কোরান সূরা আনফাল আয়াত 10 তাফসীর
﴿وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ ۚ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾
[ الأنفال: 10]
আর আল্লাহ তো শুধু সুসংবাদ দান করলেন যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে। আর সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হতে পারে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তির অধিকারী হেকমত ওয়ালা। [সূরা আনফাল: 10]
Surah Al-Anfal in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anfal ayat 10
আর আল্লাহ্ এটি করেন নি সুসংবাদ দান ছাড়া আর যেন এর দ্বারা তোমাদের হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে, আর সাহায্য তো আসে না আল্লাহ্র কাছ থেকে ছাড়া। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হচ্ছেন মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১০. হে মু’মিনরা! আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিরিশতা কর্তৃক তোমাদেরকে সাহায্য করা শুধু তোমাদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে শত্রæর উপর বিজয়ী করবেন। আর যেন তোমাদের অন্তরগুলো সাহায্যের দৃঢ় বিশ্বাসে শান্ত হয়ে যায়। বিজয় শুধু সংখ্যাধিক্য ও প্রচুর সরঞ্জামের জন্য নয় বরং তা আল্লাহর কাছ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা নিজ ক্ষমতায় পরাক্রমশালী। তাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। তিনি তাঁর শরীয়ত ও তাক্বদীরে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল্লাহ এটা করেন কেবল তোমাদেরকে শুভ সংবাদ দেওয়ার জন্য এবং এ উদ্দেশ্যে যাতে তোমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে। আর সাহায্য তো শুধু আল্লাহর নিকট হতেই আসে।[১] নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। [১] অর্থাৎ, ফিরিশতাদের অবতরণ কেবলমাত্র সুসংবাদ ও তোমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ছিল। তাছাড়া সত্যিকারে সাহায্য ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে। যিনি ফিরিশতা বিনাও তোমাদের সাহায্য করতে পারতেন। তবে এটা ভাবাও ঠিক নয় যে, ফিরিশতারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ফিরিশতারাও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং কিছু কাফেরদেরকে হত্যাও করেছিলেন। ( দেখুনঃ বুখারী, মুসলিম যুদ্ধ অধ্যায় )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর আল্লাহ এটা করেছেন শুধু সুসংবাদ স্বরূপ এবং যাতে তোমাদের অন্তরসমূহ এর দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে; আর সাহায্য তো শুধু আল্লাহর কাছ থেকেই আসে; নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৯-১০ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ বদরের দিন নবী ( সঃ ) স্বীয় সহচরদেরকে গণনা করে দেখলেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল তিনশ’র কিছু বেশী । আর মুশরিকদের দিকে দৃষ্টিপাত করে তিনি অনুমান করলেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও অধিক। নবী ( সঃ ) কিবলামুখী হয়ে দুআ করতে লাগলেন। তার গায়ে একখানা চাদর ছিল এবং তিনি লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। তিনি বলছিলেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনি আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা আজ পুরো করুন । যদি আপনি মুসলমানদের এই ছোট দলটিকে আজ ধ্বংস করে দেন তবে দুনিয়ার বুকে আপনার ইবাদত করার কেউই থাকবে না এবং তাওহীদের নাম ও চিহ্নটুকুও মুছে যাবে।” তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিলেন ও প্রার্থনা জানাচ্ছিলেন, এমন কি তাঁর কাঁধ থেকে চাদরখানা পড়ে যাচ্ছিল। হযরত আবু বকর ( রাঃ ) এসে চাদরখানা তার কাঁধে উঠিয়ে দিলেন এবং তার পিছনে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহর কাছে আপনার প্রার্থনা যথেষ্ট হয়েছে । তিনি স্বীয় ওয়াদা পূর্ণ করবেন।” তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “ যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা করছিলে, আর তিনি সেই প্রার্থনা কবুল করেছিলেন, ( এবং তিনি বলেছিলেন ) আমি তোমাদেরকে এক সহস্র ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবো, যারা একের পর এক আসবে ।” সুতরাং যখন যুদ্ধ সংঘটিত হলো তখন আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের পরাজয় ঘটালেন। তাদের সত্তরজন। নিহত হলো এবং সত্তরজন বন্দী হলো। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত আবু বকর ( রাঃ ), হযরত উমার ( রাঃ ) এবং হযরত আলী ( রাঃ )-এর সঙ্গে বন্দীদের ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। হযরত আবু বকর ( রাঃ ) বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এরা তো আপনার চাচাতো ভাই এবং আপনার গোত্রীয় ও বংশীয় লোক । সুতরাং এদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিন। মুক্তিপণের অর্থের মাধ্যমে আমাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে এবং কাফিরদের উপর জয়যুক্ত হওয়ার শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, আল্লাহ তাআলা হয়তো তাদেরকে হিদায়াত দান করবেন। অতঃপর এরাই আমাদের শক্তি বাড়িয়ে দিবে।” এর পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-কে সম্বোধন করে বলেনঃ “ হে উমার ( রাঃ )! এ ব্যাপারে তোমার মত কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আল্লাহর শপথ! হযরত আবু বকর ( রাঃ ) যে মত পোষণ করেছেন আমি ঐ মত পোষণ করি না । আপনি আমাকে নির্দেশ দিন, আমি আমার আত্মীয় কাফিরদেরকে হত্যা করি এবং আলী ( রাঃ )-কে হুকুম দিন তিনি যেন তাঁর ভাই আকীলের গর্দান উড়িয়ে দেন। আর হামযা ( রাঃ ) যেন তাঁর অমুক ভাইয়ের দেহ দ্বিখণ্ডিত করেন, যাতে আমরা আল্লাহর কাছে এটা প্রমাণ করতে পারি যে, মুশরিকদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে কোন করুণা নেই। এই বন্দী মুশরিকরা তো কাফিরদের নেতৃস্থানীয় লোক।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কিন্তু হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর মতকেই প্রাধান্য দেন এবং ঐ মুশরিক বন্দীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেন। হযরত উমার ( রাঃ ) বলেন, পরদিন সকালে আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বাড়ীতে হাযির হয়ে দেখি যে, তিনি এবং হযরত আবু বকর ( রাঃ ) ক্রন্দন করছেন। আমি আরয করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনার ও আপনার সঙ্গীর কাঁদার কারণ কি? যদি কান্না আসে তবে আমিও কাঁদবো, আর যদি কান্না না আসে তবে কান্নার ভান করবো, যাতে আপনাদের কান্নায় শরীক হতে পারি। নবী ( সঃ ) তখন বললেনঃ “ এটা হচ্ছে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার কারণে কান্না । আমি এই ভুলের কারণে ঐ শাস্তি প্রত্যক্ষ করছি যা এতো নিকটে রয়েছে যতো নিকটে রয়েছে এই গাছটি।” সেই সময় নবী ( সঃ )-এর সম্মুখে একটি গাছ ছিল। তখন আল্লাহ তা'আলা নিম্নের আয়াত অবতীর্ণ করেন- ( আরবী ) পর্যন্ত। ( ৮:৬৭-৬৯ ) সুতরাংগনীমত হালাল করে দেয়া হয়। অতঃপর পরবর্তী বছর যখন উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় তখন আল্লাহ তা'আলা বদরের দিনের ভুলের প্রতিশোধ এভাবে গ্রহণ করেন যে, মুক্তিপণ নিয়ে সত্তরজন কাফির বন্দীকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে উহুদের যুদ্ধে সত্তরজন মুসলমান শাহাদাতবরণ করেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীগণ তাকে ছেড়ে পলায়ন করেন। তাঁর সামনের চারটি দাত ভেঙ্গে যায় এবং শিরস্ত্রাণ মাথার মধ্যে ঢুকে যায়। তাঁর চেহারা মুবারকের উপর রক্ত গড়িয়ে পড়ে। তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ “ তোমাদের উপর যখন বিপদ পৌছালো তখন তোমরা বলতে শুরু করলে- এ বিপদ কোথা থেকে আসলো? ( হে নবী সঃ )! তুমি বলে দাও- এটা তোমাদের নিজেদের কর্মের ফল অর্থাৎ তোমাদের ফিদইয়া গ্রহণের কারণেই তোমরা এই বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের উপরই ক্ষমতাবান ।” ( এটা ইমাম আহমাদ (রাঃ ) উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং এটাকে ইমাম মুসলিম ( রঃ ), ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) ও ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) তাখরীজ করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) দ্বারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর প্রার্থনা করাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, বদরের দিন নবী ( সঃ ) অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করছিলেন। তখন হযরত উমার ( রাঃ ) তাঁর কাছে এসে বললেনঃ “ আপনি দুআ’কে সংক্ষিপ্ত করুন । আল্লাহ তা'আলা আপনার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা তিনি অবশ্যই পূর্ণ করবেন।” হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, বদরের দিন নবী ( সঃ ) প্রার্থনায় বলেছিলেনঃ “ হে আল্লাহ? আপনার অঙ্গীকার পূর্ণ করার দিকে আমি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি । নতুবা হে আল্লাহ! আপনার ইবাদতকারী আর কেউ থাকবে না।” তখন হযরত আবু বকর ( রাঃ ) তাঁর হাত ধরে নিয়ে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! যথেষ্ট হয়েছে ।” অতঃপর নবী ( সঃ ) দাড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কাফিররা পরাজিত হয়ে যাবে এবং তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করবে ।” ( আরবী ) অর্থাৎ ফেরেশতাদের সারি একের পিছনে এক মিলিতভাবে ছিল। আবার ( আরবী )-এর অর্থ সাহায্যও হতে পারে। অর্থাৎ ফেরেশতারা সাহায্যের উপর ছিলেন। হযরত আলী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “ হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) হাজার ফেরেশতাসহ নবী ( সঃ )-এর ডান দিকে ছিলেন, যেদিকে হযরত আবু বকর ( রাঃ ) ছিলেন । আর হ্যরত মীকাঈল ( আঃ ) হাজার ফেরেশতাসহ নবী ( সঃ )-এর বাম দিকে ছিলেন, যেদিকে আমি ছিলাম।” এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, হাজারের সাহায্যের উপর অপর হাজারও ছিলেন। এ জন্যেই কেউ কেউ ( আরবী ) অর্থাৎ ( আরবী )-কে যবর দিয়ে পড়েছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আবার এটাও বর্ণিত আছে যে, হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর সাথে ছিলেন পাঁচশ জন ফেরে । হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, একজন মুসলমান একজন মুশরিকের পিছনে লেগে ছিলেন। উপর হতে মুশরিকের মাথায় একটি চাবুক মারার শব্দ শোনা গেল এবং একজন অশ্বারোহীরও পদক্ষেপের শব্দ শ্রুত হলো। তখন দেখা গেলো। যে, মুশরিক মাটিতে পড়ে গেলো। চাবুকের আঘাতে তার মাথা ফেটে গেলো। অথচ কোন মানুষ তাকে লাঠির আঘাত করেনি। যখন পিছনের আনসারী এই সংবাদ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পৌছিয়ে দিলো। তখন তিনি বললেনঃ “ তুমি সত্য বলেছ । এটা ছিল আসমানী সাহায্য।” এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ঐ যুদ্ধে সত্তরজন কাফির নিহত হলো এবং সত্তরজন বন্দী হলো। ( এটা ইমাম মুসলিম (রঃ ) ও ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) তাখরীজ করেছেন) হযরত রাফি ( রাঃ ) বদরী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন যে, একদা হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) এসে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ আপনি বদরী সাহাবীদেরকে কি মনে করেন?” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বলেনঃ “বদরী সাহাবীরা মুসলমানদের মধ্যে সর্বোত্তম ।” তখন হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) বলেনঃ “ বদরের যুদ্ধে যেসব ফেরেশতা মুসলমানদের সাহায্যের জন্যে এসেছিলেন তাদেরকেও অন্যান্য ফেরেশতাদের অপেক্ষা উত্তম মনে করা হয় ।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, হযরত উমার ( রাঃ ) যখন হাতিব ইবনে আবি বুলতা ( রাঃ )-কে হত্যা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তখন নবী ( সঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-কে বলেছিলেনঃ এই হাতিব ( রাঃ ) বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আর তুমি কি এই খবর রাখো যে, সম্ভবতঃ আল্লাহ তা'আলা বদরী সাহাবীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন? কেননা, তিনি বলেছেনঃ “ তোমরা যা ইচ্ছা তাই আমল কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি ।” ( আরবী ) অর্থাৎ ফেরেশতাদেরকে পাঠানো শুধু তোমাদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্যে এবং তোমাদের মনে প্রশান্তি আনয়নের জন্যে নতুবা আল্লাহ তা'আলা তো সর্বপ্রকারেই তোমাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। সাহায্যের ব্যাপারে তিনি ফেরেশতাদের মুখাপেক্ষী মোটেই নন। এ সাহায্য তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই সাহায্য ছিল। ফেরেস্তারা ছিল সাহায্যের বাহ্যিক রূপ । যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “ যখন তোমরা কাফিরদের সম্মুখীন হও, তখন তাদের গর্দানে আঘাত করতে থাক ( তাদেরকে হত্যা করতে থাক ) এমন কি যখন তাদের রক্তস্রোত বইয়ে দিবে তখন তাদেরকে ( বন্দী করে ) দৃঢ় রূপে বেঁধে ফেলো, তখন হয়তো বা কোন মুক্তিপণ ছাড়াই তাদেরকে ছেড়ে দেবে, কিংবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেবে, যে পর্যন্ত না তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র পরিত্যাগ করে, তোমরা এই নির্দেশ পালন করবে, আর যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তাদের থেকে ( যুদ্ধ ছাড়াই ) প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন, কিন্তু ( যুদ্ধের হুকুম এ কারণেই যে, ) যেন তিনি তোমাদের একের দ্বারা অন্যের পরীক্ষা করেন, আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, আল্লাহ তাদের আমল কখনো বিনষ্ট করবেন না । তিনি তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদের অবস্থা ঠিক রাখবেন। আর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন এবং তিনি ওটা তাদেরকে চিনিয়ে দেবেন।” আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ এটা তো কালের উত্থান ও পতন মাত্র, যাকে আমি মানবমণ্ডলীর মধ্যে আবর্তিত করে থাকি, যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে জানতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে কতিপয় লোককে শহীদ রূপে গ্রহণ করতে পারেন, আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে মোটেই পছন্দ করেন না । আর যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে ( গুনাহ থেকে ) পাক-পবিত্র করেন এবং কাফিরদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস করে দেন।” ( ৩:১৪০-১৪১ ) জিহাদের শরঈ দর্শন এটাই যে, আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদেরকে একত্ববাদীদের হাতে শাস্তি প্রদান করেন। ইতিপূর্বে তাদেরকে সাধারণ আসমানী শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া হতো। যেমন হযরত নূহ ( আঃ )-এর কওমের উপর তুফান এসেছিল, প্রথম আ’দ সম্প্রদায় ঘূর্ণি বাত্যায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং লূত ( আঃ )-এর কওমকে পাথর বর্ষিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। হযরত শুআইব ( আঃ )-এর কওমের মাথার উপর পাহাড়কে লটকিয়ে দেয়া হয়েছিল। আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা ( আঃ )-কে পাঠিয়েছিলেন এবং তার শত্রু ফিরাউনকে ধ্বংস করেছিলেন, আর তার কওমকে নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। মূসা ( আঃ )-এর উপর তাওরাত অবতীর্ণ করে কাফিরদেরকে হত্যা করা ফরয করে দেয়া হয়েছিল এবং এই নির্দেশই অন্যান্য শরীয়তের মধ্যেও কায়েম রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ আমি পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে ধ্বংস করার পর মূসা ( আঃ )-কে কিতাব প্রদান করেছিলাম, এতে লোকদের জন্যে বাসীরাত রয়েছে ( অর্থাৎ এর মাধ্যমে মানুষের অন্তদৃষ্টি খুলে যাবে ) ।”মুমিনদের কাফিরদেরকেও বন্দী করার পরিবর্তে হত্যা করে দেয়া ঐ কাফিরদের কঠিন লাঞ্ছনার বিষয় ছিল। এতে মুমিনদের অন্তরেও প্রশান্তি নেমে আসতো। যেমন এই উম্মতের মুমিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলঃ “ ঐ কাফিরদেরকে হত্যাই করে দাও । আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে অপদস্ত করতে ও শাস্তি দিতে চান এবং এ জন্যেও যে, এর ফলে তোমাদের অন্তর ঠাণ্ডা হবে। কেননা, এই অহংকারী কুরায়েশ নেতৃবর্গ মুসলমানদেরকে অত্যন্ত ঘৃণার চক্ষে দেখতো এবং তাদেরকে নানাভাবে কষ্ট দিতো। সুতরাং যদি এরা নিহত হয়ে লাঞ্ছিত হয় তবে তাদের থেকে এই প্রতিশোধ গ্রহণের ফলে মুসলমানদের অন্তর কতই না ঠাণ্ডা হয়! তাই আবূ জেহেল যখন যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেল তখন তার মৃতদেহের বড়ই অবমাননা হলো। যদি বাড়ীতে বিছানায় মরতো তবে তার এই লাঞ্ছনা ও অবমাননা হতো না। অথবা যেমন, আবু লাহাব যখন মারা গেল তখন তার মৃতদেহ এমনভাবে সড়ে পচে গেল যে, তার নিকটতম আত্মীয়েরাও তার মৃতদেহের কাছে আসতে পারছিল না। তারা তাকে গোসল দেয়ার পরিবর্তে দূর থেকে তার মৃতদেহের উপর পানি ছিটিয়ে দিয়েছিল এবং এক গর্তে তাকে দাফন করে ফেলেছিল। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবী ) ( নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী )। অর্থাৎ সম্মান ও মর্যাদা কাফিরদের জন্যে নয়, বরং দুনিয়া ও আখিরাতে মর্যাদা আল্লাহর জন্যে, তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর জন্যে এবং মুমিনদের জন্যে। তিনি আরো বলেনঃ “ আমি পার্থিব জীবনে এবং কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে সাহায্য করবো ।” কাফিরদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়ার মধ্যেও মহান আল্লাহর বিশেষ নৈপুণ্য রয়েছে। নতুবা তিনি তো স্বীয় ক্ষমতা বলেই তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারেন।
সূরা আনফাল আয়াত 10 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যা থেকে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ।
- আমার মোকাবেলায় শক্তি প্রদর্শন করো না এবং বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।
- যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত
- তোমরা তোমাদের পিতার কাছে ফিরে যাও এবং বলঃ পিতা আপনার ছেলে চুরি করেছে। আমরা তাই
- হে ইয়াহইয়া দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ কর। আমি তাকে শৈশবেই বিচারবুদ্ধি দান করেছিলাম।
- আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে,
- এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে
- পলায়ন করো না এবং ফিরে এস, যেখানে তোমরা বিলাসিতায় মত্ত ছিলে ও তোমাদের আবাসগৃহে; সম্ভবত;
- আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি,
- নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনফাল ডাউনলোড করুন:
সূরা Anfal mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anfal শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers