কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 158 তাফসীর
﴿۞ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ﴾
[ البقرة: 158]
নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা’আলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন। [সূরা বাকারাহ্: 158]
Surah Al-Baqarah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 158
নিঃসন্দেহ সাফা ও মারওয়াহ্ আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের অন্যতম। তাই যে কেউ গৃহে হজ করে বা উমরাহ করে তার জন্য অপরাধ হবে না যদি সে এ দুইয়ের মাঝে তওয়াফ করে। আর যে কেউ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই অতি দানশীল, সর্বজ্ঞাতা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৫৮. কা’বা শরীফের নিকটবর্তী প্রসিদ্ধ সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় শরীয়তের প্রকাশ্য নিদর্শন। সুতরাং যে ব্যক্তি হজ্জ ও উমরাহ করার উদ্দেশ্যে বাইতুল্লায় যাবে সে যদি এ দু’টির মাঝে সাঈ করতে চায় তাতে তার কোন গুনাহ হবে না। এখানে গুনাহ নেই বলে ওই মুসলমানদেরকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যারা এ দু’য়ের মাঝে সাঈ করাকে জাহিলী কাজ বলে মনে করতো। তাই আল্লাহ তা‘আলা এখানে সুস্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছেন যে, এটি মূলতঃ হজ্জের কর্মকাÐেরই অধীন। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও নিষ্ঠার সাথে কোন মুস্তাহাব আমল করবে আল্লাহ তা‘আলা তাতে সন্তুষ্ট হবেন এবং অচিরেই তার প্রতিদান দিবেন। তিনি জানেন কে নেক আমল করছে এবং কে সত্যিকারের সাওয়াবের উপযুক্ত।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নিশ্চয় স্বাফা ও মারওয়া ( পাহাড় দুটি ) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।[১] সুতরাং যে কা’বাগৃহের হজ্ব কিংবা উমরাহ সম্পন্ন করে, তার জন্য এই ( পাহাড় ) দুটি প্রদক্ষিণ ( সাঈ ) করলে কোন পাপ নেই। [২] আর কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন পুণ্য কাজ করলে, আল্লাহ গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞাতা। [১] شَعَائِرُ হল شَعِيْرَةٌ এর বহুবচন। যার অর্থ, নিদর্শন বা প্রতীক। এখানে নিদর্শনসমূহ বলতে হজ্জ আদায়ের সময় ইবাদতের বিভিন্ন স্থান ( যেমন, মিনা, আরাফাত, মুযদালিফা, সাঈ ও কুরবানীর স্থান ) কে বুঝানো হয়েছে, যা আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট। [২] স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করা হজ্জের একটি রুকন ( প্রধান অঙ্গ )। কিন্তু কুরআনের শব্দ 'কোন পাপ নেই' থেকে কোন কোন সাহাবীর সন্দেহ হয়েছিল যে, স্বাফা-মারওয়ার সাঈ জরুরী নয়। আয়েশা ( রাযিআল্লাহু আনহা ) যখন এ ব্যাপারে অবগত হলেন, তখন বললেন, যদি এর অর্থ এই হত, ( যা তোমরা মনে কর ) তাহলে মহান আল্লাহ এইভাবে বলতেন, {فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ لاَ يَطَّوَّفَ بِهِمَا} ( প্রদক্ষিণ বা সাঈ না করলে কোন পাপ নেই। ) তারপর এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ বললেন যে, আনসার সাহাবীগণ ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে 'মানাত' মূর্তির নামে 'তালবিয়া' পড়ত এবং মুশাল্লাল পাহাড়ে তার পূজা করত। মক্কায় পৌঁছে এই ধরনের লোক স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করাকে পাপ মনে করত। ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁরা রসূল ( সাঃ )-কে জিজ্ঞাসা করলে এই আয়াত নাযিল হয়। যাতে বলা হয়েছে, স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করা গুনাহ নয়। ( সহীহ বুখারী, কিতাবুল হজ্জঃ পরিচ্ছেদঃ স্বাফা-মারওয়ার সাঈ ওয়াজিব ) কেউ কেউ এর কারণ এইভাবে বর্ণনা করেছেন যে, জাহেলিয়াতে মুশরিকরা স্বাফা পাহাড়ে 'ইসাফ' এবং মারওয়ায় 'নায়েলা' নামক মূর্তি স্থাপন করেছিল। সাঈ করার সময় তারা এদেরকে চুম্বন বা স্পর্শ করত। যখন তারা ইসলাম কবুল করে, তখন তাদের মাথায় এই খেয়াল এল যে, মনে হয় স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করলে গুনাহ হতে পারে। কারণ, ইসলামের পূর্বে তারা উক্ত দু'টি মূর্তির জন্য সাঈ করত। মহান আল্লাহ এই আয়াতে তাদের সন্দেহ ও মনের কিন্তুকে দূর করে দিয়েছেন। এখন ( উমরাহ ও হজ্জে ৭ বার যাওয়া-আসার মাধ্যমে ) এই সাঈ করা জরুরী। যার শুরু স্বাফা থেকে হবে এবং শেষ হবে মারওয়ায়। ( আইসারুত্ তাফাসীর )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের [ ১ ] অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ ( কা’বা ) ঘরের হজ [ ২ ] বা “ উমরা [ ৩ ] সম্পন্ন করে, এ দু'টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোন পাপ নেই [ ৪ ] । আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন সৎকাজ করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ উত্তম পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ। [ ১ ] ( شَعَائِرِاللّٰهِ ) এখানে ( شَعَائِرِ ) শব্দটি ( شعيرة ) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন। ( شَعَائِرِاللّٰهِ ) বলতে সেসব আমলকে বুঝায়, যেগুলোকে আল্লাহ্ তা'আলা দ্বীনের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। [ ২ ] ( حج ) এর শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা পোষণ করা, সংকল্প করা। কুরআন-সুন্নাহর পরিভাষায় বিশেষ সময়ে বিশেষ অবস্থায় বায়তুল্লাহ্ শরীফে আল্লাহ্র ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করে বিশেষ ধরনের কিছু কর্ম সম্পাদন করাকে হজ্ব বলা হয়ে থাকে। [ ৩ ] ( عمرة ) শব্দের আভিধানিক অর্থ দর্শন করা। শরীআতের পরিভাষায়, ইহরামসহ আল্লাহ্র ইবাদতের উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ্ শরীফে হাযির হয়ে তাওয়াফ-সায়ী প্রভৃতি বিশেষ কয়েকটি ইবাদাত সম্পাদনের নামই উমরাহ। [ ৪ ] ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ বায়তুল্লাহর নিকটবতী দুটি পাহাড়ের নাম। হজ কিংবা উমরার সময় কা'বা ঘরের তওয়াফ করার পর এ দুটি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হয় শরীআতের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘সা’য়ী’। জাহেলী যুগেও যেহেতু এ সায়ীর রীতি প্রচলিত ছিল এবং তখন এ দুটি পাহাড়ের মধ্যে কয়েকটি মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, এ জন্য মুসলিমদের কারো কারো মনে একটা দ্বিধার ভাব জাগ্রত হয়েছিল যে, বোধহয় এ সা’য়ী জাহেলী যুগের কোন অনুষ্ঠান এবং ইসলাম যুগে এর অনুসরণ করা হয়ত গোনাহ্র কাজ। কোন কোন লোক যেহেতু জাহেলী যুগে একে একটা অর্থহীন কুসংস্কার বলে মনে করতেন, সেজন্য ইসলাম গ্রহণের পরও তারা একে জাহেলিয়াত যুগের কুসংস্কার হিসেবেই গণ্য করতে থাকেন। এরূপ সন্দেহের নিরসনকল্পে আল্লাহ্ তা'আলা যেভাবে বায়তুল্লাহ্ শরীফের কেবলা হওয়া সম্পর্কিত সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছেন, তেমনিভাবে এ আয়াতে বায়তুল্লাহ সংশ্লিষ্ট আরও একটি সংশয়ের অপনোদন করে দিয়েছেন। তাছাড়া রাসূলের বিভিন্ন হাদীস দ্বারাও সাফা-মারওয়ার মাঝখানের সায়ী প্রমাণিত। [ দেখুন, মুসনাদে আহমাদ: ৬/৪২১, ৪২২ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
হযরত আয়েশা ( রাঃ )-কে হযরত উরওয়া ( রাঃ ) জিজ্ঞেস করেনঃ এ আয়াত দ্বারা এরূপ জানা যাচ্ছে যে, তাওয়াফ না করায় কোন দোষ নেই।' তিনি বলেনঃ হে প্রিয় ভাগনে! তুমি সঠিক বুঝতে পারনি। তুমি যা বুঝেছ ভাবার্থ তাই হলে ( আরবি ) বলা হতো। বরং এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ এই যে, মাশআল’ নামক স্থানে মানাত' নামে প্রতিমাটি অবস্থিত ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে মদীনার আনসারেরা তার পূজা করতো এবং যে তার উপাসনায় দাঁড়াতো সে সাফা ও মারওয়া’ পর্বতদ্বয়ের তাওয়াফকে দূষণীয় মনে করতো। এখন ইসলাম গ্রহণের পর জনগণ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে ‘সাফা' ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের তাওয়াফের দোষ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং এতে বলা হয় যে, এই তাওয়াফে কোন দোষ নেই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাফা ও মারওয়া’র তাওয়াফ করেন। এ জন্যেই এটা সুন্নাত রূপে পরিগণিত হয়। এখন এই তাওয়াফকে ত্যাগ করা কারও জন্যে উচিত নয়। ( বুখারী ও মুসলিম )। হযরত আবু বকর বিন আবদুর রহমান ( রঃ ) এই বর্ণনাটি শুনে বলেনঃ “ নিঃসন্দেহে এটা একটা ইমী আলোচনা । আমি তো এর পূর্বে এটা শ্রবণই করিনি। কোনো কোনো বিদ্বান ব্যক্তি বলেন যে, হযরত আনসার ( রাঃ ) বলেছিলেনঃ “ আমাদের প্রতি বায়তুল্লাহ শরীফকে তাওয়াফ করার নির্দেশ রয়েছে, সাফা ও মারওয়া’র তাওয়াফের নয় । সেই সময় এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এই আয়াতটির শান-ই-নুকূল এ দুটো হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে।হযরত আনাস ( রাঃ ) বলেন ‘আমরা সাফা ও মারওয়া’র তাওয়াফকে অজ্ঞতাপূর্ণ কাজ মনে করতাম এবং ইসলামের অবস্থায় এ থেকে বিরত থাকতাম। অবশেষে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই দু'টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থলে বহু প্রতিমা বিদ্যমান ছিল এবং শয়তানেরা সারা রাত ধরে ওর মধ্যে ঘুরাফিরা করতো। ইসলাম গ্রহণের পর জনসাধারণ এখানকার তাওয়াফ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। আসাফ’ মূর্তিটি ছিল ‘সাফা পাহাড়ের উপর এবং নায়েলা মূর্তিটি ছিল মারওয়া পাহাড়ের উপর। মুশরিকরা ঐ দু'টোকে স্পর্শ করতো ও চুম্বন দিতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর মুসলমানেরা তাদের থেকে পৃথক হয়ে পড়ে। কিন্তু এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার ফলে এখানকার তাওয়াফ সাব্যস্ত হয়। সীরাত-ই-মুহাম্মদ বিন ইসহাক' নামক পুস্তকে রয়েছে যে, ‘আসাফ’ ও নায়েলা’ একজন পুরুষ তোক ও অপরজন স্ত্রীলোক ছিল। এই অসৎ ও অসতী দু’জন কা'বা গৃহে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে আল্লাহ তাদের দুজনকে পাথরে পরিণত করেন। কুরাইশরা তাদেরকে কা'বার বাইরে রেখে দেয় যেন জনগণ এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু কয়েক যুগ অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের পূজা আরম্ভ হয়ে যায় এবং তাদেরকে সাফা ও মারওয়া' পাহাড়ে এনে দাড় করিয়ে দেয়া হয় এবং তাদের তাওয়াফ শুরু হয়ে যায়। সহীহ মুসলিমের মধ্যে একটি সুদীর্ঘ হাদীস রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ কার্য সমাপন করেন তখন তিনি রুকন'-কে ছেড়ে বাবুস্ সাফা' দিয়ে বের হন এবং ঐ আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর বলেনঃ আমিও ওটা থেকেই শুরু করবো যা থেকে আল্লাহ তাআলা শুরু করেছেন।' একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি বলেনঃ “ তোমরা তার থেকেই আরম্ভ কর যার থেকে আল্লাহ তা'আলা আরম্ভ করেছেন । অর্থাৎ সাফা থেকে চলতে আরম্ভ করে মারওয়া পর্যন্ত যাও। হযরত হাবীবা বিনতে আবী তাজবাত ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি রাসূলুল্লাহকে ( সঃ ) দেখেছি, তিনি ‘সাফা মারওয়া তাওয়াফ করছিলেন । জনমণ্ডলী তার আগে আগে ছিল এবং তিনি তাদের পিছনে ছিলেন। তিনি কিছুটা দৌড়িয়ে চলছিলেন এবং এই কারণে তাঁর লুঙ্গি তাঁর জানুর মধ্যে এদিক ওদিক হচ্ছিল। আর তিনি পবিত্র মুখে উচ্চারণ করছিলেনঃ “ হে জনমণ্ডলী! তোমরা দৌড়িয়ে চল । আল্লাহ তা'আলা তোমাদের উপর দৌড়ানো লিখে দিয়েছেন।' ( মুসনাদ-ই-আহমাদ )। এরকমই অর্থের আরও একটি বর্ণনা রয়েছে। এই হাদীসটি ঐসব লোকের দলীল যারা সাফা ও মারওয়া দৌড়কে হজ্বের রুকন মনে করে থাকেন। যেমন হযরত ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) এবং তাঁর অনুসারীদের মযহাব এটাই। ইমাম আহমাদেরও ( রঃ ) এরকমই একটি বর্ণনা রয়েছে। ইমাম মালিকেরও ( রঃ ) প্রসিদ্ধ মযহাব এটাই। কেউ কেউ একে ওয়াজিব বলেন বটে কিন্তু হজ্বের রুকন বলেন না। যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক বা ভুলবশতঃ একে ছেড়ে দেয় তবে তাকে একটি জন্তু জবাহ করতে হবে। ইমাম আহমাদ ( রঃ ) হতে একটি বর্ণনা এরকমই বর্ণিত আছে। অন্য একটি দলও এটাই বলে থাকেন। অন্য একটি উক্তিতে একে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা ( রঃ ) ইমাম সাওরী ( রঃ ) ইমাম শাবী ( রঃ ) এবং ইবনে সিরিন ( রঃ ) একথাই বলে থাকেন। হযরত আনাস ( রাঃ ) হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম মালিক ( রঃ ) ও আতাবিয়্যাহ' নামক পুস্তকে এটা বর্ণনা করেছেন ( আরবি ) এটিই তার দলীল। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী অগ্রগণ্য। কেননা, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বয়ং সাফা-মারওয়া তাওয়াফ করেছেন এবং বলেছেন, 'হজ্বের আহকাম আমার নিকট হতে গ্রহণ কর। তিনি তাঁর এই হজ্বে যা কিছু করেছেন তাই ওয়াজিব হয়ে গেছে-তা অবশ্য পালনীয়। কোন কাজ যদি কোন বিশেষ দলীলের মাধ্যমে করণীয় হতে উঠিয়ে দেয়া হয় তবে সেটা অন্য কথা। তা ছাড়া হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর দৌড়ানো কাজ লিখে দিয়েছেন অর্থাৎ ফরজ করেছেন। মোট কথা এখানে বর্ণিত হচ্ছে যে, সাফা ও মারওয়া’র তাওয়াফও আল্লাহ তা'আলার শারঈ আহকামের অন্তর্গত। হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) কে হজ্বব্রত পালন করবার জন্যে এটা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে হযরত হাজেরার ( আঃ ) সাত বার প্রদক্ষিণই হচ্ছে সাফা মারওয়া’য় দৌড়ানোর মূল উৎস। যখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) তাঁকে তাঁর ছোট শিশুপুত্রসহ এখানে রেখে গিয়েছিলেন এবং তার খানা-পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল ও শিশু ওষ্ঠাগত প্রাণ হয়ে পড়েছিল তখন হযরত হাজেরা ( আঃ ) অত্যন্ত উদ্বেগ এবং দুর্ভাবনার সাথে এই পবিত্র পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে স্বীয় অঞ্চল ছড়িয়ে দিয়ে মহান আল্লাহর নিকট ভিক্ষা চাচ্ছিলেন। অবশেষে মহান আল্লাহ তার দুঃখ, চিন্তা, কষ্ট ও দুর্ভাবনা সব দূর করে দিয়েছিলেন। এখানে প্রদক্ষিণকারী হাজীগণেরও উচিত যে, তারা যেন অত্যন্ত দারিদ্র ও বিনয়ের সাথে এখানে প্রদক্ষিণ করেন এবং মহান আল্লাহর নিকট নিজেদের অভাব, প্রয়োজন এবং অসহায়তার কথা পেশ করেন ও মনের সংস্কার এবং সুপথ প্রাপ্তির প্রার্থনা জানান, আর পাপ মোচনের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাদের দোষ-ক্রটি হতে মুক্ত থাকা এবং অবাধ্যতার প্রতি ঘৃণা থাকা উচিত। তাদের কর্তব্য হবে এই যে, তারা যেন স্থিরতা, পুণ্য, মুক্তি এবং মঙ্গলের জন্যে প্রার্থনা করেন ও আল্লাহ তা'আলার নিকট আরয করেন যে, তিনি যেন তাদেরকে অন্যায় ও পাপরূপ সংকীর্ণ পথ হতে সরিয়ে উৎকর্ষতা, ক্ষমা এবং পুণ্যের তাওফীক প্রদান করেন, যেমন তিনি হযরত হাজেরার ( আঃ ) অবস্থাকে এদিক হতে ওদিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেন যে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করে অর্থাৎ সাতবার প্রদক্ষিণের স্থলে আটবার বা নয়বার প্রদক্ষিণ করে কিংবা নফল হজ্ব এবং উমরার মধ্যে সাফা-মারওয়া’র তাওয়াফ করে। আবার কেউ কেউ একে সাধারণ রেখেছেন অর্থাৎ প্রত্যেক পুণ্যের কাজই অতিরিক্তভাবে করে। তারপরে আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তিনি গুণগ্রাহী ও সর্বজ্ঞাত অর্থাৎ আল্লাহ পাক অল্প কাজেই বড় পুণ্য দান করে থাকেন এবং প্রতিদানের সঠিক পরিমাণ তার জানা আছে। তিনি কারও পুণ্য এতটুকুও কম করবেন না, আবার তিনি অনু পরিমাণ অত্যাচারও করবেন না। তবে তিনি পুণ্যের প্রতিদান বৃদ্ধি করে থাকেন, এবং নিজের নিকট হতে বিরাট প্রতিদান প্রদান করে থাকেন। সুতরাং হামদ’ ও ‘শুকর’ আল্লাহ পাকেরই জন্যে।
সূরা বাকারাহ্ আয়াত 158 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তারা আরো বলে, এ ওয়াদা কবে আসবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক?
- বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার
- হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের
- কিংবা বলতে শুরু করঃ যদি আমাদের প্রতি কোন গ্রন্থ অবতীর্ণ হত, আমরা এদের চাইতে অধিক
- হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই।
- তিনি বললেনঃ যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে
- বরং কাফেররা এর প্রতি মিথ্যারোপ করে।
- আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা বলছ, তা এই যে, তুমি বনী-ইসলাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছ।
- হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা
- আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:
সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers