কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 30 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Baqarah ayat 30 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা বাকারাহ্ আয়াত 30 আরবি পাঠে(Baqarah).
  
   

﴿وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
[ البقرة: 30]

আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। [সূরা বাকারাহ্: 30]

Surah Al-Baqarah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 30


আর স্মরণ কর, -- তোমার প্রভু ফিরিশ্‌তাদের বললেন, “আমি অবশ্যই পৃথিবীতে খলিফা বসাতে যাচ্ছি।” তারা বলল -- “তুমি কি উহাতে এমন কাউকে বসাচ্ছ যে তার মধ্যে ফসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত করবে, অথচ আমরা তোমার স্তুতির গুণগান করছি ও তোমারই পবিত্রতার জয়গান গাইছি।” তিনি বললেন -- “আমি নিঃসন্দেহে তা জানি যা তোমরা জানো না।”


Tafsir Mokhtasar Bangla


৩০. আল্লাহ তা‘আলা এ সংবাদ দিলেন যে, তিনি একদা ফিরিশতাদেরকে বললেন: তিনি পৃথিবীতে এমন এক মানব জাতি সৃষ্টি করতে চান যারা একে অপরের প্রতিনিধি হবে। যেন তারা আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতেই এ পৃথিবী পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারে। তখন ফিরিশতাগণ তাঁদের প্রতিপালককে এ ক্ষেত্রে তাঁর সঠিক উদ্দেশ্যটি জানার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন যে, আদম সন্তানদেরকে একে অপরের প্রতিনিধি বানানোর পেছনে তাঁর কী হিকমত বা রহস্য রয়েছে; অথচ তারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। অবৈধভাবে রক্তপাত ঘটাবে। তাঁরা একথাও বললেন: আমরা তো আপনার অনুগত। আমরা সর্বদা আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার মহত্ত¡ ও পরিপূর্ণতার মর্যাদা দিচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা কোন ত্রæটি করছি না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন: নিশ্চয়ই আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। আমি জানি তাদেরকে সৃষ্টি করায় কী মহান রহস্য অন্তর্নিহিত আছে এবং তাদেরকে একে অপরের প্রতিনিধি বানানোর মধ্যে কত মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আর ( স্মরণ কর ) যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে ( ১ ) বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি ( ২ ) সৃষ্টি করছি।’ তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার সপ্রশংস মহিমা কীর্তন ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমি যা জানি তা তোমরা জান না।’ ( ৩ ) ( ১ ) مَلائِكة ( ফিরিশতা ) জ্যোতি থেকে সৃষ্ট আল্লাহর এক সৃষ্টি; যাঁদের বাসস্থান আসমান। যাঁরা আল্লাহর নির্দেশ পালনে এবং তাঁর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনায় ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা তাঁর কোন নির্দেশের অবাধ্যাচরণ করেন না। ( ২ ) خَلِيفَة ( খলীফা ) এর অর্থ এমন জাতি যারা একে অপরের পরে আসবে। পক্ষান্তরে 'মানুষ দুনিয়াতে আল্লাহর খলীফা ও প্রতিনিধি' এ কথা বলা ভুল। ( ৩ ) ফিরিশতাদের এমন বলা হিংসা ও অভিযোগমূলক ছিল না, বরং সত্য ও যৌক্তিকতা জানার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই সম্প্রদায় সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা কি? অথচ এদের মধ্যে এমন লোকও হবে যারা ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি এবং খুনাখুনি করবে? যদি উদ্দেশ্য এই হয় যে, তোমার ইবাদত হোক, তাহলে এই কাজের জন্য তো আমরা রয়েছি। আর আমাদের নিকট থেকে সে বিপদের আশঙ্কাও নেই, যা নতুন সৃষ্টি থেকে হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি জানি তাদের কল্যাণের দিক যেহেতু তোমাদের উল্লিখিত ফাসাদের দিক থেকেও বেশী তাই তাদেরকে সৃষ্টি করছি। আর এ কথা তোমরা জানো না। কেননা, এদের মধ্যে আম্বিয়া, শহীদ, সৎশীল এবং বড় ইবাদতকারী মানুষও হবেন। ( ইবনে কাসীর ) আদম-সন্তানের ব্যাপারে ফিরিশতাগণ কিভাবে জানলেন যে তারা ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টি করবে? এই অনুমান তাঁরা মানুষ সৃষ্টির পূর্বে যে ( জ্বিন ) সম্প্রদায় ছিল তাদের কার্যকলাপ দ্বারা অথবা অন্য কোন ভাবে করে থাকবেন। কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ তাআলাই বলে দিয়েছিলেন যে, তারা এ রকম এ রকম কাজও করবে। তাঁরা বলেন, বাক্যে কিছু শব্দ উহ্য আছে, আসল বাক্য হল, {إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيْفَةً يَفْعَلُ كَذَا وَكَذَا} " আমি পৃথিবীতে এমন প্রতিনিধি বানাবো যে এ রকম এ রকম করবে। " ( ফাতহুল ক্বাদীর )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের [] বললেন [] ‘নিশ্চয় আমি যমীনে খলীফা [] সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাওকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে [] ? আর আমরা আপনার হামদসহ তাসবীহ পাঠ করি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করি []। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা জানি, যা তোমরা জান না’ []। [] এখানে মূল আরবী শব্দ ‘মালায়িকা' হচ্ছে বহুবচন। এক বচন মালাক। ‘মালাক’ এর আসল অর্থ হচ্ছে ‘বাণী বাহক’। এরই শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, ‘যাকে পাঠানো হয়েছে’ বা ফেরেশতা। ফেরেশতা নিছক কিছু কায়াহীন, অস্তিত্বহীন শক্তির নাম নয়। বরং এরা সুস্পষ্ট কায়া ও স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অধিকারী। আল্লাহ্‌র বিধান ও নির্দেশাবলী তারা প্রবর্তন করে থাকেন। মূখ লোকেরা ভুলক্রমে তাদেরকে আল্লাহ্‌র কর্তৃত্ব ও কাজ-কর্মে অংশীদার মনে করে। আবার কেউ কেউ তাদেরকে মনে করে আল্লাহ্‌র আত্মীয়। এজন্য দেবতা বানিয়ে তাদের পূজা করে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে তৈরী করা হয়েছে, জিনদেরকে নির্ধুম আগুন শিখা হতে আর আদমকে তা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে যা সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। " [ মুসলিম: ২৯৯৬ ] অর্থাৎ আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা'আলা আদমকে এমন এক মুষ্ঠি মাটি থেকে তৈরী করেছেন যে মাটি তিনি সমস্ত যমীন থেকে নিয়েছেন। তাই আদম সন্তানরা যমীনের মতই বৈচিত্ররূপে এসেছে। তাদের মধ্যে লাল, সাদা, কালো এবং এর মাঝামাঝি ধরনের লোক দেখতে পাওয়া যায়। আর তাদের মধ্যে সহজ, পেরেশান, খারাপ ও ভাল সবরকমের সমাহার ঘটেছে। ” [ তিরমিযী: ২৯৫৫, আবুদাউদ: ৪৬৯৩, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৪০০, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/২৬১, ২৬২ ] [] অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ তা'আলা যখন আদম '‘আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার প্রাক্কালে এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য তার এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এতে ইংগিত ছিল যে, তারা যেন এ ব্যাপারে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন। কাজেই ফেরেশতাগণ অভিমত প্রকাশ করলেন যে, মানব জাতির মাঝে এমনও অনেক লোক হবে, যারা শুধু বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে। সুতরাং এদের উপর খেলাফত ও শৃংখলা বিধানের দায়িত্ব অর্পণের কারণ তাদের পুরোপুরি বোধগম্য নয়। এ দায়িত্ব পালনের জন্য ফেরেশতাগণই যোগ্যতম বলে মনে হয়। কেননা, পুণ্য ও সততা তাদের প্রকৃতিগত গুণ। তারা সদা অনুগত। এ জগতের শাসনকার্য পরিচালনা ও শৃংখলা বিধানের কাজও হয়তো তারাই সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন। তাদের এ ধারণা যে ভুল, তা আল্লাহ্‌ শাসকোচিত ভংগীতে বর্ণনা করে বলেন যে, বিশ্ব খেলাফতের প্রকৃতি ও আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তোমরা মোটেও ওয়াকিফহাল নও। তা শুধুমাত্র আমিই পূর্ণভাবে পরিজ্ঞাত। অতঃপর অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে ফেরেশতাদের উপর আদম '‘আলাইহিস সালাম-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে তার অনুপম মর্যাদার বর্ণনা দিয়ে দ্বিতীয় উত্তরটি দেয়া হয়েছে যে, বিশ্ব-খেলাফতের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের অন্তর্গত সৃষ্ট বস্তুসমূহের নাম, গুণাগুণ, বিস্তারিত অবস্থা ও যাবতীয় লক্ষণাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। [] আয়াতে বর্ণিত 'খলীফা’ শব্দের অর্থ নির্ণয়ে বিভিন্ন মত এসেছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বলেন, এর অর্থ স্থলাভিষিক্ত হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা'আলা ফেরেশতাদের সম্বোধন করে বলছেন যে, আমি তোমাদের ছাড়া এমন কিছু সৃষ্টি করতে যাচ্ছি যারা যুগ যুগ ধরে বংশানুক্রমে একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। ইবনে জারীর বলেন, আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে, আমি যমীনে আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চাই, যে আমার সৃষ্টিকুলের মধ্যে ইনসাফের সাথে আমার নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। আর এ প্রতিনিধি হচ্ছে আদম এবং যারা আল্লাহ্‌র আনুগত্য ও আল্লাহ্‌র বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে তার বিধান প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ্‌র স্থলাভিষিক্ত হবে। [] এখানে প্রশ্ন জাগে যে, ফেরেশতারা কিভাবে জানতে পারল যে, যমীনে বিপর্যয় হবে? এর উত্তর বিভিন্নভাবে এসেছে। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এ যমীনে পূর্বে জ্বিনরা বাস করত। তারা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল। ফলে আল্লাহ্‌ তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। [ দেখুন, অনুরূপ বর্ণনা মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/২৮৭ ] ফেরেশতারা তাদের উপর কিয়াস করে একথা বলেছিলেন। আবার কারও কারও মতে, তারা মাটি থেকে আদমের সৃষ্টি দেখে বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের মধ্যে বিপর্যয় হবে। কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ্‌ তা'আলা ফেরেশতাদেরকে পূর্বাহ্নে জানিয়েছিলেন যে, যমীনের বৈশিষ্ট্য এই যে, এখানে যদি কোন সৃষ্টি রাখা হয় তবে তারা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, রক্ত প্রবাহিত করবে। আর এজন্যই তারা বলেছিল, আপনি কি সেখানে এমন কিছু সৃষ্টি করবেন যারা সেখানে ফাসাদ বা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে? [ তাবারী ]। তাছাড়া বিভিন্ন সাহাবা থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে কিছু কথা উহ্য আছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা যখন বললেন যে, আমি যমীনে খলীফা সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। ফেরেশতারা বলল যে, হে আমাদের রব! সে কেমন খলীফা? আল্লাহ্‌ বললেন, তাদের সন্তান-সন্তুতি হবে এবং তারা ঝগড়া ফাসাদ ও হিংসা বিভেদে লিপ্ত হয়ে একে অপরকে হত্যা করবে। তখন তারা বলল, আপনি কি যমীনে এমন কিছু সৃষ্টি করবেন যারা স্বখানে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আল্লাহ্‌ বললেন, আমি তা জানি যা তোমরা জান না। [ ইবনে কাসীর ] ইবনে জুরাইজ বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা আদম সৃষ্টির ব্যাপারে সংঘটিত সব অবস্থা বর্ণনার পর তাদেরকে আলোচনা করার অনুমতি দিলে তারা এ বক্তব্য পেশ করেন। তারা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করেন, হে আমাদের রব! আপনি তাদের সৃষ্টিকর্তা হওয়া সত্বেও কি করে তারা আপনার নাফরমান সাজবে? এমন নাফরমান জাতিকে আপনি কেন সৃষ্টি করবেন? আল্লাহ্‌ তা'আলা তখন তাদেরকে এ জবাব দিয়ে আশ্বস্ত করলেন যে, তাদের ব্যাপারে তোমরা কিছু কথা জেনে থাকলেও অনেক কিছুই জান না। তাদের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশী জানি। তাদের মধ্য থেকে অনেক অনুগত বান্দাও সৃষ্টি হবে। [ ইবনে কাসীর ] ইমাম তাবারী বলেন, ফেরেশতাগণ এ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন অজানা বিষয় জানার জন্যে। তারা যেন বললেন, হে আমাদের রব! আমাদেরকে একটু অবহিত করুন। সুতরাং এর উদ্দেশ্য অস্বীকৃতি নয়; বরং উদ্দেশ্য অবগত হওয়া [ তাবারী ] [] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, সবচেয়ে উত্তম বাক্য কোনটি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঐ বাক্য যা আল্লাহ্‌ তার ফেরেশতাদের জন্য নির্বাচন করেছেন এবং তারা যা বলেছেন, সেটা হলো: ( سُبْحَانَ اللّٰهِ وبِحَمْدِه ) “ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী” [ মুসলিম: ২৭৩১ ] [] কাতাদাহ বলেন, এর অর্থ আল্লাহ্‌র জ্ঞানে ছিল যে, এই খলীফার মধ্য হতে নবীরাসূল, সৎকর্মশীল বান্দা ও জান্নাতী লোক সৃষ্টি হবে। [ ইবনে কাসীর ] সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “ যখন ফেরেশতাগণ বান্দার আমল নিয়ে আসমানে আল্লাহ্‌র দরবারে পৌঁছেন, তখন আল্লাহ্ তা'আলা -সবকিছু জানা সত্বেও- প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদেরকে কোন অবস্থায় রেখে এসেছ? তারা সবাই জবাবে বলেন, আমরা গিয়ে তাদেরকে সালাত আদায়রত অবস্থায় পেয়েছি এবং আসার সময় সালাত আদায়রত অবস্থায় রেখে এসেছি । [ বুখারী: ৫৫৫, মুসলিম: ৬৩২ ] কারণ তারা একদল ফজরে আসে এবং আসরে চলে যায় এবং আরেক দল আসরে আসে এবং ফজরে চলে যায়। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা'আলার দরবারে রাতের আমল দিনের আগেই এবং দিনের আমল রাতের আগেই পৌছে থাকে । ” [ মুসলিম: ১৭৯ ] আল্লাহ্ তা'আলা জবাব, ( اِنِّىْ اَعْلَمُ اِنِّىْٓ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ ) এর এটাই যথার্থ তাফসীর [ ইবনে কাসীর ] মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, আল্লাহ্‌ জানতেন যে, ইবলীস অবাধ্য হবে এবং তাকে শেষ পর্যন্ত অবাধ্যতার জন্যই তৈরী করা হয়েছে। [ তাবারী ] কোন কোন মুফাসসির বলেন, ফেরেশতাদের ( اَتَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ) এ বক্তব্যের জবাবে আল্লাহ্‌ তাআলা ( اِنِّىْٓ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ ) বলেছেন। কেননা পুরো বক্তব্যেই বনী আদমের স্থলে তাদের পৃথিবীতে বসবাসের ইচ্ছা ব্যক্ত হয়েছে। তাই আল্লাহ্ তা'আলা বললেন, তোমরা আকাশের উপযোগী এবং আকাশে অবস্থানই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। তোমরা সেটা বুঝতে পারছ না। [ ইবনে কাসীর ও তাফসীরে কাবীর ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


মহান আল্লাহর এই অনুগ্রহের কথা চিন্তা করলে বুঝা যাবে যে, জিন হযরত আদম ( আঃ )কে সৃষ্টি করার পূর্বে ফেরেশতাদের মধ্যে ওর আলোচনা করেন, যার বর্ণনা এ আয়াতের মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ যেন নবী ( সঃ ) কে সম্বোধন করে বলছেন যে, হে মুহাম্মদ ( সঃ )! তুমি মানব সৃষ্টির ঘটনাটি স্মরণ কর এবং তোমার উম্মতকে জানিয়ে দাও। আবূ উবাইদাহ ( রঃ ) বলেন যে, এখানে শব্দটি ( আরবি ) বা ( আরবি )অতিরিক্ত। কিন্তু ইবনে জারীর ( রঃ ) এবং অন্যান্য মুফাসসিরগণ এটা অগ্রাহ্য করেন। খিলাফতের মূল তত্ত্বঃ ( আরবি ) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে পরস্পর স্থলাভিষিক্ত হওয়া। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “ তিনি এমন যিনি তোমাদেরকে যমীনের খলীফা বানিয়েছেন ।” অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছেঃ যদি আমি চাইতাম তবে এ যমীনে ফেরেশতাগণকে তোমাদের খলীফা বানিয়ে দিতাম। আর এক জায়গায় আল্লাহ বলেছেনঃ তাদের পরে তাদের খলীফা অর্থাৎ স্থলাভিষিক্ত খারাপ লোকেরা হয়েছে। একটি অপ্রচলিত পঠনে ( আরবি ) খালায়ফাহ্ও পড়া হয়েছে। কোন কোন মুফাসৃসির বলেন যে, খলীফা শব্দ দ্বারা শুধুমাত্র হযরত আদম ( আঃ ) কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এটা বিবেচ্য বিষয়। তাফসীর-ই-রাযী প্রতি কিতাবের মধ্যে এই মতভেদ বর্ণনা করা হয়েছে। বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, ভাবার্থ এটা নয়। এর প্রমাণ তো ফেরেশতাদের নিম্নের উক্তিটিঃ “ তারা জমীনে ফাসাদ করবে ও রক্তারক্তি করবে । এটা স্পষ্ট কথা যে, তারা এটা হযরত আদম ( আঃ )-এর সন্তানদের সম্পর্কে বলেছিলেন-খাস করে তার সম্পর্কে নয়।ফেরেশতারা এটা কি করে জেনেছিলেন, সেটা অন্য কথা। হয়তো মানব প্রকৃতির চাহিদা লক্ষ্য করেই তারা এটা বলেছিলেন। কেননা, এটা বলে দেয়া হয়েছিল যে, তাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হবে। কিংবা হয়তো খলীফা শব্দের ভাবার্থ জেনেই তারা এটা বুঝেছিলেন যে, মানুষ হবে ন্যায় অন্যায়ের ফায়সালাকারী, অনাচারকে প্রতিহতকারী। এবং অবৈধ ও পাপের কাজে বাধাদানকারী। অথবা তারা জমীনের প্রথম সৃষ্টজীবকে দেখেছিলেন বলেই মানুষকেও তাদের মাপকাঠিতে ফেলেছিলেন। এটা মনে রাখা দরকার যে, ফেরেশতাদের এই আর্য প্রতিবাদমূলক ছিল না বা তারা যে এটা বানী আদমের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে বলেছিলেন তাও নয়। ফেরেশতাদের মর্যাদা সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা হচ্ছেঃ “ যে কথা বলার তাদের অনুমতি নেই, তাতে তারা মুখ খুলে না ।( এটাও স্পষ্ট কথা যে, ফেরেশতাদের স্বভাব হিংসা হতে পবিত্র ) বরং সঠিক ভাবার্থ এই যে তাদের এ প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র এর হিকমত জানবার ও এর রহস্য প্রকাশ করবার, যা তাদের বোধশক্তির উর্ধে ছিল। আল্লাহ তে জানতেনই যে, এ শ্রেষ্ঠ জীব বিবাদ ও ঝগড়াটে হবে। কাজেই ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ এ-রকম মাখলুক সৃষ্টি করার মধ্যে বিশ্বপ্রভুর কি নিপূর্ণতা রয়েছে । যদি ইবাদতেরই উদ্দেশ্যে হয়, তবে ইবাদত তো আমরাই করছি। আমাদের মুখেই তো সদা তার তাসবীহ ও প্রশংসাগীত উচ্চারিত হচ্ছে এবং আমরা ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদি হতেও পবিত্র। তথাপি এরূপ বিবাদী মাখলুক সৃষ্টি করার মধ্যে কি যৌক্তিকতা রয়েছে?" মহান আল্লাহ তাঁদের এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, তারা দুনিয়ায় ঝগড়া-বিবাদ, কাটাকাটি, মারামারি ইত্যাদি করবে এই জ্ঞান তার আছে। তথাপি তাদেরকে সৃষ্টি করার মধ্যে যে নিপূণতা ও দূরদর্শিতা রয়েছে তা একমাত্র তিনিই জানেন। তিনি জানেন যে, তাদের মধ্যে নবী রাসূল; সত্যবাদী, শহীদ, সত্যের উপাসক, ওয়ালী, সৎ, আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী, আলেম, খোদাভীরু, প্রভৃতি মহা-মানবদের জন্ম লাভ ঘটবে, যারা তাঁর নির্দেশাবলী যথারীতি মান্য করবে এবং তারা তাঁর বার্তাবাহকদের ডাকে সাড়া দেবে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে যে, দিনের ফেরেশতাগণ সুবহে সাদেকের সময় আসেন এবং আসরের সময় চলে যান। সে সময় রাতের ফেরেশতাগণ আগমন করেন, তারা আবার সকালে চলে যান। আগমনকারীগণ যখন আগমন করেন তখন অন্যেরা চলে যান। কাজেই তারা ফজর ও আসরে জনগণকে পেয়ে থাকেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে তার প্রশ্নের উত্তরে দুই দলই একথা বলেনঃ “ আমরা যাবার সময় আপনার বান্দাদেরকে নামাযে পেয়ে ছিলাম এবং আসার সময়ও তাদেরকে নামাযে ছেড়ে এসেছি ।”এটাই হলো মানব সৃষ্টির যৌক্তিকতা যার সম্বন্ধে মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেছিলেনঃ “ নিশ্চয় আমি জানি যার তোমরা জাননা ।” ঐ ফেরেস্তাগণকে তা দেখবার জন্যও পাঠান হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ দিনের আমলগুলো রাত্রির পূর্বে এবং রাত্রির আমলগুলো দিবসের পূর্বে আল্লাহর নিকট উঠে যায় ।” মোটকথা মানব সৃষ্টির মধ্যে যে ব্যাপক দুরদর্শিতা নিহিত ছিল সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন যে, এটা তাদের আমরাই আপনার তাসবীহ পাঠ করি’ একথার উত্তরে বলা হয়েছে যে, আল্লাহই সব জানেন অর্থাৎ ফেরেশতারা নিজেদের দলের সবকে সমান মনে করে থাকে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তা নয়। কেননা, তাদের মধ্যে ইবলিসও একজন। তৃতীয় মত এই যে, ফেরেশতাদের এটা বলার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের পরিবর্তে তাদেরকেই যেন ভু-পৃষ্ঠে বাস করতে দেয়া হয়। এর উত্তরেই আল্লাহ পাক বলেন যে, আকাশই তাদের বসবাসের উপযুক্ত স্থান, এটা একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই জানেন।হাসান ( রঃ ), কাতাদাহ ( রঃ ) প্রভৃতি মনীষীগণ বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাগণকে সংবাদ দিয়েছিলেন। সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, পরামর্শ নিয়েছিলেন। কিন্তু এর অর্থও সংবাদ দেয়া হতে পারে, তা না হলে একথাটি অর্থহীন হয়ে পড়ে। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে আছে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন মক্কা হতে যমীন ছড়ানো ও বিছানো হয় তখন সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করেন ফেরেশতাগণ । তখন আল্লাহ বলেনঃ “ আমি যমীনে খলীফা বানাবো অর্থাৎ মক্কায় ।” এর হাদীসটি মুরসাল; আবার এতে দুর্বলতা এবং এতে ‘মুদরজও রয়েছে, অর্থাৎ যমীনের ভাবার্থ মক্কা' নেয়া এটা বর্ণনাকারীর নিজস্ব ধারণা। বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, যমীন' থেকে ভাবার্থ হচ্ছে সাধারণ। এর দ্বারা সমস্ত যমীনকেই বুঝানো হয়েছে। ফেরেশতাগণ এটা শুনে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ঐ খলীফা দিয়ে কি কাজ হবে? উত্তরে বলা হয়েছিল যে, তার সন্তানদের মধ্যে এমন লোকও হবে যারা ভূ-পৃষ্ঠে ঝগড়া বিবাদ, কাটাকাটি মারামারি করবে এবং একে অপরের প্রতি হিংসা করবে। তাদের মধ্যে ওরা সুবিচার করবে এবং আমার আহকাম তাদের মধ্যে চালু করবে।এটা হতে ভাবার্থ হচ্ছে হযরত আদম ( আঃ ) এবং আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে ও সৃষ্টজীবের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে তাঁর স্থলবর্তীগণ, কিন্তু বিবাদীরা ও খুনাখুনিকারীরা খলীফা নয়। এখানে খিলাফতের ভাবার্থ হচ্ছে এক যুগীয় লোকের পরে অন্য যুগীয় লোকের আগমন ( আরবি ) শব্দটি ( আরবি ) শব্দের ওজনে এসেছে। যখন একের পরে অন্যজন তার স্থলবর্তী হয় তখন আরবেরা বলে থাকেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি অমুক ব্যক্তির খলীফা হয়েছে। যেমন কুরআন মাজীদে রয়েছেঃ “ আমি তাদের পরে তোমাদেরকে খলীফা করে তোমরা কিরূপ আমল কর তা দেখতে চাই ।”এজন্যেই বড় সম্রাটকে খলীফা বলা হয়। কেননা তিনি পূর্ববর্তী বাদশাহুদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকেন। মুহাম্মদ বিন ইসহাক ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো যমীনে অবস্থানকারী, একে আবাদকারী। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, পূর্বে ভূ-পৃষ্ঠে জ্বিনেরা বাস করতো। তারা কাটাকাটি, মারামারি ও লুটতরাজ করতো। অতঃপর ইবলিসকে পাঠান হলে সে ও তার সঙ্গীরা তাদেরকে মেরে ধরে দ্বীপে ও পাহাড়ে তাড়িয়ে দেয়। অতঃপর হযরত আদম ( আঃ ) কে সৃষ্টি করে যমীনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তিনি যমীনে বসতি স্থাপন করেন। কাজেই তিনি যেন তাঁর পূর্ববর্তীদের খলীফা বা স্থলবর্তী হলেন। সুতরাং মহান আল্লাহ যখন ফেরেশতাগণকে বলেনঃ “ আমি যমীনে বসবাসকারী মাখলক সৃষ্টি করতে চাই ।” এর উত্তরে ফেরেশতাগণ যা বলেছিলেন তার দ্বারা তারা আদম ( আঃ )-এর সন্তানাদিকেই বুঝাতে চেয়েছিলেন।সে সময় শুধু যমীন ছিল, কোন বসতি ছিল না। কোন কোন সাহাবী ( রাঃ ) হতে এটাই বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাগণকে বনী আদমের কার্যাবলী সম্বন্ধে পূর্বেই অবহিত করেছিলেন বলেই তারা এ প্রশ্ন করেছিলেন। আবার এও বর্ণিত আছে যে, জ্বিনদের ফাসাদের উপর অনুমান করেই তারা বানী আদমের ফাসাদের কথা বলেছিলেন।হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম ( আঃ )-এর দু'হাজার বছর পূর্ব হতে জ্বিনেরা যমীনে বসবাস করতো। হযরত আবুল আলিয়া ( রঃ ) বলেন যে, ফেরেশতাদেরকে বুধবারে, জ্বিনদেরকে বৃস্পতিবারে এবং হযরত আদম ( আঃ ) কে শুক্রবারে সৃষ্টি করা হয়েছে। হযরত হাসান ( রঃ ) হযরত কাতাদাহ ( রঃ ) বলেন যে, ফেরেশতাদেরকে বানী আদমের কার্যাবলী সম্বন্ধে পূর্বেই জানান হয়েছিল বলে তারা প্রশ্ন করেছিলেন। আবু জাফর মুহাম্মদ বিন আলী ( রঃ ) বলেন যে, সাজল’ নামক একজন ফেরেশতা আছেন। হারুত ও মারূত ছিলেন তাঁর সঙ্গী। দৈনিক তিনবার লাওহে মাহফুজের প্রতি দৃষ্টিপাত করার অনুমতি সাজলকে দেয়া হয়েছিল। একদা তিনি হযরত আদম ( আঃ )-এর সৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়ক কার্যাবলী অবলোকন করতঃ তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে গোপনে বলে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করলে এঁরা দুজন এ প্রশ্ন করেন। কিন্তু বর্ণনাটি গরীব এবং গ্রহণের অযোগ্য। তারা দু’জন প্রশ্ন করেছিলেন, একথা কুরআন মাজীদের বাকরীতির উল্টো।এও বর্ণিত আছে যে, এ প্রশ্নকারী ফেরেশতারা ছিলেন দশ হাজার। তাঁদের সবাইকেই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এটাও ইসরাঈলী বর্ণনা এবং খুবই গরীব বা দুর্বল। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, তাদেরকে এ প্রশ্ন করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল এবং এও জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, এই মাখলূক অবাধ্য হবে। তখন তারা বিস্মিতভাবে মানুষ সৃষ্টির যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানবার জন্যে প্রশ্ন করেছিলেন মাত্র। তারা কোন পরামর্শও দেননি অস্বীকারও করেননি বা কোন প্রতিবাদও করেননি। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যখন হযরত আদম ( আঃ ) এর সৃষ্টিকার্য আরম্ভ হয় তখন ফেরেশতাগণ বলেছিলেনঃ “ আমাদের অপেক্ষা বেশী মর্যাদা সম্পন্ন ও বিদ্বান মাখলুক সৃষ্ট হওয়া অসম্ভব ।" এর কারণে তাদের উপর আল্লাহর পরীক্ষা এসে যায় এবং কোন সৃষ্টজীবই পরীক্ষা হতে নিস্তার পায়নি। যমীন ও আসমানের উপরেও পরীক্ষা এসেছিল এবং ওরা অবনত মস্তকে ও সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করেছিল।ফেরেশতাদের তাসবীহ ও তাকদীসের অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা, নামায পড়া, বেয়াদবী হতে বেঁচে থাকা, তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা এবং তার অবাধ্য না হওয়া। ( আরবি )-এর অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা। পবিত্র ভূমিকে ( আরবি ) বলা হয়। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জিজ্ঞাসিত হচ্ছেনঃ “ কোন কালামটি সর্বোত্তম?” উত্তরে তিনি বলছেনঃ “ওটা হচ্ছে ঐ কালামটি যা মহান আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের জন্যে পছন্দ করেছেন । ঐ কালামটি হচ্ছেঃ ( আরবি ) ( সহীহ মুসলিম )।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মিরাজের রাত্রে আকাশে ফেরেশতাদের এই তাসবীহ শুনেছিলেনঃ ( আরবি )ইমাম কুরতবী ( রঃ ) প্রভৃতি মনীষীগণ এই আয়াত হতে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, খলীফা নির্ধারণ করা ওয়াজিব। তিনি মতবিরোধের মীমাংসা করবেন, ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দেবেন, অত্যচারী হতে অত্যাচারিত ব্যক্তির প্রতিশোধ নেবেন, ‘হুদুদ কায়েম করবেন,,অন্যায় ও পাপের কাজ হতে জনগণকে বিরত রাখবেন ইত্যাদি বড় বড় কাজগুলো যার সমাধান ইমাম ছাড়া হতে পারে না। এসব কাজ ওয়াজিব এবং এগুলো ইমাম ছাড়া পুরো হতে পারে, আর যা ছাড়া কোন ওয়াজিব পুরো হয় না ওটাও ওয়াজিব। সুতরাং খলীফা নির্ধারণ করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো। ইমামতি হয়তো বা কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট শব্দের দ্বারা লাভ করা যাবে। যেমন আহলে সুন্নাতের একটি জামা'আতের হযরত আবূ বকর সিদ্দীক ( রাঃ ) সম্পর্কে ধারণা এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) খিলাফতের জন্যে তার নাম নিয়েছিলেন। কিংবা কুরআন ও হাদীসে ওঁর দিকে ইঙ্গিত আছে। যেমন আহলে সুন্নাতেরই অপর একটি দলের প্রথম খলীফার ব্যাপারে ধারণা এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর ইঙ্গিতে খিলাফতের জন্যে তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন। অথবা হয়তো একজন খলীফা তার পরবর্তী খলীফার নাম বলে যাবেন। যেমন হযরত আবু বকর ( রাঃ ) হযরত উমার ( রাঃ ) কে তাঁর স্থলবর্তী করে গিয়েছিলেন। কিংবা তিনি হয়তো সৎলোকদের একটি কমিটি গঠন করে খলীফা নির্বাচনের দায়িত্বভার তাঁদের উপর অর্পণ করে যাবেন যেমন হযরত উমার ( রাঃ ) এরূপ করেছিলেন। অথবা আহলে হিলওয়াল আ ( অর্থাৎ প্রভাবশালী সেনাপতিগণ, আলেমগণ, সৎলোকগণ ইত্যাদি ) একত্রিতভাবে তাঁর হাতে রাআত করবেন, তাদের কেউ কেউ বায়আত করে নিলে জমহূরের মতে তাঁকে মেনে নেয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে। মক্কা ও মদীনার ইমাম তা হতে ইজমা নকল করেছেন। অথবা কেউ যদি জনগণকে জোরপূর্বক তাঁর কর্তৃত্বাধীন করে নেয় তবে হাঙ্গামা ও গোলযোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে তারও আনুগত্য স্বীকার করা ওয়াজিব।ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) পরিষ্কার ভাষায় এর ফায়সালা করেছেন। এ বায়আত গ্রহণের সময় সাক্ষীদের উপস্থিতি ওয়াজিব কি না এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এটা শর্ত। আবার কারও মতে শর্ত বটে, কিন্তু দু’জন সাক্ষীই যথেষ্ট। জবাঈ ( রঃ ) বলেন যে, বায়আত গ্রহণকারী ও যার হাতে বায়আত গ্রহণ করা হচ্ছে এ দু’জন ছাড়া চারজন সাক্ষীর প্রয়োজন। যেমন হযরত উমার ( রাঃ ) পরামর্শ সভার জন্যে ছয়জন লোক নির্ধারণ করেছিলেন। অতঃপর তারা হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ ( রাঃ ) কে অধিকার দিয়েছিলেন এবং তিনি বাকী চারজনের উপস্থিতিতে হযরত উসমান ( রাঃ )-এর হাতে বায়আত করেছিলেন। কিন্তু এটা হতে দলীল গ্রহণের ব্যাপারে সমালোচনা আছে।ইমাম হওয়ার জন্যে পুরুষ লোক হওয়া, আযাদ হওয়া, বালিগ হওয়া, বিবেক সম্পন্ন হওয়া, মুসলমান হওয়া, সুবিচারক হওয়া, ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত হওয়া, চক্ষু বিশিষ্ট হওয়া, সুস্থ ও সঠিক অঙ্গ বিশিষ্ট হওয়া, যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী হওয়া, সাধারণ অভিমত সম্পর্কে অভিজ্ঞ হওয়া এবং কুরায়েশী হওয়া ওয়াজিব।এটাই সঠিক মত। হাঁ, তবে হাশিমী হওয়া ও দোষমুক্ত হওয়া শর্ত নয়। গালী রাফেযী এ শর্ত দু’টি আরোপ করে থাকে। ইমাম যদি ফাসিক হয়ে যায় তবে তাকে পদচ্যুত করা উচিত কিনা এ বিষয়ে মতভেদ আছে। সঠিক মত এই যে, তাকে পদচ্যুত করা হবে না। কেননা হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে পর্যন্ত না তোমরা এমন ভোলাখুলি কুফরী লক্ষ্য কর যার কুফরী হওয়ার প্রকাশ্য দলীল আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট বিদ্যমান থাকে ।” অনুরূপভাবে ইমাম নিজেই পদত্যাগ করতে পারে কিনা সে বিষয়েও মতবিরোধ রয়েছে। হযরত হাসান বিন আলী ( রাঃ ) নিজে নিজেই পদত্যাগ করেছিলেন এবং ইমামের দায়িত্ব হযরত মুআবিয়াকে ( রাঃ ) অর্পণ করেছিলেন। কিন্তু এটা ওজরের কারণে ছিল এবং যার জন্যে তার প্রশংসা করা হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠে একাধিক ইমাম একই সময়ে হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন তোমাদের মধ্যে কোন কাজ সম্মিলিতভাবে হতে যাচ্ছে এমন সময় কেউ যদি বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে তবে তাকে হত্যা করে দাও, সে যে কেউই হোক না । কেন।" জমহুরের এটাই মাযহাব এবং বহু গুরুজনও এর উপর ইজমা নকল করেছেন। যাদের মধ্যে ইমামুল হারামাইনও ( রঃ ) একজন।কারামিয়াহদের ( শীআ'হ ) কথা এই যে, একই সময়ে দুই বা ততোধিক ইমাম হতে পারে। যেমন হযরত আলী ( রাঃ ) হযরত মুআবিয়া ( রাঃ ) দু’জনই আনুগত্যের যোগ্য ছিলেন। এই দলটি বলে যে, যখন একই সময়ে দুই অথবা ততোধিক নবী হওয়া জায়েয, তখন ইমামদের হওয়া জায়েয হবে না কেন? নবুওয়াতের মর্যাদা তো নিঃসন্দেহে ইমামতের মর্যাদা হতে বহু উর্ধে। কিন্তু উপরের লেখা হাদীসে জানা গেল যে, অন্যকে হত্যা করে দিতে হবে। সুতরাং সঠিক মাযহাব ওটাই যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ইমামুল হারামাইন তার শিক্ষক আবু ইসহাক হতে বর্ণনা করেছেন যে, একই সময়ে দুই বা ততোধিক ইমাম নিযুক্ত করা তখনই জায়েয হয়, যখন মুসলমানদের সাম্রাজ্য খুবই প্রশস্ত হয় এবং চতুর্দিকে বিস্তার লাভ করে ও দু’জন ইমামের মধ্যে কয়েকটি দেশের ব্যবধান থাকে। ইমামুল হারামাইন এতে সন্দেহ পোষণ করেন। খুলাফায়ে বানী আব্বাস ইরাকে, খুলাফায়ে বানী ফাতিমা মিসরে এবং উমাইয়া বংশধরগণ পশ্চিমে ইমামতের কার্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার ধারণায় তো অবস্থা এইরূপই ছিল। ইনশাআল্লাহ এর বিস্তারিত বিবরণ কিতাবুল আহকামের কোন উপযুক্ত স্থানে দেয়া হবে।

সূরা বাকারাহ্ আয়াত 30 সূরা

وإذ قال ربك للملائكة إني جاعل في الأرض خليفة قالوا أتجعل فيها من يفسد فيها ويسفك الدماء ونحن نسبح بحمدك ونقدس لك قال إني أعلم ما لا تعلمون

سورة: البقرة - آية: ( 30 )  - جزء: ( 1 )  -  صفحة: ( 6 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. বলুন, আমাদের পালনকর্তা আমাদেরকে সমবেত করবেন, অতঃপর তিনি আমাদের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করবেন। তিনি ফয়সালাকারী,
  2. আমি প্রত্যেকের জন্যেই দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি এবং প্রত্যেককেই সম্পুর্ণরূপে ধ্বংস করেছি।
  3. এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয় ওদিকেও নয়। বস্তুতঃ যাকে আল্লাহ গোমরাহ করে দেন, তুমি
  4. আমি তাদের পেছনে সঙ্গী লাগিয়ে দিয়েছিলাম, অতঃপর সঙ্গীরা তাদের অগ্র-পশ্চাতের আমল তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে
  5. বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে।
  6. এটা অমূলক, বরং তোমরা এতীমকে সম্মান কর না।
  7. তাঁর অন্যতম নিদর্শন এই যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত আছে। অতঃপর যখন তিনি
  8. সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে।
  9. এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
  10. আমি অনুগ্রহ করেছিলাম মূসা ও হারুনের প্রতি।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:

সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Friday, May 17, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب