কোরান সূরা লুকমান আয়াত 34 তাফসীর
﴿إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ﴾
[ لقمان: 34]
নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। [সূরা লুকমান: 34]
Surah Luqman in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Luqman ayat 34
নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ -- তাঁর কাছেই রয়েছে ঘড়িঘন্টার জ্ঞান, আর তিনি বর্ষণ করেন বৃষ্টি, আর তিনি জানেন কি আছে জরায়ুর ভেতরে। আর কোনো সত্ত্বা জানে না কী সে অর্জন করবে আগামীকাল। আর কোনো সত্ত্বা জানে না কোন দেশে সে মারা যাবে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা, পূর্ণ-ওয়াকিফহাল।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩৪. ক্বিায়াতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটেই। তাই তিনিই জানেন কখন তা সংঘটিত হবে। তিনি যখন ইচ্ছা করেন তখনই বৃষ্টি অবতীর্ণ হয়। তিনিই জানেন গর্ভে কী রয়েছে; ছেলে না মেয়ে, সুখী না দুঃখী। আগামি কাল কে কী কামাই করবে; ভাল না মন্দ তা কোন মানুষই জানেনা এবং সে এও জানে না যে, সে কোথায় মারা যাবে। বরং কেবল আল্লাহই এসবের খবর রাখেন। তাঁর নিকট এর কিছুই গোপন থাকে না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই আছে কিয়ামত ( সংঘটিত হওয়ার ) জ্ঞান, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন জরায়ুতে যা আছে। কেউ জানে না আগামী কাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ দেশে তার মৃত্যু ঘটবে।[১] নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত। [১] হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, গায়েবের চাবিকাঠি হল পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ অবগত নন। ( বুখারীঃ সূরা লুকমানের তফসীর, ইস্তিস্কা অধ্যায় ) ( ক ) কিয়ামত কখন হবে? কিয়ামতের নিকটবর্তী কিছু নিদর্শন নবী ( সাঃ ) বলেছেন; কিন্তু কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঠিক সময় নিশ্চিতরূপে একমাত্র আল্লাহই জানেন, তা কোন ফিরিশতা জানেন না এবং কোন প্রেরিত নবীও না। ( খ ) বৃষ্টি কখন কোথায় হবে? মেঘের চিহ্ন ও অনুকূল হাওয়া দেখে আন্দাজ লাগানো হয় বা লাগানো যায় যে, অমুক এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এ কথা সকলে জানে যে, এই আন্দাজ কখনো সঠিক হয় আবার কখনো বেঠিক। এমনকি আবহাওয়া দফতরের প্রচারিত খবর অনেক সময় সঠিক হয় না। যাতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, বৃষ্টি কোথায় কখন হবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। ( গ ) মাতৃগর্ভে কি আছে? বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে সম্ভবতঃ অসম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া যেতে পারে যে, তা ছেলে না মেয়ে। কিন্তু মাতৃগর্ভের এই বাচ্চা সৎ না অসৎ, সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান, পূর্ণ না অপূর্ণ, বিকলাঙ্গ না অবিকলাঙ্গ, সুশ্রী না কুশ্রী হবে ইত্যাদি বিষয়ক জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। ( ঘ ) মানুষ আগামী কাল কি করবে? তা দ্বীনী বিষয় হোক বা পার্থিব বিষয়, কেউ আগামী কালের বিষয়ে জ্ঞান রাখে না যে, আগামী কাল পর্যন্ত তার জীবন থাকবে কি না? আর যদি থাকে, তাহলে সে তাতে কি আমল করবে? ( ঙ ) মৃত্যু কোথায় হবে? ঘরে না বাইরে, স্বদেশে না বিদেশে, যুবক অবস্থায় না বৃদ্ধাবস্থায়, নিজের আশা ও চাহিদা পূর্ণ হওয়ার পর নাকি তার পূর্বে? এ সব কেউ জানে না।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
নিশ্চয় আল্লাহ্ [ ১ ], তাঁর কাছেই রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা মাতৃগর্ভে আছে। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। [ ১ ] এ আয়াতে পাঁচটি বস্তুর জ্ঞান সম্পূর্ণভাবে আল্লাহরই জন্য নির্দিষ্ট থাকা এবং অপর কোন সৃষ্টির সে জ্ঞান না থাকার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এর মাধ্যমেই সূরায়ে লুকমান শেষ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, কেয়ামত সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে ( অর্থাৎ, কোন বছর কোন তারিখে সংঘটিত হবে ) এবং তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন ও মাতৃগর্ভে কি আছে তা তিনিই জানেন ( অর্থাৎ, কন্যা না পুত্র, কতদিন বাঁচবে, কি রিফিক পাবে, কোন স্বভাবের অধিকারী হবে ইত্যাদি ) এবং আগামীকাল কি অর্জন করবে তা কোন ব্যক্তি জানে না। ( অর্থাৎ, ভাল-মন্দ কি লাভ করবে ) অথবা কোন স্থানে মারা যাবে, তাও কেউ জানে না। প্রথম তিন বস্তু সম্পর্কিত জ্ঞান যদিও একথা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো এগুলোর জ্ঞান নেই। কিন্তু বাক্যবিন্যাস ও প্রকাশভঙ্গি থেকে একথাই বোঝা যায় যে, এসব বস্তুর জ্ঞান কেবল আল্লাহর অসীম জ্ঞান ভাণ্ডারেই সীমিত রয়েছে। অবশ্য অবশিষ্ট বস্তুদ্বয় সম্পর্কে একথা স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো এগুলোর তথ্য ও তত্ত্ব জানা নেই। [ দেখুন, তাবারী, কুরতুবী ] এ পাঁচ বস্তুকে সূরা আল-আন’আমের ৫৯ নং আয়াতে ( অদৃশ্য জগতের চাবিসমূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে )। তাছাড়া কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে সে ব্যাপারে হাদীসে জিবরীল নামে খ্যাত হাদীসেও অনুরূপ বলা হয়েছে যে, এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে নেই। [ দেখুন, বুখারী:৪৭৭৭, মুসলিম:৯, ১০ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
এগুলো হচ্ছে গায়েবের চাবি কাঠি যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। আল্লাহ যাকে জানিয়ে দেন সে ছাড়া আর কেউই জানতে পারে না। কিয়ামত সংঘটিত হবার সঠিক সময় না কোন নবী-রাসূলের জানা আছে, না কোন নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতার জানা আছে। অনুরূপভাবে বষ্টি কখন, কোথায়, কতটুকু বর্ষিত হবে তার জ্ঞান আল্লাহ্রই আছে। তবে এ কাজের ভারপ্রাপ্ত ফেরেশতাকে যখন নির্দেশ দেয়া হবে তখন তিনি জানতে পারবেন। এভাবে গর্ভবতী নারীর জরায়ুতে পুত্র সন্তান আছে কি কন্যা সন্তান আছে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। অবশ্যই এ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ফেরেশতাকে যখন হুকুম করা হয় তখন তিনি তা জানতে পারেন যে, সন্তান নর হবে কি নারী হবে, পুণ্যবান হবে কি পাপী হবে। অনুরূপভাবে কেউই জানে না যে, সে আগামীকাল কি অর্জন করবে এবং এটাও কেউই জানে না যে, কোথায় তার মৃত্যু ঘটবে। অন্য আয়াতে আছে ( আারবি )অর্থাৎ “ গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর নিকটেই আছে, তিনি ছাড়া কেউ তা জানে ।” ( ৬:৫৯ ) হাদীসে রয়েছে যে, গায়েবের চাবি হচ্ছে এই পাঁচটি জিনিস যেগুলোর বর্ণনা( আারবি ) এই আয়াতে রয়েছে। মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু বুরাইদাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলতে শুনেছেনঃ “ পাঁচটি জিনিস রয়েছে যেগুলোর খবর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না ।” অতঃপর তিনি। ( আারবি ) এ আয়াতটিই পাঠ করেন।সহীহ বুখারীর শব্দ এও রয়েছে যে, এ পাঁচটি জিনিস হলো গায়েবের চাবি, যেগুলো আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না।”মুসনাদে আহমাদে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর উক্তি রয়েছেঃ “ পাঁচটি জিনিস ছাড়া আমাকে সবকিছুরই চাবি দেয়া হয়েছে ।” অতঃপর তিনি এ আয়াতটিই পাঠ করেন।হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জনগণের মজলিসে বসেছিলেন, এমন সময় তাঁর নিকট একটি লোক এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেঃ “ ঈমান কি”? রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জবাবে বলেনঃ “ঈমান এই যে, তুমি বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসূলদের উপর, আখিরাতের উপর এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর ।” লোকটি জিজ্ঞেস করলো: “ ইসলাম কি?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “ইসলাম এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে ও তার সাথে কাউকেও শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে এবং রমযানের রোযা রাখবে ।” লোকটি বললো: “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! ইহসান কি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “ইহসান এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখছো, অথবা যদিও তুমি তাকে দেখছো না কিন্তু তিনি তোমাকে দেখছেন ( এরূপ খেয়াল রেখে তাঁর ইবাদত করবে ) ।” লোকটি বললো: “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে?” তিনি উত্তর দিলেন, “এটা জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশী জানে না । তবে আমি তোমাকে এর কতকগুলো নিদর্শনের কথা বলছি। যখন দাসী তার মনিবের জন্ম দেবে এবং যখন উলঙ্গ পা ও উলঙ্গ দেহ বিশিষ্ট লোকেরা নেতৃত্ব লাভ করবে। কিয়ামতের জ্ঞান ঐ পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না।” অতঃপর তিনি ( আারবি ) -এ আয়াতটি পাঠ করলেন। এরপর লোকটি চলে গেল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “ যাও, তোমরা লোকটিকে ফিরিয়ে আন ।” জনগণ দৌড়িয়ে গেল। কিন্তু লোকটিকে কোথাও দেখতে পেলো না। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ ইনি ছিলেন হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) । মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্যে তিনি আগমন করেছিলেন। ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। আমরা এ হাদীসের ভাবার্থ সহীহ বুখারীর শরাহতে ভালভাবে বর্ণনা করেছি )মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তার হাতের তালু রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হাঁটুর উপর রেখে প্রশ্নগুলো করেছিলেন যে, ইসলাম কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছিলেনঃ “ ইসলাম এই যে, তুমি তোমার চেহারা মহামহিমান্বিত আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে এবং সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিবে ।যে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তখন বলেনঃ “ এরূপ করলে কি আমি মুসলমান হয়ে যাবো?” জবাবে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “হ্যা, এরূপ করলে তুমি মুসলমান হয়ে যাবে ।” হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তখন বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাকে বলে দিন, ঈমান কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “ঈমান এই যে, তুমি বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহর উপর, পরকালের উপর, ফেরেশতাদের উপর, কিতাবের উপর, নবীদের উপর, মৃত্যুর উপর, মৃত্যুর পর পুনজীবনের উপর, জান্নাতের উপর, জাহান্নামের উপর, হিসাবের এবং মীযানের উপর । আরো বিশ্বাস রাখবে তকদীরের ভাল-মন্দের উপর।” হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) বললেনঃ “ এরূপ করলে কি আমি মুমিন হবো?” তিনি জবাব দেনঃ “হ্য, এরূপ করলে তুমি মুমিন হবে ।” অতঃপর হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ সুবহানাল্লাহ! এটা ঐ পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই ।” অতঃপর তিনি ( আরবি )-এই আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেন। নিদর্শনগুলোর মধ্যে এও রয়েছে যে, মানুষ লম্বা-চওড়া অট্টালিকা নির্মাণ করতে শুরু করবে।মুসনাদে আহমাদে একটি সহীহ সনদের সাথে বর্ণিত আছে যে, বানু আমির গোত্রের একটি লোক নবী ( সঃ )-এর নিকট এসে বললো: “ আমি আসবো কি?” নবী ( সঃ ) তখন লোকটির কাছে তার খাদেমকে পাঠালেন, যেন সে তাকে আদব বা দ্রতা শিক্ষা দেয় । কেননা, সে অনুমতি চাইতে জানে না। তাকে প্রথমে সালাম দিতে হবে এবং পরে বলতে হবেঃ “ আমি আসতে পারি কি?” লোকটি শুনলো এবং সালাম করে আগমনের জন্যে অনুমতি প্রার্থনা করলো । অনুমতি পেয়ে সে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হয় এবং বলেঃ “ আপনি আমাদের জন্যে কি নিয়ে এসেছেন । তিনি উত্তরে বলেনঃ “ আমি তোমাদের জন্যে কল্যাণই নিয়ে এসেছি । শুনো, তোমরা এক আল্লাহরই ইবাদত করবে। লাত ও উয্যাকে ছেড়ে দেবে। দিন-রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায কায়েম করবে, বছরের মধ্যে এক মাস রোযা রাখবে, ধনীদের নিকট হতে যাকাত আদায় করবে এবং দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করবে।” লোকটি জিজ্ঞেস করলো: “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! জ্ঞানের মধ্যে এমন কিছু বাকী আছে কি যা আপনি জানেন না ।?” তিনি জবাবে বললেনঃ “ যা, এমন জ্ঞানও রয়েছে যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না ।” অতঃপর তিনি( আরবি )-এই আয়াতটিই পাঠ করেন। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, একজন গ্রামবাসী ( বেদুইন ) নবী ( সঃ )-এর নিকট এসে বলেঃ “ আমার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে, বলুন তো তার কি সন্তান হবে?আমাদের শহরে দুর্ভিক্ষ পড়েছে, বলুন তো বৃষ্টি কখন হবে? আমি কখন জন্মগ্রহণ করেছি তা তো আমি জানি, এখন বলুন তো কখন আমি মৃত্যুমুখে পতিত হবো?” তার এসব প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন যে, তিনি এগুলোর খবর রাখেন না । মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এগুলোই হলো গায়েবের চাবি যেগুলো সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, গায়েবের চাবিকাঠি আল্লাহ তা'আলার নিকটই রয়েছে। হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেনঃ “ যে তোমাদেরকে বলে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আগামীকালকের কথা জানতেন, তুমি বুঝবে যে, সে মিথ্যাবাদী । আল্লাহ তা'আলা তো বলেন যে, কাল কি করবে তা কেউ জানে না।” কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এমন কতকগুলো জিনিস আছে যেগুলোর জ্ঞান আল্লাহ তা'আলা কাউকেও দেননি। ওগুলোর জ্ঞান নবীদেরও নেই, ফেরেশতাদেরও নেই। কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই আছে। কারো এ জ্ঞান নেই যে, সে কোন সালে, কোন মাসে এবং কোন দিনে আসবে। অনুরূপভাবে বৃষ্টি কখন হবে এ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে। গর্ভবতী নারীর জরায়ুতে পুত্র সন্তান আছে কি কন্যা সন্তান আছে, সন্তান লাল বর্ণের হবে কি কালো বর্ণের হবে এ জ্ঞানও আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। কেউ এটা জানে না যে, সে আগামীকাল ভাল কাজ করবে কি মন্দ কাজ করবে, মরবে কি বেঁচে থাকবে। হতে পারে যে কালই মৃত্যু বা কোন বিপদ এসে পড়বে। কেউই জানে না যে, কোথায় তার মৃত্যু হবে, কোথায় তার কবর হবে। হতে পারে যে, তাকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া হবে অথবা কোন জনমানবহীন জঙ্গলে মৃত্যুবরণ করবে। কেউই জানে না যে, সে কঠিন মাটিতে, না নরম মাটিতে প্রোথিত হবে। হাদীস শরীফে আছে যে, যে ব্যক্তির মৃত্যু অন্য দেশের মাটিতে লিখা তাকে কোন কার্যোপলক্ষে সেখানে যেতে হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন।আলী হামদানের কবিতায় এ বিষয়টিকে খুব ভালভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একটি হাদীসে আছে যে, কিয়ামতের দিন যমীন আল্লাহকে বলবেঃ “ এগুলো আপনার আমানত যা আপনি আমার কাছে রেখেছিলেন ।” ( তিবরানী (রঃ ) প্রমুখ গুরুজনও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
সূরা লুকমান আয়াত 34 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে।
- তারা নিজেদের মধ্যে ভীষণ চক্রান্ত করে নিয়েছে এবং আল্লাহর সামনে রক্ষিত আছে তাদের কু-চক্রান্ত। তাদের
- ফেরাউন বলল; তোমরা আমাকে ছাড়, মূসাকে হত্যা করতে দাও, ডাকুক সে তার পালনকর্তাকে! আমি আশংকা
- তারা বলল-হে সালেহ, ইতিপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত
- এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী
- তাদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করো না। যদি তোমরা আঘাত প্রাপ্ত, তবে তারাও তো তোমাদের মতই হয়েছে
- বলুন, আমার পালনকর্তা সত্য দ্বীন অবতরণ করেছেন। তিনি আলেমুল গায়ব।
- তারা একে অপরের দিকে মুখ করে পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
- ফেরেশতা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা
- আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা লুকমান ডাউনলোড করুন:
সূরা Luqman mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Luqman শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers