কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 102 তাফসীর
﴿وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍ ۖ وَإِن وَجَدْنَا أَكْثَرَهُمْ لَفَاسِقِينَ﴾
[ الأعراف: 102]
আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারীরূপে পাইনি; বরং তাদের অধিকাংশকে পেয়েছি হুকুম অমান্যকারী। [সূরা আ'রাফ: 102]
Surah Al-Araf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 102
আর তাদের বেশিরভাগের মধ্যে আমরা প্রতিশ্রুতি পালনের কিছুই পাই নি, বরং তাদের অধিকাংশকে অবশ্যই পেয়েছি ডাহা অসৎকর্মা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১০২. যে জাতিগুলোর নিকট রাসূলগণকে পাঠানো হয়েছে তাদের অধিকাংশকেই আমি আল্লাহর ওসিয়ত মানতে ও পূরা করতে দেখিনি। না তাদেরকে আল্লাহর আদেশগুলো মানতে দেখেছি। বরং তাদের অধিকাংশকেই আমি আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছি।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আমি তাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারীরূপে পাইনি,[১] বরং তাদের অধিকাংশকে সত্যত্যাগী রূপেই পেয়েছি। [১] এখান থেকে কেউ কেউ 'রূহ' বা আত্মা-জগতে যে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল, তা বুঝিয়েছেন। আবার কেউ বলেন, আযাব বা শাস্তি দূর করার জন্য নবীদের সঙ্গে তারা যে অঙ্গীকার করত, তা বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ সাধারণ অঙ্গীকার অর্থ নিয়েছেন; যা তারা এক অপরের সঙ্গে করত। এই অঙ্গীকার ভঙ্গ যে ধরণের হোক, তা ফিসক ( পাপাচার ) বলে গণ্য।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর আমরা তাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি; বরং আমরা তাদের অধিকাংশকে তো ফাসেকই পেয়েছি [ ১ ]। [ ১ ] অর্থাৎ কোন ধরনের অংগীকার পালনের পরোয়াই তাদের নেই। আল্লাহর পালিত বান্দা হবার কারণে জন্মগতভাবে প্রত্যেকটি মানুষ আল্লাহর সাথে যে অংগীকারে আবদ্ধ, তা প্রতিপালনের কোন পরোয়াই তাদের নেই। তারা সামাজিক অংগীকার পালনেরও কোন পরোয়া করে না, মানব সমাজের একজন সদস্য হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তি যার সাথে একটি সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ অন্যদিকে নিজের বিপদ-আপদ ও দুঃখকষ্টের মুহুর্তগুলোতে অথবা কোন সদিচ্ছা ও মহৎ বাসনা পোষণের মুহুর্তে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর সাথে যে অংগীকারে আবদ্ধ হয়, তাও তারা পালন করে না। এ ধরনের অংগীকার ভঙ্গ করাকে এখানে ফাসেকী বলা হয়েছে। [ সা’দী ] কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এখানে অঙ্গীকার বলে সে অঙ্গীকারই উদ্দেশ্য যা আল্লাহ্ তাআলা আদমের পিঠে মানুষ থেকে নিয়েছিলেন। [ আত-তাফসীরুস সহীহ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১০১-১০২ নং আয়াতের তাফসীর: নূহ ( আঃ ), হূদ ( আঃ ), সালিহ্ ( আঃ ), লূত ( আঃ ) ও শশাআ’ইব ( আঃ )-এর কওমের ধ্বংস সাধন, মুমিনদেরকে রক্ষাকরণ, রাসূলদের মাধ্যমে মু'জিযা ও দলীল প্রমাণাদি পেশ করতঃ হুজ্জত পূর্ণকরণ ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা দেয়ার পর এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! ঐ বস্তিগুলোর অবস্থার কথা আমি তোমাকে শুনিয়ে দিচ্ছি । তাদের কাছে নবী রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেছিল। আমি তো রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে হুজ্জত পূর্ণ করা ছাড়া কখনও কাউকে শাস্তি প্রদান করি না। এটা হচ্ছে ঐ বস্তিগুলোর ঘটনা যেগুলোর মধ্যে কতকগুলো এখনও বিদ্যমান রয়েছে এবং কতকগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি এটা করে তাদের উপর অত্যাচার করিনি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করেছিল। এজন্যে তারা নিজেরাই দায়ী।( আরবী ) অর্থাৎ পূর্বে তারা যা প্রত্যাখ্যান করেছিল তার প্রতি তারা ঈমান আনবার ছিল না। ( আরবী ) -এর ( আরবী ) অক্ষরটি হচ্ছে কারণ প্রকাশক। অর্থাৎ অহীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে তারা ঈমান আনয়ন করার হকদারই থাকলো না। যেমন অন্যত্র তিনি বলেনঃ “ তোমরা তো জানই যে, মু'জিযা পেশ করলেও এরা ঈমান আনবে না ।” এ জন্যেই এখানে তিনি বলেনঃ “ এভাবেই আল্লাহ অবিশ্বাসীদের অন্তঃকরণের উপর মোহর লাগিয়ে দেন ।আমি তাদের অধিকাংশকে অর্থাৎ পূর্ববর্তী উম্মতের অধিকাংশকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীরূপে পাইনি, বরং অধিকাংশকে পাপাচারীরূপে পেয়েছি। তারা ছিল আনুগত্য স্বীকার ও হুকুম মেনে চলার বহির্ভূত। এটা ছিল ঐ অঙ্গীকার যা রোযে আযলে আল্লাহ তা'আলা তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। ওরই উপর তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ঐ কথাটিই তাদের প্রকৃতি ও স্বভাবের মধ্যেও রাখা হয়েছে। সেই অঙ্গীকার ছিল এই-আল্লাহই হচ্ছেন তাদের প্রতিপালক ও মালিক। তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। এটা তারা স্বীকার করেও নিয়েছিল এবং সাক্ষ্য প্রদানও করেছিল। কিন্তু পরে তারা এর বিরুদ্ধাচরণ করতঃ ঐ অঙ্গীকারকে পৃষ্ঠ-পিছনে নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহর সাথে অন্যদেরকেও শরীক করতে শুরু করে, যার না আছে কোন দলীল, না আছে। কোন ইজ্জত। এটা জ্ঞান ও শরীয়ত উভয়েরই পরিপন্থী । নিষ্কলুষ প্রতি তো এই প্রতিমা পূজাকে সমর্থন করে না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত নবী ও রাসূল এই প্রতিমা পূজা থেকে মানুষকে বিরত রেখেছেন। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে। যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ আমি আমার বান্দাদেরকে মূর্তিপূজা থেকে পৃথক করে সৃষ্টি করেছিলাম । অতঃপর শয়তান এসে তাদেরকে সত্য দ্বীন থেকে সরিয়ে দেয় এবং আমি যা কিছু হালাল করেছিলাম তা তারা হারাম করে নেয়।" সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ প্রত্যেক সন্তান স্বীয় ইসলামী প্রকৃতির উপর সৃষ্ট হয় । কিন্তু তার ( ইয়াহূদী বা খ্রীষ্টান ) পিতামাতাই তাকে ইয়াহূদী বা খ্রীষ্টান অথবা মাজুসী বানিয়ে দেয়।” আল্লাহ তা'আলা স্বীয় সম্মানিত গ্রন্থে বলেনঃ “ আমি তোমাদের পূর্বে যতজন নবী পাঠিয়েছি তারা সবাই ( আরবী )-এর তলকীন করতে থেকেছে ।” ইরশাদ হচ্ছে- হে মুহাম্মাদ ( সঃ! )। তোমার পূর্বে আমি যে রাসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করবো- আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও কি উপাসনার যোগ্য বলা হয়েছিল? আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “ প্রত্যেক কওমের কাছে রাসূল পাঠিয়ে আমি বলেছিলাম- তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাগুত ও শয়তান থেকে দূরে থাকবে ।”এই ধরনের বহু আয়াত রয়েছে। ( আরবী ) -এই আয়াত সম্পর্কে হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) বলেন যে, অঙ্গীকার গ্রহণের দিন বান্দাগণ আল্লাহর একত্ববাদকে যে স্বীকার করে নিয়েছিল তা আল্লাহর গোচরে রয়েছে। এজন্যে আল্লাহর ইলমের ভিত্তিতেই তারা ঈমান আনছে না এবং এটাই হতে রয়েছে যে, দলীল প্রমাণাদি সামনে থাকা সত্ত্বেও তারা ঈমান আনছে না, যদিও তারা অঙ্গীকার গ্রহণের দিন ঈমান কবুল করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা জানতেন যে, ওটা তাদের আন্তরিকতার সাথে ছিল না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “ যদি তাদেরকে দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয় তবে পুনরায় তারা মূর্তিপূজা, শিরক ও পাপকার্য করতে থাকবে যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল ।”
সূরা আ'রাফ আয়াত 102 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ
- অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
- আমি সোলায়মানকে পরীক্ষা করলাম এবং রেখে দিলাম তার সিংহাসনের উপর একটি নিস্প্রাণ দেহ। অতঃপর সে
- যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র ও সূর্যকে কর্মে
- আমি তাদেরকে নিজের নিদর্শনাবলী দিয়েছি। অতঃপর তারা এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
- তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা।
- তিনি বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবেন না।
- অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
- আর আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আল্লাহ কি পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?
- এবং ইহাও যে, আমার শাস্তিই যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers