কোরান সূরা মায়িদা আয়াত 44 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Maidah ayat 44 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা মায়িদা আয়াত 44 আরবি পাঠে(Maidah).
  
   

﴿إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ ۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ﴾
[ المائدة: 44]

আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। [সূরা মায়িদা: 44]

Surah Al-Maidah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Maidah ayat 44


নিঃসন্দেহ আমরা অবতীর্ণ করেছি তওরাত, যাতে রয়েছে হেদায়ত ও দীপ্তি। তার দ্বারা নবীগণ, যাঁরা ইসলামী ধর্মমত পোষণ করেন, বিধান দিয়েছিলেন তাদের যারা ইহুদীয় মত পোষণ করে, আর রব্বিসব ও পুরোহিতরা আল্লাহ্‌র কিতাবের যা তারা সংরক্ষণ করতো তারদ্বারা, আর তারা সে-সবের সাক্ষী ছিল। সেজন্য তোমরা লোকজনকে ভয় করো না, বরং ভয় করো আমাকে, আর আমার বাণীসমূহের জন্য স্বল্পমূল্য কামাতে যেয়ো না। আর যারা বিচার করে না আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তার দ্বারা, তারা তবে নিজেরাই অবিশ্বাসী।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৪৪. নিশ্চয়ই আমি মূসা ( আলাইহিস-সালাম ) এর উপর তাওরাত নাযিল করেছি। তাতে রয়েছে কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত ও পথ প্রদর্শন এবং এমন আলোকিত হওয়ার জ্যোতি। আল্লাহর একান্ত অনুগত বনী ইসরাঈলের নবীগণ যা কর্তৃক ফায়সালা করে থাকেন। আরো তা কর্তৃক ফায়সালা করে থাকেন এমন আলিম ও ফকীহগণ যারা মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন সে কিতাবের যে কিতাবের সংরক্ষণকারী ও আমানতদার আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে বানিয়েছেন। যে কিতাবকে তাঁরা সকল ধরনের পরিবর্তন ও বিকৃতি থেকে রক্ষা করেন এবং তাঁরা তার সত্যতার ব্যাপারেও সাক্ষী। উপরন্তু সে ব্যাপারে মানুষরা তাঁদের দিকেই ফিরে আসে। তাই হে ইহুদিরা তোমরা মানুষকে ভয় করো না। বরং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো। আর তোমরা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধানানুযায়ী ফায়সালা করার পরিবর্তে সামান্যটুকু মূল্য তথা নের্তৃত্ব, সম্মান ও সম্পদ গ্রহণ করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর অবতীর্ণ ওহী অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না চাই তা হালাল মনে করে হোক অথবা অন্যটিকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কিংবা সমান মনে করে হোক তারা সত্যিই কাফির।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম, ওতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীগণ,[১] রাব্বানী ( আল্লাহ-ভক্ত )গণ এবং পন্ডিতগণও ইয়াহুদীদেরকে[২] তদনুসারে বিধান দিত, কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল[৩] এবং তারা ছিল ওর ( সত্যতার ) সাক্ষী।[৪] সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াত নগণ্য মূল্যে বিক্রয় করো না।[৫] আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই অবিশ্বাসী ( কাফের )।[৬] [১] أسلموا ক্রিয়াপদটি نبيين এর বিশেষণ। অর্থাৎ, মুসলিম বা আল্লাহর অনুগত নবীগণ। যেহেতু সমস্ত নবীগণই ইসলাম ধর্মেরই অনুসারী ছিলেন, যার দিকে মুহাম্মাদ ( সাঃ ) দাওয়াত দিচ্ছেন। অর্থাৎ, সমস্ত নবীগণের দ্বীন বা ধর্ম এক ও অভিন্ন। আর ইসলামী দাওয়াতের মূল ভিত্তি হলো ( তাওহীদ ); অর্থাৎ, একমাত্র এক আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে আর তাঁর ইবাদতের সাথে অন্য কাউকে শরীক বা অংশীদার করা যাবে না। আর প্রত্যেক নবীই স্ব স্ব গোত্রকে সর্বপ্রথম তাওহীদের এই একনিষ্ঠ বাণীই পেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন; {وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ} অর্থাৎ, আমি তোমার পূর্বে 'আমি ছাড়া অন্য কোন ( সত্য ) উপাস্য নেই; সুতরাং তোমরা আমারই উপাসনা কর'-এ প্রত্যাদেশ ছাড়া কোন রসুল প্রেরণ করিনি। ( সূরা আম্বিয়া ২১:২৫ ) আর কুরআনে একে দ্বীনও বলা হয়েছে, যেমন সূরা শু'রার ৪২:১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, {شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا} যাতে ঐ একই বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমার জন্য আমি ঐ জীবন-বিধানই নির্ধারিত করেছি যা তোমার পূর্বে নবীগণের উপর নির্ধারিত করেছিলাম।[২] للذين هادوا এর সম্পর্ক يحكم ক্রিয়াটির সাথে। অর্থাৎ ইয়াহুদীদের ব্যাপারেও ফায়সালা করতেন।[৩] সুতরাং তাঁরা তাওরাতের মধ্যে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেননি, যেমনটি তাঁদের পরবর্তী লোকেরা করেছিল।[৪] এই যে, এ গ্রন্থ অর্থাৎ কুরআন কারীম পরিবর্ধন ও হ্রাস থেকে সংরক্ষিত আছে এবং আল্লাহর নিকট থেকে ( সর্বশেষ ) অবতীর্ণ গ্রন্থ।[৫] অর্থাৎ, লোকের ভয়ে ভীত হয়ে তাওরাতের আসল বিধান গোপন করো না এবং পার্থিব সামান্য সম্পদ লাভের জন্য তাতে কোন প্রকার রদবদল করো না।[৬] সুতরাং কিভাবে তোমরা ঈমানের পরিবর্তে কুফরীর উপর সন্তুষ্ট রয়ে গেলে?

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


নিশ্চয় আমরা তাওরাত নাযিল করেছিলাম; এতে ছিল হেদায়াত ও আলো; নবীগণ, যারা ছিলেন অনুগত, তারা ইয়াহুদীদেরকে তদনুসারে হুকুম দিতেন []। আর রব্বানী ও বিদ্বানগণও ( তদনুসারে হুকুম দিতেন ), কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল। আর তারা ছিল এর উপর সাক্ষী []। কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আর আমরা আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য ক্রয় করো না। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফের []। সপ্তম রুকূ‘ [] আলোচ্য আয়াতে নবীদের প্রতিনিধিবর্গকে দুই ভাগে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ ‘রব্বানী’গণ এবং দ্বিতীয় ভাগ ‘আহবার’। তন্মধ্যে ‘রব্বানী’ শব্দটির অর্থ নিয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ( رَبَّاني ) শব্দটি ( رَبّ ) এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত। এর অর্থ আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহভক্ত। তবে বিজ্ঞ আলেমদের মতে, শব্দটি ( رُبَّانُ السَّفِيْنَة ) বা জাহাজের নাবিক ও কর্ণধার অর্থে। [ মাজমু ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়্যা ] পক্ষান্তরে আহবার শব্দটি ‘হিবর’ বা ‘হাবর’ এর বহুবচন। ইয়াহুদীদের বাক পদ্ধতিতে আলেমকে ( حبر ) বলা হত। কাতাদা বলেন, রব্বানী হচ্ছে ফকীহগণ। আর আহবার হচ্ছে, আলেমগণ। ইবন যায়দ বলেন, রাব্বানী হচ্ছেন শাসকগণ, আর আহবার হচ্ছে আলেমগণ [ তাবারী ] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, রাব্বানী ঐ সমস্ত জ্ঞানীদেরকে বলা হয়, যারা বড় কোন ইলম দেয়ার পূর্বে ছোট ইলম প্রদান করে, উম্মতকে প্রস্তুত করে নেন। [ ফাতহুল কাদীর ] [] অর্থাৎ তারা এর সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছিল। [ জালালাইন ] অথবা, তারা এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে বলে সাক্ষ্য দিচ্ছিল। [ কুরতুবী ] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এর অর্থ তাদেরকে তাওরাতের সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আর তারা এটা স্বীকার করতেও বাধ্য যে, যখনই এর কোন ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সন্দেহ হবে, তারা সে সমস্ত ব্যাপারে আলেমদের মুখাপেক্ষী হবে। সাধারণ মানুষ যেখানে সালাত, সাওম, যাকাত, যিকর ইত্যাদি ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমেই নাজাত পাবে, সেখানে আলেমদের দায়িত্ব আরও বেশী। তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হচ্ছে, উপরোক্ত ইবাদাতসমূহ সম্পন্ন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যা যা প্রয়োজন হবে, যেখানে যেখানে তাদেরকে সাবধান করার দরকার হবে, সেখানে তাদেরকে তাও করতে হবে। [ সা’দী ] [] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে কেউ আল্লাহ যা নাযিল করেছে তা অস্বীকার করবে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে। আর যে কেউ তা স্বীকার করবে, কিন্তু বাস্তবায়ন করে তদনুসারে বিধান দিবে না সে যালেম ও ফাসেক হবে। [ তাবারী ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতসমূহে ঐ লোকদের নিন্দে করা হচ্ছে যারা স্বীয় অভিমত, কিয়াস এবং প্রবৃত্তিকে আল্লাহর শরীয়তের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্য পরিত্যাগ করে কুফরীর দিকে দৌড়ে যায়। তারা মুখে শুধু ঈমানের দাবী করে বটে, কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান শূন্য। মুনাফিকদের অবস্থা তো এটাই যে, তারা মুখে খুব সাধুতা প্রকাশ করে, কিন্তু অন্তর তাদের সম্পূর্ণ কপট। ইয়াহূদীদের স্বভাবও তদ্রুপ। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু। তারা মিথ্যা ও বাজে কথা খুব মজা করে শুনে তাকে এবং অন্তরের সাথে ককূল করে থাকে। পক্ষান্তরে সত্য কথা থেকে তারা দূরে সরে থাকে, এমনকি ঘুণাও করে। তারা নবী ( সঃ )-এর মজলিসে উপস্থিত হয় বটে, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য থাকে মুসলমানদের গোপনীয় কথা নিজেদের মধ্যে নিয়ে যাওয়া, তাদের পক্ষ থেকে তারা গুপ্তচরের কাজ করে। সবচেয়ে বড় দুষ্টুমি তাদের এই যে, তারা কথাকে বদলিয়ে দেয়। ভাবার্থ হবে একরূপ, কিন্তু তারা অন্য অর্থ করে জনগণের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়। উদ্দেশ্য এই যে, সেটা যদি তাদের মর্জি মোতাবেক হয় তবে তো মানবে, আর উল্টো হলে তা থেকে দূরে থাকবে। কথিত আছে যে, এ আয়াত ঐ সব ইয়াহূদীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যারা একে অপরকে হত্যা করেছিল। অতঃপর তারা পরস্পর বলাবলি করে-“ চল, আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গমন করি । যদি তিনি রক্তপণ ও জরিমানার নির্দেশ দেন তবে তো মনে নেবো। আর যদি কিসাস বা হত্যার বদলে হত্যার নির্দেশ দেন তবে মানবো না।” কিন্তু সর্বাধিক সঠিক কথা এই যে, তারা এক ব্যভিচারিণী মহিলাকে নিয়ে এসেছিল। তাদের কিতাব তাওরাতে তো এ হুকুমই ছিল যে, ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী বিবাহিত বা বিবাহিতা হলে তাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করে দিতে হবে। কিন্তু তারা এটাকে বদলিয়ে দিয়েছিল এবং একশ চাবুক মেরে, মুখে চুনকালি মাখিয়ে এবং গাধায় উল্টো করে সওয়ার করিয়ে লাঞ্ছিত করতো। আর এরূপ শাস্তি দিয়েই ছেড়ে দিতে। নবী ( সঃ )-এর মদীনায় হিজরতের পর তাদের কোন একজন ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হয়ে গ্রেফতার হয়। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “ চল, আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গমন করি এবং তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি । যদি তিনি আমাদের শাস্তি দানের মতই শাস্তির নির্দেশ দেন তবে আমরা তা মেনে নেবো এবং আল্লাহর কাছেও এটা আমাদের জন্যে সনদ হয়ে যাবে। আর যদি রজম বা পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দেন তবে তা মানবো না।” সুতরাং তারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করে বললোঃ “ আমাদের এক মহিলা ব্যভিচার করেছে । তার ব্যাপারে আপনি কি নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেনঃ ‘তোমাদের তাওরাতে কি নির্দেশ রয়েছে? তারা বললোঃ “ আমরা তাকে লাঞ্ছিত করি এবং চাবুক মেরে ছেড়ে দেই” এ কথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ( রাঃ ) বললেনঃ “ তোমরা মিথ্যা কথা বলছে । তাওরাতে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ রয়েছে, তাওরাত নিয়ে এসে দেখি।” তারা তাওরাত খুলে দিল বটে, কিন্তু রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে দিয়ে পূর্বাপর সমস্ত পড়ে শুনালো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ( রাঃ ) সব কিছু বুঝে ফেললেন এবং তাদেরকে বললেন, হাত সরিয়ে নাও। হাত সরালে দেখা গেল যে, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তখন তাদেরকেও স্বীকার করতে হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নির্দেশক্রমে ব্যভিচারীদ্বয়কে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করে দেয়া হলো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) বলেন, আমি দেখলাম যে, ব্যভিচারী পুরুষ লোকটি ব্যভিচারিণী মহিলাটিকে পাথর থেকে বাঁচাবার জন্যে আড়াল হয়ে দাড়িয়েছিল।অন্য সনদে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহূদীরা বলেছিল, আমরা তো তাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে এবং কিছু মারপিট করে ছেড়ে দেই।' অতঃপর রজমের আয়াত প্রকাশ হওয়ার পর তারা বলে, রয়েছে তো এ হুকুমই কিন্তু আমরা তা গোপন করে রেখেছিলাম।' যে পাঠ করেছিল সে-ই রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে দিয়েছিল। যখন তার হাত সরিয়ে ফেলা হলো তখন রজমের আয়াত প্রকাশ হয়ে পড়লো। এ দু’জনকে রজমকারীদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমারও ( রাঃ ) বিদ্যমান ছিলেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ইয়াহূদীরা লোক পাঠিয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে ডেকে নিয়েছিল। তারা তাকে তাদের শিক্ষাগারে গদির উপর বসিয়েছিল। তাদের যে লোকটি তাওরাত পাঠ করেছিল সে তাওরাতের বড় পণ্ডিত ছিল। আর একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদেরকে কসম দিয়ে বলেছিলেনঃ ‘তোমরা তাওরাতে বিবাহিত ব্যভিচারীর কি শাস্তি দেখেছ?' তারা উপরোক্ত উত্তরই দিয়েছিল। কিন্তু একটি যুবক কিছুই না বলে নীরবে দাঁড়িয়েছিল। রাসুলুল্লাহ ( সঃ ) তার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টিপাত করে পুনরায় কসম দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলেন এবং উত্তর চাইলেন। সে বললো, “ আপনি যখন এমন কসমই দিলেন তখন আমি মিথ্যা কথা বলবো না । বাস্তবিক তাওরাতে এ প্রকারের অপরাধীর শাস্তি প্রস্তরাঘাতে হত্যাই রয়েছে।” তিনি বললেনঃ “ আচ্ছা তাহলে এটাও সত্যি করে বল যে, তোমরা সর্বপ্রথম এ রজমকে কার উপর থেকে উঠিয়ে দিয়েছ?” সে উত্তরে বললো, জনাব! আমাদের বাদশাহর কোন এক সম্ভ্রান্ত্র বংশীয় আত্মীয় ব্যভিচার করে । তার পদমর্যাদা এবং বাদশাহী প্রভাবের ফলে তাকে রজম করা হয়নি। তারপর এক সাধারণ লোক ব্যভিচার করে। তাকে রজম করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তার গোত্রের সমস্ত লোক প্রতিবাদ করে বলে, পূর্ববর্তী লোকটিকেও রজম করতে হবে, না হলে একেও ছেড়ে দিতে হবে। তখন আমরা সবাই মিলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, এ ধরনের কোন শাস্তি নির্ধারণ করা হোক। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাওরাতের হুকুমকেই জারী করেন। এ ব্যাপারেই ( আরবী ) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সুতরাং রাসূলুল্লাহ( সঃ ) ঐ আহকাম জারীকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ( মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবি দাউদ )মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, ইয়াহূদীরা একটি লোককে চুনকালি মাখাবার জন্যে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তারা তাকে চাবুকও মারছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদেরকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। তারা উত্তরে বলে, “ এ লোকটি ব্যভিচার করেছে ।” তিনি জিজ্ঞেস করলেন-“ তোমাদের বিধানে কি ব্যভিচারের শাস্তি এটাই?" তারা উত্তর দিলো, হ্যা । তিনি তখন তাদের এক আলেমকে ডাকলেন এবং তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তখন সে বললো, “ আপনি যদি আমাকে এরূপ কসম না দিতেন তবে আমি কখনও বলতাম না । প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আমাদের বিধানে বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি প্রস্তরাঘাতে হত্যাই বটে। কিন্তু আমীরুল উমারা ও সম্ভ্রান্ত লোকদের মধ্যে এ পাপকার্য খুব বেশী ছড়িয়ে পড়লে তাদেরকে এ ধরনের শাস্তি দেয়া আমরা সমীচীন মনে করলাম না। তাই তাদেরকে তো ছেড়ে দিতাম। আর আল্লাহর নির্দেশও যাতে বৃথা না যায় তজ্জন্য দরিদ ও কম মর্যাদা সম্পন লোকদেরকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করে দিতাম। তারপর আমরা পরামর্শ করলাম যে, এমন এক শাস্তি নির্ধারণ করা যাক যা ধনী-গরীব, ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে সকলের উপর সমানভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। অবশেষে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মুখে চুনকালি মাখিয়ে চাবুক মারা হবে।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ “ তাদের উভয়কে পাথর মেরে হত্যা করে ফেল ।' সুতরাং তাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করে ফেলা হয়। সেই সময় তিনি বলেছিলেনঃ “ হে আল্লাহ! আমি প্রথম ঐ ব্যক্তি যে আপনার একটি মৃত হুকুমকে জীবিত করলো ।” তখন ( আরবী ) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এ ইয়াহূদীদেরই সম্পর্কে অন্য আয়াতে রয়েছে- ‘আল্লাহর নাযিলকৃত হুকুম অনুযায়ী যারা মীমাংসা করে না তারা অত্যাচারী।' অন্য আয়াতে ফাসিক শব্দ রয়েছে। ( সহীহ মুসলিম ইত্যাদি ) অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ব্যভিচারের ঘটনাটি ফিদকে ঘটেছিল। সেখানকার ইয়াহূদীরা মদীনার ইয়াহূদীদের নিকট একজন আলেমকে পাঠিয়ে ব্যভিচারের শাস্তি জানতে চেয়েছিল। তথাকার যে আলেমটি মদীনায় এসেছিল তার নাম ছিল ইবনে সূরিয়া। তার চক্ষু টেরা ছিল। তার সাথে আর একজন আলেমও ছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদেরকে কসম দিলে তারা দুজনই তা কবূল করেছিল। তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “ আমি তোমাদেরকে ঐ আল্লাহর কসম দিচ্ছি যিনি বানী ইসরাঈলের জন্যে পানিতে রাস্তা করে দিয়েছিলেন, তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া । করেছিলেন, তাদেরকে ফিরাউন থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং তাদের উপর মান’ ও সালওয়া’ অবতীর্ণ করেছিলেন।” এ কসমে তারা চমকে ওঠে এবং পরস্পর বলাবলি করে, এটাতো বড়ই কঠিন কসম। এরূপ স্থলে মিথ্যে বলা মোটেই ঠিক হবে না। তাই তারা বললো, জনাব! তাওরাতে রয়েছে যে, খারাপ নযরে দেখাও যেনাতুল্য, গলায় গলায় মিলনও যেনার মত এবং চুম্বন দেয়াও যেনাতুল্য। যদি এর উপর চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয় যে, তারা পুংঙ্গিলকে স্ত্রীলিঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করতে ও বের হতে দেখেছে, যেমন শলাকা সুরমাদানীর ভেতর যাতায়াত করে, তবে রজম বা প্রস্তরাঘাতে হত্যা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ মাসআলা তো এটাই। অতঃপর তিনি উক্ত যেনাকার পুরুষ ও নারীকে রজম করে দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই সময় ( আরবী ) -এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ( সুনানে আবি দাউদ ইত্যাদি ) আর একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, যে দু’জন আলেমকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সামনে আনয়ন করা হয়েছিল, তারা ছিল সূরিয়ার দুইপুত্র। এ বর্ণনায় ইয়াহুদীদের হদ পরিত্যাগ করার কারণ তাদের পক্ষ থেকে নিম্নরূপ বর্ণনা করা হয়েছে- আমাদের মধ্যে যখন সালতানাত বা রাজত্ব রইলো না তখন আমরা আমাদের লোকদেরকে হত্যা করা সমীচীন মনে করলাম না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাক্ষীদেরকে ডাকিয়ে নিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তারা বলে, আমরা তাদের দু'জনকে এ কু-কাজ করতে স্পষ্টভাবে দেখেছি, যেমনভাবে শলাকা সুরমাদানীর ভেতর প্রবেশ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তাওরাত ইত্যাদি চেয়ে পাঠানো এবং তাদের আলেমদেরকে ডেকে পাঠাননা তাদেরকে দোষারোপ করার উদ্দেশ্যে ছিল না এবং উদ্দেশ্য এটাও ছিল না যে, তারা ওটা মানবার মুকাল্লাফই নয়, বরং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নির্দেশই অবশ্য পালনীয়। এটা দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল প্রথমতঃ তাঁর সত্যতা প্রকাশ। তা এই যে, তাওরাতেও যে এ নির্দেশই রয়েছে তা তিনি অহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। আর প্রকাশ পেলও তা-ই। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে লজ্জিত করা যে, তারা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তাদেরকে স্বীকার করতেই হলো এবং দুনিয়ায় এটা প্রকাশ পেয়ে গেলো যে, তারা আল্লাহর বিধানকে গোপনকারী এবং নিজেদের মত ও কিয়াসের উপর আমলকারী। তাছাড়া উদ্দেশ্য এও ছিল যে, ঐ ইয়াহূদীরা সরল মনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আসেনি যে, তাঁর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে। বরং তাদের আগমনের উদ্দেশ্য শুধু এই ছিল যে, যদি তিনিও তাদের ইজমা’ মোতাবেক নির্দেশ দেন তবে তারা মেনে নেবে, নচেৎ কিছুতেই মানবে না। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেন যে, তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান তার সুপথ প্রাপ্তি কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তাদের অপবিত্র অন্তরকে পবিত্র করার আল্লাহর ইচ্ছাই নেই। তারা দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে এবং পরকালেও তাদের জন্যে রয়েছে ভীষণ শাস্তি।বলা হচ্ছে-তারা মিথ্যা কথা কান লাগিয়ে শুনতে এবং হারাম বস্তু অর্থাৎ সুদ খেতে অভ্যস্ত। সুতরাং কিরূপে তাদের অপবিত্র অন্তর পবিত্র হবে? আর তাদের দুআই বা আল্লাহ কি করে শুনবেন? হে নবী ( সঃ )! যদি তারা তোমার কাছে মীমাংসার জন্যে আসে তবে তাদের ফায়সালা করা না করার তোমার অধিকার রয়েছে। তুমি যদি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তথাপি তারা তোমার কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। কেননা, তাদের উদ্দেশ্য সত্যের অনুসরণ নয়, বরং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ। কোন গুরুজন বলেন যে, এ আয়াতটি ( আরবী ) ( ৫:৪৯ )-এ আয়াতটি দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। এরপর ইরশাদ হচ্ছে-হে নবী ( সঃ )! যদি তুমি তাদের মধ্যে মীমাংসা কর তবে ন্যায়ের সাথে মীমাংসা করো, যদিও এরা নিজেরা অত্যাচারী এবং আদল ও ইনসাফ থেকে বহু দূরে রয়েছে। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা'আলা ন্যায় বিচারকদেরকে ভালবাসেন। অতঃপর ইয়াহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতা, অন্তরের কলুষতা এবং বিরুদ্ধাচরণের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, একদিকে তো তারা আল্লাহ পাকের এ কিতাবকে ছেড়ে দিয়েছে যার আনুগত্য স্বীকার ও সত্যতার কথা তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে। দ্বিতীয়তঃ তারা ঐ দিকে ঝুঁকে পড়েছে যাকে তারা নিজেরাও মানে না এবং ওটাকে মিথ্যা বলে ছড়িয়ে দিয়েছে। আবার সেখানেও তাদের নিয়ত ভাল নয়। কারণ তাদের উদ্দেশ্য এই যে, যদি সেখানে গিয়ে তাদের ইচ্ছা মোতাবেক হুকুম পায় তবে তো তা মেনে নেবে, নতুবা ছেড়ে দেবে। তাই, আল্লাহ তা'আলা নবী ( সঃ )-কে বলেনঃ তারা কি করে তোমার হুকুম মানতে পারে? তারা তো তাওরাতকেও ছেড়ে দিয়েছে। তাতে আল্লাহর হুকুম রয়েছে, এটা তো তারাও স্বীকার করেছে, অথচ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।তারপর এ তাওরাতের প্রশংসা করা হচ্ছে যা তিনি স্বীয় মনোনীত রাসূল হযরত মূসা ( আঃ )-এর উপর অবতীর্ণ করেছিলেন। এর মধ্যে হিদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর হুকুমবাহী নবীগণ ওর মাধ্যমেই ফায়সালা করে থাকেন এবং ইয়াহূদীদের মধ্যে ওরই আহকাম জারী করেন। তারা ওর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন থেকে বেঁচে থাকেন এবং আল্লাহওয়ালা লোকেরাও এ নীতির উপর থাকেন। কেননা, এ পবিত্র গ্রন্থ তাঁদেরকে সমর্পণ করা হয়েছিল এবং ওটা প্রকাশ করে দেয়া ও ওর উপর আমল করার তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা ওর উপর সাক্ষী ছিলেন। ঘঘাষিত হচ্ছে-এখন তোমাদের উচিত যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করবে না। তোমরা প্রতি মূহূর্তে এবং পদে পদে আল্লাহকে ভয় করতে থাকবে এবং তাঁর আয়াতগুলোকে সামান্য মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি করবে না। জেনে রেখো যে, আল্লাহর নাযিলকৃত অহী মোতাবেক যারা ফায়সালা করে না তারা কাফির। এতে দু'টি উক্তি রয়েছে, যা ইনশাআল্লাহ এখনই বর্ণিত হচ্ছে। এ আয়াতগুলোর আরও একটি শানে নমূল নিম্নরূপঃহযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতে এ লোকদেরকে কাফির, দ্বিতীয় আয়াতে যালিম এবং তৃতীয় আয়াতে ফাসিক বলা হয়েছে। ব্যাপার এই যে, ইয়াহূদীদের দু'টি দল ছিল। একটি বানূ নাযীর এবং অপরটি বানূ কুরাইযা। প্রথমটি ছিল সবল এবং দ্বিতীটি ছিল দুর্বল। তাদের পরস্পরের মধ্যে এ কথার উপর সন্ধি হয়েছিল যে, সবল দলটির কোন লোক যদি দুর্বল দলটির কোন লোককে হত্যা করে তবে তাকে পঞ্চাশ ওয়াসাক রক্তপণ দিতে হবে। পক্ষান্তরে যদি দুর্বল দলটির কোন লোক সবল দলটির কোন লোককে হত্যা করে তবে তাকে একশ ওয়াসাক রক্তপণ আদায় করতে হবে। এ প্রথাই তাদের মধ্যে চলে আসছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মদীনায় আগমনের পর এরূপ এক ঘটনা ঘটে যে, দুর্বল ইয়াহূদীদের এক ব্যক্তি সবল ইয়াহুদীদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। তখন এদের পক্ষ থেকে এক লোক ওদের কাছে গিয়ে বলে, এখন একশ’ ওয়াসাক আদায় কর।' তারা উত্তরে বলে, “ এটা তো প্রকাশ্যভাবে অন্যায় আচরণ । আমরা তো সবাই একই গোত্রের, একই ধর্মের, একই বংশের এবং একই শহরের লোক। অথচ আমরা রক্তপণ পাবো কম আর তোমরা পাবে বেশী! এতদিন পর্যন্ত তোমরা আমাদেরকে দাবিয়ে রেখেছিলে। আমরা বাধ্য ও অপরাগ হয়ে তোমাদের এ অন্যায় সহ্য করে আসছিলাম। কিন্তু এখন যেহেতু এখানে হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর ন্যায় একজন ন্যায়পরায়ণ লোক এসে গেছেন সেহেতু আমরা তোমাদেরকে সেই পরিমাণ রক্তপণই প্রদান করবো। যে পরিমাণ তোমরা আমাদেকে প্রদান করে থাক।” এ নিয়ে চতুর্দিকে গোলমান শুরু হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত পরস্পরের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এর মীমাংসাকারী নিযুক্ত করা হোক। কিন্তু সবল লোকেরা যখন নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করলো তখন তাদের কয়েকজন বুদ্ধিমান লোক তাদেরকে বললো, তোমরা এ আশা করো না যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অন্যায়ের আদেশ প্রদান করবেন। এটাতো স্পষ্ট বাড়াবাড়ি যে, আমরা দেবো অর্ধেক এবং নেবো পুরোপুরি! আর বাস্তবিকই এ লোকগুলো অপারগ হয়েই এটা মেনে নিয়েছিল। এক্ষণে যখন তোমরা হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-কে মীমাংসাকারী নির্বাচন করলে তখন অবশ্যই তোমাদের হক মারা যাবে। কেউ কেউ পরামর্শ দিলো, গোপনে কোন লোককে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পাঠিয়ে দাও। তিনি কি ফায়সালার করবেন তা সে জেনে আসুক। সেটা যদি আমাদের অনুকূলে হয় তবে তো ভাল কথা। আমরা তাদের নিকট থেকে আমাদের হক আদায় করে নেবো। আর যদি ওটা আমাদের প্রতিকূলে হয় তবে আমাদের পৃথক থাকাই বাঞ্ছণীয় হবে। এ পরামর্শ অনুযায়ী তারা মদীনার কয়েকজন মুনাফিককে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট প্রেরণ করলো। তারা তাঁর নিকট পৌছার পূর্বেই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ করে স্বীয় রাসূল ( সঃ )-কে তাদের কু-মতলব সম্পর্কে অবহিত করলেন। ( সুনানে আবি দাউদ )আর একটি বর্ণনায় আছে যে, বানূ নাযীর গোত্র পুরোপুরি রক্তপণ গ্রহণ করতো। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উভয় গোত্রকে রক্তপণ সমান সমান দেয়ার ফায়সালা করলেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, বানু কুরাইযার কোন লোক বানু নাযীরের কোন লোককে হত্যা করলে তার কিসাস নেয়া হতো। পক্ষান্তরে বান্ নাযীরের কোন লোক বানূ কুরাইযার কোন লোককে হত্যা করলে কিসাসের কোন ব্যবস্থাই ছিল না, বরং রক্তপণ ছিল একশ ওয়াসাক। এটা খুবই সম্ভব যে, এদিকে এ ঘটনা ঘটে এবং ঐদিকে ব্যভিচারের ঘটনা ঘটে যায়। আর দু'টো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। হ্যাঁ, তবে আরও একটি কথা রয়েছে, যদ্দ্বারা এ দ্বিতীয় শানে নফুলটির প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এরপরেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।( আরবী ) ( অর্থাৎ আর আমি তাদের প্রতি তাতে (তাওরাতে ) এটা ফরয করেছিলাম যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিমযে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাতের বিনিময়ে দাঁত এবং ( জ্রপ অন্যান্য ) বিশেষ যখমেরও বিনিময় রয়েছে; অনন্তর যে ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দেয় তবে এটা তার জন্যে ( পাপের ) কাফফারা হয়ে যাবে; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতারিত বিধান অনুযায়ী হুকুম না করে তবে তো এমন ব্যক্তি পূর্ণ যালিম।) আল্লাহ পাকই সবচেয়ে বেশী জানেন।অতঃপর যারা আল্লাহর শরীয়ত এবং তাঁর অবতারিত অহী অনুযায়ী ফায়সালা করে না তাদেরকে কাফির বলা হয়েছে। এ আয়াতটি মুফাসসিরদের উক্তি অনুযায়ী শানে নকূল হিসেবে আহলে কিতাবের ব্যাপারে অবতীর্ণ হলেও হুকুমের দিক দিয়ে এটা সমস্ত লোকের ব্যাপারেই প্রযোজ্য। এটা বানূ ইসরাঈলের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল বটে; কিন্তু এ উম্মতেরও এটাই হুকুম। ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) বলেন যে, ঘুষ খেয়ে কোন শরঈ মাসআলার ব্যাপারে উল্টো ফতওয়া দেয়া কুফরী। সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, যদি ইচ্ছাপূর্বক আল্লাহর অহীর বিপরীত ফতওয়া দেয়, জানা সত্ত্বেও তার উল্টো করে তবে সে কাফির। ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ফরমানকে অস্বীকার করবে তার হুকুম এটাই। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করলো না বটে, কিন্তু তা মোতাবেক বললো না, সে যালিম ও ফাসিক। সে আহলে কিতাবই হোক বা আর কেউ হোক। শাবী ( রঃ ) বলেন যে, মুসলমানদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের বিপরীত ফতওয়া দেবে সে কাফির, ইয়াহূদীদের মধ্যে দেবে সে যালিম এবং খ্রীষ্টানদের মধ্যে দেবে সে ফাসিক। ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, তার কুফরী হচ্ছে এ আয়াতের সঙ্গে। তাউস ( রাঃ ) বলেন যে, তার কুফরী ঐ ব্যক্তির কুফরীর মত নয় যে আল্লাহ, রাসূল ( সঃ ), কুরআন এবং ফেরেশতাদেরকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। আতা’ ( রঃ ) বলেন যে, কুফরীর মধ্যে যেমন কম বেশী আছে তেমনই যুলম ও ফিসকের মধ্যেও কম বেশী আছে। এ কুফরীর কারণে সে মিল্লাতে ইসলাম হতে বের হয়ে যাবে না। ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ তোমরা যে দিকে যাচ্ছ এর দ্বারা ঐ কুফরী উদ্দেশ্য নয় ।

সূরা মায়িদা আয়াত 44 সূরা

إنا أنـزلنا التوراة فيها هدى ونور يحكم بها النبيون الذين أسلموا للذين هادوا والربانيون والأحبار بما استحفظوا من كتاب الله وكانوا عليه شهداء فلا تخشوا الناس واخشون ولا تشتروا بآياتي ثمنا قليلا ومن لم يحكم بما أنـزل الله فأولئك هم الكافرون

سورة: المائدة - آية: ( 44 )  - جزء: ( 6 )  -  صفحة: ( 115 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. এখন কোন কথায় তারা এরপর বিশ্বাস স্থাপন করবে?
  2. তাদের কেউ কেউ আপনার দিকে কান লাগিয়ে থাকে। আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দিয়েছি
  3. অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন
  4. অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ
  5. অথচ এই কোরআন তো বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।
  6. তারা কি দেখে না, তাদের জন্যে আমি আমার নিজ হাতের তৈরী বস্তুর দ্বারা চতুস্পদ জন্তু
  7. তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল হায়, আমার সম্প্রদায় যদি কোন ক্রমে জানতে
  8. আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পন
  9. শুধুমাত্র তাদের ছাড়া যারা জাহান্নামে পৌছাবে।
  10. আর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সূরা তোমাদের মধ্যেকার

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা মায়িদা ডাউনলোড করুন:

সূরা Maidah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Maidah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত মায়িদা  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত মায়িদা  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত মায়িদা  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত মায়িদা  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত মায়িদা  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত মায়িদা  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত মায়িদা  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত মায়িদা  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত মায়িদা  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত মায়িদা  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত মায়িদা  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত মায়িদা  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত মায়িদা  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত মায়িদা  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত মায়িদা  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত মায়িদা  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত মায়িদা  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত মায়িদা  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত মায়িদা  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত মায়িদা  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত মায়িদা  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Saturday, May 18, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب