কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 149 তাফসীর
﴿وَلَمَّا سُقِطَ فِي أَيْدِيهِمْ وَرَأَوْا أَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوا قَالُوا لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾
[ الأعراف: 149]
অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হল এবং বুঝতে পারল যে, আমরা নিশ্চিতই গোমরাহ হয়ে পড়েছি, তখন বলতে লাগল, আমাদের প্রতি যদি আমাদের পরওয়ারদেগার করুণা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ধবংস হয়ে যাব। [সূরা আ'রাফ: 149]
Surah Al-Araf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 149
আর যখন তাদের হাতে কামড় পড়লো আর দেখলো যে তারা বিপথে চলে গেছে, তারা বললে -- ''যদি না আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি করুণা করেন ও আমাদের পরিত্রাণ করেন তবে আমরা আলবৎ ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৪৯. তবে তারা যখন লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছে এবং এ কথা জানতে পেরেছে যে, তারা গো-বাছুরকে আল্লাহর পাশাপাশি মা’বূদ বানিয়ে সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গেছে তখন তারা আল্লাহর নিকট বিনয়ী হয়ে বললো: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি যদি আমাদেরকে আপনার আনুগত্যের তাওফীক দিয়ে দয়া না করেন আর আমাদের গো-বাছুর পূজার অপকর্মটি ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তারা যখন অনুতপ্ত হল[১] ও দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন তারা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’ [১] سُقط في أيديهم এটি একটি পরিভাষা, যার অর্থঃ লজ্জিত বা অনুতপ্ত হওয়া। তাদের এ অনুতাপ মূসা ( আঃ )-এর ফিরে আসার পর হল, যখন তিনি তাদেরকে এর উপর তিরস্কার করলেন ও ধমক দিলেন; যেমন সূরা ত্বাহা ২০:৯৭নং আয়াতে আছে। এখানে আগে এই জন্যই উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে তাদের কাজ ও কথার বর্ণনা একত্রে হয়ে যায়। ( ফাতহুল কাদীর )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর তারা যখন অনুতপ্ত হল এবং দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন তারা বলল, ‘আমাদের রব যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবই [ ১ ]।’ [ ১ ] মূসা 'আলাইহিস সালাম যখন তাওরাত গ্রহণ করার জন্য তুর পাহাড়ে ইবাদাত করতে গেলেন এবং ইতোপূর্বে ত্রিশ দিন ও ত্রিশ রাত ইবাদাতের যে নির্দেশ হয়েছিল; সে মতে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলে গিয়েছিলেন যে, ত্রিশ দিন পরে আমি ফিরে আসব, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা যখন আরো দশ দিন মেয়াদ বাড়িয়ে দিলেন, তখন ইসরাঈলী সম্প্রদায় তাদের চিরাচরিত তাড়াহুড়া ও ভ্রষ্টতার দরুন নানা রকম মন্তব্য করতে আরম্ভ করল। তার সম্পপ্রদায়ে "সামেরী' নামে একটি লোক ছিল। সে ছিল একান্তই দুর্বল বিশ্বাসের লোক। কাজেই সে সুযোগ বুঝে বনী-ইসরাঈলের লোকদের বললঃ তোমাদের কাছে ফিরআউন সম্প্রদায়ের যেসব অলংকারপত্র রয়েছে, সেগুলো তো তোমরা কিবতীদের কাছ থেকে ধার করে এনেছিলে, এখন তারা সবাই ডুবে মরেছে, আর অলংকারগুলো তোমাদের কাছেই রয়ে গেছে, কাজেই এগুলো আমাকে দাও। বনী-ইসরাঈলরা তার কথামত সমস্ত অলংকারাদি তার ( সামেরীর ) কাছে এনে জমা দিল। সে এই সোনা-রুপা দিয়ে একটি বাছুরের প্রতিমূর্তি তৈরী করল এবং জিবরল 'আলাইহিস সালামএর ঘোড়ার খুরের তলার মাটি যা পূর্ব থেকেই তার কাছে রাখা ছিল, সোনারুপাগুলো আগুনে গলাবার সময় সে তাতে ঐ মাটি মিশিয়ে দিল। ফলে বাছুরের প্রতিমূর্তিটিতে জীবনী শক্তির নিদর্শন সৃষ্টি হল এবং তার ভিতর থেকে গাভীর মত হাম্বা রব বেরুতে লাগল। এ ক্ষেত্রে ( عِجْلًا ) শব্দের ব্যাখ্যায় ( جَسَدًا لَّهٗ خُوَارٌ ) বলে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। [ ইবন কাসীর ] সামেরীর এ আবিস্কার যখন সামনে উপস্থিত হল, তখন সে বনী-ইসরাঈলদেরকে কুফরীর প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়ে বলল, “ এটাই হল ইলাহ । মূসা আলাইহিস সালাম তো আল্লাহর সাথে কথা বলার জন্য গেছেন তুর পাহাড়ে। মূসা আলাইহিস সালামের সত্যিই ভুলই হয়ে গেল " বনী-ইসরাঈলদের সবাই পূর্ব থেকেই সামেরীর কথা শুনত। আর এখন তার এই অদ্ভুত ম্যাজিক দেখার পর তো আর কথাই নেই; সবাই একেবারে তার ভক্তে পরিণত হয়ে গেল এবং সে বাছুরকে ইলাহ মনে করে তারই ইবাদাতে প্রবৃত্ত হল।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৪৮-১৪৯ নং আয়াতের তাফসীর: বানী ইসরাঈলের বিভ্রান্ত লোকেরা বাছুর পূজা করেছিল। কিবতীদের নিকট থেকে যেসব অলংকার ধারে নেয়া হয়েছিল সেগুলো দ্বারা সামেরী একটি বাছুর তৈরী করেছিল। ওর পেটের মধ্যে ঐ মুষ্টির মাটি নিক্ষেপ করেছিল যা সে হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর ঘোড়ার পায়ের থেকে গ্রহণ করেছিল। সুতরাং ঐ বাছুরের মধ্য থেকে গাভীর মত শব্দ বের হতে লাগলো। এ সবকিছুই হযরত মূসা ( আঃ )-এর অনুপস্থিতির সময় ঘটেছিল। ভূরে আল্লাহ তা'আলা তাকে এই ফিত্না সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। তাই মূসা ( আঃ )-কে সম্বোধন করা হচ্ছে- হে মূসা! তোমার অনুপস্থিতির সুযোগে আমি তোমার কওমকে পরীক্ষায় ফেলেছি। অর্থাৎ সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে! ঐ বাছুরটিকে রক্ত-মাংস দ্বারা তৈরী করা হয়েছিল এবং ওর মধ্য থেকে শব্দ বের হচ্ছিল, না কি ওটাকে সোনা দ্বারা তৈরী করা হয়েছিল এবং ওর মধ্যে বাতাস প্রবেশ করেছিল, ফলে ওর মধ্য থেকে গাভীর শব্দ বের হচ্ছিল, এ ব্যাপারে তাফসীরকারকদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কথিত আছে যে, ঐ বাছুরটিকে তৈরী করার পর যখন ওটা গাভীর মত শব্দ করতে শুরু করলো তখন জনগণ ওর চতুর্দিকে নাচতে নাচতে প্রদক্ষিণ করতে লাগলো এবং তারা বড় রকমের ফিত্রায় পতিত হলো। তারা পরস্পর বলাবলি করতে শুরু করলোঃ “ এটাই আমাদের মা’রূদ এবং মূসারও ( আঃ ) মা’রূদ । মূসা ( আঃ ) ভুলের মধ্যে পতিত হয়েছেন। তাই ইরশাদ হচ্ছে- “ তারা কি এটুকুও বুঝে না যে, ওটা শব্দ করছে তাতে কি হয়েছে? ওটাতো তাদের কোন কথার উত্তর দিতে পারে না! না তাদের কোন উপকার করতে পারে, না কোন ক্ষতি করতে পারে!” সুতরাং অত্র আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “তারা কি দেখেনি যে, ওটা তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখায় না? তবুও তারা ওটাকে মা'বূদরূপে গ্রহণ করে নিলো, বস্তুতঃ তারা ছিল বড় অত্যাচারী ।” তারা বাছুরকে মাবুদরূপে গ্রহণ করার ফলে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল এবং আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকেও ভুলে বসলো। তাদের অন্তরে অজ্ঞতা ও মূখতার পর্দা পড়ে গেছে। যেমন ইতিপূর্বে হযরত আবু দারদা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কোন কিছুর মহব্বত তোমাদেরকে অন্ধ ও বধির করে ফেলবে ।” ( এটা ইমাম আহমাদ (রঃ ) ও ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অতঃপর যখন তারা নিজেদের কর্মের উপর লজ্জিত হলো এবং বুঝতে পারলো যে, বাস্তবিকই তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তখন বলতে লাগলোঃ “ যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে আমরা বড়ই ক্ষগ্রিস্ত হয়ে পড়বো ও ধ্বংস হয়ে যাবো । যাহাক তারা নিজেদের পাপকে স্বীকার করে নিলো এবং অনুশোচনা করলো। কেউ কেউ য়্যারহামনা এর ( আরবী ) স্থলে দ্বারা তারহামনা ও য়্যাগফিরলানা এর স্থলে তাগফিরলানা পড়েছেন। এইভাবে ( আরবী ) কর্তা হওয়ার পরিবর্তে ( আরবী ) বা সম্বোধন হয়ে যাচ্ছে।
সূরা আ'রাফ আয়াত 149 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আর যারা সৌভাগ্যবান তারা বেহেশতের মাঝে, সেখানেই চিরদিন থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে।
- অতঃপর আমি তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। উভয় বস্তি প্রকাশ্য রাস্তার উপর অবস্থিত।
- তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে এজন্যে এসেছ যে আমরা এক আল্লাহর এবাদত করি এবং
- এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে।
- বরং কাফেররা এর প্রতি মিথ্যারোপ করে।
- এবং যারা বিশ্বাস স্থাপণ করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তাদেরকে এমন উদ্যানে প্রবেশ করানো হবে,
- আমি অবশ্যই কাফেরদেরকে কঠিন আযাব আস্বাদন করাব এবং আমি অবশ্যই তাদেরকে তাদের মন্দ ও হীন
- যদি আপনি তাদেরকে রেহাই দেন, তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে
- তবুও কি সেই আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করতে সক্ষম নন?
- কিন্তু কথা হল এই যে, তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে আরম্ভ করেছে যাকে বুঝতে, তারা অক্ষম।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers