আহ্যাব আয়াত 6 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হা-মীম।
- নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত প্রাণীর তুলনায় তারাই মূক ও বধির, যারা উপলদ্ধি করে না।
- বস্তুতঃ এটা তো আল্লাহ তোমাদের সুসংবাদ দান করলেন, যাতে তোমাদের মনে এতে সান্ত্বনা আসতে পারে।
- এদের দ্বারা তোমাদের সম্মান হয়, যখন বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে চারণ ভূমিতে
- অতঃপর আমি বললামঃ গরুর একটি খন্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন
- তওরাত নাযিল হওয়ার পূর্বে ইয়াকুব যেগুলো নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন, সেগুলো ব্যতীত সমস্ত আহার্য
- এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত
- আল্লাহর কসম, আমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে লিপ্ত ছিলাম।
- যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব।
- আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে মার্জনা চাও এবং তাঁরই পানে ফিরে এসো নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগার খুবই
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আহ্যাব ডাউনলোড করুন:
সূরা Ahzab mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ahzab শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers