কোরান সূরা তাহরীম আয়াত 8 তাফসীর
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ ۖ نُورُهُمْ يَسْعَىٰ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
[ التحريم: 8]
মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটোছুটি করবে। তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান। [সূরা তাহরীম: 8]
Surah At-Tahreem in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Tahrim ayat 8
ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্র দিকে ফেরো বিশুদ্ধ ফেরায়, হতে পারে তোমাদের প্রভু তোমাদের থেকে তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি; সেই দিন আল্লাহ্ অপদস্থ করবেন না নবীকে এবং যারা তাঁর সঙ্গে ঈমান এনেছে তাদের, তাদের রোশনি তাদের সামনে চলবে আর তাদের ডানপাশে, তারা বলবে -- ''আমাদের প্রভু! আমাদের জন্য আমাদের রোশনি পরিপূর্ণ করো, আর আমাদের পরিত্রাণ করো। নিঃসন্দেহ তুমি সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৮. হে মু’মিন সম্প্রদায়! তোমরা যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী আমল করে থাকো! তোমরা নিজেদের পাপসমূহ থেকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর নিকট তাওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং এমন সব উদ্যানে প্রবিষ্ট করবেন যেগুলোর অট্টালিকার তলদেশ দিয়ে কিয়ামত দিবসে নদী-নালা প্রবাহিত হবে। যে দিন আল্লাহ তাঁর নবী ও মুমিনদেরকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করার মাধ্যমে তাঁদেরকে অপমান করবেন না। পুলসিরাতে তাঁদের সামনে ও ডানে নিজেদের জ্যোতি দৌড়াতে থাকবে। তাঁরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের জ্যোতিগুলোকে পরিপূর্ণতা দিন। যাতে করে আমরা সেগুলোর আলোকে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। ফলে আমরা যেন ওই সব মুনাফিকের মতো না হই যাদের জ্যোতি পুলসিরাতের উপর নিভে যাবে। আর আপনি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। অতএব, আপনি আমাদের জ্যোতি পরিপূর্ণ করতে ও আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করতে অপারগ নন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।[১] সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী দাসদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও ডান পার্শ্বে বিচ্ছুরিত হবে, তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর[২] এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।’ [১] বিশুদ্ধ বা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবা হল, ( ক ) তওবা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে। ( খ ) যে গুনাহ হতে তওবা করা হচ্ছে, তা সত্বর ত্যাগ করতে হবে। ( গ ) এই গুনাহ করে ফেলার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ( ঘ ) আগামীতে এই গুনাহ 'আর করব না' বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। ( ঙ ) যদি এই গুনাহের সম্পর্ক কোন বান্দার অধিকারের সাথে হয়, তবে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। পক্ষান্তরে কেবল মৌখিক তওবা করার কোন অর্থ হয় না।[২] এই দু'আ মু'মিনরা তখন করবে, যখন মুনাফিকদের জ্যোতি কেড়ে নেওয়া হবে এবং তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসবে। এর আলোচনা সূরা হাদীদ ৫৭:১২ নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। মু'মিনরা তখন বলবে, জান্নাতে প্রবেশ করা অবধি আমাদের এই জ্যোতিকে অবশিষ্ট রাখ এবং তাতে পূর্ণতা দান কর।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কার---বিশুদ্ধ তাওবা [ ১ ]; সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না নবীকে এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আমাদের নূরকে পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।'
[ ১ ] তাওবার শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গোনাহ থেকে ফিরে আসা। কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা। আয়াতে বর্ণিত نصوح শব্দটির বিভিন্ন অর্থ হয়ে থাকে। এক.
যদি نصحة থেকে উদ্ভূত ধরা হয়, তবে এর অর্থ খাঁটি করা। আর যদি نصاحة থেকে উদ্ভূত ধরা হয়, তবে এর অর্থ বস্ত্র সেলাই করা ও তালি দেয়া। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে "তাওবাতুন নাসূহ" এর অর্থ এমন তাওবা, যা রিয়া ও নাম-যশ থেকে খাঁটি-কেবল আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন ও আযাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গোনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গোনাহ পরিত্যাগ করা। দ্বিতীয় অর্থের দিক দিয়ে "তাওবাতুন নাসূহ" শব্দটি এই উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার জন্যে হবে যে, গোনাহের কারণে সৎকর্মের ছিন্নবস্ত্রে তাওবা তালি সংযুক্ত করে। কোন কোন তাফসীরবিদ বলেনঃ “ তাওবাতুন নাসূহ" হল মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, অন্তরে অনুশোচনা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ভবিষ্যতে সেই গোনাহ থেকে দূরে রাখা । [ দেখুন-কুরতুবী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৬-৮ নং আয়াতের তাফসীর হযরত আলী ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবি )-এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তোমরা তোমাদের পরিবারের লোকদেরকে ইলম ও আদব শিক্ষা দাও। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ তোমরা আল্লাহর আদেশ মেনে চল এবং অবাধ্যাচরণ করো না। পরিবারের লোকদেরকে আল্লাহর যিকরের তাগীদ কর, যাতে আল্লাহ তোমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করেন।মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরিবারের লোকদেরকেও ভয় করতে বল। কাতাদাহ ( রঃ ) বলেন যে, অর্থ হলোঃ তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের হুকুম কর এবং অবাধ্যাচরণ হতে নিষেধ কর। তাদের উপর আল্লাহর হুকুম কায়েম রাখো এবং তাদেরকে আল্লাহর আহকাম পালন করার তাগীদ করতে থাকো। সৎ কাজে তাদেরকে সাহায্য কর এবং অসৎ কাজে তাদেরকে শাসন-গর্জন কর।মুকাতিল ( রঃ ) বলেনঃ প্রত্যেক মুসলমানের উপর নিজের পরিবারভুক্ত লোকদেরকে এবং দাস-দাসীদেরকে আল্লাহর হুকুম পালন করার ও তাঁর নাফরমানী হতে বিরত থাকার শিক্ষা ও উপদেশ দান করতে থাকা ফরয।আবদুল মালিক ইবনে রাবী' ইবনে সিববাহ ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে নামাযের হুকুম কর যখন তাদের বয়স সাত বছর হয় । আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পদার্পণ করে তখন তাদেরকে নামাযে অবহেলার কারণে প্রহার কর।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম আবূ দাউদ ( রঃ ) ও ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)ফকীহদের ফরমান এই যে, অনুরূপভাবে শিশুদেরকে এই বয়স হতেই রোযার জন্যেও তাগীদ করা উচিত। যাতে প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছা পর্যন্ত তারা নামায রোযায় পূর্ণমাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যাতে তাদের মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্য করার এবং তাঁদের নাফরমানী হতে বিরত থাকার অভ্যাস পয়দা হয়। মুমিনরা এ কাজ করলে তারাও তাদের পরিবার পরিজন জাহান্নামের অগ্নি হতে রক্ষা পাবে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর। এদের দ্বারা অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে। তাহলে আগুন কত কঠিন তেজ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।প্রস্তর দ্বারা হয়তো ঐ প্রস্তর উদ্দেশ্য হতে পারে দুনিয়ায় যেগুলোর পূজা করা হয়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ নিশ্চয়ই তোমরা এবং তোমাদের মা'বূদরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে ।”( ২১:৯৮ ) হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), আবূ জা’ফর আল বাকির ( রঃ ) এবং সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, ওটা হবে গন্ধকের পাথর যা হবে অত্যন্ত দুর্গন্ধময়। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ( আরবি )-এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। ঐ সময় তাঁর খিদমতে কয়েকজন সাহাবী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ লোক জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! জাহান্নামের পাথরটি দুনিয়ার পাথরের মত?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “যাঁর অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! জাহান্নামের একটি পাথর দুনিয়ার সমস্ত পাথর হতে বড় ।” একথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি অচৈতন্য হয়ে পড়লেন। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর বক্ষে হাত রেখে বুঝতে পারলেন যে, তিনি জীবিত আছেন। সুতরাং তিনি তাঁকে ডাক দিয়ে বললেনঃ “ হে বৃদ্ধ! বলঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ।” বৃদ্ধ তা পাঠ করলেন। তারপর তিনি ঐ বৃদ্ধ লোকটিকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলেন। সাহাবীগণ তখন বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাদের মধ্য হতে শুধু তাঁকেই এ সুসংবাদ দান করলেন?” তিনি উত্তরে বললেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ওটা ঐ ব্যক্তির জন্যে, যে আমার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং ভয় করে আমার শাস্তিকে ।” ( ১৪:১৪ )।এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ এতে ( এই শাস্তি দেয়ার কাজে ) নিয়োজিত রয়েছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ। অর্থাৎ তাদের স্বভাব বা প্রকৃতি কঠোর। কাফেরদের জন্যে তাদের অন্তরে কোন করুণা রাখা হয়নি। তারা নিকৃষ্ট পন্থায় কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকে। তাদেরকে দেখা মাত্রই অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। হযরত ইকরামা ( রঃ ) বলেন যে, জাহান্নামীদের প্রথম দলটি যখন জাহান্নামের দিকে এগিয়ে চলবে তখন দেখবে যে, দরজার উপর চার লক্ষ ফেরেশতা শাস্তি দেয়ার জন্যে প্রস্তুত রয়েছেন, যাঁদের চেহারা অত্যন্ত ভয়াবহ, রঙ অত্যন্ত কালে। দাঁতগুলো বাইরের দিকে বেরিয়ে আছে। তাঁরা অত্যন্ত নির্দয় ও কঠোর হৃদয়। তাঁদের অন্তরে অণুপরিমাণও দয়া রাখা হয়নি। তাঁরা এতো মোটা ও চওড়া যে, যদি পাখী তাদের এক স্কন্ধ হতে উড়তে শুরু করে তবে অন্য স্কন্ধে পৌঁছতে তার দুই মাস সময় লাগবে। তারপর তারা ( জাহান্নামীরা ) দ্বিতীয় দরজার উপর ঊনিশ জন ফেরেশতা দেখতে পাবে, যাদের বক্ষ এতো প্রশস্ত যে, তা সত্তর বছরের পথ। অতঃপর তাদেরকে এক দরজা হতে অন্য দরজার দিকে ধাক্কা দেয়া হবে। পাঁচ শত বছর পড়তে থাকার পর অন্য দরজার কাছে তারা তা দেখতে পাবে। এই ভাবে প্রতিটি দরজার উপর এই ফেরেশতামণ্ডলী আল্লাহ তা'আলার আজ্ঞাধীন রয়েছেন। একদিকে আদেশ এবং অন্যদিকে তা প্রতিপালন। তাঁদেরকে যাবানিয়্যাহ বলা হয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাঁদের হাত হতে মুক্তি দান করুন! এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে কাফিরগণ! আজ তোমরা দোষ স্খালনের চেষ্টা করো না। তোমরা যা করতে তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে বলা হবেঃ আজকে তোমরা কোন ওযর পেশ করো না, কারণ আজ তোমাদের কোন ওযর কবূল করা হবে না। তোমাদেরকে আজকে তোমাদের কৃতকর্মেরই শুধু প্রতিফল দেয়া হবে।অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, বিশুদ্ধ তাওবা। অর্থাৎ সত্য ও খাঁটি তাওবা কর যার ফলে তোমাদের পূর্ববর্তী পাপরাশি মার্জনা করা হবে। আর তোমাদের মন্দ স্বভাব দূর হয়ে যাবে। হযরত নুমান ইবনে বাশীর ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ )-কে খুৎবায় বলতে শুনেনঃ “ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট এমন বিশুদ্ধ তাওবা কর যে, তোমার দ্বারা ঐ পাপকার্যের আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না ।” ( এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য রিওয়াইয়াতে রয়েছেঃ “ অতঃপর ঐ পাপকার্য করার ইচ্ছাও করবে না ।" হযরত আবদুল্লাহ ( রাঃ ) হতেও প্রায় এরূপই বর্ণিত আছে। একটি মারফূ’ হাদীসে এরূপই এসেছে যা দুর্বল এবং সঠিক কথা এটাই যে, এ হাদীসটিও মাওকুফ। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।পূর্বযুগীয় আলেমগণ বলেনঃ খাঁটি ও বিশুদ্ধ তাওবা এই যে, গুনাহ হয়ে যাওয়ার পরই তাওবা করবে ও লজ্জিত হবে এবং আগামীতে ঐ পাপকার্য আর না করার দৃঢ় সংকল্প করবে। আর যদি গুনাহতে কারো হক থাকে তবে চতুর্থ শর্ত এই যে, ঐ হক নিয়মিতভাবে আদায় করবে।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলতে শুনেছেনঃ “ লজ্জিত হওয়াও হলো তাওবা করা ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) বলেনঃ “ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় এই উম্মতের শেষের লোকেরা কি কাজ করবে তা আমাদেরকে বলে দেয়া হয়েছে । একটি এই যে, মানুষ তার স্ত্রী বা দাসীর গৃহ্যদ্বারে সঙ্গম করবে। অথচ এটা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল হারাম করেছেন। আর এ কাজে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ( সঃ ) অসন্তুষ্ট হন। অনুরূপভাবে পুরুষের সাথে পুরুষ কুকাজে লিপ্ত হবে। যা হারাম এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর অসন্তুষ্টির কারণ। এ লোকদের নামাযও আল্লাহর নিকট কবূল হয় না। যে পর্যন্ত না তারা তাওবা করে বিশুদ্ধ তাওবা।" তখন হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “ বিশুদ্ধ তাওবা কি?" উত্তরে তিনি বললেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এই প্রশ্নই করেছিলাম । তিনি জবাবে বলেছিলেনঃ “ ভুলক্রমে গুনাহ হয়ে গেছে, অতঃপর ওর উপর লজ্জিত হওয়া, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারপর ঐ গুনাহর দিকে আর ঝুঁকে না পড়া ।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হাসান ( রঃ ) বলেনঃ বিশুদ্ধ তাওবা হলো এই যে, যেমন গুনাহর প্রতি ভালবাসা ও আকর্ষণ ছিল ঐ রকমই ওর প্রতি অন্তরে ঘৃণা জন্মে যাওয়া। যখন ঐ গুনাহর কথা স্মরণ হয় তখন ক্ষমা প্রার্থনা করা। যখন কোন বান্দা তাওবা করার জন্যে দঢ় সংকল্প করে নেয় এবং তাওবার উপর অটল থাকে তখন আল্লাহ তা'আলা তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।সহীহ্ হাদীসে এসেছে যে, ইসলাম গ্রহণের পর ইসলাম-পূর্ব যুগের সমস্ত গুনাহ্ ইসলাম মিটিয়ে দেয়। এখন থাকলো এই কথা যে, বিশুদ্ধ তাওবায় শর্ত হলো, তাওবাকারী মৃত্যু পর্যন্ত আর ঐ গুনাহর কাজ কখনো করবে না। যেমন হাদীস ও আসার এখনই বর্ণিত হলো যে, আর কখনো ঐ পাপের কাজে হাত দিবে না। অথবা শুধু এই দৃঢ় সংকল্প যথেষ্ট হবে যে, ঐ পাপকার্য আর কখনো করবে না, তারপর হয় তো মানবিক চাহিদা হিসেবে আবার পদস্খলন ঘটে যাবে। যেমন এখনই হাদীস গত হলো যে, তাওবা পূর্বের সমস্ত গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। তাহলে শুধু কি তাওবার দ্বারাই গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে, না মৃত্যু পর্যন্ত ঐ গুনাহর কাজ আর না করা শর্ত? প্রথমটির দলীল তো এই সহীহ্ হাদীসটি যে, যে ব্যক্তি ইসলামে সৎ কাজ করবে, সে তার অজ্ঞতার যুগের অসৎ কাজের কারণে গ্রেফতার হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পরেও অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়বে তাকে তার ইসলাম ও জাহেলিয়াত উভয় যুগের অসৎ কাজের জন্যে পাকড়াও করা হবে। সুতরাং ইসলাম, যা পাপরাশিকে দূর করে দেয়ার ব্যাপারে তাওবার অপেক্ষাও অগ্রগণ্য, এর পরেও যখন তার অসত্ত্বার্যের কারণে পাকড়াও করা হচ্ছে, তখন তাওবার পরেও অসৎ কাজ পুনরায় করলে তো আরো বেশী তাকে পাকড়াও করা উচিত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ আল্লাহ নবী ( সঃ ) ও তার মুমিন সঙ্গীদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদেরকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে যে জ্যোতি দান করা হবে তা তাদের সামনে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। আর অন্যেরা সবাই অন্ধকারের মধ্যে থাকবে। যেমন ইতিপূর্বে এটা সূরায়ে হাদীদের তাফসীরে গত হয়েছে। যখন মুমিনগণ দেখবে যে, মুনাফিকরা যে জ্যোতি লাভ করেছিল, ঠিক প্রয়োজনের সময় তা তাদের হতে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে এবং তারা অন্ধকারের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে, তখন তারা ( মুমিনরা ) দুআ করবেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জ্যোতিতে আপনি পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদেরকে রক্ষা করুন! আপনি তো সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।বানু কিনানাহ্ গোত্রের একজন লোক বলেনঃ “ মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পিছনে নামায পড়েছিলাম । আমি তাঁকে দু’আয় বলতে শুনেছিলামঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন আপনি আমাকে অপদস্ত করবেন না ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবূ যার ( রাঃ ) ও হযরত আবূ দারদা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমাকে সিজদার অনুমতি দেয়া হবে । অনুরূপভাবে সর্বপ্রথম আমাকেই সিজদা হতে মস্তক উত্তোলনেরও অনুমতি দেয়া হবে। আমি আমার সামনে এবং ডানে ও বামে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার উম্মতকে চিনে নিবো।” একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তাদেরকে আপনি কি করে চিনতে পারবেন? বহু উম্মত তো মিশ্রিতভাবে থাকবে?" উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “আমার উম্মতের লোকদের একটি চিহ্ন তো এই যে, তাদের অযুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল হবে ও চমকিতে থাকবে । অন্য কোন উম্মতের লোকদের এরূপ হবে না। দ্বিতীয় পরিচয় এই যে, তাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে থাকবে। তৃতীয় নিদর্শন এই যে, তাদের ললাটে সিজদার চিহ্ন থাকবে। চতুর্থ চিহ্ন এই যে, তাদের জ্যোতি তাদের আগে আগে থাকবে।” ( এ হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনে নাসরুল মুরূযী (রঃ ) বর্ণনা করেছন)
সূরা তাহরীম আয়াত 8 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল
- তখন আমি অবশ্যই আপনাকে ইহজীবনে ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তির আস্বাদন করাতাম। এ সময় আপনি আমার
- অতএব আপনি কিছুকালের জন্যে তাদেরকে উপেক্ষা করুন।
- এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে।
- আমিই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী হব পৃথিবীর এবং তার উপর যারা আছে তাদের এবং আমারই কাছে
- এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
- তারা তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, যে আল্লাহ সব
- আমি কি তাকে দেইনি চক্ষুদ্বয়,
- আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন এক দল রয়েছে যারা সত্য পথ দেখায়
- নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে বক্রতা অবলম্বন করে, তারা আমার কাছে গোপন নয়। যে ব্যক্তি
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা তাহরীম ডাউনলোড করুন:
সূরা Tahrim mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Tahrim শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers