কোরান সূরা নামল আয়াত 59 তাফসীর
﴿قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَىٰ ۗ آللَّهُ خَيْرٌ أَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
[ النمل: 59]
বল, সকল প্রশংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি! শ্রেষ্ঠ কে? আল্লাহ না ওরা-তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে। [সূরা নামল: 59]
Surah An-Naml in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Naml ayat 59
বলো -- ''সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, আর শান্তি তাঁর বান্দাদের উপরে যাদের তিনি মনোনীত করেছেন। আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠ, না যাদের তারা শরিক করেছে?
Tafsir Mokhtasar Bangla
৫৯. হে রাসূল! আপনি বলুন: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এটা তাঁর দেয়া নিয়ামতের দরুন এবং সেই আযাব থেকে নিরাপত্তা লাভের দরুন যা দ্বারা তিনি লূত সম্প্রদায়কে শাস্তি দিয়েছেন। এসবই নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সাহাবীদের জন্য প্রযোজ্য। সত্যিকার মা’বূদ হিসেবে আল্লাহই কি উত্তম -যাঁর হাতে সকল কিছুর মালিকানা- না ওই মাবূদগুলো মুশরিকরা যেগুলোর পূজা করে; যারা কোন উপকার কিংবা ক্ষতির মালিক নয়?!
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
বল, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই এবং তার মনোনীত দাসদের প্রতি শান্তি![১] আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, নাকি ওরা যাদেরকে শরীক করে তারা?’ [২] [১] যাদেরকে আল্লাহ বাণীবাহক ও মানুষের পথ-প্রদর্শকরূপে নির্বাচিত করেছেন; যাতে মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে। [২] এখানে প্রশ্ন স্বীকৃতিসূচক। অর্থাৎ, আল্লাহই উত্তম। যখন তিনিই সৃষ্টিকর্তা, রুযীদাতা ও মালিক তখন তিনি ছাড়া অন্য কেউ কি শ্রেষ্ঠ হতে পারে, যে না সৃষ্টিকর্তা, না রুযীদাতা, আর না মালিক? خَير ( শ্রেষ্ঠতর ) যদিও 'ইসমে তাফয্বীল' যা দুই বা ততোধিক জিনিসের মধ্যে তুলনামূলক আধিক্য ও উৎকর্ষ বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু এখানে তা 'শ্রেষ্ঠ' অর্থে ব্যবহার হয়েছে কোন তুলনা ছাড়াই। কারণ, বাতিল মা'বূদদের মধ্যে কোন প্রকার خَير ( শ্রেষ্ঠত্ব )ই নেই।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
বলুন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ্রই [ ১ ] এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি [ ২ ]!’ শ্রেষ্ঠ কি আল্লাহ্, নাকি তারা যাদেরকে শরীক করে তারা [ ৩ ]? [ ১ ] এ ভূমিকার মাধ্যমে মুসলিমরা কিভাবে তাদের বক্তৃতা শুরু করবে তা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে সঠিক ইসলামী চিন্তা ও মানসিকতা সম্পন্ন লোকেরা সব সময় আল্লাহ্র প্রশংসা এবং তাঁর সৎ বান্দাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার দো‘আ করে তাদের বক্তৃতা শুরু করে থাকেন। [ কুরতুবী ] কিন্তু আজকাল কোন কোন মুসলিম বক্তারা তো এর মাধ্যমে বক্তৃতা শুরু করার কথা কল্পনাই করতে পারেন না অথবা এভাবে বক্তৃতা শুরু করতে তারা লজ্জা অনুভব করেন। [ ২ ] পূর্ববর্তী নবী ও তাদের উম্মতদের আযাব ও ধ্বংসের কিছু অবস্থা বর্ণনা করার পর এই বাক্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, আপনি আল্লাহ্ তা‘আলার সপ্ৰশংস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ, আপনার উম্মতকে দুনিয়ার ব্যাপক আযাব থেকে নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী নবী ও আল্লাহ্র মনোনীত বান্দাদের প্রতি সালাম প্রেরণ করুন। এখানে ‘আল্লাহ্র মনোনীত বান্দাহ’ বলে সে সমস্ত ঈমানদার লোকদেরকেই বুঝানো হবে যারা আল্লাহ্র সাথে কোন প্রকার শির্ক করেনি। কোন ধরনের কুফরীতে লিপ্ত হয়নি। নিঃসন্দেহে তারা হলেন নবী-রাসূলগণ। যারা তাওহীদ বাস্তবায়ণ করেছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “ আর শান্তি বৰ্ষিত হোক রাসূলদের প্রতি!’’ [ সূরা আস-সাফফাতঃ ১৮১ ] তাছাড়া নবী-রাসূলদের অনুসারীদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ্ পছন্দ করেছেন তারাও নবী-রাসূলদের অনুগামী হয়ে এ ‘সালাম’ বা শান্তি লাভের দো‘আর আওতায় পড়বেন । আমাদের নবীর উম্মতদের মধ্যে সাহাবায়ে কেরাম এদের অগ্রভাগে রয়েছেন। আর এ জন্যই কোন কোন মুফাসসির এখানে ‘আল্লাহ্র মনোনীত বান্দাহ’ বলে সাহাবায়ে কেরামদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে বলেও মত প্ৰকাশ করেছেন। [ দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর ] আর যদি ‘আল্লাহ্র মনোনীত বান্দাহ’ বলে সাহাবায়ে কেরামদের বোঝানো হয়ে থাকে তবে এ আয়াত দ্বারা এটা সাব্যস্ত হবে যে, নবীদের প্রতি ‘আলাইহিস সালাম’ বলে সালাম প্রেরণের সাথে সাথে তাদের অনুসারীদের জন্য সেটি ব্যবহার জায়েয। কিন্তু নবীদের প্রতি সালাম প্রেরণ ব্যতীত অন্যান্যদের উপর সরাসরি ‘আলাইহিস সালাম’ বলার সপক্ষে কোন যুক্তি নেই। বরং সেটা বিদ‘আত হিসেবে বিবৃত হবে। যেমন, আলী আলাইহিসসালাম বলা বা হুসাইন আলাইহিসসালাম বলা। তাই এ ধরনের ব্যবহার ত্যাগ করতে হবে। [ দেখুন, ইবন কাসীরঃ ৬/৪৭৮; তাফসীরুল আলুসীঃ ৬/৭, ১১/২৬১ ] [ ৩ ] মুশরিকদের একজনও একথার জবাবে বলতে পারতো না, একাজ আল্লাহ্র নয়, অন্য কারো অথবা আল্লাহ্র সাথে অন্য কেউ তাঁর একাজে শরীক আছে। কুরআন মজীদে অন্যান্য স্থানে মক্কার কাফের সমাজ ও আরব মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “ আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবী ও আকাশসমূহ কে সৃষ্টি করেছে? তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, মহা পরাক্রান্ত মহাজ্ঞানী সত্তাই এসব সৃষ্টি করেছেন ।’’ [ সূরা আয-যুখরুফঃ ৯ ] আরো এসেছে, “ আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ্ ।” [ সূরা আয-যুখরুফঃ ৮৭ ] আরো বলেছেনঃ “ আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছে এবং মৃত পতিত জমি কে জীবিত করেছে? তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ্ ।” [ সূরা আল-আনকাবূতঃ ৬৩ ] আল্লাহ্ আরো বলেছেনঃ “ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা দান করেন? এ শ্রবণও দর্শনের শক্তি কার নিয়ন্ত্রণাধীন? কে সজীবকে নির্জীব এবং নির্জীবকে সজীব করেন? কে এ বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন? তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ্ ।” [ সূরা ইউনুসঃ ৩১ ] আরবের মুশরিকরা এবং সারা দুনিয়ার মুশরিকরা সাধারণত একথা স্বীকার করতো এবং আজো স্বীকার করে যে, আল্লাহ্ই বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা এবং বিশ্বব্যবস্থা পরিচালনাকারী। তাই কুরআন মজীদের এ প্রশ্নের জবাবে তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যাক্তি নিতান্ত হঠকারিতা ও গোয়ার্তুমির আশ্রয় নিয়ে ও নিছক বিতর্কের খাতিরেও বলতে পারতো না যে, আমাদের উপাস্য দেবতারা আল্লাহ্র সাথে এসব কাজে শরীক আছে। কারণ যদি তারা একথা বলতো তাহলে তাদের নিজেদের জাতির হাজার হাজার লোক তাদেরকে মিথ্যুক বলতো এবং তারা পরিষ্কার বলে দিতো, এটা আমাদের আকীদা নয়।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল ( সঃ )-কে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ “ হে রাসূল ( সঃ )! তুমি বলে দাও যে, সমস্ত প্রশংসার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ । তিনিই তাঁর। বান্দাদেরকে, অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। তিনি মহৎ গুণাবলীর অধিকারী। তাঁর নাম উচ্চ ও পবিত্র।” তিনি স্বীয় নবী ( সঃ )-কে আরো হুকুম করছেনঃ “ তুমি আমার মনোনীত বান্দাদের প্রতি সালাম ( শান্তি ) পৌছিয়ে দাও । আঁরা হলেন তাঁর রাসূল ও নবীগণ। তাঁদের সবারই প্রতি উত্তম দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলার এ উক্তিটি তার নিমের উক্তির মতইঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যারা যা আরোপ করে তা হতে পবিত্র ও মহান তোমার প্রতিপালক, যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী । শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলদের প্রতি! প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।” ( ৩৭: ১৮০-১৮২ )আল্লাহ তা'আলার মনোনীত বান্দাদের দ্বারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীদেরকে ( রাঃ ) বুঝানো হয়েছে এবং নবীরাও ( আঃ ) তাঁদের অন্তর্ভুক্ত এটা তো বলাই বাহুল্য।মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবীদেরকে এবং তাঁদের অনুসারীদেরকে বাঁচিয়ে নেয়া ও তাদের বিরুদ্ধাচরণকারীদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার নিয়ামত বর্ণনা করার পর নিজের প্রশংসা কীর্তনের ও তাঁর সৎ বান্দাদের প্রতি সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর প্রশ্ন হিসেবে মুশরিকদের ঐ কাজের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন যে, তারা তাঁর ইবাদতে অন্যদেরকে শরীক করছে যা থেকে তিনি পবিত্র ও মুক্ত।
সূরা নামল আয়াত 59 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতঃপর না, সত্বর তারা জানতে পারবে।
- হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা
- যারা কুফরী অবলম্বন করেছে, এবং আল্লাহর পথে বাধার সৃষ্টি করেছে, তারা বিভ্রান্তিতে সুদূরে পতিত হয়েছে।
- আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না
- আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম
- যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল।
- তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা,
- তারা বললঃ পিতাঃ আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আসবাব-পত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর
- অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক
- আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে? তবে তুমি কি আমার আদেশ অমান্য করেছ?
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নামল ডাউনলোড করুন:
সূরা Naml mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Naml শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers