কোরান সূরা ফাত্হ আয়াত 26 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Al Fath ayat 26 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা ফাত্হ আয়াত 26 আরবি পাঠে(Al Fath).
  
   

﴿إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَىٰ وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا﴾
[ الفتح: 26]

কেননা, কাফেররা তাদের অন্তরে মূর্খতাযুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। [সূরা ফাত্হ: 26]

Surah Al-Fath in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Fath ayat 26


যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা যখন তাদের অন্তরে গোঁ ধরেছিল -- অজ্ঞতার যুগের গোঁয়ার্তুমি -- তখন আল্লাহ্ তাঁর প্রশান্তি বর্ষণ করেছিলেন তাঁর রসূলের উপরে ও মুমিনদের উপরে, আর ধর্মনিষ্ঠার নীতিতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখলেন, বস্তুত তারা এর জন্য নায্য দাবিদার ছিল ও এর উপযুক্ত ছিল, আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা।


Tafsir Mokhtasar Bangla


২৬. যেহেতু যারা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলকে অবিশ্বাস করেছে তিনি তাদের অন্তরে জাহিলী যুগের গোত্রপ্রীতি উথলে দিয়েছেন। যা সত্যকে সত্য হিসাবে পরিগণিত করে না। বরং তা কেবল মনোবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত। ফলে তারা রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর হুদাইবিয়ার বছরে তাদের নিকট প্রবেশের মাধ্যমে তাদেরকে পরাভূত করার খোঁটা দেয়ার ভয়ে তারা তা মেনে নিতে অনিহা প্রদর্শন করলো। ফলে আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে স্বীয় রাসূল ও মু’মিনদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন। তাই রাগ তাদেরকে মুশরিকদের প্রতিবাদে তাদের আচরণের মতো কর্ম দ্বারা করাতে পারলো না। বরং মু’মিনদের জন্য আল্লাহ হকের কালিমা তথা “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ” অবধারিত করে দিয়েছেন। যাতে তারা এর অধিকার আদায় করে। বস্তুতঃ মু’মিনরা এই কালিমার ব্যাপারে অন্যদের তুলনায় অধিক হকদার ছিলো। মূলতঃ আল্লাহ তাদের অন্তরের কল্যাণ সম্পর্কে জানার ফলে তাদেরকে তিনি তদ্বারা ধন্য করেছেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


যখন[১] অবিশ্বাসীরা তাদের অন্তরে গোত্রীয় অহমিকা -- অজ্ঞতা যুগের অহমিকা পোষণ করেছিল, তখন আল্লাহ তাঁর রসূল ও বিশ্বাসীদের উপর স্বীয় প্রশান্তি বর্ষণ করলেন;[২] আর তাদেরকে তাকওয়ার বাক্যে সৃদৃঢ় করলেন[৩] এবং তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আর আল্লাহ সমস্ত বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন। [১] إذ ( যখন ) অব্যয়টির কাল বিশেষণ হয় لَعَذَّبْنَا ক্রিয়ার। অথবা وَاذْكُرُوْا ক্রিয়া ঊহ্য আছে। অর্থাৎ, সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন অবিশ্বাসীরা ----। [২] কাফেরদের এই জাহেলী যুগের গোত্রীয় অহমিকা ( আভিজাত্যের গর্ব )এর অর্থ হল, মক্কাবাসীদের মুসলিমদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া। তারা বলল যে, এরা আমাদের ছেলে ও বাপদেরকে হত্যা করেছে। লাত-উয্যার শপথ! আমরা এদেরকে কখনই এখানে প্রবেশ করতে দেব না। অর্থাৎ, তারা এটাকে মান-সম্মানের ব্যাপার মনে করে নিল। আর এটাকেই 'অজ্ঞতাযুগের অহমিকা' বলা হয়েছে। কারণ, কা'বা শরীফে ইবাদতের জন্য আগমনকারীদেরকে রোধ করার অধিকার কারো নেই। মক্কার কুরাইশদের শত্রুতামূলক এই আচরণের উত্তরে আশঙ্কা ছিল যে, মুসলিমদের আবেগ-উদ্যমের মধ্যেও উত্তেজনা এসে যেত এবং তাঁরাও এটাকে তাঁদের সম্মানের ব্যাপার মনে করে মক্কায় প্রবেশ করার জন্য জেদ ধরতেন। ফলে উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে পড়ত। আর এই যুদ্ধ মুসলিমদের ক্ষেত্রে বড়ই বিপজ্জনক ছিল। ( যেমন, পূর্বে এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ) এই জন্য মহান আল্লাহ মুসলিমদের অন্তরে প্রশান্তি অবতীর্ণ করে দিলেন। অর্থাৎ, তাঁদেরকে ধৈর্য-সহ্য তথা উত্তেজনা সংবরণ করার তওফীক দান করলেন। সুতরাং তাঁরা নবী করীম ( সাঃ )-এর নির্দেশ অনুযায়ী হুদাইবিয়াতে থেমে গেলেন এবং আবেগপ্রবণ হয়ে মক্কা যাওয়ার প্রচেষ্টা করলেন না। কেউ কেউ বলেন, মূর্খতাযুগের এই অহমিকা থেকে বুঝানো হয়েছে তাদের সেই আচরণকে, যা সন্ধি ও চুক্তির সময় তারা অবলম্বন করেছিল। তাদের এই আরচণ এবং সন্ধি উভয়টাই বাহ্যতঃ মুসলিমদের জন্য অসহ্যকর ছিল। কিন্তু পরিণতির দিক দিয়ে যেহেতু এতে ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণ ছিল, তাই অতীব অপছন্দনীয় ও কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে তা মেনে নেওয়ার সুমতি দান করলেন। এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ হল এ রকম, যখন রসূল ( সাঃ ) মক্কার কুরাইশদের প্রেরিত প্রতিনিধিদের এই কথা মেনে নিলেন যে, এ বছর মুসলিমরা উমরার জন্য মক্কায় যাবেন না এবং এখান থেকেই প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন তিনি আলী ( রাঃ )-কে সন্ধিপত্র লেখার নির্দেশ দিলেন। তিনি ( আলী (রাঃ )) রসূল ( সাঃ )-এর নির্দেশে 'বিসমিল্লাহির রাহমা-নির রাহীম' লিখলেন। তখন তারা প্রতিবাদ করে বলল যে, 'রাহমান' ও 'রাহীম'কে আমরা জানি না। আমরা যে শব্দ ব্যবহার করি -- অর্থাৎ, 'বিসমিকাল্লা-হুম্মা' ( হে আল্লাহ! তোমার নাম নিয়ে ) তাই দিয়ে শুরু করেন। তাই নবী ( সাঃ ) ঐভাবেই লিখালেন। তারপর তিনি লিখালেন, " এটা সেই চুক্তিপত্র যাতে আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ মক্কাবাসীদের সাথে সন্ধি করছেন। " তখন কুরাইশদের প্রতিনিধিগণ বলল যে, ঝগড়ার মূল কারণই তো আপনার 'রিসালাত' তথা রসূল হওয়া। যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রসূল বলে মেনেই নিতাম, তাহলে এর পর ঝগড়াই-বা আর কি রয়ে যেত? অতঃপর আপনার সাথে যুদ্ধ করার এবং আল্লাহর ঘর থেকে আপনাকে বাধা দেওয়ার প্রয়োজনই কি? অতএব, আপনি এখানে 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ'র পরিবর্তে 'মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ' লিখুন। সুতরাং তিনি আলী ( রাঃ )-কে এ রকমই লিখার নির্দেশ দিলেন। ( এটা মুসলিমদের জন্য বড়ই লাঞ্ছনাকর ও উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি ছিল। যদি আল্লাহ তাঁদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ না করতেন, তবে তাঁরা তা কখনই সহ্য করতে পারতেন না। ) আলী ( রাঃ ) তাঁর নিজ হাত দিয়ে 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' মিটিয়ে দিতে অস্বীকার করলেন। তখন নবী করীম ( সাঃ ) বললেন, ( আমাকে দেখিয়ে দাও ) এ শব্দটি কোথায়? দেখিয়ে দিলে তিনি নিজের হাতে তা মিটিয়ে দিলেন এবং নিজে ( মু'জিযাস্বরূপ ) সেই স্থানে 'মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ' লিখলেন। এর পর এই চুক্তিপত্রে তিনটি জিনিস লেখা হয়। ( ক ) মক্কাবাসীদের মধ্যে যে ইসলাম গ্রহণ করে নবী ( সাঃ )-এর কাছে আসবে, তাকে ( মক্কায় ) ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ( খ ) আর কোন মুসলিম মক্কাবাসীদের সাথে মিলিত হলে, ( মক্কাবাসীরা ) তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে না। ( গ ) মুসলিমগণ আগামী বছর মক্কায় আসবে এবং এখানে তিন দিন অবস্থান করতে পারবে। আর তাদের সাথে কোন অস্ত্র থাকবে না। (বুখারী, মুসলিমঃ জিহাদ অধ্যায়) এর সাথে দু'টি কথা আরো লেখা হয়, ( ক ) এ বছর যুদ্ধ স্থগিত থাকবে। ( খ ) গোত্রগুলোর মধ্যে যে চায় মুসলিমদের সাথে এবং যে চায় কুরাইশদের সাথে মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে। [৩] 'তাকওয়ার বাক্য' বলে তাওহীদ ও রিসালাতের বাক্য 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বুঝানো হয়েছে। যেটাকে হুদাইবিয়ার দিন মুশরিকরা অস্বীকার করেছিল। ( ইবনে কাসীর ) অথবা সেই ধৈর্য ও সহনশীলতা যা তাঁরা হুদাইবিয়ার দিন প্রদর্শন করেছিলেন। কিংবা সেই অঙ্গীকার পূরণ ও তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, যা ছিল আল্লাহভীরুতার ফল। ( ফাতহুল ক্বাদীর )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


যখন কাফিররা তাদের অন্তরে পোষন করেছিল গোত্রীয় অহমিকা --- অজ্ঞতার যুগের অহমিকা [], তখন আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন ; আর তাদেরকে তাকওয়ার কালেমায় [] সুদৃঢ় করলেন, আর তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আর আল্লাহ্‌ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। [] জাহেলী অহমিকা বা সংকীর্ণতার অর্থ হলো, এক ব্যক্তির শুধু তার মর্যাদা রক্ষার জন্য কিংবা নিজের কথার মর্যাদা রক্ষার জন্য জেনে শুনে কোন অবৈধ কাজ করা। মক্কার কাফেররা জানতো এবং মানতো যে, হজ ও উমরার জন্য বায়তুল্লাহর যিয়ারত করার অধিকার সবারই আছে। এ দ্বিনী কর্তব্য পালনে বাধা দেয়ার অধিকার কারো নেই। এটা ছিল আরবের সুপ্রাচীন ও সর্বজন স্বীকৃত আইন। কিন্তু তারা নিজেরা নিজেদেরকে অন্যায় ও অসত্যের অনুসারী এবং মুসলিমদেরকে সম্পূর্ণ ন্যায় ও সত্যের অনুসারী বলে জানা সত্বেও শুধু নিজেদের মর্যাদা রক্ষার খাতিরে মুসলিমদের উমরা করতে বাধা দান করে। এমনকি মুশরিকদের মধ্যেও যারা সত্যানুসারী ছিল তারাও বলছিলো যে, যারা ইহরাম অবস্থায় কুরবানীর উট সাথে নিয়ে উমরা পালন করতে এসেছে তাদেরকে বাধা দেয়া একটি অন্যায় কাজ। কিন্তু কুরাইশ নেতারা শুধু একথা ভেবে বাধা দিতে বদ্ধপরিকর ছিল যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি এত বড় দলবল নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন তাহলে সমগ্র আরবে আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। তাছাড়া তারা তাকে আল্লাহর নবী বলে মেনে নিতে কুণ্ঠিত হচ্ছিল। বিসমিল্লাহ লিখতে নিষেধ করেছিল। এ সবই ছিল তাদের জাহেলী সংকীর্ণতা। [ দেখুন, বুখারীঃ ২৭৩১,২৭৩২ ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


২৫-২৬ নং আয়াতের তাফসীর: আরবের মুশরিক কুরায়েশগণ এবং যারা তাদের সাথে এই অঙ্গীকারে আবদ্ধ ছিল যে, রাসূলুল্লাহ( সঃ )-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা তাদেরকে সাহায্য করবে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, প্রকৃতপক্ষে এ লোকগুলো কুফরীর উপর রয়েছে। তারাই মুমিনদেরকে মসজিদুল হারাম হতে নিবৃত্ত করেছিল, অথচ এই মুমিনরাই তো খানায়ে কা'বার জিয়ারতের অধিকতর হকদার ও যোগ্য ছিল। অতঃপর তাদের ঔদ্ধত্য ও বিরোধিতা তাদেরকে এতো দূর অন্ধ করে রেখেছিল যে, আল্লাহর পথে কুরবানীর জন্যে আবদ্ধ পশুগুলোকে যথাস্থানে পৌছতেও বাধা দিয়েছিল। এই কুরবানীর পশুগুলো সংখ্যায় সত্তরটি ছিল। যেমন সত্বরই এর বর্ণনা আসছে ইনশাআল্লাহ্। এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ হে মুমিনগণ! আমি যে তোমাদেরকে মক্কার মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি প্রদান করিনি এর মধ্যে গুপ্ত রহস্য এই ছিল যে, এখনও কতগুলো দুর্বল মুসলমান মক্কায় রয়েছে যারা এই যালিমদের কারণে না তাদের ঈমান প্রকাশ করতে পারছে, না হিজরত করে তোমাদের সঙ্গে মিলিত হতে সক্ষম হচ্ছে এবং না তোমরা তাদেরকে চেনো বা জানো। সুতরাং যদি হঠাৎ করে তোমাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হতো এবং তোমরা মক্কাবাসীর উপর আক্রমণ চালাতে তবে ঐ খুঁটি ও পাকা মুসলমানরাও তোমাদের হাতে শহীদ হয়ে যেতো। ফলে, তোমরা তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে। তাই, এই কাফিরদের শাস্তিকে আল্লাহ্ কিছু বিলম্বিত করলেন যাতে ঐ দুর্বল মুমিনরাও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যাদের ভাগ্যে ঈমান রয়েছে তারাও ঈমান আনয়ন করে ধন্য হতে পারে। যদি তারা পৃথক হতো তবে আমি তাদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি প্রদান করতাম। হযরত জুনায়েদ ইবনে সুবী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমি দিনের প্রথমভাগে কাফিরদের সাথে মিলিত হয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি । ঐ দিনেরই শেষ ভাগে আল্লাহ্ তা'আলা আমার অন্তর ফিরিয়ে দেন এবং আমি মুসলমান হয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে মিলিত হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। আমাদের ব্যাপারেই ...( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আমরা ছিলাম মোট নয়জন লোক, সাতজন পুরুষলোক এবং দু’জন স্ত্রী লোক।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত জুনায়েদ ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমরা ছিলাম তিনজন পুরুষ ও নয়জন স্ত্রী লোক ।( এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) আল্লাহ্ পাকের এ উক্তি সম্পর্কে বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে ? যদি এই মুমিনরা ঐ কাফিরদের সাথে মিলে ঝুলে না থাকতো তবে অবশ্যই আমি ঐ সময়েই মুমিনদের হাত দ্বারা কাফিরদেরকে কঠিন বেদনাদায়ক শাস্তি দিতাম। তাদেরকে হত্যা করে দেয়া হতো। মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ যখন কাফিররা তাদের অন্তরে পোষণ করতো গোত্রীয় অহমিকা- অজ্ঞতা যুগের অহমিকা, এই অহমিকার বশবর্তী হয়েই তারা সন্ধিপত্রে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম লিখাতে অস্বীকার করে এবং মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর নামের সাথে রাসূলুল্লাহ্ কথাটি যোগ করাতেও অস্বীকৃতি জানায়, তখন আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় রাসূল ( সঃ ) ও মুমিনদের অন্তর খুলে দেন এবং তাদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করেন, আর তাদেরকে তাকওয়ার বাক্যে সুদৃঢ় করেন অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ কালেমার উপর তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত রাখেন। যেমন এটা হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর উক্তি এবং যেমন এটা মুসনাদে আহমাদের মারফু হাদীসে বিদ্যমান রয়েছে।হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি জনগণের সাথে জিহাদ করতে থাকবো যে পর্যন্ত না তারা বলেঃ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই’ সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই' এ কথা বললো সে তার মাল ও জানকে আমা হতে বাঁচিয়ে নিলো ইসলামের হক ব্যতীত এবং তার হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আল্লাহ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) আল্লাহ তা'আলা এটা স্বীয় কিতাবে বর্ণনা করেছেন। এক সম্প্রদায়ের নিন্দামূলক বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তাদের নিকট আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই বলা হলে তারা অহংকার করতো ।( ৩৭:৩৫ ) আর এখানে আল্লাহ্ তা'আলা মুমিনদের প্রশংসার বর্ণনা দিতে গিয়ে এও বলেনঃ “ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত ।এ কালেমা হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্'। তারা এতে অহংকার প্রকাশ করেছিল। আর মুশরিক কুরায়েশরাও এটা হতে হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন অহংকার করেছিল। এরপরেও রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদের সাথে একটা নির্দিষ্ট সময়কালের জন্যে সন্ধিপত্র পূর্ণ করে নিয়েছিলেন। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-ও এ হাদীসটি এরূপ বৃদ্ধির সাথে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যভাবে এটা জানা যাচ্ছে যে, এই পরবর্তী বাক্যটি বর্ণনাকারীর নিজের উক্তি অর্থাৎ হযরত যুহরী ( রঃ )-এর নিজের উক্তি, যা এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, যেন এটা হাদীসেই রয়েছে। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা ইখলাস বা আন্তরিকতা উদ্দেশ্য। আতা ( রঃ ) বলেন যে, কালেমাটি হলো নিম্নরূপঃ ( আরবী ) অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব তারই এবং প্রশংসাও তাঁরই, এবং তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান । হযরত সাওর ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা ( আরবী ) উদ্দেশ্য। হযরত আলী ( রাঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে ( আরবী ) -এই কালেমাকে। হযরত ইবনে উমার ( রাঃ )-এর এটাই উক্তি। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দান উদ্দেশ্য, যা সমস্ত তাকওয়ার মূল। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এ কালেমাও উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করাও উদ্দেশ্য। হযরত আতা খুরাসানী ( রঃ ) বলেন যে, কালেমায়ে তাকওয়া হলো 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এই কালেমাটি। হযরত যুহরী ( রঃ ) বলেন যে, এই কালেমা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' হযরত কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কালেমাটি।এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেনঃ ‘আল্লাহ সমস্ত বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন। অর্থাৎ কল্যাণ লাভের যোগ্য কারা এবং শিরুকের যোগ্য কারা তা তিনি ভালভাবেই অবগত আছেন।হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ )-এর কিরআত রয়েছে নিম্নরূপঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ কাফিররা যখন তাঁদের অন্তরে অজ্ঞতাযুগের অহমিকা পোষণ করেছিল তখন তোমরাও যদি তাদের মত অহমিকা পোষণ করতে তবে ফল এই দাঁড়াতো যে, মসজিদুল হারামে ফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যেতো । হযরত উমার ( রাঃ )-এর কাছে যখন হযরত উবাই ইবনে কাব ( রাঃ )-এর এ কিরআতের খবর পৌছে তখন তিনি ক্রোধে ফেটে পড়েন। কিন্তু হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) তাকে বলেনঃ “ এটা তো আপনিও খুব ভাল জানেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাছে সদা যাতায়াত ও উঠাবসা করতাম এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখাতেন, তিনি আমাকেও তা হতে শিক্ষা দিতেন!” তাঁর এ কথা শুনে হযরত উমার ( রাঃ ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি জ্ঞানী ও কুরআনের পাঠক । আপনাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ( সঃ ) যা কিছু শিখিয়েছেন তা আপনি পাঠ করুন ও আমাদেরকে শিখিয়ে দিন!” ( এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) হুদায়বিয়ার কাহিনী এবং সন্ধির ঘটনায় যেসব হাদীস এসেছে সেগুলোর বর্ণনাঃ হযরত মিসওয়ার ইবনে মুখরিমা ( রাঃ ) এবং হযরত মাওয়ান ইবনে হাকাম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ( সঃ ) বায়তুল্লাহ্র যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। কুরবানীর সত্তরটি উট তাঁর সঙ্গে ছিল। তাঁর সঙ্গীদের মোট সংখ্যা ছিল সাতশ'। প্রতি দশজনের পক্ষ হতে এক একটি উট ছিল। যখন তারা আসফান নামক স্থানে পৌঁছেন তখন হযরত বির ইবনে সুফিয়ান ( রাঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! কুরায়েশরা আপনার আগমনের সংবাদ পেয়ে মুকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে । তারা তাদের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোও সঙ্গে নিয়েছে এবং চিতা ব্যাঘ্রের চামড়া পরিধান করেছে। তারা প্রতিজ্ঞা করেছে যে, এভাবে জোরপূর্বক আপনাকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ( রাঃ )-কে তারা ছোট এক সেনাবাহিনী দিয়ে কিরা’গামীম পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়েছে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ কুরায়েশদের জন্যে আফসোস যে, যুদ্ধ-বিগ্রহই তাদেরকে খেয়ে ফেলেছে । এটা কতই না ভাল কাজ হতো যে, তারা আমাকে ও জনগণকে ছেড়ে দিতো। যদি তারা আমার উপর জয়যুক্ত হতো তবে তো তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যেতো। আর যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে লোকদের উপর বিজয়ী করতেন তবে ঐ লোকগুলোও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যেতো। যদি তারা তখনো ইসলাম কবুল না করতো তবে আমার সাথে আবার যুদ্ধ করতে এবং ঐ সময় তাদের শক্তিও পূর্ণ হয়ে যেতো। কুরায়েশরা কি মনে করেছে? আল্লাহর শপথ! এই দ্বীনের উপর আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবো এই পর্যন্ত যে, হয় আল্লাহ্ আমাকে তাদের উপর প্রকাশ্যভাবে জয়যুক্ত করবেন, না হয় আমার গ্রীবা কেটে ফেলা হবে।” অতঃপর তিনি তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন যে, তাঁরা যেন ডান দিকে হিযের পিছন দিয়ে ঐ রাস্তার উপর দিয়ে চলেন যা সানিয়াতুল মিরারের দিকে গিয়েছে। আর হুদায়বিয়া মক্কার নীচের অংশে রয়েছে। খালিদ ( রাঃ )-এর সেনাবাহিনী যখন দেখলো যে রাসূলুল্লাহ( সঃ ) পথ পরিবর্তন করেছেন তখন তারা তাড়াতাড়ি কুরায়েশদের নিকট গিয়ে তাদেরকে এ খবর জানালো। ওদিকে রাসূলুল্লাহ( সঃ ) যখন সানিয়াতুল মিরারে পৌঁছেছেন তখন তার উজ্জ্বীটি বসে পড়ে। জনগণ বলতে শুরু করে যে, তার উজ্জ্বীটি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ( সঃ ) এ কথা শুনে বললেনঃ “ আমার এ উষ্ট্রী ক্লান্তও হয়নি এবং ওর বসে যাওয়ার অভ্যাসও নেই । ওকে ঐ আল্লাহ্ থামিয়ে দিয়েছেন যিনি মক্কা হতে হাতীগুলোকে আটকিয়ে রেখেছিলেন। জেনে রেখো যে, আজ কুরায়েশরা আমার কাছে যা কিছু চাইবে আমি আত্মীয়তার সম্পর্ক হিসেবে তাদেরকে তা-ই প্রদান করবো।” অতঃপর তিনি তার সেনাবাহিনীকে শিবির সন্নিবেশ করার নির্দেশ দিলেন। তাঁরা বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এই সারা উপত্যকায় এক ফোঁটা পানি নেই ।” তিনি তখন তাঁর তৃণ ( তীরদানী ) হতে একটি তীর বের করে একজন সাহাবী ( রাঃ )-এর হাতে দিলেন এবং বললেনঃ “ এখানকার কোন কূপের মধ্যে এটা গেড়ে দাও ।” ঐ তীরটি গেড়ে দেয়া মাত্রই উচ্ছ্বসিতভাবে পানির ফোয়ারা উঠতে শুরু করলো। সমস্ত সাহাবী পানি নিয়ে নিলেন এবং এর পরেও পানি উপর দিকে উঠতেই থাকলো। যখন শিবির সন্নিবেশিত হলো এবং তাঁরা প্রশান্তভাবে বসে পড়লেন তখন বুদায়েল ইবনে অরকা খুযাআ’হ্ গোত্রের কতক লোকজনসহ আগমন করলো। বুদায়েলকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ঐ কথাই বললেন যে কথা বি ইবনে সুফিয়ানকে বলেছিলেন। লোকগুলো ফিরে গেল এবং কুরায়েশদেরকে বললোঃ “ তোমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর ব্যাপারে বড়ই তাড়াহুড়া করেছে । তিনি তো যুদ্ধ করতে আসেননি, তিনি এসেছেন শুধু বায়তুল্লাহ্র যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে। তোমরা তোমাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পুনরায় চিন্তা-ভাবনা করে দেখো।” প্রকৃতপক্ষে খুযাআ গোত্রের মুসলমান ও কাফির সবাই রাসূলুল্লাহ( সঃ )-এর পক্ষপাতী ছিল। মক্কার খবরগুলো তারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পৌছিয়ে দিতো।কুরায়েশরা বুদায়েল ও তার সঙ্গীয় লোকদেরকে বললোঃ “ যদিও রাসূলুল্লাহ( সঃ ) এই উদ্দেশ্যেই এসেছেন তবুও আমরা তো তাকে এভাবে হঠাৎ করে মক্কায় প্রবেশ করতে দিতে পারি না । কারণ তিনি মক্কায় প্রবেশ করলে জনগণের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়বে যে, তিনি মক্কায় প্রবেশ করেছেন, কেউ তাঁকে বাধা দিতে পারেনি।” অতঃপর তারা মুকরিয ইবনে হাক্সকে পাঠালো। এ লোকটি বনি আমির ইবনে ঈ গোত্রভুক্ত ছিল। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ( সঃ ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “ এ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারী লোক ।” অতঃপর তিনি তাকেও ঐ কথাই বললেন যে কথা ইতিপূর্বে দু’জন আগমনকারীকে বলেছিলেন। এ লোকটিও ফিরে গিয়ে কুরায়েশদের নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলো। অতঃপর তারা হালীস ইবনে আলকামাকে রাসূলুল্লাহ( সঃ )-এর নিকট পাঠালো। এ লোকটি আশেপাশের বিভিন্ন লোকদের নেতা ছিল। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীদেরকে ( রাঃ ) বলেনঃ “ এ লোকটি এমন সম্প্রদায়ের লোক যারা আল্লাহর কাজের সম্মান করে থাকে । সুতরাং তোমরা কুরবানীর পশুগুলোকে দাঁড় করিয়ে দাও।” সে যখন দেখলো যে, চতুর্দিক হতে কুরবানী চিহ্নিত পশুগুলো আসছে এবং দীর্ঘদিন থামিয়ে রাখার কারণে এগুলোর লোম উড়ে গেছে তখন সে রাসূলুল্লাহ( সঃ )-এর নিকট না গিয়ে সেখান হতেই ফিরে আসে এবং কুরায়েশদেরকে বলেঃ “ হে কুরায়েশের দল! আমি যা দেখলাম তাতে বুঝলাম যে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) এবং তাঁর সাহাবীদেরকে ( রাঃ ) বায়তুল্লাহর যিয়ারত হতে নিবৃত্ত করা তোমাদের উচিত নয় । আল্লাহর নামের পশুগুলো কুরবানীস্থল হতে নিবৃত্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটা চরম অত্যাচারমূলক কাজ। ওগুলোকে নিবৃত্ত রাখার কারণে ওগুলোর লোম পর্যন্ত উড়ে গেছে। আমি এটা স্বচক্ষে দেখে আসলাম।” কুরায়েশরা তখন তাকে বললো:“ তুমি তো একজন মূখ বেদুঈন । তুমি কিছুই বুঝো না। সুতরাং চুপ করে বসে পড়।” তারপর তারা পরামর্শ করে উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফীকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পাঠিয়ে দিলো। সে যাওয়ার পূর্বে কুরায়েশদেরকে সম্বোধন করে বললোঃ “ হে কুরায়েশের দল! যাদেরকে তোমরা ইতিপূর্বে মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর নিকট পাঠিয়েছিলে, তারা তোমাদের নিকট ফিরে আসলে তোমরা তাদের সাথে কি ব্যবহার করেছে তা আমার অজানা নেই । তোমরা তাদের সাথে বড়ই দুর্ব্যবহার করেছে। তাদেরকে মন্দ বলেছে, তাদের অসম্মান করেছে, অপবাদ দিয়েছে এবং তাদের প্রতি কু-ধারণা পোষণ করেছে। আমার অবস্থা তোমাদের জানা আছে। আমি তোমাদেরকে পিতৃতুল্য মনে করি এবং আমাকে তোমাদের সন্তান মনে করি। তোমরা যখন বিপদে পড়ে হা-হুতাশ করেছে তখন আমি আমার কওমকে একত্রিত করেছি। যারা আমার কথা মেনে নিয়েছে আমি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এবং তোমাদের সাহায্যের জন্যে আমি আমার জান, মাল ও কওমকে নিয়ে এগিয়ে এসেছি।” তার একথার জবাবে কুরায়েশরা সবাই বললোঃ “ তুমি সত্য কথাই বলেছো । তোমার সম্পর্কে আমাদের কোন মন্দ ধারণা নেই।” অতঃপর সে চললো এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হয়ে তাঁর সামনে বসে পড়লো। তারপর সে বলতে লাগলোঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আপনি এদিক ওদিকে থেকে কতকগুলো লোককে একত্রিত করেছেন এবং এসেছেন স্বীয় কওমের শান-শওকত নিজেই নষ্ট করার জন্যে । শুনুন, কুরায়েশরা দৃঢ় সংকল্প করেছে, ছোট ছোট বাচ্চাদেরকেও তারা সঙ্গে নিয়েছে, চিতাবাঘের চামড়া তারা পরিধান করেছে এবং আল্লাহকে সামনে রেখে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে যে, কখনই এভাবে জোরপূর্বক আপনাকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না। আল্লাহর কসম! আমার তো মনে হয় যে, আজ যারা আপনার চতুষ্পর্শ্বে ভীড় জমিয়েছে, যুদ্ধের সময় তাদের একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।” ঐ সময় হযরত আবু বকর ( রাঃ ) রাসূলুল্লহ ( সঃ )-এর পিছনে বসেছিলেন। তিনি থামতে না পেরে বলে উঠলেনঃ “ যাও, লাত' ( দেবী )-এর স্তন চোষণ করতে থাকো! আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে ছেড়ে পালাবো?" উরওয়া রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করলো ? “এটা কে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “এটা আবু কুহাফার পুত্র ।” উরওয়া তখন হযরত আবু বকর ( রাঃ )-কে লক্ষ্য করে বললোঃ “ যদি পূর্বে আমার উপর তোমার অনুগ্রহ না থাকতো তবে আমি অবশ্যই তোমাকে এর সমুচিত শিক্ষা দিতাম!” এরপর আরো কিছু বলার জন্যে উরওয়া রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দাড়ি স্পর্শ করলো । হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা সেখানে দাড়িয়েছিলেন। তিনি উরওয়ার এ বেআদবী সহ্য করতে পারলেন না। তাঁর হাতে একখানা লোহা ছিল, তিনি তা দ্বারা তার হাতে আঘাত করে বললেনঃ “ তোমার হাত দূরে রাখো, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দেহ স্পর্শ করো না ।” উরওয়া তখন তাঁকে বললোঃ “ তুমি বড়ই কর্কশভাষী ও বাকা লোক ।” এদেখে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মুচকি হাসলেন। উরওয়া জিজ্ঞেস করলোঃ “ এটা কে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এটা তোমার ভ্রাতুস্পুত্র মুগীরা ইবনে শু’বা ( রাঃ )” উরওয়া তখন হযরত মুগীরা ( রাঃ )-কে বললোঃ “ তুমি বিশ্বাসঘাতক । মাত্র কাল হতে তুমি তোমার শরীর ধুতে শিখেছে। ( এর পূর্বে পবিত্রতা সম্বন্ধে তুমি অজ্ঞ ছিলে )। মোটকথা উরওয়াকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ঐ জবাবই দিলেন যা ইতিপূর্বে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তাকে নিশ্চিত করে বললেন যে, তিনি যুদ্ধ করতে আসেননি। সে ফিরে চললো। এখানকার দৃশ্য সে স্বচক্ষে দেখে গেল যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীগণ ( রাঃ ) তাঁকে অত্যধিক ভালবাসে ও সম্মান করে। তাঁর অযুর পানি তারা হাতে হাতে নিয়ে নেন। তার মুখের থুথু হাতে নেয়ার জন্যে তারা প্রস্পর প্রতিযোগিতা করেন। তাঁর মাথার একটি চুল পড়ে গেলে প্রত্যেকেই তা নেয়ার জন্যে দৌড়িয়ে যান। সে কুরায়েশদের নিকট পোঁছে তাদেরকে বললোঃ “ হে কুরায়েশের দল! আমি পারস্য সম্রাট কিসরার এবং আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর দরবারেও গিয়েছি । আল্লাহর কসম! আমি এ সম্রাটদেরও ঐরূপ সম্মান ও মর্যাদা দেখিনি। যেরূপ মর্যাদা ও সম্মান মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর দেখলাম। তাঁর সাহাবীবর্গ ( রাঃ ) তাঁর যে সম্মান করেন এর চেয়ে বেশী সম্মান করা অসম্ভব। তোমরা এখন চিন্তা-ভাবনা করে দেখো এবং জেনে রেখো যে, মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর সাহাবীগণ এমন নন যে, তাঁদের নবী ( সঃ )-কে তোমাদের হাতে দিয়ে দিবেন।”রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-কে ডেকে মক্কাবাসীর নিকট তাঁকে পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু এর পূর্বে একটি ঘটনা এই ঘটেছিল যে, একবার রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত খারাশ ইবনে উমাইয়া খুযায়ী ( রাঃ )-কে তাঁর সা'লাব নামক উষ্ট্রে আরোহণ করিয়ে মক্কায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কুরায়েশরা উটকে কেটে ফেলে এবং তাকেও হত্যা করার ইচ্ছা করে, কিন্তু আহাবীশ সম্প্রদায় তাঁকে বাঁচিয়ে নেন। সম্ভবতঃ এই ঘটনার ভিত্তিতেই হযরত উমার ( রাঃ ) উত্তরে বলেছিলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি আশংকা করছি যে, মক্কাবাসীরা আমাকে হত্যা করে ফেলবে এবং সেখানে আমার গোত্র বানু আদ্দীর কোন লোক । নেই যে আমাকে কুরায়েশদের কবল হতে রক্ষা করতে পারে। সুতরাং আমার মনে হয় যে, হযরত উসমান ( রাঃ )-কে পাঠানোই ভাল হবে। কেননা, তাদের দৃষ্টিতে হযরত উসমানই ( রাঃ ) আমার চেয়ে অধিক সম্মানিত ব্যক্তি।" হযরত উমার ( রাঃ )-এর এ পরামর্শ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ভাল মনে করলেন। সুতরাং তিনি হযরত উসমান ( রাঃ )-কে ডেকে নিয়ে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন এবং তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে, তিনি যেন কুরায়েশদেরকে বলেনঃ “ আমরা যুদ্ধ করার জন্যে আসিনি, বরং আমরা এসেছি শুধু বায়তুল্লাহর যিয়ারত ও ওর মর্যাদা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে । হযরত উসমান ( রাঃ ) শহরে সবেমাত্র পা রেখেছেন, ইতিমধ্যে আবান ইবনে সাঈদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়ে যায়। সে তখন তার সওয়ারী হতে নেমে গিয়ে হযরত উসমান ( রাঃ )-কে সওয়ারীর আগে বসিয়ে দেয় এবং নিজে পিছনে বসে যায়। এভাবে নিজের দায়িত্বে সে হযরত উসমান ( রাঃ )-কে নিয়ে চলে যেন তিনি মক্কাবাসীর কাছে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পয়গাম পৌঁছিয়ে দিতে পারেন। সুতরাং তিনি সেখানে গিয়ে কুরায়েশদেরকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বাণী শুনিয়ে দেন। তাঁরা তাঁকে বললোঃ “ আপনি তো এসেই গেছেন, সুতরাং আপনি ইচ্ছা করলে বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করে নিতে পারেন । কিন্তু তিনি উত্তরে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাওয়াফ না করা পর্যন্ত আমি তাওয়াফ করতে পারি না । এটা আমার পক্ষে অসম্ভব।” তখন কুরায়েশরা হযরত উসমান ( রাঃ )-কে আটক করে ফেলে। তাঁকে তারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট ফিরে যেতে দিলো না। আর ওদিকে ইসলামী সেনাবাহিনীর মধ্যে এ খবর রটে যায় যে, হযরত উসমান ( রাঃ )-কে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। যুবহীর ( রঃ ) রিওয়াইয়াতে আছে যে, এরপর কুরায়েশরা সুহায়েল ইবনে আমরকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পাঠিয়ে দেয় যে, সে যেন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে সন্ধি করে আসে। কিন্তু এটা জরুরী যে, এ বছর তিনি মক্কায় প্রবেশ করতে পারেন না। কেননা এরূপ হলে আরববাসী তাদেরকে তিরস্কার করবে যে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) আসলেন অথচ তারা তাকে বাধা দিতে পারলো না।সুহায়েল এই দৌত্যকার্য নিয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হলো। .
তাকে দেখেই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ মনে হচ্ছে যে, কুরায়েশদের এখন সন্ধি করারই মত হয়েছে, তাই তারা এ লোকটিকে পাঠিয়েছে ।” সুহাইল রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে কথা বলতে শুরু করলো। উভয়ের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ধরে আলাপ আলোচনা চলতে থাকলো। সন্ধির শর্তগুলো নির্ধারিত হলো। শুধু লিখন কার্য বাকী থাকলো। হযরত উমার ( রাঃ ) দৌড়িয়ে হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর নিকট গেলেন এবং তাঁকে বললেনঃ “ আমরা কি মুমিন নই এবং এ লোকগুলো কি মুশরিক নয়?” উত্তরে হযরত আবু বকর ( রাঃ ) বললেনঃ “হ্যা অবশ্যই আমরা মুমিন ও এরা মুশরিক ।“ তাহলে দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করার কি কারণ থাকতে পারে?” প্রশ্ন করলেন হযরত উমার ( রাঃ )! হযরত আবু বকর ( রাঃ ) তখন হযরত উমার ( রাঃ )-কে বললেনঃ “হে উমার ( রাঃ )! রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পাদানী ধরে থাকো । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) হযরত উমার ( রাঃ ) বললেনঃ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি।” অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গিয়ে বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমরা কি মুসলমান নই এবং তারা কি মুশরিক নয়?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “হ্যা, অবশ্যই আমরা মুসলমান এবং তারা মুশরিক ।” তখন হযরত উমার ( রাঃ ) বললেনঃ “ তাহলে আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে দুর্বলতা প্রদর্শন করবো কেন?" রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জবাবে বললেনঃ “আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল । আমি তার হুকুমের বিরোধিতা করতে পারি না। আর আমি এ বিশ্বাস রাখি যে, তিনি আমাকে বিনষ্ট ও ধ্বংস করবেন না।” হযরত উমার ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি বলার সময় তো আবেগে অনেক কিছু বলে ফেললাম । কিন্তু পরে আমি বড়ই অনুতপ্ত হলাম। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমি বহু রোযা রাখলাম, বহু নামায পড়লাম, বহু গোলাম আযাদ করলাম এই ভয়ে যে, না জানি হয়তো আমার এই অপরাধের কারণে আমার উপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে কোন শাস্তি এসে পড়ে।”রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সন্ধিপত্র লিখবার জন্যে হযরত আলী ( রাঃ )-কে ডাকলেন এবং তাঁকে বললেনঃ “ লিখো- ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” তখন সুহায়েল প্রতিবাদ করে বললোঃ “ আমি এটা বুঝি না, জানি না ( আরবী ) লিখিয়ে নিন ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত আলী ( রাঃ )-কে বললেনঃ “ ঠিক আছে, তাই লিখো ।” তারপর তিনি হযরত আলী ( রাঃ )-কে বললেনঃ “ লিখো- এটা ঐ সন্ধিপত্র যা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ( সঃ ) লিখিয়েছেন । এবারও সুহায়েল প্রতিবাদ করে বললোঃ “ আপনাকে যদি রাসূল বলেই মানবো তবে আপনার সাথে যুদ্ধ করলাম কেন? লিখিয়ে নিন- এটা ঐ সন্ধিপত্র যা আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ ( সঃ ) লিখিয়েছেন এবং সুহায়েল ইবনে আমর লিখিয়েছেন এই শর্তের উপর যে, ( এক ) উভয় দলের মধ্যে দশ বছর পর্যন্ত কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ হবে না । জনগণ শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করবে। একে অপরকে বিপদাপদ হতে রক্ষা করবে। ( দুই ) যে ব্যক্তি তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট চলে যাবে তিনি তাকে ফিরিয়ে দিবেন। পক্ষান্তরে যে সাহাবী ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হতে কুরায়েশদের নিকট চলে আসবে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে না। উভয় দলের যুদ্ধ বন্ধ থাকবে এবং সন্ধি প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কেউ শৃংখলাবদ্ধ ও বন্দী হবে না। ( তিন ) যে কোন গোত্র কুরায়েশ অথবা মুসলমানদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ ও মিত্র হতে পারবে। তখন বানু খুযাআহ গোত্র বলে উঠলোঃ “ আমরা মুসলমানদের মিত্র হলাম এবং তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ থাকলাম ।” আর বানু বকর গোত্র বললোঃ “ আমরা কুরায়েশদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ থাকলাম এবং তাদের মিত্র হলাম ।" ( চার ) এ বছর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উমরা না করেই ফিরে যাবেন। ( পাঁচ ) আগামী বছর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীবর্গসহ মক্কায় আসবেন এবং তিন দিন অবস্থান করবেন। ঐ তিন দিন মক্কাবাসীরা অন্যত্র সরে যাবে। ( ছয় ) একজন সওয়ারের জন্যে যতটুকু অস্ত্রের প্রয়োজন, এটুকু ছাড়া বেশী অস্ত্র তারা সঙ্গে আনতে পারবেন না। তরবারী কোষের মধ্যেই থাকবে।তখনও সন্ধিপত্রের লিখার কাজ চলতেই আছে এমতাবস্থায় সুহায়েলের পুত্র হযরত আবূ জানদাল ( রাঃ ) শৃংখলাবদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়তে পড়তে মক্কা হতে পালিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হয়ে যান। সাহাবায়ে কিরাম ( রাঃ ) মদীনা হতে যাত্রা শুরু করার সময়ই বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন যে, তারা অবশ্যই বিজয় লাভ করবেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এটা স্বপ্নে দেখেছিলেন। এজন্যে বিজয় লাভের ব্যাপারে তাদের মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। কিন্তু এখানে এসে যখন তারা দেখলেন যে, সন্ধি হতে চলেছে এবং তাঁরা তাওয়াফ না করেই ফিরে যাচ্ছেন, আর বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নিজের উপর কষ্ট স্বীকার করে সন্ধি করছেন তখন তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। এমন কি তাদের এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, তারা যেন ধ্বংসই হয়ে যাবেন। এসব তো ছিলই, তদুপপারি আবু জানদাল ( রাঃ ), যিনি মুসলমান ছিলেন এবং যাকে মুশরিকরা বন্দী করে রেখেছিল ও নানা প্রকার উৎপীড়ন করছিল, যখন তিনি শুনতে পেলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এসেছেন তখন তিনি কোন প্রকারে সুযোগ পেয়ে লৌহ শৃংখলে আবদ্ধ অবস্থাতেই রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হয়ে যান। তখন সুহায়েল উঠে তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে এবং বলেঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আমার ও আপনার মধ্যে ফায়সালা হয়ে গেছে, এরপরে আবু জানদাল ( রাঃ ) এসেছে । সুতরাং এই শর্ত অনুযায়ী আমি একে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বললেনঃ “ হ্যা, ঠিক আছে ।” সুহায়েল তখন হযরত আবু জানদাল ( রাঃ )-এর জামার কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে চললো। হযরত আবু জানদাল ( রাঃ ) উচ্চস্বরে বলতে শুরু করেনঃ “ হে মুসলিমবৃন্দ! আপনারা আমাকে মুশরিকদের নিকট ফিরিয়ে দিচ্ছেন? এরা তো আমার দ্বীন ছিনিয়ে নিতে চায়!” এ ঘটনায় সাহাবীবর্গ ( রাঃ ) আরো মর্মাহত হন । রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আবূ জানদাল ( রাঃ )-কে সম্বোধন করে বলেনঃ “ হে আবূ জানদাল ( রাঃ )! ধৈর্য ধারণ কর ও নিয়ত ভাল রাখো । শুধু তুমি নও, বরং তোমার মত আরো বহু দুর্বল মুসলমানের জন্যে আল্লাহ তা'আলা পথ পরিষ্কার করে দিবেন। তিনি তোমাদের সবারই দুঃখ, কষ্ট এবং যন্ত্রণা দূর করে দিবেন। আমরা যেহেতু সন্ধি করে ফেলেছি এবং সন্ধির শর্তগুলো গৃহীত হয়ে গেছে, সেহেতু বাধ্য হয়েই তোমাকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। আমরা বিশ্বাসঘাতক ও চুক্তি ভঙ্গকারী হতে চাই না।" হযরত উমার ( রাঃ ) হযরত আবূ জানদাল ( রাঃ )-এর সাথে সাথে তার পার্শ্ব দিয়ে চলতে থাকলেন। তিনি তাকে বলতে থাকলেনঃ “ হে আবূ জানদাল ( রাঃ )! সবর কর । এতো মুশরিক। এদের রক্ত কুকুরের রক্তের মত ( অপবিত্র )।" হযরত উমার ( রাঃ ) সাথে সাথে চলতে চলতে তাঁর তরবারীর হাতলটি হযরত আবূ জানদাল ( রাঃ )-এর দিকে করেছিলেন এবং তিনি চাচ্ছিলেন যে, তিনি যেন তরবারীটি টেনে নিয়ে স্বীয় পিতাকে হত্যা করে ফেলেন। কিন্তু হযরত আবূ জানাল ( রাঃ )-এর হাতটি তাঁর পিতার উপর উঠলো না। সন্ধিকাৰ্য সমাপ্ত হলো এবং সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হারামে নামায পড়তেন এবং হালাল স্থানে তিনি অস্থির ও ব্যাকুল থাকতেন।অতঃপর তিনি জনগণকে বললেনঃ “ তোমরা উঠো এবং আপন আপন কুরবানী করে ফেললা ও মাথা মুণ্ডন কর ।" কিন্তু একজনও এ কাজের জন্যে। দাঁড়ালো না। একই কথা তিনি তিনবার বললেন। কিন্তু এরপরেও সাহাবীদের ( রাঃ ) পক্ষ হতে কোন সাড়া পাওয়া গেল না। রাসূলুল্লাহ তখন ফিরে হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ )-এর কাছে গেলেন এবং তাঁকে বললেনঃ “ জনগণের কি হলো তারা আমার কথায় সাড়া দিচ্ছে না?” জবাবে হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এখন তাঁরা যে অত্যন্ত মর্মাহত তা আপনি খুব ভাল জানেন । সুতরাং তাদেরকে কিছু না বলে আপনি নিজের কুরবানীর পশুর নিকট গমন করুন এবং কুরবানী করে ফেলুন। আর নিজের মস্তক মুণ্ডন করুন। খুব সম্ভব আপনাকে এরূপ করতে দেখে জনগণও তাই করবে।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এ কাজই করলেন। তার দেখাদেখি তখন সবাই উঠে পড়লেন এবং নিজ নিজ কুরবানীর পশু কুরবানী করলেন এবং মস্তক মুণ্ডন করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীগণ ( রাঃ ) সহ সেখান হতে প্রস্থান করলেন। অর্ধেক পথ অতিক্রম করেছেন এমন সময় সূরায়ে আল ফাত্হ্ অবতীর্ণ হয়। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)সহীহ বুখারীতে এ রিওয়াইয়াতটি রয়েছে। তাতে আছে যে, তাঁর সামনে এক হাজার কয়েক শত সাহাবী ( রাঃ ) ছিলেন। যুল হুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছে কুরবানীর পশুগুলোকে চিহ্নিত করেন, উমরার ইহরাম বাঁধেন এবং খুযাআহ গোত্রীয় তাঁর এক গুপ্তচরকে গোয়েন্দাগিরির জন্যে প্রেরণ করেন। গাদীরুল আশতাতে এসে তিনি খবর দেন যে, কুরায়েশরা পূর্ণ সেনাবাহিনী গঠন করে নিয়েছে। তারা আশে-পাশের এদিক ওদিকের বিভিন্ন লোকদেরকেও একত্রিত করেছে। যুদ্ধ করা ও আপনাকে বায়তুল্লাহ শরীফ হতে নিবৃত্ত করাই তাদের উদ্দেশ্য। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “ তোমরা পরামর্শ দাও । আমরা কি তাদের পরিবার পরিজন ও সন্তান-সন্ততির উপর আক্রমণ করবো? যদি তারা আমাদের নিকট আসে তবে আল্লাহ তা'আলা তাদের গর্দান কর্তন। করবেন অথবা তাদেরকে দুঃখিত ও চিন্তিত অবস্থায় পরিত্যাগ করবেন। যদি তারা বসে থাকে তবে ঐ দুঃখ ও চিন্তার মধ্যেই থাকবে। আর যদি তারা মুক্তি ও পরিত্রাণ পেয়ে যায় তবে এগুলো হবে এমন গর্দান যেগুলো মহামহিমান্বিত আল্লাহ কর্তন করবেন। দেখো, এটা কত বড় যুলুম যে, আমরা না কারো সাথে যুদ্ধ করতে এসেছি, না অন্য কোন উদ্দেশ্যে এসেছি। আমরা তো শুধু আল্লাহর ঘরের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি, আর তারা আমাদেরকে এ কাজ হতে নিবৃত্ত করতে চাচ্ছে! বল তো, আমরা তাহলে কেন তাদের সাথে যুদ্ধ করবো না?” তার একথার জবাবে হযরত আবু বকর ( রাঃ ) বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি বায়তুল্লাহর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন । চলুন, আমরা অগ্রসর হই। আমাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধ-বিগ্রহ করা নয়। কিন্তু কেউ যদি আমাদেরকে আল্লাহর ঘর হতে নিবৃত্ত করে তবে আমরা তার সাথে প্রচণ্ড লড়াই করবো, সে যে কেউই হোক না কেন।” আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) তখন সাহাবীদেরকে ( রাঃ ) বললেনঃ “ তাহলে আল্লাহর নাম নিয়ে চলো আমরা এগিয়ে যাই ।" আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ কুরায়েশদের অশ্বারোহী বাহিনীর সেনাপতি হিসেবে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ( রাঃ ) এগিয়ে আসছে । সুতরাং তোমরা ডান দিকে চলো। খালিদ ( রাঃ ) এ খবর জানতে পারলেন না। অবশেষ তারা সানিয়া নামক স্থানে পৌঁছে গেলেন। অতঃপর খালিদ ( রাঃ ) এখবর পেয়ে কুরায়েশদের নিকট দৌড়িয়ে গেলেন এবং তাদেরকে এ খবর অবহিত করলেন। এ রিওয়াইয়াতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর উস্ত্রীর নাম কাসওয়া’ বলা হয়েছে। তাতে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ কুরায়েশরা আমার কাছে যা চাইবে আমি তাদেরকে তাই দিবো যদি না তাতে আল্লাহর মর্যাদার হানী হয় ।” অতঃপর যখন তিনি স্বীয় উস্ত্রীকে হাঁকালেন তখন ওটা দাড়িয়ে গেল। তখন জনগণ বললেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর উষ্ট্রী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ আমার উষ্ট্রী ক্লান্ত হয়নি, বরং ওকে হাতীকে নিবৃত্তকারী ( আল্লাহ ) নিবৃত্ত করেছেন ।” বুদায়েল ইবনে অরকা খুযায়ী রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হতে গিয়ে যখন কুরায়েশদের নিকট জবাব পৌঁছিয়ে দিলো তখন উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী দাড়িয়ে নিজেকে তাদের কাছে ভালভাবে পরিচিত করলো, যেমন পূর্বে এ বর্ণনা দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে কুরায়েশদেরকে একথাও বলেঃ “ দেখো, এই লোকটি খুবই জ্ঞান সম্মত ও ভাল কথা বলেছে । সুতরাং তোমরা এটা কবুল করে নাও।” তারপর সে নিজেই যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হয়ে তাঁর ঐ জবাবই শুনালো তখন সে তাকে বললোঃ “ শুনুন জনাব, দু'টি ব্যাপার রয়েছে, হয়তো আপনি বিজয়ী হবেন এবং তারা ( কুরায়েশরা ) পরাজিত হবে, নয়তো তারাই বিজয়ী হবে এবং আপনি হবেন পরাজিত । যদি প্রথম ব্যাপারটি ঘটে অর্থাৎ আপনি বিজয় লাভ করেন এবং তারা হয় পরাজিত, তাতেই বা কি হবে? তারা তো আপনারই কওম। আর আপনি কি এটা কখনো শুনেছেন যে, কেউ তার কওমকে ধ্বংস করেছে? আর যদি দ্বিতীয় ব্যাপারটি ঘটে যায় অর্থাৎ আপনি হন পরাজিত এবং তারা হয় বিজয়ী তবে তো আমার মনে হয় যে, আজ যারা আপনার পাশে রয়েছে তারা সবাই আপনাকে ছেড়ে পালাবে।" তার এ কথার জবাব হযরত আবু বকর ( রাঃ ) যা দিয়েছিলেন তা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা ( রাঃ ) সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে যে, যে সময় উরওয়া রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে কথাবার্তা বলছিল ঐ সময় তিনি ( হযরত মুগীরা রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মাথার নিকট দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর হাতে তরবারী ছিল এবং মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ। যখন উরওয়া রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দাড়িতে হাত দেয় তখন তিনি তরবারীর নাল দ্বারা তার হাতে আঘাত করেন। ঐ সময় উরওয়া হযরত মুগীরা ( রাঃ )-এর পরিচয় পেয়ে তাকে বলেঃ “ তুমি তো বিশ্বাসঘাতক । তোমার বিশ্বাসঘাতকতায় আমি তোমার সঙ্গী হয়েছিলাম।” ঘটনা এই যে, অজ্ঞতার যুগে হযরত মুগীরা ( রাঃ ) কাফিরদের একটি দলের সাথে ছিলেন। সুযোগ পেয়ে তিনি তাদেরকে হত্যা করে দেন এবং তাদের মালধন নিয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হন এবং ইসলাম কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ তোমার ইসলাম আমি মঞ্জুর করলাম বটে, কিন্তু এই মালের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ।” উরওয়া এখানে এ দৃশ্যও দেখে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) থুথু ফেললে কোন না কোন সাহাবী তা হাতে ধরে নেন। তার ওষ্ঠ নড়া মাত্রই তাঁর আদেশ পালনের জন্যে একে অপরের আগে বেড়ে যান। তিনি যখন অযু করেন তখন তার দেহের অঙ্গগুলো হতে পতিত পানি গ্রহণ করবার জন্যে সাহাবীগণ কাড়াকাড়ি শুরু করে দেন। যখন তিনি কথা বলেন তখন সাহাবীগণ এমন নীরবতা অবলম্বন করেন যে, টু শব্দটি পর্যন্ত শোনা যায় না। তাঁকে তাঁরা এমন সম্মান করেন যে, তার চেহারা মুবারকের দিকেও তারা তাকাতে পারেন না, বরং অত্যন্ত আদবের সাথে চক্ষু নীচু করে বসে থাকেন। উরওয়া কুরায়েশদের নিকট ফিরে গিয়ে এই অবস্থার কথাই তাদেরকে শুনিয়ে দেয় এবং বলেঃ “ মুহাম্মাদ ( সঃ ) যে ন্যায়সঙ্গত কথা বলছেন তা মেনে নাও ।” বানু কিনানা গোত্রের যে লোকটিকে কুরায়েশরা উরওয়ার পরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পাঠিয়েছিল তাকে দেখেই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মন্তব্য করেছিলেনঃ “ এ লোকেরা কুরবানীর পশুর বড়ই সম্মান করে থাকে । সুতরাং হে আমার সাহাবীবর্গ! তোমরা কুরবানীর পশুগুলোকে দাঁড় করিয়ে দাও এবং তার দিকে হাঁকিয়ে দাও।" যখন লোকটি এ দৃশ্য দেখলো এবং সাহাবীদের ( রাঃ ) মুখের ‘লাব্বায়েক’ ধ্বনি শুনলো তখন বলে উঠলোঃ “ এই লোকদেরকে বায়তুল্লাহ হতে নিবৃত্ত করা বড়ই অন্যায় তাতে এও রয়েছে যে, মুকরিযকে দেখে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ এ একজন ব্যবসায়িক লোক ।” সে বসে কথাবার্তা বলতে আছে এমন সময় সুহায়েল এসে পড়ে। তাকে দেখেই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীদেরকে বলেনঃ “ এখন সুহায়েল এসে পড়েছে ।” সন্ধিপত্রে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' লিখায় যখন সে প্রতিবাদ করে তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসূল, যদিও তোমরা স্বীকার না কর ” এটা এই পরিপ্রেক্ষিতে ছিল যে, যখন তাঁর উষ্ট্ৰীটি বসে পড়েছিল তখন তিনি বলেছিলেনঃ “ এরা আল্লাহ তাআলার মর্যাদা রক্ষা করে আমাকে যা কিছু বলবে আমি তার সবই স্বীকার করে নিবো ।" রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সন্ধিপত্র লিখাতে গিয়ে বলেনঃ “ এ বছর তোমরা আমাদেরকে বায়তুল্লাহ যিয়ারত করতে দিবে ।" সুহায়েল তখন বলেঃ “ এটা আমরা স্বীকার করতে পারি না । কেননা, এরূপ হলে জনগণ বলবে যে, কুরায়েশরা অপারগ হয়ে গেছে, কিছুই করতে পারলো না।" যখন এই শর্ত হচ্ছিল যে, যে কাফির মুসলমান হয়ে রাসলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট চলে যাবে তাকে তিনি ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। তখন মুসলমানরা বলে উঠেনঃ “ সুবহানাল্লাহ! এটা কি করে হতে পারে যে, সে মুসলমান হয়ে আসবে, আর তাকে কাফিরদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে ।” এরূপ কথা চলছিল ইতিমধ্যে হযরত আবূ জানদাল ( রাঃ ) লৌহ শৃংখলে আবদ্ধ অবস্থায় এসে পড়েন। সুহায়েল তখন বলেঃ “ একে ফিরিয়ে দিন ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বলেনঃ “ এখন পর্যন্ত ততা সন্ধিপত্র পূর্ণ হয়নি । সুতরাং একে আমরা ফিরিয়ে পাঠাই কি করে?” সুহায়েল তখন বললোঃ আল্লাহর কসম! আমি তাহলে অন্য কোন শর্তে সন্ধি করতে সম্মত নই ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ তুমি বিশেষভাবে এর ব্যাপারে আমাকে অনুমতি দাও ।” সে জবাব দিলোঃ “ না, আমি এর ব্যাপারেও আপনাকে অনুমতি দিবো না ।” তিনি দ্বিতীয়বার বললেন। কিন্তু এবারেও সে প্রত্যাখ্যান করলো। মুকরিয বললোঃ “ হ্যা, আমরা আপনাকে এর অনুমতি দিচ্ছি ।” আবু জানদাল ( রাঃ ) বললেনঃ “ হে মুসলমানের দল! আপনারা আমাকে মুশরিকদের নিকট ফিরিয়ে দিচ্ছেন? অথচ আমি তো মুসলমান রূপে এসেছি । আমি কি কষ্ট ভোগ করছি তা কি আপনারা দেখতে পান না?” তাঁকে মহামহিমান্বিত আল্লাহর পথে কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তখন হযরত উমার ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হয়ে যা কিছু বলেছিলেন তা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। হযরত উমার ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে আরো বললেনঃ “ আপনি কি আমাদেরকে বলেননি যে, তোমরা সেখানে যাবে ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “হ্যা, তা তো বলেছিলাম । কিন্তু এটা তো বলিনি যে, এটা এ বছরই হবে?” হযরত উমার ( রাঃ ) তখন বলেনঃ “ হ্যা, একথা আপনি বলেননি বটে ।” রাসুলল্লাহ বলেনঃ “ তাহলে ঠিকই আছে, তোমরা অবশ্যই সেখানে যাবে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে । হযরত উমার ( রাঃ ) বলেনঃ “ অতঃপর আমি হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর নিকট গেলাম এবং ঐ কথাই তাঁকেও বললাম ।” এর বর্ণনা পূর্বে গত হয়েছে। এতে একথাও রয়েছে যে, তিনি হযরত আবু বকর ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ তিনি কি আল্লাহর রাসূল নন?" উত্তরে হযরত আবু বকর ( রাঃ ) বলেনঃ “হ্যা, অবশ্যই তিনি আল্লাহর রাসূল ।" তারপর হযরত উমার ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর ভবিষদ্বাণীর কথা উল্লেখ করেন এবং ঐ জবাবই পান যা বর্ণিত হলো এবং যে জবাব স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দিয়েছিলেন।এই রিওয়াইয়াতে এও রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় হস্ত দ্বারা নিজের উটকে যবেহ করেন এবং নাপিতকে ডেকে মাথা মুণ্ডিয়ে নেন তখন সমস্ত সাহাবী ( রাঃ ) এক সাথে দাঁড়িয়ে যান এবং কুরবানীর কার্য শেষ করে একে অপরের মস্তক মুণ্ডন করতে শুরু করেন এবং দুঃখের কারণে একে অপরকে হত্যা করার উপক্রম হয়।এরপর ঈমান আনয়নকারিণী নারীরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আসেন যাদের সম্পর্কে ( আরবী ) এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত উমার ( রাঃ ) তার দু’জন মুশরিকা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন, যাদের একজনকে বিয়ে করেন মু'আবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান ( রাঃ ) এবং অন্যজনকে বিয়ে করেন সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এখান হতে প্রস্থান করে মদীনায় চলে আসেন। আবূ বাসীর ( রাঃ ) নামক একজন কুরায়েশী, যিনি মুসলমান ছিলেন। সুযোগ পেয়ে তিনি মক্কা হতে পলায়ন করে মদীনায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পৌঁছে যান। তার পরেই দু’জন কাফির রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর খিদমতে হাযির হয় এবং আরয করেঃ “ চুক্তি অনুযায়ী এ লোকটিকে আপনি ফিরিয়ে দিন । আমরা কুরায়েশদের প্রেরিত দূত। আবূ বাসীর ( রাঃ )-কে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে আমরা এসেছি।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ আচ্ছা, ঠিক আছে, তাকে আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি ।" সুতরাং তিনি আবূ বাসীর ( রাঃ )-কে তাদের হাতে সমর্পণ করলেন। তারা দু’জন তাঁকে নিয়ে মক্কার পথে যাত্রা শুরু করলো। যখন তারা যুলহুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছলো তখন সওয়ারী হতে অবতরণ করে খেজুর খেতে শুরু করলো। আবূ বাসীর ( রাঃ ) তাদের একজনকে বললেনঃ “ তোমার তরবারীখানা খুবই উত্তম ।” উত্তরে লোকটি বললোঃ “ হ্যা, উত্তম তো বটেই । ভাল লোহা দ্বারা এটা তৈরী। আমি বারবার এটাকে পরীক্ষা করেছি। এর ধার খুবই তীক্ষ্ণ।” হযরত আবু বাসীর ( রাঃ ) তাকে বললেনঃ “ আমাকে ওটা একটু দাও তো, ওর ধার পরীক্ষা করে দেখি ।” সে তখন তরবারীটা হযরত আবু বাসীর ( রাঃ )-এর হাতে দিলো। হাতে নেয়া মাত্রই তিনি ঐ কাফিরকে হত্যা করে ফেলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি এ অবস্থা দেখে দৌড় দিলো,এবং একেবারে মদীনায় পৌঁছে নিশ্বাস ছাড়লো। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে দেখেই বললেনঃ “ লোকটি অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত্র অবস্থায় রয়েছে । সে ভয়াবহ কোন দৃশ্য দেখেছে। ইতিমধ্যে সে কাছে এসে পড়লো এবং বলতে লাগলোঃ আল্লাহর কসম! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে এবং আমিও প্রায় নিহত হতে চলেছিলাম । দেখুন, ঐ যে সে আসছে।" এরই মধ্যে হযরত আবু বাসীর ( রাঃ ) এসে পড়লেন এবং আরয করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহ তা'আলা আপনার দায়িত্ব পূর্ণ করিয়েছেন । আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাকে তাদের হাতে সমর্পণ করে দিয়েছেন। এখন মহান আল্লাহর এটা দয়া যে, তিনি আমাকে তাদের হাত হতে রক্ষা করেছেন।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ আফসোস! কেমন লোক এটা? এততা যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করলো! যদি তাকে কেউ এটা বুঝিয়ে দিতো তবে কতইনা ভালো হতো! রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর একথা শুনে হযরত আবু বাসীর ( রাঃ ) সতর্ক হয়ে গেলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন যে, সম্ভবতঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পুনরায় তাকে মুশরিকদের কাছে সমর্পণ করবেন। তাই তিনি মদীনা হতে বিদায় হয়ে গেলেন এবং দ্রুত পদে সমুদ্রের তীরের দিকে চললেন। সমুদ্রের তীরেই তিনি বসবাস করতে লাগলেন। এ খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো। হযরত আবূ জানদাল ( রাঃ ), যাকে এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হুদায়বিয়া হতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সুযোগ পেয়ে মক্কা হতে পালিয়ে আসেন এবং সরাসরি হযরত আবু বাসীর ( রাঃ )-এর নিকট চলে যান। এখন অবস্থা এই দাঁড়ায় যে, মুশরিক কুরায়েশদের মধ্যে যে কেউই ইসলাম গ্রহণ করতেন তিনিই সরাসরি আবূ বাসীর ( রাঃ )-এর কাছে চলে আসতেন এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকতেন। শেষ পর্যন্ত তাদের একটি দল হয়ে যায়। তারা এখন এ কাজ শুরু করেন যে, কুরায়েশদের যে বাণিজ্যিক কাফেলা সিরিয়ার দিকে আসতো, এ দলটি তাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিতেন। ফলে তাদের কেউ কেউ নিহতও হতো এবং তাদের মালধন এই মুহাজির মুসলমানদের হাতে আসতো। শেষ পর্যন্ত মক্কার কুরায়েশরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। অবশেষে তারা মদীনায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট দূত পাঠিয়ে দেয়। তারা বলেঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! দয়া করে সমুদ্রের তীরবর্তী ঐ লোকদেরকে মদীনায় ডাকিয়ে নিন । আমরা তাদের দ্বারা খুবই উৎপীড়িত হচ্ছি। তাদের মধ্যে যে কেউ আপনার কাছে আসবে তাকে আমরা নিরাপত্তা দিচ্ছি। আমরা আপনাকে আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের আপনার নিকট ডাকিয়ে নিতে অনুরোধ করছি।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন এবং ঐ মুহাজির মুসলমানদের নিকট লোক পাঠিয়ে তাদের সকলকে ডাকিয়ে নিলেন। তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ ...
( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন।মুশরিক কুরায়েশদের অজ্ঞতা যুগের অহমিকা এই ছিল যে, তারা সন্ধিপত্রে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখতে দেয়নি এবং নবী ( সঃ )-এর নামের সাথে রাসূলুল্লাহ’ লিখবার সময়েও প্রতিবাদ করেছিল এবং তাঁকে বায়তুল্লাহ শরীফের যিয়ারত করতে দেয়নি।হাবীব ইবনে আবি সাবিত ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু অয়েল ( রাঃ )-এর নিকট গেলাম এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, আমরা সিফফীনে ছিলাম। একটি লোক বললেনঃ “ তোমরা কি ঐ লোকদেরকে দেখোনি যাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করা হয়?” হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ( রাঃ ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা ।” তখন সাহল ইবনে হানীফ ( রাঃ ) বলেনঃ “ তোমরা নিজেদেরকে অপবাদ দাও । আমরা নিজেদেরকে হুদায়বিয়ার দিন দেখেছি অর্থাৎ ঐ সন্ধির সময় যা নবী ( সঃ ) ও মুশরিকদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। যদি আমাদের যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য থাকতো তবে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম।” অতঃপর হযরত উমার ( রাঃ ) এসে বললেনঃ “ আমরা কি হকের উপর নই এবং তারা কি বাতিলের উপর নয়?” আমাদের শহীদরা জান্নাতী এবং তাদের নিহতরা কি জাহান্নামী নয়?" রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, অবশ্যই । হযরত উমার ( রাঃ ) তখন বললেনঃ “ তাহলে কেন আমরা দ্বীনের ব্যাপারে দুর্বলতা প্রকাশ করবো এবং ফিরে যাবো? অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্যে কোন ফায়সালা করেননি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “হে খাত্তাবের ( রাঃ ) পুত্র! নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল । তিনি কখনো আমাকে বিফল মনোরথ করবেন না।” একথা শুনে হযরত উমার ( রাঃ ) ফিরে আসলেন, কিন্তু ছিলেন অত্যন্ত রাগান্বিত। অতঃপর তিনি হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর নিকট গমন করেন এবং উভয়ের মধ্যে অনুরূপই প্রশ্নোত্তর হয়। এরপর সূরায়ে ফাতহ অবতীর্ণ হয়। কোন কোন রিওয়াইয়াতে হযরত সাহল ইবনে হানীফ ( রাঃ )-এর এরূপ উক্তিও রয়েছেঃ “ আমি নিজেকে হযরত আবু জান্দাল ( রাঃ )-এর ঘটনার দিন দেখেছি যে, যদি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হুকুমকে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা আমার থাকতো তবে অবশ্যই আমি ফিরিয়ে দিতাম ।” তাতে এও রয়েছে যে, যখন সূরায়ে ফাহ্ অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-কে ডেকে এ সূরাটি শুনিয়ে দেন।মুসনাদে আহমাদে রয়েছেঃ যখন এই শর্ত মীমাংসিত হয় যে, মুশরিকদের লোক মুসলমানদের নিকট গেলে তাকে মুশরিকদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে, পক্ষান্তরে যদি মুসলমানদের লোক মুশরিকদের নিকট যায় তবে তাকে মুসলমানদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে না। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলা হয়ঃ “ আমরা কি এটাও মেনে নিবো?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “হ্যা! কারণ আমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি তাদের নিকট যাবে তাকে আল্লাহ তাআলা আমাদের হতে দূরেই রাখবেন ।" ( এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে )হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ যখন খারেজীরা পৃথক হয়ে যায় তখন আমি তাদেরকে বলিঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন যখন মুশরিকদের সাথে সন্ধি করেন তখন তিনি হযরত আলী ( রাঃ )-কে বলেনঃ “হে আলী ( রাঃ )! লিখো- এগুলো হলো ঐ সন্ধির শর্তসমূহ যেগুলোর উপর আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ( সঃ ) সন্ধি করেছেন ।” তখন মুশরিকরা প্রতিবাদ করে বলেঃ “ আমরা যদি আপনাকে রাসূল বলেই মানতাম তবে কখনো আপনার সাথে যুদ্ধ করতাম না ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ হে আলী ( রাঃ )! ওটা মিটিয়ে দাও । আল্লাহ খুব ভাল জানেন যে, আমি তার রাসূল। হে আলী ( রাঃ )! ওটা কেটে দাও এবং লিখো- এগুলো ঐ শর্তসমূহ যেগুলোর উপর মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল্লাহ ( সঃ ) সন্ধি করেছেন। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত আলী ( রাঃ ) অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ওটা কাটিয়ে নিলেন। এতে তাঁর নবুওয়াতের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হলো না।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সত্তরটি উট কুরবানী করেছিলেন যেগুলোর মধ্যে একটি উট আবূ জেহেলেরও ছিল। যখন এ উটগুলোকে বায়তুল্লাহ হতে নিবৃত্ত করা হলো তখন উটগুলো দুগ্ধপোষ্য শিশুহারা মায়ের মত ক্রন্দন করলো।” ( এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে )

সূরা ফাত্হ আয়াত 26 সূরা

إذ جعل الذين كفروا في قلوبهم الحمية حمية الجاهلية فأنـزل الله سكينته على رسوله وعلى المؤمنين وألزمهم كلمة التقوى وكانوا أحق بها وأهلها وكان الله بكل شيء عليما

سورة: الفتح - آية: ( 26 )  - جزء: ( 26 )  -  صفحة: ( 514 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ
  2. তবু তারা উহার পা কেটে দিল। তখন সালেহ বললেন-তোমরা নিজেদের গৃহে তিনটি দিন উপভোগ করে
  3. এমনিভাবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।
  4. অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে।
  5. এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি
  6. আল্লাহ তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দূর্বলতার পর শক্তিদান করেন, অতঃপর শক্তির পর
  7. আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন,
  8. ঊর্ধ্ব জগৎ সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান ছিল না যখন ফেরেশতারা কথাবার্তা বলছিল।
  9. ইব্রাহীমের ধর্ম থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তু সে ব্যক্তি, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে। নিশ্চয়ই
  10. তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখবে অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি যখন তার

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ফাত্হ ডাউনলোড করুন:

সূরা Al Fath mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Fath শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত ফাত্হ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত ফাত্হ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত ফাত্হ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত ফাত্হ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত ফাত্হ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত ফাত্হ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত ফাত্হ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত ফাত্হ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত ফাত্হ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত ফাত্হ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত ফাত্হ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Sunday, December 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers