কোরান সূরা ইবরাহীম আয়াত 8 তাফসীর
﴿وَقَالَ مُوسَىٰ إِن تَكْفُرُوا أَنتُمْ وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ﴾
[ إبراهيم: 8]
এবং মূসা বললেনঃ তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি কুফরী কর, তথাপি আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, যাবতীয় গুনের আধার। [সূরা ইবরাহীম: 8]
Surah Ibrahim in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ibrahim ayat 8
আর মূসা বলেছিলেন -- ''তোমরা যদি অকৃতজ্ঞ হও, তোমরা আর পৃথিবীতে যারা আছে সবাই, তাহলে নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তো অতি ধনবান, পরম প্রশংসার্হ।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৮. মূসা ( আলাইহিস-সালাম ) তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: হে আমার জাতি! তোমরা যদি কুফরি করো এবং তোমাদের সাথে এ পৃথিবীর সবাই কুফরি করে তাহলে তোমাদের কুফরির ক্ষতি তোমাদের উপরই বর্তাবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অমুখাপেক্ষী। তাঁর মূল সত্তাই সকল প্রশংসার দাবিদার। মু’মিনদের ঈমান তাঁর কোন উপকারে আসবে না। আবার কাফিরদের কুফরিও তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
মূসা বলেছিল, ‘তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেই যদি অকৃতজ্ঞ হও; তবুও নিঃসন্দেহে আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং সর্বপ্রশংসিত।’[১] [১] ভাবার্থ এই যে মানুষ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তাতে তারই লাভ রয়েছে, আর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তাতে আল্লাহর কি ক্ষতি? তিনি তো অমুখাপেক্ষী। সারা বিশ্ব অকৃতজ্ঞ হয়ে গেলে তাঁর কি আসে যায়? যেমন হাদীসে কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, "হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্বের ও পরের মানব ও দানব সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী একজন ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে আমার সাম্রাজ্যের একটুও শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্বের ও পরের মানব ও দানব সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক বড় পাপী একজন ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে আমার সাম্রাজ্যের কিছুই কম হবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্বের ও পরের মানব ও দানব যদি একটি জায়গাতে সমবেত হয় এবং প্রত্যেকেই আমার নিকট প্রার্থনা করে, আর আমি প্রত্যেকের চাহিদা পূরণ করি, তাহলে আমার সাম্রাজ্যের ততটুকু পরিমাণ কম হবে, যতটুকু সমুদ্রে সুচ ডুবিয়ে তা তুলে নিলে তা থেকে কমে যায়। ( মুসলিম, কিতাবুল বির্র ) সুতরাং তিনি পূত-পবিত্র, মহিমান্বিত, অভাবমুক্ত ও সর্বপ্রশংসনীয়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর মূসা বলেছিলেন, ‘তোমরা এবং যমীনের সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তারপরও আল্লাহ্ অভাবমুক্ত ও সর্বপ্রশংসিত [ ১ ]। [ ১ ] অর্থাৎ মূসা ‘আলাইহিস্ সালাম স্বজাতিকে বললেনঃ যদি তোমরা এবং পৃথিবীতে যারা বসবাস করে, তারা সবাই আল্লাহ্ তা’আলার নেয়ামতসমূহের নাশোকরী করো, তবে স্মরণ রেখো, এতে আল্লাহ্ তা’আলার কোন ক্ষতি নেই। তিনি সবার তারিফ, প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞতার উর্ধ্বে। তিনি আপন সত্তায় প্রশংসনীয়। তোমরা তাঁর প্রশংসা না করলেও সব ফিরিশতা এবং সৃষ্টজগতের প্রতিটি অণু-পরমাণু তাঁর প্রশংসায় মুখর। কৃতজ্ঞতার উপকার সবটুকু তোমাদের জন্যই। তাই আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতার জন্য তাকীদ দেয়া হয়, তা নিজের জন্য নয়; বরং দয়াবশতঃ তোমাদেরই উপকার করার জন্য। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের আগের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জ্বীন একত্রিত হয়ে তাকওয়ার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে এক জনের অন্তরে পরিণত হও তবুও তা আমার রাজত্বের সামান্যতম কিছুও বৃদ্ধি করবে না । হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের আগের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জ্বীন একত্রিত হয়ে অন্যায়ের দিক থেকে একজনের অন্তরে পরিণত হও তবুও তা আমার রাজত্বের সামান্যতম অংশও কমাতে পারবে না...”। [ মুসলিমঃ ২৫৭৭ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৬-৮ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা ( আঃ ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে হযরত মূসা ( আঃ ) স্বীয় কওমকে আল্লাহ তাআলার নিয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যেমন ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কবল হতে তাদেরকে রক্ষা করা, যারা তাদেরকে শক্তিহীন করে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকারের উৎপীড়ন চালাতো, এমনকি তাদের সমস্ত পুত্র সন্তানদেরক হত্যা করতো এবং কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত ছাড়তো। হযরত মূসা ( আঃ ) তাই স্বীয় কওমকে বলছেনঃ এটা তোমাদের উপর আল্লাহর তাআলার এত বড় নিয়ামত যে, এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা তোমাদের ক্ষমতার বাইরে। এই বাক্যটির ভাবার্থ এরূপও হতে পারেঃ ফিরাআউনীদের কষ্ট প্রদান প্রকৃতপক্ষে তোমাদের উপর একটা মহাপরীক্ষা ছিল। আবার সম্ভাবনা এও রয়েছে যে, অর্থ দুটোই হবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। যেমন আল্লাহ তাআলার বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আমি তাদেরকে ভাল ও মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা ফিরে আসে ।” ( ৭:১৬৮ ) মহান আল্লাহর উক্তিঃ ( আরবি ) “ যখন তোমাদের প্রতিপালক । তোমাদেরকে অবহিত করলেন। আবার এরূপ অর্থও হতে পারেঃ ‘যখন তোমাদের প্রতিপালক তার মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিরাটত্বে কসম খেলেন। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎঃ “ যখন তোমার প্রতিপালক শপথ করে বললেন যে, অবশ্যই তিনি তাদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত পাঠাতে থাকবেন ।” ( ৭:১৬৭ )সুতরাং আল্লাহ তাআলার অলংঘনীয় ওয়াদা এবং তাঁর ঘোষণাও বটে যে, তিনি কৃতজ্ঞ বান্দাদের নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দিবেন এবং অকৃতজ্ঞ ও নিয়ামত অস্বীকারকারী ও গোপনকারীদের নিয়ামত সমূহ ছিনিয়ে নিবেন, আর তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। হাদীসে এসেছেঃ “ বান্দা পাপের কারণে আল্লাহর রুজী থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে ।” বর্ণিত আছে যে, একজন ভিক্ষুক রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তিনি তাকে একটি খেজুর দেন। সে তাতে রাগান্বিত হয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর অন্য একজন ভিক্ষুক তাঁর পার্শ্ব দিয়ে গেলে তিনি তাকেও একটি খেজুর দেন। সে খুশী হয়ে তা গ্রহণ করে এবং বলেঃ “ এটা হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের ( সঃ ) দানা” এরপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে চল্লিশ দিরহাম প্রদানের হুকুম দেন ।অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দাসীকে বলেনঃ “ লোকটিকে উম্মে সালমার ( রাঃ ) নিকট নিয়ে যাও এবং তার কাছে যে । চল্লিশটি দিরহাম রয়েছে তা নিয়ে একে দিয়ে দাও।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন)হযরত মূসা ( আঃ ) বানী ইসরাঈলকে বলেনঃ “ তোমরা ভূ-পৃষ্ঠের সমস্ত লোকও যদি আল্লাহ তাআলার অকৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাও তবে তাঁর কি ক্ষতি হবে? তিনি তো তাঁর বান্দাদের হতে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হতে সম্পূর্ণরূপে বেপরোয়া । তিনি তাদের মোটেই মুখাপেক্ষী নন। একমাত্র তিনিই প্রশংসার যোগ্য। যেমন তিনি বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ তোমরা যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে ( জেনে রেখো যে, আল্লাহ । তোমাদের হতে বেপরোয়া।” (৩৯:৭ ) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ তারা অকৃতজ্ঞ হলো এবং মুখ ফিরিয়ে নিলো, আর আল্লাহ তাদের থেকে বেপরোয়া হয়ে গেলেন, আল্লাহ হলেন অভাবমুক্ত, প্রশংসাৰ্য ।” ( ৬৪:৬ )হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আল্লাহ। তাআলার উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেঃ “ হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম এবং শেষ মানব ও দানব সবাই মিলিতভাবে পরহেযগারহয়ে যায় তবুও আমার রাজ্যের একটুও বৃদ্ধি পাবে না । পক্ষান্তরে হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানব এবং দানব সবাই যদি পাপিষ্ঠ হয়ে যায় তবুও এই কারণে আমার রাজ্য অনুপরিমাণ ও হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রথম এবং শেষ মানব ও দানব সবাই যদি একত্রিত ভাবে একটা ময়দানে দাঁড়িয়ে যায়, অতঃপর আমার কাছে চাইতে থাকে, আর আমি প্রত্যেকের চাহিদা পূর্ণ করে দিই তবুও আমার ভাণ্ডার হতে এই পরিমাণ কমবে যে পরিমাণ পানি সমুদ্র হতে কমে যায় যখন তাতে সুঁই ডুবিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) সুতরাং আল্লাহ তাআলা পবিত্র অভাব মুক্ত এবং প্রশংসাৰ্হ।
সূরা ইবরাহীম আয়াত 8 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- ভয় কর তাঁকে, যিনি তোমাদেরকে সেসব বস্তু দিয়েছেন, যা তোমরা জান।
- নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল।
- আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না
- এবং যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের ডাকে, ওরা তো কোন বস্তুই সৃষ্টি করে না; বরং ওরা
- আর যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি এ ভুখন্ডের পূর্ব ও
- নিশ্চয় এই মহা সাফল্য।
- বলূনঃ হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী।
- আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিস্প্রভ করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের
- যে কেউ দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করবে, তার জেনে রাখা প্রয়োজন যে, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ
- আর যদি সে ডান পার্শ্বস্থদের একজন হয়,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ইবরাহীম ডাউনলোড করুন:
সূরা Ibrahim mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ibrahim শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers