কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 54 তাফসীর
﴿إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ﴾
[ الأعراف: 54]
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। [সূরা আ'রাফ: 54]
Surah Al-Araf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 54
নিঃসন্দেহ তোমাদের প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ্ যিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী ছয় দিনে, তখন তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হন। তিনি দিনকে আবৃত করেন রাত্রি দিয়ে, -- যা দ্রতগতিতে তার অনুসরণ করে। আর সূর্য ও চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁর হুকুমের আজ্ঞাধীন। সৃষ্টি করা ও নির্দেশ দান কি তাঁর অধিকারভুক্ত নয়? মহিমাময় আল্লাহ্ -- বিশ্বজগতের প্রভু!
Tafsir Mokhtasar Bangla
৫৪. হে মানুস! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিনকে পূর্ব নমুনা ছাড়া ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন এমনভাবে সমুন্নত হয়েছেন যা তাঁর মহত্তে¡র সাথে মানায়। যার ধরন অনুধাবন করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। তিনি রাতের অন্ধকারকে দিনের আলো দিয়ে এবং দিনের আলোকে রাতের অন্ধকার দিয়ে দূরীভূত করেন। তাদের প্রত্যেকটি অন্যটিকে দ্রæত তালাশ করে। এতটুকুও দেরি করে না। এটি গেলেই ওটি আসে। তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা সূর্য ও চন্দ্র তৈরি করেছেন। আরো তিনি তৈরি করেছেন নক্ষত্রসমূহ যেগুলো তাঁর নির্দেশে সর্বদা প্রস্তুত ও অবনত। জেনে রাখো, সকল সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহর জন্য। তাহলে তিনি ছাড়া ্̄রষ্টা আর কে?! আদেশও একমাত্র তাঁরই। তাঁর কল্যাণ ও অবদান প্রচুর ও মহৎ। তিনিই মহত্ত¡ ও পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমÐিত সকল জগতের প্রতিপালক।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন,[১] অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।[২] তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; ওদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে।[৩] আর ( সৃষ্টি করেছেন ) সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজিকে, যা তাঁরই আজ্ঞাধীন। জেনে রাখ, সৃষ্টি করা এবং নির্দেশদান তাঁরই কাজ। তিনি মহিমময় বিশ্ব প্রতিপালক। [১] এই ছয় দিন হল, রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। জুমআর দিনেই আদম ( আঃ )-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। শনিবারের দিন সম্পর্কে বলা হয় যে, এ দিনে কোন কিছু সৃষ্টি করা হয় নি। এই জন্যই এ দিনকে يوم السبت ( শনিবারের দিন ) বলা হয়। কারণ, سبت এর অর্থ ছিন্ন করা। অর্থাৎ, এ দিনে সৃষ্টি করার কাজ ছিন্ন বা শেষ ছিল। অতঃপর এই দিনগুলোর মধ্যে কোন্ দিন বুঝানো হয়েছে? আমাদের দুনিয়ার এই দিন, যা সূর্যোদয় থেকে আরম্ভ হয়ে সূর্যাস্ত গেলে শেষ হয়ে যায়? নাকি এ দিন হাজার বছরের সমান দিন? যেভাবে আল্লাহর নিকট দিনের গণনা হয় সেই দিন, না যেভাবে কিয়ামতের দিনের ব্যাপারে আসে সেই দিন? বাহ্যতঃ দ্বিতীয় এই উক্তিই সর্বাধিক সঠিক মনে হচ্ছে। কারণ, প্রথমতঃ সে সময় চাঁদ ও সূর্যের এই নিয়মই ছিল না। আসমান ও যমীন সৃষ্টির পরই এ নিয়ম চালু হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এটা ঊর্ধ্ব জগতের ব্যাপার যার দুনিয়ার রাত-দিনের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কাজেই এই দিনের প্রকৃতার্থ মহান আল্লাহই বেশী ভাল জানেন। আমরা নিশ্চয়তার সাথে কিছু বলতে পারি না। তাছাড়া মহান আল্লাহ তো كُنْ শব্দ দ্বারা সব কিছুই সৃষ্টি করতে পারতেন, তা সত্ত্বেও তিনি প্রতিটি জিনিসকে পৃথক পৃথকভাবে পর্যায়ক্রমে বানিয়েছেন কেন? এরও যুক্তি ও কৌশলগত ব্যাপারে তিনিই সর্বাধিক জ্ঞাত। তবে কোন কোন আলেম এর একটি যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলেছেন যে, এতে মানুষকে ধীর-স্থিরতার সাথে শান্তভাবে এবং পর্যায়ক্রমে কার্যাদি সম্পাদন করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আর আল্লাহই অধিক জানেন। [২] اسْتِوَآءٌ এর অর্থ হল, উপরে ওঠা, সমাসীন হওয়া। সালাফগণ কোন ধরণ নির্ণয় ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই এই অর্থই করেছেন। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন ও অধিষ্ঠিত। তবে কিভাবে এবং কোন্ ধরনের তা আমরা না বর্ণনা করতে পারব, আর না কারো সাথে তার সাদৃশ্য স্থাপন করতে পারব। নাঈম ইবনে হাম্মাদের উক্তি হল, " যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে তুলনা করল, সে কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর নিজের ব্যাপারে বর্ণিত কোন কথাকে অস্বীকার করল, সেও কুফরী করল। " অতএব আল্লাহ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহর অথবা তাঁর রসূলের বর্ণিত কথাকে বর্ণনা করা সাদৃশ্য স্থাপন করা নয়। কাজেই আল্লাহ সম্পর্কে যে কথাগুলো কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রমাণিত, কোন অপব্যাখ্যা, ধরণ-গঠন নির্ণয় এবং সাদৃশ্য স্থাপন করা ছাড়াই তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরী। ( ইবনে কাসীর ) [৩] حَثِيْثًا এর অর্থ হল, অতি দ্রুত গতিতে। অর্থাৎ, একটির পর দ্বিতীয়টি দ্রুত চলে আসে। দিনের আলো এলে রাতের অন্ধকার সঙ্গে সঙ্গেই নিঃশেষ হয়ে যায় এবং রাত এলে দিনের আলোও নিভে যায়। ফলে দূরে ও কাছে সর্বত্র কালো অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় [ ১ ] দিনে [ ২ ] সৃষ্টি করেছেন [ ৩ ]; তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন [ ৪ ]।তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন, তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে। আর সূর্য,চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি, যা তাঁরই হুকুমের অনুগত , তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন [ ৫ ]।জেনে রাখ , সৃজন ও আদেশ তাঁরই [ ৬ ]। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্ কত বরকতময়! সপ্তম রুকূ’ [ ১ ] এখানে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি ছয় দিনে সমাপ্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে সূরা ফুসসিলাতের নবম ও দশম আয়াতে বলা হয়েছে যে, দুদিনে ভূমণ্ডল, দুদিনে ভূমণ্ডলের পাহাড়, সমুদ্র, খনি, বৃক্ষ, উদ্ভিদ এবং মানুষ ও জন্তুজানোয়ারের পানাহারের বস্তু-সামগ্রী সৃষ্টি করা হয়েছে। মোট চার দিন হল। বলা হয়েছে ( خَلَقَ الْاَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ) আবার বলা হয়েছেঃ ( وَقَدَّرَ فِيْهَآ اَقْوَاتَهَا فِيْٓ اَرْبَعَةِ اَيَّامٍ ) যে দু’দিনে ভূমণ্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে, তা ছিল রবিবার ও সোমবার। দ্বিতীয় দুদিন ছিল মঙ্গল ও বুধ, যাতে ভূমণ্ডলের সাজ-সরঞ্জাম পাহাড়, নদী ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়। এরপর বলা হয়েছেঃ ( فَقَضٰهُنَّ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ فِيْ يَوْمَيْنِ ) -অর্থাৎ "অতঃপর সাত আকাশ সৃষ্টি করেন দুদিনে " [ সূরা ফুস্সিলাতঃ ১২ ] বাহ্যতঃ এ দুদিন হবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার; অর্থাৎ এ পর্যন্ত ছয় দিন হল। [ আদওয়াউল বায়ান ] [ ২ ] জানা কথা যে, সূর্যের পরিক্রমণের ফলে দিন ও রাত্রির সৃষ্টি। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টির পূর্বে যখন চন্দ্ৰ-সূৰ্যই ছিল না, তখন ছয় দিনের সংখ্যা কি হিসাবে নিরূপিত হল? কোন কোন তাফসীরবিদ বলেছেনঃ ছয় দিন বলে জাগতিক ৬ দিন বুঝানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্কার ও নির্মল উত্তর এই যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যস্ত পর্যন্ত যে দিন এবং সূর্যস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যে রাত এটা এ জগতের পরিভাষা। বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে দিবা-রাত্রির পরিচয়ের অন্য কোন লক্ষণ নির্দিষ্ট থাকতে পারে; যেমন জান্নাতের দিবা-রাত্রি সূর্যের পরিক্রমণের অনুগামী হবেনা। সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী যে ছয় দিনে জগত সৃষ্টি হয়েছে তা রবিবার থেকে শুরু করে শুক্রবার শেষ হয়। [ ৩ ] এখানে প্রশ্ন হয় যে, আল্লাহ্ তা'আলা সমগ্র বিশ্বকে মুহুর্তের মধ্যে সৃষ্টি করতে সক্ষম। স্বযং কুরআনুল কারীমেও বিভিন্ন ভঙ্গিতে একথা বার বার বলা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছেঃ “ এক নিমেষের মধ্যে আমার আদেশ কার্যকরী হয়ে যায় ।” [ সূরা আল-কামারঃ ৫০ ] আবার কোথাও বলা হয়েছেঃ “ আল্লাহ তা'আলা যখন কোন বস্তু সৃষ্টি করতে চান, তখন বলে দেনঃ হয়ে যাও । আর সঙ্গে সঙ্গে তা সৃষ্টি হয়ে যায়”। যেমন, [ সূরা আল-বাকারাহঃ ১১৭ ] এমতাবস্থায় বিশ্ব সৃষ্টিতে ছয় দিন লাগার কারণ কি? তাফসীরবিদ সায়ীদ ইবন জুবাইর রাহিমাহুল্লাহ এ প্রশ্নের উত্তরে বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার মহাশক্তি নিঃসন্দেহে এক নিমেষে সব কিছু সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু মানুষকে বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনার ধারাবাহিকতা ও কর্মতৎপরতা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই এতে ছয় দিন ব্যয় করা হয়েছে। [ ৪ ] আল্লাহ্ তা'আলা আরশের উপর উঠেছেন এটা সহীহ আকীদা। কিন্তু তিনি কিভাবে উঠেছেন, কুরআন-সুন্নায় এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য নাই বিধায় তা আমরা জানি না। এ বিষয়ে সূরা আল-বাকারার ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহকে কেউ ( استواء ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেনঃ ( استواء ) শব্দের অর্থ তো জানাই আছে; কিন্তু এর স্বরূপ ও অবস্থা মানব বুদ্ধি সম্যক বুঝতে অক্ষম। এতে বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব। এর অবস্থা ও স্বরূপ জিজ্ঞেস করা বিদ’আত। কেননা, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ধরনের প্রশ্ন কখনো করেননি। কারণ, তারা এর অর্থ বুঝতেন। শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলা এ গুণে কিভাবে গুণান্বিত হলেন, তা শুধু মানুষের অজানা। এটি আল্লাহর একটি গুণ। আল্লাহ তা'আলা যে রকম, তার গুণও সে রকম। সুফিয়ান সওরী, ইমাম আওযায়ী, লাইস ইবনে সাদ, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ বলেছেনঃ যেসব আয়াত আল্লাহ্ তা'আলার সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এগুলো হক এবং এগুলোর অর্থও স্পষ্ট। তবে গুণান্বিত হওয়ার ধরণের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। বরং যেভাবে আছে সেভাবে রেখে কোনরূপ অপব্যাখ্যা ও সাদৃশ্য ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত। [ এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন, ইমাম যাহাবী রচিত আল-উলু ] [ ৫ ] অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা রাত্রি দ্বারা দিনকে সমাচ্ছন্ন করেন এভাবে যে, রাত্রি দ্রুত দিনকে ধরে ফেলে। উদ্দেশ্য এই যে, সমগ্র বিশ্বকে আলো থেকে অন্ধকারে অথবা অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসেন। দিবা-রাত্রির এ বিরাট পরিবর্তন আল্লাহর কুদরতে অতি দ্রুত ও সহজে সম্পন্ন হয়ে যায় -মোটেই দেরী হয় না। সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহকে এমতাবস্থায় সৃষ্টি করেছেন যে, সবাই আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশের অনুগামী। এতে প্রত্যেক বুদ্ধিমানের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে। কারণ, এগুলো শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশে চলছে। এ চলার গতিতে বিন্দুমাত্র পার্থক্য আসাও অসম্ভব। তবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ নিজেই যখন নির্দিষ্ট সময়ে এগুলোকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করবেন, তখন গোটা ব্যবস্থাই তছনছ হয়ে যাবে। আর তখনই হবে কেয়ামত। [ ৬ ] ( الخلق ) শব্দের অর্থ সৃষ্টি করা এবং ( الامر ) শব্দের অর্থ আদেশ করা। বাক্যের অর্থ এই যে, সৃষ্টিকর্তা হওয়া এবং আদেশদাতা হওয়া আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। যেমনিভাবে তিনিই উপর-নীচের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তেমনিভাবে নির্দেশ দানের অধিকারও তাঁর। এ নির্দেশ দুনিয়ায় তাঁর শরীআত সম্বলিত নির্দেশকে বোঝানো হবে। আর আখেরাতে ফয়সালা ও প্রতিদান-প্রতিফল দেয়াকে বোঝানো হবে। [ সা'দী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
এখানে আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা। আসমান ও যমীনকে তিনি ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। যার বর্ণনা কোরআন কারীমের কয়েক জায়গায় এসেছে। ঐ ছয়দিন হচ্ছে রবিবার। সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। শুক্রবারেই সমস্ত মাখলুক একত্রিত হয়। ঐ দিনেই হযরত আদম ( আঃ )-কে সৃষ্টি করা হয়। দিনগুলো এই দিনের মতই ছিল কি এক হাজার বছর বিশিষ্ট দিনগুলো ছিল এ ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর ধারণা মতে দিনগুলো ছিল হাজার বছর বিশিষ্ট দিন। এখন থাকলো শনিবার । ঐদিনে কিছু সৃষ্টি করা হয়নি। ঐদিন সৃষ্টিকার্য বন্ধ ছিল। একারণেই ঐ সপ্তম দিন অর্থাৎ শনিবারের দিনকে ( আরবী ) বলা হয়। আর ( আরবী ) শব্দের অর্থ হচ্ছে কাতা' বা কর্তন। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার হাত ধরে রয়েছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি বলেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা শনিবারে সৃষ্টি করেন যমীন, রবিবারে সৃষ্টি করেন পাহাড়-পর্বত, সোমবারে সৃষ্টি করেন বৃক্ষরাজী, মন্দ ও অপছন্দনীয় জিনিসগুলো সৃষ্টি করেন মঙ্গলবারে, বুধবারে সৃষ্টি করেন আলো, সমস্ত জীব-জন্তু সৃষ্টি করেন বৃহস্পতিবার এবং হযরত আদম ( আঃ )-কে সৃষ্টি করেন শুক্রবারের শেষভাগে আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে ।” এ হাদীস দ্বারা সপ্তম দিনেও ব্যস্ত থাকা সাব্যস্ত হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, ব্যস্ততার দিনের সংখ্যা ছিল ছয়। এজন্যে বুখারী ( রঃ ) প্রমুখ মনীষী এ হাদীসের সঠিকতার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে, সম্ভবতঃ আবু হুরাইরা ( রাঃ ) এটা কা'ব আহবার থেকে শুনেই বলেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক অবগত।এই ছয়দিনের ব্যস্ততার পর আল্লাহ তা'আলা আরশের উপর সমাসীন হন। এ স্থানে লোকেরা বহু মতামত পেশ করেছেন এবং বহু জল্পনা-কল্পনা করেছেন। এগুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ এখানে নেই। এ ব্যাপারে আমরা শুধুমাত্র পূর্ববর্তী গুরুজনদের মাযহাব অবলম্বন করেছি। তারা হচ্ছেন মালিক ( রঃ ), আওযায়ী ( রঃ )-সাওরী ( রঃ ), লায়েস ইবনে সা'দ ( রঃ ), শাফিঈ ( রঃ ), আহমাদ ( রঃ ) ইসহাক ইবনে রাহওয়াই ( রঃ ) ইত্যাদি এবং নবীন ও প্রবীণ মুসলিম ইমামগণ । আর ঐ মাযহাব হচ্ছে এই যে, কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই ওটার ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কোন জল্পনা-কল্পনা করাও চলবে না যার দ্বারা সাদৃশ্যের আকীদা মস্তিষ্কে এসে যায় এবং এটা আল্লাহ তা'আলার গুণাবলী হতে বহু দূরে। মোটকথা, যা কিছু আল্লাহ তাআলা বলেছেন ওটাকে কোন খেয়াল ও সন্দেহ ছাড়াই মেনে নিতে হবে এবং কোন -চুল চেরা করা চলবে না। কেননা, আল্লাহ পাক কোন বস্তুর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত নন। তিনি হচ্ছেন শ্রোতা ও দ্রষ্টা। যেমন মুজতাহিদ বা চিন্তাবিদগণ বলেছেন। এঁদের মধ্যে নাঈম ইবনে হাম্মাদ আল খুযায়ীও ( রঃ ) রয়েছেন, যিনি হচ্ছেন ইমাম বুখারীর ( রঃ ) উস্তাদ। তিনি বলেনঃ “ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলাকে কোন মাখলুকের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত করে সে কুফরীর দোষে দোষী হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা'আলা নিজেকে যেসব গুণে ভূষিত করেছেন তা যে ব্যক্তি অস্বীকার করে সে কাফির হয়ে যায় । আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ( সঃ ) যেসব গুণে তাঁকে ভূষিত করেননি সেসব গুণে তাঁকে ভূষিত করাই হচ্ছে তার সাদৃশ্য স্থাপন করা। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্যে ঐ সব গুণ সাব্যস্ত করে যা স্পষ্টরূপে তার আয়াতসমূহের মধ্যে ও বিশুদ্ধ হাদীসগুলোর মধ্যে বর্ণিত হয়েছে এবং যদদ্বারা তার মহিমা প্রকাশ পেয়েছে ও তাঁর সত্তাকে সর্বপ্রকার ত্রুটি থেকে মুক্ত করেছে, সেই ব্যক্তিই সঠিক খেয়ালের উপর রয়েছে।ইরশাদ হচ্ছে- তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন অর্থাৎ রাত্রির অন্ধকারকে দিনের আলো দ্বারা এবং দিনের আলোকে রাত্রির অন্ধকার দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এই দিন রাত্রির প্রত্যেকটি অপরটিকে খুবই ত্বড়িত গতিতে পেয়ে যায়। অর্থাৎ একটি শেষ হতে শুরু করলে অপরটি তুড়িত গতিতে এসে পড়ে এবং একটি বিদায় নিলে অপরটি তৎক্ষণাৎ এসে যায়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ রাত্রিও তাদের জন্যে একটি নিদর্শন, আমি ওটা হতে দিনকে অপসারণ করি, আর তৎক্ষণাৎ তারা অন্ধকারে থেকে যায় । আর সূর্য ওর নির্দিষ্ট কক্ষে ভ্রমণ করে চলছে, ওটা তাঁরই নির্ধারিত পরিমাণ যিনি মহাপরাক্রান্ত, জ্ঞানময়। আর ( অন্যতম নিদর্শন ) চন্দ্রের জন্যে আমি মনযিলসমূহ নির্ণীত করে রেখেছি। ( এবং চন্দ্র ওটা অতিক্রম করছে ) এমন কি ওটা ( অতিক্রম শেষে ক্ষীণ হয়ে ) এরূপ হয়ে যায় যে, যেন খেজুরের পুরাতন শাখা । সূর্যের সাধ্য নেই যে চন্দ্রকে গিয়ে ধরবে আর না রাত্রি দিবসের পূর্বে আসতে পারবে এবং প্রত্যেকে এক একটি চক্রের মধ্যে সন্তরণ করছে।” ( ৩৭:৪০ ) এজন্যেই আল্লাহ পাক ( আরবী ) বলেছেন। কেউ কেউ ( আরবী ) এবং ( আরবী ) কে ( আরবী ) দিয়ে পড়েছেন এবং কেউ কেউ পড়েছেন ( আরবী ) দিয়ে । উভয় অবস্থাতেই অর্থ একই হবে। অর্থাৎ সমস্ত কিছুই তার পরিচালনাধীন এবং ইচ্ছাধীন। এ জন্যেই তিনি বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ জেনে রেখো যে, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই এবং হুকুমের একমাত্র মালিক ও তিনিই ( আরবী ) অর্থাৎ ‘বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ হচ্ছেন বরকতময়।' যেমনঃ ( আরবী ) ( ২৫:৬১ ) বলেছেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সৎ আমল করে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলো না, বরং নিজের প্রশংসা করলো সে কুফরী করলো। তার আমল ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আল্লাহ তা'আলা নিজের কোন হুকুমত বা কোন ক্ষমতা বান্দার কাছে হস্তান্তর করেছেন সেও কুফরী করেছে। কেননা, আল্লাহ পাক বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ জেনে রেখো যে, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই এবং একমাত্র হুকুমের মালিকও তিনিই । বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ হলেন বরকমত।।" দুআয়ে মাসূরায় নিম্নলিখিতভাবে দুআ করার কথা বলা হয়েছে-( আরবী ) অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! সমুদয় রাজ্য ও রাজত্ব আপনারই । সমুদয় প্রশংসা আপনারই জন্যে। সমস্ত বিষয় আপনারই কাছে প্রত্যাবর্তন করে। আমি আপনার কাছে সমস্ত কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং সমুদয় অকল্যাণ হতে আশ্রয় চাচ্ছি।”
সূরা আ'রাফ আয়াত 54 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তাদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করো না। যদি তোমরা আঘাত প্রাপ্ত, তবে তারাও তো তোমাদের মতই হয়েছে
- তারপরও এরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। সুতরাং তাকে এবং তার সাথে নৌকায় যারা ছিল তাদের কে
- আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা সামনের আযাব ও পেছনের আযাবকে ভয় কর, যাতে তোমাদের
- আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে মার্জনা চাও এবং তাঁরই পানে ফিরে এসো নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগার খুবই
- আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী
- যখন তোমার ভগিনী এসে বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব কে তাকে লালন পালন করবে।
- নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সৃজনকালে আমি তাদেরকে সাক্ষ্য রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃজনকালেও না। এবং আমি
- তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত।
- তারা আগে বেড়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে।
- অর্থাৎ যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম স্মরণ করবে
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers