কোরান সূরা নাজ্ম আয়াত 18 তাফসীর
﴿لَقَدْ رَأَىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ﴾
[ النجم: 18]
নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে। [সূরা নাজ্ম: 18]
Surah An-Najm in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Najm ayat 18
তিনি নিশ্চয়ই তাঁর প্রভুর শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলোর মধ্যে চেয়ে দেখেছিলেন।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৮. মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) মেরাজের রাতে স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমতার প্রমাণবাহী বহু মহা নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি জান্নাত দেখেছেন। জাহান্নাম দেখেছেন। এতদুভয়ের বাইরে আরো অনেক কিছু দেখেছেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নিঃসন্দেহে সে তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল। [১] [১] যেগুলোর মধ্যে জিবরীল ( আঃ )-এর আসল আকৃতি, 'সিদরাতুল মুন্তাহা' ও প্রতিপালকের অন্যান্য মহাশক্তির কিছু নিদর্শন। যার বিস্তারিত আলোচনা মি'রাজ সংক্রান্ত হাদীসমূহে করা হয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
অবশ্যই তিনি তার রবের মহান নিদর্শনাবলীর কিছু দেখেছিলেন ;
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৫-১৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে বলেন যে, তাকে শিক্ষা দান করেন শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন ( ফেরেশতা )। তিনি হলেন হযরত জিবরাঈল ( আঃ )। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ নিশ্চয়ই এই কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী, যে শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদা সম্পন্ন, যাকে সেথায় মান্য করা হয় এবং যে বিশ্বাস ভাজন ।” ( ৮১:১৯-২১ ) এখানেও বলা হয়েছে যে, তিনি ( হযরত জিবরাঈল আঃ ) শক্তিশালী।( আরবী )-এর একটি তাফসীর উপরোক্তে রূপে করা হয়েছে। দ্বিতীয় তাফসীর এই যে, তিনি ( হযরত জিবরাঈল আঃ ) সুন্দর আকৃতি বিশিষ্ট। হাদীসেও ( আরবী ) শব্দটি এসেছে। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ সাদকা ধনীর জন্যে ও সুস্থ-সবলের জন্যে হারাম ।” এখানে ( আরবী ) শব্দ রয়েছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ “ সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল । অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল ( আঃ )। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তখন সে ঊধ্ব দিগন্তে ছিল, যেখান হতে সকাল হয়, যা সূর্য উদিত হওয়ার স্থান।হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে তাঁর আসল রূপে বা আসল আকৃতিতে মাত্র বার দেখেছেন। একবার রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তিনি ( হযরত জিবরাঈল আঃ ) তাঁর আসল আকৃতিতে প্রকাশিত হন। আকাশের সমস্ত প্রান্ত তাঁর দেহে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়বার তাঁকে তাঁর দর্শন ছিল ঐ সময় যখন তাঁকে নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বগগনে উঠে যান।( আরবী ) দ্বারা এটাকেই বুঝানো হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) এই তাফসীরে এমন একটি উক্তি করেছেন যা অন্য কেউই করেননি। তিনি নিজেও এই উক্তির সম্বন্ধ অন্য কারো দিকে যুক্ত করেননি। তাঁর উক্তির সারমর্ম এই যে, হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) ও হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) উভয়েই ঊধ্বগগনের প্রান্তসমূহে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, আর এটা ছিল মি'রাজের ঘটনা। অন্য কেউই ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-এর এই উক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেননি। ইমাম সাহেব আরবী ভাষা হিসেবে এটাকে সাব্যস্ত করলেও এবং আরবী ব্যাকরণের দিক দিয়ে এটা হতে পারলেও এটা বাস্তবতা-বিরোধী উতি। কেননা, এটা মিরাজের পূর্বের ঘটনা। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ভূ-পৃষ্ঠেই ছিলেন এবং হযরত জিরাঈল ( আঃ ) তার কাছে নেমে এসেছিলেন ও তার নিকটবর্তী হয়েছিলেন। ঐ সময় তিনি নিজের আসল আকৃতিতে ছিলেন। অতঃপর দ্বিতীয়বার মিরাজের রাত্রে সিদরাতুল মুনতাহার নিকট দেখেছিলেন। তাহলে এটা ছিল দ্বিতীয়বারের দেখা। কিন্তু প্রথমবারের দেখা তো ছিল রিসালাতের প্রাথমিক যুগের ঘটনা। প্রথম অহী ...
( আরবী )-এই সূরার কতকগুলো আয়াত তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়। তারপর অহী বন্ধ হয়ে যায়। এতে তিনি ( নবী সঃ ) খুবই দুঃখিত হন।এমন কি কয়েকবার তিনি ইচ্ছা করেন যে, পাহাড়ের চূড়া হতে নীচে পড়ে যাবেন। কিন্তু সদা আকাশের দিক হতে তিনি হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর নিম্নের উক্তি শুনতে পেতেনঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আপনি আল্লাহর প্রকৃত ও সত্য । রাসূল এবং আমি জিবরাঈল।” এ শব্দ শুনে তাঁর দুঃখ দূর হয়ে যেতো। তিনি মনে প্রশান্তি লাভ করতেন। তারপর ফিরে আসতেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার তাঁর মনের আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠতো এবং আল্লাহ তা'আলার অহীর স্বাদ তার স্মরণে এসে যেতো। সুতরাং পুনরায় তিনি বেরিয়ে পড়তেন এবং পাহাড়ের চূড়া হতে নিজেকে ফেলে দিতে চাইতেন। আবার হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তাঁকে প্রশান্তি ও সান্ত্বনা দান করতেন। শেষ পর্যন্ত একবার আবতাহ নামক স্থানে হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) নিজের প্রকৃত আকৃতিতে প্রকাশিত হন। তাঁর ছয়শটি ডানা ছিল। তার দেহ আকাশের সমস্ত প্রান্তকে ঢেকে ফেলে। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকটবর্তী হন এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহর অহী তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দেন। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর মর্যাদা অনুভব করেন এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট তিনি যে মহামর্যাদার অধিকারী তা জানতে পারেন।মুসনাদে বাযযারের একটি রিওয়াইয়াত ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-এর উক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় পেশ করা যেতে পারে, কিন্তু ওর বর্ণনাকারী হলেন শুধু হারিস ইবনে উবায়েদ, যিনি বসরায় বসবাসকারী একজন প্রসিদ্ধ লোক। তাঁর কুনিয়াত হলো আবু কুদামাহ আয়াদী। সহীহ মুসলিমে তার থেকে রিওয়াইয়াত সমূহ এসেছে, কিন্তু ইমাম ইবনে মুঈন ওগুলোকে দুর্বল বলেছেন এবং বলেছেন যে, এগুলো কিছুই নয়। ইমাম আবু হাতিম রাযীর ( রঃ ) উক্তি এই যে, তাঁর হাদীসগুলো লিখে নেয়া যাবে, কিন্তু ওগুলো দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যেতে পারে। ইবনে হিব্বান ( রঃ ) বলেন যে, তিনি বড়ই সন্দেহযুক্ত ছিলেন, সুতরাং তার থেকে দলীল গ্রহণ করা ঠিক নয়। অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, এ হাদীসটি শুধু। তিনি রিওয়াইয়াত করেছেন। কাজেই এটা গারীব হওয়ার সাথে সাথে মুনকারও বটে। আর যদি এটা সাব্যস্ত হয়েও যায় তবে এই সম্ভাবনা রয়েছে যে, এটা স্বপ্নের ঘটনা হবে। তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমি বসেছিলাম এমন সময় হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) আগমন করেন । তিনি আমার দুই কাঁধের মাঝে সজোরে হাত রাখেন এবং আমাকে দাঁড় করিয়ে দেন। আমি একটি গাছ দেখলাম, যাতে পাখীর বাসার মত দুটো বসার জায়গা বানানো রয়েছে। একটাতে হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) বসলেন এবং অপরটিতে আমি বসলাম। অতঃপর গাছটি উঁচু হতে শুরু করলো, এমনকি আমি আকাশের নিকটবর্তী হয়ে গেলাম। আমি ডানে-বামে পার্শ্ব পরিবর্তন করছিলাম। আমি ইচ্ছা করলে হাত বাড়িয়ে আকাশ স্পর্শ করতে পারতাম। আমি দেখলাম যে, হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) ঐ সময় আল্লাহর ভয়ে অত্যন্ত জড়সড় হয়ে পড়েছেন। আমি তখন বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহর মর্যাদা ও তাজাল্লীর জ্ঞানে আমার উপর তার ফযীলত রয়েছে। আকাশের দরসমূহের মধ্যে একটি দরযা আমার সামনে খুলে গেল। আমি খুব বড় আযীমুশ্মান নূর দেখলাম এবং দেখলাম যে, পর্দার পাশে মণি-মুক্তা দুলছে। তারপর আল্লাহ তা'আলা যা অহী করার ইচ্ছা তা করলেন।” হযরত আবদুল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে তার আকৃতিতে দেখেছিলেন। তাঁর ছয়শটি পালক ছিল। এক একটি পালক বা ডানা এমনই ছিল যে, আকাশের প্রান্তকে পূর্ণ করে ফেলছিল। ওগুলো হতে পান্না ও মণি-মুক্তা ঝরে পড়ছিল।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখার জন্যে তাঁর কাছে আবেদন জানান। তখন হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ আপনি এ জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করুন ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) প্রার্থনা করলে দেখতে পান যে, কি একটা জিনিস উঁচু হয়ে উঠছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে। ওটা দেখেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) আগমন করেন এবং তাঁর জ্ঞান ফিরিয়ে দেন এবং তার মুখের থুথু মুছিয়ে দেন।ইবনে আসাকির ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন যে, আবু লাহাব এবং তার পুত্র উত্তাহ সিরিয়ার সফরে গমনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। তার পুত্র উত্মাহ তাকে বললোঃ “ সফরে গমনের পূর্বে একবার আমি মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর কাছে তার সামনে তার প্রতিপালককে গালমন্দ দিয়ে আসি?” অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গিয়ে বললোঃ “হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আমি তো ( তোমার প্রতিপালকের ) অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হলো, অতি নিকটবর্তী, ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা ওরও কম’ এ উক্তিকে অস্বীকার করি ।” তার একথা শুনে নবী ( সঃ ) তার প্রতি বদদু'আ করে বলেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনার কুকুরগুলোর মধ্যে একটি কুকুরকে তার উপর নির্ধারণ করুন ।” সে ফিরে গিয়ে তার পিতার সামনে যখন ঘটনাটি বর্ণনা করলো তখন তার পিতা আবু লাহাব তাকে বললোঃ “ হে আমার প্রিয় বৎস! এখন তো আমি তোমার জীবনের ব্যাপারে আতংকিত হয়ে পড়লাম! তার দু'আ তো অগ্রাহ্য হয় না ।” এরপর তারা যাত্রা শুরু করে দিলো। ঐ যাত্রীদল সিরিয়ায় পৌঁছে একজন আবেদের ইবাদতখানার পার্শ্বে শিবির স্থাপন করলো। আবেদ তাদেরকে বললেনঃ “ এখানে তো নেকড়ে বাঘ বকরীর পালের মত চলাফেরা করে থাকে । তোমরা এখানে কেন আসলে?" এ কথা শুনে আবু লাহাবের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। তাই যাত্রীদলের সমস্ত লোকেকে একত্রিত করে সে বললোঃ “ দেখো, আমার বার্ধক্যের অবস্থা তোমাদের জানা আছে এবং তোমাদের উপর আমার কি প্রাপ্য রয়েছে সেটাও তোমাদের অজানা নেই । এখন আমি তোমাদের কাছে একটা আবেদন করছি এবং আশা করছি যে, সেটা তোমরা কবূল করবে। তা এই যে, নবুওয়াতের দাবীদার লোকটি আমার প্রাণপ্রিয় পুত্রের উপর বদদু'আ করেছে। সুতরাং আমি আমার এই পুত্র উৎবার জীবনের ভয় করছি। তোমরা তোমাদের সমস্ত আসবাব পত্র এই ইবাদতখানার পার্শ্বে জমা করে রাখো এবং ওর উপর আমার এই পুত্রকে শয়ন করিয়ে দাও। অতঃপর তোমরা সবাই ওর চতুর্দিকে পাহারা দাও।” যাত্রীদল তার এ আবেদন মঞ্জুর করলো। তারা সবাই খুব সতর্ক থাকলো, ইতিমধ্যে সিংহ এসে পড়লো এবং সবারই মুখ শুকতে লাগলো। কিন্তু যাকে সে চায় তাকে পেলো না। অতঃপর সে খুব জোরে লাফ দিয়ে ঐ আসবাব পত্রের উপর চলে গেল এবং উবার মুখ শুকলো। তাকেই যেন সে চেয়েছিল। সুতরাং সে তাকে ফেড়ে টুকরা টুকরা করে দিলো। ঐ সময় আবু লাহাব বলে উঠলোঃ “ আমার পূর্ব হতেই এটা বিশ্বাস ছিল যে, মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর বদদু'আর পর আমার পুত্রের প্রাণ রক্ষা পেতে পারে না ।"এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ অতঃপর সে ( হযরত জিবরাঈল আঃ ) তার ( হযরত মুহাম্মাদ সঃ-এর ) নিকটবর্তী হলো, অতি নিকটবর্তী, ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইলো অথবা ওরও কম ।” এখানে শব্দটি যার খবর দেয়া হচ্ছে ওকে সাব্যস্ত করা ও ওর উপর যা অতিরিক্ত হবে তা অস্বীকার করার জন্যে এসেছে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবী )অর্থাৎ বরং ওর চেয়েও বেশী কঠিন।" ( ২:৭৪ ) অর্থাৎ পাথর হতে কম শক্ত কোন অবস্থাতেই নয়, বরং শক্ততে পাথরের চেয়েও বেশী। আর এক জায়গায় আছেঃ অর্থাৎ “ তারা মানুষকে এমন ভয় করে যেমন আল্লাহকে ভয় করা হয়, বরং এর চেয়েও বেশী ভয় ।" অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ আমি তাকে এক লক্ষ লোকের নিকট পাঠিয়েছিলাম অথবা এর চেয়েও বেশী লোকের নিকট ।” ( ৩৭:১৪৭ ) অর্থাৎ তারা এক লক্ষের চেয়ে কমতো ছিলই না, বরং প্রকৃতপক্ষে এক লক্ষ ছিল অথবা ওর চেয়ে বেশীই ছিল। সুতরাং , এখানে খবরের সত্যতা প্রকাশের জন্যে এসেছে, সন্দেহ প্রকাশের জন্যে নয়। আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে খবর সন্দেহের সাথে বর্ণিত হতেই পারে না। এই নিকটে আগমনকারী ছিলেন হযরত জিবরাঈল ( আঃ ), যেমন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ( রাঃ ), হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ), হযরত আবু যার ( রাঃ ) এবং হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) উক্তি করেছেন। এই অনুচ্ছেদের হাদীসগুলোও আমরা ইনশাআল্লাহ অতি সত্বরই আনয়ন করছি।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় অন্তরে তাঁর প্রতিপালককে দুই বার দেখেছেন। একবারের দেখার বর্ণনা ( আরবী )-এই আয়াতে রয়েছে। হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত মিরাজের হাদীসে রয়েছেঃ “ অতঃপর রাব্বল ইয্যত নিকটবর্তী হন ও নীচে আসেন ।” আর একারণেই মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন কথা বলেছেন এবং কতকগুলো বিস্ময়কর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যদি ওগুলো সত্যও হয় তবে ওগুলোকে অন্য সময় ও অন্য ঘটনার উপর স্থাপন করা হবে, ওগুলোকে এই আয়াতের তাফসীর বলা যেতে পারে না। এটা তো ঐ সময়ের ঘটনা যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থান করছিলেন। মিরাজের রাত্রির ঘটনা এটা নয়। কেননা, ওর বর্ণনার পরেই বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল সিদরাতুল মুনতাহার নিকট ।” সুতরাং এই সিদরাতুল মুনতাহার নিকট দেখাতে মি'রাজের ঘটনা, আর প্রথমবারের দেখা ছিল পৃথিবীর উপর।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ )। আয়াতের ব্যাপারে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমি হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে দেখেছিলাম, তার ছয়শ'টি পাখা ছিল ।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর নবুওয়াতের প্রাথমিক অবস্থায় স্বপ্নে হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে দেখেন। অতঃপর তিনি তার ( প্রাকৃতিক ) প্রয়োজন পুরো করার উদ্দেশ্যে বের হন। তখন হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তাঁকে ‘হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! হে মুহাম্মাদ ( সঃ )!' বলে ডাক দেন। এ ডাক শুনে তিনি তাঁর ডানে-বামে তাকান, কিন্তু কাউকেও দেখতে পাননি। তিন বার এরূপই ঘটে। তৃতীয়বারে তিনি উপরের দিকে তাকালে দেখতে পান যে, হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তাঁর দুই পায়ের এক পাকে অপর পায়ের সাথে মোড়িয়ে আকাশের প্রান্তকে ঢেকে ফেলেছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! ( ভয়ের কোন কারণ নেই ) আমি জিবরাঈল ( আঃ ), আমি জিবরাঈল ( আঃ ) ।” কিন্তু নবী ( সঃ ) ভয় পেয়ে পালিয়ে যান এবং লোকদের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তারপর তিনি আর কিছুই দেখতে পেলেন না। আবার তিনি বেরিয়ে পড়েন ও উপরের দিকে তাকিয়ে ঐ দৃশ্যই দেখতে পান। আল্লাহ তা'আলার ( আরবী ) হতে ( আরবী ) পর্যন্ত উক্তিগুলোর মধ্যে এরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ( এটা ইবনে অহাব (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) ( আরবী ) অঙ্গুলির অর্ধেক ভাগকেও বলা হয়। কেউ কেউ বলেন যে, দুই হাতের ব্যবধান ছিল। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, ঐ সময় হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর দেহের উপর দুই রেশমী পোশাক ছিল। মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা অহী করার তা অহী করলেন।' এর ভাবার্থ তো এই যে, হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর নিকট অহী নাযিল করলেন। অথবা ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দার কাছে হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর মাধ্যমে অহী নাযিল করলেন। উভয় অর্থই সঠিক। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের ( রঃ ) বলেন যে, ঐ সময়ের অহী ছিল আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তিগুলোঃ ( আরবী ) ( ৯৩:৬ ) ( আরবী ) এবং ( ৯৪:৪ ) অর্থাৎ “ তিনি কি তোমাকে ইয়াতীম অবস্থায় পাননি?” এবং “আর আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি ।” অন্য কেউ বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা ঐ সময় নবী ( সঃ )-এর প্রতি অহী করেনঃ “ নবীদের উপর জান্নাত হারাম যে পর্যন্ত না তুমি তাতে প্রবেশ কর এবং উম্মতদের উপর জান্নাত হারাম যে পর্যন্ত না তোমার উম্মত তাতে প্রবেশ করে ।” হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, তিনি তাকে অন্তরে দুইবার দেখেছিলেন। হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) দর্শনকে মুতলাক বা সাধারণ রেখেছেন। অর্থাৎ অন্তরের দর্শনই হোক অথবা প্রকাশ্য চোখের দর্শনই হোক। সম্ভবতঃ এই অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্টের উপর স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি অন্তরেই দেখেছিলেন। যেসব মনীষী চোখের দর্শনের কথা বলেছেন তারা একটা গারীব উক্তি করেছেন। কেননা, সাহাবীগণ ( রাঃ ) হতে এ ব্যাপারে কোন কিছু সঠিকভাবে বর্ণিত হয়নি। ইমাম বাগাভী ( রঃ ) বলেন যে, একটি জামাআত চোখের দর্শনের দিকে গিয়েছেন। যেমন হযরত আনাস ( রাঃ ), হযরত হাসান ( রাঃ ) এবং হযরত ইকরামা ( রাঃ )। কিন্তু তাঁদের এই উক্তির ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।হযরত ইকরামা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ মুহাম্মাদ ( সঃ ) তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন ।” ( এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান গারীব বলেছে) তখন হযরত ইকরামা ( রাঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা কি বলেননিঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ কোন চক্ষু তাকে পেতে পারে না এবং তিনি সমস্ত চক্ষুকে পেয়ে থাকেন ।” ( ৬:১০৩ ) উত্তরে তিনি বলেনঃ “ এটা ঐ সময় যখন তিনি তার নূরের পূর্ণ তাজাল্লী প্রকাশ করেন । রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দুইবার স্বীয় প্রতিপালককে দেখেছেন।” হযরত শা’বী ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) আরাফায় হযরত কা'ব ( রাঃ )-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে একটা প্রশ্ন করেন যা তাঁর কাছে খুবই কঠিন ঠেকে। অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ নিশ্চয়ই আমরা বানু হাশিম ।” তখন হযরত কা'ব ( রাঃ ) বলেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা তার দর্শন ও তাঁর কালাম হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) ও হযরত মূসা ( আঃ )-এর মধ্যে বন্টন করে দেন । তিনি হযরত মূসা ( আঃ )-এর সঙ্গে দুইবার কথা বলেছেন এবং হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-কে দুইবার স্বীয় দর্শন দেন।” ( এ হাদীসটিও ইমাম তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)একদা হযরত মাসরূক ( রাঃ ) হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর নিকট গমন করেন। এবং তাঁকে প্রশ্ন করেনঃ “ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কি তার প্রতিপালককে দেখেছেন?” উত্তরে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) তাঁকে বলেনঃ “তুমি এমন কথা বলেছ যে, একথা শুনে আমার দেহের লোম খাড়া হয়ে গেছে । তখন হযরত মাসরূক ( রাঃ ) বলেনঃ “ হে উম্মুল মুমিনীন! কুরআন কারীমে আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল ।” হযরত আয়েশা ( রাঃ ) তখন বলেনঃ “ তুমি কোথায় যাচ্ছ? এর দ্বারা হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে দর্শন করা বুঝানো হয়েছে । যে তোমাকে বলে যে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন বা তিনি আল্লাহ তাআলার কোন কথা গোপন করেছেন অথবা নিম্নের বিষয়গুলোর কোন একটা তিনি জানেনঃ ( এক ) কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? ( দুই ) বৃষ্টি কখন বর্ষিত হবে ও কি পরিমাণ বর্ষিত হবে? ( তিন ) পেটে পুত্র সন্তান আছে কি কন্যা সন্তান আছে? ( চার ) কে আগামী কাল কি করবে? ( পাঁচ ) কে কোথায় মারা যাবে? সে বড়ই মিথ্যা কথা বলেছে এবং আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে দেখেছিলেন। দুইবার তিনি আল্লাহর এই বিশ্বস্ত ফেরেশতাকে তার আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন। একবার দেখেছিলেন। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট এবং আরেকবার দেখেছিলেন আজইয়াদে। তাঁর ছয়শটি পাখা ছিল এবং আকাশের সমস্ত প্রান্তকে ঢেকে ফেলেছিলেন।” হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ তোমরা কি এতে বিস্ময়বোধ করছো যে, বন্ধুত্ব ছিল হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর জন্যে, কালাম ছিল হযরত মূসা ( আঃ )-এর জন্যে এবং দীদার ( দর্শন ) ছিল হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর জন্যে?” ( এটা ইমাম নাসাঈ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন। উত্তরে তিনি বললেনঃ “ তিনি তো নূর ( জ্যোতি ), সুতরাং কি করে আমি তাঁকে দেখতে পারি?” ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “আমি নূর দেখেছি ।”হযরত মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব ( রাঃ ) বলেন যে, সাহাবীগণ ( রাঃ ) জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি আমার অন্তরে আমার প্রতিপালককে দুইবার দেখেছি ।” অতঃপর তিনি পাঠ করেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যা সে দেখেছে তার অন্তকরণ তো তা অস্বীকার করেনি ।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)নবী ( সঃ )-এর কোন একজন সাহাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন?" জবাবে তিনি বলেনঃ “আমি তাকে আমার চক্ষু দ্বারা দেখিনি, অতঃপর তিনি পাঠ করেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হলো, অতি নিকটবর্তী ।”[ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) ]হযরত ইবাদ ইবনে মানসূর ( রাঃ ) হযরত ইকরামা ( রাঃ )-কে ( আরবী )-এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে বলেনঃ “ নবী ( সঃ ) তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন কি না তাই কি তুমি আমার কাছে জানতে চাচ্ছ?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যাঁ ।” তিনি তখন বলেনঃ “ হ্যাঁ, তিনি তাঁকে দেখেছেন ।” হযরত ইবাদ ( রাঃ ) তখন হযরত হাসান ( রাঃ )-কে এ প্রশ্নই করলে তিনি জবাবে বলেনঃ “ তিনি তার শ্রেষ্ঠত্বের ঔজ্জ্বল্য ও বড়ত্বের চাদর দেখেছিলেন ।”হযরত আবুল আলিয়া ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ আপনি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন?” জবাবে তিনি বলেনঃ “আমি নহর দেখেছি, নহরের পিছনে পর্দা দেখেছি এবং পর্দার পিছনে নূর দেখেছি । এ ছাড়া আমি আর কিছুই দেখিনি।” ( এ হাদীসটি অত্যন্ত গারীব )মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমি আমার মহামহিমান্বিত প্রতিপালককে দেখেছি ।” ( এ হাদীসটির ইসনাদ সহীহ এর শর্তের উপর রয়েছে )এ হাদীসটি স্বপ্নের হাদীসের একটি অংশ বিশেষ। সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আজ রাত্রিতে স্বপ্নে আমার প্রতিপালক অত্যন্ত উত্তম আকৃতিতে আমার নিকট এসেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতারা কি বিষয়ের উপর আলোচনা করছে তা কি তুমি জান?” আমি আরয করলামঃ না, আমি জানি না । তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর হাতখানা আমার দুই কাঁধের মাঝে রেখে দেন যার শীতলতা আমি আমার বক্ষে অনুভব করি। অতঃপর যমীন ও আসমানের সমস্ত কিছু আমি জেনে ফেলি। এরপর পুনরায় আমার প্রতিপালক আমাকে উপরোক্তে প্রশ্ন করেন। আমি তখন উত্তরে বলিঃ এখন আমি জানতে পারছি। তারা পরস্পর ঐ সৎকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করছেন যা গুনাহকে মিটিয়ে দেয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে বলেনঃ “ আচ্ছা, তাহলে বল তো গুনাহ মিটিয়ে দেয় ঐ পুণ্য কর্মগুলো কি কি?” আমি জবাবে বললামঃ নামায শেষে মসজিদে বসে থাকা, জামাআতের জন্যে ( মসজিদের দিকে ) চলা এবং কষ্টকর অবস্থায় পূর্ণভাবে অযু করা । যে এরূপ করবে সে উত্তমরূপে জীবন যাপন করবে, মঙ্গলের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র ও মুক্ত হয়ে যাবে যে, আজই যেন সে দুনিয়ায় এসেছে বা আজই যেন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছে। ঐ সময় মহান আল্লাহ আমাকে বলেনঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! যখন তুমি নামায পড়বে তখন নিম্ন লিখিত দু'আটি পাঠ করবেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ভাল কাজ করার, মন্দ কাজ পরিত্যাগ করার এবং মিসকীনদেরকে ভালবাসবার তাওফীক প্রার্থনা করছি । আর যখন আপনি আপনার বান্দাদেরকে ফিনায় নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করেন তখন আমাকে ফিত্নায় ফেলার পূর্বেই আপনার নিকট উঠিয়ে নিবেন ( এই প্রার্থনা করছি )।” আর মর্যাদা বৃদ্ধিকারী আমলগুলো হলোঃ খাদ্য খাওয়ানো, ইসলাম ছড়িয়ে দেয়া এবং লোকেদের দ্রিার অবস্থায় রাত্রে তাহাজ্জুদের নামায পড়া।” এরই অনুরূপ রিওয়াইয়াত সূরায়ে সোয়াদের তাফসীরের শেষে গত হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) এ রিওয়াইয়াতটি অন্য সনদে বর্ণনা করেছেন যাতে বহু গারাবাত রয়েছে। তাতে কাফফারার বর্ণনায় রয়েছেঃ জুমআর নামাযের জন্যে চলার পদক্ষেপ এবং এক নামায শেষে অন্য নামাযের জন্যে অপেক্ষমান থাকা। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহ! আপনি হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-কে আপনার বন্ধু বানিয়েছেন এবং হযরত মূসা ( আঃ )-কে করেছেন আপনার কালীম ( কথোপকথনকারী )। আর এরা এটা বলেছেন ও করেছেন।' তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ “ আমি কি তোমার বক্ষ খুলে দিইনি? তোমার বোঝা কি আমি অপসারণ করিনিং এবং অমুক অমুক অনুগ্রহ কি তোমার উপর করিনি?" অন্যান্য আরো অনুগ্রহ ও ইহসানের কথা তিনি বললেন যেগুলো তোমাদের সামনে বলার অনুমতি আমাকে দেয়া হয়নি । এরই বর্ণনা ( আরবী )-এই আয়াতগুলোতে রয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা আমার চোখের জ্যোতি আমার অন্তরে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি তাকে আমার অন্তর দ্বারা দেখেছি।” ( এর ইসনাদ দুর্বল )উপরে উবা ইবনে আবি লাহাবের একথা বলাঃ “ এই নিকটে আগমনকারীকে আমি স্বীকার করি না এবং এরপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর তার উপর বদদু'আ করা এবং পরে সিংহের তাকে ফেড়ে ফেলার বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে । এ ঘটনাটি যারকা অথবা সুরাতে সংঘটিত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, সে এভাবে ধ্বংস হবে।এরপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর জিবরাঈল ( আঃ )-কে দ্বিতীয়বার দেখার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যা মিরাজের রাত্রির ঘটনা। মিরাজের হাদীসগুলো খুবই বিস্তারিতভাবে সূরায়ে বানী ইসরাঈলের প্রথম আয়াতের তাফসীরে গত হয়েছে। সুতরাং এখানে ওগুলোর পুনরাবৃত্তির কোন প্রয়োজন নেই। এ বর্ণনাও গত হয়েছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দীদার লাভের উক্তিকারী। পূর্বযুগীয় ও পরযুগীয় একটি জামাআতের উক্তিও এটাই। অন্যান্য সাহাবীদের বহু দল এই উক্তির বিপরীত মত পোষণকারী। অনুরূপভাবে তাবেয়ী ও অন্যান্য গুরুজনও এর উল্টো মত পোষণ করেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে তার পাখাসহ দর্শন ইত্যাদি রিওয়াইয়াত সমূহও উপরে বর্ণিত হয়েছে। হযরত মাসরূক ( রাঃ )-এর হযরত আয়েশা ( রাঃ )-কে প্রশ্ন করা এবং তার উত্তর দেয়ার ঘটনাও এখনই বর্ণিত হলো। বর্ণিত আছে যে, হযরত মাসরূক ( রাঃ ) হযরত আয়েশা ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে উম্মুল মুমিনীন! হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) কি তাঁর মহিমান্বিত প্রতিপালককে দেখেছেন?” উত্তরে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেনঃ সুবহানাল্লাহ! তোমার কথা শুনে আমার নোম খাড়া হয়ে গেছে । তুমি কোথায় রয়েছো?” অর্থাৎ তুমি কি কথা বললে? জেনে রেখো যে, এই তিনটি কথা যে তোমাকে বলে সে মিথ্যা কথা বলেঃ ( এক ) যে তোমাকে বলে যে, হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) তার প্রতিপালককে দেখেছেন সে মিথ্যা কথা বলে” অতঃপর তিনি পাঠ করেনঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ কোন চক্ষু তাঁকে দেখতে পায় না, কিন্তু তিনি চক্ষুগুলোকে পেয়ে যান ।” ( ৬:১০৩ ) আরো পাঠ করলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ অহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার আড়াল ছাড়া কোন মানুষের সাথে আল্লাহর কথা বলা সম্ভব নয় ।” ( ৪২:৫১ ) এরপর তিনি বলেনঃ ( দুই ) “ যে তোমাকে খবর দেয় যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আগামীকালের খবর জানেন সে মিথ্যা বলে ।" অতঃপর তিনি পাঠ করেনঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে । কেউ জানে না যে, আগামীকল্য সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না যে, কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।” ( ৩১:৩৪ ) তারপর তিনি বলেনঃ ( তিন ) “ আর যে তোমাকে খবর দেয় যে, হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) ( আল্লাহ তা'আলার কথা কিছু ) গোপন করে সে মিথ্যাবাদী ।” অতঃপর তিনি পাঠ করেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে রাসূল ( সঃ )! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার কাছে যা কিছু অবতীর্ণ করা হয় তা তুমি পৌঁছিয়ে দাও ।" ( ৫:৬৭ ) এরপর তিনি বললেনঃ “ হ্যাঁ, তবে তিনি হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দুইবার দেখেছেন ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত মাসরূক ( রাঃ ) হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর সামনে কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতগুলো পাঠ করেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ অবশ্যই সে তাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছে ।” ( ৮১:২৩ ) ( আরবী ) অর্থাৎ “ নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল ।” তখন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেন, এই উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম এই আয়াতগুলো সম্পর্কে আমিই রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “ এর দ্বারা আমার হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে দর্শন বুঝানো হয়েছে ।” তিনি মাত্র দুইবার আল্লাহর এই বিশ্বস্ত ফেরেশতাকে তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে দেখেছিলেন। একবার তার আকাশ হতে যমীনে অবতরণের সময় দেখেছিলেন। ঐ সময় আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থিত সমস্ত ফাঁকা জায়গা তার দেহে পূর্ণ ছিল।” ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও রয়েছে )মুসনাদে আহমাদেই রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক ( রঃ ) হযরত আবু যার ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ আমি যদি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে দেখতাম তবে অবশ্যই তাকে আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম । তাঁর একথা শুনে হযরত আবু যার ( রাঃ ) তাঁকে প্রশ্ন করেনঃ “ তুমি তাকে কি জিজ্ঞেস করতে?” জবাবে হযরত শাকীক ( রঃ ) বলেনঃ “তিনি মহামহিমান্বিত প্রতিপালককে দেখেছিলেন কি না তা জিজ্ঞেস করতাম ।” তখন হযরত আবু যার ( রাঃ ) তাকে বলেন, আমি তো স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এ প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি জবাবে বলেছিলেনঃ “ আমি নূর দেখেছিলাম । তিনি তো নূর, সুতরাং কি করে আমি তাঁকে দেখতে পারি?” হযরত আহমাদ ( রঃ ) বলেনঃ “ এই হাদীসের ব্যাখ্যা যে কি করবে তা আমার বোধগম্য হয় না ।” ( সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি দুটি সনদে বর্ণিত হয়েছে। সনদ দুটির শব্দগুলোর মধ্যে কিছু হেরফের রয়েছে )মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অন্তর দ্বারা আল্লাহ তা'আলাকে দেখেছিলেন, চক্ষু দ্বারা নয়। ইমাম ইবনে খুযাইয়া ( রাঃ ) বলেন যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক ( রঃ ) ও হযরত আবু যার ( রাঃ )-এর মাঝে ইনকিতা বা বিয়োগ রয়েছে ( অর্থাৎ ঈদের দু’জনের মধ্যে সাক্ষাৎ লাভ ঘটেনি )। ইমাম ইবনে জাওযী ( রঃ ) বলেন যে, সম্ভবতঃ হযরত আবু যার ( রাঃ ) এই প্রশ্ন মিরাজের ঘটনার পূর্বে করেছিলেন এবং ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এই উত্তর দিয়েছিলেন। এই প্রশ্ন যদি তাঁকে মিরাজের ঘটনার পরে করা হতো তবে অবশ্যই তিনি ঐ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলতেন, অস্বীকার করতেন না। কিন্তু এই উক্তিটি সম্পূর্ণরূপে দুর্বল। কেননা, হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর প্রশ্ন তো ছিল মিরাজের পরের ঘটনা। ঐ সময়েও রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অস্বীকৃতি সূচক উত্তর দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হযরত আয়েশা ( রাঃ )-কে সম্বোধন করা তাঁর জ্ঞান অনুযায়ী ছিল কিংবা এই যে, তাঁর এটা ভুল ধারণা ছিল। যেমন ইবনে খুযাইমা ( রঃ ) কিতাবুত তাওহীদের মধ্যে এটাই লিখেছেন, এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।হযরত আনাস ( রাঃ ) ও হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আল্লাহ তা'আলাকে অন্তর দ্বারা দেখেছিলেন, চক্ষু দ্বারা নয়। তবে তিনি হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে স্বীয় চক্ষু দ্বারা দুই বার তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে দেখেছিলেন। সিদরাতুল মুনতাহায় ঐ সময় বহু সংখ্যক ফেরেশতা ছিলেন এবং হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর উপর আল্লাহর নূর চমকাচ্ছিল। আর তিনি বিভিন্ন প্রকারের রঙ্গে রঞ্জিত ছিলেন যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানতে পারে না। হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) বলেন যে, মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেন যা সপ্তম আকাশে রয়েছে। যমীন হতে যে জিনিস উপরে উঠে যায় তা এখন পর্যন্ত উঠে। তারপর ওটাকে এখান হতে উঠিয়ে নেয়া হয়। অনুরূপভাবে যে জিনিস আল্লাহ তাআলার নিকট হতে অবতারিত হয় তা এখান পর্যন্তই পৌঁছে। তারপর এখান হতে ওটাকে নামিয়ে নেয়া হয়। ঐ সময় ঐ গাছের উপর সোনার ফড়িং পরিপূর্ণ হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এখান হতে তিনটি জিনিস দান করা হয়। ( এক ) পাঁচ ওয়াক্ত নামায, ( দুই ) সূরায়ে বাকারার শেষের আয়াতগুলো এবং ( তিন ) তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা মুশরিক নয় তাদের পাপরাশি ক্ষমাকরণ। ( এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে )হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) অথবা অন্য সাহাবী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, কোন গাছকে কাকসমূহ যেমনভাবে ঘিরে নেয় ঠিক তেমনিভাবে সিদরাতুল মুতাহার উপর ফেরেশতাগণ ছেয়ে গিয়েছিল। সেখানে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পৌঁছলে তাঁকে বলা হয়ঃ “ যা যা করার তা যাঞা করুন ।” হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, ঐ গাছের শাখাগুলো ছিল মণি-মাণিক্য, ইয়াকূত ও যবরজদের। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ওটা দেখেন এবং স্বীয় অন্তর চোখে তিনি আল্লাহ তা'আলাকেও দর্শন করেন। ইবনে যায়েদ ( রঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস বর হয়ঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! সিদরাতুল মুনতাহায় আপনি কি দেখেছেন? উত্তরে তিনি বলেনঃ “ঐ গাছকে সোনার ফড়িংগুলো ঘিরেছিল এবং প্রত্যেক পাতার উপর একজন করে ফেরেশতা দাঁড়িয়ে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করছিল । তাঁর দৃষ্টি ডানে বামে যায় না। যে জিনিস দেখার নির্দেশ ছিল ওরই প্রতি তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। স্থিরতা ও পূর্ণ আনুগত্যের এটা পুরো দলীল যে, তার উপর যে হুকুম ছিল তাই তিনি পালন করেছেন এবং ওটা নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট থেকেছেন। কোন কবি কতইনা চমৎকার কথা বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তিনি জান্নাতুল মাওয়া এবং ওর উপরে যা রয়েছে তা দেখেছেন, তিনি যা দেখেছেন তা যদি অন্য কেউ দেখতো তবে সে তা অবশ্যই নিয়ে আসতো ।”মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল ।" যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যেন আমি তোমাকে আমার মহান নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করি ।” ( ২০:২৩ ) এগুলো আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতা ও মহান শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। এ আয়াত দুটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় চক্ষু দ্বারা আল্লাহ তা'আলার দীদার লাভ করেননি। কেননা, মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন যে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) আল্লাহ তা'আলার বড় বড় নিদর্শনগুলো দেখেছেন। যদি তিনি স্বয়ং আল্লাহকে দেখতেন তবে ঐ দর্শনেরই। উল্লেখ করা হতো। আর লোকদের উপর ওটা প্রকাশ করে দেয়া হতো। হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ )-এর উক্তি গত হয়েছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে তাঁর চাহিদা অনুযায়ী দ্বিতীয়বার আকাশে উঠার সময় হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখানো হয়। সুতরাং হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) যখন মহামহিমান্বিত আল্লাহকে খবর দেন তখন তাকে তার আসল আকৃতিতে পরিবর্তিত করে দেয়া হয় এবং তিনি সিজদা আদায় করেন। সুতরাং সিদরাতুল মুনতাহার নিকট আরেকবার দেখার দ্বারা হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে দেখাই উদ্দেশ্য। ( এ রিওয়াইয়াতটি মুসনাদে আহমাদে রয়েছে এবং এটা গারীব রিওয়াইয়াত )
সূরা নাজ্ম আয়াত 18 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।
- বলুন, আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র এবং এক পরাক্রমশালী আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
- এটা এজন্যে যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল।
- যারা কুচক্র করে, তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন
- এবং যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন পরিমিত। আতঃপর তদ্দ্বারা আমি মৃত ভূ-ভাগকে পুনরুজ্জীবিত করেছি।
- আপনি তাদের কোন অস্তিত্ব দেখতে পান কি?
- এটাই তাদের শাস্তি। কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে এবং বলেছেঃ আমরা যখন অস্থিতে পরিণত
- যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও
- ফেরাউনের এবং সামুদের?
- তার বললঃ আমরা কি আপনাকে জগৎদ্বাসীর সমর্থন করতে নিষেধ করিনি।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নাজ্ম ডাউনলোড করুন:
সূরা Najm mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Najm শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers