কোরান সূরা আহ্যাব আয়াত 34 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Ahzab ayat 34 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা আহ্যাব আয়াত 34 আরবি পাঠে(Ahzab).
  
   

﴿وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا﴾
[ الأحزاب: 34]

আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্নদর্শী, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন। [সূরা আহ্যাব: 34]

Surah Al-Ahzab in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ahzab ayat 34


আর স্মরণ রাখো তোমাদের ঘরে যা পাঠ করা হয় আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলী ও জ্ঞানভান্ডার থেকে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হচ্ছেন গুপ্ত বিষয়ে জ্ঞাতা, পূর্ণ ওয়াকিফহাল।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৩৪. আর তোমরা তোমাদের ঘরে রাসূলের উপর অবতীর্ণ আল্লাহর যেসব আয়াত ও পবিত্র হাদীস পাঠ করা হয় তা স্মরণ করো। আল্লাহ তোমাদের উপর অনুগ্রহশীল বিধায় তোমাদেরকে রাসূলের ঘরে নিয়ে এসেছেন এবং তিনি তোমাদের ব্যাপারে পরিজ্ঞাত বিধায় রাসূলের স্ত্রী হিসাবে ও তাঁর উম্মতের মুমিন সম্প্রদায়ের মাতামহ হিসাবে চয়ন করেছেন।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ।[১] নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত গোপন রহস্য জানেন, খবর রাখেন সর্ববিষয়ের। [১] অর্থাৎ, তার উপর আমল কর। 'حكمة' ( জ্ঞানের কথা )র অর্থ হাদীস বা নবী ( সাঃ )-এর সুন্নত। উক্ত আয়াত থেকে দলীল নিয়ে অনেকে বলেন যে, কুরআনের মত হাদীসকেও নেকীর উদ্দেশ্যে পড়া যাবে। এ ছাড়া এ আয়াতও নবী-পত্নীগণের 'আহলে বায়ত' হওয়ার কথা প্রমাণ করে। কারণ অহীর অবতরণ, যার বর্ণনা এই আয়াতে হয়েছে, তা নবী-পত্নীগণের গৃহেই হত; বিশেষ করে আয়েশা ( রাঃ ) -র গৃহে, যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আর আল্লাহর আয়াত ও হিকমত থেকে যা তোমাদের ঘরে পাঠ করা হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে [] নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত। [] মূলে وَاذْكُرْنَ; শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর দু'টি অর্থ: "স্মরণ রেখো” এবং “ বৰ্ণনা করো ।” প্রথম অর্থের দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য এই দাঁড়ায়: হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কখনো ভুলে যেয়ো না যে, যেখান থেকে সারা দুনিয়াকে আল্লাহর আয়াত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার শিক্ষা দেয়া হয় সেটিই তোমাদের আসল গৃহ। তাই তোমাদের দায়িত্ব বড়ই কঠিন। তোমাদের গৃহে যেসব বিষয় আলোচনা হয় সেসব বিষয় স্বয়ং স্মরণ রেখো —যার ফলশ্রুতি ও পরিচয় হলো এগুলোর উপর আমল করা। দ্বিতীয় অর্থটির দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য হয়: হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা যা কিছু শোনো এবং দেখো তা লোকদের সামনে বর্ণনা করতে থাকো। কারণ রাসূলের সাথে সাৰ্বক্ষণিক অবস্থানের কারণে এমন অনেক বিধান তোমাদের গোচরীভূত হবে যা তোমাদের ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে লোকদের জানা সম্ভব হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে যেসব শিক্ষা প্রদান করেছেন, উম্মতের অন্যান্য লোকদের সঙ্গে সেসবের আলোচনা করা এবং তাদেরকে সেগুলো পৌছে দেয়া তাদের দায়িত্ব। এ আয়াতে দু'টি জিনিসের কথা বলা হয়েছে। এক, আল্লাহর আয়াত, দুই, হিকমাত বা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। আল্লাহর আয়াত অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কিতাবের আয়াত। কিন্তু হিকমাত শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক। সকল প্রকার জ্ঞানের কথা এর অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদেরকে শেখাতেন। আল্লাহর কিতাবের শিক্ষার ওপরও এ শব্দটি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু কেবলমাত্র তার মধ্যেই একে সীমিত করে দেবার সপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। কুরআনের আয়াত শুনানো ছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পবিত্র জীবন ও নৈতিক চরিত্র এবং নিজের কথার মাধ্যমে যে হিকমাতের শিক্ষা দিতেন তাও অপরিহার্যভাবে এর অন্তর্ভুক্ত। [ দেখুন: তাবারী, ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় প্রিয়তম নবী ( সঃ )-এর সহধর্মিণীদেরকে আদব-কায়দা ও ভদ্রতা শিক্ষা দিচ্ছেন। সমস্ত স্ত্রীলোক তাদের অধীনস্থ। সুতরাং এই নির্দেশাবলী সমস্ত মুসলিম নারীর জন্যেই প্রযোজ্য। তিনি নবী ( সঃ )-এর সহধর্মিণীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী-পত্নীরা! তোমরা অন্যান্য সাধারণ নারীদের মত নও। তাদের তুলনায় তোমাদের মর্যাদা অনেক বেশী। যদি তোমরা আল্লীহূকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। স্ত্রীলোকদের পরপুরুষের সাথে কোমল সুরে ও লোভনীয় ভঙ্গিতে কথা বলা নিষিদ্ধ। সুমিষ্ট ভাষায় ও নরম সুরে শুধুমাত্র স্বামীর সাথে কথা বলা যেতে পারে। এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কোন জরুরী কাজকর্ম ছাড়া তোমরা বাড়ী হতে বের হবে না। মসজিদে নামায পড়তে যাওয়া শরয়ী প্রয়োজন। যেমন রাসূলুল্লাহ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহর বাদীদেরকে আল্লাহ্র মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করো না । কিন্তু তাদের উচিত যে, তারা বাড়ীতে যে সাদাসিধা পোশাক পরে থাকে ঐ পোশাক পরেই যেন মসজিদে গমন করে। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, স্ত্রীলোকদের জন্যে বাড়ীই উত্তম।হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা স্ত্রীলোকেরা রাসূলুল্লাহ( সঃ )-এর নিকট এসে বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) ! পুরুষ লোকেরা আল্লাহর পথে জিহাদের ফযীলত নিয়ে যায়। আমাদের জন্যে কি এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমমর্যাদা লাভ করতে পারি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ যারা নিজেদের বাড়ীতে ( পর্দার সাথে ) বসে থাকে ( অথবা এ ধরনের কথা তিনি বললেন ), তারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের আমলের মর্যাদা লাভ করবে । ( এ হাদীসটি হাফিয আবূ বকর আল বায্যার (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবদুল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ নিশ্চয়ই স্ত্রীলোক পর্দার বস্তু । এরা যখন বাড়ী হতে বের হয় তখন শয়তান তাদের প্রতি ওঁৎ পেতে থাকে। তারা আল্লাহ্ তা'আলার খুব বেশী নিকটবর্তী হয় তখন যখন নিজেদের বাড়ীতে অবস্থান করে। ( এ হাদীসটিও হাফিয আবু বকর আল বাযার (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ নারীর অন্দর মহলের নামায তার বাড়ীর নামায হতে উত্তম এবং বাড়ীর নামায আঙ্গিনার নামায হতে উত্তম । ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)অজ্ঞতার যুগে নারীরা বেপর্দাভাবে চলাফেরা করতো। ইসলাম এরূপ বেপর্দাভাবে চলাফেরা করাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ভঙ্গিমা করে নেচে নেচে চলাকে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দো-পাট্টা ও চাদর গায়ে দিয়ে চলাফেরা করতে হবে। তা গায়ে দিয়ে গলায় জড়িয়ে রাখা ঠিক নয়। যাতে গলা ও কানের অলংকার অন্যের নযরে না পড়ে সেভাবে গায়ে দিতে হবে। এগুলো অসত্য ও বর্বর যুগের নিয়ম-পদ্ধতি ছিল। যা এ আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত নূহ ( আঃ ) হযরত ইদরীস ( আঃ )-এর মধ্যকার ব্যবধান ছিল এক হাজার বছর। এই মধ্যবর্তী যুগে হযরত আদম ( আঃ )-এর দু’টি বংশ আবাদ ছিল। একটি পাহাড়ী এলাকায় এবং অপরটি সমতল ভূমিতে বসবাস করতো। পাহাড়ীয় অঞ্চলের পুরুষ লোকেরা চরিত্রবান ও সুন্দর ছিল এবং স্ত্রীলোকেরা ছিল কুৎসিত। পুরুষদের দেহের রং ছিল শ্যামল ও সুশ্রী। ইবলীস তাদেরকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মানুষের রূপ ধারণ করে সমতল ভূমির লোকদের কাছে গেল। একটি লোকের গোলাম হয়ে তথায় থাকতে লাগলো। সেখানে সে বাঁশীর মত একটি জিনিস আবিষ্কার করলো এবং তা বাজাতে লাগলো। এই বশীর সুরে জনগণ খুবই মুগ্ধ হয়ে গেল এবং সেখানে ভীড় জমাতে শুরু করলো। এভাবে একদিন সেখানে মেলা বসে গেল। হাজার হাজার নারী-পুরুষ সেখানে একত্রিত হলো। আকস্মিকভাবে একদিন এক পাহাড়ী লোকও সেখানে পৌঁছে গেল। বাড়ী ফিরে গিয়ে সে নিজের লোকদের সামনে তাদের সৌন্দর্যের আলোচনা করতে লাগলো। তখন তারাও খুব ঘন ঘন সেখানে আসতে লাগলো। দেখাদেখির মাধ্যমে এদের নারীদের সাথে তাদের মেলামেশা বেড়ে গেল। সাথে সাথে ব্যভিচার ও অনান্য অসৎ কর্ম বেড়ে চললো। এভাবেই অসভ্যতা ও বর্বরতার পত্তন হলো। এ ধরনের কাজে বাধা দেয়ার পর কিছু কিছু নির্দেশাবলীর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আল্লাহর ইবাদত সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইবাদত হচ্ছে নামায। সুতরাং তোমরা নিয়মানুবর্তিতার সাথে নামায প্রতিষ্ঠিত করবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ যাকাত প্রদান করতে হবে। এই বিশেষ আদেশ প্রদানের পর মহামহিমান্বিত আল্লাহ তার ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। এই আয়াতটি এটাই প্রমাণ করে যে, নবী ( সঃ )-এর সহধর্মিণীরা আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। এ আয়াতটি তাঁদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতের শানে নুযূল তো আয়াতের আদেশ-নিষেধ। মুতাবেক হয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন যে, আয়াতের বিষয়বস্তু তাদের উপর বর্তাবে যাদের শানে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, তারা তো হবেই, তা ছাড়া তারাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে যাদের ক্রিয়া-কলাপ এদের অনুরূপ হবে। দ্বিতীয় কথাটিই অধিকতর সঠিক। হযরত ইকরামা ( রাঃ ) বাজারে বাজারে বলে বেড়াতেনঃ “ এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর স্ত্রীদের জন্যে বিশেষভাবে অবতীর্ণ হয়েছে ।” ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ), ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) এ কথা বলেছেন। হযরত ইকরামা ( রাঃ ) বলতেনঃ “ যদি কেউ এ ব্যাপারে মুকাবিলা করতে চায় তবে আমি মুকাবিলা করতে সদা প্রস্তুত ।” এ আয়াতটি শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সহধর্মিণীদের শানে অবতীর্ণ হয়েছে- একথার ভাবার্থ এই যে, এর শানে নুযূল অবশ্যই এটাই। যদি এর উদ্দেশ্য এই হয় যে, আহূলে বায়েতের সাথে অন্যান্যরাও জড়িত, তবে এখানে আবার প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে যে, এ আয়াতে বর্ণিত আহলে বায়েত ছাড়া অন্যান্যরাও শামিল রয়েছে।মুসনাদে আহমাদ ও জামেউত তিরমিযীতে উল্লিখিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন ফজরের নামাযের জন্যে বের হতেন তখন তিনি হযরত ফাতিমা ( রাঃ )-এর দরযার নিকট গিয়ে বলতেনঃ “ হে আহলে বায়েত! নামাযের সময় হয়ে গেছে । অতঃপর তিনি এই পবিত্র আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন। ( ইমাম তিরমিযী (রঃ ) এ হাদীসটিকে হাসান ও গারীব বলেছেন। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-এর এরূপ একটি হাদীসে সাত মাসের বর্ণনা রয়েছে) ( এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু দাউদ আমানাকী ইবনে হারিস চরম মিথ্যাবাদী। এ রিওয়াইয়াতটি সঠিক নয )শাদ্দাদ ইবনে আম্মার ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমি একবার হযরত ওয়াসিলা ইবনে আসফা ( রাঃ )-এর নিকট গেলাম । ঐ সময় সেখানে আরো কিছু লোক বসেছিল এবং হযরত আলী ( রাঃ ) সম্পর্কে আলোচনা চলছিল। তারা তাঁকে ভাল-মন্দ বলছিল। আমিও তাদের সাথে যোগ দিলাম। যখন তারা চলে গেল তখন হযরত ওয়াসিলা ( রাঃ ) বললেনঃ “ তুমিও হযরত আলী ( রাঃ ) সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করলে?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যাঁ, আমি তাদের কথায় সমর্থন যোগিয়েছি মাত্র । তখন তিনি আমাকে বললেনঃ “ তাহলে শুনো, আমি যা দেখেছি তা তোমাকে শুনাচ্ছি । একদা আমি হযরত আলী ( রাঃ )-এর বাড়ী গিয়ে জানতে পারি যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দরবারে গিয়েছেন। আমি তার আগমনের অপেক্ষায় সেখানেই বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরেই দেখি যে, রাসূলুল্লাহ( সঃ ) আসছেন এবং তার সাথে হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত হাসান ( রাঃ ) হযরত হুসাইনও ( রাঃ ) রয়েছেন। হযরত হাসান ( রাঃ ) হযরত হুসাইন ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর অঙ্গুলী ধরে ছিলেন। তিনি হযরত আলী ( রাঃ ) হযরত ফাতিমা ( রাঃ )-এর সামনে বসলেন এবং নাতিদ্বয়কে কোলের উপর বসালেন। একখানা চাদর দ্বারা তাদেরকে আবৃত করলেন। অতঃপর এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে তিনি বললেনঃ “ হে আল্লাহ! এরাই আমার আহলে বায়েত । আর আমার আহলে বায়েতই বেশী হকদার।” অন্য রিওয়াইয়াতে নিম্নের কথাটুকু বেশী আছে যে, হযরত ওয়াসিলা ( রাঃ ) বলেন, আমি এ দেখে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমিও কি আপনার আহ্লে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ হ্যা, তুমিও আমার আহলে বায়েতেরই অন্তর্ভুক্ত । হযরত ওয়াসিলা ( রাঃ ) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল ( সঃ )-এর এই ঘোষণা আমার জন্যে বড়ই আশাব্যঞ্জক ।”অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত ওয়াসিলা ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে ছিলাম এমন সময় হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত ফাতিমা ( রাঃ ), হযরত হাসান ( রাঃ ) এবং হযরত হুসাইন ( রাঃ ) আসলেন । রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় চাদরখানা তাঁদের উপর ফেলে দিয়ে বলেনঃ “ হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত । হে আল্লাহ! তাদের হতে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন এবং তাদেরকে পবিত্র করে দিন।” আমি বললামঃ আমিও কি? তিনি জবাব দিলেনঃ “ হ্যা, তুমিও । নিশ্চয়ই তুমি কল্যাণের উপর রয়েছে।”হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমার ঘরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অবস্থান করছিলেন এমন সময় হযরত ফাতিমা ( রাঃ ) রেশমী কাপড়ের একটি পুঁটলিতে করে কিছু নিয়ে আসলেন । তিনি ( নবী সঃ ) বললেনঃ “ তোমার স্বামীকে ও দুই শিশুকে নিয়ে এসো ।” সুতরাং তারাও এসে গেলেন ও খেতে শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তার বিছানায় ছিলেন। বিছানায় খায়বারের একটি উত্তম চাদর বিছানো ছিল। আমি কামরায় নামায পড়ছিলাম। এমন সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হলো। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদেরকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। তিনি চাদরের ভিতর থেকে হাত দুটি বের করলেন এবং আকাশের দিকে উঠিয়ে দু'আ করলেনঃ “ হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত ও আমার সাহায্যকারী । আপনি এদের অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং এদেরকে পবিত্র করুন!” আমি আমার মাথাটি ঘর থেকে বের করে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমিও তো আপনাদের সবারই সাথে রয়েছি। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বললেনঃ “ হ্যা, অবশ্যই । তুমি তো সদা কল্যাণের উপর রয়েছে। ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে ) এ রিওয়াইয়াতের সনদে আতার নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং তিনি কি ধরনের বর্ণনাকারী সেটাও বলা হয়নি। অবশিষ্ট বর্ণনাকারীরা বিশ্বাসযোগ্য।অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) বলেনঃ “ একদা আমার সামনে হযরত আলী ( রাঃ )-এর আলোচনা শুরু হলো । আমি বললাম, আয়াতে তাতহীর তো আমার ঘরে অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার নিকট এসে বললেনঃ “ কাউকেও এখানে আসার অনুমতি দেবে না ।” অল্পক্ষণ পরেই হযরত ফাতিমা ( রাঃ ) আসলেন। কি করে আমি মেয়েকে তাঁর পিতার নিকট যেতে বাধা দিতে পারি? অতঃপর হযরত হাসান ( রাঃ ) আসলেন। কে নাতিকে তার নানার কাছে যেতে বাধা দেবে? তারপর হযরত হুসাইন ( রাঃ )আসলেন। তাঁকেও আমি বাধা দিলাম না। এরপর হযরত আলী ( রাঃ ) আগমন করলেন। তাঁকেও আমি বাধা দিতে পারলাম না। তারা সবাই যখন একত্রিত হলেন তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদেরকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন এবং বললেনঃ “ হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত । সুতরাং আপনি এদের অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং এদেরকে পবিত্র করুন!” ঐ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। যখন এঁদেরকে চাদর দ্বারা আবৃত করা হলো তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমিও কি এদের অন্তর্ভুক্ত? কিন্তু আল্লাহ জানেন, তিনি আমার এ প্রশ্নে সন্তোষ প্রকাশ করলেন না। তবে শুধু বললেনঃ “ তুমি কল্যাণের দিকেই রয়েছে ।” হাদীসের অন্য ধারাঃ হযরত আতিয়্যাহ তাফাভী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) তার কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার ঘরে ছিলেন। খাদেম খবর দিলো যে হযরত ফাতিমা ( রাঃ ) হযরত আলী ( রাঃ ) এসেছেন। তখন তিনি আমাকে বললেনঃ “ একটু সরে যাও, আমার আহলে বায়েত এসেছে ।” একথা শুনে আমি ঘরের এক কোণে সরে গেলাম। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) শিশুদ্বয়কে কোলে নিলেন ও আদর করলেন। একটি হাত তিনি হযরত আলী ( রাঃ )-এর উপর রাখলেন এবং আর একটি হাত রাখলেন হযরত ফাতিমা ( রাঃ )-এর ঘাড়ের উপর। অতঃপর উভয়কেই তিনি স্নেহ করলেন। তারপর একটি কালো রং এর চাদর সকলের উপর বিছিয়ে দিয়ে তাঁদেরকে আবৃত করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ “ হে আল্লাহ! আমি আপনার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছি, আগুনের দিকে নয় । এরাও আমার আহলে বায়েত।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আমিও কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ হ্যা, তুমিও । ( এ বর্ণনাটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে ) অন্য ধারাঃ হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ( আরবি ) -এ আয়াতটি আমার বাড়ীতে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি ঘরের দরজায় বসেছিলাম এমতাবস্থায় আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি কি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত নই? জবাবে তিনি বললেনঃ “ তুমি কল্যাণের উপর রয়েছে এবং তুমি নবী ( সঃ )-এর স্ত্রীদের একজন ।” ঐ সময় আমার বাড়ীতে রাসূলুল্লাহ( সঃ ), হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত ফাতিমা ( রাঃ ), হযরত হাসান ( রাঃ ) হযরত হুসাইন ( রাঃ ) অবস্থান করছিলেন।” ( এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য ধারাঃ হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ( সঃ ) হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত ফাতিমা ( রাঃ ), হযরত হাসান ( রাঃ ) হযরত হুসাইন ( রাঃ )-কে একত্রিত করেন । অতঃপর তিনি তাদেরকে তার কাপড়ের নীচে প্রবিষ্ট করেন। অতঃপর তিনি মহামহিমান্বিত আল্লাহকে বলেনঃ “ হে আল্লাহ! এরা আমার আহ্লে বায়েত ।” তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। তিনি তখন বললেনঃ “ তুমিও আমার পরিবারের একজন ।” অন্য হাদীসঃ হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ একদা সকালে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কালো চাদর গায়ে দিয়ে বের হলেন । অতঃপর পর্যায়ক্রমে হযরত হাসান ( রাঃ ), হযরত হুসাইন ( রাঃ ), হযরত ফাতিমা ( রাঃ ) হযরত আলী ( রাঃ ) আসলেন। সকলকেই তিনি তার ঐ চাদরের মধ্যে প্রবিষ্ট করলেন। তারপর তিনি ( আরবি ) এ আয়াতটি পাঠ করলেন। ( এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) ও ইমাম মুসলিম ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য ধারাঃ হযরত ইবনে হাওশিব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর চাচাতো ভাই হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, একদা আমি হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর নিকট গমন করে তাঁকে হযরত আলী ( রাঃ ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন তিনি বলেনঃ তুমি আমাকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছো যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। তার বাড়ীতেই তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ছিলেন। যিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট সবচেয়ে বেশী ভালবাসার পাত্রী আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে দেখেছি যে, তিনি হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত ফাতিমা ( রাঃ ), হযরত হাসান ( রাঃ ) হযরত হুসাইন ( রাঃ )-কে আহ্বান করেন। অতঃপর তিনি তাঁদের উপর কাপড় নিক্ষেপ করেন এবং বলেনঃ “ হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত । সুতরাং আপনি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন এবং তাদেরকে পবিত্র করে দিন!” আমি তখন তাদের নিকটবর্তী হলাম। অতঃপর বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমিও কি আপনার আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত? তিনি জবাবে বললেনঃ “ নিশ্চয়ই, জেনে রেখো যে, তুমি কল্যাণের উপর রয়েছে ।( এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) অন্য হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ( আরবি ) এ আয়াতটি আমাদের পাঁচজনের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ আমি, হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত হাসান ( রাঃ ), হযরত হুসাইন ( রাঃ ) এবং হযরত ফাতিমা ( রাঃ )।” অন্য সনদে এটা হযরত আবু সাঈদ ( রাঃ )-এর নিজস্ব উক্তিরূপে বর্ণিত আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ।হযরত সা'দ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর উপর অহী অবতীর্ণ হয় তখন তিনি হযরত আলী ( রাঃ ), তাঁর দুই ছেলে এবং হযরত ফাতিমা ( রাঃ )-কে ধরে তাঁর কাপড়ের নীচে প্রবিষ্ট করেন। অতঃপর বলেনঃ “ হে আমার প্রতিপালক! এরা আমার আহলে বায়েত ।" ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইয়াযীদ ইবনে হিব্বান ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি, হুসাইন ইবনে সাবরা ( রঃ ) এবং হযরত উমার ইবনে সালমা ( রঃ ) হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম ( রাঃ )-এর নিকট গমন করি। আমরা তাঁর কাছে উপবেশন করলে হযরত হুসাইন ( রাঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ হে যায়েদ ( রাঃ )! আপনি তো বহু কল্যাণ লাভ করেছেন । আপনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তার সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং তার পিছনে নামায পড়েছেন। সুতরাং হে যায়েদ ( রাঃ )! আপনি বহু কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করেছেন! হে যায়েদ ( রাঃ )! আপনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হতে যা শুনেছেন তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন।” তিনি তখন বললেন, হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আল্লাহর কসম! এখন আমার বয়স খুব বেশী হয়ে গেছে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর যমানা দূরে চলে গেছে, যা আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতে শুনেছি তার কিছু কিছু বিস্মরণ হয়েছি। এখন আমি তোমাকে যা বলি তাই কর এবং তা মেনে নাও আমাকে তুমি এ ব্যাপারে কষ্ট দিয়ো না। শুনো, মক্কা ও মদীনার মাঝখানে একটি পানির জায়গা রয়েছে যার নাম ‘খাম'। সেখানে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন। তিনি বলেনঃ “ আমি একজন মানুষ । খুব সম্ভব আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আমার নিকট একজন দূত আগমন করবেন। আমি যেন তার কথা মেনে নিই। আমি তোমাদের কাছে দু'টি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। একটি হলো আল্লাহর কিতাব, যাতে হিদায়াত ও জ্যোতি রয়েছে। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর ও ওকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর।” অতঃপর তিনি আল্লাহর কিতাবের দিকে আমাদের দৃষ্টি পূর্ণভাবে আকর্ষণ করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ “ আমার আহলে বায়েতের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কথা তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি ।” তিনবার তিনি একথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন হুসাইন ( রঃ ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে যায়েদ ( রাঃ )! আহলে বায়েত কারা? তাঁর স্ত্রীরা কি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত নন?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “তাঁর স্ত্রীরাও আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত বটে, তবে তার আহ্ল তাঁরা যাদের উপর তার পরে সাদকা হারাম ।” আবার তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “ তারা কারা?' জবাবে তিনি বললেনঃ “তারা হলেন হযরত আলী ( রাঃ )-এর বংশধর, হযরত আকীল ( রাঃ )-এর বংশধর ও হযরত আব্বাস ( রাঃ )-এর বংশধর ।” তাকে প্রশ্ন করা হলো: “ এঁদের সবারই উপর কি সাদকা হারাম?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “হ্যা । ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)অন্য সনদে বর্ণনা করা হয়েছেঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর স্ত্রীরাও কি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত? তিনি জবাব দিলেনঃ “ না । আল্লাহর কসম! স্ত্রীরা তো দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সাথে অবস্থান করে। কিন্তু যদি স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় তবে সে তার পিত্রালয়ের সদস্যা ও নিজ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর আহলে বায়েত হবে তাঁর মূল ও আসাবা।.
যেসব ওয়ারিশের অংশ নির্ধারিত থাকে না, বরং যাদের অংশ নির্ধারিত রয়েছে তাদের অংশ নেয়ার পর বাকী অংশ যারা পায় তাদেরকেই ফারায়েযের পরিভাষায় আসাবা বলা হয়। তার পরে তাদের উপর সাদকা হারাম।” এ রিওয়াইয়াতে এ রকমই আছে। কিন্তু প্রথম রিওয়াইয়াতটিই বেশী গ্রহণযোগ্য। আর দ্বিতীয়টিতে রয়েছে তার উদ্দেশ্য হলো শুধু ঐ আহলে বায়েত যাদের কথা হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে। কেননা সেখানে ঐ ( আরবি ) উদ্দেশ্য যাদের উপর সাদকা হারাম। কিংবা এটাই যে, উদ্দেশ্য শুধু স্ত্রীরাই নয়, বরং তারাসহ তার অন্যান্য ( আরবি )-ও উদ্দেশ্য। এ কথাটিই বেশী যুক্তিযুক্ত। এর দ্বারা এ বর্ণনা ও পূর্ববর্তী বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধিত হচ্ছে। কুরআন ও পূর্ববর্তী হাদীসগুলোর মধ্যেও সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। তবে তখনই তা সম্ভব হবে যখন এ হাদীসগুলোকে সহীহ বলে মেনে নেয়া হবে। কেননা, এগুলোর কোন কোন সনদের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এসব ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে।যে ব্যক্তি মারেফাতের জ্যোতি লাভ করেছে এবং যাদের কুরআন কারীম সম্পর্কে গবেষণা করার অভ্যাস আছে তারা এক দৃষ্টিতেই এটা অবশ্যই জানতে পারবে যে, নবী ( সঃ )-এর স্ত্রীরাও নিঃসন্দেহে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। কেননা, উপর হতেই প্রসঙ্গটি তাদের সম্পর্কে এবং তাঁদের ব্যাপারেই চলে আসছে। এরপরে মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেনঃ আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তা তোমরা স্মরণ রাখবে; আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে অবহিত। সুতরাং হযরত কাতাদা ( রঃ ) প্রমুখ গুরুজনের উক্তি হিসেবে আল্লাহর আয়াত ও হিকমত দ্বারা কিতাব ও সুন্নাতকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা তাঁরা ছাড়া আর কেউই লাভ করতে পারেনি। তা এই যে, তাঁদের গৃহেই আল্লাহর অহী ও রহমতে ইলাহী অবতীর্ণ হয়ে থাকে। আর তাঁদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) সবচেয়ে বেশী লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কেননা, হাদীসে পরিষ্কারভাবে উল্লিখিত হয়েছে যে, হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর বিছানা ছাড়া আর কারো বিছানায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট অহী আসেনি। এটা এ কারণেই যে, রাসূলুল্লাহ( সঃ ) হযরত আয়েশা ( রাঃ ) ছাড়া অন্য কোন কুমারী নারীকে বিয়ে করেননি। তাঁর বিছানা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ছাড়া আর কারো জন্যে ছিল না। সুতরাং তিনি সঠিকভাবেই এই উচ্চ মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন। হ্যা, তবে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সহধর্মিণীরাই যখন তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত তখন তাঁর নিকটাত্মীয়গণ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যেমন হাদীসে গত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমার আহ্বালে বায়েত সবচেয়ে বেশী হকদার ।” সহীহ মুসলিমে যে হাদীসটি এসেছে এটা ওর সঙ্গে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তা এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে যখন ( আরবি ) মসজিদ যার ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত) ( ৯:১০৮ ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ ওটা আমার এই মসজিদ ।" কথাটি মসজিদে কুবা সম্বন্ধে বলা হয়েছে। হাদীসে এটা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সহীহ্ মুসলিমে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হলো: “ এই মসজিদ বলতে কোন মসজিদকে বুঝানো হয়েছে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আমার মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে নববী ( সঃ )” সুতরাং যে মর্যাদা মসজিদে কুবার ছিল সে মর্যাদা মসজিদে নববীরও ( সঃ ) রয়েছে। এ জন্যে এই মসজিদকেও ঐ নামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আলী ( রাঃ )-এর শাহাদাতের পর হযরত হাসান ( রাঃ )-কে খলীফা নির্বাচন করা হলো। তিনি ঐ সময় নামায পড়ছিলেন। বানী আসাদের গোত্রভুক্ত এক ব্যক্তি হঠাৎ এসে পড়লো এবং সিজদারত অবস্থায় তাঁকে ছুরি মেরে দিলো। ছুরিটি তাঁর গোশতের উপর লাগলো। কয়েক ঘন্টা মাত্র তিনি শয্যাগত থাকলেন। যখন একটু সুস্থ হলেন তখন তিনি মসজিদে এলেন এবং মিম্বরের উপর বসে বসে খুৎবা পাঠ করলেন ও বললেনঃ “ হে ইরাকবাসী! আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর । আমি তোমাদের নেতা ও তোমাদের মেহমান। আমি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। যাদের সম্পর্কে ( আরবি ) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। এ কথাটির উপর তিনি খুব জোর দিলেন এবং বাক্যগুলো বারবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললেন। যারা মসজিদে ছিল তারা কাঁদতে লাগলো।একবার তিনি এক সিরিয়াবাসীকে বলেছিলেনঃ “ তুমি কি সরায়ে আহযাবের আয়াতে তাতহীর তিলাওয়াত করেছো?” সে জবাব দিলো: “হ্যা । এর দ্বারা কি আপনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ হ্যা। সে বললো: আল্লাহ তা'আলা বড়ই স্নেহশীল, দয়াময়, সবজান্তা এবং সবকিছুরই খবর তিনি রাখেন । তিনি জানতেন যে, আপনারা তাঁর দয়া ও স্নেহলাভের যোগ্য। তাই তিনি আপনাদেরকে এ নিয়ামতগুলো দান করেছেন।” সুতরাং তাফসীরে ইবনে জারীরের বর্ণনা অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হবেঃ “ হে মুমিনদের মাতা ও নবী ( সঃ )-এর স্ত্রীরা! তোমাদের উপর যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তোমরা স্মরণ কর । তিনি তোমাদেরকে এমন বাড়ীতে অবস্থান করতে দিয়েছেন যেখানে আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা পঠিত হয়। আল্লাহর এসব নিয়ামতের জন্যে তোমাদের তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। এখানে হিকমতের অর্থ হাদীস আল্লাহ তাআলা শেষ পরিণতিরও খবর রাখেন। তাই তিনি সঠিক ও পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন। নবী ( সঃ )-এর সহধর্মিণী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনকারিণী কারা হবেন তা তিনি নির্বাচন করেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোও তোমাদের উপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে বড় অনুগ্রহ। তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে অবহিত।

সূরা আহ্যাব আয়াত 34 সূরা

واذكرن ما يتلى في بيوتكن من آيات الله والحكمة إن الله كان لطيفا خبيرا

سورة: الأحزاب - آية: ( 34 )  - جزء: ( 22 )  -  صفحة: ( 422 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. এবং অন্তরে যা আছে, তা অর্জন করা হবে?
  2. অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়।
  3. আর মূসা যখন নিজ জাতির জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, স্বীয় যষ্ঠির দ্বারা আঘাত
  4. আর যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে বল, আমার জন্য আমার কর্ম, আর তোমাদের জন্য
  5. বলুনঃ আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাংতোমরা কি আজ্ঞাবহ
  6. কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং
  7. আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণারূপে করে দেব।
  8. তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে বিলুপ্ত করে এক নতুন সৃষ্টির উদ্ভব করবেন।
  9. সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, অল্লাহই সত্য, স্পষ্ট
  10. এবং বিপথগামীদের সামনে উম্মোচিত করা হবে জাহান্নাম।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আহ্যাব ডাউনলোড করুন:

সূরা Ahzab mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ahzab শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত আহ্যাব  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত আহ্যাব  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত আহ্যাব  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত আহ্যাব  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত আহ্যাব  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত আহ্যাব  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত আহ্যাব  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত আহ্যাব  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত আহ্যাব  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত আহ্যাব  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত আহ্যাব  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Sunday, May 19, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب