কোরান সূরা আনফাল আয়াত 8 তাফসীর
﴿لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ﴾
[ الأنفال: 8]
যাতে করে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে দেন, যদিও পাপীরা অসন্তুষ্ট হয়। [সূরা আনফাল: 8]
Surah Al-Anfal in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anfal ayat 8
যেন তিনি সত্যকে সত্য প্রতিপন্ন করেন ও মিথ্যাকে বাতিল করে দেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৮. আল্লাহ তা‘আলা তা এ জন্যই করেছেন যেন তিনি ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে কিছু প্রমাণ দাঁড় করিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে জনসমক্ষে প্রকাশ করে সত্যের জয় ও মিথ্যার পরাজয়কে নিশ্চিত ও প্রমাণিত করতে পারেন। যদিও মুশরিকরা এমনটি চাচ্ছে না তবুও আল্লাহ তা‘আলা তা অবশ্যই প্রকাশ করবেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যাতে তিনি সত্যকে সত্যরূপে ও অসত্যকে অসত্যরূপে প্রতিপন্ন করেন, যদিও অপরাধিগণ তা অপছন্দ করে।[১] [১] কিন্তু আল্লাহ এর বিপরীত চাচ্ছিলেন যে, তোমাদের মুকাবিলা কুরাইশ সেনাদের সাথে হোক, যাতে কুফরের শক্তি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাক; যদিও এটি মুশরিকদের নিকট ছিল অপছন্দনীয়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
এটা এ জন্যে যে,তিনি সত্যকে সত্য ও বাতিলকে বাতিল প্রতিপন্ন করেন, যদিও অপরাধীরা এটা পছন্দ করে না।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৫-৮ নং আয়াতের তাফসীর: ( আরবী ) -এর মধ্যে ( আরবী ) শব্দটি আনার কারণ কি এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা পরহেজগারী ও রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্যের ব্যাপারে মুমিনদের পারস্পরিক সন্ধি স্থাপনের সাথে সাদৃশ্য প্রতিপাদন করা হয়েছে। সুতরাং কথার ধরন হচ্ছে- যেমন তোমরা গনীমতের। মালের ব্যাপারে মতভেদ করেছিলে এবং তোমাদের মধ্যে বিবাদের সূচনা হয়েছিল, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিয়েছিলেন এবং ঐ মাল বন্টনের হক তোমাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে স্বীয় রাসূল ( সঃ )-কে প্রদান করেছিলেন, আর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তোমাদের মধ্যে ওটা ইনসাফ ও সমতার সাথে বন্টন করে দিয়েছিলেন, এ সবগুলোই ছিল তোমাদের পূর্ণ কল্যাণের নিমিত্ত। দ্রুপ এই স্থলে যখন তোমাদেরকে শত্রুদের সাথে মুকাবিলার জন্যে মদীনা থেকে বের হতে হয়েছিল তখন সেই শান শওকত বিশিষ্ট বিরাট সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়া তোমাদের জন্যে অপছন্দনীয় ছিল অর্থাৎ তাদের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হতে তোমাদের মন চাচ্ছিল না। এই বিরাট সেনাবাহিনী ওরাই ছিল যারা তাদের স্বধর্মীয় কাফিরদের ব্যবসায়ের মাল হিফাযত করার জন্যে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, যে কাফিররা ব্যবসা। উপলক্ষে সিরিয়া গমন করেছিল। এই যুদ্ধকে অপছন্দ করার ফল এই দাঁড়ালো যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে তোমাদেরকে বাধ্য করলেন এবং পরিণামে তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করলেন, আর তোমাদেরকে সাহায্য করতঃ তাদের উপর জয়যুক্ত করলেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হচ্ছে, আর এটা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় । অথচ যা তোমরা অপছন্দ কর, খুব সম্ভব তাতেই তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। পক্ষান্তরে তোমরা কোন কাজকে পছন্দ কর, অথচ হয়তো তাতেই তোমাদের অমঙ্গল নিহিত আছে। কোনটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর তা আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। কেউ কেউ এই সাদৃশ্য প্রতিপাদনের অর্থ বলেছেনযেমনভাবে তোমাদের প্রভু সত্যরূপে তোমাদেরকে মদীনার বাইরে আসায় সফলকাম করেছেন, অথচ কোন কোন মুমিন এই বের হওয়াতে অসম্মত ছিল, কিন্তু তাদেরকে বের হতেই হয়, অনুরূপভাবে তারা যুদ্ধ থেকে দূরে থাকতে চায় এবং তোমাদের সাথে মতবিরোধ করে, অথচ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মতের সত্যতা তাদের উপর প্রকাশিতই ছিল। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেযেমনভাবে তোমরা বাধ্য হয়ে মদীনা হতে বের হয়েছে, তেমনিভাবে সত্যের বিষয়ে রাসূল ( সঃ )-এর সাথে ঝগড়া করছে। সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, এ আয়াতটি বদরের যুদ্ধে বের হওয়ার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। ( আরবী ) সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে নবী ( সঃ )! এই মুমিনরা তোমার সাথে ঝগড়া করার নিয়তে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপন করছে, যেমনভাবে বদর দিবসেও তারা তোমার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছিল এবং বলেছিলঃ “ আপনি তো আমাদেরকে যাত্রীদলের পথরোধ করার জন্যে বের করেছিলেন । আমাদের ধারণাও ছিল না যে, আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে এবং আমরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেও বাড়ী থেকে বের হইনি।” আমি বলি যে, নবী ( সঃ ) আবু সুফিয়ানের যাত্রীদলের পথরোধ করার জন্যেই মদীনা থেকে বের হয়েছিলেন। কেননা, তার জানা ছিল যে, এই যাত্রীদল কুরায়েশের জন্যে প্রচুর মাল সম্ভার নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কার পথে ফিরে আসছিল। সুতরাং তিনি মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করেন এবং তিনশ’ দশের কিছু অধিক লোক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তিনি বদর কূপের পথে উপকূলের দিকে রওয়ানা হন। ঐ যাত্রীদলের নেতা আবু সুফিয়ান ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর এই উদ্দেশ্যের সংবাদ পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যমযম ইবনে আমরকে মক্কা পাঠিয়ে মক্কাবাসীকে মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে দেন। কাজেই মক্কাবাসীরা এক হাজার লোক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আবু সুফিয়ান ( রাঃ ) যাত্রীদলকে নিয়ে সাইফুল বাহারের দিক দিয়ে আসছিলেন। সুতরাং সেই যাত্রীদল মুসলমানদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। এখন মক্কার ঐ এক হাজার সৈন্য সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা বদর কূপের নিকটে এসে শিবির স্থাপন করে। এখন পূর্বের কোন দিন তারিখ ঘোষণা ছাড়াই মুসলমান ও কাফির সৈন্যদল পরস্পর যুদ্ধের সম্মুখীন হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রাধান্য বিস্তার করতে চেয়েছিলেন এবং হক ও বাতিলের মধ্যে ফায়সালাকারী যুদ্ধ ঘটিয়ে দেয়ার তার ইচ্ছা ছিল। যেমন এর বর্ণনা শীঘ্রই আসছে। মোটকথা, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন এ সংবাদ অবহিত হন যে, মক্কা থেকে এক বিরাট সেনাবাহিনী তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে এগিয়ে আসছে তখন আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছে অহী পাঠালেনঃ “ দুটোর মধ্যে একটা জিনিস তোমরা লাভ করবে । হয় তোমরা যাত্রীদলের মাল লুটে নিবে, না হয় ঐ সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবে। দুটোই লাভ করতে পারবে না। সুতরাং যে কোন একটি গ্রহণ করে সফলকাম হয়ে যাও।” মুসলমানদের অধিকাংশের মত ছিল এই যে, তাঁরা যাত্রীদলকে আক্রমণ করবেন এবং বিনা যুদ্ধেই প্রচুর মাল তাঁদের হাতে এসে যাবে। যার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেনঃ “ স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ তোমাদের কাছে অঙ্গীকার করেন- দু'দলের এক দল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে । কিন্তু নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তাধীন হওয়া তোমরা পছন্দ করছিলে, আর আল্লাহ চাচ্ছিলেন তাঁর বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কাফিরদের মূল শিকড়কে ( মূলশক্তিকে ) কেটে দিতে।”হযরত আবু আইয়ুব আনসারী ( রাঃ ) বলেনঃ আমরা মদীনায় ছিলাম এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেন- “ আমি সংবাদ পেয়েছি যে, আবু সুফিয়ান ( রাঃ ) যাত্রীদল নিয়ে আসতে রয়েছে । তোমাদের মত কি? আমরা কি এই যাত্রীদলের পথরোধ করার জন্যে বেরিয়ে পড়বো? সম্ভবতঃ এতে তোমরা বহু কিছু মালধন লাভ করতে পারবে?” আমরা আরয করলাম, আমরা অবশ্যই বের হতে চাই। সুতরাং আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমরা দু'একদিন চলতে থাকলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ “ আচ্ছা বল তো, এসব কাফিরের সাথে যুদ্ধ করা সম্পর্কে তোমাদের মতামত কি? তারা সংবাদ পেয়ে গেছে যে, তোমরা যাত্রীদলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছো!” মুসলমানরা উত্তরে বললোঃ “আল্লাহর কসম! শত্রুদের এতো বড় সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই । আমরা তো শুধু যাত্রীদলের মালধন লুটবার জন্যে বের হয়েছি।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দ্বিতীয়বার এ প্রশ্নই করেন। আমরা এবারও এ উত্তরই দিলাম। তখন হযরত মিকদাদ ইবনে আমর ( রাঃ ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমরা এ স্থলে এমন কথা বলবো না যেমন কথা হযরত মূসা ( আঃ )-কে তাঁর উম্মতরা বলেছিল। তারা তাকে বলেছিল, “ হে মূসা ( আঃ )! আপনি ও আপনার প্রভু যান এবং শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকছি ।” আমরা আনসার দল আশা পোষণ করলাম এবং বললামঃ হযরত মিকদাদ ( রাঃ ) যে কথা বললেন, আমরাও যদি ঐ কথাই বলতাম তবে এই যাত্রীদলের প্রচুর মাল লুট করা অপেক্ষা ওটাই আমাদের জন্যে অধিক পছন্দনীয় হতো! তখন ( আরবী )-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।” ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীদেরকে নিয়ে বদর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন এবং রাওহা নামক স্থানে পৌছে লোকদের সামনে ভাষণ দান করেন। তিনি বলেনঃ “ তোমাদের মত কি?” তখন হযরত আবু বকর ( রাঃ ) উত্তরে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমরা সংবাদ পেয়েছি যে, কাফিররা এই এই স্থান পর্যন্ত পৌছে গেছে ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পুনরায় বলেনঃ “ তোমাদের মত কি?” এবার হযরত উমার ( রাঃ ) হযরত আবূ বকর ( রাঃ )-এর মতই জবাব দেন । রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তৃতীয়বার এই প্রশ্ন করেন। তখন হযরত সা'দ ইবনে মুআয ( রাঃ ) বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি আমাদেরকে লক্ষ্য করেই বলছেন! তাহলে শুনুন! যিনি আপনাকে মর্যাদা দান করেছেন এবং আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাঁর শপথ! আমরা না কখনও বারকুল গামাদ’ গিয়েছি, না ওর পথ আমাদের জানা আছে । কিন্তু তবুও যদি আপনি ইমায়ন থেকে হাবশের ( আবিসিনিয়ার ) বারকুল গামাদ পর্যন্তও গমন করেন তবে আমরাও আপনার সাথে গমন করবো এবং মূসা ( আঃ )-এর উম্মতের মত বলবো নাঃ আপনি ও আপনার প্রভু যান ও যুদ্ধ করেন, আমরা এখানেই বসে থাকছি। হয়তো আপনি বের হবার সময় একটা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বের হচ্ছেন, অতঃপর আল্লাহ অন্য অবস্থার সৃষ্টি করছেন। তখন আপনি যেটা ইচ্ছা সেটাই গ্রহণ করুন। যে আপনার সাথে থাকতে চায় থাকবে, যে সরে পড়তে চায় সে সরে পড়বে। যে আপনার বিরোধিতা করতে চায় সে বিরোধিতা করুক এবং যে সন্ধি করতে চায় সে সন্ধি করুক। আমাদের যা কিছু মাল রয়েছে তা আপনি নিয়ে নিতে পারেন।” হযরত সা’দ ( রাঃ )-এর এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই ( আরবী )-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। ( এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আলকামা ইবনে আবি অক্কালসি লাইসীর ( রঃ ) হাদীস হতে তাখরীজ করেছেন। আবু লাইস ( রঃ ) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, নবী ( সঃ ) বদর যুদ্ধের ব্যাপারে পরামর্শ করেন, তারপর কুরায়েশের সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন, তখন এই যুদ্ধ মুসলমানদের কাছে অপছন্দনীয় মনে হয়েছিল। এ জন্যেই ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল। অর্থাৎ “ মুমিনদের একদল একে পছন্দ করতে পারেনি । তাদের কাছে এটা খুবই দুঃসহ ছিল। সত্য সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ হওয়ার পর তারা তোমার সাথে তর্ক করছিল। তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে এবং তারা তা প্রত্যক্ষ করছে।” মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) দ্বারা ( আরবী ) বুঝানো হয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা অপছন্দীয় হওয়া। সুন্দী ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) -এর ভাবার্থ হচ্ছে- তোমরা আল্লাহর হুকুম ব্যতিরেকে আর কোন কিছুকেই অগ্রাধিকার দেবে না এটা প্রকাশিত হয়ে যাবার পরেও আল্লাহর রাসূল ( সঃ )-এর মতের বিরোধিতা করছো! ইবনে যায়েদ ( রঃ ) ( আরবী )-এর সম্পর্কে বলেন যে, এর দ্বারা। মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এই মুশরিকরা সত্যের ব্যাপারে তর্ক করছে, যেন তাদেরকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হচ্ছে। কারণ এই যে, মুমিনরা এরূপ নিন্দনীয় বিশেষণে ভূষিত হতে পারে না। এই বিশেষণ একমাত্র কাফিরদেরই হতে পারে। ইবনে জারীর ( রঃ )-এর এই কথার উপর আপত্তি রয়েছে। তাঁর মতে ইবনে যায়েদ ( রঃ )-এর এই উক্তির কোন গুরুত্ব নেই। কেননা, ( আরবী )-এই শব্দগুলোর পূর্বে ইবারতের ধারা মুমিনদের সম্পর্কেই রয়েছে। সুতরাং যে। শব্দগুলো এর পরে রয়েছে তার এরই হওয়া প্রকাশমান। সত্য ব্যাপার তো এই যে, হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর উক্তিই সঠিক। তা এই যে, এর দ্বারা মুমিনদেরকেই বুঝানো হয়েছে। ইবনে জারীর ( রঃ ) ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর এই উক্তিরই পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। এটাই সত্য এবং কালামের ধারা এরই পৃষ্ঠপোষকতা করছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন সফলতার সাথে বদর যুদ্ধ হতে অবকাশ লাভ করেন তখন তাকে বলা হয়ঃ “ এখন আপনি মালধন আনয়নকারী যাত্রীদলের উপরও আক্রমণ চালিয়ে দিন । এখন তো আর কোন বাধা নেই।” তখন যুদ্ধবন্দীদের একজন হযরত আব্বাস বলেনঃ “ এটা কখনও উচিত হবে না । কেননা, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহ পাক তো আপনার সাথে দুটোর যে কোন একটার ওয়াদা করেছেন। আর একটা তো আপনি লাভ করেছেন। সুতরাং দ্বিতীয়টি লাভ করার আর কোন অধিকার নেই।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) তাখরীজ করেছেন। ইবনে কাসীর ( রঃ ) বলেন যে, এর ইসনাদ উত্তম। সিহাহ সিত্তাহর কোনটিতেই এটা তাখরীজ করা হয়নি)( আরবী ) অর্থাৎ তোমাদের অভিপ্রায় এই ছিল যে, যেন নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তে এসে পড়ে। তাহলে কেউ প্রতিরোধ করবে না এবং যুদ্ধ করারও প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ আবু সুফিয়ানের যাত্রীদলকে লুটে নেয়া। কিন্তু আল্লাহ চাচ্ছিলেন তোমাদেরকে এমন এক দলের সাথে ভিড়িয়ে দিতে যাৱা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, যেন তিনি স্বীয় নির্দেশাবলী দ্বারা সত্যকে সত্যরূপে প্রতিপন্ন করে দেন এবং সেই কাফিরদের মূলকে কর্তন করে ফেলেন। আল্লাহ ছাড়া কাজের পরিণাম সম্পর্কে কেউই অবহিত নয়। উত্তম তদবীরের তদবীরকারী একমাত্র তিনিই, যদিও মানুষ ঐ তদবীরের বিপরীত কামনা করে। যেমন তিনি বলেনঃ “ তোমাদের উপর ফরয় করা হয়েছে আর ওটা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়, কিন্তু খুব সম্ভব তোমরা যা অপছন্দ কর ওতেই তোমাদের মঙ্গল নিহিত রয়েছে এবং তোমরা যা পছন্দ কর বা ভালবাস তাতেই তোমাদের অকল্যাণ নিহিত রয়েছে । নিম্নের হাদীসটিও বদর সম্পর্কীয় হাদীস যে, নবী ( সঃ ) যখন সিরিয়া হতে আবু সুফিয়ানের ফিরে আসার সংবাদ পেলেন তখন তিনি মুসলমানদেরকে ডেকে বললেনঃ “ কুরায়েশের এই যাত্রীদলের সাথে প্রচুর মালপত্র রয়েছে । সুতরাং তোমরা তাদেরকে আক্রমণ কর। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, আল্লাহ তা'আলা কাফিরদের গনীমতের মাল তোমাদেরকে প্রদান করবেন।” তাঁর এ কথা শুনে সাহাবীগণ রওয়ানা হয়ে গেলেন। তাঁদের কেউ কেউ হালকা অস্ত্র নিলেন এবং কেউ কেউ ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিলেন। তাঁদের এ ধারণা ছিল না যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যুদ্ধ করবেন। আবু সুফিয়ান যখন হিজাযের। নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি গুপ্তচর ছেড়ে ছিলেন এবং প্রত্যেক গমনাগমন কারীদেরকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সংবাদ জিজ্ঞেস করতে থাকলেন। অবশেষে তিনি জানতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যাত্রীদলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছেন। সুতরাং তিনি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ যমযম ইবনে আমর গিফারীকে মক্কা পাঠিয়ে দিলেন যে, সে যেন কুরায়েশদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদেরকে অবস্থা অবহিত করতঃ যাত্রীদলের হিফাযতের ব্যবস্থা করে আসে। কেননা, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যাত্রীদলকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় সাথীদেরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন এবং যাফরান’ উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছে সেখানে অবস্থান করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি সংবাদ পেলেন যে, কুরায়েশরা যাত্রীদলের হিফাযত ও মুসলমানদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করেছে। সুতরাং তিনি সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন। তখন হযরত আবু বকর ( রাঃ ) দাঁড়ালেন এবং উত্তম কথা বললেন। অতঃপর হযরত উমারও ( রাঃ ) দাঁড়িয়ে ভাল কথা বললেন। তারপর হযরত মিকদাদ ইবনে আমর ( রাঃ ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহ আপনাকে যে আদেশ করেছেন তা আপনি পালন করুন। আমরা আপনার সাথেই রয়েছি। আল্লাহর শপথ! বানী ইসরাঈল যে কথা হযরত মূসা ( আঃ )-কে বলেছিল সে কথা আমরা আপনাকে বলবো না। তারা মূসা ( আঃ )-কে বলেছিলঃ “ হে মূসা ( আঃ )! আপনি ও আপনার প্রভু গমন করুন এবং যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকছি ।” আপনি যদি আমাদেরকে হাবশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান তবে যে পর্যন্ত আপনি সেখানে না পৌছবেন সেই পর্যন্ত আমরা আপনার সাথ ছাড়বো না। হযরত মিকদাদ ( রাঃ )-এর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর কল্যাণের জন্যে দুআ করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ “ হে লোক সকল! তোমরা আমাকে পরামর্শ দান কর ।” এ কথা তিনি আনসারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। একটা কারণ তো এই যে, আনসারগণ সংখ্যায় বেশী ছিলেন। দ্বিতীয় কারণ ছিল এটাও যে, আকাবায় যখন আনসারগণ বায়আত গ্রহণ করেন তখন তারা নিম্নরূপ কথার উপর তা গ্রহণ করেছিলেনঃ “ যখন আপনি মক্কা ছেড়ে মদীনায় পৌছবেন তখন সর্বাবস্থাতেই আমরা আপনার সাথে থাকবো । অর্থাৎ যদি শত্রুরা আপনার উপর আক্রমণ চালায় তবে আমরা তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।” যেহেতু তাঁদের বায়আত গ্রহণের সময় এ কথা ছিল না যে, মুসলমানদের অগ্রগতির সময়ও তারা তাদের সাথে থাকবেন, সেই হেতু রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদেরও মত জানতে চাচ্ছিলেন, যেন তাঁদের নিকট থেকেও অঙ্গীকার নিয়ে তাঁদেরও সাহায্য সহানুভূতি লাভ করতে পারেন। হযরত সা'দ ( রাঃ ) বললেনঃ “ সম্ভবতঃ আপনি আমাদের উদ্দেশ্যেই বলছেন ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ হ্যাঁ, আমি তোমাদেরকে উদ্দেশ্য করেই বললাম ।” তখন হযরত সা'দ ( রাঃ ) বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি । আপনার আদেশ-নিষেধ মান্য করার বায়আত আমরা আপনার হাতে গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমরা কোন অবস্থাতেই আপনার হাত ছাড়বো না। আল্লাহর শপথ! আপনি যদি সমুদ্র তীরে দাড়িয়ে তাতে ঘোড়াকে নামিয়ে দেন তাহলে আমরাও সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়বো। আমাদের মধ্যে কেউই এতে মোটেই দ্বিধাবোধ করবে না। যুদ্ধে আমরা বীরত্ব প্রদর্শনকারী এবং কঠিন বিপদ আপদে সাহায্যকারী । ইনশাআল্লাহ আপনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।” এই উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অত্যন্ত খুশী হন। তৎক্ষণাৎ তিনি যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দেন এবং বলেনঃ “ আল্লাহ আমার সাথে দুটোর মধ্যে একটার ওয়াদা করেছেন এবং এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, ঐ একটি এই যুদ্ধই বটে । আমি যেন মুশরিকদের বধ্যভূমি এখান থেকেই স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।”
সূরা আনফাল আয়াত 8 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি
- তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলুল্লাহর আনুগত্য কর। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমার
- তোমাদের সামনে কি আমার আয়াত সমূহ পঠিত হত না? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে।
- তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ ব্যবসায়
- তারা সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু
- সে আবার দৃষ্টিপাত করেছে,
- আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার,
- আপনি তার চিন্তায় মশগুল।
- তিনি বললেনঃ যদি তোমরা একান্ত কিছু করতেই চাও, তবে আমার কন্যারা উপস্থিত আছে।
- যারা সবর করে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনফাল ডাউনলোড করুন:
সূরা Anfal mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anfal শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers