কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 67 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Baqarah ayat 67 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা বাকারাহ্ আয়াত 67 আরবি পাঠে(Baqarah).
  
   

﴿وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا بَقَرَةً ۖ قَالُوا أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا ۖ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ﴾
[ البقرة: 67]

যখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? মূসা (আঃ) বললেন, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সূরা বাকারাহ্: 67]

Surah Al-Baqarah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 67


আর স্মরণ করো! মূসা তাঁর লোকদের বললেন -- “নিঃসন্দেহ, আল্লাহ্ তোমাদের হুকুম করেছেন তোমরা যেন একটি বক্‌না-বাছুর যবেহ্ করো।” তারা বললে -- “তুমি কি আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করছ?” তিনি বললেন -- “আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাইছি যেন আমি জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত না হই।”


Tafsir Mokhtasar Bangla


৬৭. তোমরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের সেই ব্যাপারটিকেও স্মরণ করো যা তাদের ও মূসা ( আলাইহিস-সালাম ) এর মাঝে ঘটেছিলো। একদা মূসা ( আলাইহিস-সালাম ) তাদেরকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে কোন একটি গাভী জবাই করতে বলেছেন। তারা তখন এ কাজটি দ্রæত না করে বরং গাদ্দারি করে বললো: আপনি কি আমাদেরকে ঠাট্টার পাত্র পেয়েছেন। তখন মূসা ( আলাইহিস-সালাম ) বললেন: না, তা কখনোই নয়। বরং আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ ব্যাপারে আশ্রয় কামনা করছি যে, আমি যেন কখনো তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা না বলি এবং মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা না করি।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আর যখন মূসা আপন সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গাভী যবেহর আদেশ দিচ্ছেন’, ( ১ ) তখন তারা বলেছিল, ‘তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছ?’ মূসা বলল, ‘আমি অজ্ঞদের দলভুক্ত হওয়া হতে আল্লাহর শরণ নিচ্ছি।’ ( ১ ) বানী-ইস্রাঈলদের মধ্যে একজন সন্তানহীন বিত্তশালী লোক ছিল। তার উত্তরাধিকার বলতে কেবল তার এক ভাইপো ছিল। এক রাতে এই ভাইপো চাচাকে হত্যা ক'রে তার লাশ অন্য লোকের দরজায় ফেলে দিল। সকালে হত্যাকারীর খোঁজে সবাই একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত খবর মূসা ( আঃ )-এর নিকটে পৌঁছলে তাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দেওয়া হল। সেই গাভীর কোন অংশ নিয়ে মৃত ব্যক্তির শরীরে স্পর্শ করা হলে সে জীবিত হয়ে তার হত্যাকারী কে -- তা জানিয়ে দিয়ে পুনরায় মৃত্যুবরণ করল। ( ফাতহুল ক্বাদীর )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আর স্মরন কর [], যখন মূসা তার জাতিকে বললেন, ‘আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার আদেশ দিয়েছেন’ , তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছো ?’ মূসা বললেন, ‘আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় চাই’। [] এ ঘটনার সংক্ষিপ্তবিবরণ এই যে, ইসরাঈল-বংশধরদের মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। হত্যাকারী কে? তা জানা কঠিন হয়ে দাড়ায়। তখন, আল্লাহ্‌ তাদেরকে একটি গরু জবাই করতে নির্দেশ দেন। ইসরাঈল-বংশধররা কোন বাদানুবাদে প্রবৃত্ত না হলে এতসব শর্তও আরোপিত হতো না, বরং যেকোন গরু জবাই করলেই তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু তারা প্রশ্ন করে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে নেয়। শেষ পর্যন্ত তারা সেটা করতে সমর্থ হয়। তারপর গরু জবাই করার পর মৃতদেহে সে গরুর গোশতের টুকরো স্পর্শ করাতেই সে জীবিত হয়ে যায় এবং হত্যাকারীর নাম বলে তৎক্ষণাৎ আবার মারা যায়। [ ইবনে কাসীর থেকে সংক্ষেপিত ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


আল্লাহ তা'আলা বানী ইসরাঈলকে আর একটি নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি একটি গরুর মাধ্যমে একটি নিহত লোককে জীবিত করেন এবং তার হত্যাকারীর পরিচয় দান করেন। এটা একটা অলৌকিক ঘটনাই বটে। গল্পের বিস্তারিত আলোচনা মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে একটি ধনী বন্ধ্যা লোক ছিল, তার কোন ছেলে মেয়ে ছিল না। তার উত্তরাধিকারী ছিল তার এক ভ্রাতুস্পুত্র। সত্বর উত্তরাধিকার প্রাপ্তির আশায় সে তার পিতৃব্যকে হত্যা করে ফেলে এবং রাত্রে তাদের গ্রামের একটি লোকের দরজার উপরে রেখে আসে। সকালে গিয়ে ঐ লোকটির উপর হত্যার অপবাদ দেয়। অবশেষে এর দলের ও ওর দলের লোকদের মধ্যে মারামারি ও খুনাখুনি হওয়ার উপক্রম হয়। এমন সময় তাদের জ্ঞানী লোকেরা তাদেরকে বলেনঃ “ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল ( হযরত মূসা আঃ )) বিদ্যমান থাকতে তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে কেন?” সুতরাং তারা হযরত মূসা ( আঃ )-এর নিকট এসে ঘটনাটি বর্ণনা করে । তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু যবাহ্ করার নির্দেশ দিচ্ছেন ।” একথা শুনে তারা বলেঃ “ আপনি কি আমাদেরকে উপহাস করছেন?” তিনি বলেনঃ “মূর্খদের ন্যায় কাজ করা হতে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি ।” এখন যদি তারা যে কোন একটি গরু ববাহ্ করতো তাহলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা কাঠিন্য অবলম্বন করে, সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তা কঠিন করে দেন। অতঃপর তারা ঐরূপ গরু একটি লোকের নিকট প্রাপ্ত হয়। একমাত্র তার নিকট ছাড়া আর কারও কাছে ছিল না। লোকটি বলেঃ আল্লাহর শপথ! এই গরুর চামড়া পূর্ণ স্বর্ণের কম মূল্যে আমি এটা বিক্রি করবো না ।” সুতরাং তারা ঐ মূল্যেই তা কিনে নেয়। এবং যবাহ করে। তারপর তারা ওর এক খণ্ড মাংস দ্বারা নিহত ব্যক্তির উপর আঘাত করে। তখন মৃত লোকটি দাঁড়িয়ে যায়। লোকগুলো তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “ তোমাকে কে হত্যা করেছে? সে বলেঃ “আমার এই ভ্রাতুস্পুত্র ।” একথা বলেই সে পুনরায় মরে যায়। সুতরাং তাকে মৃত ব্যক্তির কোন মাল দেয়া হলো না। তাফসীর-ই-আবৃদ বিন হামীদে রয়েছে যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে একটি ধনী লোক ছিল যার কোন সন্তান ছিল না। তার শুধুমাত্র একটি নিকটতম আত্মীয় ছিল এবং সেই ছিল তার উত্তরাধিকারী। সে ( নিকটাত্মীয় ) লোকটিকে হত্যা করে ফেলে অতঃপর তার মৃত দেহ রাজপথে এনে রেখে দেয়। অতঃপর সে হযরত মূসার ( আঃ ) নিকট এসে বলেঃ আমার এক আত্মীয় নিহত হয়েছে। সুতরাং আমি কঠিন সমস্যায় পড়ে গেছি। আমি এমন কাউকে পাচ্ছি না যে আমাকে তার হত্যাকারীর কথা বলে দেয়। হে আল্লাহর নবী ( আঃ )! এটা একমাত্র আপনিই বলতে পারেন। তখন হযরত মূসা ( আঃ ) জনগণকে ডাক দিয়ে বলেনঃ আল্লাহ পাক তোমাদেরকে এক নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমাদের মধ্যে যার এটা জানা রয়েছে সে যেন তা বলে দেয় । তাদের মধ্যে কেউই এটা বলতে পারলো না। তখন হত্যাকারী ব্যক্তি হযরত মূসা ( আঃ )-এর দিকে। অগ্রসর হয়ে বলেঃ “ আপনি আল্লাহর নবী । সুতরাং আপনি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করুন, তিনি যেন আমাদেরকে এটা বলে দেন। হযরত মূসা ( আঃ ) আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানালে তিনি তাঁর নিকট ওয়াহী অবতীর্ণ করেনঃ “ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু যবাহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন ।” তখন তারা বিস্মিত হয়ে বলেঃ আপনি কি আমাদেরকে উপহাস করছেন? তিনি বলেনঃ “ আমি মূর্খ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ি এ থেকে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি । তারা বলেঃ “ আপনি আমাদের জন্যে আপনার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আমাদের কাছে ব্যক্ত করেন ওর কি কি গুণ থাকতে হবে?” তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, এটা এমন একটি গরু হবে যা পূর্ণ বৃদ্ধও নয়, একেবারে বাচ্চাও নয়, এতদুভয়ের মধ্যে বয়স্ক পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত ।“ তারা বলে “আমাদের জন্যে আপনার প্রভুর নিকট দরখাস্ত করুন, যেন তিনি আমাদেরকে বলে দেন ওর বর্ণ কিরূপ হবে?” তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, ওটা একটি হলদে রঙের গরু, উজ্জ্বল হলদে রঙের যা দর্শকদের জন্যে আনন্দদায়ক হয় । তারা বলেঃ আমাদের জন্যে আপনার প্রভুর নিকট আবেদন করুন, যেন তিনি আমাদেরকে বলেন দেন যে, ওর গুণাবলী কি কি হবে? কেননা, এই গরু সম্বন্ধে আমাদের সংশয় রয়েছে এবং নিশ্চয় আমরা ইনশাআল্লাহ ঠিক বুঝতে পারবো।” তখন মূসা ( আঃ ) বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা এরূপ বলেছেন যে, ওটা এমন হবে যা জমি কর্ষণের জন্যে হাল চাষেও ব্যবহৃত হয় না কিংবা ওটা কৃষির জন্যে পানিও সেচন করে না । তা হবে নিখুঁত, তাতে কোন দাগ থাকবে না। তারা বলেঃ “ এখন আপনি পূর্ণ বর্ণনা দিলেন । তখন তারা ওটা যবাহ করল, কিন্তু তারা তা করবে বলে মনে হচ্ছিল। যদি তারা যেকোন একটি গরু যবাহ করতো তবে তাই তাদের জন্যে যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা নিজেদের উপর কাঠিন্য আনয়ন করে বলে আল্লাহও তাদের উপর কাঠিন্য আরোপ করে দেন। আর যদি তারা ইনশাআল্লাহ আমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। একথা না বলতো তবে তারা কখনও এর সমাধানে পৌঁছতে পারতো না। ঐ লোকগুলো এ সকলগুণ বিশিষ্ট গরুটি একজন বন্ধার নিকট ছাড়া আর কাছে প্রাপ্ত হয়নি। ঐ বৃদ্ধার কয়েকটি পিতৃহীন ছেলে মেয়ে ছিল। গরুটি ঐ লোকেদের নিকট খুবই দুর্মূল্য ছিল। যখন ঐ বদ্ধা জানতে পারে যে, সেই গরু ক্রয় করা ছাড়া তাদের কোন উপায় নেই, তখন সে তার মূল্য খুব বেশী চাইলো। তখন লোকগুলো হযরত মূসার ( আঃ ) নিকট আগমন করে তাকে বলে যে, এরূপ গুণবিশিষ্ট গরু অমুক বৃদ্ধা ছাড়া আর কারও কাছে নেই। এবং সে ওর মূল্য অত্যন্ত বেশী চাচ্ছে। হযরত মূসা ( আঃ ) তখন বললেনঃ “ তোমাদের উপর আল্লাহ্ পাক হালকা করেছিলেন কিন্তু তোমরা নিজেদের জীবনের উপর তা ভারী করে নিয়েছে । সুতরাং সে যা চায় তাই দিয়ে গরুটি কিনে নাও।”অতঃপর তারা গরুটি কিনে নিয়ে যবাহ করে। হযরত মূসা ( আঃ ) তখন তাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তারা যেন, সেই গরুটির একখানা অস্থি নিয়ে মৃতের উপর আঘাত করে। তারা তাই করে। তখন লোকটি জীবিত হয়ে উঠে এবং হত্যাকারীর নাম বলে দিয়েই পুনরায় মরে যায়। অতঃপর হত্যাকারীকেও পাকড়াও করা হয় এবং সেছিল ঐ ব্যক্তি যে হযরত মূসা ( আঃ )-এর নিকট অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তাকে তারা মন্দ কার্যের প্রতিশোধ রূপে আল্লাহ্ তা'আলা নির্দেশক্রমে হত্যা করে। সুদ্দী ( রঃ ) বর্ণনা করেন যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে একটি বিরাট ধনী লোক ছিল। তার কোন ছেলে ছিল না। তার ছিল শুধুমাত্র একটি মেয়ে ও একটি ভ্রাতুস্পুত্র। ভাতিজা তার চাচার মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে চাচার নিকট প্রস্তাব দিলে চাচা তা প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং সে শপথ করে বলেঃ “ নিশ্চয় আমি আমার চাচাকে হত্যা করে তার ধন-সম্পদ হস্তগত করবো এবং তার মেয়েকে বিয়ে করে নেবো ।” অতঃপর সে কৌশল করে তার চাচাকে কোন এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলে। বানী ইসরাঈলের মধ্যে কয়েকজন ভাল লোক ছিল। তারা দুষ্ট লোকদের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়ে যায় এবং অন্য একটি শহরে গিয়ে বসবাস করতে থাকে। সন্ধ্যায় তারা তাদের দুর্গদ্বার বন্ধ করে দিতে এবং সকালে খুলতে। কোন। অপরাধীকে তারা তথায় প্রবেশ করতে দিতো না। সেই ভাতিজা তার চাচার মৃত দেহ নিয়ে গিয়ে সেই দুর্গের সদর দরজার সামনে রেখে দেয়। এখানে এসে ফাঁকি দিয়ে সে তার চাচাকে খুঁজতে থাকে। অতঃপর সে চেঁচিয়ে বলে যে, কে তার চাচাকে হত্যা করেছে। অবশেষে সে এ দুর্গবাসীদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয় এবং তাদের কাছে রক্তপণ দাবী করে। কিন্তু দুর্গবাসীরা বলে যে, তারা তার হত্যার সম্বন্ধে কিছুই জানে না। কিন্তু সে কিছুই শুনতে চায় না। এমনকি সে তার সঙ্গীদেরকে নিয়ে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। এরা তখন বাধ্য হয়ে হযরত মূসা ( আঃ )-এর নিকট আসে এবং ঘটনা বর্ণনা করে বলেঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( আঃ )! এ লোকটি অযথা আমাদের উপর একটা হত্যার অপবাদ দিচ্ছে, অথচ আমরা সম্পূর্ণ নির্দোষ ।" হযরত মূসা ( আঃ ) আল্লাহ তা'আলার নিকট দু'আ করেন। তখন তার উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “ তোমরা একটি গরু যবাহ কর ।” তারা তখন বলেঃ “ হে আল্লাহর নবী ( আঃ )! কোথায় হত্যাকারীর পরিচয় প্রদান আর কোথায় গরু যবাহ করার নির্দেশ? আপনি কি আমাদেরকে উপহাস করছেন?" হযরত মূসা ( আঃ ) বলেনঃ “আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, ( শরীয়তের জিজ্ঞাস্যের ব্যাপারে ) উপহাস তো মূর্খদের কাজ । আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ এটাই।”এখন যদি এরা সব গিয়ে কোন একটি গরু যবাহ্ করতো তবেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা প্রশ্নাবলীর দরজা খুলে দেয়। তারা বলেঃ “ গরুটি কেমন হতে হবে?” তখন নির্দেশ হয়, “এটা বুড়োও নয় বা একেবারে বাচ্চাও নয়, এতদুভয়ের মধ্যবর্তী জোয়ান । তারা বলেঃ “ জনাব! এ রকম গরু তো অনেক আছে, এর রঙের বর্ণনা দিন ।” ওয়াহী অবতীর্ণ হয় ও ‘এটা হলদে রঙের, উজ্জ্বল হলদে এর রং, দর্শকদেরকে যা আনন্দ দেয়। আবার তারা বলেঃ “ এরূপ গরু ও তো অনেক আছে, অন্য কোন বিশিষ্ট গুণের বর্ণনা দিন, জনাব!” আবার ওয়াহী নাযিল হয়ঃ ওটা এমন গৰু যা না জমি কর্ষণে ব্যবহার হয় না ক্ষেতে পানি সেচনে, নিখুঁত, তার মধ্যে কোন দাগ থাকবে না ।যেমন তারা প্রশ্ন বাড়াতে থাকে, নির্দেশও তেমনি কঠিন হতে থাকে। অতঃপর তারা এরূপ গরুর খোজে বের হয়। এরূপ গরু তারা একটি বালকের কাছে প্রাপ্ত হয়। ছেলেটি তার পিতা-মাতার খুবই বাধ্য ছিল। একদা তার পিতা ঘুমিয়ে ছিলেন এবং টাকার বাক্সের চাবি তার শিয়রে ছিল। এক বণিক একটি মূল্যবান হীরা বেচতে আসে এবং বলেঃ “ আমি এটা বেচতে চাই ।" ছেলেটি বলেঃ আমি ক্রয় করবো।” মূল্য সত্তর হাজার টাকা ঠিক হলো। ছেলেটি বলেঃ “ একটু অপেক্ষা করুন, আমার পিতা জেগে উঠলেই তার নিকট হতে চাবি নিয়ে আপনাকে মূল্য দিয়ে দেবো ।" বণিক বলেঃ “ না, তা হবে না, টাকা এখনই দাও । এখনই টাকা দিলে দশ হাজার টাকা কমিয়ে দিচ্ছি।" ছেলেটি বলেঃ না জনাব পিতাকে জাগাবো না, যদি আপনি অপেক্ষা করেন তবে আমি আশি হাজার দেবো। এভাবেই এদিকে কম হতে ওদিকে বেশী হতে থাকে। অবশেষে বণিক ত্রিশ হাজারে নেমে আসে এবং বলেঃ “ এখন যদি আমাকে টাকা দিয়ে দাও তবে ত্রিশ হাজারেই দিয়ে দেবো ।" তখন ছেলেটি বলেঃ আমার পিতা জেগে ওঠা পর্যন্ত যদি আপনি অপেক্ষা করেন তবে আপনাকে এক লাখ টাকা দেবো।”অবশেষে বণিক অসন্তুষ্ট হয়ে হীরা ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায়। ছেলেটি যে তার পিতার আরামের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে এবং তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বুঝেছে , এ জন্যে মহান আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাকে এ গরুটি দান করেন। বানী ইসরাঈল ঐ প্রকারের গরু খুঁজতে বেরিয়ে ঐ ছেলেটির নিকট ছাড়া আর কারও কাছে পায়নি। সুতরাং তারা তাকে বলে ? তোমার এ গরুটি আমাদেরকে দাও। এর পরিবর্তে আমরা তোমাকে দু'টি গরু দিচ্ছি। সে কিন্তু সাত হয় না। তিনটি ও চারটি দিতে চাইলেও সে রাযী হয় না। দশটি দিতে চাইলেও সে অসম্মতই থাকে। লোকগুলো তখন হযরত মূসা ( আঃ )-এর নিকট অভিযোগ করে। হযরত মূসা ( আঃ ) বলেনঃ “ সে যা চায় তাই দিয়ে গরুটি কিনে নাও ।" শেষে তারা ছেলেটির নিকট এসে তাকে গরুর ওজনের সমান সোনা নিতে চাইলে সে সম্মত হয় এবং তার গরুটি বিক্রি করে। সে তার বাপ-মার খিদমত। করেছিল বলেই আল্লাহ তাআলা তাকে এরূপ বরকত দান করেন। সে তো খুব দরিদ্র হয়ে পড়েছিল। তার পিতা মারা গিয়েছিলেন এবং তার মা অত্যন্ত দারিদ্র ও সংকীর্ণতার মধ্যে কাল যাপন করছিলেন।যা হোক, গরুটি কেনা হলে সেটিকে যবাহ করা হয় এবং ওর এক গোশত খণ্ড দিয়ে নিহত ব্যক্তির শরীরে আঘাত করা হয়। তখন আল্লাহ তা'আলার ইকুমে সে জীবিত হয়ে ওঠে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ তোমাকে হত্যা করেছিল কে?" সে উত্তরে বলেঃ “ আমার এই ভ্রাতুস্পুত্র আমার সম্পদ অধিকারের জন্যে ও আমার মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে আমাকে হত্যা করেছিল ।" এটুকু বলার পরই সে পুনরায় মরে যায়। এখন হত্যাকারীকে চেনা যায় এবং এ হত্যার ফলে বানী ইসরাঈলের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল তা প্রশমিত হয়। অতঃপর জনগণ মৃত ব্যক্তির ভ্রাতুস্পুত্রকে ধরে কিসাস রূপে হত্যা করে দেয়।এ গল্পটি বিভিন্নভাবে বর্ণিত আছে। স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, এটা বানী ইসরাঈলের সে যুগের ঘটনা। আমরা একে সত্যও বলতে পারি না এবং মিথ্যাও। যা হোক, এ আয়াতে বানী ইসরাঈলকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে যে, তারা যেন আল্লাহ তা'আলার এ নিয়ামতকে ভুলে না যায় যে, তিনি এমন এক স্বভাব বিরুদ্ধ ঘটনা ঘটালেন যার ফলে গরুর এক খণ্ড গোশতের দ্বারা মৃত ব্যক্তির শরীরে আঘাত করায় সে জীবিত হয়ে যায় এবং সে তার হত্যাকারীর নাম বলে দেয় এবং যার ফলে একটা বড় বিবাদের নিষ্পত্তি হয়ে যায়।

সূরা বাকারাহ্ আয়াত 67 সূরা

وإذ قال موسى لقومه إن الله يأمركم أن تذبحوا بقرة قالوا أتتخذنا هزوا قال أعوذ بالله أن أكون من الجاهلين

سورة: البقرة - آية: ( 67 )  - جزء: ( 1 )  -  صفحة: ( 10 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব
  2. অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।
  3. তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই।
  4. যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে আপনাকে উচুস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ।
  5. হে চাদরাবৃত!
  6. দূর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যখন তারা মনের দিক থেকে
  7. সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে।
  8. যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা
  9. আল্লাহ যদি সন্তান গ্রহণ করার ইচ্ছা করতেন, তবে তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যা কিছু ইচ্ছা
  10. এ সম্পর্কে তোমরা সন্দেহে পতিত ছিলে।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:

সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Monday, November 4, 2024

Please remember us in your sincere prayers