কোরান সূরা মায়িদা আয়াত 5 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Maidah ayat 5 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা মায়িদা আয়াত 5 আরবি পাঠে(Maidah).
  
   

﴿الْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ ۖ وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْ ۖ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾
[ المائدة: 5]

আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হল। আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয় অবিশ্বাস করে, তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা মায়িদা: 5]

Surah Al-Maidah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Maidah ayat 5


আজ ভালো বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হলো। আর যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল, এবং তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিনদের মধ্যের সতী-সাধ্বী নারী, আর তোমাদের আগে যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যের সতী-সাধ্বী নারীও, যখন তোমরা তাদের মহরানা আদায় করেছ, সচ্চরিত্রভাবে, ব্যভিচারের জন্য নয় ও রক্ষিতারূপে গ্রহণ করেও নয়। আর যে কেউ ঈমান অস্বীকার করে সে তাহলে তার আচরণ ব্যর্থ করেছে, আর সে পরকালে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যেকার।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৫. আজ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সুস্বাদু পবিত্র খাবার এবং আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জবাইকৃত পশু হালাল করেছেন। উপরন্তু তোমাদের জবাইকৃত পশুও তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তেমনিভাবে তোমাদের জন্য সতী-স্বাধীন মু’মিন নারী এবং পূর্বের কিতাবী তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নারীদেরকেও বিবাহ করা হালাল করা হয়েছে। যদি তোমরা তাদের মোহরানা দিয়ে দাও এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া থেকে সৎ থাকো। উপরন্তু তাদের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য তাদেরকে গোপন সঙ্গিনী বা প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ না করো। আল্লাহর বান্দাদের জন্য রচিত বিধানাবলীর সাথে কুফরিকারীর আমলসমূহ বাতিল হয়ে যায়। কারণ, তার মাঝে আমল কবুল হওয়ার শর্তটুকু তথা ঈমানই পাওয়া যায় না। উপরন্তু সে কিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশ করে সেখানে অনন্ত কাল থাকবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আজ তোমাদের জন্য সমস্ত ভাল জিনিস বৈধ করা হল, যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের ( যবেহকৃত ) খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য বৈধ[১] ও তোমাদের ( যবেহকৃত ) খাদ্যদ্রব্য তাদের জন্য বৈধ এবং বিশ্বাসী সচ্চরিত্রা নারীগণ ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীগণ ( তোমাদের জন্য বৈধ করা হল );[২] যদি তোমরা তাদেরকে মোহর প্রদান করে বিবাহ কর, প্রকাশ্য ব্যভিচার অথবা উপপত্নীরূপে গ্রহণ করার জন্য নয়। আর যে কেউ ঈমানকে অস্বীকার করবে তার কর্ম নিষ্ফল এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [১] আহলে কিতাবদের যবেহকৃত সেই পশু হালাল বা বৈধ যার রক্ত প্রবাহিত করা হয়েছে। অন্যথা তাদের মেশিন দ্বারা যবেহকৃত পশু হালাল নয়। কেননা তাতে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার যে শর্ত রয়েছে তা বিলুপ্ত। [২] এখানে আহলে কিতাবদের ( ঈয়াহুদী ও খ্রিষ্টান ) মহিলাকে বিবাহ করার অনুমতি দেওয়ার সাথে সাথে প্রথমতঃ এই শর্ত লাগানো হয়েছে যে, তাকে পবিত্রা ( সতী ) হতে হবে; যে শর্ত আজকাল অধিকাংশ আহলে কিতাবদের মহিলাদের মধ্যে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়তঃ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে, যারা ঈমানের সাথে কুফরী ( অস্বীকার ) করে, তাদের আমল নষ্ট হয়ে যায়। এখানে সতর্ক করা উদ্দেশ্য যে, এমন মহিলাকে বিবাহ করার ফলে যদি ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে খুবই ক্ষতির ( সম্পদ ) ক্রয় করা হবে। বর্তমানে আহলে কিতাবদের মহিলাদের বিবাহ করার ফলে ঈমান যে চরমতম ক্ষতির শিকার হবে, তা বর্ণনা করার অপেক্ষা রাখে না। অথচ ঈমান বাঁচানো ফরয কর্তব্য। একটি অনুমতিপ্রাপ্ত কর্মের জন্য ফরয কর্মকে বিপদ ও ক্ষতির সম্মুখীন করা যেতে পারে না। কেননা এই অনুমতিপ্রাপ্ত কর্মটি ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মে বাস্তবায়ন করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত উপরে উল্লিখিত দু'টি জিনিস ( অসতীত্ব ও ঈমানের সাথে কুফরী ) বিলুপ্ত না হয়েছে। এ ছাড়া অধুনা কালের আহলে কিতাবরা তাদের ধর্মীয় ব্যাপারে অসচেতন; বরং সম্পর্কহীন ও বিদ্রোহী। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা কি আসলেই আহলে কিতাবের মধ্যে গণ্য হবে? ( আল্লাহই ভালো জানেন। )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আজ [] তোমাদের জন্য সমস্ত ভাল জিনিস হালাল করা হল [] ও যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে [] তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যদ্রব্য তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা [] নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল [] যদি তোমরা তাদের মাহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর কেউ ঈমানের সাথে কুফরী করলে তার কর্ম অবশ্যই নিস্ফল হবে এবং সে আখেরাতে ক্ষীতগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে []। [] এখানে ‘আজ’ বলে এ দিনকে বোঝানো হয়েছে, যেদিন এ আয়াত ও এর পূর্ববর্তী আয়াত নাযিল হয়। অর্থাৎ দশম হিজরীর বিদায় হজ্জের আরাফার দিন। উদ্দেশ্য এই যে, আজ যেমন তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত পূর্ণতা লাভ করেছে, তেমনি আল্লাহ তা’আলার পবিত্র বস্তুসমূহ, যা পূর্বেও তোমাদের জন্যে হালাল ছিল, চিরস্থায়ীভাবে হালাল রাখা হল। [ কুরতুবী ] [] এ আয়াতে ( طيبات ) অর্থাৎ পবিত্র ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বস্তু হালাল হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ( وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَـبٰىِٕثَ ) অর্থাৎ আল্লাহ হালাল করেন তাদের জন্যে ( طيبات ) এবং হারাম করেন ( خَـبٰىِٕثَ ) [ সূরা আল-আরাফ: ১৫৭ ] এখানে ( طيبات ) এর বিপরীতে ( خَـبٰىِٕثَ ) ব্যবহার করে উভয় শব্দের মর্মার্থ বর্ণনা করা হয়েছে। অভিধানে ( طيبات ) পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাম্য বস্তুসমূহকে এবং এর বিপরীতে ( خَـبٰىِٕثَ ) নোংরা ও ঘৃণাৰ্হ বস্তুসমূহকে বলা হয়। [ জালালাইন ] কাজেই আয়াতের এ বাক্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, যেসব বস্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, উপাদেয় ও পবিত্র, সেগুলো মানুষের জন্যে হালাল করা হয়েছে এবং যেসব বস্তু নোংরা, ঘৃণা ও অপকারী, সেগুলো হারাম করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যাপারে নবীদের সিদ্ধান্ত সবার জন্যে অকাট্য দলীলস্বরূপ। কেননা, মানুষের মধ্যে নবীগণই সবাধিক সুস্থ স্বভাবসম্পন্ন। কোন কোন