কোরান সূরা আলে-ইমরান আয়াত 92 তাফসীর
﴿لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ﴾
[ آل عمران: 92]
কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। [সূরা আলে-ইমরান: 92]
Surah Al Imran in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Imran ayat 92
তোমরা কখনো ধর্মনিষ্ঠ হতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ব্যয় করো যা তোমরা ভালোবাস তা থেকে। আর তোমরা যে বস্তুই খরচ করবে, নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সে-সন্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৯২. হে মু’মিনরা! তোমরা কস্মিনকালেও নেককারদের সাওয়াব ও মর্যাদা পাবে না যতক্ষণ না তোমরা নিজেদের প্রিয় সম্পদের কিয়দংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করো। তোমরা কম-বেশি যাই ব্যয় করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের আমল ও নিয়্যাত সম্পর্কে জানেন। তাই অচিরেই তিনি প্রত্যেককে তার আমলের প্রতিদান দিবেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তোমরা কখনও পুণ্য[১] লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।[২] [১] 'পুণ্য' বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে, সৎকাজ অথবা জান্নাত। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) হাদীসে বর্ণিত যে, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, তখন আবূ ত্বালহা আনসারী ( রাঃ ) --যিনি মদীনার বিশিষ্ট সাহাবীদের একজন -- নবী করীম ( সাঃ )-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! বাইরুহা বাগানটি হল আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু। সেটাকে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাদাকা করছি। রসূল ( সাঃ ) বললেন, " সে তো বড়ই উপকারী সম্পদ। আমার মত হল, ওটাকে তুমি তোমার আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দাও। " তাই রসূল ( সাঃ )-এর পরামর্শ অনুযায়ী সেটাকে তিনি স্বীয় আত্মীয়-স্বজন এবং চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। ( মুসনাদ আহমাদ ) এইভাবে আরো অনেক সাহাবী তাঁদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছেন। مِمَّا تُحِبُّوْنَ এ 'মিন' ( হতে ) শব্দ 'তাবঈয' তথা কিয়দংশ বুঝানোর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, পছন্দনীয় ও প্রিয় জিনিসের সবটাকেই ব্যয় করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং তা থেকে কিয়দংশকে ব্যয় করতে বলা হয়েছে। কাজেই সাদাকা করলে ভাল জিনিসই করা উচিত। এটা হল সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করার তরীকা। তবে এর অর্থ এও নয় যে, নিম্নমানের জিনিস অথবা স্বীয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কিংবা ব্যবহূত পুরাতন জিনিস সাদাকা করা যাবে না বা তার নেকী পাওয়া যাবে না। এই ধরনের জিনিসও সাদাকা করা জায়েয এবং তাতে নেকী অবশ্যই পাওয়া যাবে। তবে বেশী ফযীলত ও পূর্ণতা রয়েছে প্রিয় বস্তু ব্যয় করার মধ্যে। [২] ভাল ও মন্দ যে জিনিসই তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন সেই অনুযায়ী প্রতিদানও তিনি দিবেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত [ ১ ]। দশম রুকূ‘ [ ১ ] সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন কুরআনী নির্দেশের প্রথম সম্বোধিত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যক্ষ সঙ্গী। কুরআনী নির্দেশ পালনের জন্য তারা ছিলেন উম্মুখ। আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সহায় সম্পত্তির প্রতি লক্ষ্য করলেন যে, কোনটি তাদের নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। এরপর আল্লাহ্র পথে তা ব্যয় করার জন্যে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করতে লাগলেন। মদীনার আনসারগণের মধ্যে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেশ ধনী ছিলেন। মসজিদে নববী সংলগ্ন বিপরীত দিকে তার একটি বাগান ছিল, যাতে ‘বীরাহা’ নামে একটি কূপ ছিল। বর্তমানে মাসজিদের নববীর বাব আল-মাজীদীর বাদশাহ ফাহদ গেট দিয়ে ভিতরে মসজিদে ঢুকার পর পরই সামান্য বাম পার্শ্বে এ স্থানটি পড়ে। পরিচিতির সুবিধার্থে দুই থামের মাঝখানের তিনটি গোল চক্কর দিয়ে তার স্থান নির্দেশ করা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে এ বাগানে পদার্পণ করতেন এবং বীরহা কূপের পানি পান করতেন। এ কুপের পানি তিনি পছন্দও করতেন। আবু তালহার এ বাগান অত্যন্ত মূল্যবান, উর্বর এবং তার বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল। আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললেনঃ আমার সব বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে বীরহা আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আমি এটি আল্লাহ্র পথে ব্যয় করতে চাই। আপনি যে কাজে পছন্দ করেন, এটি তাতেই খরচ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিরাট মুনাফার এ বাগানটি আমার মতে তুমি স্বীয় আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বন্টন করে দাও। আবু তালহা এ পরামর্শ গ্রহণ করেন৷ [ বুখারীঃ ১৪৬১, মুসলিমঃ ৯৯৮ ] এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, শুধু ফকীর-মিসকীনকে দিলেই পুণ্য হয় না -পরিবার-পরিজন ও আত্নীয়-স্বজনকে দান করাও বিরাট পুণ্য ও সওয়াবের কাজ।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
হযরত আমর ইবনে মাইমুন ( রঃ ) বলেন যে, এখানে ( আরবী ) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে জান্নাত। অর্থাৎ যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের পছন্দনীয় জিনিস হতে আল্লাহর পথে ব্যয় কর সে পর্যন্ত তোমরা কখনই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, সমস্ত আনসারের মধ্যে হযরত আবু তালহা ( রাঃ ) ছিলেন সবচেয়ে বেশী সম্পদশালী। তিনি তাঁর সমস্ত ধন-সম্পত্তির মধ্যে ( আরবী ) নামক বাগানটিকে সর্বাপেক্ষা বেশী পছন্দ করতেন। বাগানটি মসজিদই-ই-নববীর সম্মুখে অবস্থিত ছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) প্রায়ই ঐ বাগানে গমন করতেন এবং ওর কূপের নির্মল পানি পান করতেন। যখন উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন হযরত আবু তালহা ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহ তা'আলা এরূপ কথা বলেছেন এবং এ ( আরবী ) ( নামক বাগানটিই ) হচ্ছে আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ । এ জন্যে আমি ওটি আল্লাহর পথে সাদকা করছি এ আশায় যে, তার নিকট যে প্রতিদান রয়েছে তাই আমার জন্যে জমা থাকবে। সুতরাং আপনাকে অধিকার দিয়ে দিলাম যেভাবে ভাল মনে করেন ওটা বন্টন করে দিন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) খুশী হয়ে বলেনঃ বাঃ বাঃ! এটা খুবই উপকারী সম্পদ। এর দ্বারা জনগণের বেশ উপকার সাধিত হবে। আমার মত এই যে, তুমি এ সম্পদ তোমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বন্টন করে দাও।' হযরত আবু তালহা ( রাঃ ) বলেন, “ খুব ভাল । অতঃপর তিনি ওটা তার আত্মীয়-স্বজন এবং চাচাতো ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দেন। ( মুসনাদ-ই- আহমাদ, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ) সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এসেছে যে, একবার হযরত উমার ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার সবচেয় প্রিয় ও উত্তম মাল ওটাই যা খাইবারে আমার জমির একটি অংশ রয়েছে । ( আমি ওটা আল্লাহর পথে সাদকা করতে চাই ) বলুন, কি করি?' তিনি বলেনঃ মূলকে ( জমিকে ) তোমার অধিকারে রাখ এবং ওর উৎপাদিত শস্য, ফল ইত্যাদি আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দাও। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) বলেনঃ ‘পাঠের সময় যখন আমি উপরোক্ত আয়াতে পৌছি তখন আমি আমার সমস্ত ধন-সম্পদ সম্বন্ধে চিন্তা করি। কিন্তু আমার রুমী দাসীটি অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোন জিনিস আমার চোখে পড়লো না। কাজেই আমি ঐ দাসীটিকেই আল্লাহর পথে আযাদ করে দিলাম। আমার অন্তরে ওর প্রতি এত বেশী ভালবাসা রয়েছে যে, যদি আমি আল্লাহর পথে প্রদত্ত কোন জিনিস ফিরিয়ে নিতে পারতাম তবে আমি অবশ্যই তাকে বিয়ে করে নিতাম। ( মুসনাদ-ই-বাযযার )
সূরা আলে-ইমরান আয়াত 92 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যাতে করে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে দেন, যদিও পাপীরা অসন্তুষ্ট হয়।
- যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয়;
- তিনি সেই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন।
- আর তারা বলে, আপনার আনুগত্য করি। অতঃপর আপনার নিকট থেকে বেরিয়ে গেলেই তাদের মধ্য থেকে
- তোমাকে এই দেয়া হল যে, তুমি এতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং বস্ত্রহীণ হবে না।
- তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু,
- কেবল একটি মহানাদের অপেক্ষা করছে, যাতে দম ফেলার অবকাশ থাকবে না।
- সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে।
- আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি আমরা প্রতিফল প্রাপ্ত
- আর আল্লাহ সে ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছেন, যখন তোমরা তাঁরই নির্দেশে ওদের খতম করছিলে। এমনকি
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আলে-ইমরান ডাউনলোড করুন:
সূরা Al Imran mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Imran শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers