কোরান সূরা সাবা আয়াত 11 তাফসীর
﴿أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ ۖ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ۖ إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ﴾
[ سبأ: 11]
এবং তাকে আমি বলে ছিলাম, প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর, কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর এবং সৎকর্ম সম্পাদন কর। তোমরা যা কিছু কর, আমি তা দেখি। [সূরা সাবা: 11]
Surah Saba in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Saba ayat 11
এই বলে -- ''তুমি চওড়া বর্ম তৈরি কর, আর আংটাসমূহে যথাযথ পরিমাপ দাও, আর তোমরা সৎকর্ম কর। নিঃসন্দেহ তোমরা যা করছ আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
১১. হে দাউদ!আপনি এমন বর্ম তৈরী করুন যদ্বারা আপনার যোদ্ধারা তাদের শত্রæদের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। আর আংটাগুলো সূ2ভাবে নির্ণয় করুন। যাতে এমন বেশী ছোট না হয় যার ফলে আটকে থাকে না। আবার এমন বড় না হয় যার ফলে প্রবেশ করে না। আর নেক আমল করো। তোমরা যা কিছু করো আমি সবই দেখি। আমার নিকট কিছুই গোপন থাকে না এবং আমি তার প্রতিদান দিবো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
এবং তাকে বলেছিলাম, তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরী কর,[১] ওগুলির কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর[২] এবং তোমরা সৎকাজ কর। [৩] তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আমি তার সম্যক দ্রষ্টা। [১] سَابِغَاتٍ এর বিশেষ্য ঊহ্য আছে دُرُوْعًا ساَبِغاَتٍ অর্থাৎ পূর্ণ মাপের লম্বা লৌহবর্ম, যা যোদ্ধার পূর্ণ শরীর ঠিকভাবে আবৃত করে এবং তাকে শত্রুর আঘাত থেকে বাঁচাতে পারে। [২] ( কড়াসমূহ যথাযথ সংযুক্ত কর ) যাতে ছোট বড় না হয়ে যায়, অথবা টাইট বা ঢিলা না হয়ে যায়। অর্থাৎ কড়াসমূহ সংযুক্ত করতে তার খিলগুলি এমন পাতলা না হয়, যাতে জোড়গুলি নড়াসড়া করতেই থাকে এবং তাতে স্থিরতা না আসে। পরন্তু এমন মোটাও যেন না হয়, যাতে তা ভেঙ্গেই যায় অথবা তা জমে না যায় এবং তা পরাই সম্ভব না হয়। এখানে দাউদ ( আঃ )-কে লৌহবর্ম তৈরী করার নিয়ম বলা হয়েছে। [৩] অর্থাৎ সেই নিয়ামতের বদলে নেক আমল কর, যাতে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা যাকে পার্থিব নিয়ামত দান করেছেন তাকে সেই নিয়ামত হিসাবে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দরকার। আর আসল কৃতজ্ঞতা হল, অনুগ্রহকারীকে সন্তুষ্ট করার পূর্ণ চেষ্টা রাখা। অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য করা ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
( এ নির্দেশ দিয়ে যে ) আপনি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরী করুন [ ১ ] এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করুন’। আর তোমরা সৎকাজ কর, নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা। [ ১ ] কাতাদাহ বলেন, সর্বপ্রথম বর্ম দাউদ আলাইহিস সালামই তৈরী করেন। তার আগে কেউ সেটা তৈরী করে নি। [ তাবারী ] কাতাদাহ আরও বলেন, তিনি এটা বানাতে আগুনের ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করতেন না। তাছাড়া লাঠি দিয়েও আঘাত করতে হতো না। [ তাবারী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১০-১১ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত দাউদ ( আঃ )-এর উপর পার্থিব ও পারলৌকিক রহমত নাযিল করেছিলেন। তাকে তিনি নবুওয়াতও দান করেছিলেন, রাজত্বও দিয়েছিলেন, সৈন্য-সামন্তও প্রদান করেছিলেন, শক্তি সামর্থ্যও দিয়েছিলেন এবং আরো একটি মুজিযা দান করেছিলেন। একদিকে হযরত দাউদ ( আঃ ) মিষ্টি সুরে আল্লাহর একত্ববাদের গান ধরেছেন আর অপরদিকে পক্ষীকুলের তন্ময়তা শুরু হয়ে গেছে। পাহাড় পর্বত সুরে সুর মিলিয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা শুরু করে দিয়েছে। পক্ষীকুল ডানা নাড়া-চাড়া দিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি সুরে আল্লাহর একত্ববাদের গীত গাইতে লেগেছে। একটি সহীহ হাদীসে আছে যে, একদা রাত্রে রাসুলল্লাহ ( সঃ ) হযরত আব। মূসা আশআরী ( রাঃ )-এর কুরআন পাঠ শুনে দাঁড়িয়ে যান এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে শুনতে থাকেন। অতঃপর বলেনঃ একে নাগমায়ে দাউদীর ( দাউদ আঃ-এর মিষ্টি সুরের গানের ) কিছু অংশ দেয়া হয়েছে।”হযরত আবু উসমান নাহূদী ( রাঃ ) বলেনঃ “ আল্লাহর কসম! আমি আবূ মূসা আশআরী ( রাঃ )-এর সুরের চেয়ে মিষ্টি সুর কোন বাদ্যযন্ত্রেও শুনিনি ।” হাবশী ভাষায় ( আরবী ) শব্দের অর্থ হলোঃ ‘তাসবীহ পাঠ কর।' কিন্তু আমাদের মতে এ ব্যাপারে বহু চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। আরবী ভাষায় এ শব্দটির মধ্যে ( আরবী ) -এর অর্থ বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং পর্বতরাশি ও পক্ষীকুলকে হুকুম দেয়া হচ্ছে যে, তারাও যেন হযরত দাউদ ( আঃ )-এর সুরের সাথে সুর মিলিয়ে নেয়।( আরবী )-এর একটি অর্থ দিনে চলা’ও এসে থাকে। যেমন রাত্রে চলার আরবী শব্দ ( আরবী ) এসে থাকে। কিন্তু এই অর্থটিও এখানে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এখানে অর্থ হলোঃ দাউদ ( আঃ )-এর তাসবীহ এর সুরে তোমরাও সুর মিলাও। আরো সুন্দর সুরে আল্লাহ তাআলার হামদ বর্ণনা কর। তাছাড়া তার উপর এ অনুগ্রহও ছিল যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে লৌহকে নরম করে দিয়েছিলেন। ঐ লৌহকে ভাটিতে দিবার কোন প্রয়োজন হতো না বা হাতুড়ী দিয়ে পিটবারও দরকার হতো না। পিটবার কাজ হাত দিয়েই হয়ে যেতো। তার হাতে লোহাকে সূতার মত মনে হতো। ঐ লোহা দিয়ে তিনি আল্লাহর নির্দেশক্রমে লৌহ-বর্ম তৈরী করতেন। এমন কি একথাও বলা হয়ে থাকে যে, তিনিই সর্বপ্রথম পৃথিবীতে লৌহ নির্মিত যুদ্ধ-পোশাক তৈরী করেছিলেন। দৈনিক তিনি একটি করে বর্ম তৈরী করতেন। ছয় হাজার টাকায় এক একটি বর্ম বিক্রি করতেন। দৈনিক বাড়ীর খরচের জন্যে দু' হাজার টাকা রেখে দিতেন এবং বাকী চার হাজার টাকা লোকদেরকে খাওয়াতে পরাতে ব্যয় করতেন। যেরা বা বর্ম তৈরীর পদ্ধতি স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা তাঁকে শিখিয়েছিলেন যে, কড়া যেন ঠিকমত দেয়া হয়। ছোট বড় যেন না হয়। মাপ যেন অনুমান মত হয়। কড়াগুলো যেন শক্ত হয়।ইবনে আসাকীর ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত দাউদ ( আঃ ) ছদ্মবেশে শহরে বের হতেন। লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। স্থানীয় ও বহিরাগত লোকদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেনঃ “ দাঊদ ( আঃ ) কেমন লোক?” প্রত্যেককেই তিনি তাঁর প্রশংসা করতে শুনতেন । কারো নিকট হতে তিনি সংশোধনযোগ্য কোন অপরাধের কথা শুনতে পেতেন না। একদা আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে তাঁর কাছে মানুষরূপে প্রেরণ করেন। হযরত দাউদ ( আঃ )-এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়ে গেল। তিনি অন্যান্যদের কাছে যেসব প্রশ্ন করতেন তাঁকেও সেই ভাবে প্রশ্ন করলেন। ফেরেশতা উত্তরে বললেনঃ “ দাউদ ( আঃ ) লোকটি তো ভাল, কিন্তু একটি দোষ যদি তাঁর মধ্যে না থাকতো । তবে তিনি কামেল লোকে পরিণত হতেন।” হযরত দাউদ ( আঃ ) অত্যন্ত আগ্রহের সাথে পুনরায় মানুষরূপী ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ ঐ দোষটি কি?” ফেরেশতা জবাব দিলেনঃ “তিনি নিজের বোঝা মুসলমানদের বায়তুল মালের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন । তিনি স্বয়ং তা থেকে গ্রহণ করেন এবং তার পরিবারবর্গও তা হতে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।” হযরত দাউদ ( আঃ )-এর অন্তরে কথাটি দাগ কেটে দিল। তিনি মনে মনে বললেনঃ “ লোকটি সঠিক কথাই বলেছেন ।” সাথে সাথে তিনি আল্লাহর দরবারে সিজদায় পড়ে গেলেন ও কেঁদে কেঁদে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি বলতে লাগলেনঃ “ হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দিন যার দ্বারা আমি আমার পেট পূর্ণ করতে পারি । কোন শিল্প বা কারিগরি বিদ্যা আমাকে শিখিয়ে দিন যার আয় আমার ও আমার পরিবারবর্গের জন্যে যথেষ্ট হয়।” আল্লাহ্ তা'আলা তার প্রার্থনা ককূল করে নেন এবং তাঁকে একজন শিল্পী বানিয়ে দেন। তাঁর প্রতি রহমত হিসেবে লোহাকে তিনি তার জন্যে নরম করে দেন। দুনিয়ায় সর্বপ্রথম তিনিই যেরা বা লৌহ-বর্ম তৈরী করেছিলেন। তিনি একটি বর্ম তৈরী করে তা বিক্রী করে দিতেন এবং বিক্রয়লব্ধ টাকা তিন ভাগ করতেন। এক ভাগ নিজের ও পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের কাজে ব্যয় করতেন, এক ভাগ দান করতেন এবং এক ভাগ জমা করে রেখে দিতেন, যাতে দ্বিতীয় বর্ম তৈরী না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর বান্দাদেরকে তা থেকে দান-খয়রাত করতে পারেন। হযরত দাউদ ( আঃ )-কে আল্লাহ্ তা'আলা সঙ্গীত শিক্ষা দিয়েছিলেন যা অতুলনীয় ছিল। তিনি যখন আল্লাহর কালামের ঝংকার তুলতেন তখন মধুর কণ্ঠের সুর পশু-পাখী, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সব কিছুকেই মাতিয়ে তুলতো। তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আল্লাহর কালাম শুনতে মশগুল হয়ে পড়তো। বর্তমান যুগের সমস্ত বাদ্যযন্ত্র শয়তানী কায়দায় দাউদী সুরের বিকাশ মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো হযরত দাউদ ( আঃ )-এর তুলনাবিহীন সুরের অতি নগণ্য অংশ মাত্র।আল্লাহ তাআলা নিজের এসব নিয়ামতের বর্ণনা দেয়ার পর নির্দেশ দিচ্ছেনঃ এখন তোমাদেরও উচিত সকর্মে আত্মনিয়োগ করা এবং আমার আদেশের বিপরীত কিছু না করা। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, যার এতগুলো ইহসান রয়েছে তার নির্দেশ কি পালিত হবে না? তোমরা যা কিছু কর আমি ওর সম্যক দ্রষ্টা। তোমাদের সব আমল, ছোট হোক, বড় হোক, ভাল হোক বা মন্দই হোক, আমার কাছে প্রকাশমান। কিছুই আমার কাছে গোপন নেই।
সূরা সাবা আয়াত 11 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- এবং আমরাই সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান থাকি।
- আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। অতএব,
- হে কাফের সম্প্রদায়, তোমরা আজ ওযর পেশ করো না। তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে, যা
- কোন মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ওহীর মাধ্যমে
- তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? বলুন, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার
- যখন সে আমার কোন আয়াত অবগত হয়, তখন তাকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করে। এদের জন্যই রয়েছে
- আমি এই কোরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোক অস্বীকার
- তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমাদের কৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত
- তোমাদের পালনকর্তা তিনিই, যিনি তোমাদের জন্যে সমুদ্রে জলযান চালনা করেন, যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষন
- এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা সাবা ডাউনলোড করুন:
সূরা Saba mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Saba শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers