কোরান সূরা ফাতিহা আয়াত 7 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Fatiha ayat 7 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা ফাতিহা আয়াত 7 আরবি পাঠে(Fatiha).
  
   

﴿صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ﴾
[ الفاتحة: 7]

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। [সূরা ফাতিহা: 7]

Surah Al-Fatihah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Fatiha ayat 7


“তাদের পথে যাদের প্রতি তুমি নিয়ামত অর্পণ করেছ, তাদের ব্যতীত যাদের প্রতি গযব এসেছে, এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট।”


Tafsir Mokhtasar Bangla


৭. আপনার সে বান্দাদের পথ যাদেরকে আপনি হিদায়েতের মাধ্যমে অনুগ্রহ প্রদান করেছেন। যেমন: নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও নেককারগণ। কতোই না ধন্য ও পুণ্যবান সাথী তাঁরা। ওদের পথ নয়; যাদের উপর আপনি গোসসা হয়েছেন। যারা সত্য জেনেও তা অনুসরণ করেনি। যেমন: ইহূদিরা। ওদের পথও নয়; যারা সত্যভ্রষ্ট হয়েছে। যারা সঠিক পথের সন্ধান পায়নি। কারণ, তারা সঠিক পথ অনুসন্ধান ও তা পাওয়ার ব্যাপারে প্রচুর ত্রæটি করেছে। যেমন: খ্রিস্টানরা।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তাদের পথ -- যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ;[১] তাদের পথ -- যারা ক্রোধভাজন ( ইয়াহুদী ) নয় এবং যারা পথভ্রষ্টও ( খ্রিষ্টান ) নয়। [২] ( আমীন ) [১] এ হল 'স্বিরাত্বে মুস্তাক্বীম' তথা সরল পথের ব্যাখ্যা। অর্থাৎ, সেই সরল পথ হল ঐ পথ, যে পথে চলেছেন এমন লোকেরা যাঁদেরকে তুমি নিয়ামত, অনুগ্রহ ও পুরস্কার দান করেছ। আর নিয়ামত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত দলটি হল নবী, শহীদ, চরম সত্যবাদী ( নবীর সহচর ) এবং নেক লোকদের দল। যেমন আল্লাহ সূরা নিসার মধ্যে বলেছেন, " আর যে কেউ আল্লাহ এবং রসূলের আনুগত্য করবে ( শেষ বিচারের দিন ) সে তাদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ। আর সঙ্গী হিসাবে এরা অতি উত্তম।। " ( সূরা নিসা ৪:৬৯ ) এই আয়াতে এ কথাও পরিষ্কার ক'রে বলে দেওয়া হয়েছে যে, পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লোকদের পথ হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের পথ, অন্য কোন পথ নয়। [২] কোন কোন বর্ণনা দ্বারা সুসাব্যস্ত যে, مَغْضُوْبٌ عَلَيْهِمْ ( ক্রোধভাজনঃ যাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে তারা ) হল ইয়াহুদী। আর ضَالِّيْنَ ( পথভ্রষ্ট ) বলতে খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনে আবী হাতেম বলেন, মুফাসসিরীনদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, {المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ} হল ইয়াহুদীরা এবং{الضَّالِّينَ} হল খ্রিষ্টানরা। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) তাই সঠিক পথে চলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য অত্যাবশ্যক হল যে, তারা ইয়াহুদী এবং খ্রিষ্টান উভয় জাতিরই ভ্রষ্টতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে। ইয়াহুদীদের সব থেকে বড় ভ্রষ্টতা এই ছিল যে, তারা জেনে-শুনেও সঠিক পথ অবলম্বন করেনি। তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করতে কোন প্রকার কুণ্ঠাবোধ করতো না। তারা উযাইর ( আঃ )-কে আল্লাহর পুত্র বলতো। তাদের পন্ডিত ও সাধু-সন্নাসীদের হালাল ও হারাম করার অধিকার আছে বলে মনে করতো। আর খ্রিষ্টানদের সব থেকে বড় ত্রুটি এই ছিল যে, তারা ঈসা ( আঃ )-এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ক'রে তাঁকে আল্লাহর পুত্র এবং তিনের এক সাব্যস্ত করেছে। দুঃখের বিষয় যে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার মধ্যেও এই ভ্রষ্টতা ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। যার কারণে তারা দুনিয়াতে লাঞ্ছিত এবং ঘৃণিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভ্রষ্টতার গহ্বর থেকে বের করুন; যাতে তারা অবনতি ও দুর্দশার বর্ধমান অগ্নিগ্রাস থেকে সুরক্ষিত থাকে। সূরা ফাতিহার শেষে 'আ-মীন' বলার ব্যাপারে নবী করীম ( সাঃ ) খুব তাকীদ করেছেন এবং তার ফযীলতও উল্লেখ করেছেন। কাজেই ইমাম এবং মুক্তাদী সকলের 'আ-মীন' বলা উচিত। নবী করীম ( সাঃ ) এবং তাঁর সাহাবাগণ জেহরী ( সশব্দে পঠনীয় ) নামাযগুলোতে উচ্চস্বরে এমন ভাবে 'আ-মীন' বলতেন যে, মসজিদ গমগম করে উঠত। ( ইবনে মাজা-ইবনে কাসীর ) বলাই বাহুল্য যে, উঁচু শব্দে 'আ-মীন' বলা নবী করীম ( সাঃ )-এর সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরাম ( রাঃ )-দের কৃত আমল। আ-মীনের কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে। যেমনঃ ( كَذَلِكَ فَلْيَكُنْ ) এই রকমই হোক। ( لاَ تُخَيِّبْ رَجَآءَنَا ) আমাদের আশা ব্যর্থ করো না। ( اللَّهُمَّ اسْتَجِبْ لَنَا ) হে আল্লাহ! আমাদের দুআ কবুল কর।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন [], যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি [] এবং যারা পথভ্রষ্টও নয় [] [] এটা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সঠিক ও দৃঢ় পথের প্রথম পরিচয়। এর অর্থ এই যে, আল্লাহ্‌র নিকট হতে যে পথ নাযিল হয়েছে, তা অনুসরণ করলে আল্লাহ্‌র রহমত ও নিয়ামত লাভ করা যায়। দ্বিতীয়তঃ তা এমন কোন পথই নয়, যাহা আজ সম্পূর্ণ নূতনভাবে পেশ করা হচ্ছে- পূর্বে পেশ করা হয় নি। বরং তা অতিশয় আদিম ও চিরন্তন পথ। মানুষের এই কল্যাণের পথ অত্যন্ত পুরাতন, ততখানি পুরাতন যতখানি পুরাতন হচ্ছে স্বয়ং মানুষ। প্রথম মানুষ হতেই এটা মানুষের সম্মুখে পেশ করা হয়েছে, অসংখ্য মানুষ এ পথ প্রচার করেছেন, কবুল করার আহবান জানিয়েছেন, এটা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহ্‌র নিকট হতে, অপূর্ব নিয়ামত ও সম্মান লাভের অধিকারী প্রমাণিত হয়েছেন। এই নিয়ামত এই দুনিয়ার জীবনেও তারা পেয়েছেন, আর আখেরাতেও তা তাদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে। মূলতঃ আল্লাহ্‌র নিয়ামতপ্রাপ্ত লোকদের চলার পথ ও অনুসৃত জীবনই হচ্ছে বিশ্ব মানবতার জন্য একমাত্র পথ ও পন্থা। এতদ্ব্যতীত মানুষের পক্ষে গ্রহণযোগ্য, অনুসরণীয় ও কল্যাণকর পথ আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ্‌র অনুগ্রহপ্রাপ্ত লোক কারা এবং তাদের পথ বাস্তবিক পক্ষে কি? এর উত্তর অন্য আয়াতে এসেছে, “ যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের ভাল হত এবং চিত্তস্থিরতায় তারা দৃঢ়তর হত । এবং তখন আমি আমার কাছ থেকে ‘তাদেরকে নিশ্চয় মহাপুরস্কার প্রদান করতাম এবং তাদেরকে নিশ্চয় সরল পথে পরিচালিত করতাম। আর কেউ আল্লাহ্‌ এবং রাসুলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ ( যাদের প্রতি আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করেছেন ) তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী! এগুলো আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট " [ সূরা আন-নিসাঃ ৬৬-৭০ ] এ আয়াত থেকে সঠিক ও দৃঢ় জীবন পথ যে কোনটি আর আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রাপ্ত লোকগণ যে কোন পথে চলেছেন ও চলে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ পাবার অধিকারী হয়েছেন তা সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে জানা যায়। তারা হচ্ছেন আম্বিয়া, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীন। [ ইবন কাসীর ] [] এটা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত ‘সিরাতুল মুস্তাকীম' এর দ্বিতীয় পরিচয়আল্লাহ্‌ তা'আলা যে পথ মানুষের সম্মুখে চিরন্তন কল্যাণ লাভের জন্য উপস্থাপিত করেছেন সে পথ অভিশাপের পথ নয় এবং সে পথে যারা চলে তাদের উপর কখনই আল্লাহ্‌র অভিশাপ বর্ষিত হতে পারে না। সে পথ তো রহমতের পথ বরং সে পথের পথিকদের প্রতি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও সাহায্য বর্ষিত হয়ে থাকে, আখেরাতেও তারা আল্লাহ্‌র চিরস্থায়ী সন্তোষ লাভের অধিকারী হবে। এই আয়াতাংশের অপর একটি অনুবাদ হচ্ছে, “ তাদের পথ নয় যাদের উপর আল্লাহ্‌র অভিশাপ নাযিল হয়েছে । " এরূপ অনুবাদ করলে তাতে ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ ছাড়া আরও একটি পথের ইঙ্গিত মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়, যা আল্লাহ্‌র নিকট হতে অভিশপ্ত এবং সেই পথ হতে মানুষকে রক্ষা করাই এর উদ্দেশ্য মনে হয়। কিন্তু এখানে আল্লাহ্‌ মূলতঃ একটি পথই উপস্থাপিত করেছেন এবং একটি পথেরই ইতিবাচক দুইটি বিশেষণ দ্বারা সেটাকে অত্যধিক সুস্পষ্ট করে তুলেছেন। তাই অনেকেই পূর্বোক্ত প্রথম অনুবাদটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। উভয় অর্থের জন্য [ দেখুন, যামাখশারী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর ] প্রথম অনুবাদ বা দ্বিতীয় অনুবাদ যাই হোক না কেন এখানে একথা স্পষ্ট হচ্ছে যে, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমানদার লোকদেরকে প্রকারান্তরে এমন পথ ও পন্থা গ্রহণ হতে বিরত থাকবার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যা আল্লাহ্‌র অভিশাপের পথ, যে পথে চলে কোন কোন লোক অভিশপ্ত' হয়েছে। কিন্তু সে অভিশপ্ত কারা, কারা কোন পথে চলে আল্লাহ্‌র নিকট হতে অভিশপ্ত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া আবশ্যক। কুরআন মাজীদ ঐতিহাসিক জাতিদের সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ “ আর তাদের উপর অপমান লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যের কষাঘাত হানা হয়েছে এবং তারা আল্লাহ্‌র অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছে । " [ সূরা আল-বাকারাহ: ৬১ ] পূর্বাপর আলোচনা করলে নিঃসন্দেহে এটা বুঝতে পারা যায় যে, এ কথাটি ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই ‘মাগদুব’ বলতে যে এখানে ইয়াহুদীদের বুঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে সমস্ত মুফাসসিরই একমতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসেও অনুরূপ স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে [ দেখুন, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩২,৩৩ ] [] এটি ‘সিরাতুল মুস্তাকীম'-এর তৃতীয় ও সর্বশেষ পরিচয়। অর্থাৎ যারা সিরাতুল মুস্তাকীম এ চলে আল্লাহ্‌র নিয়ামত লাভ করতে পেরেছেন তারা পথভ্রষ্ট নন-কোন গোমরাহীর পথে তারা চলেন না। পূর্বোল্লেখিত আয়াতের ন্যায় এ আয়াতেরও অন্য অনুবাদ হচ্ছে, ‘তাদের পথে নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, যারা গোমরাহ হয়ে আল্লাহ্‌র উপস্থাপিত পথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস থেকে এ পথ-ভ্ৰষ্ট লোকদের পরিচয় জানতে পারা যায় যে, দুনিয়ার ইতিহাসে নাসারাগণ হচ্ছে কুরআনে উল্লেখিত এ গোমরাহ ও পথ-ভ্ৰষ্ট জাতি। [ মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩২,৩৩, ৭৭ ] কোন মুসলিম যখন সূরা ফাতিহা পাঠ করে, তখন সে প্রকারান্তরে এ কথাই ঘোষণা করে যে, “ হে আল্লাহ্‌ আমরা স্বীকার করি, আপনার সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে যে জীবন-ধারা গড়ে উঠে তা-ই একমাত্র মুক্তির পথ । এজন্য আপনার নির্ধারিত এ পথে চলে যারা আপনার নিয়ামত পেয়েছেন সেই পথই একমাত্র সত্য ও কল্যাণের পথ, আল্লাহ্‌ সেই পথেই আমাদেরকে চলবার তাওফীক দিন। আর যাদের উপর আপনার অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে ও যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তাদের যেন আমরা অনুসরণ না করি। কেননা, সে পথে প্রকৃতই কোন কল্যাণ নেই। " বস্তুতঃ পবিত্র কুরআন দুনিয়ার বর্তমান বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র সর্বশেষ আল্লাহ্‌র দেয়া গ্রন্থ। এর উপস্থাপিত আদর্শ ও জীবন পথই হচ্ছে বিশ্বমানবতার একমাত্র স্থায়ী ও কল্যাণের পথ। এর বিপরীত সমস্ত জীবনাদর্শকে মিথ্যা প্রমাণ করে একমাত্র এরই উপস্থাপিত আদর্শের ভিত্তিতে নিজেদেরকে গঠন করা মুসলিমদের একমাত্র দায়িত্ব। মুসলিমরা আজও সেই দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হলে সূরা আল-ফাতিহা তাদের জীবনে সার্থক হবে। মূলতঃ যারা সূরা আল-ফাতিহার অর্থ বুঝে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ শেষ করার পর তাদের মন থেকে দো’আ করবে, আল্লাহ্‌ তা'আলা তাদের দো’আ কবুল করবেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ( اِذا قَالَ الْاِمَامُ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ، فَقُوْلُوْ اٰمِيْنَ، فَمَنْ وَافَقَ قَوْلُهٗ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه ) “যখন ইমাম ‘গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বল্লীন’ বলে তখন তোমরা ‘আমীন’ বা ‘হে আল্লাহ্‌ কবুল কর’ একথাটি বল; কেননা যার কথাটি ফেরেশতাদের কথা অনুযায়ী হবে তার পূর্বেরগুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে "[বুখারী ৭৮২,মুসলিম: ৪০৯l অন্য বর্ণনায় এসেছে, ( وَاِذا قَالَ: غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ، فَقُوْلُوْ اٰمِيْنَ، يُجِيْبُكمُ اللّٰهُ ) “যখন ‘ইমাম গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বল্লীন’ বলে তখন তোমরা ‘আমীন’ বা ‘হে আল্লাহ্‌ কবুল কর’ একথাটি বল; এতে আল্লাহ্‌ তোমাদের আহবানে সাড়া দিবেন ( দো’আ কবুল করবেন ) "[ মুসলিম: ৪০৪ ] অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ( مَا حَسَدَتْكُمْ اليَهُوْدُ عَلَى شَيئٍ مَا حَسَدَ تْكُمُ عَلَى السَّلَامِ وَالتَّأْمِيْنِ ) “ ইয়াহুদীরা তোমাদেরকে তোমাদের ‘সালাম’ ও ‘আমীন' বলার চেয়ে বেশী কোন বিষয়ের উপর হিংসা করে না” [ ইবনে মাজাহঃ ৮৫৬ ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৬-৭ নং আয়াতের তাফসীর এর বর্ণনা পূর্বেই গত হয়েছে যে, বান্দার এ কথার উপর মহান আল্লাহ বলেন, এটা আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দার জন্যে ঐ সব কিছুই রয়েছে যা সে চাইবে।' এ আয়াতটি সীরাতে মুসতাকীমের তাফসীর এবং ব্যাকরণবিদ বা নাহ্বীদের নিকট এটা ‘সীরাতে মুসতাকীম' হতে বদল হয়েছে এবং আত বায়ানও হতে পারেআল্লাহ তা'আলাই এ সম্পর্কে সবচাইতে ভাল জানেন। আর যারা আল্লাহর পুরস্কার লাভ করেছে তাদের বর্ণনা সূরা-ই-নিসার মধ্যে এসেছে। ইরশাদ হচ্ছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ ‘এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, এরূপ ব্যক্তিগণও ঐ মহান ব্যক্তিগণের সহচর হবেন যাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলা অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও নেক্কারগণ। আর ঐ মহাপুরুষগণ উত্তম সহচর। এ অনুগ্রহ আল্লাহর পক্ষ হতে এবং সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।' ( ৪:৬৯-৭০ ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেছেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঐ সব ফেরেশতা, নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎলোকের পথে পরিচালিত করুন যাদেরকে আপনি আপনার আনুগত্য ও ইবাদতের কারণে পুরস্কৃত করেছেন ।” উল্লিখিত আয়াতটি নিম্ন বর্ণিত আয়াতের মত। ( ৪:৬৯ ) ( আরবি )হযরত রাবী' বিন আনাস ( রাঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে নবীগণ। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) এর অর্থ নিয়েছেন মুমিনগণ’ এবং হযরত অকী ( রঃ ) নিয়েছেন মুসলমানগণ।' আবদুর রহমান ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ও তাঁর সহচরবর্গ ( রাঃ ) হযরত ইবনে আব্বাসের ( রাঃ ) কথাই বেশী ব্যাপক। আল্লাহ তা'আলাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন ( আরবি ) এই নামক শব্দটিতে জমহুরের পঠনে ( আরবি ) ( গাইরি ) আছে অর্থাৎ ( আরবি ) অক্ষরের নীচে ‘যের ' এবং তা বিশেষণ করা হয়েছে। আল্লামা যামাখশারী বলেছেন যে, ( আরবি ) কে যবরের সঙ্গে পড়া হয়েছে এবং তা ‘হাল হয়েছেরাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এবং হযরত উমার বিন খাত্তাবের ( রাঃ ) পঠন এটাই ( আরবি ) এর সর্বনামটি ওর ( আরবি ) এবং হচ্ছে ( আরবি ), তাহলে অর্থ হচ্ছেঃ “ হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল সোজা পথ প্রদর্শন করুন, ঐ সব লোকের পথ যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন, যারা হিদায়াত বা সুপথ প্রাপ্ত এবং অটল অবিচলিত ছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ( সঃ ) অনুগত ছিলেন । যারা আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী ও নিষিদ্ধ কাজ হতে দূরে-বহুদূরে অবস্থানকারী ছিলেন। আর ঐ সব লোকের পথ হতে রক্ষা করুন যাদের উপর আপনার ধূমায়িত ক্রোধ ও অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে, যারা সত্যকে জেনে শুনেও তা থেকে দূরে সরে গেছে এবং পথভ্রষ্ট লোকেদের পথ হতেও আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখুন যাদের সঠিক পথ সম্পর্কে কোন ধারণা ও জ্ঞানই নেই, যারা পথভ্রষ্ট হয়ে লক্ষ্যহীনভাবে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়ায় এবং তাদেরকে সরল, সঠিক পুণ্য পথ দেখানো হয় না।কথার মধ্যে খুব বেশী গুরুত্ব আনয়নের জন্যে ( আরবি ) অক্ষরটিকে ( আরবি ) এর পরে আনা হয়েছে, যেন জানতে পারা যায় যে, এখানে ভুলপথ দুইটি। একটি ইয়াহূদীদের পথ এবং অপরটি খৃষ্টানদের পথ। কোন কোন নাবী বা ব্যাকরণবিদ বলেছেন যে, এখানে ( আরবি ) শব্দটি ( আরবি ) বা প্রভেদ সৃষ্টির জন্যে এসেছে। তা হলে এটা ( আরবি ) হতে পারে। কেননা যাদের উপর অনুগ্রহ করা হয়েছে তাদের মধ্য হতে এ ( আরবি ) হচ্ছে অথচ এরা তাদের অন্তর্ভুক্তই ছিল না। কিন্তু আমরা যে তাফসীর করেছি এটাই বেশী উত্তম। আরব কবিদের কবিতায় এরূপ দেখা যায় যে, তারা বিশেষ্যকে লোপ করে শুধুমাত্র বিশেষণের বর্ণনা দিয়ে থাকেন। যেমন নিম্নের কবিতায় রয়েছেঃ ( আরবি )এখানে ( আরবি ) শব্দের আগে ( আরবি ) নামক বিশেষ্যটিকে সোপ করা হয়েছে এবং পরবর্তী পর্যায়ের বিশেষণকে যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। এভাবেই আয়াতেও বিশেষণের বর্ণনা রয়েছে এবং ( আরবি )-নামক বিশেষ্যকে লোপ করা হয়েছে ( আরবি ) এর ভাবার্থ হচ্ছে ( আরবি ) অর্থাৎ অভিশপ্তদের পথে নয় ( আরবি ) এর উল্লেখ না করে ( আরবি ) এর উল্লেখই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। পূর্ব শব্দগুলিই এটা প্রমাণ করছে। পূর্বে এ শব্দটি দুইবার এসেছে। কেউ কেউ বলেন যে ( আরবি ) এর শব্দটি অতিরিক্ত। তাদের মতে বাক্যটি হবে নিম্নরূপঃ ( আরবি ) এবং আরব কবিদের কবিতাতেও এর সাক্ষ্য রয়েছে। যেমন কবি আজ্জাজ বলেনঃ ( আরবি )এখানে ( আরবি ) শব্দটি অতিরিক্ত। কিন্তু সঠিক কথা সেইটাই যা আমরা ইতিপূর্বে লিখেছি। হযরত উমার বিন খাত্তাব ( রাঃ ) হতে সহীহ সনদে ( আরবি ) পড়াও বর্ণিত আছে। আবু উবাইদ আল কাসেম বিন সাল্লাম “ কিতাবু ফাযাইলিল কুরআন' এর মধ্যে একথা বর্ণনা করেছেন । হযরত উবাই বিন কা'ব ( রাঃ ) হতেও এরূপ বর্ণিত আছে। এ মহান ব্যক্তিদ্বয় হতে যদি এটা ব্যাখ্যাদান রূপেও প্রকাশ পেয়ে থাকে তবে তো এটা আমাদের মতেরই সহায়ক হবে। তা হলো এই যে, ( আরবি ) কে ( আরবি ) এর জন্যে আনা হয়েছে, যাতে এ সন্দেহ না থাকে যে, এটা ( আরবি ) এর ( আরবি ) উপর হয়েছে এবং এ জন্যেও যে, যাতে দুইটি পথের পার্থক্য অনুধাবন করা যায়, যেন প্রত্যেকেই এ দুটো পথ থেকে বেঁচে থাকে। ঈমানদারদের পন্থা তো এটাই যে, সত্যের জ্ঞানও থাকতে, হবে এবং তার আমলও থাকতে হবে। ইয়াহূদীদের আমল নেই এবং খৃষ্টানদের জ্ঞান নেই। এজন্যেই ইয়াহূদীরা অভিশপ্ত হলো এবং খৃষ্টানেরা হলো পথভ্রষ্ট। কেননা, জেনে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে আমল পরিত্যাগ করা লা'নত বা অভিশাপের কারণ হয়ে দাড়ায়। খৃষ্টানেরা যদিও একটা জিনিসের ইচ্ছে করে, কিন্তু তার সঠিক পথ তারা পায় না। কেননা, তাদের কর্মপন্থা ভুল এবং তারা সত্যের অনুসরণ হতে দূরে সরে পড়েছে। অভিশাপ ও পথভ্রষ্টতা এই দুই দলের তো রয়েছেই কিন্তু ইয়াহুদী অভিশাপের অংশে একধাপ এগিয়ে রয়েছে। যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ এরা পূর্ব হতেই পথভ্রষ্ট এবং অনেককেই পথভ্রষ্ট করেছে এবং তারা সোজা পথ হতে ভ্রষ্ট রয়েছে। ( ৫:৭৭ ) একথার সমর্থনে বহু হাদীস ও বর্ণনা পেশ করা যেতে পারে। মুসনাদ-ই-আহমাদে আছে যে, হযরত আদী বিন হাতিম ( রাঃ ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর সেনাবাহিনী একদা আমার ফুফুকে এবং কতকগুলো লোককে বন্দী করে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এনে হাজির করেন। আমার ফুফু তখন বলেনঃ “ আমাকে দেখা শোনা করার লোক দূরে সরে রয়েছে এবং আমি একজন অধিক বয়স্কা অচলা বৃদ্ধা । আমি কোন খিদমতের যোগ্য নই। সুতরাং দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। আল্লাহ আপনার উপরও দয়া করবেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ যে তোমার খবরাখবর নিয়ে থাকে সে ব্যক্তিটি কে?' তিনি বললেন-আদী বিন হাতিম ।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ সে কি ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ ও তার রাসূল ( সঃ ) হতে এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে । অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বিনা শর্তে মুক্তি দিয়ে দেন। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ফিরে আসেন তখন তার সাথে আর একটি লোক ছিলেন। খুব সম্ভব তিনি হযরত আলীই ( রাঃ ) ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ যাও, তার কাছে গিয়ে সোয়ারীর প্রার্থনা কর।' আমার ফুফু তাঁর কাছে প্রার্থনা জানালে সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর হয় এবং তিনি সোয়ারী পেয়ে যান। তিনি এখান হতে মুক্তি লাভ করে সোজা আমার নিকট চলে আসেন এবং বলেনঃ রাসূলুল্লাহ( সঃ ) দানশীলতা তোমার পিতা হাতিমকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার কাছে একবার কেউ গেলে আর শূন্য হস্তে ফিরে আসে না।' একথা শুনে আমিও রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর খিদমতে হাজির হই। আমি দেখি যে, ছোট ছেলে ও বৃদ্ধা স্ত্রীলোকেরা তাঁর কাছে অবাধে যাতায়াত করছে এবং তিনি তাদের সাথে অকুণ্ঠচিত্তে অকৃত্রিমভাবে আলাপ আলোচনা করছেন। এ দেখে আমার বিশ্বাস হলো যে, তিনি কাইসার ও কিসরার মত বিশাল রাজত্ব ও সম্মানের অভিলাষী নন। তিনি আমাকে দেখে বলেনঃ ‘আদী! ( আরবি ) বলা হতে পালিয়ে বেড়াচ্ছ কেন? আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাসনার যোগ্য আছে কি? ( আরবি ) বলা হতে এখন তুমি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ কেন? মহা সম্মানিত আল্লাহ পাক থেকে বড় আর কেউ আছে কি? ( তার এই কথাগুলো এবং তাঁর সরলতা ও অকৃত্রিমতা আমার উপর এমনভাবে দাগ কাটলো ও ক্রিয়াশীল হলো যে, ) আমি তৎক্ষণাৎ কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। তাতে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং বলেনঃ ( আরবি ) দ্বারা ইয়াহূদকে বুঝানো হয়েছে এবং ( আরবি ) দ্বারা খৃষ্টানগণকে বুঝানো হয়েছে। আরও একটি হাদীসে আছে যে, হযরত আদীর ( রাঃ ) প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এই তাফসীরই করেছিলেন। এ হাদীসের অনেক সনদ আছে এবং বিভিন্ন শব্দে সে সব বর্ণিত হয়েছে।বানূ কাইনের একটি লোক 'ওয়াদীউল কুরায়' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে এটাই প্রশ্ন করেছিলেন এবং উত্তরে তিনি একথাই বলেছিলেন। কোন কোন বর্ণনায় তাঁর নাম দেয়া হয়েছে আবদুল্লাহ বিন আমর ( রাঃ )আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন। ইবনে মিরদুওয়াই ( রঃ )- এর তাফসীরে হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ( রাঃ ), হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ( রাঃ ) এবং আরও বহু সাহাবী ( রাঃ ) হতেও এ তাফসীর মকল করা হয়েছে। হযরত রাবী' বিন আনাস ( রাঃ ) এবং হযরত আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম ( রঃ ) প্রভৃতি মনীষীগণও একথাই বলেন। বরং ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) তো বলেন যে, মুফাসসিরগণের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। এই ইমামগণের এতোফসীরের একটি দলীল হচ্ছে ঐ হাদীসটি যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে সূরা-ই-বাকারার এ আয়াতটি যাতে বানী ইসরাঈলগণকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। ( ২:৯০ ) ( আরবি ) এ আয়াতের মধ্যে আছে যে, তাদের উপর অভিশাপের পর অভিশাপ অবতীর্ণ। হয়েছে এবং সূরা-ই-মায়েদার ( আরবি ) ( ৫৪৬০ ) এই আয়াতের মধ্যেও রয়েছে যে, তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ অবতীর্ণ হয়েছে। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ বানী ইসরাঈলদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের উপর দাউদ ( আঃ ) হযরত ঈসা ( আঃ ) এর কথায় অভিশাপ দেয়া হয়েছে; কারণ তারা অবাধ্য হয়েছিল ও সীমা অতিক্রম করেছিল। এসব লোক কোন খারাপ কাজ হতে একে অপরকে বাধা দিতো না। নিশ্চয়ই তাদের কাজ ছিল অত্যন্ত জঘন্য। ( ৫:৭৮-৭৯ )ইতিহাসের পুস্তকসমূহে বর্ণিত আছে যে, যায়েদ বিন আমর বিন নোফাইল যখন খাঁটি ধর্মের অনুসন্ধানে স্বীয় বন্ধুবান্ধব ও সাথী-সঙ্গীসহ বেরিয়ে পড়লেন এবং এদিক ওদিক বিচরণের পর শেষে সিরিয়ায় আসলেন, তখন ইয়াহূদীরা তাদেরকে বললোঃ আল্লাহর অভিশাপের কিছু অংশ না নেয়া পর্যন্ত আপনারা আমাদের ধর্মে আসতেই পারবেন না । তারা উত্তরে বললেনঃ তা হতে বাঁচার উদ্দেশ্যেই তো আমরা সত্য ধর্মের অনুসন্ধানে বের হয়েছি, কাজেই কিরূপে তা গ্রহণ করতে পারি? তারা খৃষ্টানদের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা বললোঃ আল্লাহ তা'আলার লা'নত ও অসন্তুষ্টির কিছু অংশ না নেয়া পর্যন্ত আপনারা আমাদের ধর্মেও আসতে পারবেন না । তারা বললেনঃ আমরা এটাও করতে পারি না। তারপর হযরত যায়েদ বিন আমর বিন নোফাইল স্বাভাবিক ধর্মের উপরই রয়ে গেলেন। তিনি মুর্তি পূজা ও স্বগোত্রীয় ধর্মত্যাগ করলেন, কিন্তু ইয়াহুদী ও খৃষ্টান ধর্ম কোন ক্রমেই গ্রহণ করলেন না। তবে তার সঙ্গী সাথীরা খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলো, কেননা ইয়াহূদীদের ধর্মের সঙ্গে এর অনেকটা মিল ছিল। যায়েদের ধর্মেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন অরাকা বিন নাওফিল। তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর নবুওতের যুগ পেয়েছিলেন এবং আল্লাহর হিদায়াত তাঁকে সুপথ প্রদর্শন করেছিল। তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর উপর ঈমান এনেছিলেন ও সেই সময় পর্যন্ত যে ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছিল তিনি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হউন। জিজ্ঞাস্যঃ ( আরবি ) এবং ( আরবি )-এর মধ্যে অতি সামান্য পার্থক্য রয়েছে। এজন্যে উলামা-ই-কিরামের সহীহ মাযহাৰ এই যে, এ পার্থক্য ক্ষমার্হ ( আরবি ) এর সহীহ মাখরাজ হচ্ছে জিহবার প্রথম প্রান্ত এবং ওর পার্শ্বের চোয়াল। আর ( আরবি ) এর মাখরাজ হচ্ছে জিহবার এক দিক এবং সম্মুখের উপরের দুই দাঁতের প্রান্ত। দ্বিতীয় কথা এই যে, এই দুটি অক্ষর হচ্ছে ( আরবি ) এবং ( আরবি ) সুতরাং যে ব্যক্তির পক্ষে এই দুইটি অক্ষরের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হবে সে যদি কে ( আরবি ) এর মত পড়ে ফেলে তবে তার অপরাধ অমার্জনীয় নয়, বরং তাকে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখা হবে। একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ( আরবি ) কে সবচেয়ে সঠিকভাবে পড়তে আমিই পারি। কিন্তু হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন ও দুর্বল। পরিচ্ছেদ এই কল্যাণময় ও বরকতপূর্ণ সূরাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর সমষ্টি। এই সাতটি আয়াতে আল্লাহ তা'আলার যোগ্য প্রশংসা, তার শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্র নামসমূহ এবং উচ্চতম বিশেষণের সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই রোজ কিয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং বান্দাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে যে, তারা যেন সেই মহান প্রভুর নিকট অত্যন্ত বিনীতভাবে যাচ্ঞা করে, যেন তার কাছে নিজের দারিদ্র ও অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করে, তাকে সব সময় অংশীবিহীন ও তুলনাবিহীন মনে করে, খাটি অন্তরে তাঁর ইবাদত; তাঁর অহদানিয়াত বা একত্ববাদে বিশ্বাস করে, তার কাছে সরল সোজা পথ ও তার উপর সুদৃঢ় ও অটল থাকার জন্যে নিশিদিন আকুল প্রার্থনা জানায়। এই অবিসম্বাদিত পথই একদিন তাকে রোজ কিয়ামতের পুলসিরাত পার করাবে এবং নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেককারদের পার্শ্বে জান্নাতুল ফিরদাউসের নন্দন কাননে স্থান দেবে। সাথে সাথে আলোচ্য সূরাটির মধ্যে যাবতীয় সকার্যাবলী সম্পাদনের প্রতি নিরন্তর উৎসাহ দেয়া হয়েছে যাতে কিয়ামতের দিন বান্দা আত্মকৃত নেকী ও পুন্যসমূহ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে এবং মিথ্যা ও অন্যায় পথে চলা থেকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, যাতে কিয়ামতের দিনেও সে বাতিলপন্থীদের দল থেকে দূরে থাকতে পারে। এই বাতিলপন্থী দল হচ্ছে ইয়াহূদী এবং খৃষ্টান।ধীরস্থির ও সূক্ষ্মভাবে জাগ্রত মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে দেখলে অতি সহজেই অনুধাবন করা যাবে যে, আল্লাহ তা'আলার বর্ণনারীতি কি সুন্দর! আলোচ্য সূরায় ( আরবি ) নামক বাক্যাংশে দানের ইসনাদ বা সম্পর্ক আল্লাহর দিকে করা হয়েছে এবং ( আরবি ) বলা হয়েছে ( আরবি ) কিন্তু এর ইসনাদ করা হয়নি; বরং এখানে কর্তাকেই লোপ করা হয়েছে এবং ( আরবি ) বলা হয়েছে। এখানে বিশ্ব প্রভুর মহান মর্যাদার প্রতি যথাযোগ্য লক্ষ্য রাখা হয়েছে। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে মূল কর্তা আল্লাহ তা'লাই। যেমন অন্যস্থানে বলা হয়েছে ( আরবি ) এরূপভাবেই ভ্রষ্টতার ইসনাদ পথভ্রষ্টের দিকেই করা হয়েছে। অথচ অন্য এক জায়গায় আছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ আল্লাহ যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন সে সুপথ প্রাপ্ত এবং যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তার কোন বন্ধু ও পথ প্রদর্শক নেই।' ( ১৮:১৭ ) আর এক জায়গায় আছে, ( আরবি ) অর্থাৎ আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্যে কোন পথ প্রদর্শক নেই এবং সে তো স্বীয় অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরছে?' ( ৭:১৮৬ ) এ রকমই আরও বহু আয়াত রয়েছে যদ্দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, পথ প্রদর্শনকারী ও পথ বিভ্রান্তকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।কাদরিয়্যাহ দল, যারা কতকগুলো অস্পষ্ট আয়াতকে দলীলরূপে গ্রহণ করে বলে থাকে যে, বান্দা তার ইচ্ছাধীন ও মুক্ত স্বাধীন, সে নিজেই পছন্দ করে এবং নিজেই সম্পাদন করে। কিন্তু তাদের একথা ভ্রমাত্মক ও প্রমাদপূর্ণ। এটা খণ্ডনের জন্যে ভূরি ভূরি স্পষ্ট আয়াতসমূহ বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বাতিল পন্থীদের এটাই রীতি যে, তারা স্পষ্ট আয়াতকে পরিহার করে অস্পষ্ট আয়াতের পিছনে লেগে থাকে। বিশুদ্ধ হাদীসে আছেঃ “ যখন তোমরা ঐ লোকদেরকে দেখ যারা অস্পষ্ট আয়াতসমূহের পিছনে লেগে থাকে তখন বুঝে নিও যে, তারা ওই যাদের নাম স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা নিয়েছেন এবং স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন । সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাক। এ নির্দেশনামায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর ইঙ্গিত এই আয়াতের প্রতি রয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ সুতরাং যাদের অন্তরে বঞতা রয়েছে তারা গোলযোগ সৃষ্টি এবং এর ( মনগড়া ) ব্যাখ্যা অন্বেষণের উদ্দেশ্যে এর ঐ অংশের পিছনে পড়ে থাকে যা দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট মর্ম বিশিষ্ট। সুতরাং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, বিদআতীদের অনুকূলে কুরআন পাকের মধ্যে সঠিক ও অকাট্য দলীল একটিও নেই। কুরআন মাজীদের আগমন সূচিত হয়েছে সত্য ও মিথ্যা, হিদায়াত ও গুমরাহীর মধ্যে পার্থক্য প্রদর্শনের জন্যেই। বৈপরীত্ব ও মতবিরোধের জন্যে অসেনি বা তার অবকাশও এতে নেই। এতে মহাবিজ্ঞ ও প্রশংসিত আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে লাওহে মাহফু’ বা রক্ষিত ফলক থেকে।" পরিচ্ছেদ সূরা ফাতিহা শেষ করে আমীন বলা মুসতাহাব ( আরবি ) শব্দটি ( আরবি ) শব্দটির মত এবং এটা ( আরবি ) ও পড়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছেঃ “ হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন । আমীন বলা মুসতাহাব হওয়ার দলীল হলো ঐ হাদীসটি যা মুসনাদ-ই-আহমদ, সুনান-ই-আবি দাউদ এবং জামে তিরমিযীতে হযরত অয়েল বিন হুজর ( রাঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ “ আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে ( আরবি ) পড়ে আমীন বলতে শুনেছি । তিনি স্বর দীর্ঘ করতেন।” সুনান-ই- আবি দাউদে আছে যে, তিনি স্বর উচ্চ করতেন। ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ), হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) প্রমুখ সাহাবীগণ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর সশব্দ আমীন তার নিকটবর্তী প্রথম সারির লোকেরা স্পষ্টতঃই শুনতে পেতেন। সুনান-ই-আবি দাউদ ও সুনান-ই-ইবনে মাজায় এ হাদীসটি আছে। সুনান-ই-ইবনে মাজায় এও আছে যে, আমীনের শব্দে গোটা মসজিদ প্রতিধ্বনিত হয়ে বেজে উঠতো।' ইমাম দারে-কুতনীও ( রঃ ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে 'হাসান' বলে মন্তব্য করেছেন। হযরত বেলাল ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলতেনঃ “ আমার পূর্বে ‘আমীন' বলবে না"হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) এবং হযরত জাফর সাদিক ( রঃ ) হতে 'আমীন' বলা বর্ণিত আছে। যেমন কুরআন মজীদের মধ্যে ( আরবি ) ( ৫:২ ) রয়েছে। আমাদের সহচরেরা বলেন যে, নামাযের বাইরে থাকলেও ‘আমীন' বলতে হবে। তবে যে ব্যক্তি নামাযে থাকবে তার জন্যে বেশী জোর দেয়া হয়েছে। নামাযী একাকী হোক বা মুকতাদী হোক বা ইমাম হোক, সর্বাবস্থায় তাকে আমীন বলতেই হবে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন ইমাম ‘আমীন' বলেন তখন তোমরাও আমীন বল যার আমীন বলার শব্দ ফেরেশতাদের আমীনের সঙ্গে মিলিত হয় তার পূর্বেকার সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যায়।সহীহ মুসলিম শরীফে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নামাযে ‘আমীন' বলে এবং ফেরেশতারাও আকাশে ‘আমীন বলেন, আর একের আমীনের সঙ্গে অন্যের ‘আমীন মিলিত হয় তখন তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায় এর ভাবার্থ এই যে, তার আমীন ও ফেরেশতাদের ‘আমীন' বলার সময় একই হয় বা কবুল হওয়া হিসেবে অনুরূপ হয় অথবা আন্তরিকতায় অনুরূপ হয়। সহীহ মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু মূসা আশ'আরী ( রাঃ ) হতে মারফু রূপে বর্ণিত আছেঃ “ যখন ইমাম ( আরবি ) বলেন তখন তোমরা ‘আমীন' বল, আলাহ কবুল করবেন' হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমীনের অর্থ কি' তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন। জওহারী ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ ‘যেন এরূপই হয়।' ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে আমাদের আশা ভঙ্গ করবেন না। অধিকাংশ আলেম বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ “ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন ।' মুজাহিদ ( রঃ ), জাফর সাদিক ( রঃ ) এবং হিলাল বিন সিয়াফ ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তাআলার নাম সমূহের মধ্যে আমীনও একটি নাম। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে মার’ রূপে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। কিন্তু তা বিশুদ্ধ নয়।ইমাম মালিকের ( রঃ ) সহচরগণের মাযহাব এই যে, ইমাম ‘আমীন’ বলবেন , শুধু মুকতাদীগণ ‘আমীন’ বলবেন। কেননা ইমাম মালিকের ( রঃ ) মুআত্তার হাদীসে আছে :যখন ইমাম ( আরবি ) বলে তখন তোমরা আমীন’ বল। এ রকমই তার দলীলের সমর্থনে সহীহ মুসলিমে হযরত আবু মূসা আশআরী ( রাঃ ) হতেও একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ যখন ইমাম ( আরবি ) বলে তখন তোমরা আমীন বল।' কিন্তু সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীস ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে-'যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন’ বল।' হাদীসে এটাও আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ( আরবি ) বলে ‘আমীন’ বলতেন। উচ্চৈস্বরে পঠিত নামাযে মুকতাদী উচ্চৈস্বরে আমীন বলবে কিনা সে বিষয়ে আমাদের সহচরদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এর ব্যাখ্যা এই যে, যদি ইমাম ‘আমীন' বলতে ভুলে যান তবে মুকতাদীগণ জোরে আমীন বলবে। যদি ইমাম নিজেই উচ্চৈস্বরে আমীন বলেন তবে নতুন কথা মতে মুকতাদী জোরে আমীন বলবে না। ইমাম আবু হানীফার ( রঃ ) এটাই মাযহাব। ইমাম মালিক হতেও এরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে। কেননা, নামাযের অন্যান্য যিকরের মত এটাও একটা যি। সুতরাং অন্যান্য যি যেমন উচ্চ শব্দে হয়, তেমনই এটাও উচ্চ শব্দে পড়া হবে না। কিন্তু পূর্ব যুগীয় মনীষীদের কথা এই যে, “ আমীন’ উচ্চ শব্দেও পড়া যায় । ইমাম আহমদ বিন হাম্বলেরও ( রঃ ) মাযহাব এটাই এবং দ্বিতীয় বর্ণনা অনুসারে ইমাম মালিকের ( রঃ ) এটাই মাযহাব। এর দলীল ঐ হাদীসটি যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, আমীনের শব্দে মসজিদের মধ্যে গুঞ্জন ধ্বনির রব উঠতো। এখানে আমাদের তৃতীয় আরও ইমাম।একটি মত আছে, তা এই যে, যদি মসজিদ ছোট হয় তবে মুকতাদী জোরে আমীন বলবে না। কেননা। তারা ইমামের কিরাআত শুনছে। আর যদি মসজিদ বড় হয় তবে আমীন জোরে বলবে, যেন মসজিদের প্রান্তে প্রান্তে ‘আমীনের’ শব্দ পৌছে যায়আল্লাহই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন।মুসনাদ-ই- আহমাদে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর নিকট ইয়াহুদীদের আলোচনা হলে তিনি বলেনঃ “ আমাদের তিনটা জিনিসের উপর ইয়াহুদীদের যতটা হিংসা বিদ্বেষ আছে ততোটা হিংসা অন্য কোন বস্তুর উপর নেই । ( ১ ) জুমআ, আল্লাহ আমাদেরকে তার প্রতি হিদায়াত করেছেন ও পথ দেখিয়েছেন এবং তারা এ থেকে ভ্রষ্ট রয়েছে। ( ২ ) কিবলাহ্ এবং ( ৩ ) ইমামের পিছনে আমাদের আমীন বলা। সুনান-ই-ইবনে মাজার হাদীসে রয়েছেঃ সালাম’ ও ‘আমীন’ ইয়াহুদীদের যতোটা বিরক্তি উৎপাদন করে অন্য কোন জিনিস তা করে না হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের ( রাঃ ) বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ইয়াহূদীরা তোমাদের আমীনের উপর যত হিংসা করে অন্য কাজে ততোটা করে। তোমরা আমীন খুব বেশী বেশী বল।' এর সনদে বর্ণনাকারী তালহা বিন আমর উসূলে হাদীসের পরিভাষা অনুযায়ী দুর্বল। ইবনে মিরদুওয়াই ( রঃ ) হযরত আবূ হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ‘আমীন, আল্লাহর মুমিন বান্দাদের উপর তার মোহর। হ্যরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ নামাযে ‘আমীন' বলা এবং প্রার্থনায় আমীন’ বলা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আমার প্রতি একটি বিশেষ দান, যা আমার পূর্বে অন্য কাউকে দান করা হয়নি হাঁ, তবে এটুকু বর্ণিত আছে যে, হযরত মূসার ( আঃ ) বিশেষ প্রার্থনার উপর হযরত হারুন ( আঃ ) আমীন বলতেন। তোমরা তোমাদের প্রার্থনা আমীনের উপর শেষ কর। তাহলে তোমাদের পক্ষেও আল্লাহ তা কবুল করবেন।” এ হাদীসটিকে সামনে রেখে কুরআন মাজীদের ঐ শব্দগুলো লক্ষ্য করুন যা হযরত মূসার ( আঃ ) প্রার্থনায় বলা হয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ এবং মূসা বললো -হে আমাদের প্রভু! আপনি ফিরআউনকে ও তার সভাসদবর্গকে ইহলৌকিক জীবনে সৌন্দর্য ও সম্পদ দান করেছেন যার ফলে সে অন্যদেরকে আপনার পথ হতে সরিয়ে নিয়ে বিপথে চালিত করছে; হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদের ধন মাল ধ্বংস করুন এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিন, সুতরাং তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখার পূর্ব পর্যন্ত ঈমান আনবে না।' ( ১০:৮৮ ) হযরত মূসার ( আঃ ) এ দু'আ ককূলের ঘোষণা নিম্নের এসব শব্দ দ্বারা করা হচ্ছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ তিনি বললেন তোমাদের দু'জনের প্রার্থনা মঞ্জুর করা হলো সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং মুখদের পথে যেয়ো না।' ( ১০:৮৯ )দু'আ শুধু হযরত মূসা ( আঃ ) করেছিলেন এবং হযরত হারূণ ( আঃ ) শুধু ‘আমীন’ বলেছিলেন। কিন্তু কুরআনে এই দু'আর সংযোগ দু’জনের দিকেই করা হয়েছে। কতগুলো লোক একে প্রমাণ রূপে গ্রহণ করে বলে থাকেন যে, যে ব্যক্তি কোন দু'আর উপর আমীন বলে সে যেন নিজেই দু'আ করলো। এখন এ প্রমাণকে সামনে রেখে আবার তাঁরা কিয়াস করেন যে, মুকতাদীকে কিরাআত পড়তে হবে না। কেননা, তার সূরা ফাতিহার উপর আমীন’ বলাই কিরাআতের স্থলাভিষিক্ত হবে। তারা এ হাদীসটিকেও দলীল রূপে পেশ করেনঃ যার ইমাম থাকে, ইমামের কিরাআতই তার কিরাআত। ( মুসনাদ-ই- আহমাদ )হযরত বেলাল ( রাঃ ) বলতেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমীনে' আমার অগ্রবর্তী হবেন, না।' এঁরা এটা টেনে এনে যেহুরী নামাযে ইমামের পিছনে মুকতাদীর সূরা-ই-ফাতিহা না পড়া সাব্যস্ত করতে চান। আল্লাহ তাআলাই এসব বিষয়ে সবচেয়ে ভাল জানেন। হযরত আবূ হুরাইরা ( রাঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ইমাম যখ ( আরবি ) বলার পর আমীন বলে এবং যমীনবাসীদের আমীনের সঙ্গে আসমান বাসীদের ‘আমীন' বলার শব্দও মিলিত হয়, তখন আল্লাহ বান্দার পূর্বের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। আমীন বলার দৃষ্টান্ত এরূপ যেমন, এক ব্যক্তি এক গোত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করলো ও জয় লাভ করলো। অতঃপর যুদ্ধলব্ধ মাল জমা করলো। এখন সে অংশ নেয়ার জন্যে নির্বাচনের গুটিকা নিক্ষেপ করলো। কিন্তু তার নাম বেরই হলো না এবং সে কোন অংশও পেলো না। এতে সে বিস্মিত হয়ে বললো -এ কেন হবে? তখন সে উত্তর পেলো তোমার আমীন’ না বলার কারণে।”________________________________________ সূরা-ই-বাকারাহ এবং তার মাহাত্ম্য ও গুণাবলী হযরত মা'কাল বিন ইয়াসার ( রাঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ সূরা-ই-বাকারাহ্ কুরআনের কুঁজ এবং তার চূড়া। এর এক একটি আয়াতের সঙ্গে ৮০ জন ফেরেশতা উর্ধগগন থেকে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বিশেষ করে আয়াতুল কুরসী তো খাস আরশ হতে অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই সূরার সঙ্গে মিলানো হয়েছে। সূরা-ই-ইয়াসীন কুরআনের অন্তর বিশেষ। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকাল লাভের জন্যে তা পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। এ সূরাটিকে মরণোন্মুখ ব্যক্তির সম্মুখে পাঠ কর।' ( মুসনাদ-ইআহমদ )এ হাদীসের সনদের এক স্থানে ( আরবি ) আছে, যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম অজানা ছিল। কিন্তু মুসনাদ-ই আহমাদেরই অপর একটি বর্ণনায় তার নাম আবু উসমান এসেছে। এ হাদীসটি এভাবেই সুনান-ই আবি দাউদ, সুনান-ই-নাসাঈ এবং সুনান-ই-ইবনে মাজার মধ্যেও রয়েছে। জামে তিরমিযীর একটি দুর্বল সনদ বিশিষ্ট হাদীসে আছেঃ প্রত্যেক জিনিসেরই একটা উচ্চতা থাকে। কুরআন মাজীদের উচ্চতা হচ্ছে সূরা-ই-বাকারাহ্। এই সূরার মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে যা সমস্ত আসমানের নেতা এবং সেটি হচ্ছে ‘আয়াতুল কুরসী'। মুসনাদ-ই-আহমাদ, সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিযী এবং সুনান-ই- নাসাঈর মধ্যে বর্ণিত হাদীসে আছেঃ ‘তোমরা নিজেদের ঘরকে কবরে পরিণত করো না, যে ঘরে সূরা-ই বাকারাহ পাঠ করা হয় তথায় শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।' ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) একে হাসান সহীহ বলেছেন। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, যে ঘরে সূরা-ই-বাকারাহ পড়া হয় সেখান হতে শয়তান পলায়ন করে। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারীকে ইয়াহইয়া বিন মুঈন তো নির্ভরযোগ্য বলেছেন বটে, কিন্তু ইমাম আহমাদ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ তার হাদীসকে অস্বীকার্য বলেছেন। হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ( রাঃ ) হতেও এরূপ কথাই বর্ণিত আছে। হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) তার ‘আল ইয়াওমু ওয়াল লাইলাতু’ নামক পুস্তকের মধ্যে এবং ইমাম হাকিম স্বীয় গ্রন্থ মুসতাদরাক’ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই’ এ আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমাদের মধ্যে কাউকেও যেন, এরূপ না পাই যে, সে এক পায়ের উপর অন্য পা চড়িয়ে পড়তে থাকে; কিন্তু সূরা-ই-বাকারাহ পড়ে না । জেনে ব্রেখো, যে ঘরে এই বরকতময় সূরাটি পাঠ করা হয় সেখান হতে শয়তান ছুটে পালিয়ে যায়। সবচেয়ে জঘন্য ও লাঞ্ছিত সেই ঘর যে ঘরে আল্লাহর কিতাব পাঠ করা হয় না।'ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) স্বীয় ‘আল-ইয়াওমু ওয়াল লাইলাতু' গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদ-ই- দারিমীর মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যে ঘরে সূরা-ই-বাকারাহ পড়া হয় সেই ঘর থেকে শয়তান গুহ্যদ্বার দিয়ে বায়ু নিঃসরণ করতে করতে পলায়ন করে। প্রত্যেক জিনিসেরই উচ্চতা থাকে এবং কুরআন কারীমের উচ্চতা হচ্ছে সূরা-ই-বাকারাহ। প্রত্যেক বস্তুরই সারাংশ আছে এবং কুরআনের সারাংশ হচ্ছে বড় সূরাগুলি।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের ( রাঃ ) উক্তি আছে যে, যে ঘরে সূরা ই-বাকারার প্রথম চারটি আয়াত, আয়াতুল কুরসী, তার পরবর্তী দু’টি আয়াত এবং সব শেষের তিনটি আয়াত, একুনে দশটি আয়াত পাঠ করা হয়, শয়তান। সেই ঘরে ঐ রাত্রে যেতে পারে না এবং সেইদিন ঐ বাড়ীর লোকদের শয়তান অথবা কোন খারাপ জিনিস কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে না। এ আয়াতগুলি পাগলের উপর পড়লে তার পাগলামীও দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ ‘যেমন প্রত্যেক জিনিসের উচ্চতা থাকে তেমনই কুরআনের উচ্চতা হচ্ছে সূরা-ই- বাকারাহ। যে ব্যক্তি রাত্রিকালের নীরব ক্ষণে নিজের নিভৃত কক্ষে তা পাঠ করে, তিন রাত্রি পর্যন্ত শয়তান সেই ঘরে যেতে পারে না। আর দিনের বেলায় যদি ঘরে পড়ে তবে তিন দিন পর্যন্ত সেই ঘরে শয়তান পা দিতে পারে না ( তাবরানী, ইবনে হিব্বান ও ইবনে মিরদুওয়াই )। জামে তিরমিযী, সুনান-ই-নাসাঈ এবং সুনান-ই-ইবনে মাজায় রয়েছে যে, একবার রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একটা ছোট্ট সেনাবাহিনী এক জায়গায় পাঠালেন এবং তিনি তার নেতৃত্বভার এমন ব্যক্তির উপর অর্পণ করলেন যিনি বলেছিলেনঃ ‘আমার সূরা-ই-বাকারাহ মুখস্থ আছে। সে সময় একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি বললেনঃ ‘আমিও তা মুখস্ত করতাম। কিন্তু পরে আমি এই ভয় করেছিলাম যে, না জানি আমি তার উপর আমল করতে পারবে কি না। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ কুরআন শিক্ষা কর, কুরআন পাঠ কর। যে ব্যক্তি তা শিখে ও পাঠ করে, অতঃপর তার উপর আমলও করে, তার উপমা এরকম যেমন মিশক পরিপূর্ণ পাত্র, যার সুগন্ধি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর যে ব্যক্তি তা শিক্ষা করলো, অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লে তার দৃষ্টান্ত সেই পাত্রের মত যার মধ্যে মিশক তো ভরা রয়েছে, কিন্তু উপর হতে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) একে হাসান বলেছেন এবং মুরসাল বর্ণনাও রয়েছে। আল্লাহই এ সম্পর্কে ভাল জানেন।সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, হযরত উসাইদ বিন হুজাইর ( রাঃ ) একদা রাত্রে সূরা-ই-বাকারার পাঠ আরম্ভ করেন। তাঁর ঘোড়াটি, যা তার পার্শ্বেই বাঁধা ছিল, হঠাৎ করে লাফাতে শুরু করে। তিনি পাঠ বন্ধ করলে ঘোড়া সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আবার তিনি পড়তে আরম্ভ করেন এবং ঘোড়াও লাফাতে শুরু করে। তিনি পুনরায় পড়া বন্ধ করেন এবং ঘোড়াটিও স্তব্ধ হয়ে থেমে যায়। তৃতীয় বারও এরূপই ঘটে। তার শিশু পুত্র ইয়াহইয়া ঘোড়ার পার্শ্বেই শুয়ে ছিল। কাজেই তিনি ভয় করলেন যে, না জানি ছেলের আঘাত লেগে যায়। সুতরাং তিনি পড়া বন্ধ করে ছেলেকে উঠিয়ে নেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করেন যে, ঘোড়ার চমকে উঠার কারণ কি? সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর দরবারে হাজির হয়ে ঘটনাটি আনুপূর্বিক বর্ণনা করেন। তিনি শুনতে থাকেন ও বলতে থাকেনঃ ‘উসাইদ! তুমি পড়েই যেতে!' হযরত উসাইদ ( রাঃ ) বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল! তৃতীয় বারের পরে প্রিয় পুত্র ইয়াহইয়ার কারণে আমি পড়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছিলাম অতঃপর আমি মাথা আকাশের দিকে উঠালে ছায়ার ন্যায় একটা জ্যোতির্ময় জিনিস দেখতে পাই এবং দেখতে দেখতেই তা উপরের দিকে উথিত হয়ে শূন্যমার্গে মিলিয়ে যায়। রাসললাহ ( সঃ ) তখন বললেনঃ তুমি কি জান সেটা কি ছিল? তারা ছিলেন গগন বিহারী অগণিত জ্যোতির্ময় ফেরেশতা। তোমার ( পড়ার শব্দ শুনে তারা একপদে নিকটে এসেছিলেন। যদি তুমি পাঠ বন্ধ না করতে তবে তারা সকাল পর্যন্ত এরকমই থাকতেন এবং মদীনার সকল লোক তা দেখে চক্ষু জুড়াতো। একটি ফেরেশতাও তাদের দৃষ্টির অন্তরাল হতেন না।' এ হাদীসটি কয়েকটি হাদীসের পুস্তকে বিভিন্ন সনদের সঙ্গে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া ইমাম কাসিম বিন সাল্লাম স্বীয় কিতাৰ কিতাবু ফাযাইলিল কুরআন’-এ আবদুল্লাহ বিন সাহিল থেকে রিওয়ায়ত করেছেন। আল্লাহই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন। এরই কাছাকাছি রয়েছে হযরত সাবিত বিন কায়েস বিন শাম্মসের ঘটনাটি। তা হচ্ছেঃ একদা মদীনাবাসী রাসূলুল্লাহ (সঃ ) এর খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করেনঃ “ আমরা গত রাত্রে দেখেছি যে, হযরত সাবিতের ( রাঃ ) পর্ণ কুটীর খানা সারা রাত ধরে উজ্জ্বল প্রদীপের আলোকে ঝলমল করছে ।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ ‘সত রাত্রে সে সুরা-ই-বাকারাহ পড়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ হ্যা, সত্যই আমি রাত্রে সূরা বাকারাহ পড়েছিলাম। এর ইসনাদ তো খুব উত্তম। কিন্তু এতে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে এবং এটা মুরসালও বটে। সুতরাং আল্লাহই নিঃসন্দেহে এ সম্পর্কে সুষ্ঠু ও উত্তম জ্ঞানের অধিকারী। সূরা-ই-বাকারাহ ও সূরা-ই-আলে ইমরানের গুণাবলী নবী করীম ( সঃ ) বলেছেনঃ তোমরা অভিনিবেশ সহকারে সূরা-ই-বাকারাহ শিক্ষা কর। কারণ এর শিক্ষা অতি কল্যাণকর এবং এ শিক্ষার বর্জন অতি বেদনাদায়ক। এমনকি বাতিলপন্থী যাদুকরও এর ক্ষমতা রাখে না।'অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললেনঃ ‘সূরা-ই-বাকারাহ ও সূরা-ই আলে ইমরান শিক্ষা কর। এ দু'টি হচ্ছে জ্যোতির্ময় নূর বিশিষ্ট সূরা। এরা এদের পাঠকের উপর সামিয়ানা, মেঘমালা অথবা পাখির ঝাঁকের ন্যায় কিয়ামতের দিন ছায়া বিস্তার করবে। কুরআনের পাঠক কবর থেকে উঠে দেখতে পাবে যে, এক জ্যোতির্ময় মুখমণ্ডল বিশিষ্ট সুন্দর যুবক তার পাশে দাঁড়িয়ে বলছেঃ “ আপনি আমাকে চিনেন কি?' এ বলবেঃ না' । সে বলবেঃ ‘আমি সেই কুরআন যে তোমাকে দিনে ক্ষুধার্থ ও পিপাসার্ত রেখেছিল এবং রাত্রে বিছানা দূরে সরিয়ে সদা জাগ্রত রেখেছিল। প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার ব্যবসার পিছনে রয়েছে; কিন্তু আজ সমুদয় ব্যবসা তোমার পিছনে আছে। আজ তার দক্ষিণ হস্তে রাজ্য এবং অনন্তকালের জন্যে বাম হস্তে চির অবস্থান দেয়া হবে। তার মস্তকে সার্বিক সম্মান ও অনন্ত মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। তার বাপ-মাকে এমন দু'টি সুন্দর মূল্যবান পরিধেয় বস্ত্র পরানো হবে যার মূল্যের সামনে সারা দুনিয়া জাহান অতি নগণ্য মনে হবে। তারা বিচলিত হয়ে বলবেঃ ‘এ দয়া ও অনুগ্রহ, এ পুরস্কার ও অবদানের কারণ কি? তখন তাদেরকে বলা হবেঃ “ তোমাদের ছেলেদের কুরআন পাঠের কারণে তোমাদেরকে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ ‘পড়ে যাও এবং ধীরে ধীরে বেহেশতের সোপানে আরোহণ কর।' সুতরাং তারা পড়তে থাকবে ও উচ্চ হতে উচ্চতর সোপানে আরোহণ করবে। সে ধীরে ধীরেই পাঠ করুক বা তাড়াতাড়ি পাঠ করুক।' সুনান-ই-ইবনে মাজায় এ হাদীসটি আংশিকভাবে বর্ণিত আছে। এর ইসনাদ হাসান এবং মুসলিমের শর্ত বিদ্যমান। এর বর্ণনাকারী বশীর বিন মুহাজির হতে ইমাম মুসলিমও ( রঃ ) বর্ণনা নিয়েছেন এবং ইমাম ইবনে মুঈনও তাকে নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। ইমাম নাসাঈর ( রঃ ) মতে এতে কোন দোষ নেই। হাঁ, তবে ইমাম আহমাদ ( রঃ ) তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন এবং এর কারণ দেখাতে গিয়ে তিনি বলেছেনঃ “ আমি ব্যাপক অনুসন্ধান করে দেখলাম যৈ, সে অদ্ভুত হাদীস এনে থাকে । ইমাম বুখারী ( রঃ ) বলেন যে, তার কতকগুলো হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে। আবু হাতিম রাযীর ফায়সালা এই যে, তার হাদীস লিখা যেতে পারে; কিন্তু দলীল রূপে গৃহীত হতে পারে না। ইবনে ‘আদীর কথা এই যে, তার এমন কতকগুলো বর্ণনা আছে যেগুলোর অনুসরণ করা যায় না। ইমাম দারকুতনী ( রঃ ) বলেনঃ এটা সবল নয়। আমি বলি যে, তার এই বর্ণনার কতকগুলো বিষয় অন্য সনদেও এসেছে।মুসনাদ-ই- আহমাদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ কুরআন পাঠ করতে থাকো, কারণ তা তার পাঠকের জন্যে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। দু'টি জ্যোতির্ময় সূরা, সূরা-ই- বাকারাহ্ ও সূরা-ই-আলে ইমরান পড়তে থাকে। এ দুটো সূরা কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যেমন দুটো সামিয়ানা, দুটো মেঘ খণ্ড অথবা পাখির দুটো বিরাট ঝক। তাছাড়া সে তার পাঠকদের পক্ষ হতে আল্লাহ তা'আলার নিকট সুপারিশ করবে।' পুনরায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ সূরা-ই-বাকারাহ পড়তে থাকো; কেননা, এর পাঠে বরকত আছে এবং তা বর্জন বা পরিত্যাগ করাতে সমূহ আফসোস আছে। এর শক্তি বাতিলপন্থীদের নেই।' সহীহ মুসলিম শরীফেও অনুরূপ হাদীস আছে।মুসনাদ-ই-আহমাদের আর একটি হাদীসে আছেঃ কিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআন পাঠকদের আহবান করা হবে। সূরা-ই-বাকারাহ ও সূরা-ই-আলে ইমরান অগ্রে অগ্রে চলবে। মেঘ ছায়া অথবা পাখির ঝাঁকের মত ( চলতে থাকবে )। এর বেশ উঁটের সঙ্গে বিশ্ব প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করবে। সহীহ মুসলিম ও জামে তিরমিযীতেও এ হাদীসটি আছে। ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) একে হাসান গারীব বলেছেন। এক ব্যক্তি নামাযে সূরা-ই-বারাকাহ ও সূরা-ই-আলে ইমরান পাঠ করলেন। তা শেষ করলে পর হযরত কা'ব ( রাঃ ) বলেনঃ 'যে আল্লাহর অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এতে আল্লাহর ঐ নাম রয়েছে যে নাম ধরে প্রার্থনা করলে তা সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়ে থাকে। এখন লোকটি হযরত কা'বের ( রাঃ ) নিকট আরজ করলেনঃ “ আমাকে বলে দিন ঐ নামটি কি?' হযরত কা'ব ( রাঃ ) তা অস্বীকার করে বললেনঃ যদি আমি বলে দেই তবে ভয় হয় যে, আপনি হয়তো ঐ নামের বরকতে এমন প্রার্থনা করবেন যা আমার ও আপনার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে । হযরত আবু উমামা ( রাঃ ) বলেনঃ “ তোমাদের ভাইকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে । যে, যেন মানুষ একটা উঁচু পাহাড়ের উপর চড়ে রয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় দুটি সবুজ বৃক্ষ রয়েছে এবং ও দুটোর মধ্য হতে শব্দ হচ্ছেঃ তোমাদের মধ্যে কেউ -সূরা-ই-বাকারার পাঠক আছে কি? যখন কেউ বলছে যে, হাঁ আছে, তখন বৃক্ষদ্বয় ফলসহ তার দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং এ লোকটি ওদের শাখার উপর বসে যাচ্ছে এবং গাছগুলি তখন তাকে উপরে উঠিয়ে নিচ্ছে। হযরত উম্মে দারদা ( রাঃ ) বলেন যে, একজন কুরআনের পাঠক তার প্রতি বেশীকে মেরে ফেলে। অতঃপর প্রতিশোধ গ্রহণ আইনে তাকেও মেরে ফেলা হয়। তারপর কুরআন এক একটি সূরা হয়ে তার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে আরম্ভ করে। শেষ পর্যন্ত তার পাশে শধুমাত্র সূরা-ই-বাকারাহ ও সূরা-ই-আলে ইমরান বাকী রয়ে যায়। এক জুমআ’র পরে সূরা-ই-আলে ইমরানও পৃথক হয়ে পড়ে। আবার এক জুমআ অতিবাহিত হলে দৈব বাণী হয়ঃ আমার কথার পরিবর্তন নেই এবং আমি আমার বান্দাদের উপর আদৌ অত্যাচার করি না।' সুতরাং এই বরকতময় সূরাটিও অর্থাৎ সূরা-ই-বাকারাও পৃথক হয়ে পড়ে। ভাবার্থ এই যে, এই সূরা দু’টি তার পক্ষ থেকে বিপদ ও শাস্তির বাধা স্বরূপ হয়ে থাকে এবং কবরে তাকে পরিতুষ্ট করতে থাকে। সর্বশেষে তার পাপের আধিক্যের ফলে এদের সুপারিশও কার্যকরী হয় না।ইয়াযীদ বিন আসওয়াদ জুরশী বলেন যে, এই সূরা দুটি যে ব্যক্তি দিনে পাঠ করে সে সারা দিন কপটতা থেকে মুক্ত থাকে। আর যে ব্যক্তি রাত্রে তা পাঠ করে সে সারা রাতে কপটতা থেকে মুক্ত থাকে। স্বয়ং হযরত ইয়াযীদ ( রাঃ ) সকাল সন্ধ্যায় কুরআন মাজীদ ছাড়াও এ দু'টি সূরাকে সাধারণ অজীফারূপে পাঠ করতেন। হযরত উমার ফারুক ( রাঃ ) বলতেনঃ 'যে ব্যক্তি এ দু'টি সূরা রাত্রে পাঠ করবে সে আল্লাহর অনুগত বান্দাদের অন্তুর্ভুক্ত হবে। এর সনদ মুনকাতি'। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এ সূরা দু’টি ( রাত্রির নামাযে ) এক রাকাতে পড়তেন। সাতটি দীর্ঘ সূরার মর্যাদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ তাওরাতের স্থলে আমাকে দীর্ঘ সাতটি সূরা দেয়া হয়েছে, ইঞ্জীলের স্থলে আমি দু'শো আয়াত বিশিষ্ট সূরাসমূহ প্রাপ্ত হয়েছি এবং যায়ূরের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আমাকে দুশোর কম বিশিষ্ট সূরাগুলো দেয়া হয়েছে। অতঃপর আমাকে বিশেষ মর্যাদা হিসেবে সূরা-ই-কাফ থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সূরাগুলো দেয়া হয়েছে।' এ হাদীসটি গারীব এবং এর এক বর্ণনাকারী সাঈদ বিন আবূ বাশীর সম্পর্কে কিছুটা সমালোচনা রয়েছে। আল্লাহই এ সম্পর্কে খুব ভাল জানেন। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি এই সাতটি সূরা লাভ করে সে খুব বড় আলেম। এই বর্ণনাটিও গারীব। মুসনাদ-ই-আহমাদেও এ রেওয়ায়েতটি আছে।একবার রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এক সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন এবং তাদের মধ্যে এমন একজনকে নেতৃত্ব দান করেন যার সূরা-ই-বাকারাহ মুখস্থ ছিল অথচ বয়সে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন। হযরত সাঈদ বিন যুবাইর ( রঃ ) নিম্নের ( আরবি ) ( ১৫:৮৭ ) এ আয়াতের তাফসীরেও বলেন যে, এর ভাবার্থ নিম্নলিখিত সাতটি দীর্ঘ সূরাঃ( ১ ) সূরা-ই-বাকারাহু, ( ২ ) সূরা-ই- আলে-ইমরান, ( ৩ ) সূরা-ই-নিসা, ( ৪ ) সূরা-ই-মায়েদা, ( ৫ ) সূরা-ই-আনআম, ( ৬ ) সূরা-ই আ’রাফ এবং ( ৭ ) সূরা-ই ইউনুস। মুজাহিদ ( রঃ ), মাকহুল ( রঃ ), আতিয়্যাহ বিন কায়েস ( রঃ ), আবু মুহাম্মদ ফারেসী ( রঃ ), শাদ্দাদ বিন আউস ( রঃ ) এবং ইয়াহইয়া ইবনে হারিস জিমারী ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে।

সূরা ফাতিহা আয়াত 7 সূরা

صراط الذين أنعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين

سورة: الفاتحة - آية: ( 7 )  - جزء: ( 1 )  -  صفحة: ( 1 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন,
  2. তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ
  3. আমি তো সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ অবর্তীর্ণ করেছি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালনা করেন।
  4. তারপর তাদের পেছনে এসেছে কিছু অপদার্থ, যারা উত্তরাধিকারী হয়েছে কিতাবের; তারা নিকৃষ্ট পার্থিব উপকরণ আহরণ
  5. আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি ঈমানদার হও, তবে তখনও পুনরায় এ ধরণের আচরণের পুনরাবৃত্তি
  6. আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর
  7. তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রঙ কিরূপ হবে? মূসা
  8. আমি অবশ্যই কাফেরদেরকে কঠিন আযাব আস্বাদন করাব এবং আমি অবশ্যই তাদেরকে তাদের মন্দ ও হীন
  9. মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।
  10. সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ফাতিহা ডাউনলোড করুন:

সূরা Fatiha mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Fatiha শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত ফাতিহা  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত ফাতিহা  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত ফাতিহা  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত ফাতিহা  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত ফাতিহা  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত ফাতিহা  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত ফাতিহা  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত ফাতিহা  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত ফাতিহা  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত ফাতিহা  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত ফাতিহা  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Wednesday, December 18, 2024

Please remember us in your sincere prayers