মুফাসসির এখানে ( طيبات ) এর অর্থ আল্লাহর নামে যবাইকৃত হালাল প্রাণী অর্থ করেছেন। [ বাগভী ] [] এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, আহলে কিতাব হওয়ার জন্য যে কিতাবটির অনুসারী বলে তারা দাবী করে, সে কিতাবটি আল্লাহ্ তা’আলার নাযিল করা কিতাব কি না তা প্রমাণিত হতে হবে। সাথে সাথে স্বীয় কিতাবের প্রতি বিশুদ্ধ ঈমান থাকা এবং আমল করাও জরুরী। যেমন, তাওরাত, ইঞ্জল, যবুর, মূসা ও ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের সহীফা ইত্যাদি। আর যাদের গ্রন্থ আল্লাহর কিতাব বলে কুরআন ও সুন্নাহর নিশ্চিত পন্থায় প্রমাণিত নয়, তারা আহলে কিতাবদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। মূলতঃ কুরআনের পরিভাষায় ইহুদী ও নাসারা জাতিই আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। যারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের প্রতি বিশ্বাসী। [ ইবন কাসীর ] [] এখানে ইয়াহুদী ও নাসারা মহিলাদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তা হলো, তাদেরকে অবশ্যই ‘মুহসানাহ’ বা সংরক্ষিত মহিলা হতে হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে যারা সংরক্ষিত বা নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারিনী নয়, তারা এর ব্যতিক্রম। [ সা’দী ] [] আয়াতে আহলে কিতাবদের খাদ্য বলা হয়েছে। সর্বপ্রকার খাদ্যই এর অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগনের মতে ‘খাদ্য’ বলতে যবেহ করা জন্তুকে বোঝানো হয়েছে। [ ইবন কাসীর ] কেননা, অন্য প্রকার খাদ্যবস্তুতে আহলে-কিতাব, পৌত্তলিক, মুশরেক সবাই সমান। রুটি, আটা, চাল, ডাল ইত্যাদিতে যবেহ্ করার প্রয়োজন নেই। এগুলো যে কোন লোকের কাছ থেকে যে কোন বৈধ পন্থায় অর্জিত হলে মুসলিমের জন্যে খাওয়া হালাল। [ সা’দী ] অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদের মতে, কাফেরদের মধ্য থেকে আহলে কিতাব ইয়াহুদী ও নাসারাদের যবেহ করা জন্তু হালাল হওয়ার কারণ হচ্ছে, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জন্তু যবেহ করাকে তারাও বিশ্বাসগতভাবে জরুরী মনে করে। এ ছাড়া মৃত জন্তুকেও তার হারাম মনে করে। [ ইবন কাসীর ] [] ঈমানের সাথে কুফরী করার অর্থ, ইসলামী শরীআতের সাথে কুফরী করলো শরীআতের বিধি-বিধান মানতে অস্বীকার করল, তার সমস্ত আমল পণ্ড হয়ে যাবে। [ ফাতহুল কাদীর, মুয়াচ্ছার, সাদী ] যারাই এভাবে আল্লাহ ও তার দেয়া শরীআতের সাথে কুফরী করে সে অবস্থায় মারা যাবে। সে ঈমান অবস্থায় করা যাবতীয় আমল ধ্বংস করে ফেলবে। আখেরাতে সে কিছুরই মালিক থাকবে না। আলেমগণ এ আয়াত থেকে দলীল নিয়েছেন যে, যারাই মুর্তাদ হবে এবং সে অবস্থায় মারা যাবে, তাদের সমস্ত আমল পণ্ড হয়ে যাবে। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন, “ আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের হয়ে মারা যাবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের আমলসমূহ নিস্ফল হয়ে যাবে । আর এরাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে”। [ সূরা আল-বাকারাহ: ২১৭ ] [ সা’দী ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


হালাল ও হারামের বর্ণনা দেয়ার পর এটাকে পরিষ্কার রূপে বর্ণনা করার জন্যে আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, সমুদয় পবিত্র বস্তু হালাল। তারপর তিনি ইয়াহূদ ও নাসারাদের যবেহকৃত জীবগুলোর বৈধতার বর্ণনা দিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), আবূ উমামাহ ( রঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), সাঈদ ইবনে যুবাইর ( রঃ ), ইকরামা ( রঃ ), আতা’ ( রঃ ), হাসান বসরী ( রঃ ), মাকহ্ল ( রঃ ), ইবরাহীম নাখঈ ( রঃ ), সুদ্দী ( রঃ ), মুকাতিল ( রঃ ) এবং ইবনে হাইয়ানও ( রঃ ) একথাই বলেন যে, এখানে এর ভাবার্থ হচ্ছে তাদের স্বহস্তে যবেহকৃত জানোয়ার। এটা খাওয়া মুসলমানদের জন্যে হালাল। কেননা, তারাও গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করাকে নাজায়েয মনে করে এবং যবেহ করার সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেয় না। যদিও আল্লাহ সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস সম্পূর্ণরূপে অমূলক, যা থেকে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা পবিত্র ও বহু। ঊর্ধ্বে। সহীহ হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমি চর্বি ভর্তি একটি মশক প্রাপ্ত হই। আমি ওটাকে নিজের অধিকারে নিয়ে নিই এবং বলি, আজ আমি কাউকেও এর অংশ দেবো না। তারপর এদিক ওদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। হঠাৎ দেখি যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং মুচকি হাসছেন। এ হাদীসটি দ্বারা এ দলীলও গ্রহণ করা হয়েছে সে, গনীমতের মধ্য হতে পানাহারের কোন প্রয়োজনীয় জিনিস বন্টনের পূর্বেও নিয়ে নেয়া জায়েয। এ দলীল এ হাদীসের দ্বারা পরিষ্কার রূপে প্রকাশ পেয়েছে। তিন মাযহাবের ফকীহগণ মালেকীদের সামনে এ সনদ পেশ করে বলেছেনঃ তোমরা যে বলে থাক, আহলে কিতাবের নিকট যে খাদ্য হালাল সেই খাদ্য আমাদের নিকটও হালাল- এটা ভুল। দেখো, ইয়াহূদীরা চর্বিকে তাদের জন্যে হারাম মনে করে থাকে, অথচ মুসলমান ওটা গ্রহণ করছে। কিন্তু তাদের এ কথা বলা ঠিক নয়। কেননা, ওটা ছিল একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাছাড়া এটাও হতে পারে যে, ওটা ছিল এমন চর্বি যা ইয়াহূদীরাও তাদের জন্যে হালাল মনে করে থাকে। অর্থাৎ পিঠের চর্বি, নাড়ি সংলগ্ন চর্বি এবং হাড়ের সাথে লেগে থাকা চর্বি। এর চেয়ে আরও বেশী প্রমাণযুক্ত ঐ দলীলটি যাতে রয়েছে যে, খায়বারবাসী সদ্য ভাজা একটি ছাগী রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে উপঢৌকন দিয়েছিল যার একটি কাঁধে তারা বিষ মিশ্রিত করেছিল। কেননা, তাদের জানা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কাদের গোশত পছন্দ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ঐ গোশত মুখে দিয়ে দাঁত দ্বারা কাটা মাত্রই আল্লাহর নির্দেশক্রমে ঐ কাঁধ বলে উঠলোঃ “ আমাতে বিষ মিশ্রিত রয়েছে । তিনি তৎক্ষণাৎ ওটা থুথু করে ফেলে দিলেন। ওর ক্রিয়া তাঁর সামনের দাঁতে রয়েও গেল। আহারে তার সাথে হযরত বাসার ইবনে মারূরও ( রাঃ ) ছিলেন। ঐ বিষক্রিয়াতেই তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হলেন। এর প্রতিশোধ হিসেবে বিষ মিশ্রিতকারিণী মহিলাটিকেও হত্যা করা হলো, যার নাম ছিল যয়নব। এটা প্রমাণরূপে স্বীকৃত হওয়ার কারণ এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বয়ং সঙ্গীগণসহ ঐ গোশত ভক্ষণের দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন এবং তারা যে চর্বিকে হারাম মনে করতো তা তারা বের করে ফেলেছে কি-না সেটাও তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন না। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, একজন ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে দাওয়াত দেয় এবং তার সামনে যবের রুটি এবং পুরাতন শুষ্ক চর্বি হাযির করে। হযরত মাকহুল ( রঃ ) বলেন যে, যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া না হবে এটা খাওয়া হারাম করার পর আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদের উপর দয়া পরবশ হয়ে তা মানসূখ বা রহিত করতঃ আহলে কিতাবের যবেহকৃত জন্তু তাদের জন্যে হালাল করে দেন। এটা স্মরণ রাখা দরকার যে, আহূলে কিতাবের যবেহকৃত জন্তু তাদের জন্যে হালাল করার দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয় না যে, যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম নেয়া হবে না সেটাও হালাল হবে। কেননা, তাদের মধ্যে মুশরিকও ছিল, যারা যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিতো না, এমনকি তাদের গোশত ভক্ষণ যবেহর উপরই নির্ভরশীল ছিল না। বরং তারা মৃত জন্তুরও গোশত ভক্ষণ করতো। কিন্তু আহলে কিতাব এদের বিপরীত এবং এদের মত আরও কয়েকটি সম্প্রদায় রয়েছে। যেমন সামেরাহ, সায়েবাহ এবং ইবরাহীম ( আঃ ) ও শীষ ( আঃ ) প্রমুখ গয়গম্বরদের ধর্মের দাবীদার। যেমন আলেমদের দু’টি উক্তির মধ্যে একটি উক্তি রয়েছে। আর আরবের খ্রীষ্টান যেমন বানূ তাগলিব, তানূখ, বাহরা, জুযাম, লাখম, আমেলা এবং তাদের ন্যায় আরও। জমহুরের মতে এদের হাতে যবেহকত জানোয়ারের গোশত খাওয়া চলবে না। হযরত আলী ( রাঃ ) বলেনঃ “ তোমরা বা তাগলিবের হাতে যবেহকৃত জানোয়ারের গোশত ভক্ষণ করো না । কেননা, তারা তো শুধুমাত্র মদ্যপান ছাড়া খ্রীষ্টানদের নিকট হতে আর কিছুই গ্রহণ করেনি।”তবে সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব ( রঃ ) এবং হাসান বসরী ( রঃ )-এর মতে বান্ তাগলিবের খ্রীষ্টানদের হাতে যবেহকৃত জন্তুর গোশত ভক্ষণে কোন দোষ নেই। এখন বাকি থাকলো মাজুসীদের ব্যাপারটা, তাদেরকে খ্রীষ্টানদের সাথে মিলিয়ে দিয়ে তাদের অনুগামী করতঃ তাদের নিকট জিযিয়া আদায় করা হলেও তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করা এবং তাদের যবেহকৃত জীবের গোশত ভক্ষণ করা জায়েয নয়। হ্যাঁ, তবে ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ )-এর সঙ্গী সাথীদের অনুসারী আবু সউর ইবরাহীম ইবনে খালিদ কালবী এর বিপরীত মত পোষণ করেন। যখন তিনি এ কথা বলেন এবং জনগণের মধ্যে এটা ছড়িয়ে পড়ে তখন ফকীহগণ এ কথার ভীষণভাবে প্রতিবাদ করেন। এমনকি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ ) তো একথাও বলে ফেলেন যে, এ মাসআলায় তিনি নিজের নামের মতই বটে অর্থাৎ বলদের পিতা। আবু সাউর একটি সাধারণ হাদীসকে সামনে রেখে একথা বলে দিয়েছেন যে, হাদীসে রয়েছেঃ “ তোমরা মাজুসীদের সাথে আহলে কিতাবের ন্যায় ব্যবহার কর ।” কিন্তু প্রথমতঃ এ বর্ণনা তো এ শব্দগুলো দ্বারা সাব্যস্তই নয়। দ্বিতীয়তঃ এ বর্ণনাটি মুরসাল'। হ্যাঁ, তবে সহীহ বুখারীতে শুধু এটুকু তো অবশ্যই রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হিজরের মাজুসীদের নিকট থেকে জিযিয়া গ্রহণ করেছিলেন। এসব ছাড়া আমরা বলি যে, আবু সাউরের পেশকৃত হাদীসকে যদি আমরা মেনেও নেই তথাপি আমরা বলতে পারি যে, এর ‘উমুম' দ্বারাও এ আয়াতের মাফহূম-মুখালিফের দলীলের মাধ্যমে আহলে কিতাব ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যবেহকৃত জন্তু আমাদের জন্যে হারাম সাব্যস্ত হচ্ছে। এরপর বলা হচ্ছে-তোমাদের ( মুসলমানদের ) যবেহকৃত জীব তাদের ( আহলে কিতাবদের ) জন্যে হালাল। অর্থাৎ হে মুসলমানরা! তোমরা আহলে কিতাবদেরকে তোমাদের যবেহকৃত জীবের গোশত খাওয়াতে পার। এটা এ আমরের খবর নয় যে, তাদের ধর্মে তাদের জন্যে তোমাদের যবেহকৃত প্রাণী হালাল। হ্যা, তবে খুব বেশী বলা গেলে এটুকুই বলা যেতে পারেঃ এটা এ কথারই খবর হবে- তাদেরকেও তাদের কিতাবে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যে জীবকে আল্লাহর নামে যবেহ্ করা হয়েছে তা তারা খেতে পারে। এ ব্যাপারে এটা সাধারণ কথা যে, যবেহকারী তাদের ধর্মের অনুসারীই হোক বা অন্য কেউ হোক। কিন্তু প্রথম উক্তিটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশী সুন্দর অর্থাৎ তোমাদের জন্যে অনুমতি রয়েছে যে, তোমরা আহ্লে কিতাবদেরকে তোমাদের যবেহকৃত জন্তুর গোশত ভক্ষণ করাও, যেমন তোমরা তাদের যবেহকৃত জন্তুর গোশত খেতে পার। এটা যেন অদল বদলের হিসেবে বলা হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালকে নিজের বিশেষ জামা দ্বারা কাফন পরিয়েছিলেন। কোন কোন গুরুজন যার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর চাচা হযরত আব্বাস ( রাঃ ) যখন মদীনায় আগমন করেন তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাকে নিজের জামাটি প্রদান করেছিল। তাই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর বিনিময়ে তার কাফনের জন্যে স্বীয় জামাটি প্রদান করেছিলেন। হ্যাঁ, তবে একটি হাদীসে রয়েছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা মুমিন ছাড়া আর কারও সাথে উঠা বসা করো না এবং মুত্তাকীদের ছাড়া আর কাউকেও নিজেদের খাদ্য খেতে দিও না ।" এ হাদীসটিকে এ অদল বদলের বিপরীত মনে করা ঠিক হবে না। কেননা, হতে পারে যে, মুস্তাহাব হিসেবে এ হুকুম দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। ঘোষিত হচ্ছে-সতী সাধ্বী মুসলিম নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে। এটা অবতরণিকা হিসেবে বলা হয়েছে। এ জন্যেই এর পরই বলা হচ্ছে-তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের সতী সাধ্বী নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্যে বৈধ করা হয়েছে। এ উক্তিও রয়েছে যে, ( আরবী ) -এর ভাবার্থ হচ্ছে স্বাধীনা নারীগণ। অর্থাৎ দাসী যেন না হয়। এ উক্তিটি হযরত মুজাহিদ ( রঃ )-এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত। মুজাহিদ ( রঃ )-এর উক্তির শব্দগুলো হচ্ছে নিম্নরূপঃ( আরবী ) -এর ভাবার্থ হচ্ছে ( আরবী ) বা স্বাধীনা নারীগণ। ভাবার্থ যখন এটা হবে যে, দাসীরা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তখন এ অর্থও নেয়া যেতে পারে যে, সতী সাধ্বী নারীগণকে বিয়ে করা হালাল। কেননা, তার থেকে এ শব্দগুলো দ্বারাই অন্য একটি বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে। জমহুরও এ কথা বলেন। আর এটাই সঠিকতমও বটে। এটা না হলে যিম্মীয়া এবং অসতী নারীও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। এর ফলে অবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিগড়ে যাবে এবং তার “ শুধু পেট ভর্তি ও খারাপ পরিমাপ”-এ প্রবাদ বাক্যের নায়কে পরিণত হবে । সুতরাং এটাই সঠিক মনে হচ্ছে যে, এখানে ( আরবী )-এর ভাবার্থ হবে ঐ সব নারী যারা সতী সাধ্বী ও ব্যভিচার থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। যেমন অন্য আয়াতে ( আরবী ) -এর সাথে ( আরবী ) শব্দগুলো রয়েছে। আলেম ও মুফাসৃসিরগণের মধ্যেএ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে, আহলে কিতাবদের স্বাধীন ও দাসী সকল সতী সাধ্বী নারীই কি এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত? তাফসীরে ইবনে জারীরের মধ্যে পূর্ববর্তী গুরুজনদের একটি দলের উক্তি নকল করা হয়েছে। তারা বলেন যে, -এর অর্থ হচ্ছে সতী সাধ্বী। একটি উক্তি এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে যিম্মীয়া নারীগণ, স্বাধীনা নারীগণ। নয়। এর দলীল হিসেবে। ( আরবী ) অর্থাৎ “ যারা আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর ।" ( ৯:২৯ )-এ আয়াতটি পেশ করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) খ্রীষ্টান নারীদেরকে বিয়ে করা নাজায়েয মনে করতেন এবং বলতেনঃ তারা বলে যে তাদের প্রভু হচ্ছে হযরত ঈসা ( আঃ ), এর চেয়ে বড় শিরক আর কি হতে পারে? আর তারা যখন মুশরিক রূপে পরিগণিত হলো তখন কুরআন কারীমের। ( আরবী ) ( অর্থাৎ “ মুশরিকা নারীগণ যে পর্যন্ত ঈমান না আনে সে পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না ।" (২৪ ২২১ )-এ আয়াতটি উপর অবশ্যই প্রযোজ্য হবে।ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন। যে, যখন মুশরিকদেরকে বিয়ে না করার হুকুম নাযিল হয় তখন সাহাবায়ে কিরাম তা থেকে বিরত থাকেন। অতঃপর যখন আহলে কিতাবের সতী সাধ্বীদেরকে বিয়ে করার অনুমতি যুক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন জনগণ তাদেরকে বিয়ে করেন। সাহাবীদের একটি দল এ আয়াতটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করতঃ খ্রীষ্টান নারীদেরকে বিয়ে করেন এবং এটাকে কোন অপরাধমূলক কাজ মনে করেননি। তাহলে এটা যেন সূরায়ে বাকারায় নিষেধযুক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু পরে অন্য আয়াত একে বিশিষ্ট করে দিয়েছেন। এটা ঐ সময় প্রযোজ্য হবে যখন মেনে নেয়া হবে যে, নিষেধযুক্ত আয়াতের মধ্যে এটাও শামিল ছিল। নচেৎ এ দুটি আয়াতের মধ্যে কোনই বৈপরীত্ব নেই। কেননা, আরও বহু আয়াতে আলে কিতাবদেরকে মুশরিকদের হতে পৃথকরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ ( আরবী ) ( ৩:২০ ) আয়াত দু'টিতে তাদেরকে মুশরিকদের হতে পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা তাদেরকে তাদের নির্দিষ্ট মহর প্রদান কর। অর্থাৎ যেহেতু তারা নিজেদেরকে নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সেহেতু তোমরা তাদেরকে তাদের ন্যায্য মহর সন্তুষ্টচিত্তে দিয়ে দাও। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ( রাঃ ), আমির শা’বী ( রঃ ), ইবরাহীম নাখঈ ( রঃ ) এবং হাসান বসরী ( রঃ )-এর ফতওয়া এই যে, যদি কোন লোক কোন নারীকে বিয়ে করে এবং সহবাসের পূর্বে তার স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে এবং স্বামী তার স্ত্রীকে যে মহর প্রদান করেছে তা তার নিকট থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। ( তাফসীরে ইবনে জারীর )বলা হচ্ছে-তোমরা তাদেরকে পত্নী রূপে গ্রহণ করে নাও, না প্রকাশ্যে ব্যভিচার কর, আর না গোপন প্রণয় কর। সুতরাং নারীদের জন্যে যেমন পবিত্রতা ও সতীত্বের শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তেমনই পুরুষদের জন্যেও এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। আর সাথে সাথেই বলা হয়েছে যে, তারা যেন না প্রকাশ্য ব্যভিচারী হয়, না এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে এবং না বিশেষ সম্পর্কের কারণে হারাম কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সুরায়ে নিসার মধ্যে এরূপই নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমাদও ( রঃ ) এদিকেই গেছেন যে, ব্যভিচারিণী নারীর সাথে তাওবা করার পূর্বে কোন সৎ লোকের বিবাহ কখনও জায়েয নয়। আর তাঁর নিকট পুরুষদের ব্যাপারেও এ হুকুমই প্রযোজ্য যে, কোন ব্যভিচারী পুরুষের সাথে কোন সতী সাধ্বী নারীর বিবাহ জায়েয নয় যে পর্যন্ত না সে। খাটি অন্তরে তাওবা করে এবং জঘন্য কাজ থেকে বিরত হয়। তাঁর দলীল হিসেবে একটি হাদীসও রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, ব্যভিচারী লোক চাবুক দ্বারা প্রহৃত হওয়ার পর একমাত্র তার মত নারীকেই বিয়ে করতে পারে। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমার ফারূক ( রাঃ ) একবার বলেনঃ “ কোন মুসলমান যদি ব্যভিচার করে তবে আমি চাই যে, কোন সতী সাধ্বী মুসলমান নারীর সাথে তার বিয়ে কখনও হতে দেবো না । হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) বলেনঃ “ হে আমীরুল মুমিনীন! শিরকের পাপ তো এর চেয়ে অনেক বড় তথাপি মুশরিকদের তাওবাও তো ককূল হয়ে থাকে ।” এ মাসআলাকে আমারা ( আরবী ) ( ২৪:৩ )-এ আয়াতের তাফসীরে ইনশাআল্লাহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করবো। আয়াতের শেষে বলা হয়েছে-কাফিরদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং পরকালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সূরা মায়িদা আয়াত 5 সূরা

اليوم أحل لكم الطيبات وطعام الذين أوتوا الكتاب حل لكم وطعامكم حل لهم والمحصنات من المؤمنات والمحصنات من الذين أوتوا الكتاب من قبلكم إذا آتيتموهن أجورهن محصنين غير مسافحين ولا متخذي أخدان ومن يكفر بالإيمان فقد حبط عمله وهو في الآخرة من الخاسرين

سورة: المائدة - آية: ( 5 )  - جزء: ( 6 )  -  صفحة: ( 107 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।
  2. সামুদ, লূতের সম্প্রদায় ও আইকার লোকেরা। এরাই ছিল বহু বাহিনী।
  3. এদের যখন বিচার করা হবে তখন পরহেযগারদের উপর এর কোন প্রভাব পড়বে না; কিন্তু তাদের
  4. মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর
  5. আর তাদের কেউ বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং পথভ্রষ্ট করবেন না। শোনে রাখ, তারা তো
  6. যখন ইব্রাহীম বললেন, পরওয়ারদেগার! এ স্থানকে তুমি শান্তিধান কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা অল্লাহ
  7. যখন আমি পয়গম্বরগণের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও মরিয়ম তনয়
  8. অতঃপর আমি কাফেরদেরকে ধৃত করেছিলাম। কেমন ছিল আমার আযাব!
  9. যখনই তাদের কাছে কোন রসূল আগমন করেছেন, তখনই তারা তাঁর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছে।
  10. মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা মায়িদা ডাউনলোড করুন:

সূরা Maidah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Maidah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত মায়িদা  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত মায়িদা  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত মায়িদা  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত মায়িদা  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত মায়িদা  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত মায়িদা  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত মায়িদা  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত মায়িদা  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত মায়িদা  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত মায়িদা  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত মায়িদা  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত মায়িদা  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত মায়িদা  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত মায়িদা  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত মায়িদা  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত মায়িদা  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত মায়িদা  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত মায়িদা  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত মায়িদা  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত মায়িদা  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত মায়িদা  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত মায়িদা  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Tuesday, May 21, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب