কোরান সূরা ক্বাফ আয়াত 45 তাফসীর
﴿نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ ۖ وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِجَبَّارٍ ۖ فَذَكِّرْ بِالْقُرْآنِ مَن يَخَافُ وَعِيدِ﴾
[ ق: 45]
তারা যা বলে, তা আমি সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের উপর জোরজবরকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন। [সূরা ক্বাফ: 45]
Surah Qaf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Qaf ayat 45
ওরা যা বলে আমরা তা ভাল জানি, আর তুমি তাদের উপরে জবরদস্তি করার লোক নও। অতএব তুমি কুরআন নিয়ে স্মরণ করিয়ে চলো তার প্রতি যে আমার প্রতিশ্রুতিকে ভয় করে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪৫. আমি এ সব মিথ্যারোপকারীর কথা অধিক জানি। আর হে রাসূল! আপনি তাদের উপর দারোগা নন। যার ভিত্তিতে আপনি তাদেরকে ঈমান আনতে বাধ্য করবেন। বরং আপনি তো কেবল আল্লাহ যে বিষয় প্রচার করতে নির্দেশ প্রদান করেন তা পৌঁছোনোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। অতএব, আপনি কুরআনের মাধ্যমে কাফির ও পাপীদের মধ্যে তাকে ভীতি প্রদর্শন করুন যে আমার শাস্তিকে ভয় পায়। কেননা, কেবল ভীতজনই উপদেশ গ্রহণের জন্য বললে সে তা গ্রহণ করে এবং স্মরণ করিয়ে দিলে সে তা স্মরণ করে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তারা যা বলে, তা আমি খুব জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও;[১] সুতরাং যে আমার শাস্তির প্রতিশ্রুতিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দান কর। [২] [১] অর্থাৎ, তোমার এ দায়িত্ব নয় যে, তাদেরকে ঈমান আনতে বাধ্য করবে। বরং তোমার কাজ কেবল দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। অতএব, এ কাজ করতে থাক। [২] অর্থাৎ, নবী করীম ( সাঃ )-এর দাওয়াত ও উপদেশ থেকে কেবল সে-ই নসীহত গ্রহণ করবে, যে আল্লাহকে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে ও তাঁর দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রাখে। এই জন্যই ক্বাতাদা ( রঃ ) এই দু'আটি পাঠ করতেন, ( (اَللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِمَّنْ يَخَافُ وَعِيْدَكَ، وَيَرْجُوْ مَوْعُوْدَكَ، يَا بَارُّ يَا رَحِيْمُ )) " হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর, যারা তোমার শাস্তিকে ভয় করে এবং তোমার প্রতিশ্রুত বস্তুর আশা রাখে। হে অনুগ্রহকারী, হে দয়াময়! "
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তারা যা বলে তা আমরা ভাল জানি, আর আপনি তাদের উপর জবরদস্তি কারী নন, কাজেই যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান করুন কুরআনের সাহায্যে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৪১-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত কা'ব আহবার ( রাঃ ) বলেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা একজন ফেরেশতাকে বায়তুল মুকাদ্দাসে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে একথা বলার নির্দেশ দিবেনঃ “ সড়া-গলা অস্থিসমূহ এবং হে দেহের বিচ্ছিন্ন অংশসমূহ! আল্লাহ তোমাদেরকে একত্রিত হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন । তোমাদের মধ্যে তিনি ফায়সালা করবেন।” সুতরাং এর দ্বারা সূর বা শিংগাকে বুঝানো হয়েছে। এই সত্য ঐ সন্দেহ ও মতভেদকে দূর করে দিবে যা ইতিপূর্বে ছিল। এটা হবে কবর হতে বের হয়ে যাওয়ার দিন।মহান আল্লাহ বলেনঃ প্রথমে সৃষ্টি করা, তারপর ফিরিয়ে আনা এবং সমস্ত মাখলুককে এক জায়গায় একত্রিত করার ক্ষমতা আমার রয়েছে। ঐ সময় প্রত্যেককে আমি তার আমলের প্রতিদান প্রদান করবে। প্রত্যেকে তার ভাল-মন্দের প্রতিফল পেয়ে যাবে। যমীন ফেটে যাবে। সবাই তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যার ফলে মাখলুকের দেহ অংকুরিত হতে শুরু করবে, যেমন কাদায় পড়ে থাকা শস্য বৃষ্টি বর্ষণের ফলে অংকুরিত হয়। যখন দেহ পূর্ণরূপে গঠিত হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তা'আলা হযরত ইসরাফীল ( আঃ )-কে শিংগায় ফুৎকার দেয়ার হুকুম করবেন। সমস্ত রূহ শিংগার ছিদ্রে থাকবে। হযরত ইসরাফীল ( আঃ )-এর শিংগায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে রূহগুলো আসমান ও যমীনের মাঝে ফিরতে শুরু করবে। ঐ সময় মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “ আমার ইযযত ও মর্যাদার কসম! অবশ্যই প্রত্যেক রূহ নিজ নিজ দেহের মধ্যে চলে যাবে । যাকে সে দুনিয়ায় আবাদ করে রেখেছিল।” তখন প্রত্যেক রূহ নিজ নিজ দেহে চলে যাবে এবং যেভাবে বিষাক্ত জন্তুর বিষক্রিয়া চতুষ্পদ জন্তুর শিরায় শিরায় অতি তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় সেই ভাবে ঐ দেহের শিরা উপশিরায় অতিসত্বর রূহ চলে যাবে। আর সমস্ত মাখলুক আল্লাহর ফরমান অনুযায়ী দৌড়তে দৌড়তে অতি তাড়াতাড়ি হাশরের মাঠে হাযির হয়ে যাবে। এই সময়টি হবে কাফিরদের উপর অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাক দিবেন তখন তোমরা তাঁর প্রশংসাসহ তার আহ্বানে সাড়া দিবে এবং তোমরা ধারণা করবে যে, তোমরা খুব অল্পই বসবাস করেছো ।” ( ১৭:৫২ )।হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ সর্বপ্রথম আমার কবরের যমীন ফেটে যাবে ।”আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ এই সমবেত সমাবেশকরণ আমার জন্যে সহজ । যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমার হুকুম একবার ছাড়া নয়, চক্ষু অবনত হওয়ার মত ।” ( ৫৪:৫০ ) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করা এবং মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করা একটি প্রাণকে মেরে পুনর্জীবিত করার মতই ( অতি সহজ ), নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী ।” ( ৩১:২৮ )।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘তারা যা বলে তা আমি জানি ( এতে তুমি মন খারাপ করো না )। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ ( হে নবী সঃ )! অবশ্যই আমি জানি যে, তারা যা বলছে এতে তোমার মন সংকীর্ণ হচ্ছে । ( কিন্তু তুমি সংকীর্ণমনা হয়ে না বা মন খারাপ করো না, বরং ) তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং সিজদাকারীদের অর্থাৎ নামাযীদের অন্তর্ভুক্ত হও। আর তোমার পতিপালকের ইবাদতে লেগে থাকো যে পর্যন্ত না তোমার মৃত্যু হয়। ( ১৫:৯৭-৯৯ )এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও’ অর্থাৎ তুমি তাদেরকে জোরপূর্বক হিদায়াতের উপর আনতে পার না এবং এরূপ করতে আদিষ্টও নও । এও অর্থ হয়ঃ তুমি তাদের উপর জোর-জবরদস্তি করো না। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই উত্তম। কেননা, শব্দে ‘তুমি তাদের উপর জোর-জবরদস্তি করো না এরূপ নেই। বরং আছে- তুমি তাদের উপর জাব্বার নও। অর্থাৎ “ হে নবী! তুমি শুধু তাবলীগ করেই তোমার কর্তব্য সমাপ্ত কর । ( আরবী ) শব্দটি ( আরবী ) শব্দের অর্থেও এসে থাকে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “ যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে তুমি উপদেশ দান কর কুরআনের সাহায্যে । অর্থাৎ যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, তার শাস্তিকে যে ভয় করে এবং তাঁর রহমতের আশা করে, তাকে তুমি কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দাও। এতে সে অবশ্যই উপকৃত হবে এবং সঠিক পথে চলে আসবে। যেমন আল্লাহ পাক অন্য আয়াতে বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমার দয়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেয়া এবং হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আমার ।” ( ১৩:৪০ ) আর এক জায়গায় আছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ অতএব তুমি উপদেশ দাও, তুমি তো একজন উপদেশদাতা । তুমি তাদের কর্মনিয়ন্ত্রক নও।” ( ৮৮:২১-২২ )।অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তাদেরকে হিদায়াত করা তোমার দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহ যাকে চান হিদায়াত দান করে থাকেন ।” ( ২:২৭২ ) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দান করতে পার না, বরং আল্লাহ যাকে চান হিদায়াত দান করে থাকেন ।” ( ২৮:৫৬ ) এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা এখানে বলেনঃ “ তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও, সুতরাং যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে তুমি উপদেশ দান কর কুরআনের সাহায্যে ।হযরত কাতাদা ( রঃ ) দু'আ করতেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! যারা আপনার শাস্তিকে ভয় করে এবং আপনার নিয়ামতের আশা রাখে, আমাদেরকে আপনি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করুন! হে অনুগ্রহশীল, হে করুণাময়!”
সূরা ক্বাফ আয়াত 45 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- ফেরাউন বললঃ আমার অনুমতি দানের পূর্বেই? তোমরা কি তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে; দেখছি সেই
- অতঃপর সে ভ্রূকুঞ্চিত করেছে ও মুখ বিকৃত করেছে,
- অতঃপর কেমন কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী।
- কাফেররা বলেই থাকে,
- মনে রেখো নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা আছে, তা আল্লাহরই। তোমরা যে অবস্থায় আছ তা তিনি
- আর হে আমার জাতি! আল্লাহর এ উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর যমীনে বিচরণ
- অতঃপর আমি তাদের পশ্চাতে প্রেরণ করেছি আমার রসূলগণকে এবং তাদের অনুগামী করেছি মরিয়ম তনয় ঈসাকে
- লূত (আঃ) বললেন-হায়, তোমাদের বিরুদ্ধে যদি আমার শক্তি থাকত অথবা আমি কোন সূদৃঢ় আশ্রয় গ্রহণ
- তোমরা তোমাদের ধ্বংস স্তুপের উপর দিয়ে গমন কর ভোর বেলায়
- আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ক্বাফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Qaf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Qaf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers