কোরান সূরা আনআম আয়াত 90 তাফসীর
﴿أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ ۖ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ ۗ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَىٰ لِلْعَالَمِينَ﴾
[ الأنعام: 90]
এরা এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এটি সারা বিশ্বের জন্যে একটি উপদেশমাত্র। [সূরা আনআম: 90]
Surah Al-Anam in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anam ayat 90
এরাঁই তাঁরা যাঁদের আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমি তাঁদের পথনির্দেশের অনুসরণ করো। বলো -- ''আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো প্রতিদান চাই না। এতো নিঃসন্দেহ মানবগোষ্ঠীর কাছে স্মারকই মাত্র।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৯০. এ সব নবীর সাথে উল্লেখিত তাঁদের পিতা, সন্তান ও ভাইরা সবাই সত্যিকারার্থে হিদায়েতপ্রাপ্ত। তাই তুমি তাঁদেরই অনুসরণ এবং তাঁদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করো। হে রাসূল! আপনি নিজ সম্প্রদায়কে বলে দিন: এ কুর‘আন প্রচারের জন্য আমি তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান চাই না। কুর‘আন হলো মানুষ ও জিন জাতির জন্য উপদেশ মাত্র। যেন তারা এরই মাধ্যমে সঠিক ও সরল পথের দিশা পায়।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
এদেরকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর।[১] বল, ‘এর জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না।[২] এ তো শুধু বিশ্ব-জগতের জন্য উপদেশ।’ [৩] [১] এ থেকে বুঝানো হয়েছে উল্লিখিত নবীগণকে। এঁদের অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাওহীদের বিষয়ে এবং এমন সব বিধি-বিধানের ব্যাপারে যেগুলো রহিত নয়। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) কেননা, দ্বীনের মূল বিষয়গুলো প্রত্যেক শরীয়তে একই ছিল, যদিও বিধি-বিধান ও নিয়ম-পদ্ধতির মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য ছিল। যেমন, {شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا} ( الشورى: ১৩ ) আয়াত থেকেও এ কথা পরিষ্কার। [২] অর্থাৎ, দ্বীনের তবলীগ ও দাওয়াতের জন্য। কারণ, এর প্রতিদান যা আমি আখেরাতে আল্লাহর কাছে পাব, তাই আমার জন্য যথেষ্ট। [৩] বিশ্ববাসী এ থেকে উপদেশ অর্জন করুক। সুতরাং এই কুরআন তাদেরকে কুফরী ও শিরকের অন্ধকার থেকে বের করে হিদায়াতের আলো দান করবে এবং ভ্রষ্টতার বক্র পথসমূহ থেকে বের করে হিদায়াতের সরল ও সোজা পথে পরিচালিত করবে। তবে শর্ত হল, এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করার ইচ্ছা থাকতে হবে। তা না হলে অন্ধকে বাতি দেখানোর মত ব্যাপার হবে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
এরাই তারা , যাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়াত করেছেন ,কাজেই আপনি তাদের পথের অনুসরণ করূন [ ১ ]। বলুন, ‘এর জন্য আমি তোমাদের কাছে পারিশ্রমিক চাই না, এ তো শুধু সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশ [ ২ ]।’ [ ১ ] আলোচ্য আয়াতসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে মক্কাবাসীদেরকে শোনানো হয়েছে যে, কোন জাতির পূর্বপুরুষরা শুধু পিতৃপুরুষ হওয়ার কারণেই অনুসরণীয় হতে পারে না যে, তাদের প্রত্যেকটি কথা ও কাজকে অনুসরণযোগ্য মনে করতে হবে। আরবদের সাধারণ ধারণা তাই ছিল। অনুসরণের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে যে, যার অনুসরণ করা হবে, সে নিজেও বিশুদ্ধ পথে আছে কি না। তাই নবীগণ আলাইহিমুস সালামদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “ এরা এমন লোক, যাদেরকে আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেছেন" । এরপর বলেছেন, “ আপনিও তাদের হেদায়াত ও কর্মপন্থা অনুসরণ করুন" । এতে দু'টি নির্দেশ রয়েছে- ( এক ) আরববাসী ও সমগ্র উম্মতকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, পৈত্রিক অনুসরণের কুসংস্কার পরিত্যাগ কর এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত নবী-রাসূলদের অনুসরণ কর। ( দুই ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনিও পূর্ববতী নবীগণের পস্থা অবলম্বন করুন। [ ২ ] এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বিশেষভাবে একটি ঘোষণা করতে বলা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী নবীগণও করেছেন। ঘোষণাটি হচ্ছে, আমি তোমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যেসব নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি, তজ্জন্য তোমাদের কাছে কোন ফি বা পারিশ্রমিক চাই না। তোমরা এসব নির্দেশ মেনে নিলে আমার কোন লাভ নাই এবং না মানলে তাতেও কোন ক্ষতি নেই। এটি হচ্ছে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ ও শুভেচ্ছার বার্তা। বস্তুত: শিক্ষা ও প্রচারকার্যের জন্য কোনরূপ পারিশ্রমিক গ্রহণ না করা সব যুগে সব নবীর নিকট অভিন্ন রীতি ছিল। প্রচারকার্য কার্যকরী হওয়ার ব্যাপারে এর প্রভাব অনস্বীকার্য।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৮৪-৯০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ পাক বলেন-ইবরাহীম ( আঃ )-কে আমি ইসহাকের ন্যায় সুসন্তান দান করেছি, অথচ বার্ধক্যের কারণে সে এবং তার স্ত্রী সন্তান থেকে নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। ফেরেশতা তাদের কাছে আসেন এবং তারা হযরত লূত ( আঃ )-এর কাছেও যাচ্ছিলেন। ফেরেশতাগণ স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর জন্মের সুসংবাদ দেন। তখন স্ত্রী হতবুদ্ধি হয়ে বলেনঃ “ হায়! হায়! কি করে আমাদের সন্তান হবে! আমি তো বন্ধ্যা ও বৃদ্ধা এবং আমার স্বামী ( ইবরাহীম আঃ ) অতি বৃদ্ধ! সুতরাং এটা কতই বিস্ময়কর কথা!” তখন ফেরেশতাগণ বলেনঃ “আপনি কি আল্লাহর কাজে বিস্ময় বোধ করছেন? হে বাড়ীর মালিকগণ! আপনাদের উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হাক ।” ফেরেশতাগণ তাদেরকে এ সুসংবাদও দেন যে, ইসহাক ( আঃ ) নবীও হবেন এবং তার বংশ বৃদ্ধিও হবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি তাকে ইসহাক ( আঃ ) -এর সুসংবাদ দিলাম, যে নবী হবে ও সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে ।” ( ৩৭:১১২ ) এটা বড় সুসংবাদ এবং বড় নিয়ামতও বটে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি তাকে ইসহাক ( আঃ ) -এর শুভ সংবাদ দিলাম এবং এ সুসংবাদও দিলাম যে, ইসহাক ( আঃ ) -এর ঔরষে ইয়াকূব ( আঃ ) জন্মগ্রহণ করবে ।” ( ১১:৭১ ) মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) ও তাঁর স্ত্রীকে এ সংবাদ দেন যে, তাঁদের জীবদ্দশাতেই ইসহাকের আঃ ঔরষে হযরত ইয়াকূব ( আঃ ) জন্মগ্রহণ করবেন। সুতরাং পুত্র ইসহাকের জন্মগ্রহণের ফলে যেমন তাঁদের চক্ষু ঠাণ্ডা হবে, অনুরূপভাবে পৌত্র ইয়াকূব ( আঃ ) -এর জন্মগ্রহণের ফলেও তাদের চক্ষু ঠাণ্ডা হবে। কেননা, বংশ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পৌত্রের জন্মলাভ খুবই খুশীর ব্যাপার। বদ্ধ ও বদ্ধা যখন সন্তান থেকে নিরাশ হয়ে যাচ্ছেন যে, তাদের সন্তান লাভ সম্ভব নয়, এমতাবস্থায় পুত্র ইসহাক ( আঃ ) -এর জন্মলাভ এবং ইসহাক ( আঃ ) -এর পুত্র ইয়াকূব ( আঃ ) -এর জন্মলাভ এটা কি কম খুশীর কথা! এতে কে না খুশী হয়? এটা ছিল হযরত ইবরাহীমের নেক আমলেরই প্রতিদান, যিনি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের দেশ ও জাতিকে ছেড়ে দিয়ে দূর দূরান্তের পথে পাড়ি জমালেন। এর প্রতিদানই ছিল তার ঔরষজাত নেককার সন্তানগণ, যাদের কারণে তাঁর চক্ষু ঠাণ্ডা হয়েছিল । যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “ যখন ইবরাহীম স্বীয় কওম ও তাদের মা’বৃদদেরকে পরিত্যাগ করলো তখন আমি তাকে প্রতিদান হিসাবে ইসহাক ও ইয়বকে দানলাম ।” আর এখানে বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকূবকে দান করেছি এবং উভয়কেই সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি ।” এরপর বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আর তার পূর্বে এমনিভাবে নূহ ( আঃ )-কেও সঠিক পথ প্রদর্শন করেছি ।” মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ আমি ইবরাহীম ( আঃ )-কে ভাল বংশ দান করেছি। ইসহাক ( আঃ ) ও ইয়াকূব ( আঃ ) বিরাট বৈশিষ্ট্য লাভ করেছিলেন। আল্লাহ তা'আলা যখন হযরত নূহ ( আঃ )-এর সময় সমস্ত দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করেছিলেন। সেই সময় শুধুমাত্র ঐ লোকগুলো রক্ষা পেয়েছিল যারা হযরত নূহ ( আঃ ) -এর উপর ঈমান এনে তাঁর নৌকায় আরোহণ করেছিল! এই পরিত্রাণ প্রাপ্ত লোকগুলোই ছিল হযরত নূহের সন্তান এবং সারা দুনিয়ার লোক হচ্ছে এদের সন্তান। আর ইবরাহীম ( আঃ ) -এর পরে তার সন্তানদের মধ্য থেকেই আল্লাহ নবী প্রেরণ করেন। যেমন তিনি বলেনঃ অর্থাৎ “ আমি তার সন্তানদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব রেখেছি ।” ( ২৯৪২৭ ) তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ অবশ্যই আমি নূহ ( আঃ ) ও ইবরাহীম ( আঃ )-কে প্রেরণ করেছি এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব রেখেছি ।” ( ৫৭:২৬ ) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেছেনঃ “ নবীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ পুরস্কৃত করেছেন, তারা আদম ( আঃ )-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত, আর ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে আমি নূহ ( আঃ )-এর সাথে নৌকায় উঠিয়েছিলাম এবং তারা ইবরাহীম ( আঃ ) ও ইসমাঈল ( আঃ )-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে আমি সুপথ প্রদর্শন করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম, যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা ক্রন্দনরত অবস্থায় সিজদায় পড়ে যায় ।”এই আয়াতে কারীমায় ( আরবী ) শব্দ রয়েছে। এর অর্থ হবেঃ আমি তার সন্তানদেরকেও সুপথ দেখিয়েছি । অর্থাৎ দাউদ ( আঃ ) ও সুলাইমান ( আঃ )-কেও হিদায়াত দান করেছি। কিন্তু যদি ( আরবী ) -এর সর্বনামটিকে( আরবী ) -এর দিকে ফিরানো হয়, কেননা ওটা ( আরবী ) শব্দের নিকটতর, তবে এটা তো একেবারে পরিষ্কার কথা, এতে কোন জটিলতা নেই। ইবনে জারীরও ( রঃ ) এটাই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু যদি সর্বনামটিকে ( আরবী ) শব্দের দিকে ফিরানো হয়, কেননা বাকরীতি এরূপই বটে, তবে তো খুবই ভাল কথা। কিন্তু এতে একটু জটিলতা এই রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর সন্তানদের ক্রমপরম্পরায় ‘নূত' শব্দটিও এসে গেছে। অথচ হযরত লূত ( আঃ ) হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত নন। বরং তিনি হচ্ছেন তার ভাই হারূন ইবনে আযরের ছেলে। তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর সন্তানদের সংখ্যাধিক্যের কারণেই হয়তো হযরত লূত ( আঃ )-কেও তার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহর নিম্নের উক্তিতেও রয়েছেঃ ( আরবী ) ( ২৪ ১৩৩ ) এখানে ইয়াকূব ( আঃ )-এর পূর্বপুরুষদের ক্রমপরম্পরায় হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর নামও চলে এসেছে, অথচ হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) তো তাঁর চাচা ছিলেন। এটাও আধিক্য হিসাবেই হয়েছে। অনুরূপভাবে নিম্নের আয়াতেও রয়েছেঃ ( আরবী ) ( ৩৮:৭৩-৭৪ ) এখানে ইবলীসকে ফেরেশতাদের মধ্যে শামিল করা হয়েছে। কেননা, ফেরেশতাদের সাথে তার সাদৃশ্য ছিল। প্রকৃতপক্ষে সে ফেরেশতা ছিল না। বরং সে ছিল জ্বিন, তার প্রকৃতি হচ্ছে আগুন এবং ফেরেশতাদের প্রকৃতি হচ্ছে আলো। তা ছাড়া এই কারণেও যে, হযরত ঈসা ( আঃ )-কে হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) বা হযরত নূহ ( আঃ )-এর সন্তানদের ক্রমপরম্পরায় আনা হয়েছে। তাকেও যেন ইবরাহীম ( আঃ )-এরই বংশধর বলা হয়েছে। এরূপ করা হয়েছে এই দলীলের উপর ভিত্তি করেই যে, কন্যার সন্তানদেরকেও তার পিতার বংশধর মনে করা হয়। এখন যদি হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর সঙ্গে হযরত ঈসা ( আঃ )-এর কোন সম্পর্ক থাকে তা শুধু এর উপর ভিত্তি করেই যে, তাঁর মা মারইয়াম ( আঃ ) হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর বংশধর ছিলেন। নতুবা হযরত ঈসা ( আঃ )-এর তো পিতাই ছিল না। বর্ণিত আছে যে, হাজ্জাজ ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াসারকে বলেনঃ “ আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, আপনি নাকি হযরত হাসান ( রাঃ ) ও হযরত হুসাইন ( রাঃ )-কে নবী ( সঃ )-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত বলে থাকেন? অথচ তারা তো হযরত আলী ( রাঃ ) ও আবূ তালীবের বংশধর, আবার এও নাকি দাবী করেন যে, কুরআন কারীম দ্বারাই এটা প্রমাণিত? আমি তো কুরআন কারীম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করেছি, কিন্তু কোন জায়গাতেই এটা পাইনি তো!” তখন ইবনে ইয়াসার তাঁকে বলেনঃ “আপনি কি সূরায়ে আনআমের ( (আরবী ) এবং ( আরবী ) পর্যন্ত পড়েন) -এই আয়াতগুলো পাঠ করেননি?” হাজ্জাজ উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, পড়েছি তো ।” তিনি তখন বলেনঃ “ এখানে হযরত ঈসা ( আঃ )-কে হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে, অথচ তাঁর তো পিতাই ছিল না । শুধুমাত্র কন্যার সম্পর্কের কারণেই তাঁকে সন্তান ধরা হয়েছে। তাহলে কন্যার সম্পর্কের কারণে হযরত হাসান ( রাঃ ) ও হযরত হুসাইন ( রাঃ )-কে নবীর সন্তান বলা হবে না কেন?” হাজ্জাজ তখন বলেনঃ “ আপনি ঠিক কথাই বলেছেন ।” এ কারণেই যখন কোন লোক স্বীয় মীরাস নিজের সন্তানের নামে অসিয়ত করে কিংবা ওয়াকফ বা হিবা করে, তখন ঐ সন্তানদের মধ্যে কন্যার সন্তানদেরও ধরে নেয়া হয়। কিন্তু যখন সে পুত্রদের নামে অসিয়ত বা ওয়াফ করে তখন নির্দিষ্টভাবে ঔরষজাত পুত্র বা পুত্রের পুত্ররাই হকদার হয়ে থাকে। অন্যান্যরা বলে থাকেন যে, এতে কন্যার সন্তানেরাও শামিল থাকবে। কেননা, সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত হাসান ( রাঃ ) সম্পর্কে বলেছিলেনঃ “ নিশ্চয়ই আমার এই পুত্র সাইয়েদ বা নেতা এবং আল্লাহ এর মাধ্যমে মুসলমানদের দু’টি বড় দলের মধ্যে সন্ধি করিয়ে দিবেন এবং যুদ্ধের ফিত্না প্রশমিত করবেন ।” এখানে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত হাসান ( রাঃ )-কে পুত্র বলেছেন, যা এটাই প্রমাণ। করে যে, তাকে তার পুত্ররূপে গণ্য করা যেতে পারে। ( আরবী ) আল্লাহ তাআলার এই উক্তির মধ্যে নসল’ ও ‘নসব' এই দুটিরই উল্লেখ রয়েছে এবং হিদায়াত ও মনোনয়ন সবারই উপর প্রযোজ্য হয়েছে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি তাদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল সোজা পথে পরিচালিত করেছি ।”( আরবী ) অর্থাৎ এটাই আল্লাহর হিদায়াত; তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে চান এই পথে পরিচালিত করেন। ( আরবী ) অর্থাৎ যদি তারা শিরক করতো তবে তারা যা কিছুই করতো, সবই পণ্ড হয়ে যেতো। এখানে এটা বলাই উদ্দেশ্য যে, শিরকটা কতই কঠিন ব্যাপার এবং এর পরিণাম কতই না জঘন্য। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে নবী ( সঃ )! আমি তোমার কাছে ও তোমার পূর্ববর্তী নবীদের কাছে এই অহী করেছি যে, যদি তুমি শিরক কর তবে অবশ্যই তোমার আমল পণ্ড হয়ে যাবে ।” ( ৩৯৪ ৬৫ ) এই বাক্যটি শর্তের স্থানে রয়েছে, আর শর্তের জন্যে এটা জরুরী নয় যে, ওটা সংঘটিত হবেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে নবী ( সঃ )! তুমি বলে দাও- যদি রহমানের অর্থাৎ আল্লাহর সন্তান হয় তবে আমি প্রথম উপাসনাকারী হয়ে যাবো । ( ৪৩:৮১ ) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যদি আমি খেল-তামাসা বানাতে চাইতাম তবে নিজের নিকট থেকেই বানিয়ে নিতাম ।" ( ২১:১৭ ) আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যদি আল্লাহ সন্তান বানিয়ে নেয়ার ইচ্ছা করতেন তবে স্বীয় মাখলুকের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করে নিতেন, কিন্তু এর থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র এবং তিনি এক ও মহাপরাক্রমশালী ।” ( ৩৯:৪ )। ( আরবী ) এরা সেই লোক যাদেরকে আমি কিতাব, শাসনভার ও নবুওয়াত দান করেছি। আর এদের কারণেই আমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ামত ও দ্বীনের অধিকারী করেছি। সুতরাং যদি এই লোকেরা অর্থাৎ মক্কাবাসী ( এটা ইবনে আব্বাস (রাঃ ), যহহাক ( রঃ ), কাতাদা ( রঃ ) প্রমুখ মনীষীদের উক্তি) নবুওয়াতকে অস্বীকার করে তবে আমি তাদের স্থলে এমন লোকদেরকে নিয়োগ করবো যারা ওটা অস্বীকার করবে না, বরং তারা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। এখন ঐ অস্বীকারকারীরা কুরায়েশই হাক বা অন্যেরাই হাক, আরবী হাক বা আজমীই হাক অথবা আহলে কিতাবই হাক, ওদের স্থলে অন্য জাতিকে অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদেরকে নিয়োগ করবো। তারা আমার কোন কথাকেই অস্বীকার করে না এবং প্রত্যাখ্যানও করে না। বরং তারা কুরআন কারীমের সমস্ত আয়াতের উপরই বিশ্বাস রাখে । আয়াতগুলো স্পষ্ট মর্ম বিশিষ্টই হাক অথবা অস্পষ্ট মর্ম বিশিষ্ট হোক। এখন আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূল ( সঃ )-কে সম্বোধন করে বলছেনঃ “ উল্লিখিত নবীরা এবং তাদের বাপ-দাদা, সন্তান-সন্ততি ও ভাই বেরাদর এমনই লোক, যাদেরকে আল্লাহ সুপথ প্রদর্শন করেছিলেন, সুতরাং তুমি তাদের অনুসরণ কর ।”রাসূল ( সঃ )-এর জন্যে যখন এই আদেশ, তখন তাঁর উম্মত তো তাঁরই অনুসারী, সুতরাং তাদের উপরও যে এই আদেশই প্রযোজ্য এটা বলাই বাহুল্য। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল- সূরায়ে এ কি সিজদা রয়েছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ হ্যা ।” অতঃপর তিনি ( আরবী ) হতে ( আরবী ) পর্যন্ত আয়াতগুলা পাঠ করে বলেনঃ তিনি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। ইয়াযিদ ইবনে হারূন, মুহাম্মাদ ইবনে উবাইদ ও সুহাইল ইবনে ইউসুফ আওয়াম হতে, তিনি মুজাহিদ হতে নিম্নের কথাটুকু বেশী বর্ণনা করেনঃমুজাহিদ বলেনঃ আমি ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- “ তোমাদের নবী ( সঃ ) তাঁদেরই অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।” ( আরবী ) হে নবী ( সঃ )! তুমি লোকদেরকে বলে দাও-আমি তোমাদের কাছে এই কুরআন প্রচারের বিনিময়ে কোন কিছুই যাজ্ঞা করি না।( আরবী ) এটা তো হচ্ছে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে উপদেশের ভাণ্ডার, যেন তারা এর মাধ্যমে গুমরাহী থেকে হিদায়াতের দিকে আসতে পারে এবং কুফরী ছেড়ে ঈমান আনয়ন করতে পারে।
সূরা আনআম আয়াত 90 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে
- যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে, তারা অন্ধকারের মধ্যে মূক ও বধির। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট
- যদি আমি তাদের প্রতি দয়া করি এবং তাদের কষ্ট দূর করে দেই, তবুও তারা তাদের
- ঈমান এজন্যে বেড়ে যায়, যাতে তিনি ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যার
- তাতে মাথা ব্যথার উপাদান নেই এবং তারা তা পান করে মাতালও হবে না।
- যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্যে সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে
- আমি তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি,
- ক্বাফ! সম্মানিত কোরআনের শপথ;
- ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে।
- কস্মিনকালেও তারা মৃত্যু কামনা করবে না ঐসব গোনাহর কারণে, যা তাদের হাত পাঠিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনআম ডাউনলোড করুন:
সূরা Anam mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anam শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers