কোরান সূরা ইয়াসীন আয়াত 83 তাফসীর
﴿فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
[ يس: 83]
অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা ইয়াসীন: 83]
Surah Ya-Sin in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Yasin ayat 83
সুতরাং সকল মহিমা তাঁরই যাঁর হাতে রয়েছে সমস্ত কিছুর শাসনভার, আর তাঁরই নিকট তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৮৩. অতএব আল্লাহ মুশরিকদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি আরোপিত অপারগতার অপবাদ থেকে মুক্ত। বরং তাঁর হাতেই সকল কিছুর আধিপত্য। তিনি ইচ্ছামত সেগুলোকে পরিচালনা করেন। আর তাঁর হাতে রয়েছে সকল কিছুর চাবি। তোমরা পরকালে কেবল তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে প্রতিদান দিবেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অতএব পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি প্রত্যেক বিষয়ের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী[১] এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [২] [১] مُلك ও مَلَكُوت উভয়েরই অর্থ এক; বাদশাহী বা রাজত্ব। যেমন رحمة ও رحموت رهبة ও رهبوت جبر ও جبروت ইত্যাদি। ( ইবনে কাসীর ) অনেকে مَلَكُوت কে মুবালাগা ( অতিশয়োক্তিবিশিষ্ট ) শব্দ বলেছেন। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) অর্থাৎ ملكوت ملك এর মুবালাগা। [২] অর্থাৎ, এমন হবে না যে, মাটির সাথে মিশে তোমাদের অস্তিত্ব একেবারে নিঃশেষ ও বিলীন হয়ে যাবে। কক্ষনো না; বরং পুনরায় তোমাদেরকে অস্তিত্ব দান করা হবে। আর এটাও সম্ভব হবে না যে, তোমরা পলায়ন করে অন্য কারোর নিকট আশ্রয় নেবে। সুতরাং তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটেই উপস্থিত হতে হবে, অতঃপর তিনি তোমাদের কর্ম অনুযায়ী ভাল ও মন্দ প্রতিদান দেবেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
অতএব পবিত্র ও মহান তিনি, যাঁর হাতেই প্রত্যেক বিষয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব; আর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে [ ১ ]। [ ১ ] অনুরূপবর্ণনা পবিত্র কুরআনের অন্যান্য সূরায় এসেছে, [ যেমন: সূরা আল-মুমিনুন: ৮৮, সূরা আল-মুলক: ১ ] এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নিজ সত্তাকে পবিত্র ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত এবং সমস্ত ক্ষমতা যে তাঁরই হাতে সে ঘোষণা দিয়ে বান্দাকে আখেরাতের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করাচ্ছেন যে, তাঁর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে তখন তিনি সবাইকে তার কাজ ও কথার সঠিক প্রতিফল প্ৰদান করবেন। আয়াতে ব্যবহৃত ملكوت এবং ملك একই অর্থবোধক। যার অর্থ ক্ষমতা, চাবিকাঠি ইত্যাদি। তবে ملكوت এর পরিধি ব্যাপক। [ দেখুন- ইবন কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৮১-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা নিজের ব্যাপক ও সীমাহীন ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি আসমান এবং ওর সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং যমীনকে ও ওর মধ্যকার সমস্ত বস্তুকেও তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যিনি এত বড় ক্ষমতার অধিকারী তিনি মানুষের মত ছোট মাখলুককে সৃষ্টি করতে অপারগ হবেন? এটা তো জ্ঞানেরও বিপরীত কথা। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ অবশ্যই আসমান ও যমীন সৃষ্টি করা মানুষ সৃষ্টি করা হতে বহুগুণে বড় ও কঠিন ।” ( ৪০-৫৭ ) এখানেও তিনি বলেনঃ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে কি সমর্থ নন? আর এতে যখন তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান তখন অবশ্যই তিনি তাদেরকে তাদের মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা তার পক্ষে খুবই সহজ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তারা কি দেখে না যে, যে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে তিনি ক্লান্ত হননি, তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন? হ্যা, নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান ।” ( ৪৬:৩৩ )।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হ্যা, তিনি নিশ্চয়ই মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন শুধু ওকে বলেনঃ হও, ফলে ওটা হয়ে যায়। অর্থাৎ কোন কিছুর ব্যাপারে তিনি একবারই মাত্র নির্দেশ দেন, বারবার নির্দেশ দেয়ার ও তাগীদ করার কোন প্রয়োজনই তাঁর হয় না।হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পাপী, কিন্তু যাদেরকে আমি মাফ করি । সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। তোমাদের প্রত্যেকেই দরিদ্র, কিন্তু আমি যাদেরকে ধনবান করি। আমি বড় দানশীল এবং আমি বড় মর্যাদাবান। আমি যা ইচ্ছা করি তাই করে থাকি। আমার ইনআম বা পুরস্কারও একটা কালাম বা কথা এবং আমার আযাবও একটা কালাম। আমার ব্যাপার তো শুধু এই যে, যখন আমি কোন কিছুর ইচ্ছা করি তখন ওকে বলিঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ অতএব মহান ও পবিত্র তিনি যার হাতে রয়েছে প্রত্যেক বিষয়ের সার্বভৌম ক্ষমতা। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তুমি বল- তিনি কে যার হাতে প্রত্যেক জিনিসের সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে?” ( ২৩:৮৮ ) আরো বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যার করায়ত্ব ।” ( ৬৭:১ ) সুতরাং ( আরবী ) ও ( আরবী ) একই অর্থ। যেমন ( আরবী ) ও ( আরবী ) এবং ( আরবী ) ও -এর অর্থ একই। কেউ কেউ বলেছেন যে, ( আরবী ) দ্বারা দেহের জগত এবং দ্বারা রূহের জগতকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথমটিই সঠিক উক্তি এবং জমহর মুফাসসিরদেরও উক্তি এটাই।হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান ( রাঃ ) বলেনঃ “ একদা রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে ( তাহাজ্জুদের নামাযে ) দাঁড়িয়ে যাই । তিনি রাক'আতগুলোতে সাতটি লম্বা সূরা পাঠ করেন। ( আরবী ) বলে তিনি রুকূ' হতে মাথা উত্তোলন করেন এবং ( আরবী ) এ কালেমাগুলো পাঠ করেন। তাঁর রুকূ দাঁড়ানো অবস্থার মতই দীর্ঘ ছিল এবং সিজদাও ছিল রুকূ'র মতই দীর্ঘ। আমার তো পদদ্বয় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এবং ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হুযাইফা ( রাঃ ) হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তিনি একদা রাত্রে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে নামায পড়তে দেখেন। তিনি ( আরবী ) পড়ে সূরায়ে বাকারা সম্পূর্ণ পাঠ করেন এবং এরপর রুকূ'তে যান। রুকূতেও তিনি প্রায় দাঁড়ানোর মতই বিলম্ব করেন এবং ( আরবী ) পড়তে থাকেন। তারপর তিনি রুকূ' হতে মাথা উঠান এবং প্রায় ঐ পরিমাণ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন এবং ( আরবী ) পড়তে থাকেন। তারপর সিজদায় যান এবং সিজদাতেও প্রায় দাঁড়ানো অবস্থার সমপরিমাণ সময় পর্যন্ত পড়ে থাকেন এবং সিজদায় তিনি ( আরবী ) পড়তে থাকেন। অতঃপর তিনি সিজদা হতে মস্তক উত্তোলন করেন। তাঁর অভ্যাস ছিল এই যে, দুই সিজদার মাঝে ঐ সময় পর্যন্ত বসে থাকতেন যে সময়টা তিনি সিজদায় কাটাতেন। ঐ সময় তিনি ( আরবী ) ( হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন! ) বলতেন। চার রাকআত নামায তিনি আদায় করেন। এই চার রাকআত নামাযে তিনি সূরায়ে বাকারা, সূরায়ে আলে ইমরান, সূরায়ে নিসা এবং সূরায়ে মায়েদাহ তিলাওয়াত করেন।” বর্ণনাকারী শু’বাহ ( রাঃ )-এর সন্দেহ হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সূরায়ে মায়েদাহ অথবা সূরায়ে আনআম পাঠ করেছেন।” ( এ মসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এবং ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আউফ ইবনে মালিক আশজায়ী ( রাঃ ) বলেনঃ “ একদা রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করি । তিনি সূরায়ে বাকারা তিলাওয়াত করেন। রহমতের বর্ণনা রয়েছে এরূপ প্রতিটি আয়াতে তিনি থেমে যেতেন এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট রহমত প্রার্থনা করতেন। তারপর তিনি রুকূ' করেন এবং এটাও দাড়ানো অবস্থা অপেক্ষা কম সময়ের ছিল না। রুকূতে তিনি ( আরবী ) পাঠ করেন। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং ওটাও প্রায় দাঁড়ানো অবস্থার সমপরিমাণই ছিল এবং সিজদাতেও তিনি ওটাই পাঠ করেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতে তিনি সূরায়ে আলে-ইমরান পড়েন। এভাবেই তিনি এক এক রাকআতে এক একটি সূরা তিলাওয়াত করেন।
সূরা ইয়াসীন আয়াত 83 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য বিষয় জানেন, তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন।
- এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌছে যাও।
- আর আমাদেরকে অনুগ্রহ করে ছাড়িয়ে দাও এই কাফেরদের কবল থেকে।
- হে আমার কওম, আমি তোমাদের জন্যে প্রচন্ড হাঁক-ডাকের দিনের আশংকা করি।
- হে বনী-ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে তোমাদের শক্রুর কবল থেকে উদ্ধার করেছি, তুর পাহাড়ের দক্ষিণ পার্শ্বে তোমাদেরকে
- তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে আত্ন
- তিনিই ভুমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের
- কাফেররা যা করত, তার প্রতিফল পেয়েছে তো?
- শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে,
- আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদকারী হয়ে যাব যদি আমরা তোমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করি, অথচ তিনি
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ইয়াসীন ডাউনলোড করুন:
সূরা Yasin mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Yasin শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers