কোরান সূরা নূর আয়াত 61 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah An Nur ayat 61 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা নূর আয়াত 61 আরবি পাঠে(An Nur).
  
   

﴿لَّيْسَ عَلَى الْأَعْمَىٰ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ وَلَا عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَن تَأْكُلُوا مِن بُيُوتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ آبَائِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أُمَّهَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ إِخْوَانِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخَوَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَعْمَامِكُمْ أَوْ بُيُوتِ عَمَّاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخْوَالِكُمْ أَوْ بُيُوتِ خَالَاتِكُمْ أَوْ مَا مَلَكْتُم مَّفَاتِحَهُ أَوْ صَدِيقِكُمْ ۚ لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَأْكُلُوا جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًا ۚ فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ﴾
[ النور: 61]

অন্ধের জন্যে দোষ নেই, খঞ্জের জন্যে দোষ নেই, রোগীর জন্যে দোষ নেই, এবং তোমাদের নিজেদের জন্যেও দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতাদের গৃহে অথবা তোমাদের মাতাদের গৃহে অথবা তোমাদের ভ্রাতাদের গৃহে অথবা তোমাদের ভগিণীদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতৃব্যদের গৃহে অথবা তোমাদের ফুফুদের গৃহে অথবা তোমাদের মামাদের গৃহে অথবা তোমাদের খালাদের গৃহে অথবা সেই গৃহে, যার চাবি আছে তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও। [সূরা নূর: 61]

Surah An-Nur in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah An Nur ayat 61


অন্ধের উপরে কোনো দোষ নেই ও খোঁড়ার উপরেও নয়, যদি তোমরা আহার কর তোমাদের বাড়ি থেকে, অথবা তোমাদের পিতাদের বাড়িতে, কিংবা তোমাদের মায়েদের বাড়িতে, নয়ত তোমাদের ভাইদের বাড়িতে, না হয় তোমাদের বোনদের বাড়িতে, কিংবা তোমাদের চাচাদের বাড়িতে, অথবা তোমাদের ফুফুদের বাড়িতে, নয়ত তোমাদের মামাদের বাড়িতে, অথবা তোমাদের খালাদের বাড়িতে, কিংবা সেইসবে যার চাবি তোমাদের দখলে রয়েছে, অথবা তোমাদের বন্ধুদের। তোমাদের উপরে কোনো অপরাধ হবে না যদি তোমরা একসঙ্গে আহার কর অথবা আলাদাভাবে। সুতরাং যখন তোমরা বাড়িঘরে প্রবেশ কর তখন তোমাদের পরস্পরকে সালাম কর আল্লাহ্‌র তরফ থেকে কল্যাণময় পবিত্র সম্ভাষণে। এইভাবেই আল্লাহ্ তোমাদের জন্য বাণীসমূহ সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যেন তোমরা বুঝতে পার।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৬১. যে অন্ধ তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে তার কোন গুনাহ নেই। তেমনিভাবে খোঁড়ারও কোন গুনাহ নেই। উপরন্তু অসুস্থেরও কোন গুনাহ নেই যদি তারা নিজেদের সাধ্যের বাইরের শরয়ী দায়িত্বগুলো পরিত্যাগ করে। যেমন: আল্লাহর পথে জিহাদ। আর হে মু’মিনরা! তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি নেই নিজেদের ঘর থেকে খেলে, না তোমাদের ছেলেদের ঘর থেকে, না তোমাদের বাপ-দাদা, মা-নানী, ভাই, বোন, চাচা, ফুফু, মামা কিংবা খালাদের ঘর থেকে অথবা ওই সকল ঘর থেকে যেগুলোর হিফাযতের দায়িত্ব তোমাদের হাতে ন্যস্ত যেমন: বাগানের পাহারাদার। না তোমাদের কোন অসুবিধে রয়েছে নিজেদের বন্ধুর ঘর থেকে খাওয়ায়। কারণ, স্বভাবতঃ তার মন এতে খুশি। না তোমাদের কোন গুনাহ রয়েছে সম্মিলিত কিংবা একা খাওয়ায়। আর যদি তোমরা উল্লিখিত ঘর কিংবা অন্যান্য ঘরসমূহে প্রবেশ করো তাহলে সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ বলে সালাম দাও: আস-সালামু আলাইকুম। তবে সেগুলোতে কেউ না থাকলে তোমরা নিজেদের উপর এ বলে সালাম দাও: আস-সালামু আলাইনা ওয়া‘আলা ইবাদিল্লাহিস-সালিহীন। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ বরকতময় সম্ভাষণ। যা তোমাদের মাঝে মায়া ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিবে। যা পবিত্রও বটে যা শুনলে শ্রোতার মন আনন্দে ভরে যায়। এ সূরার পূর্বের বর্ণনার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝে সেগুলোর উপর আমল করতে পারো।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


অন্ধের জন্য, খঞ্জের জন্য, রুগ্‌ণের জন্য এবং তোমাদের নিজেদের জন্য তোমাদের নিজেদের গৃহে আহার করা দূষণীয় নয়[১] অথবা তোমাদের পিতৃগণের গৃহে, মাতৃগণের গৃহে, ভ্রাতৃগণের গৃহে, ভগিনীগণের গৃহে, পিতৃব্যদের গৃহে, ফুফুদের গৃহে, মাতুলদের গৃহে, খালাদের গৃহে অথবা সে সব গৃহে যার চাবি তোমাদের হাতে আছে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে; [২] তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর,[৩] তাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই; তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে।[৪] এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন। এভাবে তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেন; যাতে তোমরা বুঝতে পার। [১] এর একটি অর্থ এই বলা হয়েছে যে, জিহাদে যাওয়ার সময় সাহাবা ( রাঃ )গণ আয়াতে উল্লিখিত অক্ষম সাহাবাদেরকে নিজেদের ঘরের চাবি দিয়ে যেতেন এবং তাদেরকে তাঁদের ঘরের জিনিস-পত্র খাওয়া-পান করার অনুমতি দিয়ে রাখতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সব অক্ষম সাহাবা ( রাঃ )গণ মালিকের বিনা উপস্থিতিতে সেখান হতে খাওয়া-পান করা অবৈধ মনে করতেন। আল্লাহ বললেন, উক্ত লোকদের জন্য নিজের আত্মীয়দের ঘর হতে বা যে সব ঘরের চাবি তাদের কাছে রয়েছে, সে সব ঘর হতে পানাহার করতে কোন পাপ বা দোষ নেই। আবার কেউ কেউ এর অর্থ বলেছেন যে, সুস্থ-সক্ষম সাহাবারা অসুস্থ-অক্ষম সাহাবাদের সাথে খেতে এই জন্য অপছন্দ করতেন, কারণ তাঁরা অক্ষমতার কারণে কম খাবেন, আর নিজেরা হয়তো বেশি খেয়ে ফেলবেন, যার ফলে তাঁদের প্রতি অন্যায় ও বে-ইনসাফী না হয়ে যায়। অনুরূপ অক্ষম সাহাবাগণ অন্য সক্ষম লোকদের সাথে খাওয়া এই জন্য পছন্দ করতেন না, যাতে কেউ তাঁদের সাথে খেতে ঘৃণা না করে। আল্লাহ তাআলা উভয় দলকেই পরিষ্কার করে দিলেন যে, এতে কোন পাপ নেই। [২] এ অনুমতি সত্ত্বেও কিছু উলামাগণ পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, উপরে যে খাবার খাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা মামুলী ধরনের সাধারণ খাবার, যা খেলে কারো মনে ক্ষতির অনুভূতি হয় না। অবশ্য এমন ভালো জিনিস যা মালিক বিশেষভাবে নিজের জন্য গোপন করে রেখেছে, যাতে তার উপর কারো দৃষ্টি না পড়ে, অনুরূপ জমাকৃত মালপত্র; এ সব খাওয়া ও ব্যবহার করা বৈধ নয়। ( আইসারুত্ তাফাসীর ) এখানে 'তোমাদের নিজেদের জন্য তোমাদের নিজেদের গৃহে' বলতে নিজ সন্তানের গৃহকে বুঝানো হয়েছে। যেহেতু সন্তানের ঘর নিজের ঘর। যেমন, হাদীসে বলা হয়েছে, " তুমি ও তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতার। " ( ইবনে মাজাহ ২২৯১নং, আহমাদ ২/১৭৯,২০৪, ২১৪ ) অন্য একটি হাদীসে এসেছে, " মানুষের সন্তান তারই উপার্জন। " ( আবু দাউদ ৩৫২৮, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ২১৩৭নং ) [৩] এখানে অন্য একটি সংকীর্ণতা দূর করা হয়েছে। কিছু মানুষ একাকী খাওয়া পছন্দ করত না বরং কাউকে নিয়ে খাওয়া জরুরী মনে করত। আল্লাহ বললেন, 'একসাথে খাও বা একাকী, সবই জায়েয, কোনটাতে পাপ নেই।' অবশ্য একসঙ্গে খাওয়াতে অধিক বরকত লাভ হয়। যেমন কিছু হাদীস হতে এ কথা জানা যায়। ( ইবনে কাসীর ) [৪] এই আয়াতে নিজ গৃহে প্রবেশের কিছু আদব বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হল এই যে, প্রবেশের সময় বাড়ির লোকদেরকে সালাম দাও। মানুষ নিজের স্ত্রী-সন্তানদের উপর সালাম করা বোঝা বা অপ্রয়োজনীয় মনে করে। কিন্তু ঈমানদার ব্যক্তির জন্য জরুরী আল্লাহর আদেশ পালন করে সালাম দেওয়া। নিজের স্ত্রী-সন্তানদেরকে শান্তির দু'আ দেওয়া থেকে কেন বঞ্চিত রাখা হবে?

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


অন্ধের জন্য দোষ নেই, খঞ্জের জন্য দোষ নেই, রুগ্নের জন্য দোষ নেই এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নেই খাওয়া-দাওয়া করা তোমাদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতাদের ঘরে, মাতাদের ঘরে, ভাইদের ঘরে, বোনদের ঘরে, চাচা-জেঠাদের ঘরে, ফুফুদের ঘরে, মামাদের ঘরে, খালাদের ঘরে অথবা সেসব ঘরে যেগুলোর চাবির মালিক তোমরা অথবা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে। তোমরা একত্রে খাও বা পৃথক পৃথকভাবে খাও তাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই। তবে যখন তোমরা কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা পরস্পরের প্রতি সালাম করবে অভিবাদনস্বরূপ যা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র। এভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


এই আয়াতে যে দোষ না হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে সে সম্পর্কে হযরত আতা ( রঃ ) প্রমুখ গুরুজনতো বলেন যে, এর দ্বারা অন্ধ ও খোঁড়াদের জিহাদে যোগদান না করা বুঝানো হয়েছে। যেমন সূরায়ে আল-ফাতহুতে রয়েছে। সুতরাং এ ধরনের লোক যদি জিহাদে গমন না করে তবে তাদের শরীয়ত সম্মত ওজর থাকার কারণে তাদের কোন অপরাধ হবে না। সূরায়ে বারাআতে রয়েছেঃ “ যারা দুর্বল, যারা পীড়িত এবং যারা অর্থ সাহায্যে অসমর্থ, তাদের কোন অপরাধ নেই, যদি আল্লাহ ও রাসূল ( সঃ )-এর প্রতি তাদের অবিমিশ্র অনুরাগ থাকে । যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন হেতু নেই; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাদেরও কোন অপরাধ নেই যারা তোমার নিকট বাহনের জনে আসলে তুমি বলেছিলেঃ তোমাদের জন্যে কোন বাহন আমি পাচ্ছি না, তারা অর্থ ব্যয়ে অসামর্থ্য জনিত দুঃখে অশ্রু বিগলিত নেত্রে ফিরে গেল।” তাহলে এই আয়াতে তাদের জন্যে অনুমতি রইলো যে, তাদের কোন অপরাধ নেই।কতকগুলো লোক ঘৃণা করে তাদের সাথে খেতে বসতো না। শরীয়ত এসব অজ্ঞতাপূর্ণ অভ্যাস উঠিয়ে দেয়। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, জনগণ এইরূপ লোকদেরকে নিজেদের পিতা, ভ্রাতা, ভগ্নী প্রভৃতি নিকটতম আত্মীয়দের নিকট পৌঁছিয়ে দিতো, যেন তারা সেখানে আহার করে। এ লোকগুলো এটাকে দূষণীয় মনে করতো যে, তাদেরকে অপরের বাড়ী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, মানুষ যখন তার ভ্রাতা, ভগ্নী প্রভৃতির বাড়ী যেতো এবং স্ত্রীলোকেরা কোন খাদ্য তার সামনে হাযির করতো তখন সে তা খেতো না এই মনে করে যে, সেখানে বাড়ীর মালিক তো নেই। তখন আল্লাহ তা'আলা ঐ খাদ্য খেয়ে নেয়ার অনুমতি দেন। এটা যে বলা হয়েছে যে, তোমাদের নিজেদের জন্যেও কোন দোষ নেই, এটা তো প্রকাশমানই ছিল, কিন্তু এর উপর অন্যগুলোর সংযোগ স্থাপনের জন্যে এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং এর পরবর্তী বর্ণনা এই হুকুমের ব্যাপারে সমান। পুত্রদের বাড়ীর হুকুমও এটাই, যদিও শব্দে এর বর্ণনা দেয়া হয়নি। কিন্তু আনুষঙ্গিকভাবে এটাও এসে যাচ্ছে। এমনকি এই আয়াত দ্বারাই দলীল গ্রহণ করে কেউ কেউ বলেছেন যে, পুত্রের মাল পিতার মালেরই স্থলবর্তী। মুসনাদ ও সুনান গ্রন্থে কয়েকটি সনদে হাদীস এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তুমি ও তোমার মাল তোমার পিতার ( -ই মালিকানাধীন )” আর যাদের নাম এসেছে তাদের দ্বারা দলীল গ্রহণ করে কেউ কেউ বলেছেন যে, নিকটতম আত্মীয়দের একের খাওয়া পরা অপরের উপর ওয়াজিব। যেমন ইমাম আবু হানীফা ( রঃ ) ও ইমাম আহমাদ ( রঃ )-এর প্রসিদ্ধ উক্তি এটাই।আল্লাহ পাকের যার চাবী তোমাদের মালিকানায় রয়েছে’ -এই উক্তি দ্বারা গোলাম ও প্রহরীকে বুঝানো হয়েছে যে, তারা তাদের মনিবের মাল হতে প্রয়োজন হিসেবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী খেতে পারে। হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন জিহাদে গমন করতেন তখন প্রত্যেকেরই মনের বাসনা এটা হতো যে, সে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে যদি যেতে পেতো! যাওয়ার সময় তারা নিজেদের বিশিষ্ট বন্ধুদেরকে চাবি দিয়ে যেতো এবং তাদেরকে বলে যেতো: “ প্রয়োজনবোধে তোমরা আমাদের মাল থেকে খেতে পারবে । আমরা তোমাদেরকে অনুমতি দিলাম। কিন্তু এরপরেও এরা নিজেদেরকে আমানতদার মনে করে এবং এই মনে করে যে, তারা হয়তো ভোলা মনে অনুমতি দেয়নি। পানাহারের কোন জিনিসকে তারা স্পর্শই করতো না। তখন এই হুকুম নাযিল হয়।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তোমরা তোমাদের বন্ধুদের গৃহেও খেতে পার, যখন তোমরা জানবে যে, তারা এটা খারাপ মনে করবে না এবং তাদের কাছে এটা কঠিনও ঠেকবে না। কাতাদা ( রঃ ) বলেনঃ “ যখন তুমি তোমার বন্ধুর বাড়ীতে যাবে তখন তার অনুমতি ছাড়াই তুমি তার খাদ্য হতে খেতে পারবে ।”অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর তাতে তোমাদের জন্যে কোন অপরাধ নেই।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যখন ( আরবি ) অর্থাৎ “ হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না ।( ৪: ২৯ ) এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন সাহাবীগণ ( রাঃ ) পরস্পর বলাবলি করেনঃ “ পানাহারের জিনিসগুলোও তো মাল, সুতরাং এটাও আমাদের জন্যে হালাল নয় যে, আমরা একে অপরের সাথে আহার করি । কাজেই তারা ওটা থেকেও বিরত হন। ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।অনুরূপভাবে পৃথক পৃথকভাবে পানাহারকেও তারা খারাপ মনে করতেন। কেউ সঙ্গী না হওয়া পর্যন্ত তারা খেতেন না। এজন্যে আল্লাহ পাক এই হুকুমের মধ্যে দুটোরই অনুমতি দিলেন, অর্থাৎ অন্যদের সাথে খেতেও এবং পৃথক পৃথকভাবে খেতেও। বানু কিনানা গোত্রের লোক বিশেষভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তারা ক্ষুধার্ত থাকতো, তথাপি সঙ্গে কাউকেও না পাওয়া পর্যন্ত খেতো না। সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে তারা সাথে আহারকারী সঙ্গীর খোঁজে বেরিয়ে পড়তো। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা একাকী খাওয়ার অনুমতি দান সম্পর্কীয় আয়াত অবতীর্ণ করে অজ্ঞতাযুগের ঐ কঠিন প্রথাকে দূর করে দেন।এ আয়াতে যদিও একাকী খাওয়ার অনুমতি রয়েছে, কিন্তু এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, লোকদের সাথে মিলিত হয়ে খাওয়া নিঃসন্দেহে উত্তম। আর এতে বেশী বরকতও রয়েছে।ওয়াহশী ইবনে হারব ( রাঃ ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, একটি লোকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি খাই, কিন্তু পরিতৃপ্ত হই না ( এর কারণ কি? )” উত্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বলেনঃ “ সম্ভবতঃ তুমি পৃথকভাবে একাকী খেয়ে থাকো । তোমরা খাদ্যের উপর একত্রিত হও এবং আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে শুরু কর, তোমাদের খাদ্যে বরকত দেয়া হবে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা সবাই একত্রিতভাবে খাও, পৃথক পৃথকভাবে খেয়ো না । কেননা, বরকত জামাআতের উপর রয়েছে।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)এরপর শিক্ষা দেয়া হচ্ছেঃ যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি অভিবাদন স্বরূপ সালাম করবে। হযরত জাবির ( রাঃ ) বলেনঃ “ যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তা'আলার শেখানো বরকতময় উত্তম সালাম বলবে । আমি তো পরীক্ষা করে দেখেছি যে, এটা সরাসরি বরকতই বটে।” ইবনে তাউস ( রঃ ) বলেনঃ “ তোমাদের যে কেউ বাড়ীতে প্রবেশ করবে সে যেন বাড়ীর লোকদেরকে সালাম দেয় । হযরত আতা ( রঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ এটা কি ওয়াজিব?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “কেউ যে এটাকে ওয়াজিব বলেছেন তা আমার জানা নেই । তবে আমি এটা খুবই পছন্দ করি যে, যখনই তোমরা বাড়ীতে প্রবেশ করবে তখন সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে। আমি তো এটা কখনো ছাড়িনি। তবে কোন সময় ভুলে গিয়ে থাকি। সেটা অন্য কথা।” মুজাহিদ ( রঃ ) বলেনঃ “ যখন মসজিদে যাবে তখন বলবেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল ( সঃ )-এর উপর শান্তি বর্ষিত হোক ।' যখন নিজের বাড়ীতে প্রবেশ করবে তখন নিজের ছেলে মেয়েদেরকে সালাম দিবে এবং যখন এমন কোন বাড়ীতে যাবে যেখানে কেউই নেই তখন বলবেঃ( আরবি ) অর্থাৎ আমাদের উপর ও আল্লাহর সৎ বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।' এটাই হুকুম দেয়া হচ্ছে। এইরূপ সময়ে তোমাদের সালামের জবাব আল্লাহর ফেরেশতারা দিয়ে থাকেন।"হযরত আনাস ( রাঃ ) বলেন, নবী ( সঃ ) আমাকে পাঁচটি অভ্যাসের অসিয়ত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “ হে আনাস ( রাঃ )! তুমি পূর্ণভাবে অযু কর, তোমার বয়স বৃদ্ধি পাবে । আমার উম্মতের যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হবে তাকেই সালাম দেবে, এর ফলে তোমার পুণ্য বেড়ে যাবে। যখন তুমি তোমার বাড়ীতে প্রবেশ করবে তখন তোমার পরিবারের লোককে সালাম দেবে, তাহলে তোমার বাড়ীর কল্যাণ বৃদ্ধি পাবে। চাশতের নামায পড়তে থাকবে, তোমাদের পূর্ববর্তী দ্বীনদার লোকদের এই নীতিই ছিল। হে আনাস ( রাঃ )! ছোটদেরকে স্নেহ করবে এবং বড়দেরকে সম্মান করবে, তাহলে কিয়ামতের দিন তুমি আমার বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” ( এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযার (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ এটা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণ ও পবিত্র। অর্থাৎ এটা হলো দু'আয়ে খায়ের যা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এটা কল্যাণময় ও পবিত্র।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি তাশাহ্হুদ তো আল্লাহর কিতাব হতেই গ্রহণ করেছি । আমি আল্লাহকে বলতে শুনেছিঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র ।” সুতরাং নামাযের তাশাহহুদ হলোঃ ( আরবি )অর্থাৎ কল্যাণময় অভিবাদন ও পবিত্র সালাত আল্লাহর জন্যে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। ( হে নবী সঃ )! আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎ বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারপর নামাযী ব্যক্তি নিজের জন্যে দু'আ করবে, অতঃপর সালাম ফিরাবে।” ( এটা মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। আবার সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতেই মারফু’রূপে যা বর্ণিত আছে তা এর বিপরীত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এইভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাঁর নির্দেশ বিশদভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা বুঝতে পার এবং জ্ঞান লাভ কর।

সূরা নূর আয়াত 61 সূরা

ليس على الأعمى حرج ولا على الأعرج حرج ولا على المريض حرج ولا على أنفسكم أن تأكلوا من بيوتكم أو بيوت آبائكم أو بيوت أمهاتكم أو بيوت إخوانكم أو بيوت أخواتكم أو بيوت أعمامكم أو بيوت عماتكم أو بيوت أخوالكم أو بيوت خالاتكم أو ما ملكتم مفاتحه أو صديقكم ليس عليكم جناح أن تأكلوا جميعا أو أشتاتا فإذا دخلتم بيوتا فسلموا على أنفسكم تحية من عند الله مباركة طيبة كذلك يبين الله لكم الآيات لعلكم تعقلون

سورة: النور - آية: ( 61 )  - جزء: ( 18 )  -  صفحة: ( 358 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. অতঃপর যদি তাকে আমার কাছে না আন, তবে আমার কাছে তোমাদের কোন বরাদ্ধ নেই এবং
  2. ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে। হে
  3. এবং তোমার পিপাসাও হবে না এবং রৌদ্রেও কষ্ট পাবে না।
  4. তোমরা তাদের বাসভূমিতেই বসবাস করতে, যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে এবং তোমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল
  5. আমি এদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধবংস করেছি। যাদের বাসভুমিতে এরা বিচরণ করে, এটা কি এদেরকে
  6. কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের
  7. এটা এজন্যে যে, আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু নাই।
  8. চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।
  9. আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে
  10. আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নূর ডাউনলোড করুন:

সূরা An Nur mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি An Nur শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত নূর  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত নূর  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত নূর  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত নূর  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত নূর  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত নূর  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত নূর  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত নূর  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত নূর  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত নূর  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত নূর  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত নূর  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত নূর  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত নূর  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত নূর  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত নূর  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত নূর  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত নূর  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত নূর  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত নূর  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত নূর  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত নূর  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত নূর  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত নূর  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত নূর  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Tuesday, July 16, 2024

Please remember us in your sincere prayers